অফিসের ব্যক্তিগত লকারগুলো দেখতে ছোট হলে কি হবে, রাক্ষুসে পেট। ল্যাপটপসহ অন্যান্য টোপলা-টুপলি দিব্যি এঁটে যাচ্ছে। অথচ, এই অফিস বিলডিঙ এ অফিস শুরু করার আগে একদিন ঘুরতে এসেছিলাম, দেখলাম নতুন অফিসে ব্যক্তিগত স্থান বলতে শুধুমাত্র এই ছোট্ট লকার তখন কি মন খারাপটাই না হয়েছিল। আগের অফিসে সবার একটা করে কাঠের ক্যাবিনেট তো ছিলই আবার সেই সাথে কারও কারও একটা ইয়া বড় স্টিলের লকারও ছিল। এখন হবে কি উপায়, এত সব রাখব কোথায় এই চিন্তায় অনেকেরই মাথাখারাপ অবস্থা। অথচ সেই ছোট লকার এখন যথেষ্টই মনে হচ্ছে। কি তাজ্জব !!
কি বলতে চাইলাম আর কি বলছি ! যাইহোক , ল্যাপটপ আর কিছু আনুসঙ্গিক পোটলা-পুটলি লকারে ঢুকিয়ে বের হ্লাম অফিস থেকে। ঘড়ি পাঁচটার কাঁটা ছুয়েছে। নিচে নেমে অপেক্ষা করছি মোবাশ্বির এর জন্য। ওর সাথে একটু কাজ আছে। দুজনের কেউই আজ অফিস ড্রপে যাচ্ছি না।
মোবাশ্বির আর আমি একই দিনে একই সময়ে এই অফিসে জয়েন করেছিলাম। যোগদান পূর্ববর্তী মেডিকেল চেকআপ করার সময় ওর সাথে পরিচয়। চমৎকার ছেলে। সেদিন প্রথম পরিচয় হলেও বন্ধুত্বটা ঝটপট হয়ে গেল। শুরুটা একই ডিপার্টমেন্টে
হলেও এখন দুই জনের আলাদা দুই ডিপার্টমেন্ট। তাই দেখা হয় কম। একই এলাকায় বাসা হলেও নানা ব্যস্ততায় আড্ডাও জমে ওঠে না।
নিচে দাড়িয়ে আছি। ছুটির সময়। অন্য সবাই বের হচ্ছে। চেনা পরিচিত জনের চোখে চোখ পড়লে মুচকি হাসি বিনিময় হচ্ছে। কেউবা জিজ্ঞাস করছে, দাঁড়িয়ে থাকার কারন কি? আমি উত্তর হিসাবে শুধুই মুচকি হাসি দিচ্ছি। অবশেষে মিনিট পাঁচেক পর মোবাশ্বির এর আগমন। আমরা কথা বলতে বলতে পা চালাচ্ছি। খুব সাবধানেই পা চালাচ্ছি, একটু অসতর্ক হলে ঠিকানা হতে পারে ম্যনহোল।
বসুন্ধরা থেকে উত্তরা রুটে ‘ফাল্গুন’ বাসটাকেই যা একটু ভদ্র-সভ্য মনে হয়। বাকি সব যা-তা। তাই অফিস পিক-ড্রপ না নিলে বা মিস করলে , ফাল্গুন বাসই ভরসা। মোবাশ্বির ফাল্গুনের দুইটা টিকিট কেটেছে। কি আজব ! টিকিট কাটার ২-৩ মিনিট যেতে না যেতেই বাস হাজির। বাসে উঠে তো আর তাজ্জব ! অর্ধেক বাসই খালি। আজকে তো মনে হচ্ছে রাজ-কপাল। আমরা মাঝামাঝি একটি তিনজনের ফাকা সিটে আয়েশ করে হাত-পা ছড়িয়ে দুইজন বসলাম।
বাস দুই মিনিট চলেছে কি চলে নাই, হঠাৎ হার্ড ব্রেক করে জাইগায় থেমে গেল। একটু ধাক্কা খেলাম। ব্যাপারটা একটু বোঝার চেষ্টা করছি। এত আগে থেকে তো জ্যাম লাগার কথা না। জানালা গলিয়ে বাইরের অবস্থাটা একটু বোঝার চেষ্টা করছি। দেখি উল্টা দিক থেকেও কোনও গাড়ি আসে না। বেশ কিছুক্ষন ধৈর্য্য ধরে বসে আছি। এর মধ্যে কতক যাত্রী নামতে শুরু করছে। উল্টা দিক থেকে পায়ে হেটে আসা কিছু মানুষের কাছে জানা গেল, কারা জানি রাস্তায় ব্যরিকেড দিসে।
আজকে খাইছি ধরা, এটা বুঝতে পেরে বাস থেকে নেমে যাচ্ছি। হেল্পার মামা বলল, “টিকিটডা ফালাইয়েন না, গাড়ি ছাড়লি পথ থাইকা আপনাগো উঠায়া লমু”। অতি উত্তম প্রস্তাব। টিকিট টাকে সযত্নে পকেটে রেখে নেমে পড়লুম।
এখন যদি একটা জেটপ্যাক থাকতো ...। জানজট-জ্যাম কে থোড়াই কেয়ার করে উড়ে চলতাম। একবারে সাই সাই করে উড়ে চলা...অনুভুতিটি কেমন হত তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। জেটপ্যাক হইল শরীরের সাথে লাগানো ক্ষুদ্রাকার জেটইঞ্জিন যা মানুষকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে।
কিছুদুর গিয়েই বুঝলাম আসল কাহিনী। কয়েকশত লোক। নারী-পুরুষ-বাচ্চা। হাতে বিরাট ব্যনার যাতে লেখা, ‘পানি চাই’ ‘বিদ্যুৎ চাই’। সবার হাতে বালতি , কলসি। ছোট্ট ছোট্ট পিচ্চিগুলোও দেখছি সমানে চিলাচ্ছে ‘পানি চাই’, ‘পানি চাই’। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, হঠাৎ হৈ-হুল্লোড় লেগে গেল।অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা জোরছে পা বাড়ালাম সাথে হালকা দৌড়ও লাগালাম মনে হয় সামনের দিকে।
মোবাশ্বির বলছিল, আর উপায় নাই। এখন নিকুঞ্জ পর্যন্ত হেটেই যাওয়া লাগবে। ফাঁকা রাস্তা, আরও অনেক লোকের সাথে রেল-ক্রসিং এর দিকে এগোচ্ছি। হঠাৎ উল্টাপাশের একটা বাস দেখলাম উলটাঘোরার চেষ্টা করছে। বাসটা তার সব যাত্রী নামিয়ে দিয়েছে। এখন কোনো মতে উল্টা ঘুরতে পারলেই হয় , তাইলে সোজা উত্তরার দিকে যাবে। আমরাও মনেপ্রাণে চাইছি বাসটা উল্টা ঘুরুক। অবশেষে বাসটা উল্টা ঘুরতে সক্ষম হল আর আমরা সেটাতে হুড়মুড় করে উঠে পড়লাম। ভাগ্যটা আবার সুপ্রসন্নই মনে হল। এত সহজে যাবার ব্যবস্থা হবে ভাবি নাই।
একটু ঝামেলা হলেও ভালভাবেই উত্তরা পৌছেছি। ভাবছি ঐ মানুষগুলোর কথা। আমার ধারনা আমরা আনেক সহনশীল জাতি। অনেক ঝামেলায় পড়েও মুখ ফুটে প্রতিবাদ করি না। কতটা অসহায় হলে আবালবৃদ্ধবনিতা বালতি-কলসি নিয়ে নেমে যায় রাস্তায়! মাস ধরে পানি নাই, গোছল নাই, আলো নাই, গরমে অতিস্ট , পাখা ঘোরে না মাথার উপর। এই আর্তি কি পৌছায় জায়গামত? মনে তো হয় না। টক শো এর টক-মিষ্টি কথাগুলো টকই থেকে যাচ্ছে, মিষ্টি আর হচ্ছে না।
পাদটীকা ঃ এই লেখাটা যখন লিখছি তখন আমার এখানে কারেন্ট নাই। সন্ধ্যা সোয়া ৭ টায় গেছে , এখন বাজে রাত ১০টা। এখনও আসে নাই কারেন্ট। কয় ঘণ্টা হল ? ল্যাপটপের চার্জ একদম তলানিতে, যেকোনো সময় ফুঁস হয়ে যাবে। ভাবছি, আমিও কি রাস্তায় নেমে যাব ?
::::--- স্বপ্নখুঁজি ---::::
মন্তব্য
বিলডিঙ > বিল্ডিং, জাইগায় > জায়গায়, পৌছেছি> পৌঁছেছি, সাই সাই > সাঁই সাঁই, হেটেই> হেঁটেই... এগুলো টাইপো।
জোরছে, হ্লাম, জিজ্ঞাস, ভাবি নাই, পড়লুম-- চলতি কথ্য ভাষার ঈষৎ খিচুড়ি।
আপত্তি জানানো পরের লেখাগুলোর কথা ভেবে, আপনাকে ভড়কে দিতে নয় মোটেই।
সচলে স্বাগতম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ছুয়েছে>ছুঁয়েছে রে বাদ দিসেন কিল্লাই?
লেখাটা পড়েছেন , মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনার গঠনমূলক সমালোচনা পাথেয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ্।
@ তিথীডোর
বানানের দিকে যত্ম দিব ইনশাআল্লাহ্। ঘটনাটা ঘটার সাথে সাথেই এটা লিখেছি তাড়াহুড়ায়, সাথে পাওয়ার ছিল না ৩ ঘণ্টা। ল্যাপটপের ব্যাটারি সিগন্যাল দিচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি পোস্ট করে দিয়েছি। দুঃখিত।
লেখাটা পড়েছেন , মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনার গঠনমূলক সমালোচনা পাথেয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ্।
অনেকদিন পর লিখলেন মনে হয়? নাকি, আমি আপনার লিখা মিস করলাম?
আপনার আগের পোস্ট "স্কুলব্যাগ, তুমি বড্ড ভারি" আমার প্রিয় একটি পোস্ট।
বানানের দিকে যত্ম রেখে লিখা চালিয়ে যান।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
লেখাটা পড়েছেন , মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ।
বানানের দিকে যত্ম দিব ইনশাআল্লাহ্। ঘটনাটা ঘটার সাথে সাথেই এটা লিখেছি তাড়াহুড়ায়, সাথে পাওয়ার ছিল না ৩ ঘণ্টা। ল্যাপটপের ব্যাটারি সিগন্যাল দিচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি পোস্ট করে দিয়েছি। দুঃখিত।
আপনি যে লেখাটার কথা বলেছেন, এর পরেও বেশ কয়েকটা লেখা প্রকাশ হয়েছে। হয়ত মিস করেছেন। আপনার জন্য লিঙ্কগুলো দিলাম।
আকু-পাকু’র কথোপকথনে...
(ওরে ইলিশ, মাঝে মাঝে তোর স্বাদে একটু ডুবতে দিস...)
(স্কুলঃঃঃ মন ছুটে যায়...)
(বাটুল বৃক্ষ ঁ)
লেখালেখি চলুক
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
লেখাটা পড়েছেন , মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ।
উৎসাহ পেলাম।
কি দুঃসহ হয়ে উঠছে জীবন!!
লেখাটা ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এগুলো প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। এর মধ্যেই বসবাস।
লেখাটা পড়েছেন , মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনার লেখা পড়েই মনে হলো আবারো ঘটনাটা।
কড়াইল বস্তি ভেঙ্গে গেছে। আসতে যেতে চোখের সামনে এড়াতে পারিনা মনের টান। কদিন এদিক ওদিক হাঁটাহাটি করলাম। টুক টাক করে জিজ্ঞেস করা ওরা কই গিয়ে উঠেছে ইত্যাকার। একদিন এক লোক এসে বললো এইসব নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটির প্রয়োজন নেই। যেমন যাওয়া আসা করেন তাই চালান বাকি কিছুতে নাক গলানো হলে ভদ্র চেহারা আর থাকবে না। আমি বেকুব বনে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কার ভদ্র চেহারা? সে বিশ্রি হেসে বললো আপনাগো তো একটাই ধান্দা যা কিনতে আইসেন। আমি আকাশ থেকে পড়ার মতো কথা শুনেও হজম করে গেলাম। দ্বিতীয় কথা বাড়াবার মতো কোন চিন্তা খুজে পেলাম না।
মুখে একটা টক স্বাদ মনে হয় গ্যাস্ট্রিকের জন্য।
হুমমম। বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া ছাড়া ইদানিং আর কোন তাগিদ টের পাইনা।
আন্দোলনের কথা??
কবে আসবে সেই জোয়ার!!!!!!!!!!!!
মিছিলে নামবো বলেই রাস্তার পাসে দাঁড়িয়ে আছি____
মিছিলে নামবো বলেই রাস্তার পাসে দাঁড়িয়ে আছি__
শাবাশ ।।।
লেখাটা পড়েছেন , মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
আপনার আগের সব লেখাই পড়েছি। ভালো লেগেছে।
লেখা চালিয়ে যান।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
লেখাগুলো ভালো লেগেছে জেনে যারপরনাই খুশি হয়েছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
গ্রামীণফোনে কাজ করেন?
হোক যেখানেই, কাজ করে খাই
সচলায়তন টা বেশ ভালা পাই,
পড়তে পড়তে আবাক হয়ে যাই
জ্ঞানের দেখি কোনও সীমা নাই।
লেখা ভাল লাগল।
ঝরঝরে ভাষায় সুন্দর লেখা। শেষটাও ভাল।
বানানের কথা তো অনেকেই বলেছেন, আমি আর আলাদা করে কিছু বলছিনা।
ল্যাপটপের চার্জ তলানিতে থাকলে, এমনটা হতেই পারে।
চালিয়ে যান ।
লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে ভাল লাগলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
বাংলাদেশে যখন জন্মেছি, তখন এই ব্যাপারগুলো মেনে না নিয়ে উপায় নাই।
তা যা বলেছেন !!
ভালো লেগেছে। কিছু বানান-বিভ্রাট ঘটেছে বটে। সেটা এই বুড়োরও হয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
টেকনিক্যাল ডিভিশনে নাকি কমার্শিয়াল? লেখা ভালো লেগেছে।
লেখা ভালো লেগেছে , এজন্য অনেক ধন্যবাদ।
টেক।
নতুন মন্তব্য করুন