‘বিতংস’ ও ‘চ-এ চুরি, ছ-এ ছবি, জ-এ জব্দ’ লেখকের কলম থেকে......
(১)
-"শেষে বাইপাসের ধারের একটা পাতি রেস্টুরেন্টে আমাদের ফার্স্ট অ্যানিভার্সারির ডিনারটা করাবে তুমি আমায়? এরকম জানলে আমি জাস্ট আসতাম না!” মউএর গলায় একরাশ বিরক্তি।
শুভ্র অবশ্য একটুও না দমে বলল, “তুমি নর্থ ইন্ডিয়ান খাবে বললে তো? মুঘলাই ডিশ সারা কলকাতায় এই শাহী-তন্দুরের চাইতে কেউ বেটার বানাতে পারেনা। এরা বর-বউ মিলে যা রোগানযোশ বানায় না... উফ্, ফাটাফাটি, আমি সেই স্কুল লাইফ থেকে ফ্যান্।”
-“পাশেই কাবাব-প্যালেসের মত একটা অত বড় ন্যাশানাল রেস্টুরেন্ট চেইনের থেকে তোমার এই গৃহ-উদ্যোগের কোয়ালিটি বেটার বলতে চাও? মিড্ল ক্লাস মেন্টালিটিটা এখনও গেল না।”
-“তোমার-ও বাইরেটা দেখে একটা ইম্প্রেসান ফর্ম করার হ্যাবিটটা গেল না।”
-“বাইরেটা দেখে ইম্প্রেসান ফর্ম করে পরে পছতানো নিয়ে তোমায় কিছু মনে করিয়ে দিতে হবে না, সেটা আমি গত এক বছর ধরে হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।”
পার্কিং লট থেকে হেঁটে আসতে আসতে একটা দাম্পত্যকলহ শুরু হব-হব করছিল। কিন্তু শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শাহী-তন্দুরে ঢোকার পর মনকাড়া খাবারের গন্ধে মৌএর বিরক্তির পারাটা অনেকটা নেমে এল। অন্দরমহলটা বেশ রুচিসম্পন্ন এবং যে কোন আপ-মার্কেট রেস্তোরাঁর সাথে পাল্লা দিতে পারে। আর শুভ্র না বললেও মৌ খেয়াল করেছে যে ওর ভাষায় এই ‘গৃহ-উদ্যোগের’ বাইরে বেশ ভিড়, ওর কানে এলো ওয়েটিং টাইম চল্লিশ মিনিট! ‘কাবাব প্যালেস’এ অবশ্য এরকম কোন ভিড় ওর নজরে পড়েনি। ভাগ্যিস শুভ্র একটা টেবিল রিজার্ভ করে রেখেছিল!
(২)
বিলিং কাউন্টারে বসা টাকমাথা গোলগাল লোক হাসিহাসি মুখে শুভ্রর দিকে চেয়ে বলল, “বউদি বুঝি? রোগানযোশটা অবশ্যই ট্রাই করবেন আজকে প্রথমবার আমার দোকানে এলেন...”। মৌ মনে মনে ভাবল, “এই শেষবারও হতে পারে”।
শুভ্রর কাছে শুনল ভদ্রলোক শাহী তন্দুরের মালিক প্রদীপ ঘোষ, তবে এখনও উনি ওনার গেস্টদের সাথে ইন্টার্যাকক্ট করতে ভালোবাসেন, পরিচিত গেস্টদের নামধাম মনে রাখেন, নতুন কাউকে দেখলে যেচে আলাপ জমান। আর ওনার স্ত্রী হচ্ছেন শাহী তন্দুরের যাকে বলে মাস্টার শেফ্, যদিও জনা দশেক রাঁধুনি কাজ করে এই রেস্টুরেন্টে।
মেনু বাছাবাছির কাজটা শুভ্রই করল। অ্যাপে্টাইজার হিসেবে এলো “পাশ্তুনি কাবাব নীজা”, দই আর সিক্রেট সব মশলা দিয়ে ম্যারিনেট করার পর তন্দুরে দিয়ে মুরগীর ডানাগুলো গ্রিল করলে যে এরকম স্বর্গীয় স্বাদ হয়, সেটা মৌ আগে ভাবেনি। তার সাথে শেফ্ স্পেশাল তন্দুরি মুর্গ। অন্ত্রে হিসেবে এলো গোস্ত রোগানযোশ, লাজীজ ফালদারি মালাই কোফতা আর মুর্গ নূরমহল বিরিয়ানি। মৌ রাত্রে বিরিয়ানি খায় না বলে ওর জন্য এলো কান্দাহারি মুঘলাই নান। আর সব শেষে ডেসার্ট হিসেবে এলো ওদের স্পেশাল মধু, মাখন, কাজু, কুলফি দিয়ে বানানো এক অসাধারণ ডিশ্, নিষিদ্ধ আনন্দের মতই উপভোগ্য বলে নাম “পাপ”।
ডিনারের শেষে মৌএর আপসোস হচ্ছিল ঘন্টা দুএক আগের রাগারাগিটার জন্য। কম্পেন্সেশ্ন হিসাবে শুভ্রকে বলল, “আজকে আমি বিলটা ফুট্ করব, কেমন?”। বিলটা হাতে নিয়ে মৌ আশ্চর্য হয়ে দেখল তিনশো সত্তর টাকা। নিচু গলায় শুভ্রকে বলল “দেখো তো যোগে ভুল করেনি তো? নাকি কিছু বাদ দিল।
শুভ্র মুচকি হেসে বলল “না এখানে খাবারের দাম যেকোনো ব্র্যান্ডেড রেস্টুরেন্টের অর্ধেক, অথচ কোয়ালিটি বেটার” মউএর হাতে ক্রেডিট কার্ড দেখে শুভ্র বলল “নাহ আজ ট্রীটটা তোমার থেকে নেওয়া গেল না” মৌ কে দেখাল বিলিং কাউন্টারে বড় বড় হরফে লেখা, “ক্রেডিট কার্ড নিই না, দুঃখিত”।
(৩)
-“এত এক্সপেন্সিভ ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনলাম, এক সাল হতে চলল, মুনাফা তো ছোড়ো, ব্রেক-ইভেন ভি হল না”, কাবাব প্যালেসের কর্ণধার মিস্টার শেখর কুমার নিজের ঝাঁ-চকচকে রেস্তোরাঁ-এ বসে আক্ষেপ করছিলেন ওনার এম্বিএ পাশ শ্যালক প্রকাশের কাছে, “তুমারহে বাঁতো মে আকে ইয়ে ধাবাকে সাইডমে ইনভেস্ট করে বসলাম, এই রুপেয়া আমার বড়াবাজারের গদ্দিতে লাগালে ডবল্ হোয়ে যেত।”
-“আমরা অনেক মার্কেট রিসার্চ করে ডিমোগ্র্যাফিক্স্ দেখে, পার্চেসিং পাওয়ার মেশ্যর করে, এই ধরণের স্পেশাল্টি কুইজিনের ডিমান্ড কোয়ান্টিফাই করে তবেই এই ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনার শলাহ্টা আপনাকে দিয়েছিলাম, এমনি এমনি নিজের খেয়াল খুশীমত মতামত ডিক্লেয়ার করিনি।”
কুমারজীর কিছু বোধগম্য হল না, মাথা নেড়ে বলল, “আরে, তোমার মার্কেট রিসার্চের অ্যায়সি কি ত্যায়সি, ইয়ে সাইডওয়ালা দুকানটা দেখ, না ব্র্যান্ডনেম, না শেয়ার-ভ্যাল্যু, না খুবসুরত ওয়েট্রেস, ফিরভি উও শালাকি দুকান মে লাইন দেখো? ইধার হামার হায়দ্রাবাদ থেকে আনা শেফ্ মাছি তাড়াচ্ছে, উধার ওয়েটিং টাইম বেড়েই চলছে!”
-“জিজাজী, এ হচ্ছে জাস্ট প্রাইসিং-এর কামাল। ওদের মেনু কার্ড আমি দেখেছি, আমাদের কম্পেয়ারেব্ল মেনুগুলো হাফ্-প্রাইসে ওখানে পাওয়া যায়, আর এও ঠিক যে ওদের মালকিনের হাত আমাদের ওসমানের চাইতে কোন অংশে কম নয়। অ্যাসিস্টেন্ট শেফগুলোকেও গড়ে-পিটে নিজের মত করে বানিয়ে নিয়েছে। গোড়া থেকেই ওটা একটা থ্রেট ছিল, কিন্তু সেটা এতটা ফেটাল হবে বুঝতে পারিনি।“
-“তা এখন আমি কি করব? ওই বাঙ্গালিটাকে খতম করার সুপারি দেব? নাকি উও অওরতটাকে... ?”
-“আরে না না জিজাজী, ওসব করে আজকাল পাড় পাওয়া যায় না। আমাদের অন্য কোন আইডিয়া ভাবতে হবে।”
-“অওর কোন আইডিয়া নেই। ওই প্রাইসে ব্যাবসা করলে আমার ফ্র্যাঞ্চাইজি এমনিও লাটে উঠে যাবে। আর সবথেকে ট্রাজেডি হচ্ছে যে আমার এক পয়সা ছুপানোর উপায় নেই। আমার ক্লায়েন্টেলটাই এমন যে বেশীর ভাগই কার্ডে পেমেন্ট করে, কাজেই এভরিথিং ইজ ট্র্যান্সপেরেন্ট টু দ্য ট্যাক্সম্যান, আর ওরা দোকানে ক্রেডিট কার্ড সোয়াইপ করার মেশিনে পর্যন্ত ইনভেস্ট করেনি...”
-“ক্রেডিট কার্ড নেয় না? মতলব শালা সিওর ফুল ইনকাম দেখায় না। আমার চেনাশোনা লোক ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে আছে, তাদেরকে জাস্ট ইনফর্ম করে দিতে হবে যে ওই বিসনেস্ম্যান ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে। এমন পেনাল্টি নেবে শালা ব্যবসা বন্ধ করে পালাবে!”
-“তোমার কথা ওরা থোড়াই শুনবে?”
-“এমনি কি আর শুনবে? আমার কানেকশানকে লাখখানেক খাইয়ে দিন, আলবৎ শুনবে। ওদের ফাইলটা প্রাইওরিটি নম্বার ওয়ানে রাখবে।”
-“লাখখানেকে হয়ে যাবে?”
-“হ্যাঁ, প্লাস এখন নতুন আইনে ইনফর্মারের টেন পার্সেন্ট রিওয়ার্ড পাওয়ার কথা, আমরা সেটাও ক্লেইম করব না, আমাদের শুধু দরকার ওদেরকে মুখ থুবড়ে ফেলার।”
(৪)
-“আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন প্রকাশবাবু, আমি আজকেই শাহী-তন্দুরের কথাটা ম্যাডামের কানে তুলে দেব” ইন্কাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের অজিত পাকড়াশী হাজারটা একশোটাকার নোট গুনতে গুনতে বেশ বিগলিত স্বরে বলতে লাগল।
-“ম্যাডাম আবার কে? তাকে আবার কত খাওয়াতে হবে?” ঈষৎ বিরক্তি মেশানো প্রশ্ন প্রকাশের।
-“আরে ছিছি, আমাকে যখন সার্ভিস-চার্জ দিলেন, আর ও নিয়ে ভাববেন না, বাকি যা করার আমিই করব, আর ম্যাডাম এমনিতেও কোনও ‘ফি’ নেননা।”
-“তা এই ম্যাডামটি কে, সেটাই তো বললেন না?”
-“মিসেস চিত্রলেখা রায়চৌধুরী। সেবার টলিউডের মিস্ মল্লিকার বাড়িতে রেইড-এর কথা কাগজে দেখেননি? সেটা ম্যাডামের কেস্ ছিল। ওনার হবিই হল দিনে রাতে ফাইল ঘেঁটে সাইটে গিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করে রোমহর্ষক সব ট্যাক্স রেইড করে বেড়ানো। শুধু একটুকরো ইন্ফর্মেশান। ব্যাস্। বাকিটা উনি রিসার্চ করে, ইনভেস্টিগেট করে ঠিক ধরে ফেলবেন। আমি ম্যাডামের কানে কথাটা তুলে দেব, প্লাস একটা প্রিলিমিনারি রিপোর্ট ম্যাডামের ডেস্কে প্রাইওরিটি ফোল্ডারে রেখে দেব। ওনার সেক্রেটারি ছোকরাটা জানতেও পারবে না।”
-“আমি শুধু আমার লাখটাকা ইনভেস্টমেন্টের রেজাল্ট দেখতে চাই। এবং তাড়াতাড়ি।” হৃষ্টচিত্তে প্রকাশ গাড়িতে উঠে বসল।
দোকানের রমরমা ভীড় এবং ক্রেডিট কার্ড না নেওয়ার টীকা-টিপ্পনী সমেত শাহী-তন্দুরের ফাইল যথাসময় ম্যাডামের ডেস্কে পাঁজা করা নথী-পত্রের একদম ওপরের দিকে উঠে এল।
(৫)
–“দেবাশিষ, আমাদের দুজনের জন্য কালকে বাইপাসের ওপর শাহী-তন্দুরের একটা টেবিল রিজার্ভ করে রাখো তো” গম্ভীরভবে মিসেস চিত্রলেখা রায়চৌধুরী ফাইল থেকে চোখ না সরিয়েই ওনার নব-নিযুক্ত সেক্রেটারীকে হুকুম করলেন।”
-“ইয়ে... মানে... ম্যাডাম... আপনি আর আমি...মানে...” দেবাশিষের কথা আটকে যায়। নব্বই কেজির এই তুখোড় সিনিয়র ইনভেস্টিগেটরকে ডিপার্টমেন্টে সব্বাই ফুলন-দেবী বলে। এহেন ডাকসাইটে বসের এই হুকুম?
-“আঃ, যা বলছি কর। শাহী-তন্দুরের এগেন্সটে একটা কেস্-ফাইল আমার প্রাইওরিটি লিস্টে আছে, রেইডের আগে আমাকে ব্যাপারটা বুঝে নিতে হবে। একা মেয়েমানুষ গিয়ে খাচ্ছে আর নোট্স্ নিচ্ছে দেখলে সব্বাই সন্দেহ করবে। আর তাছাড়া অফিসিয়াল কাজে আমার বাড়ির লোককে ইনভল্ভ করাটা দুচোক্ষের বিষ কাজেই তুমি যাচ্ছ আমার সাথে কাল। শাহী-তন্দুরের মালিককে যদি পাকড়াও করতে পারি, তবে সিমিলার রেস্টুরেন্টের মালিকদেরও একটা শিক্ষা হয়ে যাবে ঠিকঠাক আয় দেখানোর।”
দেবাশিষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, “কিন্তু ম্যাডাম শাহী-তন্দুরের মালিক প্রদীপ ঘোষের ইন্কাম-ট্যাক্স রিটার্ন আপ্-টু-ডেট্। প্রত্যেক বছর সময়মত ফাইল করা।” কম্পিউটারে চোখ রেখে দেবাশিষের মন্তব্য, “গড়ে বিশ লাখ টাকা বার্ষিক টার্নওভার আর আড়াই লাখ টাকা নিট অ্যানুয়াল প্রফিট, সমস্ত খরচের পর।”
-“কিন্তু আমার এই প্রিলিমিনারি সাস্পেক্ট রিপোর্ট বলছে লোকটার একটা ইনোভা, একটা সিভিক। দুটো ছেলেই ব্যাঙ্গালোরে প্রাইভেট মেডিকাল কলেজে পড়াশোনা করছে। পূজোর রাশের পর প্রত্যেক বছর গোটা পরিবার নিয়ম করে বিদেশভ্রমণ করে। রাজারহাটে, গড়িয়ায়, কেষ্টপুরে একএকটা তিনহাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। অঙ্কটা মেলাতে পারছ?”
(৬)
ম্যাডাম চিত্রলেখা আর দেবাশিষ শাহী-তন্দুরে ডিনার করতে গেল বুধবারে, যেদিন ঊইকেন্ডের ভিড় থাকার কথা নয়। তাও পাক্কা এক ঘন্টা বাইরে অপেক্ষা করার পর প্রদীপ ঘোষ নিজে এসে দুঃখপ্রকাশ করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন।
-“কটা টেবিল চেয়ার আছে গুনে ফেল তো!”
-“বারোটা টেবিল আছে এবং গড়ে চারটে করে চেয়ার এককটায়, মোট আটচল্লিশটা চেয়ার ম্যাডাম।”
-“কজন কাস্টমার আসছে সেটাও আমাদের নোট করতে হবে।”
দেবাশিষ লক্ষ্য করল যে ওরা থাকাকালীনই বেশীর ভাগ টেবিলেই মিনিমাম দুটো ব্যাচ বসে অর্ডার করল। ওয়েটাররা বেশ ক্ষিপ্রগতিতে প্রত্যেক টেবিলেই টেবিলক্লথ আর ন্যাপকিন আর জলের গ্লাস বদলে দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। দুধ-সাদা টেবিলক্লথ, মাড় দেওয়া। দেখে মনেই হয় না যে এর আগে এই টেবিলে বসে কেউ খেয়ে গেছে। ওরা অবশ্য অনেক সময় নিয়ে গ্যাঁট হয়ে বসে খেয়ে গেল হেড-কাউন্টটা ঠিকঠাক করার জন্য।
-“ম্যাডাম, প্রায় ১০০ জন বসে অর্ডার করল!”
-“হ্যাঁ, আমিও গুনেছি। ১০৩।”
-“তার মানে ম্যাডাম কিছু না হোক, লাঞ্চের হেড্কাউন্ট ধরলে খুব কম করে দেড়শো লোক গড়ে প্রতিদিন আসে শাহী-তন্দুরে।”
-“ভুলে যেও না, উইক্এন্ড বা পূজো বাবদ কোন এক্স্ট্রা মাথা না গুনেই স্রেফ এই হিসেবটা।”
খাওয়ার পর বিল এলো, মাত্র ২০২ টাকা। দেবাশিষ অবশ্য অত সুস্বাদু খাওয়ার পেয়ে জাঁদরেল বস্ হ্যাংলা ভাবতে পারে এটা জেনেও পেট খালি রেখে অর্ডার করেনি। কিন্তু তাতেও মাত্র অবিশ্বাস্য ২০২/-।
-“দেখো, মেনুটা ভালো করে খেয়াল করে বিভিন্ন সিনারিও ভেবেছ অর্ডারের যাতে অ্যাভারেজ প্রাইস পার অর্ডার আন্দাজ করা যায়?”
দেবাশিষ মনে মনে ম্যাডামের বুদ্ধির তারিফ না করে পারে না, “তা খুব কম করে ধরলেও মাথাপিছু ৮০ থেকে ১০০ টাকার বিল হয়েই থাকে।”
-“তার বেশীই হয়, তাও তোমার কথামত কঞ্জার্ভেটিভ এস্টিমেট ধরলেও ১৫০ লোক ইন্টু ১০০ টাকা করলে দিনে ১৫ হাজার টাকার টার্নোভার।”
-“মানে মাসে সাড়ে চার লাখ টাকার টার্নোভার! বছরে চুয়ান্ন লাখ টাকা?”
-“আঃ, ফাইলগুলো পড় না কেন? নভেম্বরে পূজোর পর পুরো মাস ধরে প্রদীপ ঘোষেরা সপরিবারে বিদেশে ভ্যাকেশান কাটান মনে নেই? তার মানে ১১ মাস বিজনেস। কাজেই সাড়ে চার ইন্টু এগার, প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা।”
-“অথচ শালা ডিক্লেয়ার করছে মাত্র বাইশ লাখ!” স্ল্যাংটা বলে ফেলেই দেবাশিষ জিভ কাটে।
চিত্রলেখা কিছুমাত্র রিঅ্যাক্ট না করে স্রেফ বলে, “কিন্তু প্রমাণ করা যায় কিভাবে সেটাই আমাদের ভাবতে হবে।”
(৭)
পরেরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসি কাপড়চোপড় ওয়াশিং মেশিনে ঢোকাতে গিয়ে চিত্রলেখার মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ফোন, “দেবাশিষ, তুমি এক ঘন্টার মধ্যে শাহী-তন্দুরের সামনে হাজির হও, তবে আড়ালে থেকো। আমি পৌঁছে ফোন করছি।”
(৮)
-“শাহী-তন্দুরে যে সব ভ্যান, ম্যাটাডোর, রিক্সা, ট্যাক্সি এটসেট্রা আসছে সেগুলো ভালো করে খেয়াল কর আর আমায় ফোনে রিপোর্ট করতে থাক। আমি গাড়িতে বসে আছি।”
দেবাশিষ তো অবাক,“কাঁচা আনাজের একটা ম্যাটাডোর এলো ম্যাডাম।”
-“তারপর?”
-“কোল্ড-ড্রিঙ্কস্এর একটা লরি, কয়েক ক্রেট নামিয়ে চলে গেল।”
-“বেশ, নেক্সট?
-“মুর্গী বোঝাই একটা ভ্যান আর ডিম বোঝাই এক সাইকেল।”
-“দেখতে থাক...”
-“রিক্সা করে অনেক ফুল নিয়ে নামল আরেক কর্মচারী, টেবিলের ফুলদানিগুলোর জন্য নিশ্চয়ই।”
-“সে তোমার ভেবে কাজ নেই, তুমি দেখে যাও।”
-“একটা ঠ্যালা ঢুকল ম্যাডাম, তিনটে বড় বোঁচকা নামিয়ে আর তিনটে বড় বোঁচকা তুলে রওনা দিলো।”
-“ব্যাস্, ঠ্যালাটাকে ফলো কর”, চিত্রলেখার উত্তেজিত বক্তব্য।
-“ম্যাডাম, ঠ্যালাওয়ালাটা “টিপ-টপ লন্ড্রি অ্যান্ড ড্রাই-ক্লিনার্সে” ঢুকে গেলো”, দশ মিনিট হাঁটার পর দেবাশিষের ফোন।
-“ঠিক আছে, মোড়ের মাথায় আমার গাড়িতে উঠে এস।”
সেদিন দুপুরেই ইনকাম-ট্যাক্স্ ডিপার্টমেন্টের রুটিন চেকের একটা অর্ডার নিয়ে চিত্রলেখা হাজির হলেন “টিপ-টপ লন্ড্রি অ্যান্ড ড্রাই-ক্লিনার্সে”। অমায়িক হেসে নিজের আই-ডি কার্ড দেখিয়ে দোকান মালিক-কে অভয় দিয়ে বললেন, “ভয় পাবেন না। কোন গোলমালের খবর পেয়ে আমরা রেইড করতে আসিনি। আমাদেরও তো মাঝে মধ্যে কাজ দেখাতে হয় উপর-মহলকে। তাই একটা রুটিন চেক করতে আসা। আপনাদের খাতাগুলো অবশ্য দেখব।” ঘন্টা-দুয়েকের মধ্যেই চিত্রলেখার যা দেখার দেখা হয়ে গেল। ফিরে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “সব ঠিকঠাক আছে আপনাদের হিসেব। পরোয়ানা নিয়ে হাজির হবার দরকার হবে না দেখছি।” পরোয়ানা নিয়ে হাজির হওয়ার প্রস্তুতিটা কার জন্য নিচ্ছেন সেটা অবশ্য বেমালুম চেপে গেলেন।
পরেরদিন চিত্রলেখা নিজের বস্কে একটা ডিটেল্ড্ রিপোর্ট পাঠালেন।
-“হ্যাঁ বলুন মিসেস রায়্চৌধুরী, এবার কোন রাঘব-বোয়াল ধরা পড়ল আপনার জালে?” চিত্রলেখার বস মিস্টার ব্যানার্জীর স্বাভাবিকভাবেই মিসেস রায়্চৌধুরীর ওপর অগাধ আস্থা।
-“স্যার, শাহী-তন্দুর থেকে দিনে বিয়াল্লিশটা টেবিল-ক্লথ আর একশ ষাটটা ন্যাপকিন গড়ে কাচতে পাঠানো হয় “টিপ-টপ লন্ড্রি অ্যান্ড ড্রাই-ক্লিনার্সে”। অথচ আই-টি রিটার্নে মিস্টার প্রদীপ ঘোষ দেখিয়েছেন যে সারাদিনে মাত্র আশি জন খদ্দের গড়ে ওনার দোকানে খেতে আসেন।”
-“যুক্তিটা অকাট্য বৈকি, আশি জন খদ্দেরের জন্য একশ ষাটটা ন্যাপকিন কেন প্রতিদিন কাচান হবে?”
-“এগজ্যাক্টলি স্যার, কালো টাকাকে কেচে সাদা করতে আর যেই হোক আমরা তো দিতে পারিনা।”
-“ওয়েল ডান্, রিপোর্টটা রেখে যান। আমি আজই এই রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে একটা চার্জশীট তৈরি করে ফ্রড ডিপার্টমেন্টের হেডের কাছে পাঠাচ্ছি।”
(৯)
-“দেখুন মিস্টার ঘোষ, আমি আপনার থেকে মাসের পর মাস কন্সাল্টেন্সি ফী নিয়ে মামলাটা চালিয়ে যাব, অথচ মনে মনে জানব যে এ কেস আমি হারবই, সেরকম ওকালতি এই শর্মা করেনা। আমি আপনাকে বলছি ওই একশ ষাটটা ন্যাপকিনের হিসেব কিছুতেই মেলানো যাবে না। আপনি গিলটি প্লীড করুন, আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার ফাইনের অঙ্কটা যতটা কম করা যায় সে চেষ্টা আমি করব।” উকিলের কথা শুনে প্রবীর বাবুর মুখ শুকিয়ে গেলেও গিল্টি প্লীড করলে মামলাটার নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হবে জেনে শান্তি পেলেন। উনি নিজে তো জানেনই যে একেকদিন দোকান বন্ধ রাখার মানে পনেরোহাজার টাকা লস্।
ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট তাদের বকেয়া লক্ষ-লক্ষ টাকার ট্যাক্স সুদসুদ্ধ আদায় করে নিল কেসে জিতে। সারা নভেম্বর মাসটা শাহী তন্দুর বন্ধ থাকল, কিন্তু রেগুলার কাস্টমাররা কিছু সন্দেহ করল না, কারণ তারা জানেই যে পূজোর পরে প্রদীপ ঘোষ সপরিবারে এই সময় বিদেশে ছুটি কাটাতে যান। ডিসেম্বর থেকে আবার শাহী-তন্দুর যথারীতি ঝেঁপে বিজনেস করা শুরু করে দিল।
(১০)
-“আই জাস্ট কান্ট বিলীভ দিস্, আবার এ বছরও শাহী-তন্দুর সেই বাইশ লাখ টাকা টার্নোভার আর আড়াই লাখ টাকা প্রফিট দেখিয়েছে? লোকটার কি ঠেকেও শিক্ষা হল না?” পরের বছর শাহী তন্দুরের আই-টি রিটার্ন রিভিউ করে ম্যাডাম চিত্রলেখা যারপনাই বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ। চিত্রলেখার এই আরেক গুণ। যাকে একবার সন্দেহ হয় বা একবার যার বিরুদ্ধে কেস ঠোকেন, প্রত্যেক বছর নিজে হাতে সেইসব বিজনেস বা ইন্ডিভিজুয়ালের রিটার্ন রিভিউ করেন।
-“ম্যাডাম, আজ বিকেলে আবার “টিপ-টপ লন্ড্রি অ্যান্ড ড্রাই-ক্লিনার্সে” রুটিন চেকের নাম করে আরেকবার ঢুঁ মারতে যাবেন নাকি?” দেবাশিষ উস্কায়।
সন্ধ্যেবেলায় ফিরে এসে চিত্রলেখার হতাশোক্তি,“শাহী-তন্দুর এখান দিনে গড়ে কুড়িটা টেবিল-ক্লথ আর মাত্র আশিটা ন্যাপকিন মাত্র পাঠায় দেবাশিষ।”
-“ও, শ্যীওর এখন ব্যাটা দুটো বা তিনটে দোকানে মাল পাঠায় কাচতে, কারণ শাহী-তন্দুরের ব্যাবসা মার খাচ্ছে বলে তো মনে হয়না” দেবাশিষ বলে, “ম্যাডাম, একটা কাজ করা যাক, কালকে আবার সকালে গিয়ে দেখছি কতগুলো ঠ্যালা আসে ন্যাপকিন আর কাচা টেবিল-ক্লথ দিতে”, দেবাশিষ নিজেকে চিত্রলেখার যোগ্য অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রমাণ করেছে এই এক বছরেই।
পরেরদিন অবশ্য পাঁচঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও দেবাশিষ শুধু একটাই ঠ্যালাওয়ালাকে দেখতে পেল যে আগেরবারের মত এবারও “টিপ-টপ লন্ড্রি অ্যান্ড ড্রাই-ক্লিনার্স”-এই ঢুকল।
হতাশ চিত্রলেখা, “তাহলে রহস্যটা কি?”
-“আমি বলি কি ম্যাডাম, লেট্স্ মুভ অন। এই ফাইল নিয়ে এতটা সময় নষ্ট করা পার্তায় পোষাবে না। ওদিকে তো কেসের পাহাড় জমে রয়েছে।”
-“অগত্যা”,চিত্রলেখা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরের ফাইলে মনোনিবেশ করলেন।
(১১)
-“বাব্বা, বাইরে ভিড় তো আরও বেড়েছে দেখছি! তুমি টেব্ল রিজার্ভ করে এসেছ তো?” সেকেন্ড অ্যানিভার্সারির সন্ধ্যায় মৌ নিজে থেকেই শাহী তন্দুরের নামটা সাজেস্ট করেছিল শুভ্রকে।
-“আচ্ছা, এখান থেকে কাবাব প্যালেসটা উঠে গেল কেন বলত? শুনছিলাম অবশ্য লসে চলছিল। তবে ভালোই হয়েছে, পার্কিং স্পেসটা বেড়েছে, আগেরবার মনে আছে ওইদিকটায় বড় প্ল্যাকার্ড দেখেছিলাম – পার্কিং রিজার্ভ্ড ফর কাবাব প্যালেস কাস্টমার্স ওনলি” সাদা করোলাটা থেকে নামতে নামতে মউয়ের বক্তব্য।
(১২)
রাত বারোটা নাগাদ শাহী তন্দুরের জনা চারেক বাসন মাজার লোক শেষদফার বাসন সাফ করে ইয়াব্বড় দুটো করে বিগ্-শপার ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল।
-“মান্কে, পা চালিয়ে বাপ্, ক্ষিদেয় পেট চুঁইচুঁই করছে।”
-“আমারও, তবে গেলেই কি আর ভাত পাব? বউ সব কাপড় সার্ফে ভিজিয়ে তবে ভাত বাড়বে।”
-“যা বলেছিস, মালিক গতবছর থেকে এই কাপড় কাচার কাজটা দেওয়ার পর যেন বউএর দরদ কাপড়েই বেশী।”
-“তবে যাই বলিস মাইরি! বাড়িতে বসে শুধু মাসে শ-দেড়েক টেবিলের ঢাকা আর শ-পাঁচেক রুমাল কেচে ইস্তিরি করে দিলেই নগদ পাঁচহাজার টাকা! বউ-এর চোদ্দগুষ্টির কেউ চোখে দেখেছে?”
-“যে নতুন ইস্তিরিটা দিয়েছে মালিক সেটাই কি বাপের জন্মে কেউ চোখে দেখেছে?”
-“হ্যাঃহ্যাঃ, যা বলেছিস। নে এবার পা চালিয়ে চল্ দিকিনি।”
- ঈপ্সিত ব্যানার্জী/চম্পাকলি ব্যানার্জী
ঋণস্বীকার -
১) মায়েস্ত্রো -জেফ্রি আর্চার
২) এ কেয়ারফুল ম্যান - ফ্রেড্রিক ফরসাইথ
মন্তব্য
দারুণ!
সংলাপে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার না করলে তা বাস্তব মনে হবে না, তবে বর্ণনায় ইংরেজি যতটা সম্ভব বাদ দিলে ভাল হয়।
ভালও লেগেছে শুনে খুব ভালো লাগল।
হ্যাঁ, বর্ণনায় ইংরেজি কমানোর চেষ্টা চলছে। প্রবাসে থাকার ফলেই এই গন্ডগোল।
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি
বাহ দুজনে মিলে বেশ একটা জমজমাট গল্প লিখেছেন তো।
অসংখ্য
গল্পটা জমাট। ভালো লেগেছে।
শুরুতে বুঝতে পারিনি। তবে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট ইন করার পর থেকে বাকিটা অবশ্য অনুমান করা যাচ্ছিল।
যুগল গল্প লেখা চলুক---
অনেক
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
আপনাদের লেখার হাত খুব ভালো, তবে এই গল্পটা ভালো লাগে নি। একটা লোক শুধু কম ন্যাপকিন কাঁচতে দিয়ে জাঁদরেল অধ্যবসায়ী ইনকাম ট্যাক্স অফিসারের হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাবে, এটা ছেলেমানুষী বলে মনে হলো।
চার হাতে লিখতে থাকুন।
হুঁম্ বুঝলাম। নিছকই গল্প। ন্যাপকিন কাচা ধরার ব্যাপারটাও জুভেনাইল।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
ভাই, আপনাদের দুজনকে দেখে হিংসা হয়।
কেন ভাই? দুজনকেই খুব খারাপ দেখতে আমাদের।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
একেক সপ্তায় এরকম একেক স্বাদের গল্প দিয়ে তো ভাই অভ্যাস খারাপ করে দিচ্ছেন!
রমরমিয়ে চলুক, নো ইস্টপিং।
..................................................................
#Banshibir.
পড়তে থাকুন, সঙ্গে থাকুন। ভালো লাগলে লেখকদ্বয় ধন্য।
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি
বাইপাসের ঠিক কোন জায়গাটায় বলেন তো শাহী তন্দুর? একদিন গিয়ে খেয়ে আসবো৷
কথা হল স্রেফ লন্ড্রী ফলো না করে খরচের হিসাব নিয়ে কোত্থেকে টাকা এলো -- অর্থাত্ আয় ব্যায়ের অসামঞ্জস্য নিয়েই তদন্ত করাটা আয়কর বিভাগের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল না?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
হ্যাঁ, এটা নিছকই গল্প। আয়, ব্যায়ের হিসেব নিয়েই আয়কর দপ্তর শুধু মাথা ঘামায়। কস্মিনকালেও আশি জন খদ্দেরের জন্য ১৬০ টা ন্যাপকিন কাচা নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করে বলে শুনিনি।
কিন্তু করে দেখতে পারে। অনেক শাহী তন্দুরের ঘর থেকে সরকার ট্যাক্স অনেক বেশী আদায় করতে পারবে।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
এই গল্প প্রথম দুই পারা বাদে বাকি Maestro গল্পের অনুবাদ । আপ্নাদের লেখা প্রথম গল্প কি এই রকম অনুবাদ ?
হাসান ভাই -
প্রথম গল্প 'বিতংস; -এর ১৪# মন্তব্যে আমি বলেছি -
"গল্পটি "নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা" সিনেমা, ফেড্রিক ফরসাইথের ছোটগল্প ভেটেরান, জন গ্রীশামের বিভিন্ন লিগাল থ্রিলার এবং নারায়ন সান্যালের কাঁটা সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত।
গল্পের শুরুতেই একটা খুনের আইডিয়াটা ড্যান ব্রাউনের থেকে শেখা। "
দ্বিতীয় গল্প 'চ-এ চুরি, ছ-এ ছবি, জ-এ জব্দ' -এ ২৬# মন্তব্যে বলেছি -
"সবার অবগতির জন্য জানাই - এই গল্পটি কিন্তু সত্যি ঘটনা আর কল্পনা মিশিয়ে তৈরি। গতবছর আমি আর আমার স্ত্রী লস্-অ্যাঞ্জেলেসের গেটী সেন্টার মিউজিয়ামে গিয়ে একটা বিশাল ছবির ফ্রেম দেখতে পাই। এও দেখি যে ছবির পাশে সেরকম কোন ডেস্ক্রিপশান নেই, কিন্তু ফ্রেমের ব্যাপারে অনেক কিছু লেখা আছে। ব্যাস্, মাথায় একটা ভালো আইডিয়া এসে গেল। বাড়ি এসে গুগ্ল সার্চ দিয়ে পেলাম ২০০২ সালের এই আর্টিক্লটিকে: http://articles.latimes.com/2002/aug/25/entertainment/ca-muchnic25
পড়ে দেখলাম, আরও চমতকৃত হলাম। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষও নাকি জানত না ফ্রেমটার ভ্যালুয়েশান। সেই থেকেই এই গল্পের জন্ম। ওপ্পেনর্ড সম্পর্কের তথ্য সবই সত্যি। তবে চন্দননগর, চিত্রলেখা, এবং বাকি সব আমাদের ইম্যাজিনেশান।"
তৃতীয় গল্প 'শাহী-তন্দুর'-এর গল্পের শেষেই ঋণস্বীকার করে দিয়েছি -
১) মায়েস্ত্রো - জ়েফ্রি আর্চার
২) এ কেয়ারফুল ম্যান - ফ্রেড্রিক ফরসাইথ
স্থান, কাল, পাত্র অবশ্য কাল্পনিক।
আগামী গল্পেরও শেষে ঋণস্বীকার থাকবে যে যে লেখা, মুভি বা গল্পের থেকে ইন্স্পায়ার্ড, সেই সেই লেখক বা সিনেমার নাম।
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি
দুঃখিত, আমার মন্তব্ব পড়ে হয়ত আমাকে সন্দেহ বাতিক গ্রস্ত ভাবছেন। আমি আসলে আমার নিজের জানার জন্নে জিজ্ঞাসা করসিলাম , আপনি যে ঋণ স্বীকার দিয়েছেন সেতা আগেই দেখেছি, আমার মাথায় গুরপাক খাচ্ছিল কন গল্পে পড়লাম আইনজীবী আসামীদের মুক্ত করে আবার নিজেই খুন করে, কিন্তু গল্পটা আর মনে নাই । এই নির্দিষ্ট ব্যাপারটা ঠিক কোন গল্পের সেটাই মনে করতে পারছিলাম না দেখে আপনা দের জিজ্ঞাস করছিলাম ।
এই ধরণের গল্প গুলি রুপান্তর নাম দিয়ে আমাদের দেশে সেবা প্রকাশনী সঙ্কলন বের করত , দারুন ছিল। আপনারাও চাইলে রুপান্তর / ভাবানুবাদ ট্যাগ হিসাবে দিতে পারেন ।
আপনাদের লেখা খুব ভাল লাগে । আশা করি চালিয়ে যাবেন - প্রতি সপ্তায় একটা , প্রতিশ্রুতি মত ।
অনেক ধন্যবাদ ।
facebook
অসংখ্য
খুব ভাল লাগল।
আপনাদের পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
আর ঋণস্বীকার করে যদি কোনও লেখায় অন্য কোনও লেখা থেকে প্রেরণা নেওয়া হয়, আমার তো মনে হয় না তাতে কোনও অসুবিধে আছে বলে। 'মায়েস্ত্রো' আর 'এ কেয়ারফুল ম্যান' আমি পড়িনি। তবে আপনারা লেখায় একটা ভাল লেখা পড়তে পারলাম আর ঐ দুটো লেখা পড়ার জন্যে তৈরী হলাম।
দুটী গল্পই দারুন। পড়ে দেখবেন। তবে আমাদের গল্পের পটভূমিকা , ঘটনাপ্রবাহ বা চরিত্রগুলির সাথে এই গল্প দুটির মিল কম। মূল ধারণাটি এক ধাঁচের।
আমার ভাল লেগেছে। লিখতে থাকুন।
চমৎকার। লেখা চলতে থাকুক। পরের পর্ব কবে আসবে?
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
ভাল লেগেছে।ভাল লিখেছেন।।
প্রতি শুক্রবারে একটি করে পোস্ট দেবার ইচ্ছা আছে।
দারুন লাগলো আমার কাছে। আপনাদের যুগল-জীবনযাপনের সাথে যুগল-লেখালেখি নিঃসন্দেহে প্রস্ংসাযোগ্য। তবে, কোন এক সময় আপনাদের থেকে আলাদা-আলাদা গল্প বা লেখা আশা করি। তাতে আপনাদের স্বকীয়তা আস্বাদনের সুযোগ হবে আমাদের ব্ আমার।
ভালো থাকা হোক।
ক্রেসিডা
উল্লেখ্য যে, "আপনাদের স্বকীয়তা" বলতে এটা বুঝাতে চাই নাই যে, এখন সেটা অনুাস্থিত।যেটা বলতে চেয়েছি - একদম আলাদা আলাদা ভাবে আপনাদের উপস্থিতি দেখার ইচ্ছে।
ক্রেসিডা
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
খুব ভালো লেগেচে।
গল্প ভাল লেগেছে।
***
আফগানিস্তান/কাশ্মির কি নরদারন ইন্ডিয়ার অন্তরগত হয়ে গেছে নাকি?
এ দুজনের কলমের নিব বেশ শক্ত বলেই বোধ হচ্ছে! অভিনন্দন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন