যখনি আমার মন খুব খারাপ থাকে, তখনি মনে মনে কল্পনা করি ট্রেন এ উঠছি, বাড়ি যাবো...বাড়ি যাওয়ার সময় আমি কখনোই ট্রেনে ঘুমাই না...কিছু অপেক্ষার প্রহর প্রচন্ড আনন্দ দেয়, এটা তেমনি...
ট্রেনে উঠেই জানালাটা খুলে দিয়ে বাইরে তাকাই...
একটু পরেই ব্রাম্মনবাড়িয়া...তারপর কুমিল্লা ফেলে ফেণী...আরেকটু গেলেই যখন পাহাড় দেখা যায়, বুঝি সীতাকুন্ডে এসে পড়েছি...জানালা দিয়ে যখন ইন্ডাস্ট্রি দেখি, বুঝি আর মাত্র ৩০ মিনিট...তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে দরজায় গিয়ে দাড়াই...মায়ের মুখটা চোখে ভাসে...আর মনে মনে বলি, আমি জানি মা, তুমিও আমার জন্য দরজার সামনেই বসে আছো...কখন কলিং বেলটা বাজবে...দরজাটা খুলে দিয়েই আমায় জড়িয়ে বলবে, একদম শুকিয়ে গেছিস, নিশ্চয় খাওয়া দাওয়া একদমি করিস না!!
একটু দূরে বাবা দাঁড়িয়ে থাকবে...বাবা কখনোই আবেগ দেখায় না...ভাবখানা এমন ছেলে বাড়ি আসবে এতে এত আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে, আর ছেলে তো এখন আর ছোট না, সরকারি প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা!!! কিন্তু আমি তো জানি ডাইবেটিস এর রোগী আমার বাবা সকালের মর্নিং ওয়াক বাদ দিয়ে কেনো ঘরে বসে আছে...বাবারা মনে হয় এরকমি!! প্রথম কথাতেই জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি, জিজ্ঞেস করবে, মনযোগ দিয়ে চাকরি করছো তো!!
ছোট ভাইটা এসে বলবে, দারুন কিছু ফিল্ম নামায়ে রাখছি, তুই নাই তো তাই দেখা হচ্ছে না, তুই ফ্রেশ হয়ে নে, এখনি একটা নিয়ে বসি!! মা আবার চিল্লাবে...ছেলেটা সারা রাত জার্নি করে আসছে...এখন কোন সিনেমা হবে না, আগে নাস্তা করে ঘুমা, তারপর সব...দেখতো চেহারার কি হাল হয়েছে!!
পাহাড়তলি চলে এসেছি...আর মাত্র কয়েকটা মিনিট...সময়টা যায় না কেনো? মিনিটে তো ৬০ সেকেন্ড জানতাম, এখন তো মনে হচ্ছে, ১২০ সেকেন্ডেও ১ মিনিট যায় না!
ছোট বেলায় দুর্গা পূজার আগে দিন গুনতাম ... প্রতিদিন কয়েকবার নতুন কাপড় বের করে দেখতাম আর হিসেব করতাম কবে পূজা আসবে, নতুন কাপড় পড়ে প্রতিমা দেখতে যাবো...
কিছু আনন্দের অনুভুতি বোধ হয় এরকমি, কখনোই পালটায় না, সময়ের সাথে ঘুনে ধরে যায় না...কিছু অপেক্ষার প্রহর সবসময়েই খুব বেশি আনন্দের...
ওই যে রেল স্টেশন দেখা যাচ্ছে...আর মাত্র অল্প কয়েকটা মুহূর্ত...তারপর ট্রেন থেকে নেমেই রিক্সা...নিউ মারকেট এর উল্টা দিক এর ছোট গলি দিয়ে রিক্সা ঢুকে গেল...ওই যে আমার ঘর দেখা যাচ্ছে ......কলিং বেল দিলেই মা এসে দরজা খুলবে.........
লেখক পরিচিতিঃ The Shaikat Debnath
মন্তব্য
লেখা ভালই লাগছে। কিন্তু দাঁড়ি কমা কোথায় গেলো? এটা ভাল্লাগে নাই।
আমার মনে হয় যারা বাইরে থাকেন তাদের সবারই এই রকম অনুভতি ছুয়ে যায়। অনেক ভাল লাগলো।
লিখা বেশ হয়েছে। শিরোনামটা ও জটিল হয়েছে।
মনে হল একটা কবিতা পড়লাম। আবেগে মাখামাখি লেখাটার আদ্যোপান্ত। মা, বাবা, ছোট ভাই, নিজের বাড়ি, নিজের শহরের প্রতি মানুষের যে সার্বজনীন টান, তা অসাধারণ ভঙ্গিতে ফুটে উঠল আপনার কাব্যময় লেখাটিতে।
শেষের লাইনগুলো বার বার পড়ছি। কেমন একটা কষ্টের অনুভূতি তৈরি করে দিচ্ছে তা! খুব বাড়ি যেতে মন চাইছে! বাড়ি। গ্রাম। ধান ক্ষেত। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ। হাতছানি দিয়ে ডাকছে!
লেখা ভাল লাগল।
তবে মুর্শেদ ভাইয়ার সাথে আমিও একমত।
এইটা আমার প্রথম লেখা। আগে কখনোই লেখালিখির অভ্যাস ও ছিলো না। বাড়ির জন্য মনটা খারাপ লাগতেছিলো, তাই ভাব্লাম লিখি। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ, আর পরবরতীতে লেখার সময় দাড়ি, কমার বিষয়টা মাথায় রাখার চেষ্টা করবো।
নেন আপনার জন্য একখানা গান।।http://www.youtube.com/watch?v=k-ImCpNqbJw&feature=bf_next&list=PLBB59ED...
মন খারাপ কইরেন না, আমাদের সবারি মন কেমন করে বাড়ির জন্য।
ধন্যবাদ
নিশ্চয়ই, স্বপ্ন যাবে বাড়ি...
সচলে সু-স্বাগতম!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
ধন্যবাদ
এরকম আবেগমাখা, মায়াভরা লেখা পড়তে ভালো লাগে।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বাড়ি যাবো!!
লেখাটা আমার কাছে ভালো লাগলো। মুর্শেদ ভাই এর সাথে আমি একমত না। পাংচুয়েশন খুব একটা জরুরি না। (ব্যক্তিগত বিশ্বাস)। লেখাটার আবেগ আমার ভালো লেগেছে, লেখাটাও। পাংচুয়েশন দিলেও কি ভালোলাগাটা কম বা বেশী হতো? না বোধহয়। অসম্ভব আবেগ নিয়ে লেখাটা- থাকনা মুক্ত হয়ে - পাংচুয়েশন-এর গারদে বন্দী না হোক!
ক্রেসিডা
ক্রেসিডা, আমার ব্যক্তিগত চিন্তাটাও আপ্নার মত, দাড়ি, কমা কিংবা অন্য যে কোন যতিচিহ্ন তো কেবল মনের ভাব প্রকাশের জন্যই, সেটা যদি যতি চিহ্ন ব্যবহার না করেও পারা যায়, তবে সমস্যা ক্কোথায়? বায় দা ওয়ে, আপ্নার কবিতা অসাধারন।
ধন্যবাদ। তবে যুক্তাক্ষরগুলো ঠিক করে নিয়েন সময়ের সাথে।
শুভকামনা।
ক্রেসিডা
নতুন মন্তব্য করুন