ঁ বাটুল বৃক্ষ ঁ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৩/২০১২ - ৯:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অতিথি লেখক –:: স্বপ্নখুঁজি

সিড়িঁর ধাপগুলো বেশ বড় বড়। একটু লাফিয়ে লাফিয়ে উঠি। একটি বড়সড় কোম্পানি এর প্রধান কার্যালয়। সিড়িঁর শেষধাপ পার হলেই বেশ একটা ঝকঝকে ফাঁকা জায়গা । এই ফাঁকা জায়গাটার সৌন্দর্য বর্ধন করছে কিছু ‘বাটুল বৃক্ষ’ । বেশ নিদৃস্ট দূরত্ব রেখে সারি সারি ভাবে এদের অবস্থান। বাটুল বৃক্ষ গুলোর দিকে তাকালে মাঝে মাঝে একটু সুক্ষ বেদনা বোধ হয়।
‘বাটুল বৃক্ষ’ নামটা হয়ত সবার কাছে অপরিচিত ঠেকছে। কিন্তু আমি এদেরকে বাটুল বৃক্ষ বলেই ডাকি। বনসাই’গুলো দেখতে বেশ সুন্দর আর ঘরদোর সাজাতেও অনন্য, এই বিষয়ে আমার কোনও দ্বিধা নাই। তবুও মনের মধ্যে একটু কেমনতর বেদনা হয় গাছের জন্যে, প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাধীনভাবে বাড়তে না পারা গাছগুলোর জন্যে।

প্রাচীন চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে জাপানী ‘বনসাই’ শব্দের উৎপত্তি। বনসাই করতে ব্যবহৃত ট্রের মত যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তাকেই সাধারণভাবে ‘বন’ বলা হয়। পাশ্চাত্যে পাত্রে ক্ষর্বাকৃতির গাছ বলতে ‘বনসাই’ বোঝায়।

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু আবিস্কার করেছিলেন যে গাছের প্রান আছে, তাদেরও অনুভূতি আছে। তাহলে, তাদেরও তো আছে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার। আজকালকার ছেলেমেয়েদের তোরজোড় বেড়ে ওঠার জন্য চলছে কমপ্লান ব্য়/গার্ল পদ্ধতি আর গাছের বেলায় উল্টা, গাছের জন্য চলছে এন্টি কমপ্লান পদ্ধতি।
চৈনিক ছং রাজবংশের সময় জাপানে পাত্রে উৎপাদিত গাছের জনপ্রিয়তা পায়। জাপানের সাংস্কৃতিক বিনির্মাণের এই সময়ে তারা বেশকিছু চীন দেশীয় বৈশিষ্ট্য নিজেদের মত করে আত্তস্ত করে নেয়। পাত্রের ক্ষুদ্র গাছকে এই সময় ‘গামলার গাছ’(হাচি-নো-কি) বলা হত। প্রথম প্রথম জাপানীরা পাত্রে জন্মানো বামনকৃত গাছ ঘরবাড়ী আর গাছ সাজাতে ব্যবহার করত। মোটামুটি ১৮০০ সালের দিকে জাপানীরা তুলনামূলকভাবে কম গভীর পাত্রে ক্ষুদ্র গাছ পরিচর্যা করার সাথে সাথে চৈনিক ‘পেনজাই’ শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তন করে ফেলে। টোকিয়োর রাজশিক প্রাসাদে থাকা অনেক পুরানো জীবিত একটি বনশাইকে জাপানের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চীনা-জাপানিরা কেন এই গাছের খর্বাকৃতি করার পথিকৃত , তা তাদের স্বভাবজাত বলেই আমার ধারনা। তারা নিজেরা একটু বেটে ধরনের। আর জোর করে সবকিছু বেটে বা ছোট করে রাখার প্রবনতা। ছোটবেলায় বইতে পড়েছি, চীনা-জাপানিরা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পায়ে লোহার জুতা পরিয়ে রাখে। জোরপূর্বক পা’কে ছোট করে রাখার চেষ্টা। তাদের কাছে ছোট মানে সুন্দর। খেয়াল করেছি তাদের খাবার টেবিলগুলোও খাটো খাটো। তাদের নিজেদের নাকটা একটু চাপা, চোখটা একটু ছোট। বেশ আগে একবার আমার এক বন্ধু বলল, “শোন, চীনা-জাপানিদের ফুটবল খেলায় হারানোটা কোনও ব্যাপার না। আমরাও পারব, শুধু একটু কৌশল দরকার।” আমার তো আক্কেলগুড়ুম, জিজ্ঞাস করলাম “কিভাবে?”। সে যা বলল তা হোল, “মাঠে খেলা চলাকালীন সময় এমন কোন কৌতুক বা অঙ্গভঙ্গি করতে হবে বা কাতুকুতু দিতে হবে যাতে চীনা-জাপানিরা হাসতে থাকে, আর ওরা হাসতে থাকলে ওদের ছোট চোখ আরও ছোট হতে থাকবে। যত বেশি হাসি , তত মুখ প্রসারিত আর চোখ সঙ্কুচিত হতে হতে বুজে আসবে আর আমরা সেই ফাঁকে দেব গোল ”। মজার ব্যাপার হোল আমার সেই বন্ধু আজ জাপান প্রবাসী।

বছরে একবার সাধারণত শীতকালে এলাকায় সার্কাস আসত। সেই সার্কাসে যতটা না খেলা দেখার আগ্রহ ছিল তার থেকে ঢের বেশি আকর্ষণ ছিল সার্কাসের বামন-মানব এর কৃত্তিকলাপ উপভোগ করা। সার্কাসে এই বামন-মানব দের জোকার বলা হয়। এদের কৃত্তিকলাপের শেষ নাই, কখনও ফাঁটা বাঁশের লাঠি নিয়ে আরেকজনের পুচ্ছদেশে বাড়ি, সারাক্ষন স্টেজের চতুর্দিকে লাফালাফি কিম্বা ঘোরাঘুরি আবার কখনও খেলোয়াড় দের সাথে খেলোয়াড় হয়ে ওঠার চেষ্টা। হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরে যেত। বামন হয়ে থাকার কষ্টটা মনের ভিতর আড়াল করে মানুষ হাসিয়ে চলছে এরা আবিরাম। খগেন থাপা কি খর্বাকার হিসেবে গিনেজ বুকে নাম লিখিয়ে চরম আনন্দিত নাকি তার ভিতরও আছে একটা সুক্ষ কষ্ট, বেড়ে উঠতে না পারার বেদনা।

গাছকে বনসাই করছি আমরা, করছি নিষ্ঠুর সৌন্দর্যবর্ধন। আরও অনেক কিছুই বনসাই হয়ে যাচ্ছে নিরবে। প্রকৃতি কি প্রতিশোধ নিচ্ছে ? আমাদের মন মানসিকতা বনসাই হয়ে যাচ্ছে। আমাদের নদীগুলো আজ বনসাই। নদীগুলো ছোট হতে হতে আজ ক্ষুদ্রতর বনসাই নদিতে পরিণত। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আজ পরিণত বনসাই বিদ্যাপীঠে। নাই মাঠ, খেলার জায়গা। সবুজ গাছ-পালার পরিমান কমে আসছে। আস্তে আস্তে গোটা প্রকৃতি হয়ে যাচ্ছে বনসাই।

অতিথি লেখক –:: স্বপ্নখুঁজি


মন্তব্য

মাহবুব রানা এর ছবি

চাইনিজ-জাপানিজদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আপনার লেখার ধরনটুকু আপত্তিকর। বনসাই নিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলাম, আর আগ্রহ পাচ্ছিনা।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

দুঃখিত।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক
শেষের অনুচ্ছেদটা অসাধারণ। আপনার সাথে শতভাগ সহমত। নদীকোষ এ পড়েছি যে বাংলাদেশে ৭১০ এর বেষি নদী আছে কিন্তু এখন টিকে আছে ২০০ এর কিছু বেশি। স্কুল-কলেজগুলোতে এখন আকাশ দেখা যায় না। মুরগীর ফার্মের মত করে গড়ে উঠছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। আসলেই আমরা বনসাই হয়ে যাচ্ছি বা বিশাল বনসাই এর অংশ হয়ে যাচ্ছি।

বনসাই আমারও খুব অপছন্দের। বনসাই এর প্রথম প্রবর্তন শুরু হয় চীনে। আমি সম্রাটের নাম এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না, তবে বনসাই করার কারন ছিল এই যে, সম্রাট চাইলেন তার বিশাল সাম্রাজ্যের সব রকম বৈশিষ্ট তার প্রাসাদে রাখতে, তাই বিভিন্ন প্রদেশ থেকে গাছ, প্রাণী ইত্যাদি সংগ্রহ করা শুরু হয় কিন্তু সমস্যা বাধে গাছ নিয়ে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ একটা করে রাখলেও তো জায়গা হয়না নির্বাচিত এলাকাতে। তখন গাছের বনসাই এর শুরু। পরবর্তীতে অসুস্থ, ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া গাছগুলোকে পরিচর্যা করে বনসাই এর মাধ্যমে সুন্দর করে উপস্থাপন করা হত। কিন্তু এখন বনসাই এর প্রয়োগ এবং ব্যবহার নিয়ে আমি খুবই ক্ষিপ্ত। রেগে টং

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

পড়া এবং মূল্যবান মন্তব্য এর জন্য ধন্যবাদ।।।।

ফাহিম হাসান এর ছবি

বনসাই আমার কাছেও নিষ্ঠুরতা মনে হয়।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

আসলেই নিষ্ঠুরতা। পড়া এবং মন্তব্য এর জন্য ধন্যবাদ।

--- স্বপ্নখুঁজি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। বনসাই নিয়ে আপনার ভাবনার সাথে একমত।

২।

চীনা-জাপানিরা কেন এই গাছের খর্বাকৃতি করার পথিকৃত , তা তাদের স্বভাবজাত বলেই আমার ধারনা।

তাদের নিজেদের নাকটা একটু চাপা, চোখটা একটু ছোট।

মন্তব্যগুলো একটু আপত্তিকর ঠেকলো। তাছাড়া চীনারা সাধারণত লম্বায় খাটো, চ্যাপ্টা নাকের, ছোট চোখের এটা একটা চরম ভুল ধারণা। চীনের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম বহুবার ঘুরে এই সত্য জেনেছি। জাপানীদের কথা বলতে পারবো না - জাপানে যাইনি কখনো।

ফুটবলের জোকটাও আপত্তিকর লাগলো।

৩। লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ ও সিরিয়াস বিষয়াবলী নিয়ে লেখা। তাই সেই টোনটা ধরে রাখতে আমার ২-নং পয়েন্টে বলা বিষয়গুলো নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন।

নিয়মিত লিখুন, মন খুলে লিখুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

পড়া এবং মূল্যবান মন্তব্য এর জন্য ধন্যবাদ।।।।
আসলে জানাশোনায় মনে হয় কিছুটা ফাঁক ছিল।।আপনার মত সরাসরি দেখার অভিজ্ঞতা নাই।
গঠনমূলক সমালোচনা সবসময়ই স্বাগতম।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

আমি আসলে কাউকে বা কোন জাতিকে হেয় করার জন্য কিছু লিখিনি। কর্মঠ জাতি হিসাবে চাইনিজ-জাপানিজদের আমি সবসময় শ্রদ্ধা করি । রম্য করতে যেয়ে দুঃখ হয়ে গেছে, হায় কপাল। পড়া এবং মূল্যবান মন্তব্য এর জন্য ধন্যবাদ। গঠনমূলক সমালোচনা সবসময়ই স্বাগতম।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

বনসাই নিয়ে আপনার সাথে একমত; এটি আসলেই নিষ্ঠুরতা।
লিখা চলতে থাকুক।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

মন্তব্য এর জন্য ধন্যবাদ।

মাহবুব রানা এর ছবি

আপনার দু:খ প্রকাশকে স্বাগত।
চাইনিজদের সম্পর্কে উপরে ষষ্ঠ পাণ্ডব তো বললেনই, জাপানিজদেরকেও আমার কখনও খাটো বলে মনে হয়নি। বরং আমার আশেপাশে যাদেরকে দেখেছি তাদের অনেকের সাথেই কথা বলতে আমার চোখ উপরে তুলতে হতো। উইকি দেখুন

আর বনসাই নিয়ে আমি মত-নিরপেক্ষ। আপনার দৃষ্টিভংগি যেমন ঠিক তেমনি ক্ষেত্রবিশেষে বনসাইয়ের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। ব্যাপারটা নির্ভর করছে আপনি কিভাবে দেখছেন।

লিখতে থাকুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।