একটা পরিসংখ্যানে চোখ আটকে গেলো আজকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর Statistical Yearbook of Bangladesh 2010 এর 3.17 টেবিল অনুযায়ী বাংলাদেশে স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রীধারী বেকার পুরুষ ৪.৪৮ শতাংশ এবং বেকার নারী ১০.৩১ শতাংশ, প্রকৌশল বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিগ্রীধারী বেকার পুরুষের সংখ্যা ৪.৭৮ শতাংশ এবং নারীর সংখ্যা ১৬.৯৯ শতাংশ। দেশের এরকম শিক্ষিত ও যোগ্য শ্রেণীর নারী ও পুরুষের বেকারত্বের হারের এই পার্থক্য আমার কাছে যথেষ্ট দৃষ্টিকটু লেগেছে। দেশের সুযোগ সুবিধার অভাবের ব্যাপারটা মাথায় রেখেও এই পার্থক্য মনে যথেষ্ট প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। নারীর বেকারত্বের এই হার কি ঐচ্ছিক বেকারত্ব নির্দেশ করে না? জনবহুল এই দেশে শিক্ষার সুযোগ যেখানে সব অর্থেই সীমিত সেখানে শিক্ষিত শ্রেণীর নারীর বেকারত্বের এই হারকে কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় কি?
এখনো কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার সুযোগ হয়নি, বাস্তবে পরিস্থিতি আসলে কতটুকু কঠিন তা ঠিক আমার পক্ষে বিচার করা সম্ভব নয় তা মানছি। তবে একই পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ৩০-৩৪ বছর বয়সী নারীদের মোট বেকারত্বের হার ৫.২৪ শতাংশ। দেশে কর্মজীবী নারীর এই সংখ্যা দেখে এটাও ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনা যে সবকিছু সামলে নিয়ে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা অসম্ভব কোন ব্যাপার। আজকালকার নারীরা যেভাবে সবকিছু সামলে সামনে এগিয়ে চলেছেন তাতে ১০.৩১ বা ১৬.৯৯, বেকারত্বের এই হার নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা আরো হারিয়ে ফেলে।
প্রথমত, দেশের বৃহত্তর একটা অংশ যখন শিক্ষার সুযোগের ইঁদুর দৌঁড়ে ক্রমাগত খেই হারায় তখন সুযোগ পেয়ে ব্যবহার না করাটা মোটেই ন্যায়সঙ্গত নয়। এটা এক ধরণের দায়বদ্ধতাই বলতে পারেন। যেহেতু আপনি ইতোমধ্যেই একটা জায়গা দখল করেছেন তার মানে কেউ না কেউ এখান থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, এখানে আপনি নিজের সম্ভাবনাকে কাজে না লাগানোর মানে হলো আপনি নিজের সাথে সাথে আরো একটি সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছেন। আপনি হয়তো অন্যক্ষেত্রে সফল হচ্ছেন, সফল মা হচ্ছেন। সুযোগ্য সন্তান উপহার দিয়ে ভাবছেন আমি যে দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেটাতো পালন করলাম সঠিকভাবে। কিন্তু ঐ যে যিনি আপনাকে জায়গা ছেড়ে দিলেন তার কথা ভেবেছেন কি?
দ্বিতীয়ত, আপনি নিজের পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকছেনতো? জীবনের প্রথম প্রহরটা এই যে এত কষ্ট করে জ্ঞান অর্জন করছেন, তা কাজে লাগাতে না পারার কোন আফসোসই কি নেই? অথবা আজ হয়তো পরিবার নিয়ে, সংসার-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অনেক কিছুই চিন্তা করার অবকাশ পাচ্ছেন না, ভাবছেন বেশতো আছি। কিন্তু ছেলেটা বা মেয়েটা যখন একটু বড় হয়ে গেল, আর তাকে স্কুল-কলেজে নিয়ে যেতে বা আনতে আপনাকে প্রয়োজন হচ্ছে না। তার পড়াটা তৈরি করে ফেলছে আপনার সাহায্য ছাড়াই। এখন হয়তো আর আপনার সাথেই থাকছে না, তাকে তার জীবনের খাতিরে থাকতে হচ্ছে অন্য শহরে। তখন আপনার জগৎটা কি নিয়ে? জীবনের শুরুতে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এই সময়টার কথা ভেবে নিয়েছিলেনতো?
অনেক পুরুষকে আবার বলতে দেখেছি, এই যে সন্তানের জন্য মায়ের সবকিছু ছেড়ে ঘরমুখী হয়ে ওঠা এর মাঝেইতো নারীর জীবনের সার্থকতা। এমন আত্মত্যাগ শুধু একজন নারীর পক্ষেই করা সম্ভব। এতেই নাকি নারীর জীবন মহিমান্বিত হয়ে ওঠে। সন্তান যেমন মায়ের কাছে অনেক স্পেশাল তেমনি আমি দেখেছি মায়েরাও সন্তানের কাছে সবসময় মা-ই। তাকে নতুন কোন মহিমায় ভাস্বর হতে হয়না। তাই বারবারই মনে হয়েছে মা হয়ে ওঠার জন্য এতোটা আত্মত্যাগেরও প্রয়োজন আছে কি? আমার সবসময় মনে হয়েছে সন্তানের জন্য নিজের সব ছেড়ে ঘরে বসে থাকা সন্তানের উপর একটা বাড়তি চাপ তৈরি করে। এখান থেকেই শুরু হয় চাওয়া-পাওয়ার হিসেব না মেলা সমীকরন। নিজের জীবনটা তাই এসব কথাই কান না দিয়ে নিজের মত করে গুছিয়ে নেয়াই কি শ্রেয় না? একজন কর্মজীবী মা কি সন্তানের অনুপ্রেরণা আর আত্মবিশ্বাসের উৎস হয়ে উঠতে পারেন না?
আরও শুনেছি শিশুরা আসলে মাকে যেভাবে মিস করে, বাবাদেরকে সেভাবে করে না। তাই মাকেই সব দায়িত্ব নিতে হয়। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, আমাদের বাবারা মিস করতে শেখার মত সময়টুকুও তাদের সন্তানদের দিয়েছেন কিনা। আমরা সবাই কি জীবনের কোন না কোন সময় বা অনেকে হয়তো সবসময়ই বাবাদের মিস করিনি? কিন্তু এটা হয়তো কখনোই সেভাবে ভেবে দেখা হয়নি। কখনো এই প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে হয়না। সেইযে একটা সামাজিক কাঠামো গড়ে ঊঠেছিল সেটাই চলে আসছে এখনো। মায়েদের বাইরের দায়িত্ব বেড়ে গেলেও ঘরের দায়িত্ব তেমন একটা কমেনি। কিন্তু এই শৃঙ্খলকে উৎসাহিত না করে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মায়েদেরই এই দায়িত্ব নিতে হবে। সবকিছুই নিজের মাথাই তুলে না নিয়ে সংসারে ব্যালান্স আনার চেষ্টা করুন, বাবাদেরকেও নিজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন।
আমি আমাদের ঘরে ঘরে থেকে যাওয়া অসংখ্য হোমমেকারদেরকে একটুও ছোট করে দেখছি না। তাদের জন্যই এখনো আমাদের টক-ঝাল-মিষ্টি আচারগুলো বা শীতের পিঠাগুলো নতুন নতুন মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে। তারা কিন্তু যতটুকু দেয়ার ক্ষমতা রাখেন পুরোটুকু নিংড়ে দিয়ে দিচ্ছেন আমাদেরকে। যতটুকু সুযোগ পেয়ে ছিলেন তার পুরোটাই ব্যবহার করছেন, কোনই গাফিলতি করেননি। আমি শুধু বলছি পুরুষ এবং নারীর বেকারত্বের হারকে যারা ৪.৪৮ থেকে ১০.৩১ এ বা ৪.৭৮ থেকে ১৬.৯৯ উন্নীত করছেন তাদের কথা।একটু ভেবে দেখবেন শুধুমাত্র মা বা কারো স্ত্রী পরিচয় নিয়ে সারাজীবন খুশি থাকতে পারবেনতো? যে উচ্চাশা নিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন জীবনের একটা পর্যায়ে এসে সেগুলোকে দূ্রেতো ঠেলে দিলেন, কিন্তু তাদেরকে ছেড়ে আপনি কতটুকু সম্পূর্ণ সেটাও আগেই একবার ভেবে দেখবেন।
-নীলম
( আমার প্রথম লেখা। কিছু কিছু জায়গায় অসংগতিপূর্ণ মনে হতে পারে, আশা করছি ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন।)
মন্তব্য
যেই সমাজে শরীফ ছাগু হায়াতের মতো শুয়োর মানসিকতার প্রাণি বেড়ে ওঠে সেই সমাজে নারীরা কেউ কেউ যে অন্তত মানুষের মতো বাঁচতে পারছেন সেটাই আমাদের সৌভাগ্য!
মানসিকতা না বদলালে সমাজ বদলানো সম্ভব নয়। নারী এবং পুরুষ সকলক্ষেত্রে সমান অধিকার, সুবিধা এবং সম্মান পাবেন। নারী বরং প্রাকৃতিক কারণে পুরুষের চাইতে অনেকক্ষেত্রেই বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। এবং অবশ্যই নারী কোনোক্ষেত্রে কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই পুরুষের মুখাপেক্ষী নয়। এই সত্য যতক্ষণ আমরা বুঝতে এবং মানতে শিখব ততক্ষণ আমরা পূর্ণ মানুষ নই।
আমরা মানুষ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত আমাদের মায়েরা নির্যাতিত হবেনই!
সচলে স্বাগতম। লেখা চলুক। আরো বড় এবং বিস্তারিত লেখা দিন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কার কথা কন?
ভাই, শরীফ আবু হায়াত অপু সাহেবের কথা কচ্ছেন নাকি?
এই লোকটা পুরাই তালেবান মানসিকতার:-/
আমার ধারণা, ভাল ডে-কেয়ার ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষিত নারীর বেকারত্বের হার অনেক কমে আসত।
ভাই "there is the will there's a way"
আরও মজার ব্যাপার হল এখন অনেক মেয়েই গর্ব করে বলেন, "না পড়াশুনা শেষ করে আমি কোন কাজ করব না, আমার ফ্যামিলি রাজি হবে না (তাদের নিজেদেরই কাজ করার কোন ইচ্ছা আসলে নেই) বা কাজ করার আমার তো কোন প্রয়োজন নেই - আমার বাবার/ স্বামীর যথেষ্ট আছে"!!!!!
এদের দেখে আমি অবাক হই- মানুষ নিজের স্বত্বাকে কতটা ছোট করতে পারে!
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় স্নাতকোত্তর মেয়েদের বেকারত্বের হার আরো বেশি হওয়ার কথা। বিয়ের পর সংসারের জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে দেখেছি অনেক মেয়েকে, তেমনি অনেক মেয়েকে দেখেছি বিয়ের জন্যই স্নাতকোত্তর করতে। বড় ডিগ্রী বিয়ের বাজারে দাম বাড়াতে সহায়ক। এই দুই শ্রেণী মিলে সংখ্যাটা আরো বেশি হওয়ার কথা।
আমার এক কলিগ বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিলো কারণ সংসার না, বিয়ের পর আর চাকরি করার কী দরকার - এই বলে।
ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে এই হার কম, কিন্তু যেটা আছে সেটাও কাম্য নয়। বুয়েটে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় একজনকে রিপ্লেস করে যে মেয়েটা চান্স পেলো, সরকারের এতগুলো টাকা খরচ করে পাশ করলো, তার বাচ্চাপালন ও সংসারের বাজার করার মাঝে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়াকে মেধার অপচয় মনে করি। আমার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুদের মাঝে ৩জন আছে এই রকম। এর মধ্যে একজন আবার মাস্টার্স ভর্তি হয়েও বিয়ের পর ক্লাস করে নি। কেন করছে না জিজ্ঞেস করার পর বল্লো "বিয়ের আগ পর্যন্ত কিছু নিয়ে থাকতে হয় বলে ভর্তি হইসিলাম"।
তবে টপলাইনে শিক্ষিত মেয়েদের ইচ্ছাকৃত বেকারত্বের কারণ হয়তো কর্মক্ষেত্রে নারীঅবান্ধব পরিবেশ।
আমি একটু ভিন্নমত পোষণ করি। অনেক প্রতিষ্ঠান নারীদেরকে কর্মে নিয়োগ দিতে চাননা। ওয়োগ্যতা থাকা সত্বেও। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পদোন্নতিতেও একই রকম। বলে "মহিলা মানুষ, পারবে না এত ঝামেলা করতে"। বিশেষ করে মার্কেটিং, সেলস, বা অন সাইট জব গুলোতে নারীদেরকে নিয়োগ দিতে অনাগ্রহ দেখা যায়।
এটা ঠিক যে উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পাওয়া অনেক সময় পুরুষের জন্যও কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। নারীদের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে তা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং, এটা অস্বীকার করি না। কিন্তু অনেক আগে থেকেই যদি কোন নারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকে যে চাকরি করার মত কষ্ট করবে না, তাহলে আর ক্যামনে কি। অনুকূল পরিবেশেও তো সে চাকরি করবে না।
আচ্ছা একজায়গায় মনে হয় আমাদের ভুল হচ্ছে। বেকারের সংজ্ঞা নিয়ে। কাজ করার ইচ্ছা, যোগ্যতা থাকা সত্বেও যিনি বিগত চার সপ্তাহের অধিক সময় ধরে কাজ খুঁজছেন তিনিই বেকার। যিনি কাজ খুজছেন না, কিন্তু যোগ্যতা আছে তিনি কিন্তু বেকার নন।
চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের এত কোটা থাকার পরও এই অবস্থা!!!!!!!!!!!!!
পোস্টের সাথে সম্পূর্ণ সহমত।
খুবই অবাক হই যখন একজন বুয়েট বা মেডিক্যালের ছাত্রীর মুখে শুনি যে পাশ করার পরে তিনি চা্করি (job) করবেন না। উচ্চশিক্ষিত নারীদের উচ্চ বেকারত্বের হারের পেছনে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি নারীদের ব্যক্তিগত অনিচ্ছারও একটি অত্যন্ত বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করি। আর স্বামী-স্ত্রী উভয়ে আরেকটু বেশি সচেতন হলেই তো কর্মজীবী মায়ের সন্তান লালন-পালনের সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
অনেক নারী এবং/অথবা তাদের পরিবারের কাছে মেয়েদের উচ্চশিক্ষাটাটা কেবলই একজন ভাল স্বামী যোগাড় করার হাতিয়ার। পুরুষেরাও আজকাল কোন একটা বিচিত্র কারণে “উচ্চশিক্ষিত গৃহবধূ” স্ত্রী পছন্দ করে। উভয়ের ধারণাই পরিবর্তন করা আবশ্যক।
আবার একজন নারীর যদি নিজের কোন ভাই না থাকে সেক্ষেত্রে তার নিজের মা-বাবা-বোনের প্রতি দায়িত্বও সে অস্বীকার করতে পারেনা। এখানেও তার কর্মজীবী হবার প্রয়োজনীয়তা এসে যায়। নারীরা এ ব্যাপারে সচেতন হলে কোন পরিবার আর মেয়ে সন্তানকে বোঝা বলে মনে করে কেবলই ছেলে সন্তান কামনা করত না।
লেখিকার কাছ থেকে এরকম আরও লেখা আশা করছি। ধন্যবাদ।
উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান।
সচলে স্বাগতম।
লিখতে থাকুন।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
পরিসংখ্যানটা তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ।এতো দার্শনিক প্যাচাল না থেকে শুধু বিভিন্ন সময়ের এই পরিসংখ্যান দিয়ে কিভাবে জিনিসটা পরিবর্তন হচ্ছে সেটা তুলে আনার চেষ্টা করলে ভালো হত, বাঙ্গালীর এই ব্যাক্তিগত দার্শনিক চিন্তা তো আর এসব থেকে রেমিডি নিয়ে আসবে না। বাংলাদেশে যেহেতু ফেসবুক ব্যাবহারকারীর সংখ্যা অনেক তাই এটা ব্যাবহার করে অন্তত শহুরে মানুষদের ভিতরে ব্যাপারগুলি কেমন তার একটা statistics পাওয়া যেতের পারে, জানিনা NGO গুলির কাছে গ্রামে এই চিত্রটা কেমন তা পাওয়া যাবে কিনা, তাছাড়া NGO থেকে এসব কালেক্ট করতে কিছুমাত্রায় expertise দরকার।
লেখাটা পড়ে মনটা খারাপই হলো। আসলে এই নারীর চাকরি করা নিয়ে নেতিবাচক মানসিকতাগুলো আমাদের সমাজেরই তৈরি। পরিবর্তন দরকার।
যেখানে স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রিধারি বেকার পুরুষ ৪.৪৮ শতাংশ, সেখানে প্রকৌশলী বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিগ্রীধারি পুরুষের বেকারত্ব ৪.৭৮ শতাংশ, এইটাও একটু বেমানান না? এই উচ্চশিক্ষিত সমাজে বেকারত্ব মনে হয় আরও কম হওয়া উচিত ছিল। অনেকেই বলছেন, নারী দের প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়, কথা টা হয়ত কিছু ক্ষেত্রে সত্য, কিন্তু কোন ভাবেই একটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত না নারী-পুরুষের বেকারত্বের এত বড় বেবধানের। এই কদিন আগেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউনিলিভার ৩ জন কে ব্রান্ডস এ কাজ করার জন্য নিল, ৩ জন ই মেয়ে।
ভবিষ্যতে আরও বড় লেখার আশা করছি আপনার কাছে থেকে। ধন্যবাদ।
ইউনিলিভার ব্র্যান্ডে মেয়েই নেয় সাধারনত। কিন্তু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোকে দিয়ে সব কিছু বিচার করা যাবে না।
বেশিরভাগ লোকাল কোম্পানিই মেয়ে নিতে চায় না। তারা মনে করে মেয়েরা কাজ করতে পারবে না, কদিন পর পর মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাবে, অফিসে দেরি করে আসবে , তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে চাইবে, সর্বোপরি মেয়েদের কাজ করার জন্য কিছুটা হলেও সুযোগ দিতে হয় যেটা তারা দিতে রাজি না বা দেয়াটা অতিরিক্ত ঝামেলা মনে করে।
আপনার লেখা পড়ে অবাক হইনি, তবে হতাশ হয়েছি । এখনো উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের মধ্যে অন্যের টাকায় বসে বসে খাওয়ার প্রবণতা দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় কি ! পড়াশোনায় মেধাবী হবার সাথে সাথে তাঁদের মধ্যে যদি আত্মমর্যাদা বোধ জেগে না উঠে, তাহলে কোথাও কিছু একটা গোড়ায় গলদ আছে ধরে নিতে হবে । হয়ত আমাদের সমাজ কাঠামোটাই এরকম যেখানে ধরে নেওয়া হয় মেয়েরা শিক্ষিত/ উচ্চশিক্ষিত হতে পারবে কোন বাঁধা নেই, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে গেলেই শুরু হয় যত সব অজর-আপত্তি, বাঁধা বিঘ্ন, প্রতিবন্ধকতা । শুধু যে মেয়েরাই নানান ছুতো খুঁজে কাজ না করার জন্যে তা হয়ত নয় । সব ক্ষেত্র থেকেই এটা হয়ে থাকে ।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, আমি একটা জিনিষ ভেবে পাইনা আমাদের দেশে ব্যক্তিমালিকানায় এতো কিছু হচ্ছে, কিন্তু আধুনিক বিশ্বের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা অঙ্গ – ডে কেয়ার সেন্টার/চাইল্ড কেয়ার, ইত্যাদি কেন ঢাকার মত শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গড়ে উঠছেনা এইটা সত্যি আমার কাছে অবাক করার মত একটা বিষয় । শিক্ষিত লোক দ্বারা এটা সঠিক ভাবে পরিচালিত হলে দুপক্ষেরই লাভ । একই সাথে সেবা দান এবং চমৎকার ব্যবসার এই সুযোগ (গলা কাটা ফি নিয়ে নয় অবশ্যই) গ্রহন করলে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সুযোগ আরো অবারিত হত বলেই আমার ধারণা ।
হ্যাঁ,বেকারত্বের সংজ্ঞা নিয়ে আসলেই একটা ভুল হয়েছে। আমি ধরে নিয়েছিলাম জরিপে 'গত এক সপ্তাহে আপনি কোন প্রফিটেবল কাজ করেছেন কিনা?', এই প্রশ্নের উত্তর না হলেই তাকে বেকার হিসেবে ধরা হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাকে ল্যাবর ফোর্সের ভেতরেও থাকতে হবে অর্থাৎ চার সপ্তাহ বা তার বেশী সময় ধরে সক্রিয়ভাবে চাকরি খুঁজতে হবে। সে হিসেবে যাদের কাজ করার ইচ্ছা নেই তাদেরকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যে আনতে পারি না। তা যদি না আনি তাহলেতো পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। এতো বিশাল সংখ্যক নারী চাকরি খুঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না? এই পরিবেশ কিছুতেই কাম্য নয়। এখানে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে পেলে আসলে ভাল হয়। চাকরি পাওয়াটাও এতোটাই কঠিন কিনা জানতে পারলে ভাল হত।
যদিও চাকরি খোঁজার ধরণেও তারতম্য থাকতে পারে। 'একটা চাকরি পেলেতো ভালোই হয়' মনোভাব নিয়ে ঘরে বসে থাকা মানুষও আসলে আমি দেখেছি।
আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মেয়েরা কাজ করতে অনেক আজ্ঞ্রহী। একজন মন্তব্য করেছেন ইউনিলিভার এর তার দেখা নিয়োগ নিয়ে, কিন্তু ইউনিলিভারের পুরো চিত্রটা কিন্তু এমন নয়। আমাদের ক্যাম্পাসে ইউনিলিভার যে অন ক্যাম্পাস রিক্রুট্মেন্ট করেছিল সেখানে কিন্তু এমন ছিল না। বিএটিবি তাদের সাপ্লাই চেইন ছাড়া অন্য কোথাও মেয়েদের নেয় না বলে আমি জানি। (এটা এক বছর আগের তথ্য, এই একবছরে পরিবর্তন হতে পারে।) স্কয়ারে মুখে বলে না কিন্তু সাপ্লাই ছাড়া নেওয়া হয় খুবই কম। আর কাফকোতে আমার পরিচিত একজন লিখিত পরীক্ষায় প্রথম দিকে থাকা সত্বেও মৌখিক পরীক্ষা দেবার সুযোগ পায়নি কারন "মেয়েদের ঐ পদে নেয়া হবে না" কিন্তু আতি পাতি করে খুঁজেও বিজ্ঞাপনে তেমন কিছু খুঁজে পাইনি। যত মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে বের হয় তাদের সবাই কিন্তু এই সব মাল্টি ন্যাশনাল এ জয়েন করতে পারেন না। "নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা" সম্পন্নরাই পারেন। আবার পরিবারের একটা প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকে মেয়েদের কাজে যোগ দানের ক্ষেত্রে। বর্তমানের অনুভুতি টা এমন "শিক্ষকতা বা ব্যাঙ্কিং এ চাকরী হলে করতে পার" আমার সহকর্মীকে দেখেছি, সিভিল সার্ভিসে জয়েন করে শুধুমাত্র পরিবারের চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন, কারন কর্মক্ষেত্র ছিলো রিমোট এরিয়া তে। তাই আমার মনে হয় ঢালাওভাবে মেয়েদের দোষারোপ করা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। ইউনিভার্সিটির ভর্তিপরীক্ষায় বা কাজের পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতায়ই তারা কোয়ালিফাই করে। আর কর্ম ক্ষেত্রে (সরকারী) কোটা আছে মাত্র ১০% কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না দেশে নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০৩ঃ১০০। আর কোটাতে নিয়োগ প্রাপ্তরা কিন্তু আগে লিখিত ও মৌখিক এবং অন্যান্য পরীক্ষায় যোগ্যতার মাপে বিবেচিত হবার পরেই কোটাতে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বেসরকারী চাকরীতে কিন্তু নারী কোটা নেই। আর বাংলাদেশের চাকরী বাজারে সরকারী চাকরীর পদ সংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ, (যার মধ্যে খালি আছে প্রায় ০১ লক্ষ) বাকীটুকু কিন্তু বেসরকারী চাকরী। ১৩০ টা মাল্টিন্যাশনালের চিত্র আর পুরো বেসরকারী চাকরীর চিত্র কিন্তু এক হবার কথা নয়।
অন্যদিকে দেখা যায় অনেক নারী চাকরী করছেন কিন্তু সন্তান গ্রহনের পর চাকরী ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন পরিবারের চাপে; (সন্তানের অযত্ন হচ্ছে, স্বামীর, আত্মীয় স্বজনদের এই অজুহাতের চাপে) কিন্তু পরিবারের সবাই যদি শিশুটির দেখভালের দায়িত্ব নেয় মাকে হয়ত চাকরী টা না ছাড়লেও চলত।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ঢাকাতে যত চাকরীর সুযোগ আছে তেমন কিন্তু অন্য শহরগুলোতে নেই। পরিবারের অসম্মতিতে একজন নারী কিন্তু ঢাকায় এসে চাকরী খুঁজতেও পারেন না।
অনেক লম্বা মন্তব্য করে ফেললাম। কিন্তু লেখাটি এবং মন্তব্যগুলো পড়ে নিজেকে সামলাতে পারলাম না।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে এরকম কেউ কিছু বলুক তাই চাইছিলাম। বেকারত্বের সংজ্ঞা অনুযায়ী এই হার দেখে একটু ভয়ই পেলাম। বুঝতে পারছি চাকরি জোগাড় করে ফেলাটা বেশ কঠিনই। তবে মেয়েদের যোগ্যতা নিয়ে আমার কোনই প্রশ্ন নেই।
কিন্তু পরিবার বিষয়ক যে কথাগুলো চলে আসে এসব ক্ষেত্রে সেসবেই আমার আপত্তি। মানছি এগুলো অনেক বড় বাধা। কিন্তু এসব ডিঙিয়েই সামনে আসতে হবে। অন্যায়ভাবে কাউকে পেছনে টেনে ধরে রাখতে চাইলে অবশ্যই সেটা মেনে নেয়া যাবে না। এরকম মানসিকতা মেয়েদের তৈরি করতে হবে। আরো শক্ত হতে হবে। পরিবারের অমতে বাংলাদেশের মেয়েদেরকে আমি বিয়ে করতে ফেলতে দেখেছি তাহলে চাকরি করতে এগিয়ে আসতে সমস্যা কোথায়? চেষ্টা করলেতো সবই সম্ভব।
বিবিএস এর পরিসংখ্যানটা কোথাও ভুল আছে। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীকে বাদ দিলে এই হার আরো অনেক বেশী হতে পারে। আমার আশেপাশে পরিচিত আত্মীয়ের হিসেব করলে নারীদের বেকারত্বের হার ৮০% এর কম না। এই বেকারত্ব চাকরী পাচ্ছে না সেজন্য না। এই বেকারত্বের কারন পরিবারের কোন না কোন সমস্যার কারণে শিক্ষিত নারী চাকরী করছে না। বাংলাদেশে নারীদের চাকরী না করার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো সন্তানের লালনপালন। এদেশে সন্তানের দেখাশোনা করার মতো ডে কেয়ার সেন্টার জাতীয় কিছু নেই। ফলে সন্তানের মাকেই কাজটা করতে হয়। পরে সন্তান যখন বড় হয় তখন আর চাকরীর বয়স থাকে না। এদেশে নারীশিক্ষাটা একটা বিপুল অপচয়। স্নাতকোত্তর পাশ করা নারীকে রান্নাবান্না ঘরকন্না বাদে আর কিছু করার সুযোগ দিতে পারি না আমরা। উত্তরণের পথ কেউ বাতলে দিতে পারবেন বলেও মনে হয় না। আমাদের বাস্তবতায় সম্ভব না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সব সমস্যারই সমাধান আছে। পরিস্থিতিটা কোথাওই সহজ না। পশ্চিমা চাকরিজীবী মা কে আমি বলতে শুনেছি দেশেতো অনেক সুবিধা কত আত্মীয়-স্বজন থাকেন। সবার কিছু কিছু সহযোগীতায় বাচ্চা মানুষ হয়ে যায়। আমাদের জন্য একা একা কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
কিন্তু কেউই চেষ্টা করা ছাড়ছেন না, আমাদেরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ কতজন স্বামী সম্মানজনক দৃষ্টিতে দেখেন তার একটা পরিসংখ্যান চাই। তাহলে এই পোস্টে দেয়া পরিসংখ্যানের কারণটাও অনেকাংশে বোঝা যাবে।
তাতো বটেই, এটাই যে প্রধান কারণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
লেখাটা ভালো হয়েছে। মানে আপনি সেটা নিয়েই লিখেছেন যেটা নিয়ে আপনি লিখতে চেয়েছেন। কিন্তু, একটা জিনিস আপনি পুরোপুরি miss করেছেন সেটা হচ্ছে “unpaid labour”. নারী বাইরে কাজ করতে যায় না, মানে যে সে “বেকার” তা কিন্তু না। তাছাড়া গরীব দেশগুলোতে কখনই ঘরে-বাইরে কাজের (private vs. public) কাজের পার্থক্য ছিল না। যেহেতু neoclassical economics andocentric ideas দিয়ে ভরপুর তাদের কাছে নারীর ঘরের কাজকে দরকারি মনে হয়নি। এবং আমরা তাই নারীকে “বেকার” বলে থাকি আর নারীর সাধারণ কাজগুলোকে poorly paid অথবা unpaid হয়ে থাকে। মানে যে কাজগুলো বাইরে করলে প্রচুর টাকা পাওয়া যায় সেটা ঘরে করলেই দাম নেই? রান্না যদি হোটেলে করে সে শেফ (সেটা কাজ) আর ঘরে করলে কিছু না (অকাজ)? হয়তো এখানে skill এর কিছু ব্যাপার আছে কিন্তু আমি এও বলতে পারি, আমি এমন অনেক অনেক নামকরা জায়গায় খেয়েছি যাদের রান্না চেয়ে অনেক অনেক গুণে বেশি খারাপ ছিল। যেসব মেয়েরা বাসায় থাকে তাদের যে আত্মমর্যাদা থাকে না কিংবা তারা বসে বসে খায় এই ধারণাটা থেকে মনে হয় আমাদের বের হয়ে আসা উচিত। আর উচ্চশিক্ষিত মানেই যে আপনি যেটা নিয়ে পড়েছেন সেটা নিয়েই পড়ে থাকতে হবে তা কিন্তু না। আমাদের নিজেদের চারপাশেই এমন অনেক সায়েন্সের/আর্টসের ছাত্র/ছাত্রী আছে যারা তাদের ফিল্ড থেকে বাইরে কাজ করে বা করতে বাধ্য হয়। তাহলে একজন ডাক্তারের যদি ঘরের কাজ (unpaid labour) করতে ইচ্ছে হয় সেটাই তাকে করতে দেয়া উচিত। সে যখন স্নাতক পর্যন্ত পড়েছে আমি নিশ্চিত ও জানে ও জীবন থেকে কি চায়।
আপনার লেখার মনে হলো আপনি মেয়েদের মানসিকতাকে দোষ দিচ্ছেন - মেয়েরা কি কি করতে পারে। মেয়েরা কিন্তু সমাজে একা না। sex – biological determinant (ছেলে/ মেয়ে), gender (ie. Masculinity or feminity) আমাদের গড়া, আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ওটা গড়ে দেয়। আর তাছাড়া, সব মেয়ের যে তার পরিবারে সমান “বলার কিংবা করার” অধিকার থাকে এটা ভেবে নেয়াও ঠিক না।
আর আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলছি - না এটা ঐচ্ছিক বেকারত্ব নির্দেশ করে না। মেয়েরা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কাজ করছে বলে যে ওদের কাজের ক্ষেত্রটা পুরুষদের মতো “sexual discrimination কিংবা sexual assault” ছাড়া এটা মনে হয় না। যারা করছে তারা কষ্টটা মেনে নিচ্ছে কারণ তারা সেটা করতে চায়। পলিটিক্সে যুদ্ধের একটা concept আছে- deterrence- মানে আমি আপনি কিছু করার আগেই হুমকি দিয়ে রাখলাম করলে আমি কি কি করবো। হুমকি গুলো ভাষায় হতে হবে এমন না। যেমন সীমান্তে সৈন্য থাকা মানে একজন কেউ সীমান্ত পার হতে গেলেই সে জানে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রগুলোও এমন। ছেলেরা মুখে হুমকি দেয়নি কিন্তু আসে পাশে এতো না দেয়া হুমকি কোনো কোনো মেয়ে হয়তো ভয়েই চায়না তার শান্তির জীবনের বিনা কারণে ঝামেলা আসুক।
আপনার যুক্তি অনুসারে এই unpaid labour এর ইচ্ছা পুরুষ ও নারীদের ক্ষেত্রে সমানভাবে আসা উচিত। কিন্তু তা আসছে না কেন?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধন্যাবাদ আপনার বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য।
যেসব মেয়েরা বাসায় থাকে তাদের যে আত্মমর্যাদা থাকে না কিংবা তারা বসে বসে খায় এই ধারণাটা থেকে মনে হয় আমাদের বের হয়ে আসা উচিত।
আমি মনে হয় ব্যাপারটাকে এভাবে বোঝাইনি। আমার মনে হয়েছে মানুষ হিসেবে আমাদের পরিবারের প্রতি দায়িত্বের পাশাপাশি আরো কিছু দায়িত্ব থাকে। ক্ষমতা থাকলে সেসব দায়িত্ব এড়িয়ে শুধু একটা দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে থাকা উচিৎ না।
আর সব পরিবারে মেয়েদের বলার বা করার সমান অধিকার থাকে না এটা আমি জানি। কিন্তু এই ব্যাপারটাতো সঠিক না। তাই আমরা একে প্রশ্রয় দিতে পারি না। বলার বা করার অধিকারসম্পন্ন মেয়েদের সংখ্যা আমাদেরই বাড়াতে হবে। এর জন্য কাউকে কাউকে লড়াই করতেই হবে। এতো বেশি মেনে নেয়ার প্রবণতাতেই আসলে আমার আপত্তি।
আমি একটা জিনিস বোঝার চেষ্টা করছি। ডে-কেয়ার ভাল নেই বলে মেয়েরা বাড়িতে বসে থাকছে না মেয়েরা বাড়িতে বসে থাকতে ইচ্ছুক বলেই ভাল ডে-কেয়ার ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না?
প্রথমটা সঠিক হতে হলে সন্তান হবার পরে চাকরি ছেড়ে দেওয়া মায়ের সংখ্যা যথেষ্ট হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ডে-কেয়ার ব্যবস্থা কাজে আসে সন্তানের বয়স ০-৩ বছর পর্যন্ত। তার পরে কি ঘটে? আমেরিকায় অনেককেই দেখেছি বছর তিন-চার বছর সন্তান বড় করে তারপরে চাকরিতে ফিরছে। এটা বাংলাদেশে কেন সম্ভব হচ্ছে না?
আমার ধারণা, সমাজের একটা বড় ভূমিকা আছে এই ধরণের বৈষম্যের পেছনে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন