পুস্তক বন্দনা ও কিছু স্বপ্ন বন্দনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১১/০৫/২০১২ - ৯:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলায়তন পরা শুরু ,যখন থেকে একাকিত্বের সঙ্গী হয় আমার লেপটপ খানি . অনেক বার ভেবেছি নিবন্ধন করব , কিন্তু এত এত কঠিন নিয়মাবলী দেখে বারবার পিছ পা হই.কিন্তু পাগল মন কে আর ঠেকাতে পারলাম না . হাতে খড়ি নিলাম ( আশা করি নাকে খড়ি দিতে হবেনা ).

আমি লেখালেখির ধারে কাছে নাই কিন্তু পড়তে বেশ মজা পাই. আমার মা বলেন আমাকে নাকি আমার বই দিয়ে পুড়িয়ে ফেললেও আমার বই সেল্ফ থেকে কমবেনা. যাই হোক না কেন আমি বই পড়া ছাড়িনা. আমার খুব ই কষ্ট হয়েছিল যখন এবার দেশে গিয়ে আমার Physics এর প্রায় অনেক গুলো বই খুঁজে না পেয়ে . আম্মু কে জিগ্গেস করতেই আম্মু একগাল হাসি নিয়ে বলল " বইগুলা তো আমি বিক্রি করে দিয়েছি , তুই নাই দেশে আর ঐগুলা তো তোর বি.এসসি এর বই ছিল , এখন কোনো কাজে আসবেনা তাই বেচে দিলাম " । কষ্ট হলো অনেক,টিউশন এর টাকা জমিয়ে বই গুলো কেনা । কিন্তু কিছু মুখ ফুটে বলিনি ; আর জিগ্যেস করার মত দৃঢ়তা ছিলনা যে ওগুলো কি পুরানো বই এর দোকানে দিয়েছে নাকি পুরানো কাগজের দোকানে ?? যদি দ্বিতীয় টা হয় তাহলে আমি নীল হয়ে যাব বেদনায় (এখন অবস্য এই ভয় টা একদম কম. কিন্ডল ( Kindle) e-book আমার মনের কষ্ট অনেক কমিয়ে দিয়েছে)

বই পরা নিয়ে অনেক অনেক মজার কিছু অভিজ্ঞতা আছে আমার। একদিনের ঘটনা আমার নানু কে দেখতে একজন ডাক্তার এসেছেন আমাদের বাসায়, উনাকে আমার পড়ার রুমএ বসানো হলো। উনি আমার বুক সেল্ফ এ একনজর চোখ বুলিয়ে আমার খালাকে বললেন " আপনার মেয়ে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করছে , মেডিকেল এর বই ছাড়া অন্য কোনো বই ভবিষ্যতে কোনো কাজে আসেনা। তাই আপনার মেয়েকে বই না কিনে ফটোকপি করতে বলবেন, অনেক টাকা বেচে যাবে". আমি বাচ্চাদের পরিয়ে বাসায় এসে দেখি আমার খালা মহান ডাক্তার এর বাণীকে অতি সত্য ভেবে আমার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাগগা জারি করেছে. পরে অবস্য খালা নিজেই বই কিনে দিতেন ( কখনো ঢাকা থেকে আবার কখনো ইউ.কে থেকে)।
আমি যখন চট্টগ্রাম শহর থেকে ভার্সিটি তে যেতাম ( লোকাল মুড়ির টিন বাস এ করে) আমার হাত এ একটা বই থাকত অথবা কিছু নোটস , অনেক টা আতেল বলা যায় আমাকে সোজা ভাবে। তো একদিন আমি বই এর মাঝে এমন ভাবে শিধিয়ে গেছি বাস এর হেল্পার আমার বলছে " ও বইন, ফইর্তে ফইর্তে তো ওনর ভার্সিটি ফাড় হই গেয়ি, আর কত ফরিবেন ??" শুদ্ধ বাংলায় বলা " আপা, পড়তে পড়তে তো আপনার ভার্সিটি পার হয়ে গেল , আর কত পরবেন ? " শেষমেষ মিডেল অফ দা রোড নামিয়ে দিল আর আমি রিক্সাই চেপে ক্লাস এ। এরপর থেকে সাবধান থাকতাম ( সাথে বন্ধুরা থাকত , সময়মত ঘন্টা বাজানোর জন্যে)। এরকম ২ বছর কাটার পর জানলাম আমাকে ক্লাসে সবাই জ্ঞানপাপী আতেল বলে ডাকে, তাই আপাতত থার্ড ইয়ার থেকে ঐসব বদঅভ্ভ্যাশ (!) বাদ দিয়ে শুরু করলাম সোস্যাল লাইফ। হাসি-কান্না-ানণদ বিরহে কেটে গেল ভার্সিটি লাইফ। নিজের নামের পাশ থেকে আতেল শব্দটা ছাড়িয়ে ফেলেছি ততদিন এ..

ফ্রান্স আসার পর আবার বই এর ভুত মাথায় চাপলো কারণ সেখানে ট্রাম , বাস, মেট্রো তে কিছু লোক বই পরে। অনেক দিন পর আবার পূর্ণ উদ্যমে শুরু হলো পড়া আর দেখলাম একটা পুরা কমুনিটি আছে বুক রিডার। আসতে আসতে বৈচিত্র আনলাম ( কমিক বই থেকে শুরু করে আধাখেচরা সায়েন্টিফিক জার্নাল ) . কিছু বুঝি আর কিছু বুঝিনা (Bertrand Russell পড়তে গিয়ে হোচট খেয়ে পরি হরহামেশা )। পড়া + সোস্যাল লাইফ দুটি চলে সমানে. ... আর সাথে যদি আমার ভোজন রসিক জিহ্বা সঙ্গী হয় তাহলে মানুষের কাছে আসতে সময় লাগেনা।

অনেক আজে বাজে বকবকের পর কিছু স্বপ্ন নিয়ে কথা বলি। মানুষের কত কত স্বপ্ন থাকে , আমি ও স্বপ্ন দেখি । আবার চোখের সামনে তাদের ভাঙ্গতে ও দেখি। আমি অতি সাধারণ এক স্বপ্ন দেখি. সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বিদেশে সবাই বাংলাদেশ নামে চিনে সেই দরিদ্র দেশ যার ভবিস্যত পানির তলায় । কথাটা এই কারণে বলা যে বাংলাদেশ ঝুকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিন্হিত হয়েছে . কিছুদিন আগে ট্রেন এ চড়ে পাশের শহরে যাচ্ছিলাম. এক ভদ্রমহিলা যথারীতি জিগ্যেস করলো তুমি কি ইন্ডিয়ান ? উত্তরে না শুনতেই সে আশেপাশের সব দেশে নাম বলল . শ্রীলংকা /পাকিস্তান? বললাম না বাপু , আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি. সে রীতিমত অবাক হয়ে বলে এটা কথায়? ইন্ডিয়ার একটা শহর নাকি? পাক্কা ৩০ মিনিট তাকে জার্মান ভাষায় বলে বুঝতে হলো বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ. আমি জানি যারা দেশের বাইরে থাকেন তাদের যে কোনো সময় এই সমস্যা পোহাতে হয়. আর আমার মতন অভাগী দের তো প্রায় পড়তে হই এই সিচুয়াসন এ .
আবার বকবক শুরু করলাম..... আমার স্বপ্নের কথা বলি :
১. বাংলাদেশে স্কুল পর্যায় এ সহজ ভাবে বিজ্ঞান শিক্ষার একটা পাঠশালা খোলা, যেখানে বাচ্চারা জানবে কিভাবে বিজ্ঞান আমাদের পরিবেশেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে
২. গতি আর স্থিতি, তাপ আর তাপমাত্রা ইত্যাদির সহজ উদাহরণ তারা পাবে আশেপাশের পরিবেশ থেকে ( আমি জানিনা এখন ও স্কুল এর বিজ্ঞান বই এ ওই লেখাটা আছে নাকি " রেল লাইনের ২ পাতের মাঝে ফাক থাকে কেন? " যদিও আমি উন্নত বিশ্বে কোনো রেল লাইনের পাতের মাঝে ফাক দেখিনি হো হো হো
৩. আমাদের শিক্ষার পরিবেশ কে research oriented করে তোলা . আমাদের একজন শিক্ষক প্রফেসর হবার পর ভেবে নেন তাদের জীবন পরিপূর্ণ. কোনো ভাবেই উনারা বিজ্ঞান সম্প্রদায় এ কোনো অবদান রাখেনা ( এটা আমাদের সকলের স্বপ্ন হওয়া উচিত). আমার ধারণা আমরা যদি টেকনলজিক্যালি উন্নত (!) হতে পারি, আমাদের ঘুরে দাড়াতে বেশি সময় লাগবেনা. আরো অনেক কিছুই আছে মনের গহিনে......
অনেক আতলামি করে ফেলেছি যদিও , প্রথম লেখা তাই সব ব্যর্থতা আমার ( যদি এটা প্রকাশ হয় ) আর মোডারেসন এর কাঁচি তে কাটা পড়লে লেখার মৃত্যুর পুরা দায়ভার আমার কাধে নিলাম.


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

নাকে খড়ি দিতে হবে না। লেখা মন্দ লাগে নি। আমরা আপনার স্বপ্নের কথা পড়তে চাই। আপনার স্ট্রাগলের কথা পড়তে চাই। দিনপঞ্জী আকারে আপনার জীবনের ঘটনাগুলোর যেগুলো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য উপযোগী হবে সেরকম লেখাগুলো পড়তে চাই। আশা করি সচলায়তন আপনার লেখায় সমৃদ্ধ হবে। স্বাগতম।

দারুচিনি এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। দিনপঞ্জী আকারে লিখার মত সামর্থ্যবান হতে যোজন পথ বাকি।

তানিম এহসান এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো, ভালো লাগলো স্বপ্নের কথা শুনতে। স্বাগতম হাসি

দারুচিনি এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ

অমি_বন্যা এর ছবি

অনেক ভাল লিখেছেন। চালিয়ে যান।

সৌরভ কবীর  এর ছবি

আমার খুব ভালো লেগেছে। দারুন একটা সহজ ভঙ্গিমা আছে লেখায়। চলুক

বন্দনা এর ছবি

বাহ, প্রথমবারেই এত বড় লিখা, এবং বেশ গুছানো বলতেই হবে, আমার প্রথম লিখা দেখলে তো আপনি মনে হয় মূর্ছা যাবেন। সবার সাথে সাথে আমি ও আপনার আর ও না বলা স্বপ্নের কথা শুনতে চাই।

রুমঝুম ১ এর ছবি

ও বইন, লিখি যন।
ফইতে ফইতে আরাও যানি যাই ওনর কতা

দারুচিনি এর ছবি

দেঁতো হাসি

এবিএম এর ছবি

লেখাটা ভালো হয়েছে, সাজানো-গোছানো।
আপনার স্বপ্নগুলোর সাথে কঠিনভাবে একমত। চলুক
তবে একটা ব্যাপারে সমালোচনা না করে পারলাম না, অনেকগুলো বানান ভুল লেখায়। বাংলা বানানের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন প্লিজ।

পড়া
ল্যাপটপ
অবশ্য
বদঅভ্যাস
বৈচিত্র্য
জিজ্ঞেস
নিষেধাজ্ঞা

ভালো থাকবেন, আরো লিখবেন। হাসি

দারুচিনি এর ছবি

ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার জন্যে ধন্যবাদ. বাংলা ফোনেটিকস ব্যবহার জানা নাই ভালো মতন. পরের বার যথাসাধ্য চেষ্টা করব শুধরে নেবার .
দারুচিনি

সুমাদ্রী এর ছবি

লেখার শেষে নাম উল্লেখ করতে ভুলবেন না। চট্টগ্রাম আলিয়ঁস-এর ছাত্রী ছিলেন কি? যাহোক, ভাল লিখেছেন। স্বপ্ন দেখে যান, স্বপ্নই বাঁচাবে আপনাকে।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

কল্যাণ এর ছবি

ইয়ে, মানে...

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

দারুচিনি এর ছবি

এই ইমো কেন রে ভাই ????? কনফিউসড !!!

তারেক অণু এর ছবি
cresida এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার লেখা। বই কেনা নিয়ে নিজের একটা অভিঞ্জতা শেয়ার করি।

তখন হয়তো ক্লাশ ৪ এ পড়ি। তখনকার দিনে ২টাকা অনেক বিশাল কিছু আমার কাছে। ১০টাকা একসাথে পাওয়া মানে হচ্ছে ঈদ এর দিন; হ্যাঁ- শুধু ঈদের দির সকালে একসাথে অতো টাকা পেতাম। যাই হোক- আমাদের অবস্থা ততো ভালো না, আর ছোট্ট ছিলাম- তাই ওইটুকু টাকাই অনেক। তো সেই টাকা জমিয়ে, বা আগের জমানো টাকা নিয়ে ঈদের দিন সকালে হাটা দিতাম ( ভাড়া বাচানোর জন্যে) নিউমার্কেটর দিকে। ক্যান্টনমেন্ট খেকে নিউমার্কেট। সেখানে যেতাম, কারন - এসদম সোজা পখে হাটা। সো, হারাবার ভয় নেই। এবং ওখানে সংবাদপত্র বিক্রয়কেন্দ্র খোলা থাকতো - সেখানে সেবা এর বই বা কমিকস পাওয়া যেত।

এরকম এক ঈদে আমার আনন্দ ৫গুন হয়ে গেল!! হ্যাঁ- এই প্রখমবার ৫০টাকা পেলাম একসাথে! ১০টা চকচকে ৫টাকার নোট।খুব যত্নে প্যান্টের পকেটে রাখলাম; কিন্তু ঈদের দিন যেতে পারলাম না নিউমার্কেট। ঠিক করলাম - পরেরদিন যাবো। সারাদিন পকেটে টাকা নিয়ে ঘুরাঘুরি। শুধু ২টাকা খরচ করেছিলাম একটা মুখোশ কিনতে। যাই হকো- বলে রাথি- যে চকচকে নোট - তাই একটু ফুলে থাকে নোটগুলো।

সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বাব ও মা জানতে চাইলো টাকা দিয়ে কি করেছি। বল্লাম ২টাকা খরচ করে মুখোশ কিনেছি, বাকি টাকা পকেটে।তারা দেখতে চাইলো। পকেটে হাত দিলোম।

রেডিমেড-ফ্যুলপ্যান্ট!! পকেট অনেকটা ছেঁড়া!! শুধু অনেক সংগ্রাম করে ৫টাকা এর একটা নোট ঝুলে আছে পকেটের মাঝে। বাবা-মা রাগ করে ওইনোটটাও হস্তগত করলো। মন খারাপ

ক্রেসিডা

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

প্রথমেই আপনাকে জানাই স্বাগতম। বাঘের বাচ্চা

বানান ঠিক রাখার পাশাপাশি আরেকটা দিকে নজর রাখতে অনুরোধ করব। তা হল 'ইমো'-র ব্যবহার। যদিও আপনি একটি জায়গাতেই ব্যবহার করেছেন মাত্র। কিন্তু সাধারণত অভিজ্ঞ সচলদের লেখা দেখে আমার মনে হয়েছে, 'ইমো' মন্তব্যে ব্যবহার করাই সংগত। অবশ্য আমার এই পর্যবেক্ষণ সর্বাংশে ঠিক নাও হতে পারে। চিন্তিত

আর এবারে বলি আপনার ভাষার কথা। খুবই সুন্দর, সহজ-সরল এবং ঝরঝরে আপনার লেখা। দারুণ লেগেছে। তবে লেখার শেষে নামটা দিতে ভুলবেন না যেন।

আপনার স্বপ্ন শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।
খুব ভাল থাকবেন আর নিয়মিত লিখবেন। হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চিটাগাঙ এর মেয়েদেরকে ভালু পাই। দেঁতো হাসি
লেখা ভালো লাগছে।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

দারুচিনি এর ছবি

দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।