আমরা ঢাকায় আসি ৮৪'র নভেম্বর এ, এসে উঠি রায়ের বাজার এ একটা ভাড়া বাড়িতে. রায়ের বাজার এ তখন অনেক মাটির কুমার বাড়ি, সেই সব মাটির বাড়ির দেয়ালে লেপা থাকত ঘুটে. এইতো সেদিন ও দেখেছি কুমার বাড়ির মাটির হাড়ি, কলস বাইরে রোদে দেয়া. আজকে যারা রায়ের বাজার এ থাকেন তাদের অনেকের কাছেই হয়ত এসব গল্পের মত মনে হতে পারে, আমিও যখন ভাবি তখন মনে হয় সবই হয়ত কোনো বহু বহু কাল আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা. আমরা যেখানে থাকতাম তার কাছেই ছিল টালি অফিস স্চ্কুল নামে একটা প্রাথমিক স্চ্কুল, সেখানে ছিল ছোট একটা তিনের চাল এর স্কুল আর তার চারদিকে হাটার পথ, ভোর বেলায় বাবা আমাকে নিয়ে যেতেন সেখানে হাটতে, স্কুল এর পাশেই ছিল একটা শিউলি ফুল গাছ, বাবার সাথে হাটার সময় আমি সেই ফুল কুড়াতাম মার জন্যে নিয়ে যাব বলে, মাঝে মাঝে পায়ের জুতো খুলে পায়ে ঘাসের আগে লেগে থাকে ভোরের শিশির মাখতাম ..কত দ্রুত সব বদলে গেল, সেই স্কুল এ আর সেই মাঠ নেই, নেই সেই শিউলি গাছ, সেখানে এখন সুরম্য এপার্টমেন্ট এর বন..যখন সেখানে ওই মাঠ ছিল তখন সেখানে প্রতি বছর এ একটা প্রীতি ফুটবল মাচ হত, এখন আর নিশ্চয় ই সেসব হয়না, হবে কি ভাবে? খেলার জন্য তো মাঠ দরকার, সেই মাঠ তো কবেই আমরা ধংস করেছি..
ধানমন্ডি ১৫ বাস স্ট্যান্ড এ বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, তার পাশে কাকলি স্কুল, আমার কিন্ডার গার্টেন ওই স্কুল এই, সেই স্কুল এর পাশেই তখন একটা দোকানে প্রথম দেখলাম কোন আইসক্রিম, স্কুল থেকে ফেরার সময় মার কাছে প্রায়ই বায়না ধরতাম আইসক্রিম কিনে দেবার...মার সেই বাধা বুলি আইসক্রিম খেলে দাতে পোকা হবে, ওদিকে আমিও নাছোর বান্দা , অবশেষে একদিন আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরল , সেই দোকানে গিয়ে মা কিনে দিলেন কোন আইসক্রিম, আমি অবাক চোখে দেখলiম দোকানদার কি একটা যন্ত্রে র নিচে ঠোঙ্গার মত একটা জিনিস ধরে রাখে আর তাতে পেচিয়ে পেচিয়ে পরে আইসক্রিম.
এখন যেখানে রবীন্দ্র সরোবর, তার ঠিক পাশে যে ব্রিজটি দেখেন আপনারা এই তো সেদিন পর্যন্ত সেখানে ছিল একটা পুরনো সেতু, নতুন এই সেতু টি হয় খুব সম্ভবত ৯৮ সালের দিকে. আমরা ছত বেলায় অনেক সময় ই কলাবাগান হয়ে আসার সময় এই সেতু টি পরত, মনে আছে সন্ধা ৭ তার পরই এর চার পাশে থাকত ঝুম অন্ধকার, শুধু মাঝে মাঝে কোনো এক প্রান্তে ২ কি ১ জন পুলিশ দাড়িয়ে থাকত, তার পর ও সেই সময় এও প্রায় ই রাতের বেলায় এই সেতু টি ছিল ছিনতাই করি দের একটা বড় আখড়া , সেতু তা পার হলে হাতের বাম দিকে যদি এখন যান তবে পাবেন রবীন্দ্র সরোবর, আর অনেক চটপটি র দোকান, সব মিলিয়ে একটা উত্সব উত্সব ভাব, তার সাথে যখন মেলাতে যাই প্রায় ২৫ বছর আগের একটি ঘটনা তখন ভাবতে বসি সত্যি ই কি এমন কিছু ঘটেছিল ? তবে শুনুন..আমার এক মামা থাকতেন ভুতের গলিতে, তো রায়ের বাজার থেকে ভুতের গলিতে যেতে হত এই পথ টি দিয়েই (সেই সময় ধানমন্ডি মাঠের উল্টো দিকে মাক ডোনাল্ড নামের একটা চায়নীসে রেস্তোরা ছিল , এখন বোধ হয় এটি আর নেই), তো একদিন মামার বাড়িতে আমরা যাছি সন্ধার পর, রিক্সাওলা ঢাকায় নতুন, তো সে ভুল করে আমাদের সোজা ধানমন্ডি মাঠের দিকের রাস্তায় না নিয়ে তার রিক্সা ঘুরিয়ে দিল দান দিকে , এখন যেদিকে রবীন্দ্র সরোবর সেই দিকে, তো সেই দিকে গিয়ে আমরা দেখি চার দিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার, রাস্তা সুন সান, আমরা ভয় পেলাম, চোর-গুন্ডা ধরবে নাতো আবার? বাবা তারাতারি রিক্সাওলা কে বললেন অন্য রাস্তায় নিয়ে যেতে, এতটাই ফাকা ছিল ওই দিক তা তখন. পুরো ধানমন্ডি তে, এইত সেদিন পর্যন্ত ও তো দেখলাম কত কত একতলা বাড়ি, সামনে বাগান, হটাত করে ৯৫ এর পর থেকে কি যে শুরু হলো, একেক দিন শুধু দেখতাম একেকটা বাড়ির মৃত্যু, মৃত্যু মানে সেখানে নতুন বহুতল বাড়ি আর বাড়ির সামনের বাগান গুলো সব উধাও. আমি এখনো বলতে পারি, কোন বাড়ির জায়গায় কোন বাড়িটা ছিল, কেন মনে থাকবে না? এই রাস্তা গুলোর সামনে দিয়েই তো সৈসবের কত হাজার বার আসা যাওয়া.
৯০'র এরশাদের পতনের সময় টা মনে আছে কারো? আমি তখন পরতাম ঢাকার গভার্নমেন্ট লাবরাতরী স্কুল এ , আমরা সেই সময় টা তে স্কুল এ ঢুকতাম টিচারস ট্রনিং কলেজ এর মাঠের মধ্য দিয়ে, বসন্ত কালে শোনা যেত কোকিলের ডাক এই মাঠে, এখন কি আর ঢাকায় কোকিলের ডাক শোনা যায়? তো যাই হোক, আমরা কিন্তু তখন এই পথ দিয়ে স্কুল এ যেতাম একটা বিশেষ কারণে, আমাদের স্কুল এ যাবার আরেকটা পথ হলো ঢাকা কলেজ আর টিচারস ট্রনিং কলেজ এর মাঝ দিয়ে, তো ৯০ এর আগের সেই সময় তে ঢাকা কলেজ এতই উত্তপ্ত থাকত যে, যখন তখন সুরু হয়ে যেত গোলা গুলি , তাই আমাদের মায়েরা ভয়ে আমাদের টিচারস ট্রনিং এর মাঠ দিয়েই আমাদের নিয়ে যেত. ঢাকা কলেজ এর পাশের রাস্তা টা কিন্তু আসলেই সেই সময় বেশ দাঙ্গা হাঙ্গামা পূর্ণ ছিল, একটা উদাহরণ দেই, এরশাদের সময় পর্যন্ত সরকারী গাড়ির নম্বর প্লেট গুলো ছিল লাল রঙের , তো ছাত্ররা করত কি, এই লাল রঙের নম্বর প্লেটের এর গাড়ি দেখলেই দিত পুড়িয়ে, তো সেরকমই কোনো এক সরকারী আমলা তার গাড়িটি আমাদের স্কুল এর বাইরে রেখে ভেতরে গেছেন ছেলে কে দিতে, মুহুর্তে এর মধে ঢাকা কলেজ এর ছেলেরা এসে সেই গাড়িতে দিল আগুন ধরিয়ে , এরশাদের সময় এই ঢাকা কলেজ ছিল ছাত্র আন্দোলোনের অন্যতম কেন্দ্র,. তো এর পর পরই এরশাদ সিধান্ত নিল সরকারী নম্বর প্লেট আর সব গাড়ির মত কালো করার. এরশাদের সময়কার আরো কত ঘটনা মনে পরে, ..৮৮ সালে হলো দেশ বাপী বন্না, তো তখন টিভি খুল্ললেই এক গান "আমি যেতে চাই বাংলার মানুষের কাছে....." এটা নাকি এরশাদের সরচিত গান, শুনতে শুনতে কান ঝালা পালা হয়ে গেছিল , আর চিত্র ছিল টিভি খুললেই দেখা যেত এরশাদ পায়ে বুট পরে বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরাছে,,আমাদের এই এরশাদ মামা টি ছিল নাকি আবার কবি, তো তখনি ওই সময়েই ৮৭ কি ৮৮ হবে, সারা দেশে বাপক উত্সাহে কবিতা উত্সব পালিত হলো, সেখানে আবার প্রধান বেক্তি হলেন বিসিস্ত কবি জনাব এরশাদ..এরশাদের সময় যত দূর মনে পরে একুসে ফেব্রুয়ারী তে একটা বাধা ধরা গন্ডগোল থাকতই, তাই সাধারণ মানুষ অনেকেই যেত না ভয় এ, অন্তত সকাল বেলাতে, এরশাদের পতনের সময়টা ছিল ডিসেম্বর , শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে ঢাকা মেডিকেল পর্যন্ত তখন বিজয় উত্সব চলছে, বাবা নিয়ে গেলে ন এক সন্ধায় সেখানে, দেখি চারু কলার কিছু ছাত্র এরশাদ আর তার সঙ্গ পাঙ্গ দের নিয়ে কার্টুন একে সেটা দিয়ে একটা পুস্তিকার মত বের করেছে, বাবার কাছে বায়না ধরলাম আমি ও একটা ওই বই কিনব..তো সেই বই এর একটা কার্টুন এর কথা এখনো মনে আছে..কার্টুন টা ছিল এরকম..একটা চিনি কল, সেটা থেকে চিনি বের হছে আর কাজী জাফর সেই চিনি পকেট এ ভরছে, কিছু দিন আগে একটা বল্গ এ পরলাম স্বাধীনতার কিছু আগে এই কাজী জাফর নাকি ছিল ৭ বছরের সাজা প্রাপ্ত কট্টর বাম- পন্থী , ভাবতে অবাক লাগে মানুস কত তারা-তারি ই না বদলে যায়, শোসন মুক্ত শ্রেণী সংগ্রাম এর সৈনিক থেকে এক লাফে চিনি চোর. ......
(পরে আবার লেখা হবে.....আজ না হয় থাক...)
'ভুল-ভেবেছি'
মন্তব্য
ম্যাকডোনাল্ড হোটেলের মালিক ছিলেন মদখোর। উনি সংসদ ভবনের কোনায় আরেকটা হোটেল বানিয়েছেন (এটা এখনও আছে), প্রচুর পয়সা খরচ করে দেশের নামকরা একজন ভাস্কর দিয়ে অভ্যন্তরীণ নকশা করিয়েছিলেন। এই হোটেল উদ্ভোবনের আগেই একদিন সেখানে অতিরিক্ত মদ্যপানে তিনি মারা যান। তার উত্তরসুরীরা ম্যাকডোনাল্ডের জায়গায় এখন বহুতল মার্কেট বানিয়েছে।
'৮৮র বন্যায় মতিঝিলে নৌকা চলেছে। সেসময় একদিন মতিঝিলের মাঝামাঝি থেকে নৌকায় মধুমিতার উল্টোদিকে এক অফিসে গিয়েছিলাম, নীচতলা পানিতে অর্ধেকটা ডুবা ছিলো, অফিসের দারোয়ান নৌকা থেকে আমাকে পাঁজকোলা করে তুলে অফিসের সিড়িতে নামিয়ে দিয়েছিলেন।
একুশের প্রথম প্রহরে গন্ডগোল হতো ছবি টানানো নিয়ে, মিনারে বঙ্গবন্ধু, জিয়া আর তাহেরের ছবি টানানো নিয়েই সাধারণত এর সূত্রপাত।
...........................
Every Picture Tells a Story
বাহ রায়েরবাজার, টালি-অফিস, ৯০ এ ল্য়াবরেটরি, সরোবরের আগের ধানমন্ডি লেক, ম্য়াকডোনাল্ড। বেশ পরিচিত কিছু ছবি মনে ভাসিয়ে দিলেন। আপনি ল্য়াবের কোন সালের এস এস সি?
দুর্দান্তদা গভঃ ল্যাবের নাকি?
---------------------
আমার ফ্লিকার
লেখাটা ভালো লেগেছে। গুগল ট্রান্সলিটারেশনে লিখেছেন বলে মনে হচ্ছে। 'অভ্র' [১] ব্যবহার করে লিখলে আরো সুন্দর হতো। যদি GNU/লিনাক্স বা ম্যাক ব্যবহার কারী হন তাহলে অবশ্য মুশকিল। আমি ম্যাক থেকে কাজ চালানোর জন্য উইকিপিডিয়ার খেলাঘর পাতাটি [২] ব্যবহার করি। ওখানে লিখে কপি পেস্ট করে দিলে হলো।
[১] http://www.omicronlab.com/avro-keyboard.html
[২] http://bn.wikipedia.org/w/index.php?title=উইকিপিডিয়া:খেলাঘর&action=edit
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
পুরোটা পড়া গেলো না, কারণটা রাগিব ভাই এর উপরের মন্তব্যে পরিস্কার।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
বানান ভুল না হয় বাদ দিলেম, কিন্তু
শব্দটা কিন্তু "কুমোর"।
আমি বেশ কয়েকটা ব্লগে ঘুরাঘুরি করি যার মধ্যে সচলায়তন, মুক্তমনা, সামহোয়্যার ইন ব্লগ, নাগরিক ব্লগ এবং আমার ব্লগ অন্যতম। সবগুলো ব্লগের মধ্যে থেকে সচলায়তনের প্রতি আমার একটু বেশী ঝোঁক কাজ করে তার অন্যতম কারণ হলো এই ব্লগের লেখাগুলো খুব মানসম্পন্ন হয়। সচলায়তনের গুন সম্পন্ন লেখা প্রকাশিত হবার ক্রেডিট আমি অনেকাংশেই এই ব্লগের উঁচু মাত্রার মডারেশনকে দেব।
দু:খের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছে যে এই আর্টিকেলের মতো ভুল বানানে ভর্তি, অতি মামুলি একটা লেখা যদি সচলা্য়তনে নিয়মিত ছাপা হয়, তাহলে আমার মনে হয় সচলায়তনের মান খুব শীঘ্রই নীচে নেমে যাবে।
খুব সোজাসুজি একটা কথা বলি, এই ধরণের লেখা সামহোয়্যার ইন ব্লগে মানয়, সচলায়তনে না।
"অতি মামুলি" মনে হলো?
শুধু বানান ভুল বলে? বোঝাই যাচ্ছে এটা ঘটেছে একটা টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে!
সচলায়তনকে "খুব শীঘ্রই নীচে নেমে" যাওয়া থেকে বাঁচাতে সুন্দর সুন্দর লেখা পোস্ট করুন
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
sahoshi,
প্যারা করে লিখলে পড়তে আরাম হয়। নাহলে, এই লেখা পড়ার সময় যেটা হয়েছে, চোখের বেশ কষ্ট হয়েছে লাইনের ট্র্যাক রাখতে গিয়ে। খেই হারিয়ে ফেলতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। আর বানান ভুল নিয়ে তো বাকীরা বললেনই।
একটু যত্ন নিয়ে লিখুন। অনেক আগ্রহী পাঠক বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়বেন আশাকরি আপনার লেখা।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন