“বিতংস” লেখকের কলম থেকে...
(১)
-“হ্যালো, আমি চিত্রলেখা আর্ট গ্যালারী থেকে নটরাজ দে বলছি। অ্যাকাডেমির লাইব্রেরিয়ান-এর সাথে একটু কথা বলা যাবে প্লিজ?”
-“চীফ্ লাইব্রেরিয়ান অরুণ বসাক বলছি, বলুন কি ব্যাপার?”
-“দেখুন, আমরা একটা ছবির ব্যাপারে একটু ইনফর্মেশান খুঁজছিলাম। আসলে আমাদের এক ক্লায়েন্ট একটা বিশেষ ছবির ব্যাপারে ইন্ক্যোরি করছিলেন। তাই ভাবছিলাম আপনাদের কাছে কোন রেকর্ড আছে কিনা কোন ট্র্যান্জ্যাক্শানের ওই ছবি সংক্রান্ত।”
-“নর্মালি আমাদের সমস্ত কেনাবেচার রেকর্ড থাকে, এখন তো পুরো ডেটাবেস্টাই কম্পিউটারাইজ্ড্, কাজেই মনে হয় আপনার ছবি যদি আমাদের অ্যাকাডেমির থ্রু দিয়ে বেচাকেনা হয়ে থাকে তাহলে কোন অসুবিধা হবে না লোকেট্ করতে। আমাকে অবশ্য কিছু কী-ওয়ার্ড জানাতে হবে যাতে সার্চ-টা ঠিকমত কাস্টমাইজ্ করতে পারি। এই বছরে ট্র্যাঞ্জাক্শান হয়েছে বললেন? কোন মাসে?”
-“ইয়ে... মানে... এই বছর হয়নি। অনেক পুরোন একটা ট্রাঞ্জ্যাক্শান খুঁজছিলাম আরকি, সেইজন্যেই আপনাকে বিরক্ত করছি।”
-“বেশ তো, কোন বছরের বলুন?”
-“ইয়ে... তিনশো বছরের আগের একটা ট্রাঞ্জ্যাক্শান।”
-“সেকি মশাই, আপনি দিনের বেলায় কিছু টেনেছেন ফেনেছেন নাকি? তিনশো বছর আগে আমাদের এই অ্যাকাডেমিই বা কোথায় আর কম্পিউটারাইজ্ড্ ডেটাবেসই বা কৈ? যান, ফালতু সময় নষ্ট করার মত সময় নেই আমার। বললেন চিত্রলেখা আর্ট গ্যালারী থেকে বলছেন, তাই ভাবলাম নিশ্চয়ই জেনুইন ব্যাপার। আচ্ছা নমস্কার।”
-“না, না, ফোনটা কেটে দেবেন না প্লিজ। সত্যিই তিনশো বছরের পুরনো একটা ছবি ট্রেস করতে চাইছি আমরা অন বিহাফ্ অফ্ ওয়ান অফ্ আওয়ার ক্লায়েন্টস্। দেখুন কোলকাতার যত আর্ট গ্যালারি আছে তার মধ্যে অ্যাকাডেমির মত রিসোর্সেস বা প্রসেস তো আর আমাদের মত ছোট-খাটো কোন গ্যালারির নেই। প্লাস আমি জানি কম্পিউটার আসার আগেও আপনাদের রেকর্ড-কিপিং খুব স্ট্রিক্টলি ফলোড্ হত। তা ছাড়া আপনাদের তো গোটা একটা লাইব্রেরিই আছে। সেখানেও যদি কোন পুরনো নথি-টথিতে কোন ট্র্যাঞ্জাক্শানের রেকর্ড থেকে থাকে ওই ছবি সংক্রান্ত...”
-“ও, বুঝেছি। ডিটেলস্ বলুন ছবির।”
-“আমি যতটুকু জানি তা হ’ল ৮৮ ইঞ্চি বাই ৬৬ ইঞ্চির একটা ছবি, সম্ভবত ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই-এর শিশুকন্যা এলিজাবেথের। এলিজাবেথ অবশ্য জন্মের দেড়মাসের মধ্যে মারা যায়, কাজেই অমন বিখ্যাত রাজার রাজকুমারীর আর অন্য কোন পোর্ট্রেইট নেই। আর সেইজন্যেই এর নাকি আন্তর্জাতিক মার্কেটে আকাশছোঁয়া দাম।”
-“আর ছবিটা কে এঁকেছে?”
-“সেটা ঠিক আমার ক্লায়েন্ট বলতে পারেননি। উনি ছবির বর্ণনাটাই শুধু দিতে পেরেছেন।”
-“আচ্ছা, আমি আমার স্টাফেদের বলে রাখব যদি কোন ম্যাচিং রেকর্ড পাওয়া যায়। আপনি আবার এ সপ্তাহের শেষের দিকে একবার ফোন করবেন বা চলে আসবেন অ্যাকাডেমির লাইব্রেরিতে”, ফোনটা রেখে অরুণবাবুর স্বগতোক্তি, “ক্লায়েন্ট বলতে পারেনি না কচু, নির্ঘাত একটা বিখ্যাত নাম বলেছে যেটা এখন ইনি পাঁচকান করতে চাইছেন না আরকি।”
(২)
-“হ্যালো, দিস্ ইজ্ রবার্ট পিটার্সন স্পিকিং ফ্রম লস্-অ্যাঞ্জেলেস। নাট্রাজ আছে?”
-“হ্যাঁ স্যার, বলছি। না স্যার, এখনও কোন হদিশ পাইনি। হ্যাঁ স্যার, আমি অ্যাকাডেমির লাইব্রেরিয়ানের সাথে কথা বলেছি, ওদের কোন রেকর্ড নেই। কালকে একবার এশিয়াটিক সোসাইটিতে গিয়ে খোঁজ নেব।”
-“নাট্রাজ, লিস্ন্ ওয়ান থিং, আমি কিন্তু ক্যালকাটার প্রত্যেকটা আর্ট গ্যালারিকে ফোন করেছিলাম, কাল্পাটারু, মেট্রোপলিটান, বির্লা অ্যাকাডেমি, আর্টিস্টিস, অ্যাকাডেমি অফ্ ফাইন্ আর্টস, নো-বডি প্রোডিউস্ড্ এনি ইনফো, খালি চিত্রলেখা থেকে টুমি বললে যে করে হোক ইনফর্মেশান এনে দেবে, দ্যাটস্ হোয়াই আমি টোমার পেছনে টাইম ইনভেস্ট করছি অ্যান্ড ইনভেস্টেড দ্য ডিপোজিট অফ্ আ থাউজান্ড ডলার্স। ইউ বেটার গিভ্ মি সাম গুড নিউজ সুন্!”
-“সে তো বটেই স্যার। ইয়ে, আমি বলছিলাম কি, আপনি শ্যিওর তো যে ওই ছবিটা কোলকাতাতেই আছে?”
-“অ্যাব্সোলিউট্লি! থ্রী হান্ড্রেড পার্সেন্ট! এটা একটা হিস্টরিক্যাল ফ্যাক্ট যে ফ্র্যান্সের রাজা চতুর্দশ লুই ১৭০০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কোলবার্টকে ‘দ্য ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানি’র চীফ্ হিসেবে অ্যাপয়েন্ট করে যাতে ব্রিটিশ আর ডাচ্ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলোর সাথে কম্পিটিশান করা যায় টোমাডের ইন্ডিয়ায় ট্রেডিং-এ। ১৭১০ সালে কোম্পানিটা যখন দেউলিয়া হওয়ার জোগাড়, তখন প্যারিসের ল্যুভ্ থেকে এই পেইন্টিংটা ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানিকে রাজা নিজে দেন, যাতে এটা বিক্রি করে কিছুটা ধার দেনা কোম্পানি শোধ করতে পারে ব্যাঙ্ক্রাপ্টসি বাঁচাতে। পেইন্টিংটা ইন্ডিয়ায় পৌঁছয়, বাট মুঘাল এম্পারার ঔরংজেব তখন আল্রেডি বলে দিয়েছে যে কোন পেইন্টিং-এ কোন লিভিং থিং আঁকা যাবে না, কাজেই এই পোর্ট্রেইটটা সেই সময়ের কোন কালেক্টার প্রকাশ্যে কিনতে সাহস পায়না। তবে এই অবধি রেকর্ডেড আছে যে এই ছবিটা বেঙ্গলের শান্ডান্নাগার বলে একটা সিটির একজন জামিন্ডার কিনে নিয়েছিল। এর পরেই আর কোন ইউরোপিয়ান ক্রনিক্ল-এ এই ছবির আর কোন উল্লেখ নেই। অ্যান্ড দ্যাটস্ হোঅ্যা্র দ্য ট্রেইল এন্ড্স্!”
-“ও হরি, আগে বলবেন তো, চন্দননগরে তো এখনও আমি খোঁজই করিনি স্যার! তবে স্যার আপনি যেরকম বলেছেন, আমি কোথাও পেইন্টারের নামটা উচ্চারণ করছি না।”
-“দ্যাটস্ রাইট। ফেমাস এইটিন্থ সেঞ্চুরি পেইন্টার অ্যাব্রাহাম বোসসের নামটা আপাতত গোপন থাকাই ভাল।”
(৩)
নটরাজের রাতের ঘুম উড়ে গেছে। যেদিন থেকে এই মার্কিন ধনকুবেরের সাথে এই অ্যাব্রাহামের ছবিটা নিয়ে কথাবার্তা চলছে, সেদিন থেকেই নটরাজ আর স্থির থাকতে পারছে না। তিনশ বছরের পুরনো ছবি? কোথা থেকে শুরু করবে? লাইব্রেরি গিয়ে নিজে দেখেছে, কোলকাতার আর্ট সমঝদারদের জিজ্ঞাসা করেছে এরকম কোন পেইন্টিং-এর কথা কেউ শুনেছে বা দেখেছে কিনা, কিন্তু কোন ফল হয়নি। যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। ছেলেবেলায় ইতিহাসে ইস্ট ইন্ডিয়া ট্রেডিং কোম্পানির কথা পড়েছে কিন্তু ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়া ট্রেডিং কোম্পানির কথা কস্মিনকালেও শোনেনি। অবশ্য চন্দননগরটা যখন সাহেব বলেছে তখন মনে তো হয় ওনার রিসার্চে কোন গলদ নেই। ওটা তো এই পঞ্চাশ-ষাট বছর আগেও ফরাসীদের কলোনি ছিল। ফরাসি ছবি, ফরাসি কলোনি... এই হিসেবটা বেশ মিলে যাচ্ছে। কিন্তু তিনশো বছর ধরে ওটা চন্দননগরে পড়ে রয়েছে, এটাই ঠিক মিলছে না! যদিও সাহেব একটা অদ্ভূত যুক্তি দিয়েছেন, বলেছেন যে এই ছবি ন্যাশানাল বা ইন্টার্ন্যাশানাল মার্কেটে কেনাবেচা হ’লে তার রেকর্ড ন্যাশানাল-ইন্টার্ন্যাশানাল কোথাও না কোথাও থাকতই। প্লাস প্রেসও হৈ-হৈ ফেলে দিত। এসব যখন হয়নি, সত্যিই যখন চন্দননগরে এসে ট্রেইলটা থেমে গেছে, তার মানে হয়ত এখনও কোন সাবেকি পরিবারের এয়ারলুম হয়ে চিলেকোঠায় ধূলো জমছে। সাহেবেরও তাই মত। পাছে কোন মিউজিয়াম হদিশ পায়, তাই এই পেইন্টিং-এর ব্যাপারে খোলসা করে কাউকে কিছু বলা বারণ। নটরাজের মাঝে মাঝে মনে হয় সাহেব তাকেও কিছু ডিটেলস্ চেপে যাছে, এতটাই সিক্রেটিভ এই ব্যাপারে। সে নিজেও তো চিত্রলেখা গ্যালারিটা প্রায় বছর দশেক হ’ল খুলেছে। ইন্টার্ন্যাশানাল মার্কেট বলতে সিঙ্গাপুরের সাথে কেনাবেচা হয়েছে। কিন্তু ইউরোপ-অ্যামেরিকার ডীলার বা প্রাইভেট পার্টির সাথে লেনদেনের সু্যোগ হয়নি। শুনেছে এশিয়ান কালেক্টারদের যত সহজে ভ্যালুয়েশান নিয়ে ঘোল খাওয়ানো যায়, ওসব দেশের ঝানু পার্টিদের যায়না। আর্টের বাজারের যত নোংরামি, ঠগ্বাজি, সে সব নটরাজের ভালোই জানা আছে। নটরাজ পোড় খাওয়া বিজনেস্ম্যান। ভ্যালুয়েশান, রেস্টোরেশান, সেলস্, মার্কেটিং এরকম অনেক ডিপার্ট্মেন্টের স্টাফদের বেছে নিয়েছে আর্ট কলেজ থেকে কিন্তু আর্টের ব্যাপারে নিজে ছুঁচোর মতো অন্ধ। অবশ্য নতুন আর্টিস্টদের প্রায় মুফতে কাজ করিয়ে নেওয়া, দরকার মত হুসেইনের একটা ছবিকে চার জায়গায় ‘ওরিজিনাল’ বলে বেচে দেওয়া, ইত্যদি করতে কোন অ্যাকাডেমিক বিদ্যে লাগে না। সাহেব যখন বলল অন্য সবকটা আর্ট গ্যালারি ফেল মেরেছে এই ছবির ব্যাপারে, ওর জেদ চেপে গেল। যেভাবে হোক এই ছবি খুঁজে বার করতে হবে। আই-এস-ডি করে সাহেব এমনি এমনি নিশ্চয়ই খোশ-গল্প করার জন্য ফোন করছে না। এই সব প্রাইভেট আর্ট কালেকটারদের কথা শুধু গল্পে পড়েছে, কখনও মোলাকাত হবে স্বপ্নেও ভাবেনি। আর এখন সেইরকম একজন ওর ক্লায়েন্ট। পে-প্যালের মাধ্যমে পেমেন্ট পাঠিয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা, স্রেফ রিটেইনার হিসেবে।
এই ফোনটার ব্যাপারে কর্মচারীদের কিছু বলেনি। যদি সত্যিই সাহেবের কথা ঠিক হয়, ছবিটা পাওয়া গেলে সাহেবের ‘টু মিলিয়ান ডলার’ ভ্যালুয়েশান যদি সত্যিই ঠিক হয়, আর ‘ফাইন্ডিং ফী’ হিসেবে সাহেব যদি নটরাজকে ৫% কমিশান দেয়, তাহলেই তো হাতে গরম ৫০ লাখ টাকা! কর্মচারীদের বললে রক্ষা আছে? একে তো মাইনে বাড়াতে বলে ঘ্যানঘ্যান শুরু করবে, তার ওপর কে কোথায় নিজেই খোঁজ টোঁজ করে হয়ত সাহেব-কে নিজেই ব্যাক্-ডোর দিয়ে বেচে দিয়ে পুরো টাকাটা পকেটস্থ করে ফেলল...ওরেব্বাবা! নানা, কোন মতেই কথাটা পাঁচকান করা যাবেনা।
চন্দননগরের তুলিকলম আর্ট গ্যালারিতে একবার ফোন করলে কেমন হয়? ইন ফ্যাক্ট, একটাই তো আর্ট গ্যালারি আছে ওই শহরে। হালকা করে জেনে নিতে হবে ওখানে কেউ এই ছবি নিয়ে কখনও কিছু শুনেছে কিনা। প্লাস লোকাল লোকজন এটা বলতে পারবে, ওখানকার বনেদী পরিবার কি কি আছে, কারা আগে জমিদার ছিল, এখন তাদের আর্থিক অবস্থা কি...ইত্যাদি।
-“হ্যালো, আমি চিত্রলেখা আর্ট গ্যালারী থেকে নটরাজ দে বলছি। তুলিকলমের প্রোপ্রাইটার ভাস্কর সেনের সাথে একটু কথা বলা যাবে?”
-“বলছি। বলুন স্যার। কি করতে পারি আপনার জন্যে?”
-“আমরা একটা ছবি খুঁজছি, যেটা আমাদের ধারণা চন্দননগরে আছে। একটা ছোট্ট বাচ্চার পোর্ট্রেইট, এই এক মাসের বাচ্চা। কিন্তু খুব পুরনো, প্রায় তিনশো বছরেরও আগেকার। বেশ বড় পেইন্টিং। সাড়ে সাত ফুট বাই সাড়ে ছ ফুট। কিছু জানেন এটার ব্যাপারে? আমার এক ক্লায়েন্ট পঞ্চাশ হাজার টাকায় ছবিটা কিনতে ইচ্ছুক, আপনি খুঁজে দিলে আমি তার ২০%, অর্থাৎ দশ হাজার টাকা দেব!”
-“ওরেব্বাবা, সেতো ডাইনোসরের যুগের আঁকা! আপনি খবর পেলেন কোথা থেকে? কার আঁকা? বাঙ্গালি কেউ নাকি অবাঙ্গালি?”
নটরাজ মনে মনে ভাবল, হায়রে এ এখোন বাঙ্গালি-অবাঙ্গালিতেই আটকে আছে, মুখে বলল “না বাঙ্গালি নয় বলেই আমাদের কাছে খবর আছে। এখানে কোন সাবেকী জমিদার বাড়ি আছে? অনেকদিনের পুরনো তো, হয়ত এখনও কোন চিলেকোঠায় পড়ে রয়েছে, আপনি লোকাল বলে জিজ্ঞাসা করছি আরকি।”
-“না স্যার, চন্দননগরে কোন জমিদার বাড়িই নেই। তবু আমি একটু খোঁজ খবর নেব। কার পেইন্টিং জানতে পারলে ভালো হত। যাইহোক, আপনি একবার নেক্সট ফ্রাইডে ফোন করুন, বা আপনার নাম্বারটা বলুন, আমি রিং ব্যাক করব। রাখছি এখন।”
(৪)
-“হ্যাঁরে অমিত, ভাস্কর বলছি। আমাদের এখানে জমিদার বাড়ি কিছু আছে ব’লে শুনেছিস? আজকে কোল্কাতার একটা বিখ্যাত আর্ট গ্যালারি থেকে ফোন এসেছিল, একটা তিনশো বছরের ছবি খুঁজছিল, বলল যে কোন পুরনো জমিদার বাড়ি-ফাড়িতে থাকতে পারে। কথাটা খুব একটা খারাপ বলেনি।”
-“আরে এই ভুলটা আনেকেই করে। ভাবে যে চন্দননগরে জমিদারবাড়ি আছে অনেকগুলো। আসলে তো তুই যে সময়ের কথা বলছিস সেই সময় জমিদাররা ছিল আশপাশের বাঁশবেড়িয়া আর শেওড়াফুলিতে। আমাদের চন্দননগরের যে বিখ্যাত পাতাল-বাড়ি, যা দেখে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত ফিদা হয়ে গেছিল, তাও কিন্তু বাঁশবেড়ের জমিদারদের তৈরি। কিন্তু তোর ছবির গল্পটা কিন্তু বেশ থ্রিলিং! কার আঁকা? ভ্যান্ গগ না পিকাসো? দেখ গে, হয়ত একটা ইন্টার্ন্যাশানাল কাভারেজ পাবি।”
-“আঃ বাজে বকিস না। জানিস তো কত কাঠখড় পুড়িয়ে গ্যালারিটা শুরু করলাম। বাবা তো এখনও কমার্স ছেরে আর্ট কলেজে জয়েন করার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, আমার গ্যালারির ছবি কিন্তু কোলকাতা দিল্লী এদিক ওদিক মাসে একটা দুটো যাচ্ছেই। অনেক ট্যালেন্ট আছে আমাদের এই শহরে। একটাই প্রব্লেম - হাতে এরেকটু ক্যাপিটাল এলে গ্যালারিটা আরেকটু সাজাতে পারতাম, বাডিং আর্টিস্টদের বেশী পেমেন্ট করতে পারতাম, আর ছবিগুলো ভালো করে মার্কেটিং করতে পারতাম। সেসব কিছুই পারিনা...”
-“নিজে আঁকিস এখনো? নাকি সেসবও এই গ্যালারির চক্করে গেছে? যাইহোক, তুই একবার সূর্যকে ফোন কর। ওর মামাবাড়ি তো শেওড়াফুলিতে, হয়ত কিছু জমিদারবাড়ির খবর দিতে পারবে।”
-“হ্যাঁ, তাই করব। তোর ইতিহাসে গ্র্যাজুয়েশানটা কাজে লাগল। অবশ্য চালাচ্ছিস তো বাবার সোনার দোকানটা!”
ফোন রেখে ভাস্কর ব্যাপারটা নিয়ে একটু তলিয়ে ভাবতে চেষ্টা করল। তিনশো বছরের পুরনো পোর্ট্রেইট। কোলকাতার চিত্রলেখা গ্যালারির ফোন। আর্টিস্ট চেপে যাওয়া। কার ছবি হতে পারে? নটরাজবাবুর থেকে আরো কিছু না জানলে এগোনো অসম্ভব।
সূর্যকে ফোন করে একটা লাভ হ’ল। শেওড়াফুলির রায়চৌধুরীদের বাড়ির কথা শুনল। জানা গেল এখন জমিও নেই, জমিদারিও নেই, সবাই চাকুরিজীবি। কাকতালীয়ভাবে এও জানল যে ওদের বাড়ির মেয়ে কাকলির সাথে সূর্যর বিয়ের ঠিক হয়েছে। সূর্য আশ্বাস দিল যে এখন ওই বাড়িতে ওর অবারিতদ্বার। কাজেই যেকোন দিন ভাস্কর এসে কাকলির বাবার সাথে কথা বলে দেখতে পারে।
রবিবার সকালে জলখাবারের পর ভাস্কর হাজির হল কাকলিদের বাড়ি সূর্যর সাথে। সূর্য আর কাকলি অবশ্য মিনিট দশেক গল্প করে উঠে গেল বাগানের দিকে। ভাস্কর কাকলির বাবা অগ্নিবেশবাবুর সাথে এই নিয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু করল। খুবই কম ডিটেলস্। অগ্নিবেশবাবু বললেন যে এই বাড়িটা এতোই পুরনো আর এত তালাবন্ধ ঘর, চিলেকোঠা, ইত্যাদি আছে, যে একটা ছবি থাকা কিছুমাত্র আশ্চর্যের নয়। মেইন্টেন্যান্সের নাইট্মেয়ার! যাই হোক, কথা দিলেন, এর মধ্যে লোক লাগিয়ে একবার কয়েকটা ঘরের ‘জঞ্জাল’ সাফ করবেন, আর কোন বড় পোর্ট্রেইট দেখলে ভাস্করকে ফোন করে জানাবেন।
(৫)
-“হ্যালো ভাস্কর? আমি অগ্নিবেশ রায়চৌধুরী বলছি। কাকলির বাবা।”
-“হ্যাঁ, বলুন মেসোমশাই, কি খবর? কিছু পেলেন?”
-“একটা বড় ছবি পেয়েছি। তুমি যেরকম বললে সেইরকম সাইজ। কিন্তু আনফর্চুনেটলি ছবিটা আগে একটা রান্নাঘরে ঝোলানো ছিল দীর্ঘদিন। এখন ওই রান্নাঘরটা ইউজ হয়না, কিন্তু আগে আমার ঠাকুর্দার আমলেও হত। কাজেই বুঝতেই পারছ, বাঙ্গালিবাড়ির আড়াইশো বছরের সম্বারের ঝাঁঝে আর সরষের তেলের মহিমায় ছবিটার আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ইন ফ্যাক্ট একদম কালো একটা ছবি দেখা যাচ্ছে, বাচ্চা না বুড়ো না গন্ডার না দাঁড়কাক বোঝার উপায় নেই।”
-“দারুণ খবর, আমি আসছি মেসোমশাই। ছবি কালো হয়ে যাওয়া নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না, আর্ট কলেজে আমাদের রেস্টোরেশান টেকনিকের ওপর পুরো একটা সাব্জেক্ট পড়তে হয়েছে, কাজেই ও আমি বুঝে নেব।”
ভাস্কর উর্ধশ্বাসে পৌঁছল কাকলিদের বাড়ি। ছবিটা বিশাল, ফ্রেম এবং ছবি দুইয়েরই একই দশা। যাইহোক, অগ্নিবেশবাবু নিজের গাড়ি করে ভাস্করের গ্যালারিতে ছবিটা পৌঁছে দিয়ে গেলেন। ভাস্কর খুব সাবধানে প্রথমে ফ্রেম থেকে ছবিটা ‘আন্মাউন্ট’ করল। বিশাল ফ্রেমটাকে গ্যালারির পেছনদিকের সিঁড়ির তলায় রেখে এল। তারপর শুরু করল সারা সপ্তাহ ধরে ছবিটার রেস্টোরেশান।
কিন্তু এক সপ্তাহ পরে যা বেরোল, তা হ’ল একটা অতি সাধারণ ফুলের তোড়া! ভাস্করের মনের অবস্থা দেখার মত। সারা সপ্তাহের মেহনত মাঠে মারা গেল! ভাবল এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এত সহজে কি আর তিনশো বছরের হারানো একটা ছবি এত সহজে বেরিয়ে যাবে? মোটা মোটা পাপড়ির ফুলগুলো দেখে যে কারও এত বিতৃষ্ণা আসে, এই প্রথম নিজে জানতে পারল। হঠাৎ একটা জিনিস দেখে একটু খটকা লাগল ওর মনে। রঙটা খুব পুরু মনে হচ্ছে। আর্টের জগতে এরকম হামেশাই হয় যে একটা ভালো ছবির ওপর কোন থার্ড-ক্লাস পেইন্টার হয়ত নিজের একটা কুচ্ছিত ছবি এঁকে ফেলল। সেরকম কিছু হয়নি তো? আধুনিক প্রযুক্তিতে এখন ‘স্টিরিওরেডিওগ্র্যাফিক এক্স-রে’ করে ক্যানভাস, পেইন্ট, এবং পেইন্টিং-এর বিভিন্ন স্তর ধরতে পারা যায়। খরচ সাপেক্ষ, কিন্তু রিস্ক নিয়ে কি একবার দেখবে?
যেই ভাবা, সেই কাজ। আমিতের ওয়াগন-আর নিয়ে চলল কোলকাতায়। লাহা অ্যান্ড সন্স্ বেশ পুরনো দোকান যেখানে কম খরচে ভালো এক্স-রে করা যায় ছবির। রেডিওলাইট এক্স-রে মেশিনে ‘গ্রেঞ্জ রে’ ইউজ করে বিশেষ কিলো-ভোল্টেজ অ্যাপ্লাই করে যে এক্স-রে প্লেটটা অবশেষে ওদের হাতে পৌঁছল, তাতে দেখা গেল, একটি নবজাতক শুয়ে আছে!
(৬)
-“হ্যালো নটরাজবাবু, আমি তুলিকলম থেকে ভাস্কর সেন বলছি। ছবিটা পেয়েছি। আমার গ্যালারিতে আছে। কাল আসতে পারেন। আমি এর মধ্যে ফ্রেমটা মাউন্টিং করে রাখব। আন্মাউন্টিং করে প্রাথমিক রেস্টরেশান আর এক্স-রে করতে হয়েছিল কিনা, তাই। এনিওয়ে, দুর্ভাগ্যবশত ছবির ওপরে আবার করে কেউ আরেকটা অয়েল-পেইন্টিং করে দিয়েছিল, কিন্তু আমি ‘স্টিরিওরেডিওগ্র্যাফিক এক্স-রে করে দেখেছি যে তার নিচের লেয়ারের ছবিটা একটি নবজাতকের পোর্ট্রেইট। আপনি কালকে এসে ছবিটা নিয়ে যেতে পারেন, তবে, আপনাকে খুব থরলি রেস্টরেশান করাতে হবে, পুরো ওপরের লেয়ারটাকে তুলে ফেলতে হবে নিচের লেয়ারটাকে কোনভাবেই ডিস্টার্ব না করে।”
-“কোথা থেকে পেলেন?”
-“আমার বন্ধুর হবু শ্বশুরবাড়িতে ছিল, শেওড়াফুলিতে।”
-“আর কে কে জানে এই ছবির ব্যাপারে?”
-“সেরকম কেউ না। আমার তো আর স্যার আপনাদের মত বিশাল গ্যালারি নয়, আমিই মালিক, আমিই কর্মচারি, আমিই ক্লার্ক।”
-“ঠিক আছে, কাল দেখা হবে। এগারোটায় মীট করব আপনার সাথে।”
(৭)
-“হ্যালো মেসোমশাই? আমি ভাস্কর বলছি। একটা ব্যাড নিউজ আছে। কাল রাতে আমার গ্যালারির জানলা ভেঙ্গে আপনার ছবিটা চুরি হয়ে গেছে। ফ্রেমটা বাড়ি এনে রেখেছিলাম। ছবিটা গ্যালারিতেই ছিল। আজ-ই কলকাতা থেকে নট্রাজবাবুর ছবিটা কিনতে আসার কথা। দশ হাজার টাকা অফার করেছিলেন ছবিটার জন্য। কিভাবে আপনার কাছে মুখ দেখাব ভেবে পাচ্ছি না।“
-“তুমি তো আচ্ছা পাগল। ঐ কালিমাখা গন্ডার না কিসের ছবি চুরি গেছে বলে এত দুঃখ পাচ্ছ কেন হে?যা গেছে ও নিয়ে আর ভেবো না, আমরা তো জানতামও না যে ওটা বাড়িতে আছে। তুমি বরং তোমার নিজের আঁকা একটা ভালো ছবি ওই ফ্রেমে মাউন্ট করে আমায় দিয়ে যেও।“
বিকেলে সূর্য, অমিত দুজনেই ভাস্করের গ্যালারিতে ঢুঁ মারতে এল ছবি চুরির খবর পেয়ে। ভাস্কর বলল “পুলিশে ডায়েরি করেছি তবে লাভ হবে বলে মনে হয় না।“
অমিত জিজ্ঞেস করল “নটরাজবাবুর রি-অ্যাকশন কি?”
ভাস্কর বলল “সেটা একটু স্ট্রেঞ্জ। ছবিটা ছুরি গেছে শুনে জাস্ট ব্যাড লাক বলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিলেন। অথচ উনিও তো ভালই দাঁও মারতেন ছবিটে বেচে।“
সূর্য বলল “দেখ্ কাকলির বাবা আর্টের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ, প্লাস এই ছবি বিক্রির টাকাটা ওঁর কাছে পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা। তাই ওঁর রি-অ্যাকশনটা স্বাভাবিক। কিন্তু নটরাজবাবু হলেন আর্ট ডিলার, ছবি বেছে খান। এই দাঁওটা ফস্কে যেতে ওঁর আপশোষ হচ্ছে না? আমার মনে হচ্ছে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আমার মনে হয় উনি কোনোভাবে ছবিটা হাতে পেয়েছেন। চুরিটা ওঁর হলেও আশ্চর্য হব না।”
ভাস্কর বিষন্ন গলায় বলল “কিন্তু তুই কিছুই প্রমান করতে পারবি না। এরা হল ঝানু লোক। চুরি জোচ্চুরি বাঁ হাতের খেল।”
কথার মাঝখানে ভাস্করের মা চা নিয়ে এলেন। ভাস্করকে বললেন “সিঁড়ির তলায় কি জগদ্দল একটা ফ্রেম রেখেছিস? ওটা সরাবি? না করুনাকে দিয়ে দেব? বলছিল কেরোসিন পাচ্ছে না, ওই ফ্রেমটা পেলে উনান ধরাতে সুবিধা হবে।”
ভাস্কর বলল “না না উনান ধরাবে কি? ওটা অগ্নিবেশবাবুকে ফেরত দিতে হবে।” তারপর বন্ধুদের বলল “ফ্রেমটা কিন্তু দারুণ, যাই বলিস। পরিস্কার করার পর খুব জৌলুস খুলেছে । আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে ফ্রেমটাও একেবারে ফেলনা না। বেশ দামীই হবে।”
-“হ্যাঁ, তা আর হবে না, কাঠ তো নয়, দেখবি সোনার ফ্রেম! দেখবি ছবির থেকে বেশী দাম পেয়ে গেলি হয়ত ফ্রেম বেচে, হাঃ হাঃ হাঃ”, অমিত হাসিতে ফেটে পড়ল। “আসলে তুই সত্যি করে বল, তোকেও একটা অ্যাড্ভেঞ্চারের নেশায় পেয়েছে, তাই ভাবছিস ছবি না সহি, ফ্রেমই সহি।”
-“নারে, একবার ফ্রেমটা দেখবি আয়। কি অসম্ভব সুন্দর কারুকাজ। ফ্রেমটার চারধারে লতিয়ে একটা সাপ, একেবারে জীবন্ত, আঙ্গুরলতা আর আঙ্গুরের থোকা একেবারে লাইভ্লি, ওপরে একটা ঈগল বসে আছে, তুই ভাবতে পারবি না কিরকম জ্যান্ত, নিচে পুরো ঝিনুকের কাজ, কুড়ি ইঞ্চির বর্ডার চারদিকে, বুঝতে পারছিস কত মোটা? আমি বই বা ম্যাগাজিনের ছবিতেও কোনদিন এত যত্ন করে বানানো এত জাঁকজমকপূর্ণ ফ্রেম দেখিনি রে। সাপের চামড়া, ঈগলের পালক, পাতার শিড়া সবকিছুই জাস্ট এক্সট্রা-অর্ডিনারি! আমার মনে হচ্ছে এটা কোন জগদবিখ্যাত ‘মাস্টার’এর হাতের কাজ!”
ভাস্কর ফ্রেমটা সিঁড়ির তলা থেকে নিয়ে এল। গোধুলির রোদ পড়ে ফ্রেমটা চকচক করছে। ফ্রেমটা দেখে অমিত আর সূর্যের তাক লেগে গেল। অমিতের একটা খট্কা লাগল, ফ্রেমটা কাঠের, কিন্তু বাবার সোনার দোকানটা বছরখানেক চালাচ্ছে বলে চোখে দেখার অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে যেন ফ্রেমটা সোনার জলে গিলটি করা। ভাস্করকে বললও সে কথা। তিন বন্ধুই তাজ্জব বনে গেল। কত দাম হতে পারে ফ্রেমটার? তার ওপর যদি সত্যিই কোন ‘মাস্টারের’ হাতের কাজ হয়, তাহলে?
সূর্যের মাথায় অনেক ক্যালকুলেশান চলছিল। হঠাৎ বলে বসল “ফ্রেমটা ভাল কাঠের, উনানে দিলে ভালই আঁচ হবে।“
বাকি দুই বন্ধু চমকে ওর দিকে তাকাতে সূর্য বলল “ছবি চুরিটা এভাবে হজম করার মানে হয় না। শোন একটা প্ল্যান মাথায় এসেছে...”
(৮)
-“ইউ আর অ্যান ইডিয়ট্, ডু ইয়ু নো দ্যাট?”, নটরাজের হাতে ছবিটা দেখে পিটার্সন একেবারে অগ্নিশর্মা! লস্-অ্যাঞ্জেলেস থেকে ফ্লাই করে দমদমে পৌঁছে হোটেলে চেক্-ইন না করে সোজা ছুটেছিলেন চিত্রলেখা গ্যালারীতে।
-“কেন স্যার? আপনি যা বলেছেন, এগ্জ্যাক্টলি সেই ছবিই। আমার কত খরচ হয়েছে জানেন এটা খুঁজে বার করতে? আর তারপর রেস্টোরেশান করতেই তো হাজার হাজার টাকা বেরিয়ে গেল!”
-“আই ওয়ান্টেড দ্য ফুল্ ওয়ার্ক অফ্ আর্ট, নট জাস্ট দ্য পেইন্টিং!”
-“ও ফ্রেমের কথা বলছেন তো, সে আমি দামী একটা ফ্রেমে মাউন্ট করে দেব’খন।”
-“শাট্ আপ্! ওরিজিনাল ফ্রেমটা কোথায়? এই অ্যাব্রাহামের পেইন্টিং-এর যা ভ্যাল্যু, তার পাঁচগুন ভ্যাল্যু ফ্রেমটার! কোথা থেকে এনেছ ছবিটা? এখুনি যাও, দেখো ফ্রেমটা আছে কিনা। আই শ্যাল কাম উইথ ইউ।”
নটরাজ জানত যে ডাকাতির পর তুলিকলমে যাওয়াটা বিপজ্জনক, তাও টাকার অঙ্কটা এতটাই লোভনীয়, যে লজ্জা, ঘেন্না, ভয় ত্যাগ করে সাহেবের সাথে পৌঁছল ভাস্করের গ্যালারিতে।
ওরা আসছে খবর পেয়ে অমিত আর সূর্যও এসে জুটেছে। ভাস্কর আকাশ থেকে পড়ে বলল “ফ্রেম দিয়ে কি করবেন ছবিটাই তো চুরি গেছে আপনি বলেননি সাহেবকে?”
পিটার্সন বলল, “লুক মিস্টার আই ওয়ান্ট দ্য পেইন্টিং উইথ দ্য ওরিজিন্যাল ফ্রেম। নাট্রাজ গেভ মি দ্যা পেইন্টিং বাট দ্যাট ওয়াজ নট ওয়ার্থ ফর আ ট্রিপ টু ইন্ডিয়া। ইফ ইউ হ্যাভ দ্যা ফ্রেম, গিভ ইট টু মি, আই শ্যাল পে ইউ থাউসেন্ড ডলার।”
ভাস্কর বলল “আমি তো জানতাম না ফ্রেমটা এত দামী। ভেবেছিলাম দামি হলে ওটাও চুরি যেত” বলে বাঁকা চোখে নটরাজবাবুর দিকে তাকাল। তারপর বলল “ওটা তো বোধহয় ফেলেই দিয়েছি। দাঁড়ান দেখছি।” বাড়ির ভিতর ঢুকে বলল “করুণাদি! ও করুণাদি, একবার আসবে এদিকে।”
করুণা এলে ভাস্কর জিজ্ঞেস করল “কাল যে বড় ফ্রেমটা দিলাম তোমাকে আছে এখোনো?”
করুণা একগাল হেসে বলল “সে কি আর আছে নাকি? কালকেই কেটেকুটে উনানে ঢুকিয়ে দিয়েছি। খুব ভাল কাঠ দাদাবাবু। গনগনে আঁচ হয়েছিল কাল।”
কথাটা নটরাজ ভয়ে ভয়ে পিটার্সনকে অনুবাদ করে বলতেই সাহেব আক্ষরিকভাবেই লাফিয়ে উঠে নিজের চুল ছিঁড়তে লাগল। বোমার মত ফেটে পড়ে বলল, “ইটস আ ওয়ার্ক অফ মাস্টার ওপেনর্ড!! অ্যান্ড ইউ সিলি পিপল এন্জয়েড বারবিকিউ উইথ গ্র্যান্ড-মাস্টার ওপ্পেনর্ডস্ ওয়ার্ক?ইটস অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম টু ডেস্ট্রয় সাচ অ্যান ইন্ভ্যালুয়েব্ল মাস্টারপিস! ডু ইউ হীয়ার মি?”
সূর্য এগিয়ে এসে বলল, “ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমের হিসাব পড়ে হবে। আগে ন্যাশনাল ক্রাইমের ঠ্যালা সামলান। নটরাজবাবু, এই সাহেব কিন্তু স্বীকার করেছেন ছবিটা আপনি ওর হাতে তুলে দিয়েছেন। কাজেই চুরিটা যে আপনার কাজ সেটা দিনের আলোর মত পরিস্কার। এখন আমরা পুলিশ ডাকব না মানে মানে ছবির দাম পঞ্চাশ হাজার টাকা মিটিয়ে দেবেন?”
নটরাজবাবুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। শুকনো গলায় বললেন “শুনলেন তো সাহেব বলছেন ফ্রেমটা না পেলে উনি ছবিটা কিনবেন না। তা হলে আর আপনাদের পেমেন্ট করব কোথা থেকে?”
ভাস্কর বলল “সে জন্যও আপনি দায়ী। সোজা পথে ছবিটা কিনে নিলে ফ্রেম শুদ্ধই পেতেন। টাকাটা ছাড়ুন। ওটা আপনার জুয়াচুরির সাজা। আমরা পুলিশে গেলে কিন্তু আপনার ব্যাবসা লাটে উঠবে।”
পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক লিখে শুকনো মুখে নটরাজবাবু বেরিয়ে গেলেন। পিটার্সন তখোনো ফ্রেমের শোকে মূহ্যমান। বিড়বিড় করে বোধহয় সকলকে গালি দিতে দিতে গাড়িতে উঠলেন।
(৯)
পরের দিন সন্ধ্যাবেলা অগ্নিবেশবাবুর ড্রয়িংরুমে জড় হয়েছে অগ্নিবেশবাবু, কাকলি, সূর্য, অমিত আর ভাস্কর। ভাস্কর নটরাজের দেওয়া পঞ্চাশ হাজারের চেকটা অগ্নিবেশবাবুর হাতে দিয়ে বলল, “এটা ছবির দাম। মন্দ নয় আমি মোটামুটি খবর নিয়েছি ছবিটার এর বেশী দাম নয়। আসল দামটা হল ফ্রেমের। এরকম অদ্ভুত ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না। ফ্রেমের দাম ছবির থেকে অনেক অনেক গুন বেশী। পিটার্সন আসলে ফ্রেমটাই খুঁজছিল। কিন্তু ব্যাপারটা ফাঁস করেনি পাছে জানাজানি হলে দামটা চড়ে যায় বা অন্য কেউ হাতিয়ে নেয়। সেদিন আমার গ্যলারিতে ফ্রেমটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শুনে রাগের মাথায় ওপ্পেনর্ডের নামটা করে বসে।”
কাকলি জিজ্ঞেস করল। “ওপ্পেনর্ড লোকটা কে? কোন সময়কার?”
ভাস্কর বলল, ‘গিল-মারী ওপেনর্ড’! ১৭০০ খৃষ্টাব্দের প্যারিসের সবথেকে বিখ্যাত ডিজাইনার। রোকোকো স্টাইলের জনক। বরমিনির সাথে একে এক আসনে বসানো হয়। এরা খানদানি শিল্পী। এঁর বাবাও ফ্রান্সের রাজার প্রিয়পাত্র ছিলেন। বাপ-বেটা কোথায় থাকতেন জানেন? প্যারিসের যে ‘ল্যুভার’ মিউজিয়াম বিশ্ববিখ্যাত, তখন তো সেটা মিউজিয়াম ছিল না, ছিল রাজপ্রাসাদ, তো সেই রাজপ্রাসাদে এঁদের থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন স্বয়ং ফ্রান্সের সম্রাট। এই ওপ্পেনর্ড ইতালি থেকে ট্রেইনিং নিয়েছিলেন আর ফ্রান্সে ফেরা মাত্র রাজা এঁকে ‘ডিরেক্টার জেনারেল অফ্ বিল্ডিং’ উপাধি দিয়েছিলেন। এখনকার দিনে আমরা যে ইন্টিরিয়ার ডিজাইন বলি, উনি সেই ইন্টিরিয়ার ডিজাইনারদের রবীন্দ্রনাথ, এরকম বলতে পারেন। রাজপ্রাসাদের দেওয়ালের কাঠের কাজ থেকে শুরু করে ফার্নিচার, ঝাড়-লন্ঠন, ছবির ফ্রেম, মোমদান, চিমনির ডিজাইন, দেওয়ালঘড়ি, আয়না, সমস্ত কিছু এঁর ক্রিয়েটিভ মাইন্ডের ফসল। রাজপ্রাসাদ বা ডিউক, আর্ল, ব্যারন এদের বাড়ির ইন্টিরিয়ার ডিজাইনের সাথে সাথে ওপ্পেনর্ড প্যারিসের সেইন্ট-সালপিস চার্চেরও চীফ্ আর্কিটেক্ট ছিলেন। সব ডিজাইনই ওনার মস্তষ্ক প্রসূত, কিন্তু গুটিকয়েক আসবাবপত্র বা ছবির ফ্রেম, বা আয়নার ফ্রেম একেবারে ওনার নিজের হাতের তৈরি, ওনার আন্ডারে থাকা একশো অ্যাপ্রেন্টিসের হাতের কাজ নয়। আপনাদের বাড়ির এই ছবির ফ্রেমটা সেই গুটিকয়েক ওনার স্বহস্তের শিল্পকর্মের মধ্যে একটা, আর্টের জগতে এই সব শিল্পকর্মকে বলে ‘ওয়ার্ক অফ্ দ্য গ্র্যান্ড-মাস্টার’! তাই জন্যেই এর দাম একটা ছবির চাইতে প্রচুরগুণ বেশী। ইন্টারনেট থেকেই ইমেল অ্যাড্রেস নিয়ে আমি গতকাল ক্যালিফোর্নিয়ার গেটী সেন্টার মিউজিয়ামের ভ্যালুয়েশন ডিপার্টমেন্টে ইমেল করেছিলাম ওপপেনর্ডের তৈরী ফ্রেমের দাম কেমন হবে জানার জন্য। সঙ্গে এই ফ্রেমটার ছবিও অ্যাটাচ করে দিয়েছিলাম।আজ দেখলাম উত্তর এসেছে। ফ্রেমটার দাম পাঁচ লাখ ডলার মানে আড়াই কোটি টাকা!!! ওরা আরো লিখেছে এরকম ফ্রেম কেউ বিক্রি করতে চাইলে ওরা ঐ দামে কিনতে আগ্রহী।”
অগ্নিবেশবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “সব-ই তো বুঝলাম কিন্তু ফ্রেমটা তো তোমরা পুড়িয়েই ফেললে। একটা ওয়ার্ক অফ আর্ট নষ্ট হয়ে গেল।”
ভাস্কর বলল “মেসোমশাই, আমি আর্ট কলেজের স্টুডেন্ট, চন্দননগরের মত মফস্বল শহরে আর্ট গ্যালারি করেছি। এতটাও আনাড়ি নই যে একটা ভাল ওয়ার্ক অফ আর্ট পুড়িয়ে ফেলব।”
অগ্নিবেশবাবু থতমত খেয়ে বললেন “তবে যে বললে কাজের মেয়েকে উনান ধরাতে দিয়েছ?”
ভাস্কর হেসে বলল “ওটা আপনার জামাইএর বুদ্ধি। ওর সন্দেহ ছিল নটরাজ ফ্রেমটাও হাতাতে আসবে। তাই একঢিলে দুই পাখি মারার ব্যাবস্থা করেছিল। চাপের মুখে নটরাজ স্বীকার করল ছবি চুরিটা ওর কাজ। ক্ষতিপুরণ আদায় করা গেল। আবার ফ্রেমটা পুড়ে গেছে জেনে পিটার্সনও এই ব্যাপারটা থেকে হাত ধুয়ে ফেলে ফিরে গেল। না হলে নটরাজ আর পিটার্সন ছলে, বলে, কৌশলে ফ্রেমটা হাতানোর চেষ্টা চালিয়ে যেত। থ্যাঙ্কস টু করুনাদি। ওর চমৎকার অ্যাক্টিং ফ্রেম পোড়ানোর ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। অগ্নিবেশবাবু, আপনি ফ্রেম বিক্রির টাকা পেলে করুনাদিকে ভালরকম বকশিস দিতে হবে কিন্তু।”
(১০)
মাসখানেকের মধ্যেই ওপেনর্ডের তৈরী ফ্রেমটা চন্দননগর থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার গেটি সেন্টার মিউজিয়ামে পারি দেয়। অগ্নিবেশবাবু আড়াই কোটি টাকার চেকটা কাকলির বিয়ের আগেই পেয়ে যান। ওই টাকা থেকে কাকলি আর সূর্যর মরিশাসে হনিমুন ট্রিপটা উনি স্পন্সর করেন। ভাস্কর টোয়েন্টি ফাইভ পার্র্সেন্ট ‘ফাইন্ডার্স ফী’ পেয়েছে। সেই টাকা দিয়ে তুলিকলম গ্যালারীকে ঢেলে সাজিয়েছে আর উঠতি ভালো আর্টিস্টদের ছবির ভালো রকম মার্কেটিং এর ব্যবস্থা করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তো বটেই এমনকি বিদেশেও বিক্রি করেছে। তুলিকলম আর্ট গ্যালারী এখন দেশের আর্ট মার্কেটে পরিচিত নাম। ফ্রেমের ব্যাপারে ‘এক্সপার্ট ওপিনিয়ন’ দেবার জন্য অমিত্কেও লাখ খানেক টাকা দিয়েছেন অগ্নিবেশবাবু। চমৎকার অ্যাক্টিং করে পিটার্সন সাহেব আর নটরাজকে ঘোল খাওয়ানোর জন্য করুনা পেয়েছে পচিশ হাজার টাকা। তার খানিকটা দিয়ে সে গ্যাস ওভেন কিনেছে। ভাস্করের গ্যালারীর কোনো রেয়ার ওয়ার্ক অফ্ আর্ট দিয়ে আর উনান ধরানোর সম্ভবনা নেই।
~ ঈপ্সিত ব্যানার্জী/চম্পাকলি ব্যানার্জী
মন্তব্য
খুব সুন্দর।
এটা কি দুজনের লেখা? নাকি এক লেখকের দুটি নাম?
প্রসঙ্গত, আপনি ভালো লেখেন। কিন্তু মন্তব্য করতে দেখা যায় না। সচল হয়ে ওঠার জন্য সেটা দরকার। আর তাছাড়া পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগটাও তো জরুরি
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ভাল লাগল
রাববানী - আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের তরফ থেকে। আমরা দুজনে গল্প লিখতে লিখতে একটা কথা খুব ভাবতাম। কোনদিন আদৌ কোন প্রকাশক ছাপবে কিনা আর কেউ আদৌ পড়বে কিনা? আর পড়লে গল্পগুলো কেমন লাগবে? আগের সপ্তাহের আর এ সপ্তাহের গল্প ভালো লাগছে শুনে আমাদের দুজনের দারুণ আনন্দ হয়েছে। পরের শুক্রবার আরেকটা ছোটগল্প আপ্লোড করার প্ল্যান আছে।
অনার্য সঙ্গীত - লেখা ভালো লেগেছে শুনে খুন ভালো লাগল। হ্যাঁ, সচলায়তনে আমরা নতুন। আর এখনও নিয়মকাননগুলো ঠিক রপ্ত হয়ে ওঠেনি।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি দুজন ব্যাক্তি। আমরা বর-বউ মিলে সব গল্প লিখি। ব্যাপারটা যথেষ্ট অদ্ভূত বলে সাহস করে প্রথমবার "বিতংশ"তে আর দুজনের নাম উল্লেখ করিনি। তারপর যখন অনেক অনেক ভালো লাগার মন্তব্য আসতে শুরু করল, তখন ভাবলাম দ্বিতীয় গল্পে তাহলে দুজনের নামই উল্লেখ করব। এবার থেকে সব মন্তব্যের জবাব দেব বলে আমরা দুজন ঠিক করেছি।
হাহাহা মজার তো। দেখেন আবার একজনার ঝাড়ি না অন্যজন খেয়ে যান
সেটার জন্যে প্রস্তুত। সেই কোন একটা জোক্স্ ছিলনা - সব কিছু প্রতিবেশীকে ডবল ডবল দিতে হবে বলে রাজার কাছে গিয়ে ১০০ বেত মারার আবেদিন জানাল জনৈক পাজি লোক। আমাদের হয়েছে সেরকম অবস্থা।
দুজন দুটো একাউন্ট রেজিস্ট্রি করে আলাদাভাবে লিখলেই মনে হয় ভালো হয়, এক্ষেত্রে সচলনীতি আমার ঠিক জানা নেই।
আর মিথষ্ক্রিয়ার বিষয়টা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। সচলে অতি প্রত্যাশিত। এখনও কোন পোস্টে মন্তব্য করলে আমি পরে আবার ঘুরে আসি কোন 'জবাব' আসলো কী না, হয়তো জানি জবাবে ধন্যবাদ/ধনেপাতা ছাড়া কিছু আসবে না তবু দেখতে ভালো লাগে।
শুভেচ্ছা।
মৃত্যুময় ঈষৎ -
যদি আবার আসেন ফিরে, এই পোস্ট-সিঁড়িটির তীরে, তাহলে দেখবেন ধনেপাতা ছাড়া অন্য কোন শাকপাতা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
সচলের নিয়মগুলো এমনিতেই একটু শক্ত, তার ওপর দুজনে মিলে লিখলে কি হয় সেটার আইন বোধহয় সচলায়তনের মডারেটর-বোর্ড প্রণয়ন করে ওঠার কথা ভাবেননি।
হয়ত এবার F.A.Q তে একটা নতুন প্রশ্নের জন্ম হবে।
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি
খুবই মজার ব্যাপার তো।
টান টান উত্তেজনা - দারুণ
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
এর মেইন্ ক্লাইম্যাক্সটা কিন্তু সত্যি ঘটনা। আমি বিশদে আরেকটা মন্তব্যে লিখেছি।
- ঈপ্সিত/চম্পা
বলতে নিসিলাম "আপনে তো ভাই দারুন লিখেন" কিন্তু মন্তব্যের ব্যাপারস্যাপার শুনে লিখতে হচ্ছে "আপনারা তো ভাই মারাত্মক লিখেন"! পরের শুক্রবারের গল্প শুনার জন্য পপ্পন নিয়া বসলাম
..................................................................
#Banshibir.
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
গল্পের লাগি কেউ যদি প্রতিক্ষীয়া থাকে,
সেই ধন্য করিবে আমাকে।
গল্প ভাল লেগেছে। কিন্তু আপনাদের দুজনে মিলে লেখার আইডিয়াটা আরও মজার। এক এক জন এক এক পার্ট লেখেন নাকি দুজনে লিখে তারপর আবার একসাথে মিলিয়ে কিছু একটা দাড় করান।
নাহ আমিও আর একজন পার্টনার নিব লেখার জন্য ভাবতেছি ।।
এক এক জন এক এক পার্ট লিখি না।
প্রথমে বিষয় নির্বাচন করি দুজনে, আমি হয়ত ভাবলাম গান নিয়ে লিখব, সেটা হয়ত কিছুদিন ধরে আলোচনা করে বদলে ফেলা হল ডাইনোসর বিষয়ে লেখা! তারপর ঠিক হল কটা খুন, কটা চুরি, কি ক্লাইম্যাক্স, কটা সাব-ক্লাইম্যাক্স থাকবে। তারপর ডিজাইন শেষে কন্সট্রাকশান শুরু। তারপর টেস্টিং, এই সবই দুজনে মিলে করি। ফাইনালি গল্প 'রিলিজ' হয় প্রতি শুক্রবার।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
খুব ভাল লেগেছে। দুইজন লিখলে মনে হয় অসুবিধা নাই। কুলদা রায় একটা সিরিজ লিখেন আরেক সচলের সাথে মিলে। পরের গল্প জলদি দিয়েন।
জি লেখক হিসাবে অসুবিধা না থাকলেও পাঠক হিসাবে আমাদের কিঞ্চিৎ অসুবিধা আছে। দুইজনে মিলে একটা লিখলে প্রডাক্টিভিটি কম হৈব। এর বদলে দুইজনে দুইখান গল্প লিখলে পাঠকের কিছু সুবিধা হয়।
আমাদের গল্প ভালো লেগেছে আর আরও পড়তে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, এটা আমাদের কাছে খুব গর্বের।
তবে ওই যা বললাম, আমরা দুজনে মিলে রান্না না করলে খাবারটা মুখরোচক হয়না। প্রডাক্টিভিটি বাড়াতে গিয়ে সেল কমে গেলে আবার উলটে আরও বিপদ।
-
এইটা আগেরটার মতো জমে নাই বস
সচলে গোয়েন্দাগপ্পো বেশি আসে না। আপনি একটু জমিয়ে লিখলেই প্রচুর পাঠক পাবেন, আমি নিশ্চিত
সুহান - আমাদের প্রত্যেকটা গল্প একটা আরেকটার থেকে আলাদা। কখনও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, কখনো প্যালিওন্টোলজি, কখোন আর্ট, কখনও গোয়েন্দা, কখনও ট্যাক্স-ফাঁকি, কখনও ব্ল্যাকমেইল। একটাই মিল - প্রত্যেকটা গল্পেরই একটা জমাটি ক্লাইম্যাক্স আশা করতে পারেন।
সঙ্গে থাকুন, পড়তে থাকুন।
পরের গল্প রিলিজ ডেট ৫/১২/২০১২।
মারাত্মক!--- গল্প ভালৈসে---
একটা ব্যাপার। দুইজনে একটা না লেইখা দুইটা গল্প লিখলে আমরা পাঠকরা দুইখান মুচমুচা গল্প পাইতাম ফি হপ্তায়---
----------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
পথিক পরাণ - আমরা বর-বউ কম্পলিমেন্টারি স্কিল-সেটের অধিকারি। দুজনে মিলে রান্না না করলে খাবারটা জমবে না।
-ঈপ্সিত/চম্পা
আগের গল্পটা আরেকটু বেশি টানটান ছিলো। এটাতে একটু মিইয়ে গেছে, কারণ ডায়লগগুলো অনেক তথ্যঠাসা ছিলো। তাই একটু পর পর গল্পের স্পেসটাইমের চাদরটা সংলাপের ভারে ডেবে গেছে।
আপনারা সুযোগ পেলে রোয়াল ডালের "পারসন'স প্লেজার" গল্পটা পড়ে দেখবেন, মজা পাবেন।
হিমু - "পারসন'স প্লেজার" গল্পটা পড়েছি। খুব ভালো। আমাদেরটা একটা সত্যি ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। স্থান, কাল, পাত্র আর গপ্প অবশ্য পুরোটাই আমাদের মস্তিষ্ক-প্রসূত।
আর আমাদের দুজনেরই আবার তথ্য-সমৃদ্ধ গপ্প পড়তে আর লিখতে খাসা লাগে। তাই আমাদের বেশীর ভাগ গল্পই এরকম হয়। তবে আপনার মন্তব্য মাথায় থাকবে দুজনের।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
গল্প ভালো লেগেছে শুনে খুব ভালো লাগছে।
সবার অবগতির জন্য জানাই - এই গল্পটি কিন্তু সত্যি ঘটনা আর কল্পনা মিশিয়ে তৈরি। গতবছর আমি আর আমার স্ত্রী লস্-অ্যাঞ্জেলেসের গেটী সেন্টার মিউজিয়ামে গিয়ে একটা বিশাল ছবির ফ্রেম দেখতে পাই। এও দেখি যে ছবির পাশে সেরকম কোন ডেস্ক্রিপশান নেই, কিন্তু ফ্রেমের ব্যাপারে অনেক কিছু লেখা আছে। ব্যাস্, মাথায় একটা ভালো আইডিয়া এসে গেল। বাড়ি এসে গুগ্ল সার্চ দিয়ে পেলাম ২০০২ সালের এই আর্টিক্লটিকে: http://articles.latimes.com/2002/aug/25/entertainment/ca-muchnic25
পড়ে দেখলাম, আরও চমতকৃত হলাম। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষও নাকি জানত না ফ্রেমটার ভ্যালুয়েশান। সেই থেকেই এই গল্পের জন্ম। ওপ্পেনর্ড সম্পর্কের তথ্য সবই সত্যি। তবে চন্দননগর, চিত্রলেখা, এবং বাকি সব আমাদের ইম্যাজিনেশান।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
গল্পটা পুরোপুরি পড়লাম এখন। ভাল লেগেছে। সচলে অনেক নতুন নতুন প্রতিভাবান লেখক, লেখিকা আসছেন এইটা খুব ভাল লাগ্ছে।
আচ্চা আপনাদের কী লেখক বলব নাকি লেখিকা?
facebook
ভালো লাগলো। আপনাদের নতুন নতুন লেখার অপেক্ষায়---
আগেরটা দুর্দান্ত ছিল। এটা মোটামুটি লেগেছে। চালিয়ে যান
গল্প খুব ভালো লাগলো। দুইজন মিলে লেখাটা ইন্টারেস্টিং লাগলো।
আমারও হিমুর মতই মনে হয়েছে। আসলে আগের গল্পটার পর প্রত্যাশা বেড়ে গেছে অনেকটাই। লিখতে লিখতেই সেটার সাথে মানিয়ে যাবেন ঠিক। পরেরটার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আপনাদের ব্যাপারটা চমকপ্রদ তো! দুজনে মিলে একটা মৌলিক গল্প নির্মান করা আমার কাছে প্রায় অসাধ্য মনে হয়।
এই গল্পটাও খুব ভালো লাগলো। তবে বানানগুলো একটু গুছিয়ে দেখে দিলে, আর ইংরেজী শব্দগুলো একটু এড়ানো/কমানো গেলে আরো ভালো লাগতো।
চার হাতে লিখতে থাকুন। আগে চার হাতে কথাটা ছিল কেবলই কথার কথা। আপনারা সেটা সত্য প্রমান করে ছাড়লেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
গল্পে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হাজব্যান্ড-ওয়াইফের পছন্দের জায়গাগুলো আলাদা মেরুতে অবস্থান করে। আপনাদের ব্যাপারটা তো একেবারেই আলাদা দেখি! দুজনে একসাথে একটা গল্প নিয়ে ভাবছেন, কথা বলছেন, লিখছেন, ব্যাপারটা ভাবতেই দারুণ লাগছে।
নীড়'দার মতো আমিও বলি, চার হাতে লিখতে থাকুন।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
জমজমাট গল্প! স্রেফ দুয়েক টা ইলাস্ট্রেশন থাকলেই একেবারে পার্ফেকশন এসে যেত।
পরের গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। দুজনকেই
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভালো লাগলো।।
বেশ ভাল লেগেছে! আগের গল্পটা ছিল মারাত্মক!
দুজনে মিলে এখানে লেখার ব্যাপারটাও অসাধারণ! চমৎকার! শুধু একটা জিনিস, জানিনা আগে ব্লগে লিখেছেন কিনা, তাই বলছি সমালোচনায় দমে যাবেন না। পাঠক সরাসরি মতামত দিচ্ছে- ফলে ইন্টার্যাকশন আর উন্নতির সুযোগ সবসময়ই বেশি! প্রতি সপ্তাহে আরও ভাল ভাল গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
পরবর্তী গল্পের জন্য অপেক্ষা... আপনাদের দু’জনের জন্যই অনেক শুভেচ্ছা রইলো
ভালো লাগলো অনেক। দুইটা ধন্যবাদ দুইজনকে ।
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
বাহ, জমজমাট গল্প, পুরা গল্প একটানে পড়ে ফেললাম।
ভালো লেগেছে। সাহিত্যিক বিমল মিত্রের কিছু লোক ছিল যারা বিভিন্ন খবর এনে দিত তাঁকে। যেমন কোন পুরান বাড়ি ভাংতে গিয়ে একটা কংকাল পাওয়া গেছে (যেখান থেকেই আমরা পেয়াছি "সাহেব বিবি গোলাম") সেখান থেকেই গল্পের ছক সাজাতেন তিনি। আপনাদের এই লেখাটি পড়ে সেই কথাটি আবার মনে হল। সত্য আর কল্পনার সুন্দর সমন্বয়।
আপনাদের এই মিলিত প্রচেষ্টা কে অভিনন্দন। কিন্তু একটা প্রশ্ন । দুজনের কি মতবিরোধ হয় না, গল্পের সমাপ্তি বা অন্যকোনো ক্লাইম্যাক্সে?
সত্য আর কল্পনার সমন্বয় নিয়েই আমরা গল্প লিখি কারণ ঐ গল্পগুলোই পড়তে আমাদের সবচেয়ে ভালো লাগে। দুজনের আর যাই হোক, ক্লাইম্যাক্স নিয়ে মতবিরোধ হয়না, কারন আমরা গল্পটা শুরুই করি ক্লাইম্যাক্স থেকে।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
দারুন লেগেছে গল্পটা-জোড়া লেখক লেখিকা শুনে আরো মজা পেলাম!=)
গল্পটা দারুণ
গল্পটা ভালো লেগেছে।
যুগল লেখক-লেখিকাকে দেখে রবীন্দ্রনাথের দর্পহরণ গল্পটার কথা মনে পড়ে গেল।
বাহ! অনেকদিন পরে টানটান একটা গল্প পড়লাম। আর সেটা অনেক রিসার্চ করে লেখা তা পড়তে গিয়েই বোঝা যাচ্ছিলো। এই ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। একটা গল্পের টুকিটাকি জিনিস নিয়েও অনেক ভাবনা করা, খোঁজ করা, গবেষণা করা। খুব ভালো লাগলো এই জন্যেই।
আগের গল্পটা আমি মিস করে গিয়েছি। কাজেই বুঝতে পারছি না আগেরটা এর থেকে কত বেশি ভালো ছিলো।।। ব্যাপার লয়, খুঁজে বের করে পড়ে ফেলবো অবশ্যই।
চন্দননগর নিজে গিয়েছিলাম প্রায় ১১ বছর আগে, সেটাও এটা মজা লাগার একটা কারণ হয়ে থাকতে পারে।
আচ্ছা, আপনারা দুইজনে মিলে লেখেন, লিখবেন। কিন্তু মন্তব্য একজনকেই করতে দেখছি, মিথস্ক্রিয়াতেও দুইজন মিলেই অংশ নেবেন আশা করছি। হয়তো মন্তব্যের মাধ্যমে লেখকদ্বয়ের পৃথক সত্ত্বা অনুভব করা যাবে। কোন্টুকু, কার লেখা হয়তো ধরতে পারবো তখন। একই সাথে একই ভাবনার হলেও দুইটা মানুষে কিছুতো স্বাতন্ত্র থাকার কথা, শব্দচয়ন, বাক্য বিন্যাসে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
চমৎকার। তবে আগেরটার মতো হয় নাই।
চার হাতে লেখা চলুক। আমরা অপেক্ষায় আছি পরেরটার
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
নতুন মন্তব্য করুন