আমার আল্লা নবীজির নাম...
সকলেঃ আমার আল্লা নবীজির নাম...
এভাবে আর চলেনা... এই জীবনের কোন মানে হয়? আকাশে বাতাসে চাপা অসন্তোষ। গড়িয়ে গড়িয়ে চলার চেয়ে গাছ হওয়াই যে ভাল ছিল। চাপা অসন্তোষ প্রাণী-গণরোষে পরিণত- চাপা থাকল না আর। প্রকৃতির কানে গিয়ে পৌঁছাল। গড়গড়া রেখে নড়েচড়ে বসলেন প্রকৃতি। তাঁর তলবে প্রতিনিধি আসল প্রাণীজগতের। প্রকৃতি সমস্যাটা চোখ বন্ধ করে শুনলেন, অনুধাবন করলেন এবং কথা দিলেন- অবশ্যই একটা গতি করে দিবেন তিনি।
প্রকৃতি কিছুটা বিভ্রান্ত। 'চাঁদ তারা সূর্য গ্রহ এত কিছু বানালাম... গড়িয়ে চলতে কারো আপত্তি নেই, প্রাণীকুলের 'গড়িয়ে চল নীতি'তে এত আপত্তি কেন?' তবে নতুন কিছু একটা আবিষ্কারের চিন্তা প্রকৃতির ঝিমুনি ভাব কাটিয়ে চনমনে ভাব নিয়ে আসল। 'সচিত্র শরীরতত্ত্বঃ প্রথম খণ্ড', ফলিত গতিবিদ্যা, যন্ত্র কৌশলের অ আ ক খ প্রভৃতি বই খুলে, খাতা কলমে কিছু হোম ওয়ার্ক সেরে প্রকৃতি গিয়ে দাঁড়ালেন বিশাল হোয়াইট বোর্ডের সামনে। কিছু আঁকাজোকা, ঘষামাজা, ক্যালকুলেশন... ঘনঘন আইডিয়ার বিদ্যুৎ চমকাল...আকাশে কখনো হাতির ছবি, কখনো সাপ, ব্যাঙ, পাখী... ফুঁ দিয়ে বোর্ড মুছতেই ঝরঝর বৃষ্টি। রোদ, বৃষ্টি, মেঘে মেঘে অনেক বেলা, অনেক ট্রায়াল অ্যান্ড এররের পর নতুন জিনিসটা দাঁড়িয়ে গেল, প্রথম টেস্টেই গটগট করে হেঁটে নিজের জাত চিনিয়ে সৃষ্টি হল 'পদ', মানে পা।
নট ব্যাড, প্রকৃতি আপন মনে বললেন, চলে... । ক্লান্ত,আহ্লাদিত প্রকৃতি হোয়াইট বোর্ডে লিখলেন, পদ+বাতিক= পদাতিক; নতুন নামে ডাকলেন প্রকৃতি সন্তানদের...
প্রকৃতি অফিস চত্বরে প্রাণীজগতের দীর্ঘ লাইন। ধুকপুক বুক, আশা নিরাশার দোলার মধ্যে মৃদু গুনগুন, চোখ অফিসের বন্ধ জানালায়। পেছনের ঠেলায় লাইন কখনো বেঁকে যাচ্ছে, সরব গালাগালে আবার সোজা হচ্ছে...। পদ-অর্পণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকৃতি স্বয়ং অফিসে পদার্পণ করেছেন। সহকারীরা লাইন জরিপ করে এসে আপডেট জানালো- 'হুজুর, ডাঙ্গার সকলে আসলেও জলজ-রা কেউ আসেনি।' প্রকৃতির মনে পড়ল, জলজ-রা নিজেদের চলা নিয়ে কোন অভিযোগ জানায়নি। কিন্তু পদ তো তাহলে এক্সট্রা থেকে যায়; প্রকৃতি কিপটা না, কিন্তু অপব্যয় ও নাপছন্দ। কিছু পদ কয়েক সহকারীর হাতে জলে পাঠিয়ে দিলেন - 'কারো লাগে কিনা দেখো, আগ্রহ দেখালেই গছিয়ে দিবে...'
সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জানালা খুলল। লাইনে দাঁড়ানো প্রথম প্রাণী নাকি চারদিন আগে এই চত্বরে সংসার পেতে বসেছে। 'গতি বৃদ্ধির এমন আকুতি?'- প্রকৃতি তাকে শ'খানেক পা দিলেন, সাথে দিলেন নতুন পদবী - শতপদী। এতবেশি পা দেবার পেছনে অবশ্য অন্য উদ্দেশ্য ছিল- পদ যেন উদ্বৃত্ত রয়ে না যায়। এই অভূতপূর্ব পদোন্নতিতে শতপদী অভিভূত- পেছন থেকে অনেকে পিঠ চাপড়ে দিল... খাওয়াতে হবে... আরে, খাওয়াবো, খাওয়াবো...পদোন্নতি আপনাদের ও হচ্ছে, সবাই এক সাথেই খাব... । প্রকৃতিকে ধন্যবাদ ও সবাইকে স্মাইলি দিয়ে শতপদী দ্রুতপদে স্থান ত্যাগ করল। পদেপদে পদ হস্তান্তর চলতে লাগল। মাকড়শা আটটা পা পেল; প্রাণীজগতের বৃহত্তম গোষ্ঠী পতঙ্গকুল পেল ছটা করে। লেফট রাইট করে চতুষ্পদীরা চলে গেল বাম ডানের তোয়াক্কা না করে। এই করে করে সামনে এসে দাঁড়াল প্রাণীজগতের সবচেয়ে অপদার্থ পদস্খলিত বিরক্তিকর প্রাণী- মানুষ।
প্রকৃতি আগেই ঠিক করেছিলেন এই পায়াভারী প্রাণীটাকে দুটার বেশি পা দিবেন না। যথারীতি, 'না হলেও চলে'- এরকম ভাব নিয়ে পা নিল মানুষ। প্রকৃতির পদধূলি নেয়া দূরে থাক, ব্যাগ থেকে জুতা বের করে 'মাটিতে পা পড়েনা' ভাব নিয়ে পায়ে ধুলা না লাগিয়ে চলে গেল প্রাণীটা। প্রকৃতির পদমর্যাদার পক্ষে স্পর্শকাতর এরকম ঘটনা যখন পুরো প্রকৃতি অফিসে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করল ঠিক তখনই জানালায় এসে দাঁড়াল সাপ। সাপের জন্য পা তোলার জন্য হাত বাড়ালেন প্রকৃতি... কোন কিছুতে হাত ঠেকল না...
ভয়ঙ্কর ঘটনা- পা শেষ। পাখা গজাল নাকি পায়ের; এতগুলি পা কোথায় গেল? লাইনে তখনো অনেক, অনেকে বাকি। হিসাবে এত গুরুতর ভুল হল কিভাবে! প্রকৃতি রাগে গজগজ করতে লাগলেন। 'অপয়া প্রাণীটাকে পা দিতেই পা শেষ! অপায়া রাখা উচিত ছিল এদের।' এরকম অপদস্থ কখনো হতে হয়নি প্রকৃতিকে... পায়চারী শুরু করলেন প্রকৃতি। জলে জরুরী তলব পাঠানো হল। যা শুনলেন তাতে রাগে মাটিতে পদাঘাত করলেন প্রকৃতি। বেশিরভাগ জলজরাই পা নেয়নি; কিন্তু চিংড়ি, কাঁকড়া, অক্টোপাস এদের হাতে বেশি বেশি করে পা ধরিয়ে দিয়ে পায়ের কোটা শেষ করা হয়েছে। জলে পাঠানো সহকারীরা পদচ্যুত হবার ভয় পেলেও যখন শুনল ডাঙ্গায় এক বান্দাকে শখানেক পা দেয়া হয়েছে, তাদের ধড়ে প্রান ফিরে আসল।
নিজের উপর, নতুন আবিষ্কারের উপর, মানুষের উপর- গোটা সৃষ্টি জগতের উপর বিরক্ত প্রকৃতি ভাবছেন, নাউ হোয়াট? নতুন পদ সৃষ্টি? প্রশ্নই উঠেনা। একবার ভাবলেন, সুনামি পাঠিয়ে লাইনের বাকী কটাকে জলে পাঠিয়ে দিবেন। তারপরই মাথা ঠাণ্ডা করলেন। প্রকৃতি-অফিসের দরজা খুলে প্রকৃতি বাইরে এসে দাঁড়ালেন। নিজের ভুল স্বীকার করলেন না। বরং গুরুগম্ভীর স্বরে বক্তৃতা শুরু করলেন- 'তোমরা, লাইনের পেছনের সারির লোকজন, যারা যথাসময়ে লাইনে দাঁড়ানো দূরে থাক, দেরি করে লাইন ধরেছ, এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করেছ, জীবনের সর্বক্ষেত্রে যে কারনে পিছিয়ে আছ, খালি হাতে হাজারবার ফেরার পরও যাদের শিক্ষা হয়না তাদেরকে জানাচ্ছি- তোমাদের আরেক দফা শিক্ষা হওয়া দরকার। তোমরা পা পাচ্ছনা।' মৃদু আর্তনাদ উঠল পুরো লাইনে।
'হুজুর, জানেন তো আমি শীতল রক্তের প্রাণী। একটু রোদ না চড়লে লাইনে কি ভাবে দাঁড়াই?' সাহস করে ভদ্রতা বজায় রেখেই বলল সাপ। নিজের, অন্যের- সবার সৌভাগ্য, দুর্ভাগ্য- সবকিছু নিয়ে জোক করা জোঁকের অভ্যাস। প্রকৃতিকে নিয়ে মশকরার লোভ সামলাতে পারলনা- 'আমি বস্ লাইনের সামনের দিকেই ছিলাম; একটু প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গেলাম, আর লাইনে ঢুকতে পারলাম না।' প্রকৃতি না শোনার ভান করলেন, ব্যস্ত হয়ে পড়লেন পদ ছাড়াই না গড়িয়ে সন্তানদের চলার ব্যবস্থা করতে। ধ্যানস্থ প্রকৃতি নিজ হাতে একে একে সব প্রাণীর শরীরে টুকটাক পরিবর্তন করে চলার ব্যবস্থা করলেন। সাপ, কেঁচো...সবার ব্যবস্থা হল, জোঁক ও বাদ পড়ল না। তবে হাড় না থাকলেও জোঁক হাড়েহাড়ে টের পেল প্রকৃতি তার জোক ফিরিয়ে দিয়েছেন। পদহীন জোঁকের চলার পদ্ধতিটা না ডিগবাজি, না বুকডন, না এরোবিক্স, না যোগাসন। 'প্রকৃতির প্রতিশোধ' শব্দটার অর্থ বুঝলাম'... মনে মনে বলল জোঁক।
জোকার জোঁক নিজের চলার নাম দিল 'জোঁকাসন সচলায়ন।'
নিচের লিঙ্ক দেখতে পারেন...
http://www.youtube.com/watch?v=YeLeypm0L5I&feature=related
এ ইউসুফ
মন্তব্য
ভালো লেগেছে
নতুন মন্তব্য করুন