- সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড
তারেক অনুর লেখা "শুভ জন্মদিন ডেভিড অ্যাটেনবোরো" পড়ছিলাম,একটা জায়গায় এসে চোখ আটকে গেল,তুলে দিলাম সরাসরি,যদি না আমাকে কপি পেস্ট মামলায় ফাঁসানো না হয়।
- সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড
তারেক অনুর লেখা "শুভ জন্মদিন ডেভিড অ্যাটেনবোরো" পড়ছিলাম,একটা জায়গায় এসে চোখ আটকে গেল,তুলে দিলাম সরাসরি,যদি না আমাকে কপি পেস্ট মামলায় ফাঁসানো না হয়।
সর্বক্ষমতাশালী পরম দয়ালু ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নিজের জীবনের একটি ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন---আফ্রিকার এক নদী তীরে এক শিশুর চোখে এক ক্রিমি (worm ) বেড়ে উঠতে দেখেছিলাম, এর ফলে শিশুটি নিশ্চিত অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। এখন আমাকে বল যদি সব প্রাণের সৃষ্টি এবং পালন সেই দয়ালু ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই হয় তাহলে কেন তিনি সেই ক্রিমির বেড়ে ওঠার জন্য আর কোন জায়গা বেঁছে নিলেন না, কেন এক নিষ্পাপ শিশুর চোখই তার পছন্দ হল?
নিজের অভিজ্ঞতার কোথাও মনে পড়ল,প্যারাসাইটোলজি পরীক্ষার সময়ে কার্ড বাছতে গেলাম,দুটো প্রশ্নের পর তৃতীয় প্রশ্ন লোআ লোআ কৃমির গঠন,সংক্রামন,জীবন চক্র এবং সনাক্তকরন। চোখের এই কৃমির নামই লোআ লোআ loa loa । ভয়ঙ্কর এক পরজীবী।
সময়মতন চিকিৎসা না হলে যে কৃমি মানুষকে করতে পারে অন্ধ,আর সেই সাথে মস্তিষ্কে পৌঁছে পেরিফেরিয়াল সিস্টেমকে করে দিতে পারে অসাড়। চোখের মতন সংবেদনশীল অঙ্গে আমরা সামান্য ধুলো সহ্য করতে পারিনা,সেখানে লোআ লোআ চোখের মনিতে শাদা অংশে অবস্থান করে দীর্ঘদিন।
তবে এখন পর্যন্ত মায়ানমার,মালদ্বীপে লোআ লোআ এর কিছুটা নিম্নমুখী প্রকোপ দেখা গেলেও মধ্য আফ্রিকা এবং পশ্চিম আফিকায় এর সংক্রামন ভয়াবহ । নীচের ম্যাপে সংক্রমিত অঞ্চলগুলো দেখুন।
ইতিহাস ছাড়া শুরু করা ঠিক হবে না,প্রথম লোআ লোআ কৃমি সনাক্ত করেন এক ফ্রেঞ্চ সার্জন, লোআ কৃমি তখন এক মহিলার চোখের উপর থেকে সরে যাচ্ছিল,তিনি মহিলার চোখ থেকে এই কৃমি সরাতে ব্যর্থ হন,এটা ছিল ১৭৭০ সালের ঘটনা।
১৭৭৮ সালে আরেকজন সার্জন আফ্রিকান ক্রীতদাস বয়ে আনা জাহাজে কিছু আফ্রিকান কৃতদাসের চোখে এই কৃমি দেখতে পান,সেই প্রথম তিনি সফলভাবে কৃমি অপসারন করেন এক দাসের চোখ থেকে।
লোআ লোআ গোল কৃমির অন্তর্ভুক্ত,লম্বাটে। নেমাটোডা পর্বের। এরা বাস করে মানুষের চামড়ার নীচে চর্বির স্তরে। মাঝে সাঝেই এরা চোখে মাইগ্রেট করে,এই জন্যই এদেরকে চক্ষু কৃমি বলা হয়। বিশেষ ভাবে বলা হয় আফ্রিকান চক্ষু কৃমি।
তবে সংক্রামনের বিভিন্ন স্তর খুবই মজার এবং চক্রাকার। ভাবছেন কৃমি সরাসরি মানুষের স্কিনের তলে কিভাবে এল? অবশ্যই সরাসরি আসেনি।
আফ্রিকায় মূলত দুই ধরনের মাছি এই কৃমি ছড়ায়। আমের মাছি mango fly এবং হরিনের মাছি deer fly। নামগুলো ঠিক যতটা নিষ্পাপ প্রাণী হিসেবে তারা ঠিক ততটাই ভয়ঙ্কর। মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকায় মূলত এরা রাজত্ব করে। কারণ হোল উপযোগী পরিবেশ। রেইন ফরেস্ট এবং উষ্ণ ভুমিতে বাস করতে এরা ভালবাসে। ( rain forests and warm swamps in central and western Africa.)
হরিন মাছির একটা ছোট ভিডিও দেখুন এখানে
হরিন মাছি
আমাদের গায়ে মাছি পড়লে আমরা হাত নেড়ে যেমন উড়িয়ে দেই,এদের ক্ষেত্রে বিষয়টা ঠিক ততটা সহজ নয়,এরা একটু মানব প্রিয়। মানুষের রক্ত খেতে ভালবাসে,তাই গায়ে পরে কামর দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। আর যেই সেই কামর নয়,কামর গুলোও বেশ রোম্যান্টিক। কারণ হরিন মাছি রক্ত চুষতে গিয়ে মানুষের স্কিন ফুটো করে,মশার যেমন রক্ত চুষনী নল আছে,মাছির নেই। তাই প্রচণ্ড ব্যথার উদ্রেক করে এই হরিন মাছির রক্ত চোষণ পর্ব। এই মাছি আবার শুধু দিনে দিনেই রক্ত পান করে। কামরের কিছু নমুনা দেখুন ছবিতে
পিঠের পর পায়ের কামড় দেখুন ছবিতে
এবারে ছবিতে দেখুন হরিন মাছি
দুই ধরনের মাছি আলাদা আলদা ভাবে চেনার প্রয়োজন রয়েছে। এবারে দেখুন আমের মাছি
ইতোমধ্যে সংক্রমিত হরিন মাছি অথবা আম মাছি রক্ত চুষে ফিরবার পথে চামড়ার নীচে রেখে যায় নারী লোআ লোআ ( গুরু দক্ষিনা)। তবে লোআ লোআ কৃমি যৌনতায় বিশ্বাসী। পোষকের দেহে নারী ও পুরুষ কৃমির মিলনে নারী গর্ভবতী হয়।
জীবনচক্র এখান থেকেই শুরু হয়,নারী লোআ লোআ চামড়ার নীচে অবস্থান করে শেল সম্বলিত ডিম প্রসব করে,এই ডিমকে বলা হয় মাইক্রোফিলারে(microfilariae )
ভ্রমনে আগ্রহী এই ডিমগুলো দিনে পেরিফেরিয়াল রক্তে এখানে সেখানে ভ্রমন করতে থাকে। তবে রাতে ( নন সারকুলশোন ফেজ) এরা ফুসফুসে অবস্থান গ্রহন করে। ঠিক এই সময়ে দিনে যদি এই ডিম আক্রান্ত কোন মানুষকে, সুস্থ হরিন মাছি কামড় দেয়,তখন সেই সুস্থ হরিন মাছি আক্রান্ত হবে (গুরু দ্বারা শোধবাদ)
এর পর আবার মাছির দেহে চক্র।
এবং ডিমগুলো হরিন মাছির দেহে গিয়ে শেল ভাঙবে,এবং পাকস্থলীতে গিয়ে আশ্রয় নেবে এবং শেষে থোরাসিক মাসেলে (বুকের পেশী) পৌঁছে যাবে।
এখানেই এরা উন্নয়নের জোয়ারে ভাসে। তিনটি স্তরে এরা শেষ পর্যন্ত সংক্রামক লার্ভায় পরিনত হয়।
প্রথম পর্ব> দ্বিতীয় পর্ব> সংক্রামক লার্ভা
সংক্রামক লার্ভা দেখতে অনেকটা এই রকম
সংক্রামক লার্ভাকে বলা হয় ইনফেক্টেড ফিলারিয়াল লার্ভা। প্রায় দু সপ্তাহ ধরে এদের এই পরিবর্তন ঘটে। এর পরে মাছির মুখে ও খাদ্যনালিতে এসে এরা আশ্রয় গ্রহন করে।
এই হরিন মাছির আবার রক্ত চোষার প্রয়োজন হয়,এরা আবার মানুষের দেহ আক্রমন করে,এবং উপহার হিসেবে এই কিস্তিতে রেখে যায় সংক্রামক লার্ভা।
এর পর প্রায় এক বছর ধরে স্কিনের নীচের চর্বি টিস্যুতে এদের লালন পালন হয়। মানুষের দেহে লোআ লোআ ১৭ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে।
ছবিতে দেখুন জীবনচক্র
সারা দেহে যৌবন এলে এরা চলতে ফিরতে শুরু করে, স্কিনের নীচে,তখন প্রচণ্ড চুলকানির উদ্রেক হয়,এবং চামড়া লাল হয়ে যায়, এদের মেটাবলিক বাইপ্রোডাক্ট গুলোও উদ্রেক করে চুলকানির। কিছু কিছু বেদ্দপ কৃমি সংবেদনশীল অঙ্গগুলোতে পৌঁছে যায়,চোখের মনিতে,শাদা অংশে। চলার পথে এরা যে মসৃণ সেটা কিন্তু একদমই ভাবা যাবে না,এরা যাবার পথে রেখে যায় প্রচণ্ড ব্যথা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টি করে এলার্জি।
বেশি বেদ্দপ কিছু কৃমি চোখের লাইনে না গিয়ে চলে যায় মস্তিস্কে,সেখানে সৃষ্টি করে ক্ষত। এই রোগের নাম eosinophilia।
কি কি ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেটাও জানা একান্ত প্রয়োজন।
১) শরীরের বিভিন্ন সংযুক্তিতে ব্যথা
২) বৃহদান্ত্রের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত এবং পাতলা পায়খানা।
৩) বৃক্কের রোগ membranous glomerulonephritis
৪) পেরিফিরিয়াল নার্ভাস সিস্টেম ধ্বংস হওয়া
৫) রেটিনোপেথি ( ধীরে ধীরে চোখের রেটিনার ড্যামেজ)
কিছু চিত্রতে দেখুন চোখের উপরে কৃমির বাস
এবং চিকিৎসা না হলে ধীরে ধীরে একসময় আক্রান্ত মানুষটি হারায় তার দৃষ্টি শক্তি,এবং ধ্বংস হয় পেরিফেরিয়াল নার্ভাস সিস্টেম।
সনাক্তকরনের ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা হয়,এবং রক্তে লোআ লোআ মাইক্রোফিলিয়ারে এর উপস্থিতি নিশ্চিত হলে চিকিৎসা করা হয়।
কৃমির সংরক্ষনের কথা বলতে হয়,মানুষ এদের প্রথম পছন্দ। তবে মানুষের শরীর না পেলেও এরা ষাঁড়,ঘোড়া এবং টিকটিকির দেহে বেচে থাকতে পারে অনেকদিন ধরে।
রেটিনা খেয়ে ফেলা এক কৃমির ভিডিও দেখুন এখানে
রেটিনা শেষ
মন্তব্য
ছবিগুলো কোথায় গেলো?
নিজেও বুঝতে পারছি না,কোথাও হারাল ছবিগুলো। ঠিক মতই তো দিয়েছিলাম((((((
লেখা ভালো হয়েছে। নতুন বিষয় জানা হল। নিয়মিত লিখতে থাকুন
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ছবি কো?
কিছুদিন আগে চোখের ডাক্তার বললো এই রোগের কথা... ডরাইছি
আপনার পোস্ট পড়ে ডর বাড়লো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আফ্রিকাতে আছেন নাকি? বাংলাদেশে এই রোগ হবার সম্ভাবনা কম আছে। ছবি গুলো এখন না দেখাই ভালো,ভয় আরও বেড়ে যেতে পারে। ছবিগুলো পুনরায় এড করার চেষ্টা করছি। পড়বার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ছবিগুলো দিতে চাচ্ছি।
লার্ভা
পায়ে মাছির কামড়
হরিন মাছি
আমের মাছি
চোখের মধ্যে কৃমির বাস
পিঠে কামড়
অধিক সংক্রমিত অঞ্চলগুলো
মডারেটরের প্রতি অনুরোধ রইল ছবিগুলো যদি সম্ভব হয় যোগ করে দেবার।
অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলো এই ম্যাপে
ছবি গুলো দেয়া হয়েছে। ঠিক আছে কিনা দেখে জানাবেন অনুগ্রহ করে।
ভাইয়া অনেক ধন্যবাদ। সব ঠিক ঠাক মতন হয়েছে। আবারো ধন্যবাদ।
বেশ ভালো লাগলো। রোগটা সম্পর্কে জানা গেলো।
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
এ কী দেখালেন ভাই!!
লোয়া লোআ সম্পর্কে কৌতূহল ছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ইগনোরেন্স ইস ব্লিস!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আশা করি কৌতূহল কিছুটা হলেও মিটেছে। পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
ভয় পাইছি । তবে পোষ্ট চমৎকার হয়েছে।
এক আধটু ভয় থাকা খারাপ না। ধন্যবাদ।
ওরে সব্বোনাশ ! কী ভয়াবহ প্রাণী !!
ডরাইছি !!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভয়াবহ পরজীবী। ভয় পাবার কিছু নেই আপাতত। মাছি থেকে বেচে চললেই হোল। ধন্যবাদ।
খুব ভয় লাগল পড়ে এবং দেখে।
তবে লেখা ভাল লাগল। একটা নতুন জিনিস জানতে পারলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাল থাকবেন।
পড়বার জন্য ধন্যবাদ। আপনাকে জানাতে পেরেও ভালো লাগছে।
ভয় পেলুম।
লেখা ভালো লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লিখেছিস। চালিয়ে যা। তোকে সচলে দেখে ভালো লাগছে।।। সুস্বাগতম
তোকে দেখেও অনেক ভালো লাগছে,কেমন আছিস? পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
আর জায়গা পেলনা,
>অনেক অনেক সুন্দর পোষ্ট দিয়েছেন, খুব ভাল লেগেছে।।।।।।
#ভাল থাকুন সবসময়
ভয় পাইছি(((( পোস্ট ফিরায়ে নেবার কোন উপায় আছে? পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
eosinophilia? আমিতো জানতাম eosinophilia মানে রক্তে eosinophil এর পরিমাণ কমে যাওয়া।
ভাইয়া আপনি ঠিক ধরেছেন,লোআ লোআ এর কারনে প্রচণ্ড সল্পতা দেখা দেয় এই এসিনোফিল এর। কয়েকটি কারনের মধ্যে এডাল্ট লোআ লোআ একটি কারণ।
Loa loa filariasis: cause of severe eosinophilia
মাছি দেখিয়া মনে পরল- নবীজী বলেছেন,আপনার খাবার পানিতে মাছি পড়লে সেই পানি খেতে কোন সমস্যা নেই,কারণ মাছির এক ডানায় রোগজীবানু থাকলেও অপর ডানায় তার প্রতিকার আছে। সো এইসব হরিন বা বিচ্ছু মাছির ভয় দেখাইয়া লাভ নাই।
মমিন কি কয়? খুবই যৌক্তিক তথ্য।
ভালো লেগেছে ভাই_______চালিয়ে যান
পড়বার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ভীতিকর। এমন ভালোই লিখেছেন, ভয়টা গেড়ে বসেছে। তীব্র বেদনা অনুভব করছি আক্রান্ত মানুষগুলোর জন্য
আমারো প্রচণ্ড সহানুভূতি এদের জন্য। ভয় তাড়িয়ে দিন। চিকিৎসা আছে,কোন ভয় নেই। পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
facebook
কপি পেস্ট মামলায় ফাঁসানোর বদলে আপনি আমাকে দিলেন থাম্বস আপ!!!! সচলের সচলেরা দেখি খুবই উদার। অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
সত্যিই ভয় পেয়েছি, চোখের ভেতর দেখে। এর আগে টেলিভিশনে একটা ছবি দেখেছিলাম। এখন ও ভুলতে পারিনা দৃশ্যটা।
নতুন মন্তব্য করুন