• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

একাকীত্ব

রংতুলি এর ছবি
লিখেছেন রংতুলি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১২/০৫/২০১২ - ৩:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

400x

পর পর তিন রাত জেগে প্রজেন্টেশনটা প্রায় শেষ করে ফেললো আবীর। এটা নিয়ে তার তিনটি প্রজেন্টেশন হবে যা সে কোম্পানির হয়ে রেডি ও রিপ্রেজেন্ট করছে, আগের দুবার বেশ ভালো করায় এবারও বস তার ঘাড়েই এটা চাপালো। যদিও অফিসে কদর বাড়ছে ব্যাপারটা খারাপ না, তবে চিন্তা মাকে নিয়ে! কাজের প্রেশার বাড়লেই মা কেমন জানি অভিমানি হতে থাকে যদিও মুখে কিছু বলে না, কিন্তু আবীর বুঝে। মায়ের মলিন মুখটা দেখলে বুকের মধ্যে কোথায় যেন খচ খচ করে। একটা অপরাধবোধ ভর করে, ভাবে প্রেজেন্টেশনের ঝামেলাটা গেলে মাকে নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে আসবে। আবার ভাবে মা রিটায়ারমেন্টটা কেন এত তাড়াতাড়ি নিতে গেল, কাজের মধ্যে থাকলে সে ভাল থাকত। থাক! আপাতত প্রেজেন্টেশন নিয়ে ভাবা যাক!

এলার্মটা ঠিক ছটায় বেজে উঠলো, ঝটপট উঠে পড়ে আবীর। এলার্ম বাজার সাথেই উঠা তার একটা অভ্যাস। শাওয়ার নিয়ে মায়ের ঘরে যায়, মা ঘুমোচ্ছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে সকালের কোমল আলো এসে পড়েছে মায়ের মুখে, মাকে যেন একটা নিষ্পাপ ছোট্ট ঘুমন্ত মেয়ের মত লাগছে, মা মেঝেতে ঘুমোচ্ছে, সে মেঝেতে শুতেই বেশী পছন্দ করে। ধীরে ধীরে শব্দ না করে মায়ের কাছে গিয়ে বসে আবীর, মায়ের গালে আলতো করে হাত রাখে, পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী মুখটি এ মুহূর্তে সে দেখছে চোখ ভরে! অজান্তে চোখ ভিজে উঠে তার, মা চোখ খুলে দেখে ফেলে এই ভয়ে দ্রুত উঠে পড়ে, নিজের ছেলেমানুষিতে নিজেই লজ্জা পায়!

রেডি হয়ে দুকাপ চা বানায়। মায়ের চা-টা সাবধানে পিরিচ দিয়ে ঢেকে মায়ের পাশে রাখে, একটা কাগজে যত্ন করে লিখে, "মা, আজ প্রেজেন্টশন আছে, দোয়া করো, আর সময়মতো খেও। ভালো থেকো, লক্ষ্মী মা।" কাপের তলায় কাগজটা রেখে চলে আসে, শব্দ না করে দরজা খোলা এবং লাগানোর কাজটা ঠিক মত করতে পারে সে। নেমে আসে নিচে অভ্যাসবশত তিনতলার বারান্দায় তাকায়, মা দাড়িয়ে আছে চোখে ঘুম, চুলগুলো খোলা, মাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হাত তুলে বাই বলে আবীর, মা-ও হাত তুলে, দুজনেই হাসে। নিজের উপর বিরক্ত হয় সে, দরজা লাগানোর সময় হয়তো শব্দ হয়েছিলো! আবার ভাবে, ভালোই হলো মায়ের হাসি মুখটা দেখে যেতে পারছে, দিনটা শিওর ভালো যাবে।

..........................

মি. খালেক প্রসন্নমুখে বসে আছে আবীরের পাশে। প্রেজেন্টেশনে সে এতটাই মুগ্ধ যে নিজের উপর গর্ব হচ্ছে এবারও এটা আবীরকে দিয়েই করানোর জন্য। এই শান্ত, ধীরস্থির এবং গোছানো ছেলেটির প্রতি একটা ভালবাসা জন্মে গেছে তার। যদিও তাদের সাথে আর এক কোম্পানিকে ডাকা হয়েছে, কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতায় মি. খালেক জানেন কাজটা তারাই পাবে।

পরের কোম্পানির হয়ে প্রেজেন্টেশনে এলো একটি মেয়ে, স্মার্ট, উচ্ছল, প্রাণবন্ত আর চোখে চোখ রেখে কথা বলে। তারা যদিও আহামরি কিছুই হাইলাইটস করতে পারে নাই, তারপরেও কাজটি দুই কোম্পানিকেই দেয়া হলো।

আবীর ফিরছিলো লম্বা করিডোরটা দিয়ে, পেছন থেকে কেউ একজন ডাকলো, এক্সকিউজ মি, আপনার একটু সময় হবে?
ইয়েস, প্লিজ!
আমি কণা, আসলে আপনার সাথে পরিচিত হতে চাচ্ছিলাম। যেহেতু কাজটা আমাদের দুকোম্পানিই পেয়েছে, তো আমাদের একটু চেনা জানা থাকা উচিৎ,।
রাইট! আমি আবীর।
আমি জানি।
দুজনেই হাসল। আবীর ভাবছিলো কি বলবে এরপর, কিন্তু তার আর ভাবা লাগলো না। কণাই হেসে বলল,
কফি?
নো প্রবলেম।
এরপর কাজের কথা।

এবং তারপর,
কণা - প্রবলেম!
আবীর - সল্ভড!
কণা - হ্যালো!
আবীর - ইয়েস!
কণা - বলা
আবীর - শোনা
কাজের কথা, অকাজের কথা, শুধু কথা এবং একটু একটু করে যেন অনেকখানি জানা!

কণার কথা, ওর হাসি, ওর চঞ্চলতা বার বার ছুঁয়ে যায় আবীরকে। কণা ভালোবাসে ফুল, ও ভালোবাসে বই পড়তে, মুভি দেখতে কিন্তু হরর মুভি সে একদম পছন্দ করে না! ও প্রাণবন্ত, হাসি-খুশি, স্পর্শকাতর ওর ভেতরের অনুভূতি গুলো যেন এক নিমেষেই দেখা যায়, এতটা স্বচ্ছ ওর মন! কণার সাথে কোথায় জানি মায়ের সাথে মিল পায়, আবীর। কোথায় জানি একটা স্নিগ্ধ মায়া আছে ওর মধ্যেও! নিজের অজান্তেই আবীরের মন অপেক্ষা করতে থাকে কণার ফোনের জন্য, কিন্তু সে নিজে থেকে ফোন করতে পারে না, সবসময় একটা সংকোচ কাজ করে ভেতরে! কণা মাঝে মাঝে অভিমানী হতে থাকে, আশ্চর্য একটা মানুষ তো! নিজে থেকে একটা ফোনও করে না, খুব ভাব! যদিও সে কখনোই অভিমান ধরে রাখতে পারেনা, সব ভুলে নিজেই ফোন করে আবার। মায়ের সামনে কণার ফোন ধরতে অস্বস্তি লাগে আবীরের, সে উঠে বারান্দায় যায়। মা ছেলের সব কিছুই খেয়াল করে, আবীরের পরিবর্তনের ছোট্ট একটা আভাও বাদ পড়ে না মায়ের চোখ থেকে। মাঝে মধ্যে সময়-অসময় কণার ফোন করাটা ভালো চোখে নেয়না সে, নিজের মনেই বিরক্ত হয়, ভাবে আচ্ছা বেহায়া তো মেয়েটা!

..........................

কণা আবীরের বিয়ে হলো। কণার মনে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ!

আবীরের মনে দায়িত্ববোধ ও ভাবনা মা-ও সমান খুশি তো! সে কি পারলো মায়ের কষ্টের সাগরে সুখের অন্তত একটা ঢেউ যোগ করতে!

আর মা, যদিও প্রচুর উৎসাহের সাথে সে ছেলের বিয়ে দিলো, সবার মুখে বউয়ের প্রশংসা শুনে গর্বে বুক ভরে গেলো, তারপরেও মনের মধ্যে কোথায় জানি একটা অজানা ভয় বাসা বাঁধল!

মায়ের আচরনে দিন দিন পরিবর্তন আসতে থাকে। দ্বিগুন উদ্দীপনার সাথে সে ছেলের যত্ন-আত্তিতে মেতে ওঠে। ছেলের যত্নে কোথাও যেন এক ফোঁটাও কমতি না হয় এ ব্যাপারে সে অস্থির থেকে অস্থিরতর হতে থাকে! ছেলের সকালের নাস্তা, দুপুরের টিফিন, জুতো পলিশ, কাপড় আয়রন এসব ব্যাপারে অতিমাত্রায় সচেতন হয়ে ওঠে। আবীর মায়ের অস্থিরতার কারণটা বুঝে, মাকে আগের চেয়ে আরও বেশী সময় দেয়ার চেষ্টা করে, তার মন থেকে সব আশংকা মুছে ফেলতে চায় নিবিড় মমতায়। অশেষ নির্ভরতায় তাকে আশ্বস্ত করতে চায়, ভয় নেই মা এইতো আমি আছি, হারাইনি কোথাও!

অফিস থেকে ফেরার সময় আবীর ফুল আনে মায়ের প্রিয় ফুল দোলনচাঁপা, যত্ন করে সাজিয়ে রাখে মায়ের ঘরে, আর কিছু ফুল আলাদা রাখে কণার জন্য, মায়ের চোখে লাগে। রাতে মায়ের পাশে অনেকক্ষণ বসে থাকে আবীর, মা টিভি দেখতেই থাকে তার ঘুমোতে যাওয়ার কোন তাড়া থাকে না।
আবীর সাবধানে বলে, মা আমি ঘুমাতে যাই অফিস আছে।
মা বলে, যাও।
আবীরের উঠে যাওয়া, দরজা লাগানো, অকারণেই আঘাত দেয় তার মনে!

এভাবেই চলতে থাকে, মায়ের মনের আশংকা যেন দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে, সে যেন স্পষ্টই দেখতে পায়, এই মেয়ে তার ছেলেকে কেমন করে গ্রাস করছে, কেমন করে আবীরের জীবনে থেকে তার মার স্থান কেড়ে নিতে চাচ্ছে। কিন্তু এত সহজে এটা সে হতে দেবে কেন, ফলে প্রতিনিয়ত সে মেতে ওঠে প্রতিযোগিতায়, দমিয়ে রাখতে চায় কণাকে তার অন্যায় উদ্দেশ্য থেকে!

এদিকে ভীষণভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া কণার স্বপ্নগুলো হাঁসফাঁস করতে থাকে! মাঝে মাঝে আবীরকেও অচেনা লাগে খুব! চেষ্টা করে সবকিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে, কিন্তু ঝরণার মত কলকল করে বেয়ে যাওয়া কণার প্রকৃতি শুধু হোঁচট খেতে থাকে বারবার! প্রায়ই মনে হয় মানুষটির সমস্ত পৃথিবীই তো মাকে ঘিরে, এখানে আসলেই তার জায়গা নেই কোথাও! এত দিনের গল্প-উপন্যাস বা মুভিতে দেখা ভালোবাসার সব সংজ্ঞাগুলো মিথ্যে হয়ে যেতে থাকে!

আবীর পারে না কণার মনে কোন স্বান্তনা এনে দিতে, সে আসলেই অসহায়! সে পারে না স্বার্থপরের মত শুধু নিজের সুখ নিয়ে মেতে থাকতে। এতটা দীর্ঘ সময় যে মা জীবনের সব ঘাত প্রতিঘাত একাই সয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে তিল তিল করে শুধু তাকেই দিয়েছে, সে চায় না তার দেয়া কোনো অবদান খাটো করতে। তার মনে পড়ে যায় যখন মায়ের অফিসের কোনো প্রোগ্রাম, পিকনিক বা কারো বার্থডেতে যেত তখন সবার সাথে বাবা মা দুজনেই থাকত, তার সাথে থাকত শুধু মা। যখন স্কুলের প্যারেন্টস-ডেতে সবার বাবা-মা আসত, সেখানেও তার জন্য আসতো শুধু মা। তার মনে পড়ে কত রাতে জ্বরে যখন ঘুমোতে পারত না, তার পাশে সারারাত ভয়ে আতঙ্কে অস্থির হয়ে থাকতো মা। কখনও মাথায় পানি ঢালে, কখনও গা মুছে দেয়, কখনও থার্মোমিটারে জ্বর মাপে, আবার কখনও আজানা আতঙ্কে তাকে আঁকড়ে ধরে রাখে বুকের মধ্যে। এভাবেই কেটেছে তাদের কত অসংখ্য রাত, আবীরের টুকরো স্মৃতিতে আজও সব জীবন্ত। মায়ের সেই রাত জাগা ক্লান্ত চোখ আজও আবীরকে তাড়ায়, বার বার আবীর মাকে ভরসা দেয়ার চেষ্টা করে ভয় নেই মা, আমি আছি, হারাবোনা কখনও! মা-র যে আর কেউ নেই, ছিলনা! সারাটা জীবন মা একা, কেন! শুধু তার জন্য। মা চাইলে তো পারত সেই ভালবাসার ভাগ অন্য কাউকে দিতে, কিন্তু সেতো তা করেনি!

..........................

আবীর মাকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে! কণাকেও যাতে মা আবীরের মত করেই নিতে পারে সে চেষ্টা করতে থাকে। কণাকে দিয়ে মাকে বিভিন্ন বিষয়ের বই উপহার দেয়ায়, পড়ার এবং ব্যস্ত থাকার জন্য। তারা তিন জনে একসাথে সময় কাটায়, গল্প করে, ভাল ভাল মুভি দেখে, কখনও বাইরে খেতে যায়! উপরন্তু কণাকে দিন দিন মার আরও বেশী অসহ্য লাগতে থাকে, সব কিছুর মধ্যে কণার উপস্থিতি মা সহ্য করতে পারে না মোটেও! সে যেন আবার সেই আগের আবীরকে ফিরে পেতে চায়, যেখানে শুধু মা-ই ছিলো একমাত্র তার জীবনে আর কেউ না! তার শুধু মনে হতে থাকে কণা ষঢ়যন্ত্র করছে তার বিরুদ্ধে, আবীরকে কেড়ে নিতে! ভুলে যায় নীতিবোধ; রাতে চুপিসারে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কি বলছে ডাইনীটা, তার ছেলের মন ভোলাতে! কণার অনুপস্থিতিতে তার ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে ষঢ়যন্ত্রের কাল্পনিক কোনো চিহ্ন! এতো সহজে যেন সে ছেড়ে দিতে চায়না তার বুকের ধনকে, অন্যের কাছে! আবীরের কাছে কণাকে পদে পদে হেয় করতে সে সুযোগ খুঁজতে থাকে, তার প্রতিটা কাজের খুঁত বের করতে থাকে। তার কথা, কাজ এমনকি কাপড় পরার ধরণ নিয়েও শুরু করে সমালোচনা, বন্ধ হয়ে যেতে থাকে কণার আত্মীয় বা বন্ধুর সে বাড়ীতে আসা! স্বাধীনচেতা মেয়ে কণা ধীরে ধীরে অবাধ্য হতে থাকে, প্রতিবাদ করে। আবীরের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। মায়ের অনেক আচরণের ব্যাখ্যা চায় কণা আবীরের কাছে, কিন্তু আবীর চুপ থাকে, কারন ব্যাখ্যা তার নিজের জানা নাই। মায়ের অনেক কথার প্রতিবাদ সে আশা করে আবীরের কাছ থেকে, কিন্তু আবীর চুপ থাকে, কারণ সে মাকে কষ্ট দিতে পারে না।

এক পর্যায়ে কণা আবীর আলাদা থাকতে শুরু করে, তাদের গড়া ভালবাসার নীড় পূর্নতা পাবার আগেই ভেঙে যায়! তাদের কোনো হিসাব মিলে নাই, তাদের কোন চেষ্টা সফল হয় নাই! আবীর শুধু ভাবে, এতদিন পর তাদের জীবনে একটা সুখী হবার অবলম্বন আসলো, তাও সইলো না! বরং কষ্ট শুধু বেড়েই গেলো! মাকে সে কখনই দায়ী করতে পারে না। দায়ী শুধু ভাগ্য! যেখানে তাদের জন্যে কোন সুখ লেখা হয় নাই! সেখানে শুধুই কষ্ট! ক্লাস সেভেন এ থাকতে মায়ের দেয়া জন্মদিনের উপহার সেই কলমটা যখন হারিয়েছিলো স্কুলে, সেটা জানার পর মা তার সাথে নির্মমভাবে আচরণ করছিলো, তারপরও সে মায়ের উপর রাগ হতে পারে নাই। শুধু লুকিয়ে কেঁদেছিল খুব! নিজের অপরাধবোধে দগ্ধ হয়েছিলো তার কিশোর মন! মায়ের মনের জলন্ত আগুন এমনিভাবে তাকে পুড়িয়েছে অসংখ্যবার! মায়ের দেয়া প্রতিটা উপহার সে যত্ন করে রেখেছে। মায়ের মুখে একটু হাসি দেখতে সে দিন রাত এক করে পড়েছে, মায়ের হাতে তুলে দিয়েছে স্কুলে প্রথম হওয়া উপহারের সব বই গুলো! যদিও স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়তে যাওয়ার কথা সে ভাবতে পারে নাই কখনো, যেখানে তার বন্ধুরা একে একে সব বাইরে চলে যায়, সে রয়ে যায় মাকে আগলে!

..........................

স্মৃতির পাতায় আরো দুটি শূন্য বছর যোগ হয়, কণা অতীত ভুলতে কিছুটা পড়াশুনা ও কিছুটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে। এদিকে আবীরের জীবন মাকে নিয়ে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, মায়ের অবস্থা দিন দিন অস্বাভাবিক হতে থাকে। মা কখনোই বাড়িতে উটকো মানুষজন বা কাজের লোক পছন্দ করতো না কারণ হলো সে বাইরের লোককে কখনোই বিশ্বাস করতে পারতো না, তার সব সময় মনে হত তারা কিছু চুরি করছে নয়তোবা কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। যে কারণে বাসায় কোনো কাজের মানুষ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কখনো। মা এখন তাদেরই কারো কারোর কাল্পনিক অস্তিত্ব বাসায় টের পায়, যেমন- তারা বাসায় এসে লুকিয়ে থাকছে, মায়ের সব যত্নের জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, মাকে দেখে হাসছে, মাকে নিয়ে নানান ধরণের বাজে কথা বলছে। মা কখনও প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে নয়তো বা প্রচণ্ড রেগে যাচ্ছে, কখনো জোরে জোরে তাদের বকাবকি করছে! লুকিয়ে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে। রোজ সে এসব নিয়ে আবীরের কাছে অভিযোগ করছে, আবীর ওদের কিছু বলছে না দেখে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে! মায়ের বড় বোন যিনি কিনা প্রায় এক যুগ আমেরিকায় আছেন, মা হঠাৎই জানালা দিয়ে আবিষ্কার করে, সে পাশের বাসায় বেড়াতে আসে অথচ তার কাছে আসে না, মা আবীরের কাছে অভিযোগ করে, প্রচণ্ড দুঃখ ও অভিমানে ফেটে পড়ে! আবীরের কোন যুক্তি সে মানে না! আবীর ফোনে বড় খালার সাথে মায়ের কথা বলিয়ে দেয়, কিন্তু তাতেও কাজ হয় না!

বাইরে কোথাও গেলে মা বাসার ঠিকানা ভুলে যাচ্ছে, সামনে দিয়ে বারবার রিক্সা নিয়ে ঘুরছে অথচ চিনতে পারছে না নিজের বাড়ি, এক সময় ক্লান্ত হয়ে আবীরকে ফোন দিচ্ছে! মা তার সিগনেচার ভুলে গেছে! কখনো ভুলে যাচ্ছে আবীরের নাম, এমনকি তার নিজের নাম!

আবীর মাকে বাসায় একা রাখতে পারছে না, অফিসে সে সারাক্ষণ অস্থির থাকে! কারো কাছে মায়ের অবস্থা বর্ণনা করতে পারে না, বসের বা কলিগের অনেক প্রশ্নের উত্তর সে এড়িয়ে যায়। চায় না মাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা আলোচনার সৃষ্টি হোক! মাকে সারিয়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে! নানাভাবে তার চিকিৎসা করাতে থাকে, মাকে একজন মানসিক ডাক্তার রিকমেন্ড করা হয়। ধাক্কা খায় আবীর সে মেনে নিতে পারে না তার একমাত্র অবলম্বন যে মা, যাকে নিয়ে তার জীবনের সব পথ চলা, সেই মা কি পাগল হয়ে যাচ্ছে!

..........................

পি. জির সাইকিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অধ্যাপক ড. সামাদ ইবনে আবদুল্লাহ। ষাটোর্দ্ধ মাঝারি গড়নের মানুষ, উজ্জ্বল চেহারা। বসে আছেন হাতে এক কাপ ব্ল্যাক কফি। কিন্তু তার কফির পেয়ালায় চুমুক দেয়ার কোনো তাড়া নেই, তিনি তাকিয়ে আছেন আবীরের দিকে, যেন কথা ছাড়াই শুধু সেই দৃষ্টি দিয়েই আবীরের ভিতরের সমস্ত শূন্যতা তিনি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছেন! খানিকটা চিন্তার ছাপ যেন ফুটে উঠে তার কপালে, এভাবেই কাটলো অনেকক্ষণ! শেষে তিনি বললেন, মি. আবীর আপনি পাশের রুমটাতে বসুন, আপনার মায়ের সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই!

আবীর উঠলো, মা অসহায়ভাবে আবীরের দিকে তাকায়, আবীর চোখ দিয়ে মাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে যার অর্থ, 'ভয় নেই মা, আমি আছি!'

ড. সামাদ শুরু করেন এইভাবে, আপনি মিসেস. শিরিন আহমেদ। বয়স ৫৭। আপনি দির্ঘদিন কাজ করেছেন একটি প্রাইভেট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসাবে, তাই তো?
মা কোন উত্তর দেয় না, চুপ থাকে।
ড. সামাদ এবার মাকে প্রশ্ন করেন, মিসেস. আহমেদ আপনি আমাকে আপনার জীবনের একটি উল্লেখজনক ঘটনা বলবেন, আপনার হাজবেন্ড, মি. তারিক আহমেদ কীভাবে মারা গিয়েছিলেন?
মা, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, যেন লোকটা কেন এই অবান্তর প্রশ্ন করছে তা বুঝতে পারছে না!
ড. সামাদ কিছুটা সহানুভূতি প্রকাশ করে বলে, আমিই সত্যিই দুঃখিত, এই প্রশ্নটা করার জন্যে! কিন্তু আমাকে এটা জানতে হবে আপনার কাছ থেকে, আমি শুনেছি ইংল্যান্ডে তার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।
মা দৃঢ় ভাবে বলে উঠে, নাহ! তাকে খুন করা হয়ছিলো!
খুন! আপনি কি নিশ্চিত?
মা বলতে থাকে, তার চোখে মুখে স্পষ্ট সে ঘটনার প্রতিবিম্ব ফুটে উঠতে থাকে, যেন পুরো ঘটনাটা ঘটেছে তার সামনে, মাত্র কিছুক্ষণ আগে!

মায়ের পুরো বর্ননা ডাক্তার শুনে যায় চুপচাপ, কোথাও কোনো প্রশ্ন করে না। মাকে স্বাভাবিক হবার সময় দিলেন খানিকক্ষণ। তারপর বললেন, মিসেস. আহমেদ আপনি যদি অনুমতি দেন এবার আমি আপনার ছেলের সাথে কিছু কথা বলতে চাই? দয়াকরে আপনি ভয় পাবেন না, আমি তার কোন ক্ষতি করবো না।

ড. সামাদ আবীরের সংকোচ কাটাতে স্নেহমিশ্রিত গলায় বলে, আমি তোমাকে তুমি বলি, আফটার অল, তুমি আমার ছেলের মতই। আবীর তুমি যদি মনে কর আমি সত্যি তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারি তো আমাকে আগে তোমার জীবন সম্পর্কে কিছুটা জানতে হবে। একটু থেমে তিনি আবার যোগ করেন, এটাতো তুমিও বোঝো যে তোমার জীবন আর তোমার মায়ের জীবন আলাদা নয়, আশা করছি তুমি আমাকে তোমার পূর্ণ সহযোগিতাটাই করবে!

আবীর বলা শুরু করে, আবীরের ছোট থেকে বড় হওয়া, মায়ের আদর, শাসন, তাদের সুখ-দুঃখ, হতাশা, একাকীত্ব কোনোটাই বাদ পড়ে না ড.সামাদের তীক্ষ্ণ অভিজ্ঞ দৃষ্টি থেকে।
আবীরের বেলায় ড. প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে সব যথাযথ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে -
তোমার স্ত্রীর সাথে তোমার ডিভোর্স হয় কবে?
আবীর বলে, আমাদের ডিভোর্স হয় নাই। আমরা দু বছর আলাদা আছি।
তুমি কি মনে করো, সে এখন কেমন আছে?
আমি মনে করি সে এখন প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছে!
আর তুমি?
আবীর একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলে, আমি ভাল আছি। একটা দমবদ্ধকর অবস্থায় তাকে দেখতে বরং আমার বেশী কষ্ট হতো, যা আমি আপনাকে বলেছি!
আমি কি তোমার স্ত্রীর এড্রেস বা নাম্বার পেতে পারি?
দু বছর তার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ বা কথা হয় না, আবীর বলে কিছুটা বিব্রত গলায়।

ড. সামাদ এবার খানিকটা জোরাল গলায় বলে, দেখো আবীর, তোমার মা দীর্ঘদিন যাবত একটা মানসিক জটিলতায় ভুগছেন। সেটা নিয়ে আমি পরে কথা বলবো। এখন যে বিষয়টা আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ন মনে হচ্ছে তা হলো, তোমার মায়ের রোগটা সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত করেছে তোমাকে, অর্থাৎ তার এই মানসিক অসুস্থতার প্রত্যক্ষ শিকার তোমার নিজের জীবন! তাই আমি আগে তোমাকে এটেনশন দিতে বাধ্য হচ্ছি! Her isolation shouldn't cause your life!

..........................

তীব্র ঝড়ে অন্তঃসারশূন্য শুকনো গাছটি যেমন সবটুকু শক্তি দিয়ে, মাটিতে তার দূর্বল শেকড় আঁকড়ে শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করে, দীর্ঘ দুবছর পর আবীরকে ঝড়ে প্রানপণে টিকে থাকার চেষ্টারত সেই গাছটির মতই মনে হয় কণার কাছে! তার শুকনো বিবর্ণ মুখ, রাতজাগা ক্লান্ত চোখ যেন বলে দেয় অনেক না বলা কথা! আঘাত করতে থাকে কণার প্রতিটি সত্ত্বায়, অথচ এখনও সে চোখে আছে সেই একই মুগ্ধতা, একই ভালোবাসা!

কণা শুধু জিজ্ঞেস করে, কেমন আছ?
আবীর উত্তর দেয়, ভাল।
এরপরে আজ আর কোনো কথা খুঁজে পায় না তারা দুজনেই!

পাশের ঘরে মি. সামাদ অলসভাবে বইয়ের পাতা উল্টিয়েই চলেছে আপাতত কণা আবীরের কাছে যাওয়ার তার তেমন কোন ইচ্ছে নাই। খানিকবাদে ব্যস্ত ভঙ্গিতে সে ঘরে ঢুকে, আহা! আমি বোধহয় তোমাদের অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম! উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে বলতে থাকে, একটা লোমহর্ষক থ্রিলার পড়ছিলাম বুঝলে, যেখানে সুন্দরী নায়িকা প্রেমে পড়ে এক সুদর্শন মনোরোগ চিকিৎসকের, যার কাছে সে আসে নিজের একটা সমস্যা নিয়ে, এরপর ঘটতে থাকে একটার পর একটা খুন, চরম থ্রিল! শেষ না করে উঠতে পারছিলাম না!

এনিওয়ে, প্রথমে তোমাদের দুজনকে ধন্যবাদ আসার জন্য! আজ আমি তোমাদের যে কারণে ডেকেছি তা হলো আমি তোমাদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, তোমাদের দুজনের সাথেই! আমরা বরং কফি খেতে খেতে কথা বলতে পারি, আমার এখানে ব্ল্যাক কফি আছে, চলবে?

আমার আলোচনার বিষয়টা হলো একটা রোগ। একটা মানসিক রোগ বা মানসিক অসুস্থতা। ড. সামাদ শুরু করেন, মানসিক জটিলতাগুলোকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা বা পার্থক্য করা বেশ কঠিন, কারণ এগুলো অন্যান্য শারীরিক রোগ যেমন ধরো ক্যান্সারের মত না, যেখানে তার জীবাণুগুলোকে ল্যাবে নিয়ে চোখে দেখে নির্দিষ্ট করা বা পার্থক্য করা যায়। মানসিক রোগগুলোর ক্ষেত্রে সে অবকাশ নেই। তাই বলে যেকোন শারীরিক রোগের চেয়ে এর ভয়াবহতা কিন্তু কোন অংশে কম না, বরং বেশী! যেখানে রোগীর নিজের জীবনের সাথে আশেপাশের জন, হয়ত তার সবচেয়ে কাছের এবং প্রিয় মানুষটির জীবনও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে! অথচ আসল কারণটা থেকে যাচ্ছে সবার চোখের আড়ালে।

আবীরের মা মিসেস. শিরীন আহমেদ দীর্ঘদিন যাবত এমনি একটি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন, যার নাম Schizophrenia। যাকে বলা যায় একটা মানসিক অস্থিরতা, মনের একটা ভয়ংকর জটিলতম অবস্থা, একটা অস্পষ্ট দ্বিখণ্ডিত ব্যক্তিত্ব এবং কিছু ব্যাখ্যার অতীত আচরণ, যাকে নির্দিষ্টরূপে সংজ্ঞায়িত করা সত্যি খুব কঠিন কাজ! মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, সিজোফ্রেনিয়া একটা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ব্যাধি, যাকে চরিত্রায়ন করা হয় ব্যক্তির চিন্তা, আচরণ এবং সামাজিক সমস্যাগত উপসর্গ থেকে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক পারসেন্ট, অর্থাৎ একশ জনে একজন মানুষ এই রোগটি দ্বারা আক্রান্ত। যেখানে কেবল মাত্র United States এ এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুই মিলিয়নের বেশী, সেখানে আমাদের দেশের মত সামাজিক সমস্যাসঙ্কুল একটি দেশে এ রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম না, এটা সহজে অনুমান করা যায়! আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এই রোগগুলো সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা। শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিতই হোক, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ জানেই না ঠিক কোন কোন উপসর্গগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসার জন্যে একজন মানসিক ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত! উপরন্তু মানসিক রোগ মানেই পাগল, আর এর চিকিৎসা মানে পাগলের চিকিৎসা এধরনের ভ্রান্ত ধারনার কারণে এবং সামাজিক নানা জটিলতায় ছোটখাটো উপসর্গ যা হয়ত শুরুতে দমন করা সম্ভব, তা প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী বা পরিবারকর্তৃক গোপন করা হয় বা গুরুত্ব দেয়া হয় না। যতদিনে তারা বুঝতে পারে যে চিকিৎসা প্রয়োজন ততদিনে আসলেই দেরী হয়ে যায়!

সিজোফ্রেনিয়ার কারণ - চিকিৎসাশাস্ত্রে আজো অব্দি এই রোগের কোন নির্দষ্ট কোনো কারণ আবিষ্কার হয়নি। কিছু জেনেটিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক জটিলতার ফলস্বরূপ এই রোগ ধরে নেয়া হয়। বলা হয়ে থাকে শতকরা চল্লিশ ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ মানুষ পারিবারিকভাবে বহন করে যা অনুকূল পরিবেশে বিস্তার লাভ করে। অনুকূল পরিবেশ বলতে সামাজিক বিছিন্নতা, কাজের মধ্যে না থাকা, মানসিক একাকীত্ব, কোনো উল্লেখজনক ঘটনা ইত্যাদি, ধরে নেয়া যায় আবীরের বাবার আকস্মিক মৃত্যু তার মায়ের মধ্যে এ রোগ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ তৈরী করছিলো।

সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ - একজন সিজোফ্রেনিয়াগ্রস্ত রোগী দীর্ঘদিন এ রোগের লক্ষণগুলোর আশঙ্কাজনক বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়েও দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারে, অনেকটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ভেতরে ধারণ করার মত, আবার যখন এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে, তখন দ্রুতই অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে! যে লক্ষণগুলো দ্বারা এই রোগ চিহ্ণিত করা যায় তা হলো-
অতি মাত্রায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাতিকগ্রস্ত বা শূচিবাই
সামাজিক বিছিন্নতা
প্রচন্ড রাগ, অস্বাভাবিক ভয়
ইনসোমনিয়া অথবা ওভারস্লীপিং
সন্ধেহপ্রবনতা- মানুষকে বিশ্বাস করতে না পারা, সবসময় একটা ধারণা পোষণ করা যে অন্যরা তার বা তার আপন জনের ক্ষতি করবে। মানুষকে তার সাভাবিক আচরনের জন্যে প্রশ্ন করা!
হেলুসিনেশন বা ডিলিউশন- এমন কিছু দেখা বা শোনা যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নাই। প্রায়ই কারো কথা শুনতে পাওয়া, যারা তাকে নিয়ে কথা বলছে বা ষঢ়যন্ত্র করছে। বাসায় এমন কাউকে বা কিছু দেখতে পাওয়া যার প্রকৃত কোনো অস্তিত্ব নাই!

কোন ঘটনাকে সাধারণত নিজের মত করে যুক্তিসঙ্গত ভাবে ব্যাখ্যা করা, যার সাথে সত্য বা বাস্তবতার সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। সাধারণত এই রোগি নিজেকে তার কল্পনার জগতে বন্দি করে ফেলে, কোন ব্যক্তি, বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে সেভাবেই ব্যাখ্যা করে যেভাবে সে সেটা কল্পনা করতে চায়। তার এই কল্পনার বিপক্ষে কোনো যুক্তি সে গ্রহণ করেনা। যেমন, আবীরের মা তার হাসবেন্ডের মৃত্যু সম্পর্কে যে গল্প বলেছেন, সেটা সম্পূর্ণই তার কল্পনা থেকে। তার মনের কোন সন্দেহ থেকে সে নিজেই সেই গল্প বানায়। নিজের বানানো গল্প সে নিজে এমনভাবে বিশ্বাস করে, যেন ঘটনাটা ঘটেছে তার সামনেই, যেন সে এখনো তা দেখতে পায়! অথচ যেখানে মি. আহমেদ এর মৃত্যু হয় ইংল্যান্ডে আকস্মিক এক রোড এক্সিডেন্টে এবং সে সময় মিসেস. শিরীন তার চার বছরের সন্তান আবীরকে নিয়ে বাংলাদেশেই ছিলেন। বিষয়টা এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, প্রথম দিকে রোগীর মধ্যে দুইটা সত্ত্বা বা ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি হয়। একটা কাল্পনিক আর একটা বাস্তব। কাল্পনিক সত্ত্বা সবকিছু নিজের মত করে ব্যাখ্যা করতে চায়, আর বাস্তব সত্ত্বা সেই কল্পনাকে বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য করানোর চেষ্টা করে, ধীরে ধীরে এই কল্পনা আর বাস্তবের লড়াইয়ে বাস্তব সত্ত্বা আত্নসমর্পণ করে, রোগী আটকা পড়ে তার নিজের তৈরি কাল্পনিক গোলকধাঁধায়, যেখান থেকে বের হবার আর কোনো পথ থাকে না!

ধীরে ধীরে এই লক্ষণগুলো বাড়তে থাকে, হেলুসিনেশন প্রকট মাত্রায় বেড়ে যায়, রোগী কল্পনা ও বাস্তবের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারে না। অসংলগ্ন কথা বা হাসি এবং ধীরে ধীরে কথা বলা কমিয়ে দেয়া বা ভুলে যাওয়া, জড়ানো অস্পষ্ট কথা, পড়তে বা লিখতে ভুলে যাওয়া, নিজের দেখাশুনা, প্রাত্যহিক কাজ গুলো করতে না পারা, যার ফলে রাগ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, যারা সাহায্য করতে চেষ্টা করে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হওয়া, সহযোগিতা না করা বরং আক্রমণাত্বক হয়ে উঠা! পরিণামস্বরূপ Paranoia, Dementia, Stroke, Paralysis ইত্যাদি।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে মানসিক এই রোগগুলো শুধু সামাজিকভাবেই অবহেলিত নয়, চিকিৎসাশাস্ত্রেও এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় এখন পর্যন্ত অতি সামান্যই গুরুত্ব পেয়েছে। মানুষ মারার জন্যে এক একটা যুদ্ধে প্রতিনিয়ত যে পরিমান অর্থ ব্যয় হয়, অথবা মানুষের প্রসাধনী নিয়েও যে পরিমান গবেষণা হয়, এই রোগ গুলোর পেছনে তার সিকি পরমান অর্থ বরাদ্দ অথবা গবেষণা হয়না! এই রোগগুলোর যথাযথ ওষুধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয় নাই, যে ওষুধ দিয়ে রোগীকে পুণরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া অথবা সম্পূর্ন স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমারা আশা করি, হয়ত আজ থেকে ১৫ বা ২০ বছর পর এমন কোন ওষুধ আবিস্কার করা হবে যা এই রোগ সারাতে ব্যবহৃত হবে! বর্তমানে যে ড্রাগগুলো এ রোগের ট্রিটমেন্ট হিসাবে দেয়া হয়, সেগুলো মূলত রোগী মানসিকতা (রাগ, আতংক, উদ্বিগ্নতা) কে দমিয়ে রোগীকে শান্ত ও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, এব্যাপারে কিছু সাইকোথেরাপিও সাহায্য করতে পারে। সত্যি বলতে পারিবারিক থেরাপি বা কেয়ারের বিকল্প কিছুই নাই!

এই মুহূর্তে ড. সামাদ কণার দিকে তাকায় এবং বলে, একজন মানুষের ভেতরের একাকীত্ব থেকে অদ্ভুত এই রোগটি জন্ম নেয়, নাকি এই রোগটির জটিলতার কারনেই ক্রমান্বয়ে সে একা হয়ে পরে, তার সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। তবে এতটুকু জানি, আমাকে কেউ প্রচণ্ড ঘৃনা করে এবং অন্যদিকে আমার নিজের ভালবাসার মানুষটির জীবনেও আমার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই, এটা মেনে নেয়াই যেমন যথেষ্ট কারো জীবন থেকে দুরে সরে যাওয়ার জন্য, তেমনিভাবে একজন মানুষ ভয়ংকর অসুস্থ এবং সাথে আমার সবচেয়ে আপন মানুষটির জীবনে এক চিলতে আশ্রয়ের জন্যেও কেবল আমাকেই প্রয়োজন, এটুকু কম না ফিরে আসার শক্তির যোগাতে।

ড. সামাদ এবার আবীরের কাছে যায়, আবীরের মাথায় হাত রাখে, বলে, কণা! তুমি কি সেই পাখিটার গল্প জানো? যে পাখিটা কখনো খোলা আকাশে মুক্ত ডানা মেলে অন্যদের মত নিশ্চিন্তে উড়তে পারেনা! কারণ তার মন পরে থাকে নীড়ে, যেখানে তার রুগ্ন মা আছে, যে মায়ের ডানা বহুকাল আগেই এক ঝড়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো, সে ক্ষতটা রয়ে গিয়েছে এখনো! তুমি কি সেই পাখিটার মনের ভালবাসার ক্ষমতা অনুভব করতে পারো?

কণা কাঁদছে, আবীরের চোখে জল!

..........................

রংতুলি


মন্তব্য

সৃষ্টিছাড়া এর ছবি

(Y)

রংতুলি এর ছবি

(ধইন্যা)

নিশা এর ছবি

=DX (পপ্পন)

রংতুলি এর ছবি

$) (ধইন্যা)

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

ভাল লাগল।
একটা বাস্তব সমস্যা তুলে ধরেছেন।

তবে অনেকসময় কোন জটিল মানসিক রোগ ছাড়াও এই ব্যাপারগুলো ঘটতে দেখা যায়। তবে সেক্ষেত্রে হয়তো ঘটনাটা এত দূর এগোয়না। যেখানে আবীর এবং কণার দিক থেকে শুরুর দিকে যত্নের কোনও খামতি ছিল না।

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে! :)

সমস্যা হলো, মানসিক জটিলতাগুলোকে রোগ হিসেবে চিহ্নত করা এবং এগুলোর জন্য এক্সপার্টের শরনাপন্ন হওয়া, যা আমাদের সমাজে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ভাবা হয়না। ফলে জটিলতা বাড়তে থাকে, কেউ ত্যাগ স্বীকার করে নায়ক হতে চায়, কেউ নিজের সুখের কথা ভেবে ভিলেন হয়। তৈরী করা হয় 'সাস ভি কাভি বহুথি' স্টার প্লাস এর রমরমা সিরিয়াল, বাড়ীর মহিলারা হাঁ করে এসব গিলতে থাকে, খুঁজতে থাকে নিজের জীবনের সাথে এই আজগুবি কারেক্টারগুলার মিল! অথচ মানুষের আচরণের যে আরেকটা দিক থাকতে পারে সেটা কোথাও বলা হয়না, তাহলে হয়ত অনেক সমস্যাই মোকাবেলা করা হত যুক্তি দিয়ে, যা আমার মনে হয় অনেক বেশী সহজ!

এই জন্যই লেখাটা লিখলাম, মানুষের আচরণের আরেকটা দিক তুলে ধরার আমার ছোট্ট চেষ্টা!

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

(ধইন্যা)

জাবেদুল আকবর এর ছবি

(Y)

পরমার্থ এর ছবি

হিন্দী বাংলা পারিবারিক কলহের ধারাবাহিক আয়োজন আমার খুব অপ্রিয় .. কিন্তু মহিলারা এইসব সারাদিন দেখে .. আপনার লেখা ভালো .. কিন্তু কিছু ডাক্তারি চলে এসেছে এখানে যেগুলো একটু যাচাই করে নেয়া ভালো .. আর গল্পের শেষে একটু সবার মুখে হাসি দিয়ে দিলে আরও ভালো লাগত ..

রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। ডাক্তারি বিষয় গুলো কিছুটা পড়াশুনা করে যাচাই করেই দিয়েছি। একটা কমন সমস্যার আর একটা অজানা সাম্ভাব্য দিক তুলে ধরাই আমার লেখাটার উদ্দেশ্য ছিল, যেখানে যুক্তি দিয়ে জীবনের জটিলতা গুলো মোকাবেলা করা সহজ। অন্তত একজন উপকৃত হলেও আমার লেখা সার্থক হবে!

আসলে ঘটনার সাথে গল্পের শেষে হাসিটা ঠিক যেতো না, তাই চোখে জলটাই দিলাম তারপরেও একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন এটা কিন্তু হ্যাপী এন্ডিনই ছিলো! :)

পরমার্থ এর ছবি

ডাক্তারি যখন নিয়ে আসলেন তখন কতগুলো ভালো থাকার উপায় বলে দিলে ভালো করতেন .. এখানে বয়স্কা রমনী যে সঙ্গী হিসেবে তার সন্তানের উপর নির্ভর থাকবেন তা নয় .. সবচেয়ে সম্ভাব্য উপায় তার নাতি নাতনির সাথে থাকা, যেমন আমার মা থাকেন .. আর যেহেতু তার বয়স পঞ্চাশের উপর তাই তার প্রাত্যহিক হাটাহাটি করা প্রয়োজন(আমার মা আমার কথা শোনে না, তার গত মাসে হৃদযন্ত্রে সমস্যা(MI) হয় সিড়ি ভাঙ্গতে গিয়ে) .. খাবারের ব্যাপারে সচেতনতা প্রয়োজন .. তার জারা গল্প আড্ডার সঙ্গী হতে পারে যদি সেটি যৌথ পরিবার হয় .. সৃষ্টিশীল কাজ যেমন বাগান করা, কোনো সাংস্কৃতিক সমিতি করা তার মনের শক্তিকে বাড়িয়ে দেয় .. আর কিছু বলতে চাই না, আমার অনেক ব্যর্থতা ছিল, তাকে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন ছিল ..

আরেকটি কথা আমার দেখা আশেপাশের মানুষদের মাঝে যারা তাদের সন্তানদের উপর সংসারের দায়িত্ব ছেড়ে দেয় তারা ভালো থাকে .. অনেকের মধ্যে আমার বোনের শাশুড়ির কথা বলব যে কিনা তার আট সন্তানকে মানুষ করেছে ভালোভাবে, কিন্তু এই বয়সে(আশি) এসে সে নিরামিষাসী এবং সংসারসংক্রান্ত যে কোনো কথায় তার উত্তর নির্মল হাসি(উদাসীনতা) .. ধর্মকথা আমার কাছে হাস্যকর লাগে, কিন্তু এটা সত্যি ওই বয়সে বানপ্রস্থ গ্রহণ বা সন্যাসধর্ম পালনিই শ্রেয়.. কিন্তু আমার মা সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ .. এই দুইদিন আগে আমি আমার ভাগ্নিকে নিয়ে নদীর পারে যাই, ফেরার পর আমার ভাগ্নি বলে মামাকে সে খুঁজে পাচ্ছিল না, এতে সে আমার উপর ক্ষেপে যায়(হৃদযন্ত্রে সমস্যা থাকার পরেও) .. তার চিন্তা যদি ছেলেধরা ধরে নিয়ে যায় !

অতিথি লেখক এর ছবি

আসল বিষয়টা হলো নিজেকে যেকোন কিছুর মধ্যে ব্যস্ত রাখা, আর এটাই শারীরিক বা মানসিক সব দিক দিয়ে ভাল থাকার একমাত্র উপায়, সব মানুষের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। মানুষের মন খুব অদ্ভুত, প্রতিটা মানুষ যে একটা জিনিস নিয়েই ব্যস্ত থাকবে এমন ভাবাটাও ঠিক না, কেউ জীবনের একটা পর্যায়ে ধর্মকর্মেই সুখ পায়, কেউ নাতি-নাতনি নিয়ে মেতে থাকে। আসল ব্যাপার হলো কিছু একটার মধ্যে থাকা যা সেই মানুষটার সাথে সাথে তার আশেপাশের মানুষ গুলোকেও ভালো রাখে, স্বস্তিতে রাখে। কিন্তু সমস্যাটা তখনই প্রকট হয় যখন কোন মানুষের জীবন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে থাকে, আর কোনো কিছুতেই সে আগ্রহ পায় না। এ অবস্থায় শুরুতে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ সবার জন্য অনেকটা সহায়ক হতে পারে, এন্টি-ডিপ্রেশনের কিছু ওষুধ রোগীর উদ্বিগ্নতা দমিয়ে রাখতে সাহায্য করে, যদিও দীর্ঘমেয়াদী এগুলো গ্রহণে নানা পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখা দেয়। আসলে একজন মানুষের নিজের ভেতর থেকে জীবনের প্রতি যে পজিটিভ আকাঙ্ক্ষা তা না জন্মালে, সব কিছুই অর্থহীন!

আপনার মায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও শুভ কামনা রইলো! ভাল লাগছে যে তিনি অন্তত তার নাতি-নাতনিদের নিয়ে ব্যস্ত আছেন। দোয়া করি উনি যেন ভালো থাকেন অনেক দিন!

-----------
রংতুলি

কীর্তিনাশা এর ছবি

(Y)

গল্প লেখা চলুক.....

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রংতুলি এর ছবি

(ধইন্যা) চেষ্টা চলবে... :p

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"আমাকে কেউ প্রচণ্ড ঘৃনা করে এবং অন্যদিকে আমার নিজের ভালবাসার মানুষটির জীবনেও আমার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই, এটা মেনে নেয়াই যেমন যথেষ্ট কারো জীবন থেকে দুরে সরে যাওয়ার জন্য, তেমনিভাবে একজন মানুষ ভয়ংকর অসুস্থ এবং সাথে আমার সবচেয়ে আপন মানুষটির জীবনে এক চিলতে আশ্রয়ের জন্যেও কেবল আমাকেই প্রয়োজন, এটুকু কম না ফিরে আসার শক্তির যোগাতে।" (চলুক)

গল্পের শুরুটা দেখে বুঝতে পারিনি, শেষটায় এমন হবে।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রংতুলি এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পুরো গল্পটা ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য! :)

শুরুটা আমারও পছন্দ না কিন্তু কিছু একটা দিয়ে তো শুরু করে হবে, আসল বিষয়টা তুলে ধরার জন্য!

শাব্দিক এর ছবি

আমার কিন্তু শুরুটা ভাল লেগেছে, অন্যরকম হওয়াতে এক ঘেয়ে ব্যাপারটা কেটে গেছে।

রংতুলি এর ছবি

অনেক অনেক (ধইন্যা)। আসলে যখন কিছু লিখি আমার নিজেরই ঠিক পছন্দ হয়না, শুধু মনে হয় আর একটু অন্যরকম করা যেত বা ভাল করা যেত! যাইহোক আপনাদের ভালো লেগেছে দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছে! :)

আসমা খান, অটোয়া এর ছবি

খুব ভালো লাগলো লেখাটি। মানষিক অসুস্থতা সব দেশেই এখনো কিছুটা অনুচ্চারিত বিষয়। খুব চমৎকার একটি মুভি 'দি বিউটিফুল মাইন্ড' এ প্রসংগে উল্লেখযোগ্য।
সমাজে সচেতনতার জন্য এ ধরনের লেখা দরকার।

রংতুলি এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! 'বিউটিফুল মাইন্ড' আমারও প্রিয় মুভিগুলোর একটি।

শেষর কথাটিতে অনুপ্রাণিত হলাম! :)

রংতুলি এর ছবি

এবিষয়ে ইরানি একটা চমৎকার মুভি আছে, 'A Separation'। দেখতে পারেন (হয়তো দেখেছেন)। সেখানে Alzheimer's এ আক্রান্ত এক বৃদ্ধকে নিয়ে তার ছেলের জীবনের কিছুটা জটিলতা, সাফারিং, অসহায়্ত্ব দেখানো হয়েছে!

ধুসর জলছবি এর ছবি

ভালো লেগেছে খুব। আরও লিখুন। =DX

রংতুলি এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ! লেখার চেষ্টা করতে থাকবো। :)

জাবেদুল আকবর এর ছবি

(Y) (গুড়)

রংতুলি এর ছবি

(ধইন্যা) $)

বন্দনা এর ছবি

খুব গুরুত্তপূর্ণ একটা সমস্যা নিয়ে লিখেছেন আপনি যেটা আমাদের দেশে আসলে প্রায়শই চোখে পড়ে। আপনার লেখার গুনে বেশ চমৎকার লেগেছে পড়তে। আপনি কি বাই এনি চান্স সাইকোলজী নিয়ে পড়াশোনা করেন, আপনার ব্যাখ্যা দেবার স্টাইল খুব সুন্দর, বেশ ভালো লেগেছে।

রংতুলি এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ! এরকমই ছোটখাটো কিছু সমস্যা নিয়ে আমার লেখার ইচ্ছা অনেক দিনের যেগুলো হয়তো সার্বিক ভাবে অতটা গুরুত্ব পায়না, কিন্ত মানুষের ব্যক্ত্যিগত জীবনকে অনেক বেশী প্রভাবিত করে, যে বিষয়গুলোর সাথে আমাদের সবারই ইমোশন কম বেশী জড়ানো। আমার পড়াশোনা সমাজ নিয়ে, তাই মানুষের সাইকোলজী নিয়ে পড়া লাগছে কিছুটা। যদিও এখন সব ভুলে গেছি! :p

রানা এর ছবি

oliver sacks এর The man who mistook his wife for a hat বইটায় এইরকম অনেকগুলো কেসস্টাডি আছে। পড়ে অনেক
খারাপ লাগে।

রংতুলি এর ছবি

বইটা পড়তে ইচ্ছে করছে খুব! ebook-এর লিঙ্ক থাকলে দিয়েন! (ধইন্যা)

রানা এর ছবি
রংতুলি এর ছবি

ধন্যবাদ! :)

অমি_বন্যা এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো।

রংতুলি এর ছবি

(ধইন্যা) :)

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

(Y)

রংতুলি এর ছবি

:)

শান্ত এর ছবি

খুবই বাস্তব একটা ঘটনা। এইসব নিয়ে আরোও লিখুন। লেখা ভালো লেগেছে।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

রংতুলি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! আরো লিখবো আশা করি :)

শাব্দিক এর ছবি

লেখা চলুক। (পপ্পন)

রংতুলি এর ছবি

:)

রংতুলি এর ছবি

$)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।