• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

অন্য জীবনের খোঁজে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৬/০৩/২০১২ - ৯:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“আরে শালা , তুই হচ্ছিস একটা ইন্টার পাশ করা ইডিয়ট , উত্তরাধিকার সূত্রে যদি এই কোম্পানির এম ডি না হইতি তাইলে তো এই কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিটাও তো ঘুষ দিয়ে পাইতি না , বুরবাক একটা! ” কথাগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতে অফিস থেকে বের হয়ে আসে সামি । এমনিতেই প্রায় সমবয়সী এই এমডিকে দেখতে পারে না সে, তার ওপর আজ নতুন একটা প্রোজেক্ট নিয়ে তাকে রীতিমতো ঝাড়ি দিয়েছে এম ডি আশরাফ । সামি হাটতে হাটতে ভাবে এই দুনিয়ার হিসাব সে কিছুতেই বুঝতে পারে না । কোথাও কোন ভারসাম্য নাই , কোন সূত্র অনুযায়ী একই মুহূর্তে একটা বাচ্চা জন্মগ্রহণ করছে স্কয়ার হসপিটালে আবার আরেকজন জন্মগ্রহণ করছে কুঁড়েঘরে । আরও আজব ব্যাপার হচ্ছে বৈষম্য দিয়ে যে জীবন শুরু হল, দিনে দিনে সে বৈষম্য কমবে তো নাই বরং প্রকট আকার ধারণ করবে । সামি আরও কিছুক্ষণ এই তত্ত্বজ্ঞান অনুসন্ধান অব্যাহত রাখতে পারত কিন্তু তার জুতার সোলটা একটু বেরসিক গোছের বলে কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আলগা হয়ে গেল, ফলশ্রুতিতে ল্যাংচানো ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকল না । সময়ের সাথে তার মেজাজ বর্গের সমানুপাতিক হারে চড়তে থাকল ।

রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকান দেখে থামল সামি । ‘দুধ চিনি বেশি দিয়ে একটা চা দিও তো মামা , স্পেশাল। ’ হালকা গড়নের চায়ের দোকানি বিড়বিড় করে বলে ওঠে , ‘খালি স্পেশাল! নরমাল চা খাওনের লোক নাই। সবটি আইসা কইব দুধ চিনি বাড়ায় দিতে আর টাকা দেওনের বেলায় ঠনঠনা। চায়ের দোকান না দিয়া একটা সরাইখানা দেওনের কাম আছিল।’ বিড়বিড় করে বললেও কথাগুলো কানে যায় সামির , মেজাজটা একটু বিগড়ালেও নিজেকে সামলে নেয় সে। মনে মনে ভাবে মেজাজ খারাপ জিনিসটাই একটা অতি তেজস্ক্রিয় বিক্রিয়া। একবার শুরু হলে বিভিন্ন বিষয়ে মেজাজ খারাপ হতেই থাকে আর তখন চারপাশে প্রভাবকেরও অভাব হয় না। চা মুখে দিয়েই মুখটা বিকৃত করে ফেলে সামি। লিকার বেশি হওয়াতে চা এর স্বাদ হয়েছে চিরতার রসের মতো। সামির চা দোকানিকে মুখের উপর বলতে ইচ্ছে করে, আপনি যে চা বানান তাতে সরাইখানা দিলেও লোক জুটবে না । যদিও মুখ ফুটে সে কিছুই বলে না। সভ্য মানুষের আবার অনেক কিছুতে বাঁধা। সভ্য সমাজে টিকে থাকতে হলে প্রধান যোগ্যতা হচ্ছে অভিনয় করতে হবে।

চায়ের দোকান পেরিয়ে একটু সামনে এগোতেই হেডলাইটের আলোতে চোখ ঝলসে ওঠে সামির। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে সে। নীল রঙের একটা প্রাইভেট কার ঠিক গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। কালো শার্ট আর সাদা প্যান্ট পরা সমবয়সী এক যুবক গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসে সামির দিকে। যদিও আগন্তুককে চিনতে পারে না সামি কিন্তু মুখে সভ্য মানুষের একটা সহজাত হাসি ফুটিয়ে রাখে। ‘কিরে সামি কি অবস্থা , চিনছস আমারে?’ সামি একটু বিব্রত ভাবে বলে যে সে ঠিক চিনতে পারে নি । ‘তা চিনবা কিভাবে, তোমরা মিয়া ভাল ছাত্র সায়েন্সে পড়তা, কমার্সের খারাপ স্টুডেন্টদের কি আর মনে রাখবা? আমি ফাহিম, মনে নাই কলেজের পিকনিকে তোমারে জোর করে সিগারেট টানাইছিলাম। হা হা! ’ এইবার চিনতে পারে সামি। সেই ফাহিম, জোর করে সিগারেট খাওয়ানোর জন্য যার উপর প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়েছিল সামি। কিন্তু পরবর্তীতে ফাহিমের প্রতি সে অশেষ কৃতজ্ঞতা বোধ করেছে সিগারেট নামক এই দুশ্চিন্তা নাশকারী, মল আনয়নকারী জড়িবুটির সন্ধান দেয়ার জন্য। ফাহিম সে অর্থে কখনোই ঠিক সামির বন্ধু ছিল না কিন্তু এতদিন পরেও ফাহিম তাকে মনে রেখেছে ভেবে খুশি হয় সামি, জিজ্ঞাসা করে
-তো তোমার খবর টবর কি? কি করতেছ? বিয়ে টিয়ে করছ নাকি?
-খবর, এই চলতেছে আর কি। আছি একটা মাল্টি-ন্যাশনালে, বেতন খারাপ না। গত মাসে একটা টয়োটা প্রিমিও কিনলাম। যা দিনকাল পরছে নিজের একটা ট্রান্সপোর্ট না থাকলে তো নড়াচড়াই করা যায় না। আর বিয়ে-শাদি পরে দেখা যাবে। এখন একটু মৌজ মাস্তি করি কি কও?
কথা শেষ করার আগেই মোবাইল বেজে ওঠে ফাহিমের। ফোন রিসিভ করে ফাহিম কিছুক্ষণ ওপাশের মানুষটার কথা শোনে তারপর বলে, ‘ডোন্ট ওয়ারি বেবি,আই উইল বি দেয়ার ইন আ মিনিট। ’ ফোনটা রেখেই সামিকে বলে, ‘দোস্ত! আজকে আর আড্ডা দিতে পারলাম না, আমার কার্ডটা রাখ, আমারে কল দিস, একদিন ধুমায়ে আড্ডা দিবনে। যাই দোস্ত,বাই! ’

বন্ধু ফাহিমের উন্নতিতে খুশি হওয়া তো দূরের কথা মেজাজ খারাপের ষোল দুগুণে বত্রিশ কলা পূর্ণ হয় সামির। কষ্ট করে পড়ালেখা করে, ভালো রেজাল্ট করে মাঝারি বেতনের চাকরি আর সমবয়সী এম ডির পদলেহন করার কথা ভেবে নিজের জীবনকে বড্ড অর্থহীন মনে হয় তার। মনের সাথে শরীরও অবসন্ন হয়ে আসে, আর হাটতে ইচ্ছে করে না সামির। রিকশা খোঁজ করে সে। কাছেপিঠে একটা রিকশা দেখে হাঁক দেয় সে। ‘এই রিকশা সেগুনবাগিচা যাবা নাকি? ’ রিকশাওয়ালা বলে, ‘যাব, সত্তর টাকা লাগবে।’ প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয় সামির, রিকশাওয়ালাগুলো এমন ভাব ধরে যেন এক একটা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব, ইংরেজ পোছার টাইম নাই। অন্য রিকশার খোঁজে হাটতে থাকে সামি। কিছুদূর হাটতেই এক রিকশাওয়ালা রিকশার গতি ধীর করে জানতে চায় সে কোথায় যাবে। গন্তব্য শুনে কোন দরাদরি না করেই সে যেতে রাজি হয় ‘ল্যাইজ্য’ ভাড়া পাওয়ার শর্তে। ক্লান্ত সামি আর কোন তর্কে না যেয়ে রিকশায় চেপে বসে।

সামি কিছুক্ষণের মধ্যে আবিষ্কার করে রিকশাওয়ালার গান গাওয়া ব্যাধি আছে। অন্য কোনদিন হলে হয়তো সামির ভালোই লাগত কিন্তু আজকের ঘটনা ভিন্ন। রিকশাওয়ালা হঠাৎ গান থামিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘ভাইজান, আপনের কি মন খারাপ? ’ কিছুটা অবাক হলেও সামি বলে, ‘আপনি চুপচাপ রিকশা চালান তো।’
‘স্যার কিছু মনে নিয়েন না প্রায়ই ভালো ভালো পোশাক পরা সাহেবরা রিকশায় ওঠে কিন্তু তাদের মন মিজাজ দেখি কেমুন জানি গরম থাকে। আমি তো মাথা মুণ্ডু কিছু বুঝি না। টাকা-পয়সার সমস্যা নাই, খাওন-দাওনের সমস্যা নাই, থাকার জায়গারও সমস্যা নাই, তাইলে মন মিজাজ খারাপ হয় ক্যামনে? ’
সামি ভাবে, কে বলে এদেশের শিক্ষিতের হার কম? বাঙ্গালি জাতটাই এমন যে এরা মায়ের পেট থেকে জন্মই নেয় দার্শনিক হিসেবে। খালি একটু সুযোগ পাইলেই হইছে ব্যাস। বিরক্ত হয়ে বলে, ‘আপনার এত কিছু বুঝতে হবে না। আপনি আপনার কাজ করেন। ’
‘স্যার আমি মুক্ষু-সুক্ষু মানুষ, অনেক কিছুই বুঝি না, তয় এতোটুকু বুঝি যে আল্লার দুনিয়ায় মন খারাপ কইরা থাকনের টাইম নাই, অভাব অভিযোগ করনেরও টাইম নাই। বিষয়ডা হইল আপনে নিজেরে কি ভাবেন। আপনার কাছে আমি হয়তো শুধু একটা রিকশাওয়ালা কিন্তু আমি নিজেরে কিন্তু রাজা ভাবি স্যার। আমার রাজ্য খুব ছোট স্যার, আমি, আমার বউ আর মেয়ে এই নিয়ে আমার রাজত্ব। রাত্তিরে যহন বউয়ের হাতে ২০০-২৫০ ট্যাকা তুইলে দেই, ডাল, নুন দিয়ে মাখায় ভাত খাই আর মাইয়েডা গলা জড়ায় ধরে যহন ঘুমায় তহন যে শান্তিডা পাই স্যার , কি আর কব? যে অবস্থায় থাকেন স্যার খালি কবেন আলহামদুলিল্লাহ্‌ । ঝামেলা শ্যাষ। ’ বলতে বলতে গন্তব্যে পৌঁছে যায় সামি। ভাড়া মেটানোর সময় একটু খেয়াল করে তাকায় রিকশাওয়ালার দিকে। একেবারেই সাধারণ রোদে পোড়া চেহারা, কিন্তু তার চোখেমুখে ছড়িয়ে থাকা একরাশ তৃপ্তি সামির চোখ এড়ায় না। একটু স্বভাব বিরুদ্ধ ভাবেই সামি রিকশাওয়ালার কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘ভাল থাকবেন। ’ তারপর দুইজন চলে যায় দু’দিকে, দুই জীবনের সন্ধানে।

কোথাও কিছু বদলায় নি। হাসিনা-খালেদা হঠাৎ করে প্রাণের বান্ধবী হয়ে যায় নি, মোড়ের কুকুরটাও ঘেউ ঘেউ করা থামায় নি, পাড়ার পাগলটাও উল্টোপাল্টা বকাবকি করা ভুলে যায় নি। কিন্তু শুধু সামি জানে তার ভিতরে কিছু একটা আর আগের মতো নেই। কোন এক অজানা অশিক্ষিত লোক তাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যটা শিখিয়ে দিয়ে গেছে। সামির মনে হয় সে এতদিনে নিজেকে চিনতে পেরেছে। সে শুধু একজন ভালো রেজাল্ট করা ভালো ছাত্র না, আবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদলেহন করা নয়টা-পাঁচটার চাকুরেও না, সে আসলে একজন রাজা, আরও অনেক অচেতন রাজার মতো।

# হিল্লোল


মন্তব্য

দ্যা রিডার এর ছবি

সে আসলে একজন রাজা , আরও অনেক অচেতন রাজার মত

------- আনুগল্প ভাল লেগেছে । সচলে স্বাগতম :)

হিল্লোল এর ছবি

ধন্যবাদ ।
তবে সচলে এটা আমার দ্বিতীয় লেখা।

চরম উদাস এর ছবি

(Y) বাহ

হিল্লোল এর ছবি

(ধইন্যা)

অতিথি অতীত এর ছবি

চমৎকার!!!

অতীত

হিল্লোল এর ছবি

(ধইন্যা)

এবিএম এর ছবি

বেশ ভালো লিখেছেন হিল্লোল ।
আরো লিখবেন। ভালো থাকবেন।

হিল্লোল এর ছবি

(ধইন্যা)

শিশিরকণা এর ছবি

ভাল লাগলো। বক্তব্যটা সুন্দর ও সহজ, কিন্তু আমরা কেবলই ভুলে যাই। মাঝে মনে করিয়ে দেয়ার দরকার আছে বৈকি।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

হিল্লোল এর ছবি

সেটাই , গল্পটা লিখে নিজেই নিজেকে মনে করিয়ে দিলাম আর কি ।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
হিল্লোল এর ছবি

(ধইন্যা)

Kuntal এর ছবি

বাহ, ভালো । চালায়া যা ////

হিল্লোল এর ছবি

(ধইন্যা) দোস্ত !

অদ্রোহ এর ছবি

গপ্পো ভালু পাইলাম।

(Y)

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

হিল্লোল এর ছবি

আর আপনাকে তো আমি সব সময়ই ভালু পাই । হল ছাড়তেছেন কবে ?

অদ্রোহ ২ এর ছবি

'০৮ এর হিল্লোল তুমি?
চমৎকার কনসেপ্ট।

হিল্লোল এর ছবি

জি ভাইয়া আমি '০৮ এর।
(ধইন্যা)

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

লেখককে চেনা চেনা লাগে :)

চালিয়ে যা। (Y)

হিল্লোল এর ছবি

কমেন্ট দাতাকেও চেনা চেনা ঠেকে বৈকি !
উৎসাহের জন্য (ধইন্যা)

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভালইতো। চলুক।

হিল্লোল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে। :) বেশ লাগল।

হিল্লোল এর ছবি

ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।