সকাল সাতটা থেকে মণ্ডপের গেটে মিষ্টির হাঁড়িটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মল্লিক চন্দ্র। এখন বিকেল তিনটা। একটু ভেতরের ঢোকার অনুমতির আশায় অনেকের কাছে ধর্না দিয়েছে। কেউ ওর কথায় কান দেয়নি। আজ বিজয়া দশমী- মায়ের প্রস্থান দিবস। ওর দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত কোথায়!
প্রতি বছর এখানে বেশ ঘটা করেই দূর্গা পুজার আয়োজন করা হয়। আশেপাশের দশ গ্রামের মধ্যে এখানেই কেবল হিন্দুর সংখ্যাটা বলার মতো। দেশ বিভাগের আগে এগ্রামের অধিকাংশই ছিল হিন্দু। আজ তাদের পিঠে সংখ্যালঘুর তকমাটা পাকাপোক্তভাবে সেঁটে গেছে ।
কামার কুমোর নাপিত ছুঁতোরদের মতো ছোট জাতেরাও মণ্ডপে ঠাঁই পেয়েছে। গোলবাঁধে কেবল ডোমেরা ঢুকতে গেলে- এরা শুকর পুষে সংসার চালায়, শুকরের মাংস খায়। অথচ পঁঞ্চাশ বছর আগেও চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো।
ব্রিটিশ ভারতের অত্র এলাকার সর্বশেষ জমিদার কেশবচন্দ্র- মল্লিক চন্দ্রের ঠাকুরদা এবং সম্ভবত অত্র এলাকার সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। আড়ালে-আবডালে লোকে তাঁকে কেশব ডোম নামে ডাকলেও তাঁর ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খেত। সততা নীতির বিপক্ষে যেমন কখনো আপোষ করেননি, ন্যায় বিচারেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত; ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শুদ্র, বৈষ্ণব কিংবা কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে- কোনও তারতম্য ছিল না। কীভাবে তিনি জমিদারী লাভ করেছিলেন তা জানা যায় না। তাঁর পূর্বপুরুষরাও যে ধনী ছিলেন, তা নয়; বরং পশ্চিম বাংলার আর সব ডোমেদের মতো তাদেরও জীবিকা নির্বাহের প্রধাণ উৎস ছিলো কূলো-চাঙ্গারি তৈরি আর শুকর পালন। তবে কেশবচন্দ্র কীভাবে জানি কিছুটা লেখাপড়া শিখে পারিবিারিক পেশা ছেড়ে সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তার পর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর বাহ্যিক সত্তার সততা নিয়ে কারও সন্দেহ না থাকলেও, কেউ কেউ মনে করে তাঁর অর্থনৈতিক জীবনের উত্থানপর্বটা একেবারে কালিমা মুক্ত নয়।
ক্ষমতাধর ইংরেজ সাহেদের সাথে সম্পর্কটা বেশ ঘনিষ্ট ছিল কেশবচন্দ্রের। তাঁদের সুপারিশেই ইংরেজ গভর্নমেন্ট যশোর জেলায় যশোরের বাইরে এই রামনগর গ্রামেই সর্বপ্রথম কোনো স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শতবর্ষী পুরোনো জীর্ণ মন্দিরটা ভেঙ্গে আজকের এই ঝাঁ-চকচকে মন্দিরটা তৈরি হয়েছিল তাঁর জমিদারী আমলেই। তাঁর পদধূলি পড়ার আগ পর্যন্ত মণ্ডপে শাখ-কাশর বাজত না, মেয়েরা উলু দিত না, ঢুলি দিত না ঢাকে বাড়ি। এমনকী ঋষি ঠাকুরও পাঠ করতেন না মন্ত্র! কালের পরিক্রমায় হিন্দু সংখ্যার সমানুপাতে ডোমেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কমছে, বেড়েছে মুসলমান আর ব্রাহ্মণদের দৌরাত্ম। একদা একজন ডোমের অপেক্ষায় যে মণ্ডপের ঢাকে বাড়ি পড়ত না; আজ নেই মণ্ডপে প্রবেশের অনুমতির আশায় আরেকজন ডোমকে গণগণে সূর্যের প্রখরতা সহ্য করে রেলিং ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
‘ও মল্লিক দাদু, এতো রোদে দাঁড়িয়ে আছ কেন! ভেতরে যাবে না?’
মল্লিক এতটাই স্মৃতি কাতর হয়ে পড়েছিল যে আরণ্যকের হঠাৎ ডাকে চমকে উঠল। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে ঠোঁটে এক চিলতে মলিন হাসি ঝুলিয়ে বলল, ‘আরে আরণ্যক দাদু যে! তা, এখেনে কী মনে কইরে?’
‘আজ তো মেলার শেষ দিন। কিছু কেনাকাটা করতে এসেছিলাম। অনেক্ষণ থেকে দেখছি তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছ। ভেতরে যাবে না?’
‘যেতে আর দেচ্চে কই? যাওয়ার বড্ড দরকার এখন। বন্যের বচরে ছোট মেযেড়ার পক্সো হয়েলো বুজলে? কত বদ্যি কবিরাজ দেখালাম, কিছুতিই কিচু হৈলো না। শেষে তুমার দিদিমা মা’র নামে এক হাঁড়ি মিষ্টি মানত করলে- এর বেশি সাইধ্যো তো আমাদের নেই। ভগবানের কী কির্পা দ্যাখো, মেয়েডা ঠিক ভালো হৈয়ে গেল! পাঁচ বচর হতি চৈল্ল, এর মোদ্দি মা চারবার ঘুরে গেলেন- ট্যাকার অভাবে তাঁকে মিষ্টি মুখ কারনোডা আর কপালে জুইটলো না। এবার বর্ষায় একটা জানুয়ার বেঁচলাম, তাই থেকে কডা ট্যাকা পুজোর জন্যি আলাদা কইরে রেখেলাম, ভাবলাম মা’র দিনাডা এবার শোদ করেই দিই। সেই সকাল থেইকে মিষ্টির হাড়িডা নিয়ে বইসে আচি। এতোলোক ঢোকচে-বেরোচ্চে, আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় কইরে রেখেচে!’
‘তাই! দাঁড়াও দেখছি কী করা যায়- বলে মণ্ডপের রেলিংয়ে মুখ লাগিয়ে ঋষিকে ডাকতে শুরু করল ছেলেটা, ‘শ্যামচাঁদ দাদু, শ্যামচাঁদ দাদু!’
‘ঋষি শ্যামচাঁদ ঠাকুর মায়ের দক্ষিণা গ্রহণে ব্যস্ত। বছরভ’র রোগমুক্তি আর সাফল্য লাভের আশায় মানতকরা মিষ্টি, চিড়ামুড়ি, সন্দেশ-বাতাসা, নতুন ধুতি, নতুন পাঞ্জাবি দূর্গা পুজার সময় মণ্ডপে জড়ো করা হয়। দশমীর দিনে ভিড়টা আরো বেশি। প্রতিমা বিসর্জনের পর মানতের মালামাল তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যায়- একভাগ পুজো কমিটির সভাপতির, একভাগ ঋষি শ্যামচাঁদের আর এক ভাগ পুজো কমিটির অন্যান্য সদস্যদের। এতে সাধারণ কিংবা হতদরিদ্র হিন্দুর কোনও অধিকার নেই। অথচ পুজোর চাঁদা তোলার সময় ধনী দরিদ্র- কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হয় না।
আরণ্যকের ডাকে ঋষি নিতান্তই তুচ্ছ কেউ জ্ঞান করে বিরক্তিভরে ঘাড় ঘোরালেন। হঠাৎ এসময় মণ্ডপে আরণ্যকের উপস্থিতি আশা করেননি, ওকে দেখে তড়িঘড়ি করে মুখভঙ্গি পরিবর্তন করে বললেন, ‘অরণ্যক দাদু! আমি ভেবেছিলাম কে না কে, তা কী মনে করে?’
‘মল্লিক দাদুকে দেখছি, সেই কখন থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওঁকে একটু ভেতরে ঢুকতে দেবেন না-’
‘দাঁড়িয়ে আছে, কই দেখিনি তো!’ একবারে যেন আকাশ থেকে পড়ার ভান করলেন। ‘আচ্ছা একটু পরেই ওকে ভেতরে নিচ্ছি।’
‘পরে কেন, এখনি নিন না-’
‘এখন তো নিতে পারব না দাদু, বামুণঠাকুরদের প্রণাম দেয়া যে শেষ হয়নি। তবে শিঘ্রি তাঁরা বেরিয়ে যাবেন, তখন নেব, কেমন!’
‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে প্রস্থানের আগে আরণ্যক মল্লিকের দিকে চেয়ে বলল, ‘দাদু তুমি মিষ্টি দিয়ে এসো, আমি চললাম।’ ফিরতে গিয়েও আবার থমকে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ওহঃ বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম- কাল একবার আমাদের বাড়িতে এসো, মা ডেকেছেন।’
দুই
বৈশাখের কাঠফাটা দুপুর। কৃষ্ণচূড়ার ডালে দাউ দাউ করে জ্বলছে গীষ্মের টকটকে লেলিহান শিখা। চারিদিকে বৃষ্টির জন্য হাহাকার। আকাশ-গঙ্গার নিকট বৃষ্টি ভিক্ষা মাঙতে মাঙতে বিদীর্ণ হয়ে গেছে ধরণীর বুক। বৃষ্টিদেবী ধরণীমাতার আহবানে সাড়া না দিয়ে বার বার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাঁর আস্ফালনটাকেই শুধু বাড়িয়ে চলেছে। গ্রামের খানবাড়ি মিয়াবাড়ি বিশ্বাসবাড়ি ঠাকুরবাড়ি মণ্ডলবাড়ির জন্যই কেবল দুপুরটা অলস। যারা মল্লিকের মতো হতদরিদ্র- যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়- অলসতার সজ্ঞাটা তাদের অজানা।
বাড়ির উত্তর কোণের প্রকাণ্ড লিচুগাছটার শীতল ছায়ায় বসে চাটাই বুনছে মল্লিক। এই চাটাই দিয়ে তৈরি চ্যাঙারি-কুলো বিক্রি করেই তিন কন্যার জনক মল্লিকের সংসার চলে; অবশ্য যদি সেটাকে ‘চলা’ বলা যায়! একপাল শুকরও আছে। তীব্র খাদ্য সংকটে সেগুলোর আজ অস্থিচর্মাসার অবস্থা। যুদ্ধের পরে এই শুকর পালন করেই বহাল তবিয়তে দিন চলে যেত ডোমদের। আবার এই শুকরের কারণেই সমাজে আজ বেশি পরিমাণে অচ্ছুত তারা।
হঠাৎ ‘ক্যাঁ ক্যাঁ’ শব্দে কর্মযোগে ছেদ পড়ে মল্লিকের। কুঁচকুঁচে কালো চেহারা আরো কালো চোখ দুটোর দৃষ্টি নিক্ষেপিত হয় ডোমপুকুর পাড়ের সারবাঁধা নারকেল গাছগুলোর ওপর। গেলো ফাগুনে সবচেয়ে উঁচু গাছটার কোটরে বাসা বেঁধেছিল একজোড়া টিয়া পাখি। সেই গাছটাই এই শব্দের উৎসস্থল। গত শুক্রবার দুপুরে ঠিক এখানে বসেই চ্যাঙ্গারির কিণারা বাঁধছিল মল্লিক। উত্তর পাড়ার করিম মণ্ডলের ডানপিঠে ছেলে বিল্টু দলবল সহ এসে সেদিন মা পাখিটাকে ধরে নিয়ে যায়। পাখিটার আর্তনাদে সেদিন মল্লিকের হৃদয় করুণ রসে সিক্ত হয়েছিল। সে তাদের বাধা দিয়েছিল, অনুনয় করেছিল, কিন্তু নির¯ করতে পারেনি। এখানেই হয়তো ভেঙ্গে পড়ে মানবিকতার সম¯ তত্ব; এখানেই হয়তো ‘জোর যার মুল্লুক তার’ প্রবাদটা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। নতুবা দশ-বারো বছর বয়সী কয়েকটা দুষ্টু ছেলের হাত থেকে দুটো বাচ্চাকে মাতৃহারাকরণ কেন নিবৃত করতে ব্যর্থ হবে সত্তরের ঘর ছুঁই ছুঁই একজন বৃদ্ধ? বরং বাধা দিতে গেলে উল্টো তারা কোরাস কাটে-
মল্লিক ডোম আলুর দম
কেশব ডোমের নাতি,
কঁচু বাগানে শুয়োর চরায়
মাথায় ছিঁড়া ছাতি...
সঙ্গিনী হারিয়ে পুরুষ পাখিটা সারাক্ষণ মনমরা হয়ে লিচুগাছটার মগডালে বসে থাকে। লাল টসটসে লিচুগুলোর প্রতি কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। জীবনটাই যেন ওর কাছে বিষাদময় হয়ে উঠৈছে। বাচ্চাগুলো যে তিনদিন না খেয়ে আছে সেদিকে একটুও খেয়াল নেই। বাবা পাখিটার উদাসীনতায় মাতৃহার বাচ্চাগুলো ক্যাঁ ক্যাঁ ছাড়া আর কী-ইবা করতে পারে?
বিল্টু-বাহিনীর দ্বারা টিয়া পাখিদের নিগৃহিত হওয়ার দৃশ্য দেখে মল্লিক ফিরে যায় ষাট বছর আগের জীবনে। মল্লিক তখন পিতা-মাতা হারা আট বছরের বালক, ঠাকুরদা কেশব চন্দ্র তখন এলাকার জমিদার...
তখনকার শুধু ডোমবাড়িটাই ছিল আশেপাশের মুসলমান বাড়িগুলো সহ আজকের এই গোটা ডোমপাড়াটার সমান। রাজপ্রাসাদতূল্য বাড়ি, গোয়ালভরা গরু, খোয়াড়ভরা শুকর আর ঘোড়াশালে কতগুলো ঘোড়া ছিল- তা আজ মল্লিকের মনে পড়ে না। গাঁয়ের সব বউ-ঝিরা গরুরগাড়িতে চেপে বাপের বাড়িতে গেলেও ডোমবাড়ির মেয়ে-বৌয়েরা চলত হুনহুনা পালকিতে। চাকর-বাকরদের পদচারণায় সারক্ষণ জমিদার বাড়ি গমগম করত। বিশাল সানবাঁধানো ডোমপুকুরটা মুখর ছিল শিং, শোল, মাগুরদেররে মতো দেশি মাছের ঘাইয়ে। পুকুরপাড়ের সারবাঁধা নারকেল গাছ, লিচু বাগান, টিয়া পাখি- এদের সমন্বিত রূপ আজও ডোমবাড়ির ঐতিহ্যের প্রতিক।
এরপর এলো সাতচল্লিশ, দেশভাগ। ইহধাম ত্যাগ করলেন কেশব চন্দ্র, জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলো। হলো হিন্দুস্থান-পাকিস্তান। এর কিছুকাল পরে হিন্দুস্থানে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় হিন্দস্থানের বাঙ্গালী মুসলমানেরা বিতাড়িত হয়ে একে একে পূর্ব-পাকিস্তানে আশ্রয় নিতে শুরু করল। দাঙ্গার আশংকায় এপারের হিন্দুরাও আগেভাগে দেশ ত্যাগ করে। হয়তো আপদ সাথে নেয়ার ঝামেলা এড়ানোর জন্যই মল্লিককে ফেলে রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায় মল্লিকের স্বজনরাও। পিতা-মাতাহারা সদ্য কৈশোর পেরোনো মল্লিক নিসঙ্গতার যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে চলল প্রতিনিয়ত। তারপর হঠাৎ একদিন অনুভব করল ডোমবাড়িতে থাকবার অধিকারও সে হারিয়েছে।
একদা যেসব প্রভাবশালী মুসলমান ব্যক্তিরা ঠাকুরদা কেশব চন্দ্রকে তোয়াজ করে চলত, পূত্র-কন্যার বিয়েতে তাঁর পদধূলি পাবার আশায় ডোমবাড়িতে দুবেলা ধর্ণা দিত- আজ তারাই এসেছে ডোমবাড়ির দখল নিতে। মুসলমানরা বেঈমান নয়, তারা এমনি এমনি বাড়ির দখল নিচ্ছে না- তার প্রমাণ পত্র সাথে নিয়েই এসেছে। ‘এই দ্যাখো বাপু, এইখানে তোমার জ্যাঠা-কাকাদের টিপসই রয়েছে। যদিও তার চড়াদামে পুরো জমিদার বাড়িটা আর মাঠাল জমিগুলো লিখে দিয়ে গেছেন; তবুও তুমি যখন যাওনি, তোমাকে একেবারে ভিটেছাড়া করব না। তবে তুমি ভেতরে থাকতে পারবে না। এখন থেকে খামার বাড়িতেই থাকবে।’
টিপসইগুলো প্রকৃতই তার জ্যাঠা-কাকাদের কিনা সন্দেহ হয় মল্লিকের। তবু নীরব থকে সে। রাতারাতি বদলে যায় ডোমবাড়ির চেহারা। ডোমবাড়ি, ডোমপুকুর, নারকেল গাছ, লিচু বাগান সব গ্রাস করে মুসলমানেরা।
সময়ের পরিক্রমায় একদিন আসে একাত্তর, পঁচিশে মার্চ কালোরাত। পাক বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায় ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের ওপর। বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। পাক বাহিনীর নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা পেতে সে সময় অনেকেই আনিচ্ছা সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। গর্জে ওঠে দেশে থাকা বাঙ্গালীরা। অনেকেই আবার নাম লেখায় সুবিধাবাদী রজাকারদের দলে। কিন্তু মল্লিক তো হিন্দু; রাজাকারে নাম লেখানোর অধিকার তার নেই। আবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মতো বুকের পাটাও নেই তার । তাই বাধ্য হয়ে বাপ-ঠাকুর্দার দেশ ছেড়ে হিন্দুস্থানে আশ্রয় নেয়।
রানাঘাটের এক ডোম সর্দারের সাথে সখ্যতার সূত্র ধরেই ডোম পল্লিতে আশ্রয় নেয় মল্লিক। সর্দার কন্যা সুমিতা রানীকে বিয়ে করে সেখানে সংসার পাতে। অল্প দিনের মধ্যে ফিরে যায় পূর্ব-পুরুষের পুরোনো পেশায়। হয়ে ওঠে বাঁশ দিয়ে চ্যাঙ্গারি-কুলো বানানোর দক্ষ কারিগর।
মল্লিক ভেবেছিল এ যুদ্ধ বুঝি আর থামবে না। মল্লিকের মতো গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনে বীর বাঙ্গালীরা। দেশে ফেরার জন্য মন আঁকু-পাঁকু করতে থাকে মল্লিকের। একদিন সময় সুযোগ বুঝে গোটাবিশেক ডোম সঙ্গী এবং কয়েকজোড়া শুকর নিয়ে ফিরে আসে সে।
ফিরে এসে দেখে, ডোম বাড়ি আর সেই ডোমবাড়ি নেই। যেসব মুসলমানেরা তাদের ভিটেমাটি গ্রাস করেছিল তারা কোথায় হারিয়ে গেছে, কেউ বলতে পারে না। তাদের বদলে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে আরেকদল মুসলমান পরিবার। তবে পাক সেনাদের ভয়ে বাড়ি থেকে মুছে ফেলা হয়েছে হিন্দুয়ানীর শেষ চিহ্নটুকুও। অতিথি ডোমেদের নিয়ে মল্লিক খামার বাড়িতে শুরু করে নতুন জীবন। এভাবেই ডোমবাড়ি পরিণত হয় ডোমপাড়ায়।
‘কই, ভাত খাবা না।’ সুমিতা রানীর ডাকে স্মৃতি রোমান্থনে বিঘœ ঘটে মল্লিকের।
‘হাতের কাজটুকু সেরে নিই তারপর খাচ্ছি-’ মল্লিক জবাব দেয়।
‘আইজ কুন পাড়ায় যাবা?’
‘পশ্চিম পাড়ায়। পুজোর পর আর ওদিকি যাওয়া হয়নি।’
তিন
‘চ্যাঙ্গারি-কুলো আছে গো-ও-ও, চ্যাঙ্গারি-কুলো-ও-ও...’
মল্লিকের হাঁক শুনে বৈঠকখানার বাম দিকের দরজাটা খুলে দেয় আরণ্যক। গলাটা একটু বাড়িয়ে বলে, ‘মল্লিক দাদু, ভেতরে এসো।’
মল্লিক ভেতরে না ঢুকে দরজায় বসে পড়ল।
‘তোমাকে না কতবার বলেছি, দরজায় বসবে না!’ একটু শাসনের সুরে বলল আরণ্যক।
‘আমরা ভেতরে বসলি তুমাদের জাইত যাবে যে!’ কথার একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মল্লিকের।
‘কোনো কিছুতেই আমাদের জাত যাবে না, তুমি ভেতরে এসে বস।’
রোজই আরণ্যক এই কথাটা বলে কিন্তু মল্লিক ভেতরে গিয়ে বসে না; আজও বসল না।
আরণ্যক একখানা রঙিন মলাটের বই দু’হাতে মেলে ধরে বলে, ‘আজ তোমাকে জসীমউদ্দীনের কবর কবিতাটা শোনাব।’
কবিতা শুনতে শুনতে মল্লিকের চোখে পানি চলে আসে। তবে এ পানি যতটা কবিতার মর্মভেদী তারচেয়ে বেশি একটুখানি ভালোবাসা পাবার আনন্দের। যেখানেই যায় সেখানেই অচ্ছুৎ সে। দরজায় বসতে দেয়া দূরে থাক, উঠোন ছাড়া কেউ ঘরের সিঁড়ি মাড়াতে পর্যন্ত দেয় না! এক্ষেত্রে আরণ্যকের বয়সী ছেলেরা একধাপ বেশি এগিয়ে- বাঁশ-পলিথিন দিয়ে তৈরি বিশাল ছাতাটা মেলে ধরে যখন পাল চরাতে বের হয়, তখন কেউ বা কুকুর লেলিয়ে দেয়, কেউ ‘হু-উ-উ-ম বাহঃ’ বুলিটা নকল করে শোনায়; কেউ বা ছড়া কাটে- ‘মল্লিক ডোম/আলুর দম....।’ ব্যতিক্রম শুধু অরণ্যক- তার মায়ের প্রভাব। এই মহিলা সাধারণ এক গ্রাম্য রমণী হয়েও সাহিত্যের অপার জগতের সাথে যোগাযোগটা হয়তো তাকে ব্যতিক্রম করে তুলেছে।
‘দাদু, কবিতা শুনে দেখি কেঁদে ফেললে!’
আরণ্যকের কথায় মৌনতা ভাঙ্গে মল্লিকের, ‘ওই গল্পডা একটু শোনাও তো দাদু।’
‘কোন গল্পটা, দাদু?
‘ওই যে, 'গরীবের মধ্যেও সে গরীব, ছোট লোকের মধ্যেও সে ছোটলোক।’
‘পদ্মা নদীর মাঝির কথা বলছ? দাঁড়াও শোনাচ্ছি-’
পদ্মা নদীর মাঝির কুবের চরিত্রের মাঝে হয়তো নিজেকেই খুঁজে ফেরে মল্লিক। তাই যখনই আরণ্যকদের বাড়িতে আসে তখনই এই উপন্যাসটার কিছুটা অংশ শুনে যায়। আজ দুই বছর ধারাাহিকভাবে চলছে তাদের এই বলা ও শোনার পালা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই বিখ্যাত দুটি উক্তি- গরীবের মধ্যেও সে গরীব, ছোট লোকের মধ্যেও সে ছোটলোক এবং ঈশ্বর থাকেন ঐগাঁয়ের ভদ্রপল্লিতে, এখানে তাঁহাকে খুঁজিয় পাওয়া যাইবে না- তার জীবনে কত বড় সত্যি- মূর্খ হলেও সে তা বোঝে।
‘কার সাথে কথা বলছিসরে খোকা?’ ভেতর থেকে আরণ্যকের মায়ের হাঁক আসে।
আরণ্যক জবাব দেয়, ‘মল্লিক দাদু এসেছে মা, কুলো চ্যাঙ্গরি লাগবে?’
‘ওকে ভেতরে পাঠিয়ে দে।’
মল্লিক বৈঠকখানার চৌকাঠ থেকে উঠে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে উঠনের পেয়ারা গাছের ছায়ায় বসে।
আরণ্যকের মা চ্যাঙ্গারি-কুলোর দরদাম করছিল, এমন সময় আরণ্যকের বাবা জামশেদ মিয়া বাড়িতে ফিরলেন। তাকে দেখে একটু অধিকার মেশানো সুরে মল্লিক বলল, ‘অ মামু, একটা বাঁশ দেবেন? দুটো কুলো দুবানি...’
‘হ্যাঁ দিতে পারি, তবে দুটো কুলোয় হবে না, তিনটে দিতে হবে।’
‘না মামু, তিনটে দিতি গেলি মরে যাব, বিশ্বাস করেন এট্টা বাঁশে চারটের বেশি হয় না আর এই চারটে তৈরি কত্তি এক সপ্তা লেগে যাবে।’
মল্লিকের কথা জামশেদ মিয়া বিশ্বাস করলেন কিনা তাঁর পরবর্তী উক্তিতে তা প্রকাশ পেল না। অগত্যা সে তাতেই রাজি হয়ে গেল।
মল্লিকের প্রস্থানের পর পাশের বাড়ির আয়াজ মোল্লার বউ সমিরন বিবি এসে একেববারে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সদ্য সন্তানহারা মায়ের মতো ক্রন্দন সুরে বলল, ‘জাত গেল, জাত গেল! ওমা আমার কী হবে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
আরণ্যকের মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘ও সমিরন বু, ছি ছি করছ কেন?’
‘তোমার ছেলেকে দেখলাম মল্লিক ডোমকে ঘরে বসিয়ে গল্প করছে। ছিঃ ছিঃ, জাত গেল, জাত গেল!’
‘মল্লিকের সাথে ঘরে বসে গল্প করলে জাত যাবে কেন, ওকি মানুষ নয়?’
‘মানুষ, তবে ডোম! শুয়োর চরায়, শুয়েরের গোস্ত খায়!’
‘শুয়োর খুব নোংরা প্রাণী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একজন শুয়োর খায় বলে তাকে তো আর সমাজের বাইরে রাখা যায় না। তাছাড়া তাদের হাতের কুলো-চ্যাঙ্গারি আমরা সবাই ব্যবহার করছি, কই তাতে তো আর জাত যাচ্ছে না!’
‘কুলো-চ্যাঙ্গারি ব্যবহার করা আর হারামখোরদের সাথে ওঠাবসা করা এক হলো? তুমি যাই বলো কেন বু; তোমার ছেলেকে এত লাই দেয়া বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।’
‘কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক তা আমি জানি বু। আর ওঠা বসার কথাই যদি বলো- তা শুনেছি আমাদের আয়াজ ভাইয়েরও নাকি একটু-আধটু পচা তালের রস আর কলকে খাওয়ার অভ্যাস আছে- তার সাথে ওঠাবসা করতে তোমার সমস্যা হয় না?’
‘আমার ঘাট হয়েছে ভাই, তোমাদের সাথে কথায় পারব না। উচিত কথা বলতে গেলেই যত দোষ! আমি যাই, চুলোয় ভাত চাপানো আছে।’ বলে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়ল সমিরন বিবি।
চার
পাঁচ বছর পর।
আরণ্যক এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরে থাকে। মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে বেড়িয়ে যায়। এবার এসেছে ঈদের ছুটিতে।
ঈদের দিনটাকে আারণ্যকের কাছে একদম আলাদা মনে হয়। দিনটার কী এত মাহত্ম্য, প্রতাপশালী ধনী হৃদয়কে ঔদার্যতায় পূর্ণ করে দেয়! ধনী-গরীব শত্র“-মিত্র বিভেদ ভুলিয়ে সবাইকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক কাতারে। ঈমাম সাহেব কণ্ঠে যখন ঈদ-মোবারক ধ্বনি তোলেন তখন তারা একে অপরের সাথে সুর মিলিয়ে যেভাবে জিন্দবাদ রব তোলে তাতে- তা দেখলে কে বলবে একটু আগেও এরা এক অপরের শত্র“ ছিল! কে বলবে একজন হ্যাঁ বললে অন্যজন না বলে, একজন উত্তরে গেলে অন্যজন দক্ষিণে যায়! কে বলবে, এরা সর্বদা একে অপরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত থাকে।
মল্লিকও জানে ঈদের দিনে মুসলমানরা বিস্ময়করভাবে বদলে হয়ে যায়। হয়তো বা তারা আজ তাকে অচ্ছুৎ ভেবে দূরে সরিয়ে দেবে না। কিন্তু দু’দিনের অভূক্ত শরীরটা ঈদগাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে তো!
জামাত শেষ। খোদবা শেষে মোনাজাতের অপেক্ষায় বসে আছে মুসুল্লিরা। হঠাৎ চার কাতার সামনের একটা শোরগোল আরণ্যকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায় সে। একজন বৃদ্ধ মুমূর্ষূ অবস্থায় পড়ে আছে- মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, মাথার কেশ বিন্যাসে পাটের বোঝার আদল, গা খালি, পরনে শুধু শততালির একখানা লুঙ্গি। পাশে তালি দেয়া একটা কাপড়ের ব্যাগ পড়ে আছে- সম্ভবত এটা তার ভিক্ষার ঝুলি। সাম্য তাকে চিনতে ভুল করেনি- এ যে তার প্রিয় মল্লিক দাদু!
ডোমপাড়ার আব্দুল্লা জানাল, বছর খানেক আগে মল্লিকের স্ত্রী সুমিতা রাণী ব্ল্যাড ক্যান্সারে মারা গেছে। ডোম শাস্ত্র আনুযায়ী স্ত্রীহারা কোনো ব্যক্তি কুলো-চ্যাঙ্গারি বানাতে পারবে না। স্ত্রীর অসুখ সারাতে গিয়ে মল্লিক আগেই তার সর্বস্ব (শুকরের পাল) খুইয়েছে। বিবাহিত তিন কন্যারও নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তার ওপর সবগুলোর বিয়ে হয়েছে আবার সীমানার ওপারে। তাই বাধ্য হয়েই তাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয়।
সমাজ যাকে আজীবন অচ্ছুত করে রেখেছে, ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে সে সুবিধা করবে কীভাবে! একদিন খেয়ে, দুদিন না খেয়ে কোনোমতে বেঁচে ছিল। আজ অভূক্ত দুর্বল শরীর নিয়ে কোনোরকম হাঁচড়ে-পিছড়ে ঈদগাহে এসেছিল একমুঠো অন্নের জন্য দুটো পয়সার আশায়। তাকে ঈদগাহে দেখে খেঁকিয়ে ওঠে আসকন্দর শেখ। শেষমেষে ঈদগাহ থেকে বের করে দেয়ার জন্য গলাধাক্কা দেয়। মল্লিকের অভূক্ত জীর্ণ শরীর ধাক্কাটা সামলাবার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
মল্লিকের ভূমিশায়ী শরীররটার পাশে বসে পড়ে আরণ্যক। মল্লিকের মাথাটা নিজের ডান বাহুর ওপর রেখে উঁচু করে ধরে। তারপর বাম হাত দিয়ে নাড়ি পরীক্ষা করে দেখে- সমস্ত দেহ নিথর, ঠোঁট দুটোই শুধু তিরতির কাঁপছে। অনেকেই এতক্ষণ মৌখিক সমবেদনা দেখালেও ডোম বলে কেউ তাকে স্পর্শ করেনি। আরণ্যককে দেখে ছিঃ ছিঃ করে উঠল অনেকে। তাতে ওর মহাভারত অশুদ্ধ হলো না। মল্লিকের যে অবস্থা মৃত্যু তাকে বেশিক্ষণ অচ্ছুৎ করে রাখবে না। তাই সে মল্লিককে বাঁচানোর জন্য কারও নিকট সাহায্য প্রার্থনাও করল না।
সকাল-দুপুরের মধ্যবর্তী পর্যায়ের মিষ্টি রোদ মল্লিকের মূর্ছিত অবয়বে প্রতিফলিত হয়ে ঝিকমিক করছে। হঠাৎ কোথা থেকে এক টুকরো মেঘ এসে সূর্যটাকে আড়াল করে দেয়। সেই মেঘের ছায়ায় আরও মলিন হয়ে ওঠে মল্লিকের মুখ । আরণ্যক অন্য সবার মুখের দিকে তাকায়। মেঘ শুধু মল্লিকের নয়, সবার অবয়বেই ছায়ার আস্তরণ ফেলেছে। কিছুক্ষণ পর মেঘটা সরে যায়। ছায়াকে বিতাড়িত করে আবারও ঝিকমিক করে ওঠে আলোক রশ্মি। আবারও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মল্লিকের মুখ, আরণ্যকের মুখ, সবার মুখ। আরণ্যকের মনে হয়, ‘ঈশ্বর থাকেন ঐগাঁয়ের ভদ্রপল্লিতে, এখানে তাঁহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না’ উক্তিটা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি আক্ষেপ নয়- এর বাস্তবতা এখন মর্মে মর্মে অনুধাবন করছে সে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের মাঝে যখন এক পশলা শান্তির বৃষ্টি নামে, তখন তা সুষমভাবে বণ্টিত হয় মল্লিক চন্দ্র, শ্যামচাঁদ ঠাকুর, জামশেদ মিয়া, করিম মণ্ডল, আসকন্দর শেখদের মাঝে। আবার যখন কাল বৈশাখি প্রবল বেগে হানা দেয়- তার তীব্রতাও সবখানে সমান। পার্থক্য শুধু বাঁশ-বিচালি দিয়ে তৈরি মল্লিকদের নড়বড়ে কুঁড়ে ঘর- যা দমকা বাতাসেই তাশের ঘরের মতো হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। অপর দিকে মল্লিকদের রক্ত চুষে তৈরি শ্যামচাঁদ, জামশেদ, করিম, আসকন্দরদের বিশাল বিশাল অট্টালিকা- যার কাছে কাল বৈশাখীও তুচ্ছ বায়ু প্রবাহ মাত্র।
হঠাৎ দূরে কোথায় যেন ‘ক্যাঁ ক্যাঁ’ করে আর্তনাদ করে ওঠে একটা টিয়াপাখি। আরণ্যকের ভাব সাঙ্গ হয়। মাথা উঁচু করে দক্ষিণের দিকে তাকিয়ে বাতাসে দোদুল্যমান ডোমপুকুরপাড়ের সারবাঁধা নারকেলগাছ আর লিচুাছটা দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে। এখন সেখানে ধু ধু নীল আকাশ। তাহলে পাখিটার ডাক শোনা যায় কোথা থেকে?
‘ওগুলো যাযাবর টিয়াপাখি।’ মনের কাছ থেকেই জবাব পেয়ে যায় আরণ্যক।
লেখক: আব্দুল গাফফার রনি
মন্তব্য
(গুড়)
ভালো লেগেছে গল্পটি তবে শেষের দিকে ছন্দ কেটে গিয়েছিল।
নিজেই ছন্দছেঁড়া (ছন্নছাড়ার অপভ্রংশ) মানুষতো...
অসাধারণ (গুড়) (গুড়) (গুড়)
ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন