ঢাকা শহরে আমার তিনবছর পূর্ণ হয়েছে। প্রথমদিকে রাস্তা পার হতে পারতামনা, সহায় হয়ে রাস্তার পাশে দাড়ঁইয়ে থাকতাম আর করুন চোখে ফুটওভার ব্রীজ খুঁজতাম। আর না পেলে এক দৌড়! একজন মন্তব্য করল, যদি তিনবছর সড়ক দূর্ঘটনায় না পড়ি, তাহলে এই শহরে এই কারনে আর মৃত্যু হবে না। এই শহরে এসে টের পেলাম, কতদিন পায়ের নিচেয় মাটি পড়েনা। কনক্রীট। তাই কাছের মাটি খুঁজতে যেয়ে দেখা হল রমনা পার্কের সাথে। আলাপ হল, কত মন খারাপের দিন, ঘন্টা আমি সোনালু গাছেটার নিচেয় কাটিয়েছি, গাছটার বোধকরি মনে নেই। এই শহরে বসন্তকে অনুভব করা যায় শুধু মেহেগনি ফুলের গন্ধে। কেমন যেন সবুজ সবুজ গন্ধ। তবে অনেক সবুজ গন্ধ পেয়েছিলাম বলধা গার্ডেনএ।
আমি (গত ৩ মাস বাদে) প্রায় প্রতিদিন সকালেই রমনা পার্কে হাটতে যাই। আমি গড় ওজনের মানুষ, ওজন কমাতে নয়, হাটাহাটি করি মনে আনন্দে। ২৪ ঘন্টার দিনে ঐ ৩০/৪০ মিনিট সময় শুধুই আমার। আমার হতাশা, আমার স্বপ্নগুলো আমার দুই হাত ধরে হাঁটে আমার সাথে।
আপনি যদি আমার মত অরুনোদয় গেট দিয়ে ঢুকেন প্রথমেই দেখবেন লটকন গাছ। শীতে সব পাতা ঝরিয়ে সে তখন নতুন পাতার স্বপ্নে বিভোর। নিসর্গী মোকারম হোসেনের কাছ থেকে জেনেছি, লটকন গাছের পুরুষ এবং মেয়ে গাছগুলো আলাদা করে সনাক্ত করা যায়। রমনা পার্কে দুইটা বীথি আছে, বকুলের একটি আর একটি অশোকের। দুইপাশে গাছগুলি আর মাঝখানে প্রাতঃভ্রমনকারীদের চলার জন্য সিমেন্টের বড় বড় স্লাব। আমার খুব মেজাজ খারাপ লাগে। গাছগুলোর জন্য কষ্ট লাগে। ওদের শিকড়গুলো পর্যাপ্ত পানি পায়না। এই প্রবণতা পুরো শহরেরই। গাছগুলোর গোড়া বাধিঁয়ে দেওয়া। এতে যে গাছগুলো পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না, এটা কারো মাথায়ই নেই।
গুস্তাভিয়া গাছের দেখা মিলবে পুরো পার্কেই। আমি ছবি দেয়েছি "কুসুম ছায়া" এর আশে পাশের গাছ থেকে বাছাই করে। এই ফুলটা আমাদের দেশি নয়। নতুন পৃথিবীর। কিন্তু ভাল লাগে এর রঙ, বিস্তার। বাগান বিলাসের এত রঙ, এত প্রাধান্য, আমি নিজেই অস্থির, কোনটা রেখে কোনটা দিব? শিল্পকলা একাডেমীর পাশে একজন কে দেখেছিলাম, পৃথিবীর সব রঙ নিয়ে সে প্রখর রৌদ্রে জ্বলছিল। হলুদ রঙ্গটা আমার খুব প্রিয়, তাই একটু পক্ষপাতিত্ব করলাম।
কনকচাঁপা গাছটিতে ফুলের সুবাসে আশেপাশের সব কিছু বুঁদ হয়ে আছে এই সময়। অরুনোদয় দিয়ে ঢুকে সোজা একদম পশ্চিমের দেয়ালের কাছে যেয়ে একটু ডান দিকে গেলেই, ছোট গাছটি। গন্ধেই পথিক তারে খুজেঁ পাবে। এমন হলুদ আর এমন সুবাস, মনে হয় সূর্য জ্বলছে গাছের শাখে শাখে।
কুসুম ছায়ার পাশেই পলাশ ফুলের গাছ, আমার ক্যামেরাতে ৪এক্স জুম, তাই গাছের উপরের ফুলগুলো দেখাতে পারছিনা, বাঘের নখ গড়নের অপূর্ব ফুল। খুলনায় নিরালা রাস্তার মোড়ে একট গাছে আছে, আমি ওই গাছটির নাম দিয়েছিলাম "আগুন লাগা বৃক্ষ" দূর থেকে দেখলে মনে হয় দাউ দাউ করে জ্বলছে। গাছটা দেখলে আমার এখনো অনুভূত হয়, মানুষ না হয়ে যদি পলাশ গাছ হতে পারতাম।
শিশু পার্কের পাশেই রুদ্র পলাশ। আফ্রিকান টিউলিপ। অসাধারন রঙ। অনেক উচুঁ গাছ, তাই পড়ে থাকা ফুল নিয়েই সন্তষ্ট থাকতে হয় আমার।
নাগলিঙ্গম গাছটি প্রথম দেখি বলধা গার্ডেনে। কনকচাঁপা দেখতে যখন সোজা যাবেন সেখানেই দেখতে পাবেন। আর শতায়ু অঙ্গন এর আশে পাশেও আছে কয়েকটি।
অস্তাচল গেট দিয়ে ঢুকলে সোজা রাস্তার মাথায় বাম পাশে সোনালু গাছটি। আমার মন খারাপের গাছ। পুরো পার্কে অনেকগুলি সোনালু আছে, কিন্তু আমার একমাত্র চোখ শুধু তার জন্যই।
ছবিগুলো আপলোড করতে যেয়ে দেখি, ঝরা ফুলের ছবিই বেশি।
কিন্তু ছবির নিচেয় নিচেয় লিখব কিভাবে বুঝতে পারছি না। তাই দুঃখিত। পাঠক লেখা পড়ে আনন্দ পাবেন না হয়ত।
মন্তব্য
দুঃখিত, নাম লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম আর লেখা আসার পরে নিজেরই মনে হচ্ছে, শিরোনামটা ঠিকমত হয়নি।
- ব্যাঙের ছাতা
লেখার ফাঁকে ফাঁকে সংশ্লিষ্ট ছবিগুলো বসিয়ে দিলে ভালো হতো আসলেই ! আর লেখাটা হয়ে গেলো অজ্ঞাত লেখকের, কেননা কোথাও লেখকের নামটাই চোখে পড়লো না।
অতিথি হিসেবে যে ক'দিন লিখতে হবে, খেয়াল করে পোস্টের নিচে বা কোথাও লেখক নামটা লিখে দিলে তখন নিশ্চয়ই আর অজ্ঞাত থাকবেন না ! ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কালকে বিকেলেই মন্তব্য করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কী কারনে জানিনা, পেজ আপলোড হচ্ছিল না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, পড়ার জন্য আর মন্তব্য করার জন্য। আপনার লেখাগুলি আমি মনযোগ দিয়ে পড়ি। আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহ দিয়েছে সামনে আরো লেখার জন্য। কিন্তু আগামীতে ছবি মাঝে মাঝে লেখা কিভাবে দিব?
ভালো লাগলো।
লটকন গাছ ছেলে আর মেয়ে আলাদা করা যায় কীভাবে সেটা বললেন না যে।
সবগুলো ছবির মধ্যে থেকে তিন নাম্বার ছবিটা একটু অন্যরকম লাগলো।
আর অবশ্যই নাম বলে যাবেন।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
টাকা ভর্তি মানিব্যাগ নিয়া গাছের কাছে ধরবেন। যদি দেখেন গাছের পাতালতা নড়ে না, তাইলে সেইটা ব্যাটা লটকন গাছ। আর যদি দেখেন পাতা লতায় তুফান ছুটছে, তাইলে তো বুঝলেনই... হে হে হে, ঐটা মহিলা লটকন গাছ।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হাহাহা
এইরকম বুদ্ধি শুধূ আপনার মাথা থেকেই বের হবে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দাদা, যদি কাল বৈশাখী চলে তখন তো সব পাতাই তুফানে নাচবে, তখন?
মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি অনেক আনন্দিত , আপনাদের অংশগ্রহনে।
কালবৈশাখিতে সব পাতাই নাচবে। ঠিক বলেছেন তো!
ধুগোর তাইলে কী উপায় হবে!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আমি অনেক আনন্দিত। অনেক অনেক। আমার নিজের এখন ও কেমন যেন লাগছে, সচলায়তনের মত প্লাটফর্মে আমার লেখা এসেছে, সবাই মন্তব্য করেছে!
লটকন গাছের ছেলে ও মেয়ে আলাদা করা যায় ফল দেখে, কিন্তু কীভাবে এটা আমিও জানিনা, নিসর্গী মোকারম হোসেনের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে, (আমি যোগাযোগ করেছিলাম,তিনি অনেক ব্যস্ত, পরে জানাবেন আমাকে) তখন আপনাদের জানাব।
এটা আমাদের রমনা পার্ক? কত সুন্দর দুনিয়া, কিছুই বুঝলাম না, কিছুই জানলাম না
ছবিগুলো দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গেল !
অসাধারণ !
ছবিগুলো দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গেল !
অসাধারণ !
ছবিগুলো খুবই সুন্দর।
তবে আশেপাশের মানুষ সৃষ্ট বাই ডিফোল্ট ধূলায় সৌন্দর্য্য অনেকটাই ঢেকে দিয়েছে।
ভীষণ সুন্দর। শুকনো পাতার ভেতরে রক্ত কাঞ্চনটা অদ্ভুত ভালো লাগলো। আমাদের পাড়ায় একটা গাছ ছিল। বসন্তের এইরকম ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে আগুনের মত ফুল ফুটিয়ে বসে থাকত বোকা গাছটা। একদিন সেই শহরে ফিরে দেখি গাছটা নেই। সেখানে একটা পাঁচতলা বাড়ি উঠে গেছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
বর্ণনা আর ছবি- দুটোই অসাধারণ।
আমি মুগ্ধ। অভিভূত। সকালে লেখাটি জমা দেবার পরে নিজে যখন পড়েছি, তখন লেখায় অনেক অসাবধানের বানান ভুল চোখে পড়ল। আবার শিরোনামটাও চোখে লাগল। মানে পাঠক হিসেবে আরাম পাইনি। কিন্তু আপনাদের মন্তব্যগুলো পড়ে আমার খুব ভালো লাগছে। আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে সবাই এত সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন! আমি অভিভূত!
আহা, ফুলের ছবি দেখে মন ভাল হয়ে গেল। প্রতিদিন সাত রঙের সাতটি ফুল ঘুমানোর আগে মনের পর্দায় দেখে নেবেন, দেখবেন ভাল ঘুম হচ্ছে।
ছবিগুলো সুন্দর, নিচে ফুলের নাম থাকলে ভালো হত। নিরালার মোড়ে কিন্তু আমিও আড্ডাইছি।
আরে! কী মজা
কোন সময়ে ভাই?
ছবি গুলো বড় সুন্দর লাগলো
রমনা পার্ক আমাদের বাসা থেকে পাঁচ মিনিট দূরে ছিল। আব্বা সকালে হাঁটতে যেত, মাঝে মধ্যে আমাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হত। ভোরবেলা পার্কভর্তি আধবুড়ো পুরুষ মহিলা হাঁটত দৌড়ত ইয়োগা করত। একবার দেখেছিলাম পথনাটক, কয়টি ছেলেমেয়ে রাস্তার পাশে নাটক করে যাচ্ছে। পার্কের ঠিক বাইরে পাওয়া যেত ভাপা পিঠা, ওইটে কিনে খেতে খেতে বাসায় ফিরতাম। পরে রমনা পার্কের ভিতর কি সব আজাইরা কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হয় আর জায়গাটার তেরোটা বাজিয়ে দেয়া হয়।
আপনার নানাবিধ ফুল দেখে ভালই লাগল, এগুলোর পাশে দিয়েই হয়তো হেঁটে গেছি কখনো খেয়াল করে দেখা হয়নাই।
শিরোনাম ঠিকই আছে, বদলাবার প্রয়োজন দেখছি না
..................................................................
#Banshibir.
নতুন মন্তব্য করুন