• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

দাবি দাওয়ার প্রতিবাদী মিছিলের ভীড়েও কিছু মিছিল অভিমানে ফেরারী হয়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০১/০৪/২০১২ - ৫:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দাবি দাওয়ার প্রতিবাদী মিছিলের ভীড়েও কিছু মিছিল অভিমানে ফেরারী হয়। হারিয়ে যায় পথের বাঁকে আরো কোন অজানা পথের পানে। হারিয়ে গেছে সেই মিছিলে আমাদের ফেরারী এক মিছিল। চলে গেছে আর না ফেরার কোন এক অজানায়।

সালটি বোধকরি ২০০৮ এর মাঝামাঝি হবে। পালটক এর কোন এক রুমে গ্রীক উপাখ্যান রাজা অডিপাস আর রানী ইয়োকাস্তের ট্রাজেডি- মমতাজউদ্দিন-এর বাংলাকরণ থেকে আবৃত্তি করছিলাম। অধিকাংশেরই মা আর ছেলের এই উপাখ্যানের পরিণতি হজম হয়না বলে রুমে তখন তর্ক বিতর্কের ঝড়। আমার আবৃত্তি বন্ধ করবেন কিনা এই নিয়ে এডমিন নিজেই সংশয়ে পড়ে গেছেন। আমারো খুব রোখ চেপে গেলো। এ একটি ট্রাজেডি বই আর কিছুই নয় এটি শুনবার আপত্তি কেন থাকবে? ঠিক তেমন এক হট্টগোলে রুমে ফেরারী মিছিল আইডিটির আগমন। একাই লড়ে গেলেন আমার হয়ে। সবাই রুম ত্যাগ করলেও তিনি একাই শুনবেন তাই আমি যেন আবৃত্তি বন্ধ না করি এটাই বারে বারে লিখে আমাকে আশ্বস্ত করতে লাগলেন। ধীরে ধীরে টুকটাক কথার মাঝে ফেরারী মিছিল আমার ব্যাক্তিগত পরিচিতির গন্ডিতে উঠে এলেন।

আরো একদিন রুমে “প্রিয় রুদ্র” তসলিমা নাসরিনের চিঠিটি পড়ছিলাম। সেদিনও রুমে ছিলেন ফেরারী মিছিল। আমার নিজের ধারণা এই চিঠিটি আমি বেশ ভালো পড়ি, এবং তাঁর কাছে থেকে মন্তব্য আশাও করছিলাম কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে গুম হয়ে ছিলেন তিনি। চিঠি পড়া শেষ হলে চিঠিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আমাকে বেশ ক্ষেপিয়েই দিলেন। এক পর্যায়ে জানতে পারি সেই ফেরারী মিছিল আর কেউ নন; লেখিকার সাথে ব্যাক্তিগত জীবনে জুটি বাঁধা সেই বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদ। অনেক পরে ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলাম চিঠিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য ছিলোনা মিনার’দার, আসলে খুব কাছে থেকে তসলিমা নাসরিনকে দেখেছিলেন বলে লেখনী আর ব্যাক্তি-লেখকের দ্বৈত মনোভাবের কারণেই তার ছিলো ক্ষোভ। সময় গড়িয়ে যায়, কেউ গান করেন কেউ তাদের কবিতা করেন আর মিনার ভাইকে কিছু না কিছু করার জন্য চেপে ধরলে তিনি তার তার ফেলে আসা জীবনের টুকরো টুকরো গল্প করেন। এমন করেই পালটকে আমাদের নিজস্ব একটি আলাদা আড্ডা গড়ে উঠে। প্রথম দিকে আমি উচ্চারণ নামে আবৃত্তি করলেও পরে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে নতুন আইডির অভিষেক করি রুদ্রাক্ষর। প্রায় তিনি কবিতার মাঝে মন্তব্য করতেন এটি রেকর্ডেড কবিতা, স্বকণ্ঠের না। আমিও তাঁর কথায় ক্ষেপে গিয়ে মাঝ পথে থেমে গিয়ে আবার প্রথম থেকে পড়তে শুরু করতাম। বুঝতাম না তিনি আসলে ইচ্ছে করেই ক্ষেপিয়েছেন কারণ দেরিতে আসার করণে প্রথম দিকে শুনতে পাননি বলেই আবার যাতে শুরু থেকে শুরু করি। আজ এমন অনেক ছোট ছোট স্মৃতি নিয়ে ফেরারী মিছিল আইডির সেই মানুষটিকে প্রবলভাবে মনে পড়ছে।

ফেরারী মিছিল কিংবা মিনারদা থেকে বড়দা হওয়া দাদাকে মনে হচ্ছে এইতো গতকালও কথা বলেছি। কোন এক রুমে জসীমউদ্দিন এর কবর কবিতাটি তাঁর অনুরোধেই করা। আবৃত্তি শেষে মিনারদা মাইকএ বললেন "তুমি কি ভাবো তোমার কণ্ঠের থেকে আর কোন ভালো কণ্ঠ কারো নেই?" ততদিনে জেনে গেছি দাদা আসলে এমন করে কথা বলেন ক্ষেপিয়ে দিতে। উত্তর করেছিলাম মোটিই মনে করিনা, বরং আপনার কণ্ঠ আমার থেকে ভালো। সেও ছিলো এক জাতীয় খোঁচা কেননা মিনার’দার কণ্ঠ ছিলো ভাঙ্গা ভাঙ্গা আর কাঁপা। দাদা বললেন "তুমি মনে করোনা; কিন্তু আমি মনে করি, তোমার কণ্ঠ থেকে হয়তো আরো অনেক ভালো কণ্ঠ আছে এবং আরো ভালো আবৃত্তিও করে কিন্তু তোমার কণ্ঠের যে বিষাদ আমাকে ছুয়েছে তা এই মুহূর্তে চোখে পানি এনে দিয়েছে আর আমাকে এই বলতে বাধ্য করছে যে, তুই কোন দিন আবৃত্তি ছাড়িস না। আজ থেকে তুই আমার বুণ্ডি আর আমি তোর দাদা"। ফেরারী মিছিল মিনার মাহমুদ সেই থেকে আমার বড়দা হয়ে গেলেন।

এর কিছুদিনের মাঝেই খুব সম্ভব ২০০৯ এর দিকে আমার জন্যে সব থেকে ভালো সংবাদ ছিলো আমার বড়দা আমারি খুব কাছের আরেক জন ডাঃ লুবনা, অপআপু’র জীবনসঙ্গী হবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পালটক এ আমি যাকে অপআপু ডাকতাম তার পুরো আইডি ছিলো অপরাজিতা (ডাঃ লুবনার পালটক আইডি) । মিষ্টি কণ্ঠের অধিকারিণী আপু কতশ’বার যে আমার জন্য “প্রেম যেন মোর গাধুলি বেলার....” গানটি করেছিলেন। খুব অল্প সময়ের মাঝেই আমরা একটি পরিবার হয়ে গেলাম। আমি আমার বড়দা, আমার অপআপু আর বড়দার ছোট ভাই সাংবাদিক মেহেদি হাসান যিনি নিয়মিত তখন আমাদের পালটকের আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন। বিশেষ করে শুক্রবার সকাল থেকে কমপক্ষে বিকেল অবধি চলতো আমাদের অনলাইনের সেই পারিবারিক আড্ডা। আর প্রতি রাতে ঘুমে ঢলে পড়ার আগে পর্যন্ত সবার সাথে হাই হ্যালো না করে গেলে কেমন খালি মতো লাগতো।

সেই একই সময়ে পালটকে আবির্ভাব ঘটে বাংলাদেশের আবৃত্তি ইতিহাসের দুই খ্যাতিমান নাম শিমুল মুস্তফা ও কাজী আরিফের। দারুণভাবে আমাদের সময়গুলো কেটে যেতো। বড়দা ছিলেন তখন আমাদের মাঝে নিয়মিত। আর নির্দিষ্ট সময় করে সকাল আর রাতের দিকে আসতেন শিমুল মুস্তফা, কুমকুম হাসান আর কেবল রাতেই পেতাম আমরা কাজীদা, টরন্টোর হাসান মাহমুদকে। সে সময়টিতে বুঝিনি কিন্তু এখন এই বেলায় অনুভব করি বড়দা তখন অনেকটাই আমার অভিভাবকের মত পাশে থাকতেন। এ যেন জগতেরই নিয়ম যেখানেই শুভর উত্তরণ সেখানেই অশুভর আবির্ভাব। কিছুদিনেই আরো কিছু গ্রুপ গজিয়ে যায় কিছুদিনেই আরো কিছু গ্রুপ গজিয়ে যায় যারা খুব অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল কে কোন রুমে কবিতা, গানের শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন, কার অনুষ্ঠানে বেশি ইউজার উপস্থিত থাকবেন, কার রুম সবথেকে জনপ্রিয় আর একনম্বরে থাকবে ইত্যাদি।ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে আমাদের হালকা আড্ডার ছলে কবিতা গানের চর্চা করার সময়গুলো কেমন পালটে যেতে থাকে। প্রতিযোগিতায় থাকা গ্রুপ গুলো চিরাচরিত সাইবার যুদ্ধে নেমে আজেবাজে নামে রুম বের করতে শুরু করে। বড়দা সেই দিনগুলোতে আমাকে নিয়ে পালটকের নিজস্ব এডমিন রুমগুলোতে যেতেন। ঘণ্টা কাটিয়ে অপেক্ষা করতেন মাইকে রিপোর্ট করে রুমগুলো একেবারে বন্ধ ও যারা এই সব কাজ করে তাদের আইপি পালটক থেকে নিষিদ্ধকরণ করাতে।

বড়দার ভিতরে হার না মেনে লড়াই করার যে একটি একগুঁয়ে শক্তি ছিলো তা তখন টের পেতাম। সব সময় বলতেন অনেক আগে আমি আমার দেশ থেকে স্বেচ্ছায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। সেই চলে আসা ঠিক কি বেঠিক তার হিসাব অনেক সূক্ষ্ম কিন্তু মনে মনে কোথাও যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করে, লড়াই করে থেকে গেলেও যেনো পারতাম এই ভেবে। আমি সেই থেকে ধীরে ধীরে পালটক ছাড়ি কিন্তু বড়দা আমার হয়ে নিয়মিত তার অভিভাবকত্বের দায়িত্বটুকুন করেই যেতেন।

দাদার খুব প্রিয় একটি কবিতা ছিলো রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর “ইশতেহার”। কতবার যে তিনি তাঁর পরিচিতজনদের নিয়ে আসতেন কবিতাটি আবৃত্তি করে শুনাতে। এটি আমারো একটি প্রিয় কবিতা। মজার ব্যাপার হলো আমরা দুজনেই জানতাম কবিতাটি আমাদের খুব প্রিয় কিন্তু সরাসরি বলতাম না কিছুই। যখনই আমি বড়দার উপরে ক্ষেপে থাকতাম তিনি রুম-এ এসেই মাইক নিয়ে বলতেন বুণ্ডি দাদাকে ইশতেহার কবিতাটি একটু শুনা তো ! বুঝতাম দাদা আমাকে সরি বলে ঝগড়ায় সন্ধি করতে চাইছেন। আবার তিনি যখন ক্ষেপে থাকতেন আমি তখন নিজেই মাইক নিয়ে হয়তো কবিতাটি আবৃত্তি করছি তো তিনি বুঝে যেতেন আমার পক্ষ থেকে সন্ধির প্রস্তাব। আমাদের দুজনের এই সন্ধির কমন ব্যাপারটি দুজনেই খুব উপভোগ করতাম।

তবে অপআপুর সাথে সম্পর্কের পরে অবশ্য আমাদের সন্ধির কেন্দ্রস্থল বদলে যায়। বেচারি এই শুক্রবার অই শুক্রবার যেতে না যেতে দফায় দফায় দুজনের ঝগড়া মিটাতে বলা যায় বিরক্তই হয়ে যেতেন। পালের সাথে সম্পর্ক ঘুচে যেতে যেতে যে টান টুকুর জন্য কিছুটা হলেও যাওয়া-আসা করেছি তা এই তিনজন মানুষ। ২০০৯ এ দেশে ফিরে আসার আগে আগে বড়দা আমাকে একদিন খুব করে প্রমিজ করালেন তার একটি কথা রাখতে। কথাটি ছিলো তিনি একটি পাত্র ঠিক করেছিলেন আমার জন্য যাকে আমি বিয়ে করবো। লিখতে লিখতে এখনো আমার হাসি পেয়ে গেলো কতটা সিরিয়াস হয়ে বড়দা বলেছিলেন যাকে ঠিক করেছি তার মতো ছেলেই হয়না, লাখে এক। আমি বললাম দাদা এলিয়েন নাকি? আমার এই বিদ্রূপে আবার তাঁর রাগ আমার সাথে ঝগড়া। আবার আমাদের আম্পায়ার অপআপু। যদিও সেই যাত্রায় আমাদের কথা বলাবলি বন্ধ বেশ দীর্ঘই হয়েছিলো এবং তখনো আমার জানা হয়নি কে সে পাত্র। এরও বেশ কিছুদিন পরে বড়দা একদিন বললেন বুণ্ডিরে আমরা বুড়ো হয়ে গেছি। তোদের এই নতুন জেনারেশনকে তাই খুব অচেনা লাগে। দাদার কণ্ঠ ছিলো খুব হতাশার, শুনেই মায়া হয়, আমারো মন গলে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম আমার সাথে ঝগড়া করে এখনকি আপুর সাথেও লেগেছো নাকি? বললেন "নাহ রে! তোর জন্য যে ছেলেটিকে ঠিক করেছিলাম, তাকে যা ভেবেছিলাম সে আসলে তা নয়। আমি বললাম তো কি হয়েছে সে তার মতো। তাকে তোমার ভাবনার মতো কেন হতে হবে? দাদা অনেকটা সময় চুপ থেকে বললেন "তাকেই পাপ বলে যা আমরা লুকিয়ে রাখি আর তাকেই ভুল বলে যা আমরা বুঝতে পেরে বদলাই কিংবা বদলাতে চেষ্টা করি।" বললাম দাদা কি হয়েছে বলোত.... দাদা বললেন সেই ছেলেটি লুকিয়ে আরো কয়েকটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক রেখেছে। আবার আমাকে বলেছে যদি আমি রাজী থাকি...... বলতে বলতে দাদা বলছিলেন ভেবেছি দুই ভাইবোনে একই সাথে নতুন জীবনে জড়াবো... শিশুর মতো দাদার সরল স্বপ্নের কথা গুলো ....

দাদাকে অনেক ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলাম আসলে অপআপুর দ্বারা। কি অপার মমতায় তিনি দাদার ছন্নছাড়া জীবনের আঁটঘাট গুলোকে পালটে দিতে চেষ্টা করে যেতেন। অনলাইনে হওয়া একটি সম্পর্ক তাও আবার দাদার মতো বোহেমিয়ান ১৮ বছরের বয়ে বেড়ানো কাণ্ডারিবিহীন নৌকোকে দিনের পরে দিন আঁকড়ে থাকাকে কি বলবো? জানা নেই কি করে আপুর এতো ধৈর্য ছিলো, বিশ্বাস, সাহস ছিলো যখন চার পাশের সবাই নানান সন্দেহ প্রকাশ করতো যাকে কোন দিন চোখে দেখনি তাকে নিয়ে জীবনের সব থেকে কঠিন সম্পর্কের পথে কি করে হাঁটবে? হাজার প্রশ্ন, সংশয়ের তখন একটাই উত্তর হয় যে একেই ভালোবাসা বলে। যার কাছে কোন প্রশ্নই প্রশ্ন নয় কোন উত্তর কিংবা ফলাফলই যাকে টলাতে পারেনা।

বড়দা দেশে ফিরে এলেন। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ছিলো উত্তেজনার। বড়দা আর অপআপু দুজনেই যেন ফিরে গেছেন কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যৌবনে পা রাখা কিশোর কিশোরিতে। দাদাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে আপু নিজেই চলে গেছেন হাতে তার লাল গোলাপ। আপু লাজুক কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে দেশের মাটিতে পা রাখতে দেখার উত্তেজনায় কাঁপতে থাকা কিশোরি, দাদা ভালোলাগা লুকোতে আর তা ধরা পড়ে যাবার দ্বিধায় ব্যতিব্যস্ত। দুজনেই যখন ফিরছিলেন সেই পথে আমিও তাদের সঙ্গী ছিলাম ফোনের মাঝে। না দেখেই টের পেয়েছি ভালোবাসা পরিবেশ কিংবা পরিস্থিতিকে থোড়াই কেয়ার করে। সে যদি আসে তো এভাবেই আসে, সব কিছুকে পিছিয়ে ফেলে কেবলি নিজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আপু আর দাদা যাত্রা শুরু করলেন সেই পথে।

প্রভাত সূর্যের কোমল আলো বদলে যায় করাল প্রহরের প্রখর রৌদ্রে। আজন্ম অস্তিত্বে সাংবাদিকতা লালন করে আসা স্বেচ্ছানির্বাসন শেষে দেশে ফিরে আসা দাদার জীবনও সেই মতো সংঘাতের মুখোমুখি হয়। সেই দিকে আর নাই গেলাম।

আজ এই বেলায় আমি কেবল স্মৃতিকাতর। দাদাকে ঘিরে স্মৃতি-বেদনায় মূক অপআপুর অন্ধের যষ্টির মতো আঁকড়ে ধরে সর্বস্ব যেই মানুষটিকে ঘিরে রচনা করে গেছেন এই কয় বছর, - তার প্রস্থানে শূন্যতার পরিধি মাপার শক্তি কি আমাদের আছে?

দাদা তুমি যেই অবস্থানের জন্য এতো বছর পরে এসে লড়াই করতে শুরু করেছিলে, পদে পদে নিরাশ হয়ে হতাশার হাতে অভিমানী এক ফেরারী মিছিল হলে.... তার কিছুই ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। পূর্বেও ছিলোনা, কেবল যা আছে তা এই স্মৃতির মাঝে তোমাকে এইতো মাত্র দেখে আসা সদ্য হাসিমুখ খানাকে ধারণ করা। প্রতি জন্মদিনে অনেক পাখি তুমি খাঁচা থেকে মুক্তি দিতে। বিশ্বাস করো সেই পাখিরা হাজার পাখির মাঝে তোমার নামে গান করছে। আমাদের সময়ের মাঝে তুমি আর তোমার তুমির অস্তিত্ব আমরা ধারণ করে আছি।
বড়দা তুমি ভালো থেকো,

আমরা ভালো নেই-

তোমার বুণ্ডি।
প্রখর-রোদ্দুর

[ প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদের স্মৃতি নিয়ে ]


মন্তব্য

পুতুল এর ছবি

এই সচলেই প্রথম খবরটা পাই। অনেক্ষণ চুপ করে বসে ছিলাম। কী করা যায়! কী বলা যায়। কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। আপনার স্মৃতিচারণ আমাকেও একটু স্মৃতি কাতর করে দিল!
সময়টা খুব কঠিন ছিল। এরশাদের জগাখিচুরীতে খেই হারিয়ে ফেলাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। অনেক রথি মহারথি যখন এরশাদের সাম্পনে তখন যে কয়জন মানুষ নিজের মত এবং পথে ছিলেন তাদের মধ্যে প্রথমেই কবি শামসুর রাহমান। তাঁর হয়রানীর বেশী খবর জানি না। তিনি অনেক প্রবীন ছিলেন। তবে চাকুরীটা হারিয়েছেন। এটুকুই তো যথেষ্ট।
অনেকেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। যেই দিকের বৃষ্টি সে দিকে ছাতা ধরেও অনেকে প্রগতির কৌলিন্য রক্ষা করেছেন।
আমরা কিছু বখাটে পোলা পাইন ছিলাম। যারা এক দফা এক দাবী নিয়ে বলতাম এরশাদ তুই এখন যাবি। পুলিশ ধরে মতিঝিল বা রমনা থানায় এক রাত রেখে পরের দিন ছেড়ে দিত। আমরা আবার রাস্তায় নেমে হাউকাউ করতাম।
কিন্তু বিচিন্তার লেখাছিল একটু বিপ্লবী টাইপের। অন্তত সেই সময়ে। এক সময় সেটা বন্ধও হয়ে যায়। সম্ভবত নব্বইয়ের শুরুতে আবার চালু হওয়ার বা করার একটা আভাস পেলাম। হিরন্ময় কষ্টের জগতে আহ্বানের মাধ্যমে সংবাদ কর্মী নিয়োগের সার্কুলার পড়ে এপ্লাই করলাম। আমি আর আমার এক বন্ধু।
ইন্টারভিউ কার্ডপেয়ে মনে হল সাংবাদিক হয়ে গেছি। খুসী মনে গেলাম এবং জানলাম বিচিন্তা এবার প্রসবের আগেই মারা গেছে।
তার পরেও মিনার ভাই একটা এসাইনমেন্ট করতে দিলেন। লেখার ষ্টাইল, ভাষা, ইত্যাদি নিয়ে কড়া ভাষায় ঝাড়তেন। এর মধ্যে এরশাদের পতন হলো। বিচিন্তাও বের হল। কিন্তু ঠিক বিচিন্তার বৈশাষ্ট নিয়ে লিখতে গেলে যে কোন সরকারের কাছে হয়রানী হতে হয়।
এত সংগ্রাম এতো আন্দোলন করে আমরা এরশাদকে হটিয়ে কী আনলাম! যেই লাউ হেই কদু দেখে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সামনে সুন্দর আশা নিয়ে সংবাদকর্মীরা কখনই মাঠে নামতে পারে না। একটা মূল্যবোধ বা আদর্শকে আকড়েই হিরন্ময় কষ্টের এই বিপদ সংকুল কাজটা করে সংবাদকর্মীরা। আমরা এরশাদকে হটাতেই ছাত্র জীবন পার করেছি। স্বাধীন ভাবে মিনিমাম মুক্তবুদ্ধিচর্চারও আশা যখন দূরাশা, তখন অনেকেই ইউরূপ-আমেরিকার অনিশ্চিৎ জীবনের পথে পা বাড়িয়েছি।
আমাদের সেই মিছিলে মিনার মহমুদও ছিলেন সেটা পরে জেনেছি। কিন্তু ফিরে আসছেন সেটা তাঁর দেশে ফেরার আগেই জেনেছি। ভাল লেগেছিল। আমার পক্ষে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি না ফিরলে কারো কোন ক্ষতিও নেই। কিন্তু মিনার মাহমুদ না ফিরলে ক্ষতি বৈকী। ভেঙ্গে যায় কিন্তু মচকায় না এমন মানুষ সব সময়ই বিরল। আর তাঁর মতো দূর্দান্ত গদ্য লেখকও আমাদের খুব বেশী নেই।
তারপর খবর পেলাম বিচিন্তা আবার বের হচ্ছে। একটা লেখাও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু যে লেখাটা পাঠিয়েছিলাম সেটা না ছেপে; ছেপেছেন অন্য একটা লেখা। তাও আবার আমাকে না জানিয়েই। পরে শুনেছি তিনি লেখাগুলো যোগার করিয়েছেন অন্য একজনকে দিয়ে, যিনি লেখকের মতামত নেয়ার ব্যপারে তেমন মনোযোগী ছিলেন না। এই নিয়ে এখানে অসন্তোষ ছিল। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয়েছে, এ যেন ঠিক সেই মিনার মাহমুদ নয়। এমন একজন সিরিয়াস মানুষ পত্রিকায় লেখা ছাপাচ্ছেন লেখকের অনুমতি ছাড়াই! পরে জেনেছি যে, লেখাগুলো আর কেউ যোগার করছেন বিচিন্তার জন্য।
খারাপ লেগেছে। মিনার মাহমুদ কোথায় থাকার কথা, আর কোথায় আছেন! আফসোস, আমাদের সমাজে যে মানুষ গুলো সব চেয়ে বেশী অবদান রাখতে পারেন বা পারতেন তাদেরকেই আমরা গলাধাক্কা দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেই।

কর্টে হাজিরা দিতে হয় সপ্তাহে তিন দিন। আপনি কাজ করবেন কখন! শুধু হয়রানির জন্য এমন বহু মামলা ছিল ৯১ খালেদা সরকারের সময় বিচিন্তা এবং মিনার মাহমুদের উপর। তিনি কী করবেন! পালালেন। আমার মনে হয় তখনই তিনি মারা গেছেন। সৃজনশীল মানুষ নিজের পছন্দের হিরন্ময় কষ্টের জগতেই বেঁচে থাকে। অন্য কোথাও না। আমরা তাদের বাঁচতে দিতে পারি না। এটা আসলে আমাদেরই ব্যর্থতা। আপনি ভাল থাকবেন মিনার ভাই।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

আপনার মন্তব্য থেকে আরো অনেক কথা উঠে এলো। আসলে এখন হঠাৎ এমনটি পরিবেশে দাঁড়িয়ে বলা যায় অনুভুতি গুল খুব ঘোলাটে হয়ে আছে। তবু এর মাঝেও এইটুকু বলতে পারি তার জীবনের ঘটনার সাথে আসা যাওয়ার এই পরিনতি গুলো হয়তো নিজের ভিতরেই আরো অনেক ভাংচুর, দ্বৈততা তৈরী করে দিয়েছিলো। গা ঘষার জন্য কিন্তু নিজেই নিজেকে অনেক জায়গায় সাহায্য করতে পারিনা। তেমন করেই সেই সব ভিতরের ভাঙ্গা গড়া গুলো ঝালিয়ে নিতেও অনেক কিছুরই পাশে দাঁড়ানোর উপযোগিতা তৈরী হতে হয়। - যা হয়নি।
আমার কেবল ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতি অনেকটা বলা চলে নিজের মতো করেই বললাম হয়তো ভিতরের চাপ টুকু যদি কোন ভাবে কমানো যায় সেই চেষ্টা।
তবে দল ছুট পাখিদের হয়তো অনেক চেষ্টা করলেও আর ফিরে এসে দলের মাঝে নীড় গড়া হয়না।

মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।

হাসিব এর ছবি

সচলে স্বাগতম। আপনার পোস্ট আগে পড়া হয়নি। লিখে যান।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

আমি আসলে সচলিত নই কিংবা সচল হওয়ার মতো লিখিও না। তবে সচলে লেখা নিয়মিত পড়তে আমার ক্লান্তিত বোধ হয়নি কখনো।

অনেক ভালো থাকুন।

নজমুল আলবাব এর ছবি

খুব মন ছোয়ে যাবার মতো করে লিখেছেন। আরো লিখুন।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল - বাহ! চমৎকার ক্যাপশন তো।
লেখাটি ছুয়ে যাবার মতো নয় আসলে, লেখনীর অন্তরালের আবহ টুকুন অনেক বেশি আবেগি।

কৃতজ্ঞতা
অনেক ভালো থাকুন।

তারেক অণু এর ছবি

আবেগ ছুয়ে গেল।

আরো লিখুন, কেবল আশা করি কোন প্রিয় মুখের প্রস্থান নিয়ে যেন লিখতে না হয়।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা ভ্রমনা(ন + আ)ণুবীদ।

সাবরিনা সুলতানা এর ছবি

স্মৃতিচারণটি পড়তে পড়তে আমিও যেনো সেই দিনগুলো থেকে ঘুরে এলাম।

অনেকদিন পর রোদ্দুরের লেখা পড়লাম। কিন্তু রোদ্দুরের ঝিলিক যেনো দেখলাম না!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

রোদ্দুর ও ক্লান্তি থাকে প্রখরতার বিপরীতে তা ঝিমিয়ে পড়া দুপুরের নাম।

অনেক ভালো থাকুন।

সাবরিনা সুলতানা এর ছবি

বাহ! ভারী সুন্দর কথা বলেছেন তো! :)

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ার নেশা কাটাতেই এ তীব্র অস্থিরতা
তবু, মায়ার পাহাড়েই আমার নিত্য বসবাস।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।