ব্লগর ব্লগর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৩/২০১২ - ৯:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিগত বছরের কাজের হিসাব এবং এই বছরে কি কি কাজ করতে হবে, সেটা নিয়ে ম্যানেজারের সাথে ঘন্টা দু'যেক বৈঠক। গতবছরের হিসেবে সবই সবুজ বাত্তি। তারপরও ম্যানেজারের ভাবসুলভ কিছু কিন্তু বলতেই হবে ভেবে উনি আমার কিছু নেগেটিভ ব্যাপার উল্লেখ করলেন। প্রথম কিন্তু, আমার জার্মান ভাষার উপর অদক্ষতা। উত্তরে বল্লাম, ঐটা এই জনমে আমাকে দিয়ে হবে না। দ্বিতীয় কিন্তু, আমি মিটিংয়ে কথা (আর্গুমেন্ট) কম বলি। উত্তরে হেসে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, তুমি কি চাও আমি কথা বলি? সাথে সাথে উত্তর দিলেন, না না, সে কথা না। আমি সেই অর্থ বলেনি। আচ্ছা, তোমাকে কথা বলতে হবে না। মনে মনে ভাবলাম ব্যাটা তুমি বেচে গেছো।

আমাদের মিটিংগুলো সেইরকম পাগলাটে। প্রটেকশন, কন্ট্রোল, এইচ.এম.আই, কমিউনিকেশনের বাঘা বাঘা লোকগুলো এক মিটিংয়ে থাকলে যা হয়। সবাই একটা টপিক নিয়ে ব্লা ব্লা শুরু করে। শেষ হতে চায় না। আমি ঐসব কথা শুনে ফায়দা হবে না ভেবে কফি মগটা হাতে নিয়ে রুমে চলে আসি। হয়তো ঘন্টাখানেক পর আমার টপিক আসলে কেউ ডেকে নিয়ে যায়। ভাগ্য ভালো থাকলে ঐদিনের মিটিংয়ে আমার ফিরতি ডাক আসে না। ম্যানেজারসহ মোটামুটি কয়েকজনই এতোসব ব্লা ব্লা শোনে বিরক্ত। কিন্তু কিছু করার নাই। সবাই চান্সে ম্যানেজারকে আছাড়/ডলা দেয়।
গতবছরের এসেসমেন্টে আমাকে রেলওয়ে প্রটেকশন ডিভাইস নিয়ে কাজ করার কথা ছিলো। অন্যসব প্রজেক্টের চাপে ঐদিকে যাওয়া হয়নি। এই বছর ট্রান্সফরমার প্রটেকশনে নাম উঠেছে। মাথা পুরো আউলা। ট্রান্সফরমার প্রটেকশনে কয়েক সপ্তাহ কাজ করেছিলাম। এতো কঠিন এ্যালগোরিদম। ম্যানেজারকে বল্লাম, এতোদিকে কাজ করে তো পাগল হয়ে যাবো। একটা নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে থাকাই ভালো নয় কি? বলে তোমাকে সবকিছুই জানতে হবে। বল্লাম, জোর করে ধরেছো কি আর করার। তবে আমার সময় লাগবে একটু বেশী। বল্লো, ব্যাপার না।

এদিকে Distance Protection এর একটি কাজ দিয়েছে। এতো Complex জিনিস আমি আগে দেখিনি। প্রটেকশনের বসকে জিঞ্জেস করলাম এইটা কবে থেকে ডেভোলপ শুরু হয়েছিলো? বল্লো এই কোম্পানীতে প্রায় ৭০/৮০ বছর থেকেই। বল্লাম এইজন্যই এতো কঠিন। Automatic Recloure থেকে শুরু করে কি নেই এই ফাংশনের ভেতর। কতোক্ষন পর মি. প্রবলেম (ড.) একজন এসে বলে ঐ প্যারামিটার ন্যানো সেকেন্ডে করো, ঐটা মিলি সেকেন্টড তো এতো ডিগ্রিতে, ঐ ফাংশন ফরওয়ার্ড না হয়ে বেকওয়ার্ডে হবে এবং জোনটা এতো ইম্পিডেন্সে ঐ জোনে থাকবে। বল্লাম নর্মে তো এই জোনে। বল্লো, এটা নাকি কাষ্টমারের ইচ্ছে। মনে হয় হাতুড়ি দিয়ে কাষ্টমারের মাথায় বাড়ি দেই। কাজের চাপ দেখলে আমার কাজ করতে ইচ্ছে করে না। এরমধ্যে কিছুক্ষন পর মিটিং। মিটিং মানেই ব্লা ব্লা শোনা আর কিছু নতুন কাজ নিয়ে আসা মন খারাপ

গতবছরে কয়েকটি ট্রেনিংয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। ফাকি দিয়েছিলাম। এই বছর সেটা সম্ভব নয় বলে ম্যানেজার জানিয়ে দিলো। ট্রেনিং মানেই নতুন দায়িত্ব। এতো দায়িত্ব ভালো লাগে না। প্রটেকশন, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন সব জায়গা লোকজন দখল করে আছে। কেউ একজন পেনশনে না গেলে উনাদের ছায়ায় থাকে কাজ করতে হবে। জার্মান সরকারও দিনদিন পেনশনের বয়স বাড়িয়ে চলেছে। মরার আগ পর্যন্ত কাজ করতে হবে। আমাদের পেনশনে যেতে ৭০+ বেচে থাকতে হবে। গড় আয়ুও তো সেই পর্যন্ত নাই। মাসে মাসে এত্তোগুলো পেনশনের টাকা অটোমেটিক সরকারের একাউন্টে চলে যায়।

অধিকাংশের মতোই ছোটবেলায় কার্টুন ছবির প্রতি প্রচন্ড লোভ ছিলো। গ্রামে জন্ম, বেড়ে উঠা। অন্যসব অবহেলিত গ্রামের মতোই আমাদের গ্রামে কার্টুন দেখার সময় বিদ্যুতের দেখা মিলতো না। আকাশে একটু মেঘ করলেই বিদ্যুত চলে যেতো। তখন মনেমনে কতোবার আল্লাহকে ডাকতাম শুধু কার্টুন দেখার সময় যেনো বিদ্যুত চলে আসে। সব সময় কি আর সব দোয়া কবুল হয়। অভ্যাসটা এখনো যায়নি। ছোটবোনের সাথে বসে কার্টুন দেখা প্রায় নিয়মিত ছিলো। নতুন বাসায় যাওয়ার পর ৪৬ ইঞ্চি 3D কিনেছিলাম। অনেক বড়ো পর্দায় Simpson দেখবো বলে। কার্টুনগুলোর চরিত্র আর ডায়লগগুলো এতো মজার। কিন্তু সময়টাই প্রধান বাধা হয়ে গেলো। অফিস, বাজার, বাসার কাজ সব শেষ করতেই কার্টুনের সময় শেষ। সাধারন চ্যানেলগুলোতে রাত ৮টার পর কোনো কার্টুন দেখায় না বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে। এখন বিদ্যুতের অভাব নাই, টিভি দেখার জন্য রিমোটের কাড়াকাড়ি নেই, দেখার জন্য আগ্রহের অভাব নেই। কিন্তু আসল জিনিস সময়টাই বাস্তবতার খাতিরে সংকুচিত হয়ে গেছে। তারপরও দেখার চেষ্টা অভ্যাহত আছে।

দেশ থেকে দোস্ত আসায় অনেকদিন পর লম্বা একটা ড্রাইভিংয়ে যাওয়া হলো। দু'দিনে প্রায় ১৩০০ কি.মি ড্রাইভ করলাম। অনেকগুলো দর্শনীয় স্হানে গিয়ে দেখা গেলো উনারা শীতের জন্য এখনো স্হানগুলো দর্শকদের জন্য উম্মক্ত করেননি। শুধুমাত্র সুইজারল্যান্ডের Rain Fall গিয়ে মজা পেলাম। বেশ সুন্দর একটি ঝর্না। বাকিগুলো ভূয়া। দোস্তকে বল্লাম, বাংলাদেশে এর থেকে হাজারগুন ভালো জায়গা আছে দেখার জন্য।

বসন্ত চলে এসেছে। গাছে গাছে ফুলের সমারোহ। বাতাসে ফুলের রেনুর জন্য চোখ চুলকানো, হাচ্চু অবিরাম চলছেই।

ফ্রুলিক্স
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6d%66%72%75%68%6c%69%6e%67%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%22%3e%6d%66%72%75%68%6c%69%6e%67%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

কার্টুনের বিষয়টা আমার সাথে মিলে যায়। তবে আমার বেশি ভাল লাগে ফ্লিনস্টোন ফ্যামিলি
হাসি
লেখায় চলুক

Fruhling এর ছবি

মোটামুটি সব রকমের কার্টুন দেখি। স্পঞ্জবব কয়েক বছর দেখেছিলাম। ফাজলামী টাইপ ডায়লগের কথা চিন্তা করলে Simpson জুস।

ফ্রুলিক্স

অচল এর ছবি

আপনি পাওয়ার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ??? প্রটেকশন প্রটোকল নিয়া কাজ করেন ?? ভাল লাগল। নিজের লাইনের একজনরে পাইলাম সচলে।

Fruhling এর ছবি

হুম, কাজ করতে ভালো লাগে না আর। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় ক্ষেত খামারে কাজ করতে মন খারাপ

ফ্রুলিক্স

রণদীপম বসু এর ছবি

ব্লগর ব্লগরটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেলো না !! কী যেন লেখার কথা ছিলো, কিন্তু ভুলে গেছেন, এরকমই মনে হলো !! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।