Are there any queers in the audience tonight? Get 'em up against the wall! That one in the spotlight, he don't look right! Get him up against the wall! And that one looks Jewish... and that one's a coon! Who let all this riff Raff into the room? That one's smoking a joint! And that one's got spots! If I had my way, I'd have all of you shot!
হাস্যকর হলেও সত্যি, একদম ছোটোবেলায় আমার ধারণা ছিলো পিংক ফ্লয়েড বুঝি কোনো এক লোকের নাম, যে কিনা গান টান গায়! পরে অবশ্য যখন অগ্রজ ব্যান্ড মিউজিকের সাথে পুরোদমে জড়িত হয়ে গেলেন, তাকে ওই কথাটা একদিন বলায় রামধমক খেলাম! পরে দাদা কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে ছেড়ে দিলে ''দি ওয়াল''। অতঃপর আমার পিংক ফ্লয়েড শোনা শুরু হলো দেয়ালে কান পেতেই। আরেকটু পরে, হয়তোবা বছর এক দুই হবে, তখন হাতে এলো অন্তার্জালের বিশাল সুবিধা, তাই শুরু হলো খোঁজাখুঁজি, পিংক ফ্লয়েডের অন্য গানগুলির।
এখানেই একটা পরিবর্তন এলো আমার ভেতর। কারণ, ক্লাস সিক্সপড়ুয়া যে দিগন্ত তখন ''দি ওয়াল'' শুনেছিলো, তার মগজে স্রেফ সুরের মজাটাই ওই সময় ধরা পড়েছিলো, গানগুলো ভালো লাগার হেতুও ছিলো সেইটাই। তাই আর সে তখন পিংক ফ্লয়েডের গানের লিরিক, রাজনীতি, বক্তব্য বা নিগূঢ় চিন্তাভাবনা নিয়ে মাথা ঘামায়নি, আর সেটা তখন তার পক্ষে সম্ভবও ছিলো না। যাহোক, ক্লাস নাইনের গোড়ার দিকে যখন অন্তর্জালে পিংক ফ্লয়েড নিয়ে জোর কদমে ঘাটাঘাটি শুরু করেছি, তক্ষুনি ফের মনে হলো, আচ্ছা- আবার ''দি ওয়াল'' অ্যালবামটা শুনে দেখা যাক না। যে কথা সেই কাজ। বড় ভাইয়ের ল্যাপটপখানা একদিন বেশ আয়েশ করে হেডফোনসমেত দখল করে নিয়ে খুঁজে বের করলাম সেই চিরায়ত অ্যালবামখানা।
সেই ফাইলে মনে হয় ট্র্যাক সব ওলটপালট আকারে ছিলো, ''In the Flesh''-এর বদলে ফলে প্রথমে বাজতে শুরু করলো সেই অপরূপ গণসঙ্গীত "Another Brick in the Wall", সেটা মনে হয় ছিলো গানটার দ্বিতীয় অংশটা। তো প্রথমেই নিক ম্যাসনের বাদনে অদ্ভুত ডিসকো বীটের মূর্ছনা ছাড়িয়ে যখন রজার ওয়াটার্সের কণ্ঠে শুনতে পেলাম ,
''We don't need no education
We dont need no thought control
No dark sarcasm in the classroom
Teachers leave them kids alone''
শুনে আমি স্রেফ স্তব্ধ হয়ে গেলাম, এ তো আমারই মনের কথা, কিন্তু ব্যাপার এই, ক্লাস সিক্সে থাকতে লিরিকের দিকটা আমি খেয়ালই করিনি, কেবল সুরের ভগ্নাংশ নিয়েই মজে ছিলাম । আবার ইন্টারনেটে শুরু হলো খানাতল্লাশি, ফাইলের গানগুলো উইকিপিডিয়া দেখে ঠিকঠাক করে সাজিয়ে আবার গোড়া থেকে শোনা শুরু করলাম। প্রথমেই ''In the Flesh''। মিউজিকের কারুকাজে আছন্ন হয়ে যাই রীতিমতো, ঘোর লাগতে থাকে। "Mother" শুনে যে সময়ে আচমকাই কেঁদে উঠি, তখন আমার জীবনে কিছু ব্যক্তিগত ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা ঘটে গেছে। বিষয়টা এমন, আগে বেহালা শিখতাম, শারীরিক কিছু অসুবিধার জন্য সেটা ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে লেখালেখির চেষ্টা করতে শুরু করলাম, তখনই, ওই ঘটনাগুলো আমার ভেতরে এমনসব প্রতিক্রিয়া তৈরি করলো, মনে হলো, একজন অসম্ভব প্রতিভাময়ী কিশোরী, যাকে জীবনের সামনাসামনি দেখিনি, তার তীব্র আঘাতে আমি মনে মনে অনেকটাই বড় হয়ে গেছি, আকাশটা এখন বড্ড বিশাল, আমার অন্তর্গত বিষাদের মতোই। সেই সময়েই শুনছি --
''Mother do you think she's good enough -- to me?
Mother do you think she's dangerous -- to me?
Mother will she tear your little boy apart?
Mother will she break my heart?''
শুনতে শুনতে, আমার ভেতর হতে কান্না ঠেলে আসে , চোখ ভিজে যায় অজান্তেই। কিন্তু যখন শুনি গানের পরের অংশটুকু --
''Hush now baby, baby dont you cry.
Mama's gonna check out all your girlfriends for you.
Mama wont let anyone dirty get through.
Mama's gonna wait up until you get in.
Mama will always find out where you've been.
Mama's gonna keep baby healthy and clean.
Ooooh baby oooh baby oooh baby,
You'll always be baby to me.''
আমার মা'র কথা মনে পড়ে, সারাজীবন, নিজে একা একা খাটনি করে যিনি আমাদের বড় করেছেন,তিনি আমার এই কথাগুলো শুনলে কতটা কষ্ট পাবেন, সে কথা ভেবে চুপ হয়ে যাই। মা যাতে চিন্তামুক্ত থাকেন, সেইভাবে চালিয়ে নেবার চেষ্টা করি। এভাবেই, গোলাপী জাদুকররা আমার ভেতর, বেদনাবোধ থেকে এক উপশমের রাস্তা গড়ে দিতে থাকেন।
এখানেই শেষ নয়, যখন শুনি,
''Did you see the frightened ones?
Did you hear the falling bombs?
Did you ever wonder why we had to run for shelter when the
promise of a brave new world unfurled beneath a clear blue sky? ''
চমকে উঠি! আরে, এতো আমারই কথা, নিতান্ত কিশোর বয়সে, একটু নিভৃতির জন্যে ছুটে বেড়াচ্ছি, কিন্তু মহাপৃথিবী আমাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়, নীল আকাশ আমার নয়। অতএব শান্তির আকাশকে বিদায় জানিয়ে দুঃখবোধে জারিত হয়ে মাঝেমধ্যে কবিতা লেখার চেষ্টা করে যাই। কিন্তু, সেই কবিতাও আমার বিপদ বাড়ায়, বারবার শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ''আনন্দ ভৈরবী" কবিতাটা মনে করিয়ে দেয় ''সে কি জানিত না যত বড়ো রাজধানী/তত বিখ্যাত নয় এ হৃদয়পুর/সে কি জানিত না আমি তারে যত জানি/আনখ-সমুদ্দুর।" এখানেই আরেক মুশকিল! আমি পিংক ফ্লয়েডের অ্যালবামটার সাথে কেন জানি, একটা আস্ত কবিতার বইয়ের হুবহু সাদৃশ্য পেয়ে গেলাম। গোটা ওয়াল অ্যালবামটাই যেন একটা দীর্ঘ কবিতা। আবার, পিংকের কাহিনী ধরে এগোলে মনে হয়, এটা একটা এপিক উপন্যাসই যেন। অথবা, যদি এর লিরিক থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বক্তব্যগুলোকে ছেঁকে তুলে আনি, তাহলে এই অ্যালবামকে আরেক অর্থে একটি নতুন জীবন প্রক্রিয়া বা বিশ্বব্যবস্থার ইশতেহারও বলা চলে। যদিও, পরে আবিস্কার করলাম, সংগীতের সাথে সমাজ ও সাহিত্যের সম্পর্ক বেশ গভীর। তাই আমি শহীদ কাদরীর ''অন্য কিছু না'' কবিতাটার সাথে মিলিয়ে শুনতে(বা পড়তে) চাই পিংকের দুর্মর জীবনের কথা, যেখানে সে কিনা অসংখ্য বিদ্রূপ-ঘেঁষা, পিতার বিশালবক্ষপ্রার্থী কিশোর যেন। যে কিশোর জানে, জুঁই-চামেলী-চন্দ্রমল্লিকাই তার প্রকৃত বন্ধু, কেননা তারা প্রিয়তমার মতো নরমাংসভুক নয়! তারা বন্ধুদের দৃষ্টির মতো তলোয়ারের পৃষ্ঠপোষক নয়। তার সঙ্গী কেবল ওই কবিতার খাতা, প্রকৃতির ভরসা ও পাখিদের মায়াডোর। শেষ অবধি, আমার নিজেকেই মনে হয়, আমিই সেই বিষাদগ্রস্ত বালক, পিংক। যখন সবার কল্যাণে, আমি রক্তাক্ত হই, অথবা এক মানুষরূপী পুতুলকন্যার ধারালো চাউনি ও ভয়ানক বাক্য দ্বার গুলিবিদ্ধ হই, তখন কানে ভেসে আসে, যেন বাসার সামনের মাঠে দাঁড়িয়ে ওয়াটার্স গাইছেন, সাথে ডেভিড গিলমোর, তাঁর জাদু-গিটার হাতে সঙ্গত করছেন, সেই বুলেটসম গান, ''Hey You '' --
''Hey you, out there in the cold
Getting lonely, getting old
Can you feel me?
Hey you, standing in the aisles
With itchy feet and fading smiles
Can you feel me?
Hey you, dont help them to bury the light
Don't give in without a fight.''
আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে ক্রমে। এ কী কথা! লড়াই, রক্ত, মৃত্যু-- এই তিনটি শব্দ অনবরত মনের ভেতর খেলা করে শুনতে শুনতে। আবার যখন শুনি--
''Hey you, with you ear against the wall
Waiting for someone to call out
Would you touch me?
Hey you, would you help me to carry the stone?
Open your heart, I'm coming home.''
আবারও কান্না পায়, একজনকে বলতে চেয়েছিলাম, ''Open your heart, I'm coming home'', কিন্তু, সে তখন ও এখনও, ক্রমাগত আমাকে রক্তাক্ত করে চলেছে। গানের লিরিকের মতোই বুঝতে পারি, এটা স্রেফ আমার ফ্যান্টাসিই ছিলো। এই জীবনের দেওয়াল টপকানো খুব সহজ কম্মো নয়। আমি পারবো না আর, আমাকে হারিয়ে দিয়েছে কাঠপুতুল। আমার মগজে এখন বিষাদের কীট খেলা করে শুধু।
তাও, এক পর্যায়ে যখন শুনি '' comfortably numb''। তখন আবার খড়কুটো আঁকড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনতে থাকি। কেউ একজন এসে আমার অসুখ সারিয়ে দেয়, হয়তো, তাঁরা পিংক ফ্লয়েডই হবেন। দূর জাহাজের ভেঁপু শুনতে পাই অন্তরের ভেতর। দেখতে পাই, জাহাজের ধোঁয়াপুঞ্জ ক্রমে ক্রমে দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে, সে আসছে, তরঙ্গবাহিত হয়ে, তাঁর ঠোট নড়ছে, কিন্তু আমি তার কথা শুনতে পাচ্ছি না, আমি ক্রমে স্রেফ অবশ হয়ে যাই সানন্দে ----
''When I was a child
I caught a fleeting glimpse
Out of the corner of my eye.
I turned to look but it was gone
I cannot put my finger on it now
The child is grown,
The dream is gone.
I have become comfortably numb.''
(চলবে, Show Must Go On )
======
দিগন্ত চৌধুরী
======
মন্তব্য
কৃতজ্ঞতা জানবেন
প্রতিটা গান... অন্তরে বর্ষায়
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
একদম, যেন ছুরি!
ভাল লেগেছে...
অনেক অনেক
খুব ভালো লাগলো জেনে যে আপনিও ফ্লয়েডের সাথে রিলেট করতে পারেন। আপ্নার ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশভংগী চমৎকার লেগেছে।
আমি ওদের কথা, সুর ও টোটাল এ্যারেন্জমেন্ট এর সাইকেডেলিক এলিমেন্টস-এর ব্যাপারটি বেশি এন্জয় করি।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুব আনন্দ পেলাম আপু।
এখানে আসলে নিজের মতো করে গানগুলোকে দেখার চেষ্টা করেছি, আমার কাছে গানগুলো কীভাবে ধরা দেয় সেইটা লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র। আশা করি আগামী পর্বে ''দি ওয়াল'' নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করতে পারবো।
দা-ওয়াল = দেয়াল।
এ শুধুই কালতাল?
প্রকৃতির আজব খেয়াল
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
চৌধুরী সাহেব, লেখাটার অপেক্ষায় ছিলাম বহুদিন। দারুণ লাগলো পড়তে, মনে হল নিজের কথা পড়ে যাচ্ছি, বিশেষ করে ওয়াল আর মাদার গানটার কথা পড়ার সময়। পিংক ফ্লয়েডের সাথে কবিতাকে মিলিয়ে দেখার বিষয়টা খুব পছন্দ হয়েছে।
ব্যক্তিগত উপলব্ধির জায়গা থেকে পিংক ফ্লয়েড কে দেখার প্রচেষ্টা চলমান থাকবে জেনে আরো ভালো লাগলো।
প্রিয় জন হারানোর বেদনা বহু গুন বাড়িয়ে দেয় Wish You Were Here গান টা।পোস্ট টা ভালো লেগেছে কারণ আমিও এদের একজন অন্ধভক্ত
পিংক ফ্লয়েডের গান একেক সময়ে একেকটা অর্থ বহন করে মনে হয় আমার। একেকবার একেকভাবে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল এক্সপ্লোর করা যায়, মুড, পরিবেশ, পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে। আবার একই গান ভিন্ন ভিন্নভাবে ধরা দেয় হয়তো বিভিন্ন মানুষের কাছে একেকটা অবস্থার প্রেক্ষিতে... যেমন Mother শুনলে আমার ঠিক আমার মায়ের কথা মনে পড়ে না, সামগ্রিকভাবে মাদার আর্থ মানে পৃথিবীকে মনে হয়, যেন একদল নিরাশ্রয় মানুষ পৃথিবীকেই টিকিয়ে রাখতে ক্লান্ত আহাজারি করছে সমরাস্ত্রে সজ্জিত, পরিবেশ নিঙড়ে অর্থ বের করা শিল্প সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে।
আমি সাধারণত গায়ক/আর্টিস্ট/গানের ব্যাকগ্রাউন্ডে ঢুকি না, শুনতে থাকি, আর গান, যে কোন গানই, নিজের মতো করে নিজস্ব একটা অনুভূতি তৈরি করে। তবে PF শুনলে আমার প্রায়ই মনে হয় লেখার নাই কিছু, যা লেখার ছিলো সব লেখা হয়ে গেছে, বলা হয়ে গেছে শক্তভাবে, নতুন করে আমি বা আর কেউ কী বলবে, লিখবে! সুকান্ত আমার ব্যক্তিগত পছন্দের শক্তিশালী বক্তব্যে, আর তারপরেই পিংক ফ্লয়েড। ফ্লয়েডীয় তত্ত্ব বলি আমি, আমরা... হ্যাঁ, প্রতিটা প্রেক্ষিতে ফ্লয়েডীয় তত্ত্বকে কেমন যেন খাপে খাপে বসানো যায় জীবনের সাথে, যে কোন পরিস্থিতিতেই যা বলার, তীব্র ভাবে তা সবার আগেই বলে ফেলেছে গিলমোর আর সখারা।
তোমার লেখাটা ভালো লাগলো পড়তে, আরও আসুক ফ্লয়েডীয় বিশ্লেষণ, সাথে কিছু গানের লিংক এম্বেড করে দিলে নতুন কেউ আগ্রহ পেত হয়তো আরও, বা পুরনোরা আরেকবার শুনতাম কয়েকশত বারের মতো।
btw, তুমি মনে হয় একেক সময়ে একেক নামে মন্তব্য করছো, যেকোন একটা নামে রেজিস্ট্রেশন করে নিও সচলায়তন-এ। মডারেশন আমার জানামতে মন দিয়ে অতিথিদের পোস্ট ট্র্যাক করেন, কাজেই নামটা একই থাকা ভালো।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন