বাংলা ভাষা আমাদের ঐতিহ্য , আমাদের প্রাণ। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করে। জাতি হিসেবে এই ভাষার গুরুত্ব আমাদের কাছে অপরিসীম। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কথা বলা অথবা নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।আর এক্ষেত্রে শুদ্ধবাংলায় কথা বলতে পারলে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধটা আরও বাড়ে। আঞ্চলিকতার কারনে উচ্চারণগত বিভিন্ন তারতম্য থাকলেও শুদ্ধ বাংলা হিসেবে একটি মানদণ্ড দাড় করিয়ে দেয়া আছে । আর শুদ্ধ বাংলাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের অন্যতম একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে টেলিভিশন। টেলিভিশন আজ আমাদের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কারণ গত কয়েক দশকে এর চাহিদা এত পরিমানে বেড়েছে যে আজ তা একেবারে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
টেলিভিশন আমাদের জাতীয় জীবনের দর্পণ স্বরূপ। এই দর্পণের মাধ্যমেই আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরছি। আর এর উপস্থাপনার মাধ্যম হচ্ছে বাংলা- অবশ্যই শুদ্ধ বাংলা। টেলিভিশনে যে সব অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করে আছে নাটক। দর্শকপ্রিয়তার কারণে নাটকের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ছোট বড় সকলের কাছেই। টেলিভিশনে প্রচারিতব্য নাটক ছোটবেলা থেকেই আমাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার মতো অনেক কিছুই শিখিয়েছে। আর এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শুদ্ধভাষা। বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে বলতে পারা ও শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার ক্ষেত্রে নাটক এক অনন্য ভুমিকা রেখেছে। ছোটবেলায় পরিবারের সবায় মিলে আমরা নাটক উপভোগ করতাম। তখন স্যাটেলাইট আসেনি। প্রতি মঙ্গলবার ধারাবাহিক হতো। নাটকের কথোপকথন ছিল একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার। তাদের উচ্চারণ দেখে মনে হত যেন স্ক্রিপ্ট দেখে দেখে খুব সতর্কতার সাথে তারা এক একটি কথা বলছে। তখন নিজের কাছে মনে হতো যদি এভাবে শুদ্ধ করে কথা বলা যেত। আমার মনে আছে বহুব্রীহি, অয়োময়, কোন কাননের ফুল, কোথাও কেউ নেই, সংশপ্তক, আজ রবিবার প্রমুখ নাটকের কথা। এইসব নাটকের অভিনেতাদের অভিনয়, উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি এমনভাবে প্রতিফলিত হতো তা দেখলেই বোঝা যেত যে নাট্যকার দর্শকদের কাছে এর শিক্ষণীয় বিভিন্ন বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কতখানি চিন্তিত।
খুব সম্ভবত ১৯৯২ সালের পর এদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো আসতে শুরু করে যার বদৌলতে আমরা আজ অনেক বাংলা চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি। চ্যানেল বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে নাটক। বিভিন্ন নাটকের একের পর এক পুনরাবৃত্তিতে ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন চ্যানেল অনুষ্ঠান প্রচার করছে। সংখ্যা বেড়েছে নাটকের। কিন্তু মান বাড়েনি। দুই একটি ছাড়া অধিকাংশ নাটকের মান নিম্নমুখী। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমাদের ভাষা। ক্রমেই নাটক থেকে শুদ্ধ ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। শুদ্ধ ভাষার পরিবর্তে এমন একটি ভাষাকে ক্রমান্বয়ে সামনে নেয়া হচ্ছে যে আর কয়েক বছর পরে শুদ্ধ ভাষাটি ক্রমেই হারিয়ে যাবার একটা আশংকা রয়েছে। স্যাটেলাইটের কারণে তরুন প্রজন্মের কাছে টেলিভিশন দেখা একটি দৈনন্দিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রির সহজলভ্যতার কারনে টেলিভিশন আজ মানুষের ঘরে ঘরে। সারাদিন খেটে খাওয়া মানুষেরা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই প্রথমে টেলিভিশনের সামনে বসে। ছেলেমেয়েরা রাতের পড়া শেষ করে বসে যায় টেলিভিশনের সামনে নাটক দেখতে। আধ ঘণ্টা অথবা এক ঘণ্টা সময় ব্যায় করে তারা হয়তো বিনোদন ঠিকই খুজে পাচ্ছে কিন্তু তা থেকে কতটুকু শিখতে পারলো সেটাই এখন মুখ্য বিষয়। একজন প্রিয় অভিনেতা অথবা প্রিয় অভিনেত্রীর প্রতিটি বিষয় দর্শক শ্রোতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। আর দর্শকটি যদি অল্প বয়সী হয় তবে সে তাকে আইকন ভাবা শুরু করে। এখন ভেবে দেখুন এমন একজন আইকন অশুদ্ধ ভাষায় অথবা বিকৃত বাংলায় তার নাটকের সংলাপ অহরহ তার বিভিন্ন নাটকে ব্যবহার করছে। তাহলে ওই ছোট্ট ছেলে অথবা মেয়েটির কাছে এই ভাষাটিই আদর্শ বাংলা ভাষা হিসেবে পরিচিতি পাবে। এক সময় সে এমনভাবেই কথা বলা শুরু করবে এবং তার প্রভাব পড়বে সমাজে। এই ধরুন একজন তরুণী তার সহপাঠীকে বলছে “ এই বুঝছোছ কাল আমরা সবায় ধান মণ্ডির কে এফ সি খাইছি- তুই কি ওইখানকার কে এফ সি খাইছোছ?” এই বাক্যটিকে কি শুদ্ধ বাংলা বলা ঠিক হবে। প্রশ্ন পাঠকদের কাছে।এরকম আরও উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। অথচ প্রায়শই আমরা নাটকে এই ধরনের ভাষার ব্যবহার দেখতে পায়।
ভাষার এই রূপটি বিভিন্ন নাটকের ছোঁয়ায় তা ক্রমেই আরও বিকৃত রুপ লাভ করছে। আমি এমনও শুনেছি এখন অনেক বাবা মা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে টিভিতে বাংলা নাটক দেখতে দেন না। তাদের ধারনা নাটকে ব্যবহৃত সংলাপ শুনে তারা ভুল বাংলা শিখছে। যেখানে নাটক দেখে তার উল্টোটাই হবার কথা। অথচ এই নাটকের মাধ্যমেই শুদ্ধ বাংলা শেখার একটা স্পৃহা ফিরে পেতাম আমরা। বর্তমানে নাটকে প্রচলিত ভাষা হয়তো দর্শকদেরকে সাময়িক বিনোদন প্রদানে সক্ষম কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব কি আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনছে। এই স্বল্প বিনোদনের জন্য আমরা আমাদের বড় একটি অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছি বলে আমার ধারণা। আর সবচেয়ে কষ্ট পায় যখন আমাদের দেশের চৌকস কিছু শিল্পীকে এই স্রোতে গা ভাসাতে দেখি। আর সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন তারা এই বিকৃত বাংলা ভাষায় তাদের নিজেদেরকে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন।
শুনেছি এই নব্য বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারা নাকি এই সময়ের আধুনিকতা। কারণ তারা দেখছে তাদের তথাকথিত আধুনিক মানুষেরা টেলিভিশনের বিভিন্ন নাটক, টেলিফিল্মে এই ভাষায় কথা বলছে। সুতরাং এইটাই সঠিক এবং হালের ফ্যাসান হিসেবে তা তরুন প্রজন্মের কাছে একটি প্রচলিত ভাষা হিসেবে আজ দাঁড়িয়েছে। তাই আমি মনে করি আজ বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গৌরব গাঁথাকে ধরে রাখতে হলে আমাদের ভাষার সঠিক প্রয়োগ ও উচ্চারণের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। নাটক, টেলিফিল্মের মতো যেসব মাধ্যমে ভাষাকে ব্যবহার করা হয় সেখানে সঠিক ভাষার প্রয়োগ ও অনুশীলন করতে হবে। আমরা চাইনা আমাদের তরুন প্রজন্মকে নাটক দেখা থেকে বিরত রাখতে, চাইনা টেলিভিশনের এই বিনোদন থেকে তারা বঞ্চিত হোক। আমরা চাই আমদের নাট্যকাররা এই বিষয়টির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। আরও মানসম্মত নাটক তৈরি করবেন এবং শুদ্ধ বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রয়োগে আরও বেশি সচেষ্ট হবেন।
লেখকঃ অমি_বন্যা
মন্তব্য
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
নাটকের যে জিনিসটাতে এখন সবচেয়ে বেশী বিরক্ত হই - সেটা এই ভাষা বিভ্রাট। কারো কারো কাছে এই উদ্ভট ভাষায় কথা বলাটা রীতিমত ফ্যাশনের পর্যায়ে পরে।
তবে এটা ক্ষীণ আশা যে তারা আধুনিকতার নামে ভাষার যে রীতি চালু করেছে, মনে হয়না এত সহজে ফিরে আসবে! কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বর্তমানে নাটকের কিছু জনপ্রিয় অভিনেতা শুদ্ধ ভাষায় স্বাভাবিক ভাবে আদৌ কথা বলতে পারবে কিনা এই ব্যাপারে কেন যেন আমার সন্দেহ হয়!!
আরেকটা ভাল লেখা বন্ধু, চালিয়ে যাও। তবে লেখার সাথে আমার কিছু দ্বিমত আছে। সম্পূর্ণ দোষটা নাটকের মানুষদের দিলে আমার মনে ভুল হবে। বাংলার এই কথ্যরীতির উদ্ভব আসলে কোথায়? তারা নিজেরাই কি তৈরী করে নাটকের চরিত্রদের মুখে তুলে দিয়েছে, নাকি আগে এই রীতিটি আমাদের দৈনন্দিন কথাবাত্রায় চালু হয়েছে, সেটা দেখে/শুনে নাট্যকারেরা তার চরিত্রদেরকে এই ভাষায় কথা বলিয়েছেন?
কেএফসিতে খাওয়া নিয়ে যে লাইনটার উধাহরন দিলি(কোট করতে পারছি না), সেটা ঠিক কোন ভাবে বললে সঠিক/উপযুক্ত হতো?
যে রীতিটি চালু হয়েছে সেটা কি শ্রুতিমধুর ও সঠিক বলে মনে হয়েছে। আমার কাছে তা শ্রুতিকটুই মনে হয়েছে। আর একটি সুন্দর রুপ থাকতে কেন ভাষাটাকে একটু অন্যভাবে বলার চেষ্টা ।
যেই উদাহরণটি দিয়েছি সেটা এভাবে হতে পারত-
"কাল আমরা সবায় ধান মণ্ডির কে এফ সিতে খেয়েছি তুই কি সেখানকার কে এফ সি খেয়েছিস?"
সংশপ্তক দেখে শুদ্ধ বাংলা শিখতেন ?
প্রমিত ভাষার বিলুপ্তির আশঙ্কা অমূলক নয়। কিন্তু সেটার সব আক্রোশটা গিয়ে পড়ে নাটকের আর রেডিও উপস্থাপনার উপর। অপ্রমিত যেনো তাদের উদ্ভব। এগুলো শুরু হবার আগে মানুষের মুখের ভাষা যেমনটা অপ্রমিত দেখেছি, এখনো তেমনটাই দেখছি। ইতিহাস ঘাটলেও পাবেন যে মানুষের মুখের ভাষা মূলত অপ্রমিতই ছিলো।
এখন মানুষই কথা বলছে অপ্রমিত ভাষায়। নাটক রেডিও এটার উদ্ভব ঘটায় নি। বলা চলে প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। মুখের ভাষাটিকে এক প্রকার প্রতিষ্ঠিতও করেছে। এখন প্রমিতের বিলুপ্তির আশঙ্কা যদি থাকে, তাকে নাটক রেডিওতে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেই কি এর সমাধান হয়ে যাবে বলে আপনার মনে হয়, যেখানে মানুষের মুখের ভাষায় সেটা অনুপস্থিত? নাটক রেডিওতে অপ্রমিত ভাষা চালুর অনেক আগে থেকেই মানুষের মুখের ভাষায় প্রমিতের উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি এর বিলুপ্তি নিয়ে আশঙ্কিত হবার জন্যে যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু সেটা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয় না। ব্যাপারটা একধরনের দ্বিচারিতা। মানুষের মুখের ভাষায় প্রমিত অনুপস্থিত থাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু টেলিভিশনে তথা 'জাতীয় জীবনের দর্পণে' একে বেঁচে থাকতে হবে! তাহলে মুখের ভাষাতেও প্রমিতের ব্যাপারে সোচ্চার হোন। মানুষের মুখেই যে ভাষা বিলুপ্তির আশঙ্কাযুক্ত, সেটাকে কেবল টেলিভিশনে টেলিভিশনে বাঁচিয়ে রাখাটা কোন কাজের চিন্তা না। কিন্তু আপনি মুখের ভাষাতেও যে প্রমিত অনুপস্থিত ও বিলুপ্তির আশঙ্কাযুক্ত সেটাকে অস্বীকার করছেন বা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন এ কথা বলে -
কিন্তু এ কথা কয়জনের জন্যে সত্য? নোয়াখালির অনেক মানুষেরই সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্যবোধটা থাকে যখন নোয়াখালির ভাষায় তারা কথা বলেন। আর নোয়াখালি এখানে একটা উদাহরণ কেবল। তাহলে আপনি কাদের কথা বলছেন?
আপনার এই কথাকে কীভাবে বুঝে নিতে হবে জানি না, তবে টেলিভিশন জাতীয় জীবনের দর্পণই যদি হয়, তাহলে আমাদের দৈনন্দিন উচ্চারিত মুখের ভাষাটাকে জাতীয় জীবনে লুকিয়ে-আড়াল করে কেনো রাখতে হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। বরং নাটকে মুখের ভাষাকে উপস্থাপন করে তো সেই দর্পণের ভূমিকাই পালন করা হচ্ছে। তার বদলে আপনি যে প্রমিত ভাষার চর্চা বাড়াতে বলছেন, সেটা বরং আমাদের জীবনের প্রতিফলন নয়। সেটা সংস্কার বা সংস্কৃতি। সংস্কার নিয়ে আমার আপত্তি নেই। তবে সেটাকে দর্পণ বলতে আমি নারাজ। আপনি সংস্কৃতি ও দর্পণ দুটিই যদি চেয়ে থাকেন, তাহলে টেলিভিশনে প্রমিত অপ্রমিত দুটোরই পাশাপাশি থাকাটা আপনার কাছে কাম্য হতে পারে।
ভাল বলেছেন ।
facebook
আপনার সাথে মূলত সহমত হলেও, পুরোটাতে মনে হয় পারলাম না।
এই কথাটার প্রথমাংশের সাথে একমত হলেও, ২য়াংশের সাথে মনে হয় পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না।
১। আমার মনে হয় নাটক/টেলিভিশন/বিজ্ঞাপন/এফএমে যে ধরণের বা যেভাবে অপ্রমিত ভাষার অবতারনা হচ্ছে, তার একটার বড় অংশের পিছনেই বোধহয় জোরালোভাবে ভাষা-সংক্রান্ত বিশেষ একধরণের মতাদর্শ-প্রাণিত ও এজেণ্ডাসম্পন্ন একদল লোক ও তাদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ চেলাচামুণ্ডারা বা তাদের প্রভাব কাজ করছে (কিছু চিন্তাহীণ কপিক্যাটও থাকতে পারে অবশ্য)। এর মধ্যে তাদের নিজস্ব রাজনীতির টুইস্ট আছে, এমনকি কেউ কেউ আমার ধারনা প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িকতাবোধ থেকেও তাড়িত। যাইহোক, সেসব আমার পয়েন্ট না, আমি বলতে চাচ্ছি - এরা আসলে আগে থেকেই সমাজে প্রচলিত অপ্রমিত-চর্চার স্রেফ 'প্রতিফলন' ঘটাচ্ছেন না। বরং নিজেদের মত করে (বা এজেণ্ডা/মতাদর্শ অনুযায়ী) তাকে অনেকসময়ই মডিফাই করছেন, ম্যাগ্নিফাই করছেন, পরিবর্তন করছেন, পরিবর্ধন করছেন, অপপ্রয়োগ করছেন, বিকৃত করছেন। অর্থাৎ, তাদেরকে সমাজে প্রচলিত অপ্রমিতচর্চার 'আয়না' বললে বলতে হবে তাদের আয়নাটা সম্ভবত সমতল নয়। অন্যভাবে বললে, অতি অল্প সংখ্যক কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক লোক সারাদেশে অপ্রমিতচর্চার স্বাভাবিক বিবর্তনে আনফেয়ার, আনডিউ এবং ডিস্প্রোপর্শনেট প্রভাব খাটাচ্ছেন, নিজেদের মতাদর্শপ্রাণিত কাজকর্ম প্রোপাগেট করছেন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নামক অতি শক্তিশালী একটি মিডিয়ামে তাদের এ্যাক্সেস থাকার কারনে এবং শ্রেণিগত কারনে নিজেরা শহুরে 'আঁতেল' শ্রেণির হওয়ায় - যা সংখ্যাগরিষ্ঠ অপ্রমিতচর্চাকারী আমজনতা পারছেন না। আমার ধারণা এটা ঠিক প্রতিফলন না, বরং অনেক সময়ই এটা একধরণের 'মিশন' (কিম্বা কারও কারও নিজস্ব কোন ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত 'ভিশন' বা এজেণ্ডার প্রতিফলন) - যা সংখ্যাগরিষ্ঠের অপ্রমিতচর্চার স্বাভাবিক বিবর্তনের পথে একটা বিভ্রান্তি ও বিকৃতিসৃষ্টিকারী প্রভাব। কিন্তু তারচেয়েও বড় কথা, আপনি যে 'অধিকার'-এর কথা বললেন - এরা অনধিকারচর্চা না করলেও আমার মনে হয় 'অতিঅধিকারচর্চা' করছেন, যা হয়ত বাস্তবে অনধিকারচর্চা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাদের এই মিডিয়াচর্চিত 'অপ্রমিত' ভাষা সারাদেশে বা সর্বজনীন ভাবে গৃহীত কোন অপ্রমিত ভাষা নয়, বরং এটা মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক একটি বিশেষ শ্রেণীর বিশেষ ঘরানার সোশিওলেক্ট - যা এমনকি সারাদেশে (এমনকি মনে হয় ঢাকাতেও) প্রচলিত সোশিওলেক্টের মধ্যেও একটা অন্যতম 'ভ্যারাইটি' মাত্র - একমাত্র বা 'মান' কোনটাই না! সোজা কথায় বললে, এটা অপ্রমিতের মধ্যেও অপ্রমিত। তো একটা (বা একাধিকও যদি হয়) বিশেষ এলাকা, শ্রেণী, গোষ্ঠী বা মতাদর্শবাদীদের "সোশিওলেক্ট" কেন অন্য সমস্ত (এবং অজস্র) ভেরাইটি তথা সোশিওলেক্ট, আঞ্চলিক ডায়ালেক্ট ইত্যাদিকে ছাপিয়ে মিডিয়াতে প্রচার পাবার ও আনডিউ প্রভাব বিস্তারের এই অত্যন্ত অসম, ডিস্প্রোপর্শোনেট এবং প্রায় এক্সক্লুসিভ সুযোগ ও অধিকার পাবে, প্রিভিলেজ পাবে ? আমার কাছে এটাই বরং অনেক বেশি অগণতান্ত্রিক, আনফেয়ার এবং অবনক্শাস মনে হচ্ছে। আমার সমস্যাটা এই অপ্রমিত বনাম অপ্রমিতের মধ্যেই। যাহোক, এ ব্যাপারে আমার জ্ঞানগম্যি খুবই কম তাই আর কথা বাড়াবো না - যা বললাম তা একেবারেই আমার সীমিত জ্ঞানপ্রসূত প্রাথমিক ও টেনটেটিভ মতামত মাত্র, চূড়ান্ত মত নয়। শুধু একটা শেষ প্রশ্ন - অপ্রমিতের মধ্যে/জন্যে কি তাহলে গনতন্ত্রায়ন সম্ভব? সম্ভব সবার জন্য, সব ভ্যারাইটি/সোশিওলেক্ট/ডায়ালেক্টের জন্য সমসুযোগ, সমধিকার, সমএক্সপোজিওর নিশ্চিত করা?
২। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অপ্রমিতচর্চা আরেকটা কারনে আমার কাছে আনফেয়ার ও ক্ষতিকর মনে হয়। এটা একদম একতরফা। প্রমিত ভাষার নাহয় এলিটপ্রসূত, এর অনেক সময় নানা পদের 'কর্তৃপক্ষ' থাকে নানারকম বিধিবিধান/অনুমোদন জারি করার জন্য বা খবরদারি করার/ লাইনে রাখার জন্য থাকে নানারকম ইন্সটিটিউশন। বাই ডিফল্ট এর একটা অনেকখানি একতরফা আর ইউনিফর্ম চরিত্র আছে, অন্তত তাত্ত্বিক ভাবে হলেও। এটা মোটামুটি এর স্বীকৃত চরিত্র। তা নাহলে এটা প্রমিতই হত না শুরুতে। কিন্তু আমজনতা যে অপ্রমিত ভাষায় কথা বলে তার প্রকাশ-প্রসার-বিকাশ ও বিবর্তন পুরোটাই বাস্তব ইন্টার্যাকশন বা মিথস্ক্রিয়া-নির্ভর। ফলে সেই বিবর্তন ধীরগতির এবং তার একটা নিজস্ব ডাইনামিক্স আছে বলে মনে হয়। বাস্তব মানুষের বাস্তব জীবনে প্রতিমুহূর্তে যাচাই-বাছাই-গ্রহণ-বর্জন-মিশ্রণের অধিকারের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে এর বিবর্তন ঘটে বলেই আমার মনে হয় - অন্তত সেটাই এর সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রাণশক্তি। ফলে একে অপরকে নানাভাবে প্রভাবিত ও মডিফাই করার সুযোগ পায়। কারও একক কোন ভার্শান একতরফা ভাবে চাপিয়ে দেয়ার তেমন সুযোগ নেই, নেই দেশব্যাপী কারও মিথস্ক্রিয়ানিহীণ একতরফা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ বা ক্ষমতা। কিন্তু ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা সেখানে এ্যাক্সেসধারীদের সেটা আছে। অন্তত সেইরকম এ্যাক্সেসবিহীণ অন্য সবার চেয়ে অনেক বেশি। আর তাদের এই এলিটশক্তিপ্রসূত প্রমিতকারী অপ্রমিতের প্রভাব ও সুযোগ আম-অপ্রমিতের সার্বক্ষণিক-বাস্তব-মিথস্ক্রিয়া-নির্ভর সুস্থ গণতান্ত্রিক বিবর্তনকে বিকৃত ও জড়ীভূত করার আশঙ্কাপূর্ণ বলেই তো মনে হয় আমার কাছে। এটাও আমার একটা টেনটেটিভ মতামত আপনার কি মনে হয়?
****************************************
৫০ বছর পরে বাংলাদেশে তথাকথিত প্রমিত ভাষায় ১শতাংশ লোকও কথা বলবে না (এখন কত শতাংশ বলে এইটাও সন্দেহ) পারলে ঠেকাউক ...
বাংলা মানুষের মুখের ভাষার নাম। জয় বাংলা।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনি প্রমিত বাংলা বলতে যা বুঝাতে চাইছেন, যদি ঠিকঠাক বুঝে থাকি, তবে সেই বাংলাটি প্রমথ চৌধুরীর কলম ধরে সম্ভবত ১৯১৪ সাল থেকে প্রকাশিত ''সবুজ পত্র'' মারফৎ পরিচিতিপ্রাপ্ত বাংলা, আজ থেকে ১০০ বছরের বেশি আগে লোকমুখে যার প্রায় কোন অস্তিত্বই ছিল না। একথাটি ভুলে যাওয়া সমীচীন হবে না যে সবুজ পত্র প্রকাশিত হবার পূর্বেও বৃক্ষের পাতারা সবুজই ছিল এবং এদেশের মানুষেরাও তখনো ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকত। তাদের ভাষাটি কি বিজাতীয় কিছু ছিল?
আজ শুদ্ধ ভাষা ভেবে যে উচ্চারণকে উঁচু জাতের ভাবছি, এখনো সেই ভাষায় এদেশের কতজন লোক কথা বলে থাকে তা একটা গবেষণার বিষয় বৈকি। প্রতিটি ভাষারই অসংখ্য ডায়াল্যাক্ট থাকতে পারে। আমার পরিচিত সিলেট, চট্টগ্রাম বা নোয়াখালীর অনেককে দেখেছি নিজের এলাকার মানুষের সাথে ঐ অঞ্চলের ভাষাতেই কথা বলেন। উত্তর বঙ্গের মানুষের ভাষাও অন্য এলাকা থেকে খুব আলাদা। ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কিংবা পুরান ঢাকার মানুষেরাও আবহমানকাল ধরে নিজস্ব শব্দের স্রোতে স্বকীয় উচ্চারণে ভাবের প্রকাশ ঘটান। আমাদের প্রাচীন সাহিত্য গাঁথায় এর উৎকৃষ্ট প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। এখন আমরা কি মহুয়া, মলুয়া বা ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালিকে বলব এগুলো আমাদের ভাষার বিকৃতি ঘটিয়েছে? অথবা এসবের জন্য কি আমরা তার বেতার সমৃদ্ধ যন্ত্রসমূহ পরিচালন/পরিবেশনকারী ব্যক্তিবর্গের দ্বারা ভাষাকে কলুষিত ও বিলুপ্ত করবার কু প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করব?
------------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
অনেকে বলছেন এগুলো টেলিভিশনে দেখাতে গেলে অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্যারেন্টাল গাইডের মতো সতর্কীকরণ দিয়ে শুরু হলে ঠিক আছে। প্রমিতওয়ালারা একটা সুযোগ পাবেন তাদের প্রমিত কান বাঁচানোর। কিংবা কানকে প্রমিত থেকে অপ্রমিতে সুইচ করার একটা ন্যূনতম সময় পাবেন। এক সময় যেমন ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামের ’আঞ্চলিক’ অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো কিংবা এখনো হয়, কে জানে। আবার অন্য অনেকে বলছেন এটা যদি অধ্যাপক ও প্রমিতগোষ্ঠির ইমাম আনিসুজ্জামান অ্যাপ্রুভ্ড হয়, তাহলে ঠিক আছে। সব কিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে হতে হবে। সবাইকে শেষমেশ লাইনে আসতেই হবে।
টেলিভিশনে অনেক সময় জোর করে ভাষা বদলানোর চেষ্টা করা হয়, ঐটা দৃষ্টিকটু লাগে। যেমন ধরেন একটা নাটক দেখেছিলাম, ফারুকী গং এর প্রথম দিককার (৫১ বর্তী নাম মনে হয়), ধারাবাহিক। তাতে মাসুদ আলী খান থাকে পরিবারের কর্তা। পুরো নাটকে তাকে বেশ হাচড়ে পাচড়ে খাইসে গেসে করানো হয়েছে। অথচ তাকে তার নিজের মত করে কথা বলতে দিলে তাতে দোষের কিছুই ছিলনা।
সেটার আগে ষোল বছর ধরে যাকে তাকে জোর করে করেছি খেয়েছি বলানোটাও তীব্র দৃষ্টিকটু লেগেছে, আজও লাগে। এখন পয়েন্টটা কী? আমরা কি দৃষ্টিকটু না লাগার অধিকারও চাইছি? মনোভাব প্রকাশ বা কেবলই ক্ষোভ বা অপছন্দ প্রকাশ হলে ঠিকাছে।
না না এখানে পয়েন্ট আউট করার জন্য বলিনাই কিছু। আমি নাটকের ভাষারীতি গেল গেল এই নিয়া মাথা ঘামাচ্ছিনা, কিন্তু কাউকে যদি কোন নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বলানোর রিকয়ার্মেন্ট থাকে স্ক্রিপ্টে, তাহলে কাস্টিং এর সময়ে সেইটা দেখা উচিত যেন আরোপিত মনে না হয়। আমি নাটক দেখতে চাইলে দেখব কুশীলব কতখানি সাবলীল, অভিনয়ের পাশাপাশি উচ্চারণ বাচনভঙ্গিও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
হুমম। তাছাড়া ফারুকী গং যেই ঘরানার নাটক করে বলে দাবী করে, সেখানে কুশীলবকে সাবলীল হতে না দেয়াটা সাজে না।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা পড়ানোর লোক পাওয়া যায়নি, কারন পন্ডিতেরা বাংলা ভাষাটাকেই শুদ্ধ মনে করতেন না। শুদ্ধ ছিল দেবভাষা সংস্কৃত, তারা বাংলায় কথা বললেও তাকে লিখিত রূপ দেবার বা ব্যাকরণ লিখার কোন তাগিদই বোধ করেননি। আপনি যেমন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান সংস্কার সমিতির ঠিক করে দেওয়া খেয়েছে শব্দটি সঠিক মনে করছেন ঠিক সেইরকম তারাও পাণিনীর ব্যাকরন আঁকড়ে ধরে ছিলেন। ঠিক আপনার মতই বাংলার চেয়ে সংস্কৃত তাদের কাছে শ্রুতিমধুর ও সঠিক লাগত।
টেনশন নিয়েন না। আপনার কাছে খাইছে শব্দটি শ্রুতিকটু হওয়া সত্ত্বেও সারা বাংলাদেশের মানুষ তা নিয়মিতই বলবে এবং তা জীবনের দর্পন স্বরুপ টেলিভিশনেও চলে আসবে।
..................................................................
#Banshibir.
আমি জানি মানুষ তা বলবে এবং টেলিভিশনেও তা আসতে থাকবে। আমার প্রশ্ন যদি আপনার পরিবারের নতুন কোন সদস্যকে, যে সবেমাত্র কথা বলা শিখছে, তাকে আপনি এই শব্দটি শেখাতে গেলে কোনটি শেখাতেন ? খাইছে না খেয়েছে?
আমি জানি যে এই শব্দগুলো ব্যবহার করা ট্রেনড হয়ে গেছে। তবে আগেরটাই কি ভালো ছিল না? এক্ষেত্রে পছন্দের মতানৈক্য থাকতে পারে আমি কেবল আমারটাই বলেছি মাত্র।
কত আগে?
..................................................................
#Banshibir.
পরিবারের নতুন সদস্যকে কী শেখানো হবে সেটার দায়িত্ব বা সিদ্ধান্ত পরিবারটির, অন্য কারো নয়। আপনি বা আমি অন্যের পরিবারের শেখার মাধ্যম কী হবে ঠিক করে দিতে পারি না। আপনি যে আপনার পছন্দের মাধ্যমটির প্রতি রক্ষণশীলতা পোষণ করছেন, সেটার অধিকারকে আমি সমর্থন করি। প্রত্যেকের অধিকার আছে তার নিজস্ব 'এসেন্স'টাকে রক্ষা করতে চাওয়ার। সেটার অবারিত সুযোগও কিন্তু আছে। টেলিভিশনের সিংহভাগ অনুষ্ঠান প্রমিত ভাষায় হচ্ছে। বিটিভি তো আছেই। সকল সংবাদপত্র এই ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। প্রায় সকল বই পুস্তক এই ভাষায় লেখা হয়। আমিও আপনার সাথে এই ভাষাতেই যোগাযোগ করছি। আপনার পরিবারের অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যের টেলিভিশন দেখাকে নিয়ন্ত্রণ করার সকল অধিকার আপনার আছে। পছন্দ না করলে অপ্রমিত ভাষার নাটক সিনেমা কি মমতাজ বা শরীফুদ্দিনের গান দেখতে শুনতে দিবেন না। (তবে প্রাপ্তবয়স্কের উপরে নিজের পছন্দ চাপানোর 'অধিকার' আপনার নেই।) এতো কিছুর পরেও নাটকে অপ্রমিত ভাষাটির সামান্য উপস্থিতির কারণেই যখন প্রমিত ভাষার বিলুপ্তির ব্যাপারে আশঙ্কিত হয়ে পড়লেন তখন আসলে আপনাকে ভাবতে হবে ব্যাপারটা কী। হয়তো আপনি নিজের পছন্দের ব্যাপারে রক্ষণশীলতাই শুধু পোষণ করছেন না, অন্য প্রাপ্তবয়স্কদের পছন্দ-অপছন্দও ঠিক করে দিতে চাইছেন।
তবে আপনি যদি নাটক নির্মাতাদের আরো আরো প্রমিত ভাষায় নাটক তৈরির আহ্বানই কেবল জানিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি নাটক নির্মাতারা লাইনে আসবেন।
আমি আসলে কারো পরিবারের উপর কিছু চাপিয়ে দেয়নি। কারণ এই অনধিকার চর্চার অধিকার আমার নেই। যদি সেটা করে থাকি তাহলে দুঃখিত।
তবে ভালো লাগাটা আসলে আপেক্ষিক।যেই বিষয়টি আপনার কাছে ভালো লাগছে তা আমার কাছে নাও লাগতে পারে। কারো উপরে কিছু চাপিয়ে দেয়াটা আমার লেখার উদ্দেশ্য ছিল না। বর্তমান কিছু কিছু নাটকের যে দিকটি আমার খারাপ লেগেছে সেটাকেই প্রকাশ করতে চেয়েছি। এখন আমার কাছে যে বিষয়টি খারাপ লাগবে তা অন্যদের কাছে ভালো লাগতেই পারে।
প্রমিত ও অপ্রমিতর ক্ষেত্রে বলবো যে আগে প্রমিতের ব্যবহার নাটকে অনেক বেশি ছিল এখন সেটা একেবারেই কমে গেছে। অনেক নাটক আছে দেখে মনে হয় কোন স্ক্রিপ্ট নেই। একটি পরিস্থিতি বলে দেয়া হচ্ছে আর শিল্পীরা তা নিজেদের মতো করে বলছে। আর তখনই গোলটা বাঁধে। আমরা দৈনন্দিন কথা বলার ক্ষেত্রে যা বলি কোথাও উপস্থাপনের সময় কিন্তু তা আরও গুছিয়ে বলার চেষ্টা করি। আমার মনে হয় নাটকও ঠিক তেমনই উপস্থাপনা। আর এই উপস্থাপনায় প্রমিত ও অপ্রমিতের মিশ্রণ আমার কাছে শ্রুতিকটু লাগে।
নাটকে প্রমিত অপ্রমিতের উপস্থিতি থাকবে তবে সেখানে প্রমিতের স্থান একেবারেই কমে যায় সেই আশঙ্কাটাই করেছি।
আমি আমার লেখার শেষে নিরমাতাদের প্রতি সেই আহবান জানিয়েছি।
সহমত ধ্রুব বর্ণন- এর সাথে।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের একটা চার ক্লাসের বালকের কথ্য ভাষার সাথে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারির আরেকটা সমবয়সী বালকের ভাষার বিস্তর তফাত। তাদের টেলিভিশনের চ্যানেলে অহর্নিশি প্রমিত উচ্চারণে অনুষ্ঠানমালা দেখাতে থাকলে ভাষায় কি পরিমাণ প্রমিতকরণের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যাবে তা আমার বোধগম্য নয়। তবে মুখে যাই বলুক, পরীক্ষার খাতায় গরু রচনা লিখতে গিয়ে ভুরুঙ্গামারির ছেলেটি কখনই লিখে না যে- ''গরু একনা পালাপুষা জীব''। সে ঠিকই লিখে আসে ''গরু একটি গৃহপালিত প্রাণী।'' এইটুকু লেখার বিদ্যা তাঁকে বিশেষ কোন প্রমিত ভাষা শিক্ষালয় থেকে ধার করে নিতে হয় না। উল্লেখ্য যে তার শ্রেণী কক্ষের পাঠদানকারী নিজেও হয়তো আঞ্চলিকতাদোষে দুষ্টু ভাষায় অহরহ জ্ঞান বিতরন করে থাকেন।
আজকে যে ভাষাটিকে আমরা প্রমিত বলছি, তারও উচ্চারণ নিয়ে তুমুল বিতর্ক তোলা যায়। একটা উদাহরণ দিই। রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথামালা তো বদলে যায়নি কখনো। কিন্তু বিনোদিনী বালা দাসীর গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথমদিকের একটা রেকর্ড শুনে দেখা যাক! ''যদি বারণ কর তবে গাহিব না''- এই গানটি তিনি গাইছিলেন প্রায় খেমটার মতো করে টেনে টেনে নাসিক্য ধ্বনিযোগে। এখন এই উচ্চারণটিই নেই হয়ে গেছে। অথচ তাঁর সময় ওইটি ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতের এবং প্রায় সকল বাংলা গানের প্রমিত উচ্চারণ। কেননা রবীন্দ্রনাথ বিনোদিনী বালার গান শুনে তাঁকে নিবৃত্ত করেননি এহেন উচ্চারণ করা থেকে। আজকের রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীদের গলায় একখানা গান লালচাঁদ বড়াল কিংবা বিনোদিনী বালাকে শুনতে দিলে তাঁরা হয়তো অপ্রমিত উচ্চারণে কর্ন দূষণ হতে রক্ষে পাবার জন্য কানচাপা দিয়ে পলায়ন করতেন! এখন বিভিন্ন সঙ্গীতে যে উচ্চারণটি শুনে এবং বলে আমরা প্রমিত ভেবে অভ্যস্ত, এর বয়েস ৬০ বছরের বেশি নয় কোন মতেই। এই উচ্চারনের পুরোধা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
ভাষা একটি বহতা নদীর মতন। কোথাও পাড়ে আছড়ে পড়ার শব্দ, কোথাও নুড়ির উপর ছলাত ছলাত শব্দ উঠবে তাতে। শব্দের উচ্চারণের ছন্দটি সর্বদাই সমান রসসিক্ত হবার সম্ভাবনা কম, যেমনটি লেখায় কিছুটা ধরে রাখা যেতে পারে তাতে। দীর্ঘসময় নিয়ে আমরা উচ্চারণ ও শব্দচয়ন আত্মস্থ করে থাকি। এর ভেতর জোর করে কোন বিশেষ ধারা ঢুকিয়ে দেবার বা ঢুকে পড়ার সুযোগ নিতান্তই অল্প বোধ হয়।
----------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
যে ভাষার শব্দ সম্ভার যত বেশী, সেই ভাষাকেই আমারা সম্বৃদ্ধ ভাষা বলে থাকি। খেয়েছে এবং খাইছে দুটি সমার্থক। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবাংলা মিলিয়ে প্রায় ষোল সতেরো রকম ডায়ালেক্ট আছে। প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব শব্দ ভান্ডার বাংলা ভাষাকে সম্বৃদ্ধ করেছে। ভাষা হল বহতা নদী। একশো বছর আগে লিখিত ভাষায় খেয়েছে কথাটি ছিল অশুদ্ধ, ভোজন করা ছিল শুদ্ধ ভাষা। কালের পরিবর্তনে এখন মুখের ভাষা লিখিত ভাষায় পরিণত হয়েছে। তাতে বাংলা ভাষার লাভ বই ক্ষতি হয়নি। নতুন প্রজন্মকে কেন আঞ্চলিক বাংলা ভাষার মাধুর্য থেকে বঞ্চিত করবেন। শুদ্ধতার কাঁচি চালিয়ে প্রচলিত বাংলা ভাষাকে ছেঁটে না ফেলে বরং প্রমিত বাংলা ভাষাকে আঞ্চলিক শব্দ ভান্ডার দিয়ে সম্বৃদ্ধ করুন।
খাইছস করছস সারাজীবন বলে গেছি বন্ধুদের সাথে। কিন্তু প্রমিত ভাষাতেও কথা বলেছি যখন দরকার হয়েছে। আমার মনে হয় না নাটকের এই ভাষা নিয়ে এত চিন্তার কিছু আছে।
এত তর্ক যুদ্ধ কেন বুঝতে পারছি না।আমাদের দেশের বর্তমান কিছু নাটকের নায়ক নায়িকাদের সংলাপ শুনলে ঠিক বুঝতে পারিনা যে এটা কোন দেশের আঞ্চলিক ভাষা।মনে হয় সোজা বিকৃতি করা হয়েছে ভাষাকে।লেখককে ধন্যবাদ যে এমন একটা বিষয় তুলে ধরেছেন।
ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ।
জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা
না, ভেবেছিলাম কিছুই লিখবো না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিখতেই হল। প্রমিত-অপ্রমিত নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নাই। যে যার খুশিমত বলবে, লিখবে, তাতে কারোরই কিচ্ছু বলার নেই।
কিন্তু যারা এ নিয়ে বিরাট তর্ক বাধিয়েছেন তাদেরকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই শুধু:
১। বর্তমানে টেলিভিশনে যে ভাষা (ফারুকী গং) ব্যাবহার করা হচ্ছে সেটা ঠিক কোন অণ্চলের ভাষা?
২। যদি ঢাকা'র কিছু মানুষ এই নতুন ভাষাটা ব্যাবহার করে থাকে তাহলে এই ভাষাটা সারা দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া'র অধিকার তাদের কে দিয়েছে?
৩। আমি বাংলাদেশের প্রায় সব অন্চলের ভাষা বুঝি, দু-একটা বাদে (যেমন সিলেট)। এখন একজন রংপুরের (আমি রংপুরের নই) মানুষ একজন সিটেলের মানুষের সাথে কোন ভাষায় কথা বলবেন?
আশা করি উত্তর পাবো।
কীভাবে চাপানো হচ্ছে?
প্রমিত ভাষায় বলতে চাইলে বলবেন। ফারুকী গংয়ের ভাষায় বলতে চাইলে সেও বলবেন। সমস্যা কোথায়?
কীভাবে চাপানো হচ্ছে?
নাটকে, টেলিফিল্মে, বিজ্ঞাপনে সর্বত্র।
প্রমিত ভাষায় বলতে চাইলে বলবেন। ফারুকী গংয়ের ভাষায় বলতে চাইলে সেও বলবেন। সমস্যা কোথায়?
হা হা হা। আমি তো কোন সমস্যার কথা বলিনি ভাই। আমি তো বলেই দিয়েছি:
১।
আপনার অভিযোগটা কোথায় স্পষ্ট করে বলবেন কি? এইটা কোন বিশেষ অঞ্চলের ভাষা, সেইটা প্রমাণ করে সেই বিশেষ অঞ্চলের প্রতি? নাকি এইটা কোন বিশেষ অঞ্চলের মানুষের ভাষা না, খুব বিকৃত ধিকৃত উচ্চারণের বাংলা, এই কারণে এইটা বলা যাবে না, সেইদিকে?
আমি নিজে শুধু ফারুকি গং না, কোন গংয়ের নাটকই দেখি না। একজন ফারুকী আর রৈসু মিলে একটা ভাষাকে পাল্টে দিবে, এইরকম ভয় পাইয়া থাকলে আর সেইরকম সম্ভাবনার উদয় হইলে মনে হয় সেইরকম ঠুনকো ভাষা বিলুপ্ত হওয়াই ভালো। এইবার একটা প্রশ্ন রাখি- বাংলা ভাষা কি এতটাই ঠুনকো? আপনার উত্তরটা ''না'' হবার সম্ভাবনা থাকলে মনে হয় ফারুকি গংদের ভয় পাবার কোন কারণ নাই।
ঠিকঠাক উচ্চারণ হয় নাই, এই অভিযোগে ধমক দিতে থাকলে মনে হয় আরও অনেকেই ধমক খাবেন। বাসার ছোট্ট শিশুটিও ঠিকঠাক বাংলা বলতে পারে না। চাকমা মারমাদের কথা বাদই দিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আমার পরিচিত বিভিন্ন এলাকার অনেক শিক্ষিত বন্ধু প্রমিত উচ্চারণ করতে গিয়ে ভুলভাল বাংলা বলত। দু একজন বিদেশি এসেও ''বাল আচি'' ''দোন্যবাদ'' ইত্যাদি বলে থাকে। এদের সবাইকে বলে দিতে হবে যে আগে ঠিকঠাক বাংলা শিখে আস। আমাদের ভাষা বিকৃত করার কোন অধিকার তোমাদের নাই। না হলে আমাদের ভাষা বলতে দেব না।
কোন বিশেষ গোষ্ঠীর আগ্রাসনে যদি ভাষার গতিপথ পাল্টে যেত, তবে আমাদের এই ভাষা অন্তত তিনশো বছর আগেই আরবি, ফার্সি শব্দের ভেতর বিলুপ্ত হত। পুরো পাকিস্তানি আমল জুড়ে গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমদ প্রমুখ অতি উচ্চমার্গের ইসলামী ভাবধারায় বিগলিত কবিগণ প্রচুর বিজাতীয় উর্দু, ফার্সি ভাষার আমদানি ঘটিয়ে বাংলাকে তাদের ভাষায় ''সহি শুদ্ধ'' করতে চেয়েছেন। বলাই বাহুল্য, সেইসব শব্দ আর ভাবধারা লুপ্ত হয়েছে কোন ফাঁকে, তাঁর হদিস নাই।
শেষকথা কবিগুরুর---
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি
সত্য বলে আমি তবে কথা দিয়ে ঢুকি?
আমার কোন অভিযোগ নেই কারন আমি ভাষার শক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত। আমি আগেই বলেছি
। তবে আমি এই বিকৃতিতে খুবই বিরক্ত। ঢাকা শহুরে মধবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্তদের এই ভাষাটাকে সারা দেশের মানুষের কাছে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেই আমার মনে হয়।
একজন ফারুকী আর রৈসু মিলে একটা ভাষাকে পাল্টে দিবে, এইরকম ভয় পাইয়া থাকলে আর সেইরকম সম্ভাবনার উদয় হইলে মনে হয় সেইরকম ঠুনকো ভাষা বিলুপ্ত হওয়াই ভালো।
আমি ভয় পেয়েছি সেকথা আপনাকে কে বলল।
ঠিকঠাক উচ্চারণ হয় নাই, এই অভিযোগে ধমক দিতে থাকলে মনে হয় আরও অনেকেই ধমক খাবেন।
আমি কাউকে ধমক দেই না। কে কি উচ্চারনে কথা বলল তাতে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই।
চাকমা-মারমা, বিদেশী এরা কেউ ই বাঙ্গালী নয়, কথা হচ্ছে বাঙ্গালীদের নিয়ে।
মন্তব্যে
১। ফারুকি গং দের ভাষা মানে কী? আইসি খাইসি গেসি? আমি সারাজীবন কথ্য ভাষা হিসেবে এই ভাষা ব্যবহার করেছি, এখনো করি, ভবিষ্যতেও করবো। আমার বিভিন্ন অঞ্চলের আত্মীয় বন্ধুরাও এই ভাষা বলে। এটা বিশেষ কোন অঞ্চলের ভাষা নয়, কথ্য বাংলা ভাষা।
২। ঢাকার কিছু মানুষের মুখের ভাষা সবার উপর কে চাপিয়ে দিচ্ছে?
৩। আপনি কী মনে করেন? একজন রংপুরের মানুষ একজন সিলেটির সাথে প্রমিত বাংলায় কথা বলবেন?
প্রমিত বাংলা বইপুস্তকে সবাই পড়ে। নাটকে বইপুস্তকের বাংলা ব্যবহার না করলেই বরং কানের জন্য আরামদায়ক হয়।
১। ফারুকি গং দের ভাষা মানে কী? আইসি খাইসি গেসি? আমি সারাজীবন কথ্য ভাষা হিসেবে এই ভাষা ব্যবহার করেছি, এখনো করি, ভবিষ্যতেও করবো।
আপনি সারাজীবন ধরে ব্যবহার করেছেন, আরো করবেন তাতে আমার কিচ্ছু বলার নেই। আমিই আগেই বলেছি:
আপনার বয়স কত আমি জানি না তবে এই ভাষার উৎপত্তি ৯০ দশকের শেষভাগে ঢাকায়। এর আগে এর তেমনকোন প্রচলন ছিল না। আর এর জনপ্রিয়তা একেবারেই হাল আমলের।
আমার বিভিন্ন অঞ্চলের আত্মীয় বন্ধুরাও এই ভাষা বলে। এটা বিশেষ কোন অঞ্চলের ভাষা নয়, কথ্য বাংলা ভাষা।
না, এখানে আমার দ্বিমত আছে। এটা শুধু ঢাকাতেই ব্যবহূত হয় এবং সেটাও সবজায়গাতে নয়, পুরানো ঢাকার আলাদা ভাষা আছে। আমি এটা জানি কারন পুরো বাংলাদেশ আমার হাতের তালুর মত চেনা, প্রায় সব অন্চলে আমি গিয়েছি। প্রতিটি অন্চলের বাংলায় আলাদা টান আছে।
২। ঢাকার কিছু মানুষের মুখের ভাষা সবার উপর কে চাপিয়ে দিচ্ছে?
নাটক, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপন এগুলি এ ভাষাটি চাপিয়ে দিচ্ছে বলেই আমার কাছে মনে হয়। আপনার তাতে ভিন্নমত থাকতেই পারে।
৩। আপনি কী মনে করেন? একজন রংপুরের মানুষ একজন সিলেটির সাথে প্রমিত বাংলায় কথা বলবেন?
প্রশ্নটা তো আমার ছিল। আমি তো উত্তর আশা করেছিলাম। আপনি কী মনে করেন? রংপুরের নাকি সিলেটের আন্চলিক ভাষায় তারা কথা বলবেন?
আঞ্চলিক ভাষা নাটকে থাকতেই পারে। আর 'প্রমিত' বাংলা সবসময় কথ্যতেও ব্যবহৃত হবে, এমন আশাও বাস্তবতা বিবর্জিত। কিন্তু ইদানীংকার কিছু কিছু নাটকে এমনভাবে বাংলা বলা হয়, সেটা আসলে ভাষার বিকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
বছরখানেক আগে মনের দুঃখে লেখা একটা পোস্টের মন্তব্যে সুমনদা, অপছন্দনীয়দা প্রমুখ কিছু যুক্তি খণ্ডন করেছিলেন। মন্তব্যগুলো দেখতে পারেন। লেখাটা এইখানে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার লেখাতে বর্তমান কিছু নাটকে ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর এসব নাটকে ব্যবহৃত বাংলাকে আমার কাছেও আপনার মতো মনে হয়। নাটকে আঞ্চলিকতার ব্যবহারে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ভাষা বিকৃতির ক্ষেত্রে কষ্ট পায়।
মৌনকুহর ,
লিংকটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বেশ ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
মন্তব্যের নিচে 'জবাব' বলে একটা লিঙ্ক আছে, মন্তব্যের প্রত্যুত্তর সেখান থেকে দিলেই ভালো হয়, নোটিফিকেশন পাই
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আঞ্চলিক ছোঁয়াচ যদি বিকৃত হয়, তাহলে ক্যামনে হবে? একটা কথা সেই অনাদিকাল থেকে সত্য - ভাষা পরিবর্তনশীল। তার পরিবর্তন ঘটবেই। না হলে আপনি এটা বলতেন - ''কাআ তরুবর পঞ্চবিডাল চঞ্চল চিএ পৈঠো কাল।'' ( শুনেছেন এই ভাষা? )। এটা কি ভাষা বলুন তো?
আর বাংলা নাটকের ধারায় অনেক উত্থান পতন আছে। নাটকের মূল স্বরূপ ভাষায় নয় তার পারিপাট্যে। আমি যখন কোন সাঁওতালী মানুষের মুখে তার গ্রামের কথা বলাব তখন এটাই বলাব - হামার ঘরে ভাত লাই। সেটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, বিকৃত নয়।
পুনশ্চঃ ভাষা পরিবর্তনশীল।
ডাকঘর | ছবিঘর
আমি কিন্তু আঞ্চলিক ছোঁয়াচ বিকৃত তা বলিনি। কিছু নাটকে ইদানীং যে ভাষা চালু হয়েছে তা বিকৃত বলছি। এর সাথে আঞ্চলিকতার কোন সম্পর্ক আছে কি?
আমি এই লেখাতে কোথাও আঞ্চলিক ভাষাকে বিকৃত বলার কোন চেষ্টাই করিনি। আমি কেবল এই সময়ের কিছু নাটকে ব্যবহৃত বাংলাকে বোঝাতে চেয়েছি।
আপনার উদাহরণটি যথার্থ কিন্তু আমার লেখা পড়ে কেন আপনার মনে হল যে আমি সেটাকেও বিকৃত বলছি তা আমার বোধোদয় নয়।
মনে করেন পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে আমি লিখলাম বানানগুলো এরকম>
য়ামাদের ভাশার ষুদ্ধতা বলতে য়ামরা কি বুঝী? ষুদ্ধতা বলে আশলেই কি কিছূ য়াছে? ষুদ্ধতা কতটূকূ দর্কার? এর ষিমা কি? ষাধিণতায় কতটূকূ বাণাণ ভূল লেখা যাবে?
তাহলে দেখুন তো পড়তে, বুঝতে আমাদের কি অসুবিধা হচ্ছে কি না?
আবার মনে করেন আমি বললাম>
হালো বন্ধুজ, ক্যমন আচো অল? টুমাদের ডেইজ হাউ গোজ? গুড তো আহ? আইম ভালোথাকিং বেশ! এনি ওয়েজ, লেটস ডু সাম মৌজ-ফানিং আহ? স্টার্ট.........
এখন কেমন শোনাচ্ছে, বোঝাচ্ছে বলুন তো কেউ? এই ভাষা কোন অঞ্চলের আঞ্চলিক? এটাকে ভাষার সময়গত স্বাভাবিক বিবর্তন বলা যায় কি? বা অপভ্রংশ বলবো?
_____________________
Give Her Freedom!
সেই, বেড়ে বলেছেন। আমি কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম তার উত্তর এখনো কেউ দিল না।
আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি অন্য কারো কাছ থেকে আশা করেছিলাম।
এটা অস্বাভাবিক বিবর্তন। কিন্তু দুশ্চিন্তা নাই। ইমাম আনিসুজ্জামান সুপারম্যানের মতো এসব মিউটেশানকে লাইনে এনে আমাদের ভাষার পবিত্রতাকে রক্ষা করে দিবেন। ভাষা পবিত্রতা রক্ষা কমিটি না থাকলে এসব মিউটেশানের ভিড়ে অবলা বাঙালির অভাগিনী ভাষাটার কী দশাটাই না হতো। ভাগ্যিস উনারা ছিলেন, তাই জাতটা রক্ষা পেলো।
প্রশ্নের উত্তর দিতে এসেই কি এসব লিখে গেলেন, গরু হারালে বোধহয় এরকমই হয়।
ভাষা শুদ্ধতাকে যারা গরু-খোঁজা করছেন, তারাই গরু হারিয়ে থাকবেন। আমার কিন্তু ভালোই লাগছে এই ভাষা বিহ্বলতা।
বাইরের দেশে যে কারো নাম ধরে ডাকা তাদের সংস্কৃতি, তবে মনে হয় না আমাদের দেশে এখনো এই সংস্কৃতি চালু হয়েছে । আমরা যখন কাউকে ডাকি, মনে হয় এখনো তার প্রাপ্য শ্রদ্ধাটুকু দিই । সে ক্ষেত্রে মনে "ইমাম আনিসুজ্জামান"রা আরেকটু শ্রদ্ধার দাবি রাখে...নিদেনপক্ষে অগ্রজ লেখক হিসাবে !
ধ্রুবদা, স্যাটায়ার ভালুই পাইলাম।
_____________________
Give Her Freedom!
বেশ কিছুদিন আগে আলু পত্রিকাতে (অবশ্যই তাদের প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতায়) ফারুকি গং এবং অন্যান্যরা এ বিষয়ে তর্ক জুড়ে দিয়েছিল। এই লেখাটি পড়লাম মন্তব্যগুলোও পড়লাম। আমি নিজে যতটুকু বুঝি, ভাষা বহতা নদীর মত। নদী যদি বাঁক নেয় ক্ষতি নেই কিন্তু জোর করে নদীকে বাঁক নেওয়ানোর দরকার নেই।
বাংলা বলতে হবে বাংলার মত। বিদেশি একসেন্ট ব্যবহার করা, তাড়নজাত ধ্বনি জোর করে বা বেশি ব্যবহার করাটা স্টাইল নয় বরং মূর্খতা। করেছি, খেয়েছি, গিয়েছি বলতে আমার নিজের কেমন জানি অস্বস্তি লাগে। করছি, খাইছি, করবানে, যাবানে এগুলোই আমার কানে স্বস্তিদায়ক, বলতেও শুনতেও।
নতুন মন্তব্য করুন