(এক)
-“হ্যালো এটা সল্টলেক থানা? আমি সিটি সেন্টার থেকে বলছি, এখানে একটা খুন হয়েছে। শিগগিরি আসুন।”
-“খুন হয়েছে কি করে জানলেন? আপনি দেখেছেন জখম না খুন? খুন কি মশাই অতই সোজা?”
-“জখম না খুন, সোজা না শক্ত আপনারাই বিচার করুন না এসে। চোখের সামনে দেখলাম গুলি চলল, ভদ্রলোকের বুকে লাগল, লোকটা পড়ে স্থির হয়ে গেল, খুনি দৌড়ে পালাল, তাই থানায় ফোন করলাম। আসতে হয় আসুন, না হয় অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করি, হাসপাতাল থেকে যা হয় করবে।”
-“আরে আচ্ছা লোক তো আপনি, যাব কোথায় সেটা তো বলবেন, খুনটা হয়েছে কোথায়?”
-“সল্টলেক সিটি সেন্টারে, ব্লক আই। দোতলায় এস্কালেটারের সামনে।”
-“গাঁজা টেনেছেন নাকি মশাই? শুক্কুরবারের সন্ধ্যে, ভীড় থিকথিকে সিটি সেন্টারে খুন? খুনির কি ফাঁসিতে না চড়লে ঘুম হচ্ছে না?”
-“দেখুন দাদা বাজে বকবার সময় আমার নেই, সিটি সেন্টারে দুশো লোকের সামনেই খুনটা হয়েছে। এখোনো এখানে শ-খানেক লোক গুলতানি করছে। আরে ছেলেটা তো আর খুন করবে বলে সিটি সেন্টারে আসেনি। একটা মেয়ে কে বিরক্ত করছিল, এই ভদ্রলোক প্রতিবাদ করলেন, তারপর কথা কাটাকাটি হল, ছেলেটা রাগের মাথায় গুলি চালিয়ে বসল।”
-“ওফ্ আবার এর মধ্যে মেয়েছেলেও রয়েছে। ঠিক আছে পুলিস একঘন্টার মধ্যে পৌছচ্ছে। দেখবেন এর মধ্যে যেন কেউ ডেডবডিতে হাত না দেয়। আপনার নাম ঠিকানাটা বলুন।”
-“তিনটে ব্লক আসতে আপনাদের একঘন্টা লাগবে আর ভাবছেন এই একশ পাব্লিক আমি একা ঠেকিয়ে রাখব? একঘন্টায় মশাই গোটা লাশটাই গায়েব হয়ে যেতে পারে। আর আমার নাম ঠিকানায় হবে কি শুনি? আমি লাশও নই, খুনিও নই। যাই হোক লিখে রাখুন আমি অনন্ত নস্কর, লিটল্ কিডস দোকানের কর্মচারী, নটার মধ্যে এলে দোকানেই পাবেন, না হলে বেরিয়ে যাব, লোকাল ধরতে হবে। বাড়ি সেই শ্যামনগর। রাখলাম মশাই কাস্টমার ওয়েট করছে।”
(দুই)
রাত আটটা নাগাদ অকুস্থলে পৌঁছে ইনস্পেক্টর বিশ্বাস বললেন “স্যান্যাল তুমি বডিটা দেখো, আমি নস্কর লোকটাকে ধরি। আশেপাশে দেখো মার্ডার ওয়েপ্নটা পাও কিনা।”
-“চারদিকে অনেক লোক জমেছে স্যার, কেউ কিছু দেখেছে কিনা ইন্টারভিউ করব?”
-করতে পারো, দেখেছে তো বটেই; গুলি চলার সময় তো আর কেউ চোখ বুজে ছিল না, তবে কেউ মুখ খুলবে বলে মনে হয় না।”
অনন্ত নস্করকে লিটল্ কিড দোকানের কাউন্টারে পাওয়া গেল। মাঝবয়েসী পোড়খাওয়া ভদ্রলোক। সহজে উত্তেজিত হননা। বললেন “আরে মশাই খুনোখুনি হবে কেউ তো বোঝেনি, ওই ইভটিজিং এর কেস। একটা মেয়ে আর ছেলে জোড়ে বসেছিল ওই বেঞ্চিটায় একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে আর কি। এদিকে এরা তিন চারটে ছেলে হল্লাগুল্লা করছিল। প্রথমে যা হয়, মেয়েটাকে দু চারটে নোংরা কথা বলে থাকবে ছেলে গুলো। অত মশাই কানও করিনি, রোজকার ব্যাপার এসব। তারপর ছেলে গুলো মেয়েটাকে টানাটানি করেছিল। তখন এই ভদ্রলোক এসে রুখে দাঁড়ান। প্রথমে কথা কাটাকাটি, তারপর দলের পান্ডাকে এক ঘুষি মারলেন। ছেলেটি ছিটকে পড়ল তারপর উঠে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে রিভল্বার বের করে গুলি চালিয়ে দিল। ভদ্রলোক ছিটকে পড়লেন। ছেলেগুলো দৌড়ে ঐ এসকালেটর দিয়ে নেমে পালাল। প্রেমিক প্রেমিকা ওই এইচ ব্লকের দিকে দৌড়ল। আমি দোকান থেকে বেড়িয়ে ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে দেখি নিশ্বাস পড়ছে না, পালসও পেলাম না, ফিরে এসে আপনাদের ফোন করলাম।”
ইনস্পেক্টর বিশ্বাস নোট লেখা থামিয়ে বললেন “ছেলেগুলোকে আগে দেখেছেন? বা দেখলে চিনতে পারবেন?”
-“চিনতে মশাই আপনিও পারবেন। গুলিটা যে চালালো সে হল মন্ত্রীর ছেলে, সুশান্, লম্বা চু্ল, ডাইনোসর ব্যান্ডে গান গায়। সাথে ছিল এক ঝাঁকড়াচুলো স্যান্ডি ওই ব্যান্ডেই গীটার বাজায়। আর একজন প্রোমোটার কেজরিওয়ালের ছেলে নবীন কেজরিওয়াল।”
-“আপনি সিওর গুলিটা সুশান্ত চালিয়েছে? আপনি সবাইকে চিনলেন কি করে?”
-“আরে মশাই মন্ত্রীমশাই আর কেজরিওয়ালের দৌলতে মাসের মধ্যে দশ বারো দিন ডায়নোসর ব্যান্ড ওই ফোয়ারাটার সামনে প্রোগ্রাম করে। সবার নামধাম, ঠিকুজি, কুষ্ঠি মুখস্থ হয়ে গেছে।”
(তিন)
থানায় ঢুকেই ইনস্পেক্টর বিশ্বাস বললেন “স্যান্যাল তিনটে ওয়ারেন্ট বের করো, সুশান্ মজুমদার, স্যান্ডি দাস আর নবীন কেজরিওয়াল। কেজরিওয়ালের বাড়ি তুমি যাও সল্টলেকেই, মুখার্জীকে বল স্যান্ডিকে তুলতে, আমি সুশানকে তুলছি।“
-“আপনি কি স্যার মন্ত্রী জয়ন্ত মজুমদারের ছেলে সুশানের কথা বলছেন স্যার? সেরকম কোনো এভিডেন্স না পেয়ে ওই লেভেলের লোকজন কে অ্যা্রেস্ট করাটা চাপ হয়ে যাবে না স্যার?”
-“আরে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী আছে, আরো কি এভিডেন্স লাগবে? শোনো দরকার পড়লে মন্ত্রীমশাইকেও তুলতে পারি, সুন্দরবনের ট্রান্সফারের ভয় এই শর্মা পায় না। এখনি তুললে মার্ডার ওয়েপনটারও খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। লোহা গরম থাকতেই কাজ সারতে হবে।”
সেইদিন রাতেই ইনস্পেক্টর বিশ্বাস তিন বন্ধুর জবানবন্দী রেকর্ড করে ফেললেন। স্যান্ডি খুব একটা ভাঙ্গল না। খালি বলল কিছু দেখেনি, কানে আইপড ছিল ইত্যাদি। ইনস্পেক্টর বিশ্বাসের ইচ্ছা ছিল টেনে দুটো থাপ্পর কষিয়ে পথে আনার। কিন্তু স্যান্যাল হতে দিল না। তবে স্যন্যাল ছেলেটা কাজের। নরমে গরমে মিলিয়ে সুশানের থেকে পুরো ঘটনাটা বের করে আনল। সুশান স্বীকার করল গুলিটা ওই চালিয়েছিল রাগের মাথায়। তবে লোকটা কে মেরে ফেলার ইচ্ছা ওর ছিল না, জাস্ট ভয় দেখাতে চেয়েছিল।
ভোররাতে বাড়ি ফিরে ঘণ্টা দুয়েক গড়িয়ে ইনস্পেক্টর বিশ্বাস দশটা নাগাদ অফিসে ঢুকতেই স্যান্যাল বলল “সিটি সেন্টারের কেসটার মেয়েটাকে ট্রেস করেছি, কাঁকুড়গাছিতে বাড়ি, চলুন স্যার।“ বছর বাইশের মেয়েটির নাম সুজাতা, ব্যাবহার খুব ভালো, ওঁদের চা কফি অফার করল। ওর বর্ননা অনন্ত নস্করের মত নিখুত না হলেও মোটামুটি তার সাথে মিলে গেল। তবে বলল ও সুশান বা তার বন্ধুদের আগে কখোনো দেখেনি, ডাইনোসর ব্যান্ডের নামও শোনেনি। তবে যে গুলি চালিয়েছিল তাকে দেখলে চিনতে পারবে। ওর বয়ফ্রেন্ড নাকি কালকেই কলকাতার বাইরে চলে গেছে কোথায় গেছে কবে ফিরছে কিছু বলতে পারল না। স্যন্যালের মতে ছেলেটা ঝামেলায় জড়াবে না বলে স্রেফ গা ঢাকা দিয়েছে। সুজাতা অবশ্য বলল আইডেন্টিফিকেশন প্যারেডে আসবে।
ইনস্পেক্টর বিশ্বাস স্যান্যালকে বাড়িতে ড্রপ করে থানায় ফিরলেন। মুখার্জী থানার চার্জ়ে ছিল। ওর কাছে শুনলেন পোষ্ট-মর্টেম রিপোর্ট এসে গেছে। হার্টে গুলি লেগে তৎক্ষনাৎ মৃত্যু। বুলেটটা বডিতে পাওয়া গেছে। মুখার্জ়ী বলল “ভদ্রলোকের পরিচয় পাওয়া যায়নি স্যার। পকেটে সেরকম কিছুই ছিল না।”
-“ক্রেডিট কার্ড ফার্ড নেই?”
-না স্যার। মানি ব্যাগে ছিল তিনশো চল্লিশ টাকা ক্যাশ, একটা মা কালির ছবি, গোটা দুই চাবি আর আইনক্সের টিকিটের হাফ গতকালের চারটের শো এর। আইনক্সের সিকিউরিটি কে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিছু বলতে পারল না।”
-“আশেপাশের থানায় খোঁজ করেছিলে কেউ মিসিং পার্সনের ডায়েরি করেছে কিনা?”
-“করেছিলাম স্যার কিন্তু এই ভদ্রলোকের সাথে কোনোটাই মিলল না।“ কয়েকটা ডেইলি পেপারে বিজ্ঞাপণ দেবার ব্যাবস্থা করছি স্যার।”
-“ওই পাঁচের পাতার দুকলম বিজ্ঞাপণে কিছুই কাজ দেবে না, তবে দেখো মন্ত্রীর ছেলের ব্যাপার, কেসটা ভালোই কভারেজ় পাবে। ওখানে যদি লাশের একটা ছবি যায় তো কাজ দেবে।”
(চার)
রবিবার সকাল ছটায় জয়ন্ত মজুমদারের ঘুম ভাঙ্গাল ব্রিজমোহন কেজরিওয়ালের ফোন। লোকটা সরাসরি পার্সোনাল নাম্বারে কল করেছে। জয়ন্ত মজুমদার কাল অনেক রাতে দিল্লী থেকে ফিরেছেন বাড়ি থেকে জরুরী তলব পেয়ে। তারপর কমিশনারের সাথে টেলিফোনে আধঘন্টা-টাক মিটিং হল। কমিশনার লোকটা এমনিতে হেল্পফুল কিন্তু খুব ভীতু, আইনের বাইরে একপাও এগোবে না। কিছুতেই উইদাউট কোর্ট অর্ডার জামিনের ব্যাবস্থা করতে পারল না। সোমবারের আগে সুশানের ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয় জেনেই ঘুমতে গিয়েছিলেন। ঠিক করেছিলেন সকালে উঠে উকিল আদালত যা করার করবেন। কিন্তু এই কেজরিওয়ালের আর তর সইল না। ফোন তুলতেই কেজরিওয়ালের কাঁদুনি শুরু হল “আরে মজুমদার সাহাব কুছ তো কিজিয়ে। আপনার ভরসায় তো ইখানে ব্যাওসা করে খাচ্ছি, এই সব খুনখারাপি তে ফাঁসলে হামার ব্যাওসা লাটে উঠবে।”
-“থামুন তো, ছেলে গুলোকে গানের ব্যান্ড চালাবার আর মদ খাবার দেদার পয়সা দেবার সময় মনে ছিল না?”
-“সে তো সাহাব আপনার ছেলে কে ব্রেক দেবার জন্যই হামি ইতনা রুপেয়া খরচ করলাম। নবীন কো হাম কান পাকড়কে কারবারমে ঘুঁসা দেতা। ঔর সুশান কে পাস আপনে পিস্তল দেকে রাকখা ইয়ে বাত হামে মালুম নেহি থা।”
-“চারিদিকে যা টেররিজম চলছে, আমরা হলাম মাওদের হিটলিস্টে, পিস্তল আজকাল সঙ্গে রাখতেই হয়। ছেলেমানুষ ভুল জায়গায় ইউস করে ফেলেছে। ও নিয়ে ভেবে লাভ নেই। এখন দেখুন ল-ইয়ার বেস্ট কাকে পাওয়া যায়। মিডিয়া হইচই তোলার আগেই ছেলেগুলোকে বার করে আনতে হবে।”
-“চঞ্চল গুপ্তা কে হায়ার করে নিচ্ছি, এখোন কলকাতার বেস্ট ক্রিমিনাল ল-ইয়ার। নাইন্টি-ফাইভ পার্সেন্ট কেসে সাক্সেস্ফুল। রেট খুব হাই লেকিন সে নিয়ে সোচবেন না।”
-“হান্ড্রেড পার্সেন্ট কেসে সাক্সেস্ফুল কেউ নেই?”
-“সে ভী আছে এস কে মুখার্জ়ী সাহাব। লেকিন উনি রিটায়ার্ড হোয়ে গেছেন।”
-“আরে ভালো ফীজ দিলে আজকাল লোকে কোমা থেকে উঠে কাজ করে দিয়ে যায়, ইনি তো স্রেফ রিটায়ার্ড হয়েছেন। একেই ট্রাই করুন।”
-“সে হোবে না। হামি খুদ গিয়েছিলাম, মুলাকাত-হি নেহি কিয়া। সেক্রেটারিনে-হি মুঝে ভাগা দিয়া। উও চঞ্চল গুপ্তাকেই ফাইনাল করুন। পুলিসে আমার সোর্স আছে, খবর আছে দুটো ভাইটাল উইটনেস আছে। প্রব্লেম করতে পারে।”
-“উইটনেসের নাম ঠিকানা কলেক্ট করে পাঠান, আমি দেখে নেব। বাই দ্যা ওয়ে যে লোকটা মারা গেছে তার পরিচয় কিছু জানেন উপরের কোনো মহলে কনেকশন নেই তো?”
-“কুছু না সাহাব, সে আদমি কো তো আভি তক কোই পহ্চানা ভী নেহী। উও ইন্সপেক্টর বিশ্বাসনে-হী পুরা কেস কো খারাব কর দিয়া। ঔর কোই হোতে তো ইত্না হরবড়ি মে আপ কা বেটা কো অ্যা্রেস্ট নেহী করতে।”
-“হ্যাঁ বিশ্বাস লোকটা ত্যাঁদর আছে। দুবার সুন্দরবনে ট্রান্সফার হয়েও শিক্ষা হয়নি। যাক গে কমিশনারের সাথে কথা হয়েছে উনি সব রকম হেল্প করবেন বলেছেন। রাখি এখন আপনি ঘাবড়াবেন না আর মিডিয়ার সামনে মুখ খুলবেন না।”
(পাঁচ)
সকালে দু তিনটে নিউজ পেপার পড়া শেষ না করে ব্যারিস্টার মুখার্জী কোনোদিন সেক্রেটারি কে তলব করেন না, কিন্তু আজ সেই নিয়মের ব্যাতিক্রম হল। ইংলিশ ডেইলির প্রথম পাতায় চোখ বুলিয়ে বাংলা কাগজ দুটোর ভাঁজ না খুলেই সেক্রেটারি রঞ্জিতকে ডেকে বললেন, “এখুনি দুটো কাজ কর। মন্ত্রী জয়ন্ত মজুমদারের নাম্বারটা খুঁজে বের করে ফোন করে জানাও ওর ছেলের খুনের কেসটা নিতে আমি ইন্টারেস্টেড আর আমার অ্যাটর্ণী অফিসকে ব্যাপারটা ইনফর্ম করে বল অফিসিয়াল কাজকর্ম সেরে ফেলতে”।
রঞ্জিত হাঁ হয়ে গেল। আজ প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল ব্যারিস্টার মুখার্জী রিটায়ার্ করেছেন। হাইকোর্টের নাম্বার ওয়ান এই ক্রিমিনাল ল-ইয়ারের কাছে এখনো প্রচুর কেসের অফার আসে। কিন্তু রঞ্জিতকে স্ট্রিক্টলি বলা আছে তাদের গেট থেকেই বিদায় করতে। ব্যারিস্টার মুখার্জীর এখন প্রধান কাজ ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে একটি বই লেখা। রঞ্জিত তাকে সেই বিষয়েই সাহায্য করে। এইধরনের আদেশ ওর তিন বছরের চাকরি জীবনে এই প্রথম। তাই রঞ্জিত হতভম্ব হয়ে বলল “আপনি তো স্যার সবাইকে বলে রেখেছেন রিটায়ার করেছেন। এই কেসটার ব্যাপারে বৃজমোহন কেজরিওয়াল দেখা করতে এসেছিলেন, আমি আপনার নির্দেশ মতো না করে দিয়েছি।”
-“কেজরিওয়ালকে ভাগিয়েছ বেশ করেছ, ডিরেক্ট মন্ত্রীর সাথে কন্টাক্ট কর। কেসটা খুব ইন্টারেস্টিং, প্রায় শ-খানেক লোকচক্ষুর সামনে মার্ডার।”
-“এতো খুব সিম্পল্ কেস স্যার, আপনাকে কত লোকে কত ভাল ভাল অফার দিয়েছিল, এর আগে কিছুতেই রাজী হলেন না; এই কেসটার মধ্যে আপনি কি দেখলেন?”
-“আরে বুঝলে না এই কেসটা জিতলে সেটা হবে আমার কেরিয়ারের মাস্টার পিস। এতোগুলো উইটনেস, মিডিয়ার হইচই, তারপরেও যদি আসামী বেকসুর খালাস হয়ে যায় তবেই না আমি বারের নাম্বার ওয়ান ক্রিমিনাল ল-ইয়ার।”
-“আর যদি সাজা হয় তবে আপনার রেকর্ডে একটা দাগ পড়ে যাবে স্যার।”
-“আরে কিস্যু হবে না। ওকালতি আমি ভালোই করি হে। আর মন্ত্রীমশাই নিজের ক্যারিশ্মা আর মাসল্ম্যান দিয়ে বাকিটা ম্যানেজ করে নেবেন।”
-“কিন্ত স্যার ছেলেটা তো সত্যি একটা নির্দোষ মানুষকে খুন করেছে। সাহসী পরোপকারী ভদ্রলোক। ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করছিলেন। ছেলেটার তো সাজা হওয়াই উচিত। ওকে বাঁচাবেন কেন?”
-“শোনো রঞ্জিত, আমি তোমাদের গল্পের বই-এর ক্যারেক্টার পি কে বাসু নই যে বলব সত্যি অপরাধ করলে কেস নেব না। চোর, ছ্যাঁচোড়, খুনী, গুন্ডাদের নিয়েই আমার কারবার। ক্লায়েন্ট যা বলে ধ্রুব সত্য মেনে নিয়েই আমরা কেস সাজাই এবং জিতি। অত বাছবিচার করলে ওকালতি লাইনে চলেনা। কি, পছন্দ হলনা কথাগুলো? তোমাদের এখন রক্ত গরম, এখন আদর্শ-টাদর্শ মাথায় বাসা বেঁধে আছে। সত্যি বলতে কি আমারও ছিল এককালে। বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। দেশভাগের পরও ভিটেমাটি ছেড়ে নড়েননি এমন জেদ। বাংলাদেশেই রয়ে গেলেন। তার বদলে কি পেলেন? সেভেনটির যুদ্ধের সময় খানসেনারা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করল। আমাকে পাঠিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে লড়বার জন্য। বাড়ি থাকলে হয়ত বাঁচাতে পারতাম। যুদ্ধের পর ফিরে দেখি সমস্ত গ্রাম শ্মশান হয়ে আছে। সেসব তোমরা দেখনি হে। অনেক ঘা খেয়ে তবে আমার মাথা থেকে আদর্শের ভূত নেমেছে। ভিটেমাটি ছেড়ে কলকাতা এসে ওকালতি করে খাচ্ছি পয়সা কামাব আর সুখে থাকব বলে। যাও যাও এখন ফোনগুলো চটপট করে ফেল।”
(ছয়)
আইডেন্টিফিকেশন প্যারেডটা ভালোই উৎরেছিল। সুজাতা এবং অনন্ত নস্কর দুজনেই তিনটি ছেলেকে আইডেন্টিফাই করল। কিন্তু তারপর ইন্সপেক্টর বিশ্বাস দুটো ধাক্কা খেলেন। ছেলে তিনটি জামিনে ছাড়া পেয়ে গেল। আর সুশানের পক্ষে ওকালতনামা দাখিল করলেন স্বয়ং এস কে মুখার্জ়ী। এদিকে এখনও ভিক্টিমের পরিচয় পাওয়া গেল না। ওনার বস একবার হাল্কা করে শুনিয়ে দিলেন একজন অজ্ঞাতপরিচয়ের জন্য এতটা বাড়াবাড়ি করাটা উচিত হচ্ছে না। তাতে অবশ্য ইন্সপেক্টর বিশ্বাস দমে যাননি, বস-ও ওকে বেশী ঘাঁটাননি। পুলিস মহলে জেদী এবং সৎ বলে ওঁর খ্যাতি ও অখ্যাতি দুইই আছে। এই কেসে দুটো প্লাস পয়েন্ট হল দুজন প্রতক্ষ্যদর্শীর সাক্ষ্য এবং বেশ কিছু প্রমাণ। আর একটা হল মিডিয়ার হইচই। চাইলেও মন্ত্রীমশাই বা উপরমহল কেসটা একেবারে চেপে দিতে পারছে না।
স্যান্যাল ঘরে ঢুকে বলল “ব্লাড রিপোর্টটা পেয়েছি স্যার। ভিক্টিমের হাতে লেগে থাকা রক্তের গ্রুপ সুশানের ব্লাড গ্রুপের সাথে মিলে গেছে, দুটোই এ পজিটিভ। আর এই রিপোর্টটা আমাদের ডাক্তার পাঠিয়েছেন, কনফার্ম করেছেন সুশানের নিচের পাটির দুটো দাঁত ভিক্টিমের ঘুঁষিতে ভেঙ্গেছে।”
-“ভিক্টিমের কোনো পরিচয় পেলে?”
-“না স্যার তবে তিন চারটে কাগজে ভিক্টিমের ছবি বেরিয়েছে হোপফুলি সকলের চোখে পড়বে। এদিকে শুনলাম ব্যারিস্টার মুখার্জী কেসটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোর্টে তুলতে চান। এটা বেশ আশ্চর্যের। ওদের তো আরো ডিলে করার কথা।”
-“আরে সামনে ভোট আছে তো। মন্ত্রীমশাই চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আসতে। তুমি আমাদের সাইড থেকে সব রেডি রাখো। পাব্লিক প্রোসিকিউশনের সাথে কন্ট্যাক্ট কর।”
-“আমার কাছে খবর আছে স্যার ওরা সাক্ষীদের ভয় বা টাকার লোভ দেখাচ্ছে। সুজাতার কথাবার্তা ভালো মনে হল না।”
-“হুম্, তুমি একবার অনন্তবাবুকে ফোনে ধর তো।”
স্যান্যাল ফোন করতে অনন্তবাবু বললেন “আপনাদের কাছে যাব ভাবছিলাম। মন্ত্রীমশাই লোক পাঠিয়েছিলেন নরম গরম শুনিয়ে গেলেন।”
সান্যাল বললেন “কি রকম?”
-“প্রথমে নরমটা শুনুন। কেসের সময়টা ব্যাঙ্কক কি মালেসিয়ায় কাটিয়ে আসতে হবে। অবশ্যই কেজরিওয়ালের খরচে। উপরন্তু নগদে একলাখ টাকা। তা আমি বললাম ‘মশাই টাকায় আমি কি করব? তিনকুলে কেউ নেই, নিজে আলসারের রুগি। সেদ্ধভাত আর মুড়ি ছাড়া কিছুই পেটে সহ্য হয় না। টাকা পেয়ে আন্ডা কাবাব সাঁটাব সে উপায় কই?’ তখন কিছু গরম গরম শোনালেন। সাক্ষ্য না বদলালে লাস ফেলে দেবার হুমকি। তাতেও মশাই আমার কিছু এসে যায় না। বউ ছেলেপুলে নেই যে কাঁদবে। আমিও মশাই নিত্যিদিন এই লোকাল ট্রেনের নরকযন্ত্রনার হাত থেকে রেহাই পাব। আর ইন্সপেক্টর বিশ্বাস কে বলে রাখবেন আমার অপঘাতে মৃত্যু হলে যেন মন্ত্রী প্রশান্ত চক্রবর্তী আর প্রোমোটার কেজরিওয়াল দুজনকেই ফাটকে ঢোকায়।”
(সাত)
কোর্টে কেস খুব তাড়াতাড়ি উঠল। পাব্লিক প্রোসিকিউসন অনন্ত নস্করকে জেরা করে বেশ ভাল ভাবেই প্রমাণ করলেন গুলিটা সুশান্ত চালিয়েছিল। তারপর ব্যারিস্টার মুখার্জ়ী ক্রস এক্সামিন শুরু করলেন। নামধাম ইত্যাদির পর মুখার্জ়ী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন --“আচ্ছা নস্করবাবু আপনি কতদিন লিটল কিডসে কাজ করছেন?”
-“তা দুবছর হবে”
-“তার আগে কোথায় কাজ করতেন?”
-“বড়বাজারে সুখনলাল শেঠের গদীতে খাতা লিখতাম।”
-“সে কাজ ছাড়লেন কেন?”
-“এটা পেয়ে গেলাম। এটা বাড়ি থেকে কাছে পড়ে।”
-“আগের কাজে মাইনা কত ছিল?”
-“ওই হাজার পনেরো।”
-“এক্সাক্টলি কত বলুন।“
-“পনেরো হাজার দুশো।”
-“ইনকাম ট্যাক্স দিতেন?”
-“না শেঠজী বারণ করেছিলেন। ওনার খাতায় অন্যরকম লেখা হত।”
-লিটল কিডসে কত মাইনে আপনার?”
-তেরো হাজার পাঁচশো।”
-“এখানে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়?”
-“দেড়শো টাকা মাসে কাটা যায়, ট্যাক্স বাবদ।”
-বেশ তাহলে দাঁড়াচ্ছে আপনি আগের চাকরির থেকে আঠারোশ পঞ্চাশ টাকা কম মাইনেতে এই নতুন কাজে এসেছেন। এর কারণ আপনার পক্ষে আগের চাকরিটা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।”
পাব্লিক প্রোসিকিউশন বললেন “ইওর অনার সাক্ষীর এমপ্লয়মেন্ট হিস্ট্রী এই কেসে পুরোপুরি ইরেলিভ্যান্ট।“
মিস্টার মুখার্জি বললেন “ইওর অনার আমি তিন মিনিটের মধ্যে আদালতকে জানাচ্ছি আমার প্রশ্নোত্তর রেলিভ্যান্ট কিনা”
জজসাহেব জানালেন অবজেকসন ওভাররুলড্।
মিস্টার মুখার্জী অনন্ত নস্করের দিকে ফিরে বললেন “এ কথা কি ঠিক মিস্টার নস্কর, বছর খানেক আগে আপনি প্রচন্ড মাথার যন্ত্রনায় ভুগছিলেন এবং আপনার ডাক্তার বলেছিলেন একটানা বসে খাতা লেখার ফলে আপনার চোখের পেশীতে চাপ পড়ছে তার ফলেই মাথার যন্ত্রনা শুরু হয়েছে।“
-“হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্ত...।”
“অর্থাৎ বছর খানেক আগে থেকে আপনার চোখের প্রব্লেম শুরু হয় এবং সেই কারনেই আপনি আগেকার বেশি মাইনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কম মাইনে স্বীকার করে নতুন চাকরিতে আসেন। হ্যাঁ কি না?”
-“না মানে...”
-“হ্যাঁ কি না?”
-“হ্যা কিন্ত...”
-“অর্থাৎ ইওর অনার সাক্ষী অনন্ত নস্কর বছর খানেক ধরে সিরিয়াস চোখের অসুখে ভুগছেন।“
অনন্তবাবু একটা প্রতিবাদ করতে গিয়ে থেমে গেলেন। মিস্টার মুখার্জি আবার শুরু করলেন। “অনন্তবাবু আপনি আদালতে বলেছেন সুশান্ সেইদিন একটা আদিদাসের ব্ল্যাক টিশার্ট এবং ব্লু জিন্স পরেছিল। আপনার কি মনে আছে সেই দিন স্যান্ডি দাস কি রকম জামা কাপড় পরেছিল?”
-“আজ্ঞে হ্যাঁ। লাল গোল গলা টিশার্ট আর বিস্কিট কালারের বারমুডা। আর নবীন কেজরিওয়াল পরেছিল হলুদ টিশার্ট আর স্কাই ব্লু জিন্স।”
-“বাহ্ আপনার তো দেখছি সকলের ড্রেসের বিবরণ একেবারে মুখস্থ। আচ্ছা সুজাতা পাল কি রঙের শাড়ি পরেছিল?”
-“উনি শাড়ি পরেননি। সালোয়ার কামিজ পরেছিলেন। সবুজ সালোয়ার, সাদা চিকনের কাজ করা কামিজ, সবুজ ওড়না।”
“ভেরি গুড। আচ্ছা আপনি সেদিন কি পোষাক পরেছিলেন?”
“ছাই রং-এর হাফ শার্ট আর কালো প্যান্ট।“
“আর আপনার সহকর্মী বিদিশা বাসু কি পোশাক পরেছিলেন?”
“ইয়ে শাড়ি পরেছিলেন।”
“কি রঙ এর?”
“ঠিক মনে নেই বোধহয় ফিকে নীল।”
“মনে রাখবেন আপনি শপথ নিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, অনুমানে কিছু বলার চেষ্টা করবেন না। বিদিশা বাসুর পোশাক আপনার তার মানে মনে নেই।”
“ইয়ে মানে মহিলা সহকর্মী সেভাবে শাড়ি ব্লাউসের দিকে তাকিয়ে থাকাটা অশালীন।”
“বিদিশা বাসু আর আপনি কতক্ষন একসাথে দোকানে কাজ করেন?”
“তা প্রায় ঘন্টা দশেক।”
“তারমানে দশ ঘণ্টা একসাথে কাটিয়েও বিদিশা বাসুর পোশাক আপনার একেবারেই মনে নেই অথচ আপনি বলতে চান পাঁচ মিনিট দেখেই আমার মক্কেলদের এবং মিস সুজাতার পোশাকের বিবরণ একেবারে আপনার মুখস্থ। বাহ বেশ বেশ। এদিকে আপনি বলছেন খুন হওয়া মাত্র এরা সকলেই ঘটনাস্থল থেকে উধাও হয়ে যান। আর খুনটা যে হবে সেটা আপনি খুনের পুর্ব মুহূর্তেও জানতেন না। তাহলে খুন হবার আগে থেকেই এই চার জনের পোশাকের বিবরন আপনার মুখস্থ করে রাখার কারন কি?”
“না মানে মুখস্থ করব কেন...মানে...”
“এ কথা কি সত্যি নয় যে এই সমস্ত বিবরন আপনাকে পুলিসের পক্ষ থেকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে? যে পোশাক পরা অবস্থায় আমার মক্কেল দের পুলিস গ্রেপ্তার করে সেই পোশাকের বিবরন পুলিশ আপনাকে শিখিয়ে রেখেছে।”
“না না তা নয়...মানে...”
“হ্যাঁ তাই হয়েছে মিস্টার নস্কর। তা না হলে আপনার চোখের যা অবস্থা অতদূর থেকে ওই ভীড়ের মধ্যে আপনি মাত্র চার জনের পোশাক নিখুঁত ভাবে মনে রাখলেন এর আর কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।”
ব্যরিস্টার মুখার্জী জজসাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন “আমার আর কিছু জিজ্ঞাস্য নেই ইওর অনার।“
অনন্ত নস্করের মত মজবুত সাক্ষীকে ব্যারিস্টার মুখার্জী জেরায় যেভাবে নাস্তানাবুদ করলেন তাতে সরকার পক্ষের কেসের ভিত বেশ কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেল। তবু ইন্সপেক্টর বিশ্বাস আশায় ছিলেন সুজাতার সাক্ষ্যের উপর। কারন ইভটিজিং এর কেসে সহানুভুতি সবসময় মেয়েদের দিকে থাকে। কিন্তু সুজাতার সাক্ষ্যে কেস ধসে পড়ার উপক্রম হল। সুজাতা কাউকেই চিন্তে পারল না। এমন কি বলল তিনজন নয় একটি ছেলে তাকে সামান্য ডিস্টার্ব করেছিল। এই তিনজনের কাউকে সে খুনি দূরের কথা ইভটিজার বলেও সনাক্ত করল না। সব থেকে মারাত্মক হল সে জানাল গুলি চলার সময় সে উপস্থিত ছিল না। পাব্লিক প্রোসিকিউটর সাক্ষী কে হোস্টাইল বলতে বাধ্য হলেন।
ব্যারিস্টার মুখার্জী কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতলেন ইন্সপেক্টর বিশ্বাসকে জেরার সময়। ব্যারিস্টার মুখার্জী শুরু করলেন কখন কিভাবে ইন্সপেক্টর বিশ্বাস খুন হবার খবর পেলেন। তারপর প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে আদালতে প্রতিষ্ঠা করলেন ইন্সপেক্টর বিশ্বাস যখন সিটি সেন্টারে পৌঁছন তখন লাসের আশেপাশে বেশ কিছু লোকজন ভীড় করেছিল। ব্যারিস্টার মুখার্জী জিজ্ঞেস করলেন “আপনি এই লোকজনের কতজন কে ইন্টারভিউ করেন এই খুনের তদন্ত করতে গিয়ে?”
-“একজন কেও না। অন স্পট চার পাঁচ জন কে জিজ্ঞেস করি তারা খুব হতে দেখেছে কিনা। সকলেই বলেন তারা খুন হবার পরে এসেছেন।”
-“আর কোনো ভাবে চেষ্টা করেছিলেন কেউ প্রত্যক্ষ্যদর্শী সাক্ষী আছে কি না জানার?”
-“হ্যাঁ। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম।কিন্তু কোন উওর পাইনি।”
-“এটা কি আশ্চর্যের বিষয় নয় শুক্রবার সন্ধ্যেবেলা ভীড় থিকথিকে সিটি সেন্টারে খুন হল আর পুলিস একজনের বেশি প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী পেল না।”
-“হ্যাঁ কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছিলাম তবে...”
-“নিশ্চই নিশ্চই সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দেখুন খুনটা আদৌ ওই সময় সিটি সেন্টারে হয়েছিল না আমার ক্লায়েন্টকে ফাঁসানোর জন্য বডিটা ওখানে ফেলা হয় সেটা আপনি জোর দিয়ে বলতে পারবেন না।”
-“সে কি করে সম্ভব?”
-“সেই সম্ভবনাটা কি আপনি তদন্তের সময় খতিয়ে দেখেছিলেন ইন্সপেক্টর?”
“না মার্ডার ওয়েপন ছিল, প্রতক্ষ্যদর্শীর সাক্ষী ছিল। এরকম আজগুবি সম্ভবনা কেন মাথায় আসবে?”
“চার পাঁচশো লোকের ভিড়ের মধ্যে একজন প্রতক্ষ্যদর্শী যিনি ভালো চোখে দেখেন না এবং শিখিয়ে দেওয়া বুলি মুখস্থ করে এসে আদালতকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। আর মার্ডার ওয়েপেনে কি আপনি আমার ক্লায়েন্টের ফিংগার প্রিন্ট পেয়েছেন?”
“না তা পাওয়া যায়নি।”
“আমার ক্লায়েন্টের বাড়ি থেকে কি আপনি মার্ডার ওয়েপন উদ্ধার করেন?”
“না।”
“কোথা থেকে আপনি এই মার্ডার ওয়েপন উদ্ধার করেন?”
“সিটি সেন্টারের পিছনে একটা কন্সট্রাক্সন ফিল্ড থেকে।”
“তাহলে আপনি কি থেকে এই সিদ্ধান্তে এলেন এই রিভলবারটি মানে মার্ডার ওয়েপনটি আমার ক্লায়েন্টের অধিকারে ছিল?”
“এই রিভলবারের লাইসেন্স সুশান্ মজুমদারের বাবা জয়ন্ত মজুমদারের নামে।”
“কিন্তু জয়ন্তবাবু থানায় ডায়েরি করেন এই রিভলবারটি ওনার আলমারি থেকে চুরি গেছে সে কথা কি আপনি জানতেন?”
“উনি মার্ডার হবার দুদিন পর ডায়েরি করেন।”
“আপনি চুরি যাবার কথা জানতেন কি না? আপনার থানাতেই ডায়েরি করা হয়েছিল।”
“হ্যাঁ জানতাম কিন্তু...”
“অথচ তদন্তের সময় আপনি এই বিষয়টি সম্পুর্ণ উপেক্ষা করেন। কিভাবে রিভলবার চুরি গেল বা কে চুরি করেছিল পুলিস রিপোর্টে তার কোনো উল্লেখ নেই।”
“চুরির গল্পটা সাজানো। রিভলবার তো সুশানের কাছে ছিল।“
“সেটা আপনার ধারণা। পুলিস কোনো প্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি যে সুশান্ মজুমদার ওই রিভলবার কখোনো ব্যবহার করেছে।”
এরপর পাব্লিক প্রোসিকিউশনের পক্ষ থেকে আর কেস দাঁড় করানো সম্ভব হল না। যথেষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় আদালত তিনজনকেই বেকসুর খালাস ঘোষনা করলেন। ইন্সপেক্টর বিশ্বাস বুঝলেন পুলিসে পক্ষ থেকেও কেস ক্লোজ করে দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ইন্সপেক্টর বিশ্বাস কোর্টরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। পার্কিং লটে এসে ইন্সপেক্টর বিশ্বাস হঠাৎ পিছন থেকে শুনতে পেলেন “ওয়েল ডান ইন্সপেক্টর বিশ্বাস।” ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন ব্যারিস্টার মুখার্জী। উনি হাসিমুখে বললেন “যদিও আমরা প্রতিপক্ষ তবুও আপনার সাহস আর নিষ্ঠার তারিফ না করে পারলাম না।”
ইন্সপেক্টর বিশ্বাস বিরক্ত গলায় বললেন “জুতো মেরে গরুদান করে কি লাভ মিস্টার মুখার্জী? আপনিও জানেন আর আমিও জানি আপনার তিন মক্কেল সম্পুর্ণ বিনা প্ররোচনায় একজন নিরীহ মানুষকে খুন করেছে। শুধু মাত্র আপনার জন্য এরা ছাড়া পেয়ে গেল। কি লাভ হল আপনার? কত টাকার লোভে এতদিন পর আপনি আবার কোর্টরুমে ফিরলেন সেটা জানতে খুব কৌতুহল হচ্ছে।”
ব্যারিস্টার মুখার্জ়ী সেকথার জবাব না দিয়ে হো হো করে হাসতে হাসতে বললেন “বাদুর বলে ওরে ও ভাই সজারু, আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু। আজকে হেথায় চামচিকে আর পেঁচারা, আসবে সবাই মরবে ইঁদুর বেচারা।“ বলতে বলতে ইন্সপেক্টর বিশ্বাস কে কোনো রকম বিদায় সম্ভাষণ না করে জয়ন্ত মজুমদারের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। ইন্সপেক্টর বিশ্বাস পুলিসের জীপে উঠতে উঠতে শুনলেন ব্যারিস্টার মুখার্জী সুশানের পিঠ চাপড়ে “তোমাদের খুব স্ট্রেন গেল, যাও তিনজনে নিরিবিলিতে কোথাও সেলিব্রেট কর” বলে একটা শ্যাম্পেনের বোতল ধরিয়ে দিলেন।
(আট)
ইন্সপেক্টর বিশ্বাস থানায় ফিরতেই স্যান্যাল জানাল সিটি সেন্টারের কেসের ভিক্টিমের পরিচয় মিলেছে। ভদ্রলোকের নাম শশাঙ্ক দাস। বেলঘড়িয়ায় থাকেন। শশাঙ্কবাবুর ভাইপো তপন দাস এসে ডেডবডির ফোটো দেখে সনাক্ত করেছেন। তপনবাবু তখন থানাতেই ছিলেন। ইন্সপেক্টর বিশ্বাস জিজ্ঞাসা করলেন “আপনি এতদিন কি করছিলেন? আপনার কাকা খুন হয়েছেন মাসখানেকের উপর হয়ে গেল।”
-“আমি স্যার মীরাটে থাকি। ওখানে এদিককার খবর তেমন পৌঁছয়না। দুতিন দিন আগে কলকাতা এসে কাকার বাসায় গিয়ে দেখি তালা বন্ধ। আশেপাশেও কেউ কিছু বলতে পারল না। তখন লোকাল থানায় খোঁজখবর করতে গেলাম। ওনারা আজ এখানে পাঠালেন এসে দুসংবাদটা পেলাম। খুব খারাপ লাগছে কাকার মুখাগ্নিটাও করতে পারলাম না।”
-“আপনার কাকা একাই থাকতেন? স্ত্রী বা ছেলে মেয়ে ছিল না?”
-“না স্যার।কাকা বিয়ে থাওয়া করেননি। একাই থাকতেন। আমাদের আদি বাড়ি বাংলাদেশে। ওখানেই ছিলেন বহুকাল। আমার বাবা অনেক আগেই মীরাটে সেট্ল করেন কিন্ত কাকা দেশ ভিটে ছেড়ে আসতে চাইতেন না। আমরা অনেকবার বলেছি আমাদের সাথে থাকতে কিন্তু কানে নিতেন না। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ওদেশে যখন আবার মারদাঙ্গা শুরু হল তখন কাকা এদেশে চলে আসতে বাধ্য হলেন। তবে ওয়েস্ট বেঙ্গলেই রয়ে গেলেন আমাদের সাথে থাকতে রাজী হলেন না। বলতেন তবু তো বাঙ্গালিদের মধ্যে আছি। খুব ডাকাবুকো স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। এভাবে মারা যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না । শুনলাম তো খুনিরা ধরা পড়েছে। দেখবেন যেন ভালরকম সাজা পায়।”
-“নাহ্ সে আর হল না তপনবাবু। আমি খুব দুখিত । আপনার কাকার খুনিরা সকলেই বেকসুর খালাস পেয়ে গেল।”
-“সেকি স্যার! এরকম প্রকাশ্যে বাজারের মাঝখানে কাকা খুন হলেন আর খুনিরা ছাড়া পেয়ে গেল!”
-“তাদের একজন মন্ত্রীর ছেলে, আর অন্যদেরও উপরমহলে হাই-কনেকশন। তাও পুলিশের পক্ষ থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্ত ওপক্ষের ব্যারিস্টার কেস দাঁড়তেই দিল না। যাই হোক আপনার কাকার বেলঘড়িয়ার বাড়ির ঠিকানাটা দিন। পুলিশের পক্ষ থেকে একবার সার্চ করে দেখতে হবে নিয়মমত, তারপর আপনার কাকার জিনিসপত্র যা পুলিসের কাছে আছে নিয়ে যেতে পারেন।”
(নয়)
স্যান্যালকে সঙ্গে নিয়ে ইন্সপেক্টর বিশ্বাস সেদিন সন্ধ্যাতেই বেলঘড়িয়া গেলেন। ইন্সপেক্টর বিশ্বাস পরাজয়টা মেনে নিতে পারছিলেন না তাই কেসটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করে সব মন থেকে মুছে ফেলতে চাইছিলেন।
শশাংকবাবু একটা ছোট দোতলা বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। একতলায় একটা প্রেস আছে। বাড়িওয়ালা অন্যত্র থাকেন, তাই কেউই সেভাবে শশাংকবাবুর নিঁখোজ হয়ে যাওয়াটা খেয়াল করেনি। দোতলায় দুটো ঘর। আসবাবপত্র সামান্য। একটা চৌকিতে বিছানা পাতা, একটা টেবিল, গোটা চারেক চেয়ার, একটা আলমারি , পুরোনো দিনের একটা কাঁচের শোকেস, রান্নার বাসনপত্র ইত্যাদি। ইন্সপেক্টর বিশ্বাস আলমারি খুলে কাগজপত্র ঘাঁটছিলেন। পাসপোর্ট, রেশনকার্ড ইত্যাদি থেকে শশাংক দাস কে সহজেই সনাক্ত করা গেল। সান্যাল শোকেসটা দেখছিলেন। বললেন “ভদ্রলোক বোধহয় নাইনটিন সেভেন্টির বাংলাদেশের যুদ্ধে লড়াই করেছেন স্যার। এই দেখুন মেডেল। লেখা আছে ‘মুক্তিযোদ্ধাবাহিনীর বীর সৈনিককে অভিনন্দন’। আর এই ফোটোটা দেখুন স্যার মনে হয় কোনো যুদ্ধজয়ের পর তোলা। সকলেই মিলিটারি ড্রেসে আছে। এই দেখুন নিচে লেখা “ব্যাটল অফ হিলি”। এই যে ডানদিক থেকে থার্ড ছেলেটি মনে হচ্ছে আমাদের ভিক্টিম শশাংক দাসের অল্পবয়সের ছবি।”
ইন্সপেক্টর বিশ্বাস ঝুঁকে পরে ফোটোতে শশাংক দাসকে দেখছিলেন, হঠাৎ পাশের ছেলেটির মুখের উপর চোখ আটকে গেল। অবাক হয়ে দেখছিলেন ছিপছিপে ছেলেটির ছবি। যদিও এখনকার মেদবহুল চেহারার সাথে এই ছিপছিপে ছেলেটির মিল খুঁজে পাওয়া শক্ত, তবু ইন্সপেক্টর বিশ্বাসের বহুদিনের অভিজ্ঞ দৃষ্টি ভুল করতে পারে না। ওই চকচকে বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, ধারালো নাক, এই মুখের গঠন তাঁর পরিচিত।
স্যান্যাল জিজ্ঞেস করে “কি দেখছেন স্যার?”
ইন্সপেক্টর বিশ্বাসের আঙ্গুল ছিপছিপে ছেলেটির ছবির উপর। সান্যাল ছবিটা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করেন। তারপর তার চোখও গোল গোল হয়ে ওঠে। অস্ফুটে বললেন “ব্যারিস্টার মুখার্জ়ী! কিন্তু তা কি করে সম্ভব? ব্যারিস্টার মুখার্জীর কি কোনো কারনে শশাংক দাসের উপর রাগ ছিল? নাকি উনি জানতে পারেননি যার খুনিদের উনি ছাড়িয়ে আনলেন তিনি ওঁর সহযোদ্ধা?”
ইন্সপেক্টর বিশ্বাস খুব ধীরে ধীরে বললেন “না উনি জানতেন, খবরের কাগজের ছবি দেখে চিনতে পেরেছিলেন ব্যাটল অফ হিলির সহযোদ্ধাকে। সেই জন্যই পাঁচ বছর পর আবার কোর্টরুমে ফিরলেন।”
স্যান্যাল বিস্মিত হয়ে বললেন “কেন?” ইন্সপেক্টর বিশ্বাস জবাব দিলেন না। তাঁর মাথায় ঘুরছিল আজকে কোর্টের পার্কিংলটে শোনা একটা নন্সেন্স ছড়া। “আজকে হেথায় চামচিকে আর পেঁচারা, আসবে সবাই মরবে ইঁদুর বেচারা।” পাকা ব্যারিস্টার ইঁদুর মারার কল পেতেছিলেন সমস্ত আঁটঘাট বেঁধে। মনে হচ্ছে কলে ইঁদুর ধরা পরেছে। ইন্সপেক্টর বিশ্বাস একবার শিউরে উঠলেন তারপর সামলে নিয়ে স্যন্যালকে বললেন “চল। পুলিসের দিক থেকে আর কিছু করার নেই।”
(দশ)
পরদিন সকালে খবরের কাগজের প্রথম পাতার খবর হল “বিষাক্ত মদে মৃত্যু”। সুশান্ মজুমদার, নবীন কেজরিওয়াল এবং স্যান্ডি দাস এই তিনজনকে রাজারহাটের একটি রিসর্টে কাল রাত্রে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পুলিস সন্দেহ করছে বিষাক্ত মদে এদের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিস ছমাস ধরে এই কেসের তদন্ত চালিয়েছিল কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মন্ত্রী জয়ন্ত মজুমদারের প্রচুর চোখ রাঙ্গানি এবং কমিশনার সাহেবের বারংবার তাগাদা সত্ত্বেও ইন্সপেক্টর বিশ্বাস এই কেসে সেরকম কোনো প্রগ্রেস করতে পারেননি। শাস্তিস্বরূপ ইন্সপেক্টর বিশ্বাস সুন্দরবনে ট্রান্সফার হয়ে গেছেন, কিন্তু তাঁর কোন আক্ষেপ নেই। ইন্সপেক্টর বিশ্বাস জানেন তিনি শেষ দুটো কেসে হেরে যাননি।
- ঈপ্সিত ব্যানার্জী
২৮-এপ্রিল-২০১২
মন্তব্য
জয়ন্ত মজুমদার এক জায়গায় প্রশান্ত চক্রবর্তী হয়ে গেছে।
অসাধারন, একটানে পড়লাম,
আমিও। অফিসে লুকিয়ে পড়লাম। খুবই সুন্দর। অসাধারণ।
চমৎকার! চমৎকার!
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
:)-দারুন ঝরঝরে লেখা!
অসাধারন
চমৎকার লেখা।
ভাল লাগলো। এরকম লেখা আরও লিখুন, অপেক্ষায় রইলাম।
অসাধারণ
স্রেফ অসাধারণ
আগে আপনার লেখা পড়িনি, সচলে স্বাগতম
নিয়মিত লিখবেন আশাকরি
একটা ছোট্ট ব্যাপার, "ভদ্রলোক বোধহয় নাইনটিন সেভেন্টির বাংলাদেশের যুদ্ধে লড়াই করেছেন স্যার।" আগেও একবার উল্লেখ আছে মুক্তিযুদ্ধের কথা। যুদ্ধটা ১৯৭১ সালে হয়েছিলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অসাধারণ
সাংঘাতিক ! সত্যিই সাংঘাতিক আপনার গল্পের জাল বুনট আর সেগুলোর কো-রিলেট করার ক্ষমতা ।
আরো লিখার প্রত্যাশায় রইলাম।
নজরুল ভাইয়ের উপরের কমেন্টও দেখবেন আশা করি। সালটা ১৯৭১। 'সেভেনটিজের দিকে' বললেও খুব চোখে লাগে।
আপনার লেখাটা অনেক চমৎকার হেয়েছে। গল্পের শুরুর একটু পর থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত হিন্দি মুভি নো ওয়ান কিল্ড জ়েসিকা গপ্লের একটু ছাপ আছে মনে হচ্ছে। কিন্তু মাঝামাঝির পর থেকে শেষ পর্যন্ত টুইস্টটা অনেক ভাল ছিলো। নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
অ--সাধারণ! কতদিন পর এমন একটা লেখা পড়লাম! অভিনন্দন আপনাকে। সচলে নিয়মিত লেখা চাই আপনার।
মুগ্ধতা
মুক্তিযুদ্ধের সময়টা সংশোধন করে দেওয়ার জন্য নজরুলভাই এবং সাত্যকিভাইকে ধন্যবাদ।
হিমুভাইকে ধন্যবাদ নামের কন্টিনুইটি ব্রেকের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য।
ইমা আপনার ধারনা সঠিক। গল্পটি "নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা" সিনেমা, ফেড্রিক ফরসাইথের ছোটগল্প ভেটেরান, জন গ্রীশামের বিভিন্ন লিগাল থ্রিলার এবং নারায়ন সান্যালের কাঁটা সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত।
গল্পের শুরুতেই একটা খুনের আইডিয়াটা ড্যান ব্রাউনের থেকে শেখা।
হাহা তবে সবমিলিয়ে অনেক ভাল হয়েছে।
বুঝলাম না, মুখার্জী সাহেবের কেসটা নিয়ে সহযোদ্ধার খুনীদের ছাড়িয়ে আনার পিছনের কারনটা কি????
একটু পরিস্কার করবেন????
ইঁদুর, চামচিকা এসব বুঝতেছিনা।
revenge বা avenge। আবার আপিল, তারপর আবার শুনানি, মাঝে কোন এক ফাঁকে বেরিয়ে যাবে। তাই তো হয়। এর চেয়ে বের করে নিয়ে নিজের হাতে শোধ নেওয়া (revenge), অথবা নিজের হাতে শাস্তি নিশ্চিত করা (avenge)।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
অসাধারণ !
ভাল লাগলো বেশ, আরো লিখুন
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
দারুণ গল্প। নারায়ন সান্যালের বাসুর কথা তো গল্পেই লিখেছেন, আমার কাছে আগাথা ক্রিস্টির উইটনেস ফর প্রসিকিউশন আর শরদিন্দুর অচিন পাখি'র মতোও একটু লাগলো পরিণতিতে
সুন্দর। আরো লিখবেন এরকম।
বাহ! কী একটা গল্প পড়লাম!! অসাধারণ...
দু হাত খুলে লিখুন...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভালো লাগল।
বর্ণনাভঙ্গি অত্যন্ত চমৎকার, এক নিঃশ্বাসে পড়ার মত।ভাল লেগেছে।
চমৎকার। একটানে পড়ে ফেলালাম। আরোও বেশী বেশী করে লিখুন।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
চমৎকার লিখেছেন, আপনার আরো লেখা পড়তে চাই, আশা করি নিয়মিত পাবো..........
এই বিষয়টা আমাকে খুব আহত করে যে উকিলরা চাক্ষুষদোষীকেও পূর্ণমুক্ত করে দেয়!!!
_____________________
Give Her Freedom!
অনেক বছর রহস্য গল্প পড়িনি। রহস্য গল্পের রসটাও ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়। এই গল্পটা টানটান উত্তেজনার মধ্যেও মনে করিয়ে দিল মাথা খেলানোর জন্য রহস্য গল্পের কোন বিকল্প নেই। গল্পটি হয়েছে!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ফেসবুকে লিঙ্ক পেয়ে এলাম। দারুণ
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
অসাধারণ। অনেক দিন পর এরকম ভালো গল্প পড়িনি।
অনেকদিন ক্রাইম থ্রিলার পড়া হয়ে ওঠে না।
গল্পটা ভালো লেগেছে।
ব্লগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ লেখা পড়াটা একটু অসুবিধাজনক।
যদিও লেখা ভালো হওয়াটাই মূখ্য।
আরো লেখা চাই।
লিখতে থাকুন
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নির্বাক! অসাধারণ লিখেছেন!
ব্লগে বড় লেখা পড়তে তেমন আগ্রহ পাইনা।
আপনার লেখা সেটা বুঝে ওঠারই সুযোগ দিলো না।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দারুণ লিখেছেন ! চালিয়ে যান
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
facebook
খুবই ভাল লাগল।
অসাধারণ।
সচলায়তনে স্বাগতম। তবে এটি আপনার প্রথম লেখা নয় সম্ভবত। আগেও আপনার লেখা পড়েছি বলে মনে হচ্ছে। মন্তব্য করেছি কিনা মনে পড়ছে না।
মনখুলে লিখতে থাকুন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অনেকদিন পরে একটা দারুণ রহস্য গল্প পড়লাম! এই ধরণের গল্প সচলায়তনে পাইই না বলতে গেলে। আপনি নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
প্রসঙ্গত, গল্পের বর্ণনা একটু দায়সারা বলে মনে হলো। চরিত্রচিত্রণের ব্যাপারটা পুরো পাঠকের উপরে তুলে না দিয়ে লেখকেরও একটু দায়িত্ব নেয়া উচিত। শেষের চমকটাও খুব জমেনি।
ছেলেগুলোর বয়স আসলে কতো? যে মেয়েটিকে ত্যক্ত করছিলো তার বয়স বাইশ, ধরে নিলাম ছেলেগুলোর বয়সও কাছাকাছি। কারণ আঠারো বছরে নিচে হলেই কিন্তু মামলা ইন্ডিয়া জুভিনাইল জাস্টিস এক্ট-এ পড়ে যাবে। আর পুলিশ স্টেশনে কিন্তু সুশান স্বীকারক্তি দিয়েছিলো - ইন্ডিয়ান পীনাল কোড অনুযায়ী মারধোর করে জোর করে স্বীকারোক্তি না নিলে সেটা প্রাধান্য পাবে। কোর্টে মুখার্জির সেটা নিয়েই আগে বিতন্ডা করার কথা ছিলো। আইন দিয়েই যখন শায়েস্তা করা যাচ্ছে তখন মুখার্জি নিজের হাতে আইন তুলে নিলেন কেনো বুঝলাম না। স্যান্ডি আর নবীন তো গুলি চালায়নি, ওদেরকেও মেরে ফেলার মধ্যে কী বাহাদুরি আছে?
গল্পের নামটা অসাধারণ!
ডিটেইলসের দিকে মনোযোগ দেখে বুঝলাম মন্তব্যকারী পাল্টান নি
অমিত ভাই, একটা রানা নামিয়ে দেবেন নাকি আবার ??
নারে ভাই, আর রানা লিখবো না! আগের গল্পটা কাজীদা পড়েছেন এবং ব্যাপারটা খুব পছন্দ করেননি, বিশ্বস্ত সূত্রে এমনই খবর পেয়েছি।
তাহলে রাশেদ নিবিড় নামের কোঞ্চিপার দুর্ধর্ষ স্পাইটিকে নিয়ে একটা সিরিজ নামান। নামে কী বা এসে যায়
লিখতে ইচ্ছে করেনা আজকাল। তোমার গল্পটল্প কই? খেলা বিষয়ক পোস্ট ছাড়া আর কিছু তো দেখি না?
বুনোহাঁস আসার আগেই বলে নেই, ধরণ - ধরন
যদি কিছু মনে না করেন, রানা'র গল্পটার লিঙ্কটা কি শেয়ার করবেন আমার জন্য, পড়ে দেখতাম?
এখানে পাবেন - http://www.sachalayatan.com/aumit/31013
অমিত, আপনি খুব খুঁটিয়ে পড়েন, আপনার মন্তব্যটা দেখে আপনার বিশ্লেষনের প্রশংসা না করে পারলাম না। তবে আপনার শেষ দুটি পয়েন্টের পরিপ্রেক্ষিতে আমার ব্যক্তিগত অভিমত তুলে দিচ্ছি
১। ব্যারিস্টার মুখার্জী নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছেন, কারন তার অভিজ্ঞ চোখ বলছে এই কেসটাকে সহজেই গুঁড়িয়ে দেয়া সম্ভব। ছেলেগুলো ছাড়া পেয়ে যেতই। তিনি তা চান নি।
২। স্যান্ডি আর নবীন গুলি না চালালেও সুশানের অনেক অপকর্মের তারা সঙ্গী এবং উস্কানী/মন্ত্রণাদাতা। সুশান শুধু নিজের গরম মাথার কারণে গুলি করার সাহস পেত না যদি এরা সাথে থাকত। খুনের সহায়তাকারীও খুনি, এটাই ধরে নেয়া হয় না কি?
১) এসব মামলার-মোকদ্দমার ব্যাপার আপেক্ষিক; অনেকাংশেই আইনজীবীদের যুক্তি, প্রমান, সূত্র, ইত্যাদি সাজানো আর উপস্থাপনার উপর নির্ভর করে। মুখার্জি যে রকম দক্ষ, কোনো কেস হারেননি, তিনি চাইলে সরকারপক্ষে লড়েই সুবিচার নিশ্চিত করতে পারতেন।
২) কী অপকর্ম? গল্পে উল্লেখ নেই। বড় কোনো অপরাধ হলে ইন্সপেক্টর বিশ্বাস সে প্রসঙ্গ উঠাতেন নিশ্চয়। আর যদি ইন্ধন দেয়ই, বাচ্চা ক'টা ছেলেকে মেরে ফেলতে হবে নাকি? মানুষের জীবন কি এতোই সস্তা? আইনের চোখে সহায়তাকারীদের খুনি হিসেবে ধরা হয় খুনটা পূর্বপরিকল্পিত হলে। ঝোঁকের মাথায় খুন হয়ে গেলে সেই ব্যাপারটা খাটে না।
এটা জানতাম না। ধন্যবাদ
অমিতের এই পয়েন্টটা আমার মাথাতেও এসেছিল। কিন্তু গল্পের মূল কাঠামো ব্যারিস্টার এস কে মুখার্জ়ীর কর্মকান্ডের ওপর নির্ভর করে বসে আছে। এই জায়গায় হাত দিলে গল্পটা নড়বড়ে হয়ে যায়, তাতে গল্পকারের পরিশ্রম মাঠে মারা যেতে পারে ভেবে বলিনি।
আর একটা ব্যাপার, আদালত চত্বরে জনসমক্ষে ব্যারিস্টার মুখার্জী মদের বোতল সাপ্লাই দিয়েছেন। ছেলে তিনটি মদ্যপানে মারা যাওয়ার পরে তিনি দায় এড়াবেন কীভাবে?
অসাধারণ।
দারুন
..................................................................
#Banshibir.
ভালো লাগল, এই ধরনের গল্প সচরাচর দেখি না।
আরো লিখবেন আপনি।
দারুণ লাগলো। নিয়মিত লিখুন
এই গল্প টা কি আগে কোথাও প্রকাশিত হয়েছে?
না, আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। কেন বলুন তো?
কেন জানি মনে হচ্ছিল আইনজীবী মক্কেলকে ছাড়িয়ে আনার পর তাদের বিষাক্ত মদপানে মৃত্যু - এই রকম গল্প আগে কোথাও পড়েছি।
পাঠকের মনযোগ ধরে রাখতে পারাটাই একজন ভাল লেখক হওয়ার বিশেষ প্রয়োজনীয় সর্ত। আপনি সেটা ভালো ভাবেই করতে পেরেছেন। লিখতে থাকুন। এ ধরনের লেখায় সচলও সমৃদ্ধ হবে।
ভালো লেগেছে। যা বুঝলাম না তা হচ্ছে গল্পের নামের মানে টা কি? যাক গে,খুজে নেবো।
খুব বাজে একটা ছটফটে অভ্যাস হয়েছে, বড় লেখা দেখলে মন পালাই পালাই করে। কিন্তু একবার ঢুকে যাবার পর আর বেরোতে পারি নি, পুরো কৃতিত্ব আপনার। আশা করি নিয়মিত আপনার গল্প দেখতে পাব সচলে।
লেখায়
দারুণ লাগল। একটানে পড়ে ফেললাম!
কম্পিউটারে গেইম ম্যানুয়াল/ওয়াকথ্রু টাইপ বাদে আর যেকোন কিছু পড়তে গেলে একদুই প্যারার বেশি মনোযোগ রাখতে পারি না। কিন্তু এইটা একটানে শেষ করে ফেললাম। গল্পটা সেইরকম হইসে! রহস্য গল্প পড়া ভুলেই গেসিলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
খুব ভালো লাগলো। আরো লিখুন। আর, কথাটা মনে হয় 'গরু মেরে জুতা দান'।
বাহ্, ভালো লাগলো পড়ে। আরও লিখুন
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অসাধারণ হয়েছে
অনেকদিনপর ঠাস বুনটের একটা রহস্য গল্প পড়লাম। অসাধারণ।
ছোট একটা বিষয়। পিস্তল উদ্ধারের পর তাতে ঘাঘু ইন্সপেক্টর বিশ্বাস আঙ্গুলের ছাপ উদ্ধারের চেষ্টা করেন নি, এইটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি। ঘাতক নিজেও খুব চালু না। সে আঙ্গুলের ছাপ মুছে ফেলার চেষ্টা করার বুদ্ধি রাখে না বলেই মনে হয়েছে।
আর শেষে ব্যারিস্টার মুখার্জির দেয়া শ্যাম্পেন বোতলের দায় এড়িয়ে যাওয়া কঠিন বৈকি।
পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
-----------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
ভালো লাগল। চমৎকার একটা গল্প। গল্পের মধ্যের সময়ের ঘটনাগুলি এখন কোলকাতার নিত্যদিনের রোজনামচা।
লিখুন আরও। সচলায়তনে আপনাকে স্বাগতম।
ডাকঘর | ছবিঘর
ঠিকই। গল্প ভালো লেগেছে বলে আমরা গর্বিত।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
সাবলীল চমৎকার লেখা!
গল্প ভালো লেগেছে।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
সচলে আরেকজন শক্তিশালী গল্পকারের অভিষেক হল। বাহ্ !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
অসাধারণ।
মনে হয় এটাই সচলায়তনে আপনার প্রথম লেখা।
অবশ্যই নিয়মিত লিখুন।
প্রথম গল্পেই যদি কারও হাত এত পাকা হয়, তবে নিশ্চিত ভবিষ্যতে আরও অনেক চমক অপেক্ষা করছে।
অনেকেই আবার ওয়ান-স্টোরি-ওয়ান্ডার হয়ে থেকে যায়। আমরা সেই নিয়ে একটু ভয়ে ভয়ে আছি।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
অসাধারণ।
মডুরা কি মুক্তিযুদ্ধের সালটা পালটে দিতে পারেন লেখকের সম্মতিক্রমে? চমৎকার একটা লেখায় এরকম ভুল তথ্য পীড়াদায়ক।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
লেখকের পূর্ণ সম্মতি আছে সালটা পালটে দেওয়ার ব্যাপারে। সচলায়তনের গল্প কি এডিট করা যায়? তাহলে আমিই সংশোধন করে দিতাম।
চমৎকার।
নতুন মন্তব্য করুন