• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

যখন বৃষ্টি নামত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৬/০৪/২০১২ - ১১:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

বাবলুর জন্মের সময় আম্মা মারা যান।

তার আগে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার ছিল। আব্বা, আম্মা আর আমি। ভাঙাচোরা একটা বাসা ছিল আমাদের। সেই বাসার দেয়াল আর ছাদ থেকে চুনকাম খসে পড়ত নিয়মিত। জানলার গ্রিলে হাত রেখে দাড়ালে হাত দুটো রাঙা হয়ে যেত। শেওলাধরা কার্নিশের দিকে চোখ পড়লে গা-টা ঘুলিয়ে উঠত। সবচাইতে অদ্ভুত ছিল ঘরের মেঝেটা, কালের বিবর্তনে কিভাবে জানি কতগুলো খানাখন্দ তৈরী হয়েছিল সেখানে। অন্দরমহলের অবস্থাটা ছিল আরো করুণ। একটু এপাশ ওপাশ হলেই বিছানাটা বিচ্ছিরিভাবে আর্তনাদ করে উঠত। ঘুঁণেধরা পড়ার টেবিলটা কাঁপত অনবরত। সামনের বসার রুমটাও সাজানো ছিল হাস্যকরভাবে। যার অন্যতম আকর্ষণ ছিল লাল স্কচটেপ দিয়ে দেয়ালে ঝোলানো একজোড়া চিত্রা হরিণ।

তারপরও সুখে ছিলাম। আব্বা ছোট্ট একটা সরকারী চাকরী করতেন। অল্প কিছু টাকা মাইনে পেতেন। তার পুরোটাই খরচ করতেন আমাদের জন্য। আম্মা সংসারের জন্য অনেক খাটতেন, অসাধারণ ছিল তার রান্নার হাত। প্রতি শুক্রবার পোলাও মাংস রান্না হতো আমাদের বাসায়। একসাথে খেতে বসতাম আমরা। আব্বা হয়ত সেখানে তার অফিসের মিজান সাহেবের গল্পটা বলতেন। আর আম্মা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে নানা অভিযোগ করতেন আমার নামে। আমি কিছু বলতাম না, চুপচাপ শুনতাম শুধু। তারপর কথা দিতাম, আর কোনদিন এমনটা হবে না। আর কোনদিন নিয়ম ভাঙবো না, কথার অবাধ্য হব না একরত্তি। কিন্তু সেইসব কথা আর রাখা হতো না, নিয়ম ভাঙতাম নিয়মিত। একেকদিন একেকটা অঘটন ঘটাতাম, আর আমার ছোট্ট মনোজগতটা নেচে উঠত এক অপরিসীম আনন্দে। এতকিছুর পরেও মাঝে মাঝে ভীষণ একা হয়ে যেতাম। সবকিছু কেমন জানি অর্থহীন মনে হতো, শূন্য মনে হতো। অতটুকুন বয়সে এমন দুর্বোধ্য অনুভূতিগুলো কোথা থেকে আসত কে জানে!

আমার একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য আব্বা আম্মার চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। আব্বা অনেক দামী দামী বই উপহার দিতেন। প্রথম কয়েকদিন সেগুলো পড়তাম না, গন্ধ শুঁকতাম শুধু। তারপর এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করতাম একের পর এক। আমার একাকীত্ব তবু ঘুঁচত না। মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকতাম দূরের আকাশটার দিকে। বিকেলের শেষ দিকে ভেন্টিলেটরে বাসা বাঁধা চড়ুইগুলোর ঘরে ফেরা দেখতাম। সন্ধ্যার পর মাঝে মাঝে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামত, তখন আম্মার শত বারণ সত্বেও জানলা দুটো খুলে দিতাম। হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকত সেখান দিয়ে। গভীর রাতে হয়ত ঝড় বৃষ্টি থেমে যেত, তখন আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠতাম। জানলার গ্রিল ধরে নিঃশব্দে দাড়িয়ে থাকতাম। পরিষ্কার আকাশে একফালি চাঁদ উঠত তখন। অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতাম আমি। মন খারাপ করা চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আমার ভেতরটা শূন্য হয়ে যেত, অকারনে পানি জমত চোখের কোনায়।

একদিন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। আমাদের ছোট্ট সুখের সংসারটা স্তব্ধ হয়ে গেল একদম। কাউকে কিছু না বলে আম্মা চলে গেলেন, আর কোনদিন ফিরলেন না। এত অভিমান হল আম্মার উপর! দুঃখ-কষ্টের পৃথিবীটা ছেড়ে কেমন স্বার্থপরের মতন চলে গেলেন, একটাবারের জন্যও আমাদের কথা ভাবলেন না। আমার কথা, আব্বার কথা, বাবলুর কথা।

বাবলুর দিকে তাকিয়ে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল ভীষণ, নিষ্পাপ মুখটাতে কি অসম্ভব মায়া ছড়ানো! একটা দেবশিশু যেন স্বর্গ থেকে ভুল করে এখানে এসে পড়েছে, হাসপাতালের এই জরাজীর্ণ বিছানায়। এই দেবশিশুটাই একদিন অনেক বড় হবে, আস্তে আস্তে বুঝতে শিখবে সবকিছু। কিন্তু "মা" কি জিনিস সেটা হয়ত আর কোনদিন বুঝবে না। "মাতৃস্নেহ" কি জিনিস সেটা হয়ত আর কোনদিন জানবে না। কয়েকটা দিন আগের ছবিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে আমার। বাবলুকে একটাবার দেখার জন্য কি অপরিসীম অপেক্ষা ছিল আম্মার, কতকিছু বানিয়ে রেখেছিলেন যত্ন করে। আর কতরাত যে না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন, সেটাও বা কে জানে? শুধু বাবলু যদি একটাবার জানত! শুধু একটাবার জানত সে যখনও পৃথিবীতে আসে নি তখনও আম্মা তাকে কতটা ভালোবাসতন। বাবলুর আর কোনদিনি জানা হবে না এসব। আম্মার মৃত্যুসংবাদে আমার হাউমাউ করে কান্নাকাটি করার কথা ছিল, কিন্তু আমি সেটা করলাম না। আব্বাকে জড়িয়ে ধরে কয়েক ফোঁটা চোখের জল বিসর্জন দিলাম শুধু। আর জীবনে প্রথমবারের মত আব্বাকে কাঁদতে দেখলাম। আব্বা শিশুর মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন, এত কষ্ট হচ্ছিল আমার!

বাবলুকে দেখার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকল না আমাদের সংসার এ। ছোটখালাকে খবর দেয়া হল। খালা হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেলেন বাবলুকে। আর আমি আব্বাকে নিয়ে ঘরে ফিরলাম, একদম নিঃশব্দে।

২.

আম্মা মারা যাবার পর আব্বা বদলে গেলেন, কেমন জানি হয়ে গেলেন দিনে দিনে। আগের মত আর কথা বলেন না, প্রান খুলে হাসেন না। অথচ একটা সময় ছিল যখন অফিস থেকে ফিরেই অস্থির হয়ে যেতেন খুব, অকারনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করতেন। আম্মাকে ঢেকে বলতেন, "রেণু, গরম এক কাপ চা বানিয়ে দাও তো"। তারপর আমাকে জাগিয়ে তুলতেন ঘুম থেকে। অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে শুরু করতেন টিপু সুলতান কিংবা নবাব সিরাজউদ্দৌলার গল্প! আমার ভালো লাগত না মোটেও। এই দুটো ছাড়া আর কোন গল্প জানতেন না আব্বা। চুপচাপ বসে শুনতাম একেকটা গল্প। আম্মা চা নিয়ে আসতেন তখন। একটা পিরিচে কয়েকটা বিস্কুটও থাকত। সেই বিস্কুট চা তে চুবিয়ে চুবিয়ে খেতাম। তৃপ্তিসহকারে বিকেলের নাস্তাটা শেষ হতো আমাদের। তারপর আবার শুরু হতো গল্প, টিপু সুলতানের গল্প! আম্মা পাশেই বসে থাকতেন, মিটিমিটি হাসতেন। আব্বার সহজ সরল পাগলামীর জন্য হয়ত, কিংবা আমার কাঁচমাচু হয়ে যাওয়া মুখটার জন্য। মাঝে মাঝে আজগুবি সব প্রশ্ন করতাম। আব্বা অপ্রস্তুত হয়ে যেতেন, উত্তর দিতে পারতেন না। শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন আমার, আর খুব গর্ব করে আম্মাকে বলতেন, "রেণু, এই ছেলে একদিন অনেক বড় কিছু হবে, তুমি দেখে নিও।" আম্মা অবশ্য কিছুই দেখে যেতে পারলেন না, তার আগেই চলে গেলেন।

একটা বিশাল শূন্যতাকে সাথে নিয়ে আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম। স্কুল থেকে যখন ঘরে ফিরি, তখন আর কেউ ভেতর থেকে দরজাটা খুলে দেয় না। বিশাল একটা তালা ঝোলানো থাকে সেখানে। পকেট থেকে চাবি বের করে সেই তালাটা খুলতে হয় প্রতিদিন। তারপর শূন্য ঘরের প্রতিটা রুমে পায়চারী করতে থাকি। ভুল করে মাঝে মাঝে আম্মার রুমেও চলে যাই। সবকিছু মনে পড়ে যায় তখন। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করি অনেক। ভালোই তো হল! কেউ তো আর বৃষ্টিতে ভিজতে বারণ করবে না। স্কুলের ড্রেসটা ঠিকমত গুছিয়ে রাখতে বলবে না। দেরি করে ঘরে ফিরলেও বকা দেবে না কেউ। আব্বার কাছে আর একটা নালিশও যাবে না আমার নামে। তবুও বোঝাতে পারি না নিজেকে। এই রক্ত মাংসের শরীরটার ভেতর "এমন কিছু" আছে যেটা বুঝতে চায় না। আর কেউ তো গরম এক কাপ চা বানিয়ে দেবে না, একটা পিরিচে দু-তিনটে বিস্কুট সাজিয়ে হাসিমুখে সামনে বসে থাকবে না। শার্টের একটা বোতাম খুলে গেলে কেউ আর এত যত্ন করে সেটা লাগিয়ে দেবে না। কিংবা অনেক রাতে যখন ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকব, তখন আর কেউ পাশে এসে বসবে না, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে না। চোখের পাতা ঝাপসা হয়ে আসে আমার, সবকিছু কেমন জানি ঘোলাটে মনে হয়।

চোখের জলও শুকিয়ে যায় একদিন। কিভাবে জানি অনেক বড় হয়ে যাই। শৈশবের অনুভূতিগুলো একটা একটা করে উড়ে যেতে থাকে, বায়বীয় পদার্থের মতন। মাঝে মাঝে চোখ দুটো বন্ধ করে অনেক জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকি। শুধু যদি একটু গন্ধ পাওয়া যায়, একটু অনুভব করা যায়, সেই আশায়। কিন্তু গন্ধ পাই না কোন। দুর্বল হয়ে যাওয়া ঘ্রানশক্তিটা জানিয়ে দেয়, বড় হয়ে গেছি, অনেক বড়!

৩.

এক ঝড় বৃষ্টির রাতে আলো নিভিয়ে শুয়ে ছিলাম নিরিবিলি। খোলা জানলা দুটো দিয়ে কনকনে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছিল। আকাশে অনবরত মেঘের গর্জন আর বিদ্যুৎ চমকানি। এমন সময় হঠাৎ আব্বা এসে হাজির হলেন রুমে। আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করলেন। আর বারবার বলতে লাগলেন বাবলুকে এনে দিতে। এমন ঝড়বৃষ্টির রাতে বাবলুকে আনা সম্ভব ছিল না মোটেও। আব্বাকে বোঝালাম অনেক। কিন্তু কেমন জানি ছেলেমানুষী শুরু করলেন, বুঝতে চাইলেন না একদম। তারপর যখন ঝড়বৃষ্টি থেমে গেল, তখন কান্নাকাটি বন্ধ করলেন। চোখ মুছে ঘুমাতে গেলেন। আমি বুঝতে পারি সব। বাবলুটা নিশ্চয়ই এতদিনে অনেক বড় হয়ে গেছে। আজ যদি ও বাসায় থাকত, তাহলে হয়ত মেঘের গর্জন শুনে চিৎকার দিয়ে উঠত। জানলা দিয়ে হাত দুটো বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরতে চাইত। কিংবা আব্বার কোলে মাথাটা গুঁজে দিয়ে কোন একটা গল্প শুনতে চাইত, আর গল্পের মাঝখানেই ঘুমিয়ে পড়ত। আজকের রাতটা বাবলুর না থাকাটা মনে করিয়ে দিল আরেকবার।

ছোটখালার বাসায় গেলাম পরদিন। খালাকে খুলে বললাম সবকিছু। খালা একটা কথাও বললেন না, চুপচাপ শুনলেন শুধু। তারপর দু'টা দিন সময় চাইলেন। আর চোখের জল লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। কাঁদলেন। আমি কাউকে কিছু না বলে চলে আসলাম সেদিন। বুকের ভেতরটা কেমন জানি খালি খালি লাগছিল, কষ্ট হচ্ছিল খুব। কত বদলে গেছি আমি ! কত সহজে কষ্ট দিতে শিখে গেছি ! ধূলোমাখা শূন্য রাস্তাটা দিয়ে যখন ঘরে ফিরছিলাম,তখন আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল। খালা কোনদিন মা হতে পারবেন না। সৃষ্টিকর্তা তাকে সেই ক্ষমতা দেন নি। এতদিনে হয়ত বাবলুকে আপন করে নিয়েছেন অনেক। আর সেই মায়ার বন্ধন ছিন্ন করতে কেমন অযাচিতের মতন হাজির হলাম আমি !

বাবলুর ফিরে আসাটা আমাদের দু্ঃখ কষ্টের সংসারের জন্য অনেক বড় একটা ঘটনা ছিল। আব্বার বিষাদমাখা মুখটাতে হাসি ফুটল অনেকদিন পর। কতদিন পর নতুন একজন মানুষ আসলো আমাদের সংসারে ! প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আব্বা টিপু সুলতানের গল্প শুনান তাকে। ঠিক ছয় বছর আগের মতন। এতটুকু ক্লান্তি নেই তার চোখে মুখে ! আমি দরজার বাইরে দাড়িয়ে চুপচাপ শুনতে থাকি সব, আড়চোখে দেখি মাঝে মাঝে। বাবলুটা আমার মত হয়নি একদম। বিরক্তিকর গল্প শুনতে তার খারাপ লাগে না একটুও। চোখমুখ শুকনো হয়ে যায় না। বরং দুই তিনবার করে শুনতে চায় একেকটা গল্প। আর গল্প শেষে দুই হাতের দুটো আঙুল মাথার উপর উঁচু করে ধরে। আব্বাকে জিজ্ঞেস করে, "বাবা, টিপু সুলতানের কি এইরকম শিং ছিল?"। আব্বা হতভম্ব হয়ে যান একদম। মুখ দিয়ে টু শব্দটাও বের হয় না। আমি দূর থেকে দেখি সব। কি অসাধারণ একটা মুহূর্ত ছিল ! শুধু যদি কোনভাবে ওই মুহূর্তটাকে ধরে রাখা যেত ! কিংবা সময়টাকে থামিয়ে দেয়া যেত কোনভাবে !

অবশ্য আমার মত তুচ্ছ মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছায় জগৎ সংসারের সময় থেমে থাকে না। সময় বরং চলে যায়, চোখের নিমিষে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ঢাকায় ভর্তির সুযোগ পেলাম। মফস্বল শহরের হাবাগোবা ছেলেটা ঢাকায় গিয়ে কই থাকবে, কি খাবে, এইসব হাবিজাবি চিন্তায় আব্বার ঘুম হলো না কয়েকদিন। আমি বুঝালাম অনেক। কাধেঁ হাত রেখে সাহস দিলাম, বললাম আমাকে নিয়ে চিন্তা না করতে। শেষমেষ কিছুটা শান্ত হলেন মনে হয়। আর আমি একবুক কষ্ট নিয়ে ব্যাগ গোছাতে লাগলাম। ঢাকায় আসার আগের রাতে বাবলু ঘুরঘুর করছিল আশেপাশে, আব্বাও নানা ছুতোয় দুই একটা অপ্রয়োজনীয় কথা বলে নিচ্ছিলেন। আমি ব্যাগ গুছিয়ে শুয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি। কিন্তু সেই রাতে আমার ঘুম হলো না একটুও। বারবার মনে পড়ছিল বাবলুর কথা, আব্বার কথা। বাবলু আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল, খোলা জানলার দিকে মুখ করে। চাঁদের আলো এসে পড়ছিল ওর চোখে মুখে। ওর নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল খুব, চোখের কোণে পানি জমল আরেকবার।

৪.

বড্ড বিচিত্র একটা জগৎ আবিষ্কার করলাম ঢাকায় এসে। নিরানন্দ আর নিষ্ঠুর একটা শহর। চারপাশের মানুষগুলোর ব্যাস্ততা সীমাহীন ! অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার বিন্দুমাত্র সময় নেই তাদের। শুধু আমার কোন ব্যাস্ততা ছিল না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ক্লাসে চলে যেতাম। ফিরতাম একদম দুপুরে। বিকেলের সময়টা নিঃসঙ্গ কাটতো খুব। কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে তখন ক্যাফেটেরিয়ায় চলে যেতাম। একদম কোণার টেবিলটাতে গিয়ে বসতাম, যেখানে আর কেউ বসত না। তারপর গরম এককাপ চা আর ডালপুরীর অর্ডার দিতাম। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটা থেকে বিভূতিভূষনের "অপরাজিত" বইটা বের করতাম। দুই একটা পাতা উল্টে পাল্টেও দেখতাম মাঝে মাঝে। কোন কোনদিন আবার হাঁটতে বের হতাম। শহীদ মিনার, টিএসসি, রমনা পার্ক কিংবা সোরওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতাম। চারপাশের সুখী মানুষগুলোকে দেখে হিংসা হত ভীষণ। খুব সম্ভবত তাদের কারো জীবনে এতটুকু অপূর্ণতাও ছিল না!

তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা আমার নিজেরও খারাপ কাটেনি একেবারে। মাঝে মাঝে শুধু বাসার কথা মনে পড়ত। বাকি সময়টা ভালোই ছিলাম। সেকেন্ড ইয়ারে উঠে শায়লা নামের একটা মেয়েকে ভালো লেগে যায় ভীষণ। আমাদের সাথেই পড়ত। একটা প্রজেক্টে কাজ করার সময় একি গ্রুপে ছিলাম আমরা। সেই সূত্রে পরিচয়। কিন্তু ভালো লাগার কথাটা তাকে বলার মতন সাহস আমার ছিল না। আমি তাই নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলাম। বুকে পাথর বাঁধলাম। তাতে অবশ্য খুব একটা লাভ হলো না। ভালো লাগাটা বরং বাড়তে লাগল দিন দিন। আর আমি নিজের ভেতরে স্বপ্নের জাল বুনতে লাগলাম, একটু একটু করে। কোন এক বিকেলে হয়ত শাহবাগের মোড় থেকে লাল টকটকে গোলাপ কিনব কয়েকটা। তারপর খুব উদাস মুখ করে ভালো লাগার কথাটা বলব শায়লাকে। শায়লার ভীষণ অভিমান হবে তখন। ভালো লাগার কথাটা তাকে আগে বললাম না কেন, সেইজন্যে ! তারপর একদিন বিয়ে হবে আমাদের, আর থাকবে ঘরভর্তি বাচ্চা-কাচ্চা !

আমার কল্পনার রাজ্যে ডালপালা গজাতে থাকে দ্রুত। স্বপ্নগুলো বাড়তে থাকে দিন দিন। কিন্তু একদিন সবকিছু ভেঙেও যায় আবার। চৈত্রের এক বিকেলের ঘটনা। সারাদিনের কাজ শেষে শায়লা হাসি হাসি মুখ করে বলল, "দোস্ত, কাল একটু সকাল সকাল আসিস্‌, অনেক কাজ বাকি এখনো"। আমার ভেতরটা ভেঙেচুরে খান খান হয়ে যায় তখনি। এই "দোস্ত" শব্দটা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। অনেক কষ্টে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম, "ঠিক আছে"। কিন্তু ততক্ষনে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরন শুরু হয়ে গেছে। আর আমার এতদিনকার যত স্বপ্ন, সব শেষ হয়ে গেছে নিমিষে!

আমি খুব আশাবাদী মানুষ ছিলাম। ছোট্ট এই জীবনটার উপর দিয়ে কত ঝড় বয়ে গেছে ততদিনে ! কিন্তু হতাশ হইনি কখনো। এবারও তাই হাল ছাড়লাম না। শায়লার আশেপাশেই ঘুরঘুর করতে লাগলাম। ক্যাফেটেরিয়ায় বসে গল্প করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। আর পড়ন্ত বিকেলে একসাথে হাটতাম ক্যাম্পাসের ভেতর। আমিই বকবক করতাম বেশির ভাগ সময়। শায়লা চুপ করে থাকত, কি যেন ভাবত সবসময় ! আমাদের দুইটা বছর এভাবেই কেটে গেল। তখনও আমাদের সম্পর্কটা ছিল শুধুই "বন্ধুত্বের"। কিন্তু আমি আর পারছিলাম না। এক প্রচন্ড বৃষ্টির দিনে, শেষ বিকেলে যখন চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল একদম, আমি আমার মনের কথাটা বলে ফেললাম শায়লাকে। শায়লার মুখটা মেঘে ঢেকে গেল মূহুর্তে ! চোখ দুটো নামিয়ে নিল সে। আর জানিয়ে দিল এ হবার নয়। নিজের উপর করুনা হল ভীষণ। আমার ভাগ্যটাই আসলে খারাপ। কাউকে ধরে রাখার মতন ক্ষমতা দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয় নি আমাকে !

পাশ করার পর সবকিছুর প্রতি কেমন জানি একটা বিতৃষ্না জন্মাল। অসহ্য মনে হতে লাগল সবকিছু। বন্ধুবান্ধবদের একটা বড় অংশ দেশের বাইরে যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। আর আমিও সব পিছুটান অগ্রাহ্য করে দেশ ছাড়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলাম। একাডেমিক রেজাল্ট ভালোই ছিল আমার। একটা স্কলারশীপ ম্যানেজ করতে খুব বেশি কষ্ট হল না তাই। আস্তে আস্তে সব গুছিয়ে নিলাম। একদিন সব ছেড়ে চলে যাবার জন্য এয়ারপোর্টে গিয়ে হাজির হলাম। বাবলু সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল অঝোরে। আব্বার চোখ দুটোও টলমল করছিল পানিতে। আর আমার বুকের ভেতরে কোথায় জানি তীব্র ব্যাথা হচ্ছিল। কিন্তু ততদিনে আমার জানা হয়ে গেছে, "পিছুটান" আমাকে কষ্ট দিবে শুধু। আমি তাই সব পিছুটান অস্বীকার করে প্লেনে চেপে বসলাম। একবুক কষ্ট নিয়ে দেশ ছাড়লাম !

৫.

গরম এক মগ কফি বানিয়ে জানলার পাশে গিয়ে বসলাম। আমার অ্যাপার্টম্যান্টের জানলা থেকে বাইরের তুষারপাতের দৃশ্যটা দেখতে অসাধারন লাগে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমি। মনটা খারাপ হয়ে যায় তখন। এরকম একটা মুহুর্তে আমার আজ একা থাকার কথা ছিল না। অন্তত কেউ একজন পাশে থাকার কথা ছিল, যার হাত দুটো মুঠোয় পুরে বুকের ভেতরের জমানো কষ্টগুলোর কথা বলতে পারতাম ! কিংবা যার দীঘল কালো চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে থাকতে পারতাম মুহুর্তের জন্য ! আমার জীবনটা এমন হয়ে গেল কেন কে জানে ! গত সাত বছরে একটাবারের জন্যও দেশে যাওয়া হয় নি। আব্বা যেদিন মারা যান, সেদিন সব গুছিয়ে নিয়েছিলাম, দেশে যাবার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয় নি। আব্বার হাসিখুশি আর জীবন্ত মুখটাই স্মৃতিতে থাকুক! হতভম্ব আর অপ্রস্তুত হয়ে যাওয়া মুখটাই মনে থাকুক সারাজীবন ! আমার আদরের ছোট্ট ভাইটা কেমন আছে তাও জানিনা ! ওর সাথে কথা হয় না আজ অনেক দিন। ইদানীং খুব দেখতে ইচ্ছে করে ওকে, এতদিনে নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়ে গেছে। শায়লার কথাও মনে পড়ে মাঝে মাঝে। ঘরভর্তি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক সুখে আছে ও। আর সবচাইতে বেশি মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা, যখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামত। আর আমি জানলা দুটো খুলে দিতাম। হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকত সেখান দিয়ে। আম্মা বকা দিতেন ভীষণ। কিন্তু আমি শুনতাম না একটুও। বুক ফেটে কান্না আসে আমার। টেবিলের উপর মাথাটা রেখে কাঁদতে থাকি অঝোরে। কিন্তু এই পাষাণহৃদয় মানুষটার কান্না দেখার মতন সৌভাগ্য কারো হয় না !

-এবিএম
০৬/০৪/২০১২


মন্তব্য

মর্ম এর ছবি

"আমি'-টার জন্য মন খারাপ হল, ওটাই চেয়েছিলেন হয়ত। কাজেই গল্প সার্থক।

আর ছোট্ট একটু খটকা- "আমি" আর "বাবলু'র বয়সের পার্থক্য কি অনেক?! অনেকটা তেমনি মনে হল যেন!

লিখুন আরো। শুভেচ্ছা।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

এবিএম এর ছবি

হুমম, "আমি" টার জন্য মন খারাপ হোক, সেটাই চেয়েছিলাম আসলে। "গল্প সার্থক" এই ধরনের মন্তব্য শুনলে গর্ব হয় ভীষণ !
আর হ্যা, "আমি" আর বাবলুর বয়সের পার্থক্য বেশ ভালোই !
অনেক ধন্যবাদ মর্ম আপনাকে। ভালো থাকবেন।

পথিক পরাণ এর ছবি

একটানা শেষ লাইনে এসে থামলাম। আমরা সবাই বোধকরি এমন একেকটা দ্বীপ। যার চারিপাশে একই জলের ধারা। তবুও সবাই কি আলাদা আর বিচ্ছিন্ন!!

আরও লিখুন এমন একাকীত্বর গল্প।

-------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---

এবিএম এর ছবি

পাভেল ভাই, আপনি আমাকে চিনে থাকবেন ! সচলে লেখা পাবলিশ করা নিয়ে আপনাকে একটা মেইল করেছিলাম, মনে আছে?

সচলে এটাই আমার প্রথম লেখা। একাকীত্বের গল্প নিয়ে আরো লিখব হয়ত। অনেক ভালো থাকবেন।

পথিক পরাণ এর ছবি

ভাই
চিনতে পেরেছি এবার।
আপনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। শুরুতে বাড়ির পরিবেশের যে বর্ণনাটা দিয়েছেন তার জন্য খুব তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকা লাগে।

আপনার আরও অনেক মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা পড়বার অপেক্ষায় রইলাম।

বন্দনা এর ছবি

আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি আমার ও ভীষণ ভালোলাগে, একি সাথে কেমন কষ্ট ও লাগে এই পাগল করা বৃষ্টি দেখলে। লেখা খুব ছুঁয়ে গেলো।

এবিএম এর ছবি

আপু, সচলে এটা আমার প্রথম লেখা। "ছুঁয়ে গেলো" জেনে ভালো লাগল ভীষণ !
ভালো থাকবেন অনেক।

তারেক অণু এর ছবি

শুরুর দিকের লাইনগুলো খুব মায়াকাড়া।

এই রক্ত মাংসের শরীরটার ভেতর "এমন কিছু" আছে যেটা বুঝতে চায় না। এইটা আমার কাছে গোটা গল্পের সেরা অনন্য লাইন বলে মনে হল, ব্যক্তিগত অভিমত।

শেষের দিকটা একটু পরিচিত ফিনিশিং হয়ে গেছে, কিন্তু নিঃসঙ্গতা ছুয়ে যায়।

লিখুন আরো---

এবিএম এর ছবি

দাদা, এত বড় একটা লেখা পড়ার জন্য আপনাকে স্পেশাল একটা থ্যাংকস। :)
আপনার জন্য এটা : (ধইন্যা)
ব্যক্তিগতভাবে শেষের দিকের কিছু লাইন আমার বেশ পছন্দের, যেমন

আমার জীবনটা এমন হয়ে গেল কেন কে জানে !

অথবা

কিন্তু এই পাষাণহৃদয় মানুষটার কান্না দেখার মতন সৌভাগ্য কারো হয় না !

শেষের দিকটা আসলেই অনেক পরিচিত ধরনের হয়ে গেছে ! দেখি, নতুন কোন আইডিয়া নিয়ে নতুন কিছু লিখতে পারি কিনা ! ভালো থাকবেন দাদা। :)

প্রীনন এর ছবি

চালিয়ে যা,ব্যাটা।পড়তে একটু বিলম্ব হইল,মাইন্ড নিস না।তবে সব গল্পের এত্ত স্যাড এন্ডিং কেন রে?:(

এবিএম এর ছবি

মহাজন, এত বোরিং একটা লেখা পড়লি কেমনে ? :-? যাই হোক, ধইন্যা পাতা নে,

(ধইন্যা)

আর হ্যাঁ, সামনে কিছু লিখলে স্যাড এন্ডিং থাকবে না, প্রমিজ ! :)

ইয়াসির এর ছবি

পাঠকের চাপে লেখক বদলে গেলে চলবে কেন? ;)

আশা করি লেখা চালিয়ে যাবেন, ভালো লেগেছে

এবিএম এর ছবি

ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম ভীষণ। :)

লেখালেখি চালিয়ে যাবার ইচ্ছা আছে। $)

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

ভালোই লাগল পড়তে।

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

এবিএম এর ছবি

ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম ভীষণ। $)

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আপনার লেখনশৈলী খুব ভাল।
মন ছুঁয়ে গেল গল্পটা।

যদিও এই গল্প বাস্তবেরই প্রতিবিম্ব মত,
তবু প্রার্থনা করি কারও যেন এই যন্ত্রণা ভোগ করতে না হয়।

এবিএম এর ছবি

দাদা, আপনিও চমৎকার করে লিখেন। গল্পটা মন ছুঁয়ে গেছে শুনে খুশি হলাম খুব।
ভালো থাকবেন দাদা। :)

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গল্পটা খুব ছুয়ে গেল। বিশেষ করে প্রথমার্ধ! (Y)

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এবিএম এর ছবি

"গল্পটা খুব ছুয়ে গেল" এই ধরনের মন্তব্য উৎসাহ জোগায় অনেক :)
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী।

ধুসর জলছবি এর ছবি

শৈশবের অনুভূতিগুলো একটা একটা করে উড়ে যেতে থাকে, বায়বীয় পদার্থের মতন। মাঝে মাঝে চোখ দুটো বন্ধ করে অনেক জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকি। শুধু যদি একটু গন্ধ পাওয়া যায়, একটু অনুভব করা যায়, সেই আশায়। কিন্তু গন্ধ পাই না কোন। দুর্বল হয়ে যাওয়া ঘ্রানশক্তিটা জানিয়ে দেয়, বড় হয়ে গেছি, অনেক বড়!

খুব ছুয়ে গেল লাইনগুলো। আপনার লেখার হাত চমৎকার। আরও লিখুন । (Y)

এবিএম এর ছবি

উৎসাহের জন্য অনেক ধন্যবাদ ধূসর জলছবি। :)
সামনে আরো লেখার ইচ্ছা আছে ! $)

অরফিয়াস এর ছবি

কষ্ট ফুটিয়ে তোলার হাত দারুন আপনার।

তবে একাকিত্বের কষ্ট সেই ভালো বোঝে যে একা থেকেছে, ৫ বছর ধরে একাকিত্ব নিয়ে চলেছি, অনেক মানুষের ভিড়ে একা থাকাটা কষ্টের।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

এবিএম এর ছবি

আপনার সাথে একমত অরফিয়াস। :(
আসলেই, একাকীত্বের কষ্ট সেই ভালো বোঝে যে একা থেকেছে। :(

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

আজকের এই তুমুল বৃষ্টির দিনে এরকম একটি গল্প পড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

এবিএম এর ছবি

কাঁদিয়ে দিলাম নাকি ? :(

তাপস শর্মা এর ছবি

অসম্ভব সুন্দর। ছুঁয়ে গেলো ভীষণ, ভীষণভাবে। গল্প নিয়ে আর কি বলব। একটানা পড়ে এত রাতে এখন চুপ করে বসে আছি।

এবিএম এর ছবি

দাদা, এত বড় একটা লেখা এত সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ! :)
আপনি ভালো থাকবেন দাদা।

মেঘা এর ছবি

কষ্টটা খুব ছুঁয়ে গেলো :(

এবিএম এর ছবি

সেটাই তো চেয়েছিলাম আসলে :(

পদ্ম পাতার ছদ্মনাম!!!!! এর ছবি

মা আমাকে জিজ্ঞেস করতেন,"বলতো বাবা, তোমার ভাই আসবে না বোন আসবে????? "আমি অবাক হোয়ে বলতাম," আর কেও কীভাবে আসবে? আমরা চার জনই তো বেশ আছি।"
বিধাতা মনে হয় আমার ছোট্ট মনের না বুঝে বলা কথাটাই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিষ্ঠুরভাবে।
বাবা মাকে ও.টি তে নিয়ে যাবার পরে আমাদের দুজন কে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছিলেন,তখনও বুঝতে পারিনি কি হোল।
কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম, আমরা হারিয়েছি আমাদের বাবলুকে।
এরপর দূরে সরে থাকতে চাই নি। প্রতিমুহূর্ত বাবা, মা এর সাথে থাকতে চেয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা অনেক নিষ্ঠুর। পারছিনা সাথে থাকতে। সুযোগ পাবার পরেও বিদেশ যাই নি, যাবার চিন্তা এলেই কেন যেন নিজেকে স্বার্থপর মনে হয়।
"এই রক্ত মাংসের শরীরটার ভেতর "এমন কিছু" আছে যেটা বুঝতে চায় না।"

সুলতান এর ছবি

অসাধারন।

এবিএম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

এবিএম এর ছবি

গল্পের সাথে আপনার নিজের জীবনের অনেক মিল আছে দেখছি...... :(

এত সময় নিয়ে পড়ার জন্য আর এত বড় একটা মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন আপনি।

কুমার এর ছবি

আপনার লেখার হাত চমৎকার। এরকম কিছু পড়লে মন খুব খারাপ হয়। ট্যাগে দেখছি গল্প, সেটাই ধরে নিলাম। গল্পকার হিসাবে আপনি সার্থক, ফিনিশিংটা নিয়ে একটু দ্বিমত ছিল। আরও লিখুন, আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

এবিএম এর ছবি

এত বড় লেখাটা পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । :)
গল্পই এটা, কারো না কারো জীবনের গল্প ! :(
ফিনিশিংটা একটু গতানুগতিক হয়ে গেছে মনে হয় !
আপনি ভালো থাকবেন।

(ধইন্যা)

এবিএম এর ছবি

কমপ্লিমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ! $)

হুমম্‌, গল্পই এটা।

ফিনিশিংটা মনে হয় বেশি গতানুগতিক হয়ে গেছে ! :( আপনি অনেক ভালো থাকবেন কুমার ।

(ধইন্যা)

তারানা_শব্দ এর ছবি

অনেক দিন পর একটা লেখা একটানে পড়লাম। আমার খুব ভালো লেগেছে। লেখার শুরুর দিকটুকু অনেকটা জহির রায়হান এর মতন লেগেছে। প্লিজ লেখা থামাবেন না। আপনার চোর গল্পটা পড়েই এই লিঙ্কে এসে এটা পড়লাম। আশা করি নতুন লেখা পাবো শীঘ্রই ! :)

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

এবিএম এর ছবি

লেখালেখি করার ইচ্ছা আছে নিয়মিত। তবে খুব শীঘ্রই নতুন কিছু লিখব- সে কথা তো দিতে পারি না। :(
ভালো থাকবেন আপনি। :)

অকুতোভয় বিপ্লবী এর ছবি

তারানার শব্দ পেয়েই লেখাটা পড়লাম।
মন্তব্য না হয় না-ই করি।

লেখা চালিয়ে যান। আরও লেখুন।

------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।

এবিএম এর ছবি

লেখা নিয়ে মন্তব্য করলে খুশি হতাম। :(
নিয়মিত লেখালেখি করার ইচ্ছা আছে। :) ভালো থাকবেন।

সজল এর ছবি

ভালো লাগলো অনেক।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

এবিএম এর ছবি

এত বড় লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ সজল। :)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।