ওড়াওড়ির গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৭/০৩/২০১২ - ১:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

~কল্যানী রমা

Sunday, 20th June, 2010
2:30 pm

ক্লাশ টেন পাশ দেওয়ার সময় ভূগোল নিয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো অন্য বন্ধুদের মত ধর্ম যদি নেই একটা ভাল কথাই শুধু শিখতে পারব,
‘অসতো মা সদ্গময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়
আবিরাবির্ম এধি।’
আমাকে অন্ধকার হইতে আলোতে লইয়া যাও।
আমাকে মৃত্যু হইতে অমৃতে লইয়া যাও।

শুধুমাত্র পন্ডিত স্যারের অসাধারণ সংস্কৃত উচ্চারণে মোহগ্রস্ত হয়ে নিজের উপর এতটা অন্যায় করা মনে হয় ঠিক হবে না।
ভূগোল নিলাম এবং মঙ্গল গ্রহটা লাল রঙের জেনে মুগ্ধ হ’লাম। জীবনের রঙগুলো সবসময়ই আমায় মোহগ্রস্ত করে।
যদিও পরে দেখা গেল বিজ্ঞান বইতে রঙধনু বিষয়ে নানা তথ্য প্রমাণ থাকলেও রঙধনুটাও আসলে
জলরঙ-ই। তাই রঙধনুও এক বৃষ্টির জলে আকাশে আঁকা হয়, অন্য বৃষ্টিতে তা ধুয়ে যায়।
নাহ, আজো শিখলাম না। মঙ্গল গ্রহর গল্প বলতে এসে শুরু করে দিলাম রঙধনুর কথা বলা।
আসলে কিছু মানুষ থাকে ক্লিনিকালি অটিস্টিক। আর কিছু মানুষ - ননক্লিনিকালি।
সারা জীবন তারা শুধু বারবার পথ ভুল করে।
সারা জীবন তারা শুধু এক কথা বলতে শুরু করে অন্য গল্পে গিয়ে থেমে পড়ে।
সারাটা জীবনই শুধু বুদ্বুদের ভিতর বসবাস। শিবের ত্রিশুল দিয়ে খোঁচা দিলেও বুদ্বুদটা ফাটে না। পার্বতীর ধ্যান।

এস, আবার মঙ্গল গ্রহের কথা বলি । মঙ্গল গ্রহটা পৃথিবী থেকে খুব দূর নয়। পৃথিবী থেকে খুব সহজেই খালি চোখে তা দেখা যায়।
এবং সেই মঙ্গল গ্রহেই থাক তুমি!
রহস্যটা উদ্ধার হ’তেই বুঝতে পারলাম তোমার কাছে পৌঁছাতে হ’লে ওড়াওড়িটা আরো ভালো করে শিখে ফেলতে হবে আমায়।

অবশ্য যখন খুব ছোট ছিলাম, আমার দৃঢ় বিশ্বাস তখন থেকেই আমি ভালো উড়তে পারি। আর পারব নাই বা কেন? এমন একটা দেশে জন্ম, যেখানে জন্মের পরই ডানাটা কেটে দেওয়া হ্য়। কচি কলাপাতা শরীর, পাখায় কালো ছিট ছিট, আর মাথাটা হলুদ রঙের বাজরীগার পাখীর মত।
সবসময়ই সত্যিকারের ওড়াওড়ি শুধু খাঁচার ভিতর। আর আকাশের ওড়াওড়ি সব মনের ভিতর।
আর আশ্চর্য হ’লেও সত্য যে পুরো দেশটা খাঁচার ভিতর ওড়াওড়ি করেই দিব্যি বেঁচে আছে।
তুমি যদি সকালবেলা মর্নিং ওয়াকে বের হও, মর্নিং ওয়াক সেরে ফিরে আসবার মধ্যেই দেশের যে ক’টা লোক গান করতে পারে, কবিতা লিখতে পারে কিংবা বই পড়তে পারে – সব ক’টাকে দেখে ফেলবে। খাঁচা আর কতই বা বড় হয় বল!
তাও ভাল প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা যখন প্রচন্ড গরমে বেলীফুল ফুটে উঠত, তখন ‘কারেন্ট’ চলে যেত। পরে কে যেন খবর দিল ‘কারেন্ট’ নাকি সবসময় থাকে, আসলে ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। তা সে যে মহারথীই থাকুক, আর যে মহারথীই যাক, আসল খবর হ’ল অমন অন্ধকার হয়ে গেলেই ফ্ল্যাটের সবাই একসাথে বারান্দায় পা ছড়িয়ে, চোখ বন্ধ করে গেয়ে ফেলবার সুযোগ হ’ত,‘দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোক তবে তাই হোক।’ গরমে, ঘামে জামা কাপড় যত জবজবে হয়ে ভিজে উঠত, তার থেকে বেশী ভিজে উঠত চোখ।
তবে আলো না থাকলে একটাই খালি দুঃখ হ’ত - বই পড়তে পারতাম না। সত্যিকারের উড়ে বেড়ানোর কলা-কৌশল তো সেখানেই লেখা থাকে। মাঝে, মাঝে এত্ত রাগ হ’ত যে মনে হ’ত হ্যারিকেনটা নিয়েই ঢুকে পড়ি বিছানার কাঁথার নীচে। সারা বাড়িতে আগুন টাগুন জ্বেলে কাঁথামুড়ি দিয়েই পড়ে শেষ করি কালকের অর্ধেক শেখা উড়ে বেড়ানোর নতুন কৌশলটুকু।
অবশ্য এইসব ওড়াওড়ি শিখে ফেলবার আর অনেক গূঢ কারণও ছিল। সরস্বতী পূজার দিন খাগের কলমটা দিয়ে ঠিক কিভাবে ‘অ’ লিখতে হয় থেকে শুরু করে, ‘ওরে পা টা একটু জড়ো করে বস্, মেয়েদের ওমন চিৎ হয়ে হাঁটা কি, বুকটা ওড়না দিয়ে ঢাক্’ – একের পর এক এমন সব নোটিশ ঝোলানো থাকত আমাদের পাড়ার প্রত্যেকটা ল্যাম্প-পোষ্টে যে দৌড়ানো তো দূর অস্ত, হাঁটতেই ভুলে যাবে মানুষ। তার উপর ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, জলচ্ছ্বাস, দুর্ভিক্ষ, মাটিতে হাঁটবার জুতা কিনবার পয়সা নেই - না উড়ে আর উপায় কি?
পাড়াটা সত্যিই এমনই অদ্ভুত যে সেখানে যাদের ভালোবাসা যায় তাদের হাত ধরে দিনের আলোয় সকলের সামনে দিয়ে রাজপথ দিয়ে হাঁটাটা ঠিক যতটা অস্বাভাবিক ঠিক ততটাই স্বাভাবিক বিছানার তোষকের নীচে সব যৌনতা এবং বিকৃতির সাথে ঘুমিয়ে থাকা।
পুরো দেশটায় লোকজনের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষগুলোর শরীর কেউ কোনদিন ছুঁয়ে দেখত না। মন তো আরো দূর অস্ত।
পাবলিক বাসে, ট্রামে কোথাও কোন ক্লিভেজ নেই। তবু সালোয়ার, কামিজ পড়া, বোরখা পড়া মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা যে কোন নরম শরীরের উপর হাতের চাপগুলো বাড়তেই থাকত। সবকটা নিতম্ব এবং স্তন স্পর্শ শেষ করে যখন আর কিছুই ছোঁয়া বাকি থাকত না তখন ফ্যাঁ ফ্যাঁ করে হাসতে হাসতে হাতগুলো শুন্যে ঝুলে থাকা ওড়নাটা ধরেই একটু টান দিত।
প্রচন্ড অশ্লীল সিটি বাজতে থাকত। ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার থেমে থাকা ফেরীটার পাশে লুঙ্গিগুলো অশোভনভাবে হাঁটুর উপরে উঠতে থাকত। বাড়তে থাকত এক হাত দিয়ে একটা গোল করে অন্য হাতের আঙ্গুল তার ভিতরে ঢুকিয়ে ঠিক কি ভাবে কি করলে মানুষের জন্ম হয় তা দেখানোর সচিত্র ডেমনেস্ট্রেশন।
দশ বছরের আমি যমুনা নদীর জল আর না দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলতাম। নেশাচ্ছ্বন্নের মত বিড়বিড় করে বলতে থাকতাম, ‘আলো দাও। ঠাকুর, আলো দাও। জ্ঞান দাও। বিদ্যা দাও। বুদ্ধি দাও। আলো দাও।’
আমাকে অন্ধকার হইতে আলোতে লইয়া যাও।
আমাকে মৃত্যু হইতে অমৃতে লইয়া যাও।
‘অসতো মা সদ্গময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়
আবিরাবির্ম এধি।।’
অজানা ভাষায় মন্ত্র টন্ত্র পড়া যত বাড়ত, তত কোথাও একটা বড় চাঁদ উঠে পড়ত। মহুয়া ফুলের গন্ধে চারিদিক মাতাল হয়ে যেত। ঢোলের শব্দ অস্ত্বিত্বের সমস্ত সিটি বাজানো ছাপিয়ে আকাশ ভরে তুলত।
এবং কেবলমাত্র মাটি রঙের কালো, কালো ছেলে আর মেয়েদের গান আর পায়ের তাল দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকত।
সেই দেশটায় সাঁওতাল ছাড়া আর কেউ নাচ করে না।

Monday, 21st June, 2010
2:30 pm

এভাবেই ছেলেবেলা থেকে প্রতিদিন কোনমতে দিনটা আমার পার হ’ত। তারপর ঠিক যখন বিকেল নামত, আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। আমার মন খারাপের লেপ-তোষক নিয়ে একদম পা ছড়িয়ে বসে পড়তাম।
মা বলত, ‘এই জন্যই সন্ধ্যাবেলা হাত, পা ধুয়ে সারা দিনের ময়লা জামা কাপড় ছেড়ে ঠাকুর ঘরে ধূপ জ্বালতে হয়। ঠাকুর দেবতাকে বাতাসা দিলে ঠাকুর দেবতা মানুষের মঙ্গল করেন।’
সাত আট বছর বয়স পর্যন্ত কথাটা অনায়াসে বিশ্বাস করা গেল। কিন্তু তারপর সেই যে গানের বাড়িটা ছিল, যার সামনে জুঁই ফুলের গেট, বাগান ভর্তি দোলনচাঁপা, বড় বড় মেরুন রঙের ডালিয়া, হলদে রঙের সূর্যমুখী, বাড়ীর সবাই গান করে, এমন কি বাবা পর্যন্ত। বাড়িটার সামনে বাচ্চাদের একটা পার্ক ছিল। বড়ই গরীব দেশ, তাই স্লাইডগুলো সিমেন্টের।
যে দেশে কারো ছেলেবেলাই নেই, সে দেশে স্লাইডগুলোকে তো সিমেন্টেরই করতে হয়। যে কোন সময় নয়ত তা ভেঙ্গে পড়বে।
স্লাইডগুলো ছাড়াও পার্কটায় ছিল অনেক কদম ফুলের গাছ।
ছেলেবেলায় আমাদের পিগি ব্যাঙ্ক তো ছিল না। কিন্তু লাল পোড়ামাটির ব্যাঙ্ক জুটত প্রত্যেক রথের মেলাতে দাদুর হাত ধরে গিয়ে। তারপর অনেক অপেক্ষার পর একসময় ব্যাঙ্ক ভেঙ্গে ঝমঝম বৃষ্টির মত চারপাশে ঢেউ খেলানো দশ পয়সা, চারকোনা মত পাঁচপয়সাগুলো পড়ত – আমি কদমফুলের কথা ভাবতাম। এই বেয়াল্লিশ বছর বয়সেও সেই দুরাবস্থাটা আমার কাটল না। পয়সার ঝমঝম শুনলে বৃষ্টির কথা মনে পড়ে, কদমফুলের কথা মনে পড়ে।
গানের বাড়িটার সামনের ওই স্লাইডটার নীচে একদিন বিকেলবেলা তাই লাবণ্যর সাথে জটলা করে ঠিক করেই ফেললাম - আমাদের জীবনে পয়সার ঝমঝম শব্দ নিয়ে কোন রকম যখন মিথ্যে কথা নেই, কোন রকম ভুল ধারণা নেই, পয়সার জন্য কোনদিন কাউকে কষ্ট দিতে হবে না, কোন পাপ করতে হবে না, খুন করে ফেলতে হবে না কোন, তখন পরকালের মুক্তির জন্য ঈশ্বরকে ছাড়াও আমাদের চলে যাবে।
আর এই পাপ করা, না করা এবং পাপ ক্ষয়ের মূল্যবান সব উপায় এবং কারণ ছাড়াও আমাদের স্বর্গের লোভ সেই ছেলেবেলাতেই একদম কেটে যাওয়ার আরো একটা কারণ ছিল।
স্কুলের মাঠ থেকে ফিরছিলাম সেদিন। দুপুরচন্ডী ফুটেছিলো বারান্দার টবে। আমাদের দু’জনেরই মাথায় দু’টো করে বেনুনী। পরনে নেভী ব্লু স্কার্ট, শাদা শার্ট। পাটের সোনালি স্কুলব্যাগ বুকের এপাশ থেকে ওপাশ ঝুলছে। ওজন আমাদের থেকে বেশী।
চিরকালের গর্বিত আমি ঘোষণা দিয়ে ফেললাম, ‘আমার গ্রিমস টেলস পড়া হয়ে গেছে। হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনও প্রায় শেষ। ‘উভচর মানুষ’, ‘কাশতানকা’... দেখিস আর দুই এক বছরের মধ্যে আমি তোদের বাসার সব, সব বই পড়ে ফেলব!

‘ঠিকই বলছিস মনে হয়, আনন্দ!’
লাবণ্য মাথা নেড়ে সায় দিয়ে ফেলল। আমি যা বলি ও সবকিছুতেই তো সব সময় সব দ্বিধা নিয়েও মাথা নেড়ে সায় দিয়ে চলেছে। বন্ধুত্ব মানে ওমনই তো!

কিন্তু কয়টা দিন যেতে-ই বুঝতে পারলাম, অবস্থা বেগতিক। লাবন্যদের বাড়ির প্রত্যেক ঘরে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বই। আর পৃথিবীতে এত শুধু একটা বাড়ি, পৃথিবীটা কত বড়, কত ঘর, কত বই...
দিশেহারা আমাদের ওই সব পড়তে পড়তেই এমন সন্ধ্যা হয়ে মাগরিবের আজানের সময় হয়ে গেল যে এই বেয়াল্লিশ বছর বয়সেও কোনদিন লুকিয়ে চুরিয়েও কোন পর্নো ম্যাগাজিনের এক পৃষ্ঠা উল্টে দেখা হ’ল না। ভিডিও আনা হ’ল না কোন এডাল্ট ক্লাব থেকে।
এবং আমরা ভাবলাম আমাদের যেমন ওই সব ছাইপাশ পড়বার সময় হচ্ছে না একদম; আমরা যাদের ভালোবাসব, যাদের সাথে থাকব, সেই সব ছেলেদেরও মৃত্যুর পর বেহেস্তের হুরপরী কিংবা স্বর্গের অপ্সরা দেখবার কোন ইচ্ছেই হবে না কোনদিন। ঈশ্বরকে ভালোবাসবার শেষ লোভটুকুও জলে ডুবে মারা পড়ল।
তবু প্রায় বছর দশ আগে, মাত্র বিয়ে করেছি বাড়ি থেকে পালিয়ে। জীবনের ভিতর রূপকথার রাজকুমার নেমে পড়েছে যেন স্বপ্নের দেশ থেকে।
আমার প্রাণের বন্ধুর ফোন এল।
“আনন্দ রে, আর এক সাথে থাকতে পারলাম না জানিস। ও আমাকে সেদিন ইন্টারস্টেটের ধারে নিয়ে গিয়েছিলো! আমায় রাস্তার পাশে অন্ধকারে নামিয়ে দিয়ে বলল, ‘তোমার নাম বলতে হবে না। তুমি শুধু অজানা ওই লোকটার সাথে একটু সেক্স করো। আমি দেখব!’ ”

ইন্টারস্টেটের উপর দিয়ে বাতাসের চেয়ে বেশী স্পিডে গাড়ি চালানো আমার শুধু বন্ধ হয়ে গেল।

Tuesday, 22nd June, 2010
2:30 pm

ঈশ্বর বিদায় হ’ল; কিন্তু নিজের মা, মাসী, চাচা, চাচীর জায়নামাজ আর মঙ্গলশাঁখগুলো বৃষ্টির পরের ভেজা, সোঁদা মাটির মত মনের ভিতর থেকে গেল। ফলস্বরূপ অবস্থাটা খুবই সঙ্গীন হয়ে পড়ল।
‘ওরে, ঠাকুর-কে জল দিয়েছিস কি? অনেক তো বেলা হ’ল।’

‘এই যে, মুখস্থ হয়েছে কি, লা, ইলাহা, ইল্লা আনতা সুভহানাকা ইন্নাকুন্তুম মিনাজ জলেমীন?’

মিলাদ শরীফের লাড্ডু খেতে, খেতে সেই ছেলেবেলা থেকেই এইভাবে মুখে এক আর মনে আর এক করে বড় হওয়াটা ভালো রকম অভ্যাস হয়ে গেল।
এবং শুধুমাত্র এইসব নানা কারণেই ঈশ্বরের মৃত্যুর পরও ঈশ্বরের ধ্বংসাবশেষ ঝিঁঝিঁপোকার মত আমাদের জীবনে থেকে গেল।
আমরা স্বপ্নের ভিতর ওই সব মৃত কবিদের সাথে সব ফুলের পাপড়ি ‘বিপুল অন্ধকারে’ ঝরিয়ে কন্যাকুমারী পর্যন্ত হেঁটে যেতে রাজী হয়ে গেলাম।
পঁচিশ বছর প্রতিদিন হেঁটেও আলাস্কা থেকে কোন গ্রেট বেরীয়ার রিফ পর্যন্ত পৌঁছব না জেনে একটা ছেঁড়া কালো রোজারি হাতের ভিতর মুঠো করে সিকামোর গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকলাম। বাকী জীবন সিকামোরের পাতা শন্ শন্ করে শুধু জানিয়ে গেল বুকের ভিতরের সব হুঁ হুঁ করাগুলোকে আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতা কোনটা দিয়েই আসলে স্বীকার করা যায় না।

এবং সবশেষে একটি সোনালি মেয়ে কোনদিন চিদাম্বরামে কোন প্রাচীন নটরাজের মন্দিরে না গিয়েও বরফের উপর সূর্যের শেষ আলোর মত আমাদের মোহগ্রস্ত করে শুধু বলে
গেল –
“Angikam bhuvanam yasya
Vachikam sarva vangmayam
Aharyam chandra taradi
Tam vande satvikam sivam.”

তিল্লানায় পৌঁছে বিপুল ভালোবাসার বিশুদ্ধ্বতায় আমরা শুধু ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

(গুড়) চলুক

Kalyani Rama এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এত্ত উত্‌সাহ দেওয়ার জন্য।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
Kalyani Rama এর ছবি

হাসি

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

Kalyani Rama এর ছবি

Onek Thanks!

হিমু এর ছবি

সচলায়তনে রোমান হরফে লেখা মন্তব‌্য প্রকাশিত হয় না। আপনি কনট্রোল + অল্ট + পি চাপলে ফোনেটিক লেআউটে সচলে বাংলা লিখতে পারবেন, কোনো ধরনের বাড়তি সফটওয়্যার ছাড়াই। ধন্যবাদ।

Kalyani Rama এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এটা বলবার জন্য। তাই তো বলি সকলের কমেন্টের উত্তর দিচ্ছি, অথচ তারা কোথায় যাচ্ছে। হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনার লেখার ধরন মনকাড়া। ভালো লাগলো খুব। চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

Kalyani Rama এর ছবি

কষ্ট ক'রে, সময় বের ক'রে লেখা পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন।

দময়ন্তী এর ছবি

অসম্ভব ভাল, আগের লেখায়ও বলেছিলাম| হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

কল্যাণী রমা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! হ্যাঁ, আসলে হ'ল কি এখানে যে রোমান হরফে কমেন্ট লেখা যায় না, জানতাম না। তাই আগের পোস্টে যা কমেন্ট লিখেছিলাম, সব আর এল না। খুব দুঃখিত। আপনি সময় নিয়ে পড়ছেন লেখা বলে বড় ভালো লাগছে।

তিথীডোর এর ছবি

আপনার লেখার ভঙ্গিটা চমৎকার! চলুক চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

কল্যাণী রমা এর ছবি

হাসি খুশি হ'য়ে যাই তো এমন কথা শুনলে! অনেক ধন্যবাদ!

mili tabassum  এর ছবি

মন খারাপ করা লেখা, ভাল লাগল

কল্যাণী রমা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! যদি সব মন খারাপগুলো লিখে ফেলতে পারি হয়ত শেষে মনটা ভালো হ'য়ে যাবে। কে জানে!

পথিক পরাণ এর ছবি

শব্দের পরতে পরতে আপনি অনেক ভাবনা ছড়িয়ে দিতে জানেন--- চলুক

আরও পড়বার অপেক্ষায় রইলাম---

----------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---

কল্যাণী রমা এর ছবি

ভাবছি যদি সব উথাল পাথাল ভাবনাগুলো সত্যি সত্যি লিখে ফেলতে পারতাম! অনেক ধন্যবাদ উত্‌সাহ দেওয়ার জন্য।

চরম উদাস এর ছবি

মুগ্ধ হয়ে লেখাটা পড়লাম। আপনি লিখুন বেশী করে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, সত্যিই খুব ভাল লাগলো। চলুক

cresida  এর ছবি

অসাধারন আপনর লেখনী। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, যে এতো মোহাবিষ্ঠ ভবে লেখে, যার বর্ণনা এত সাবলীল আর সতেজ, তার কথা বলার ভাঙ্গি নিশ্চই অনেক সুন্দর। তাৎক্ষনিক ভাবে সেই কথা না শুনতে পারার হাজারো অপারগতা যে হাহাকার বা অপূর্নতার জন্ম দেয়, তা উপভোগ্য ।

আপনাকে শুভকামনা অনেক।

cresida

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

মোহাবিষ্টের মত পড়ে ফেললাম। আজ সকালে অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিতে নিতে ভাবছিলাম, জীবন নিংড়ে মানুষ হচ্ছি না সংসার নিংড়ে। পলাশ ফুলের জন্য বুকের ভেতর কান্না জমে যাচ্ছে, যে কান্না শুধু আমিই করি, আর আমি দেখি। একটু আগে একজন জিজ্ঞেস করল "বিয়ে হয়েছে? আমি বললাম, 'করিনি' তিনি আবার বলেন, বিয়ে হয়েছে, আমি জোর করে বললাম বিয়ে করিনি, তখন পাশের জন যোগ করে দিল, 'বাবা-মা করায়নি'। রাগে কী যে মনে হচ্ছিল! তারপর রাগ করে সচল খুললাম, আপনার লেখাটায় চোখ আটকে গেল। পড়লাম। মনে হল, আমার কথাগুলোই আপনি লিখেছেন। মনে হচ্ছিল, মনের কথাগুলো উড়ে গিয়েছিল আপনার কাছে!
আরো লিখুন বুবু, আরো লিখুন, পড়ি। পড়ে মনটাকে শান্ত করি।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

অসম্ভব ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম। সাথে অল্প এক্টু মন খারাপ। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

নাশতারান এর ছবি

প্রথম প্যারা পড়তে পড়তেই থমকে গেলাম। 'অটিস্টিক' শব্দটা কোন অর্থে ব্যবহার করেছেন? আশা করি এ বিষয়ে বিশদ ধারণা রেখেই লিখেছেন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

cresida  এর ছবি

বুনোহাঁস ভাই@ আমার মনে হয়, "অটিষ্টিক" শব্দটা শুধু "ব‌্যতিক্রম" হিসেবে বা সেই অর্থে নেয়া যায়। পাঠক হিসেবে বললাম; লেখিকা বিষদভাবে বলতে পারবেন। আশা করি আমার পাকনামো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

cresida

মুস্তাফিজ এর ছবি

লেখার প্রেমে পড়লাম।

...........................
Every Picture Tells a Story

কুমার এর ছবি

ভাল্লাগ্লো চলুক

নিলয় নন্দী এর ছবি

আধেক গদ্য কবিতা... আধখানা দিনপঞ্জী...
ছড়ানো দুঃখ... কিছু ভালো লাগা...
সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা লেখা।
নিয়মিত লিখবেন। চলুক চলুক চলুক

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই লেখাটা আমাকে কোথায় নিয়ে গেছে বলতে পারবো না, কিন্তু স্তব্ধ হয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ। আপনার লাইনগুলো পাঠকের মগজে বসে যায় শক্ত করে। শব্দের বুনুনির মধ্যে যাদু আছে বলতেই হয়। এমনতরো কিংবা অন্যতরো আরো লেখা চাই আপনার। চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।