১
- হ্যালো আপা ?
- হ্যা শিপন বল।
- আপা ফারিয়া মামনির জন্য মেডিকেলের ভর্তির প্রশ্ন ম্যানেজ হয়ে গেছে।
- কোথায় ? কার কাছ থেকে।
- তুমি চিন্তা করো না আমার এক কলিগ আছে সেই সব করে দেবে শুধু তিন লাখ টাকা দিতে হবে। এডভান্স এক লাখ আর প্রশ্ন কনফার্ম হউয়ার পর বাকী টাকা।
- বলিস কি। টাকা নিয়ে তুই কোন চিন্তা করিস না। শুধু প্রশ্ন কনফার্ম কর। একমাত্র মেয়ে আমাদের ওর জন্য এইটুকু করা তো বাবা মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।
- আচ্ছা আপা আমি তাহলে কথা পাকা করে ফেললাম তুমি টাকা ম্যানেজ করে ফেলো।
- ফারিয়া কোথায় গেলি।
- এইত মা। কি হয়েছে। ডাকছ কেন?
- তোর মামা প্রশ্ন ম্যানেজ করে ফেলেছে। ওর এক ডাক্তার বন্ধু আছে সেই সব ম্যানেজ করবে। এইবার প্রশ্নটা পাওয়া গেলে বাসায় একটা মিলাদ দেবো রে মা।
- শিপন মামা যখন বলেছে হয়ে যাবে। আর এখনও তো একদিন বাকি আছে পরীক্ষার। ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করো না ।বাবাকে বিকালে গাড়িটা রেখে যেতে বোল আমি বন্ধুদের নিয়ে শপিং এ যাবো।
- ঠিক আছে বলে দেবো। আল্লাহ্ এবার প্রশ্নটা যেন পায়।
২
- বাবা , ক্লাসে রনির হাতে একটা গ্যালাক্সি ট্যাব দেখলাম। আমাকে একটা কিনে দিতে হবে।
- ঠিক আছে দোয়া কর যেন নতুন রাস্তার কাজের টেন্ডারটা ভালো দামে দিতে পারি।
- ভাল দামে দেবে মানে? আর কবে কার কাছে দেবে আমি কি সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করবো নাকি?
- একটু সবুর কর বাবা সগির সাহেব আজ ১ লাখ টাকা দেবে কাজটা তাকে দিলে। তাহলেই তো হল। তখন দুই বাপ ব্যাটা একসাথে বসুন্ধরাতে যেয়ে গ্যালাক্সি ট্যাব কিনে ফেলবো।
- বাবা, কাল বালিসের নিচে ৫০০ টাকার দুইটা বান্ডিল ছিল আমি ওখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে হ্যাল্ভেশিয়াতে লাঞ্চ করেছি।
- ঠিক আছে এখন বাকি টাকাগুলো নিয়ে আই । কাল খালেক মিয়া তোকে কিছু কিনে দেয়ার জন্য এই টাকা গুলো দিয়ে গেছে।
- এত টাকা সে তোমাকে দিলো কেন?
- তুই বুঝবিনা রোডস এন্ড হাইওয়েজ এর এসব কনট্রাক্টররা খুশী হয়ে এগুলো প্রায়ই দিয়ে যায় বুঝলি।
- বুঝেছি বাবা। খুশী হয়ে কেউ কিছু দিলে তা নেওয়া উচিৎ।
- একদম ঠিক। খুশী হয়ে কেউ কিছু দিলে তা নিতে হয়।
- মজনু ভাই, প্যাকেটটা রাখেন।
- ধন্যবাদ সগির ভাই। ছেলেকে আজ গ্যালাক্সি ট্যাব কিনে দেব। খুব খুশী হবে ও।
- তা ঠিক। আমি তবে আসি। আবার দেখা হবে।
৩
- কি বাবুল ভাই পত্রিকা কেমন চলছে?
- ভালো না ভাই। আপনারা আমাদের দিকে না তাকালে কিভাবে চলে।
- কেন? আমার লোক আপনার কাছে আজ যায়নি ?
- নাতো? সেই গত মাসে একটা নিউজের জন্য ৩০ দিছিলেন। তারপর আর কোন খোঁজ নিলেন না।
- আরে মিয়া একটা নিউজের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আক্কাজ রে আপনার কাছে পাঠাইলাম তো ?
- কি নিউজ?
- আপনি তো জানেন কামাল ভাইয়ের কিছু পোলাপাইন যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালে কাজ করে। সেদিন একজনরে অস্ত্র নিয়ে ফাপর দিতে গিয়ে ধরা খাইছে। এখন ভাইরে তো কেউ চান্দা দেয় না। তাই ভাই বলল আপনারে দিয়ে একটা নিউজ করাতে।
- কি নিউজ করব? অস্ত্র নিয়ে ধরা খাইছে ওরা।
- আরে ভাই বুঝলেন না, আপনি শুধু লিখবেন যে এই এলাকার নিরীহ ছেলেদের জোর করে ধরে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে চালান দেয়া হয়।
- এটা কিভাবে দিব। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব লেখা যাবে না।
- বাবুল ভাই টাকার ফিগার বাড়ায় দিব। পুপাপুরি এক যান।
- আচ্ছা ঠিক আছে দেখি। বোঝেন ই তো এসব লিখলে চাপ আসে।
- আপনি কোন টেনশন নিয়েন ্না। পাবলিক এখন প্রশাসনের উপর ক্ষ্যাপা তাই আপনার এই লেখা ছাপাইলে জনগন খাবে।
- ঠিক আছে তাই হবে। টাকাটা দ্যান। ভাইরে আমার সালাম দিয়েন।
- এই শুনছো?
- কি বল।
- কাল বাবুর স্কুলে ভর্তি।
- দুই দিন পরে ভর্তি করাও।
- ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এসব করলে প্রেস্টিজ থাকে। টিচাররা তো হাসবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। কাল তোমাকে ১ লাখ টাকা দিলাম না ওখান থেকে নিয়ে যাও।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আর বাবুর কিছু বই কিনতে হবে তাহলে ওখান থেকে খরচ করে নিয়ে আসব।
- আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে এসো।
- বাবুর প্রাইভেট টিচার এর টাকাটা দিতে হবে কাল।
- আমি কি টাকার গাছ লাগাই নাকি? মাসে দুই একটা নিউজ ছাপালে কয় টাকা পাওয়া যায় । আর কালকের মতো এরকম কাজত মাসে দুই একটা আসে। আচ্ছা ঠিক আছে কালকের ওই টাকা থেকে দিয়ে দিয়ো।
৪
চারিদিকে বেশ শোরগোল শোনা যাচ্ছে। কুইন্স হসপিটালের চারপাশে প্রচুর লোক ভিড় করে আছে। দুই একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেলো এখানে একজন মহিলা সকালে বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে মারা গেছেন। অনেকের মুখ থেকে একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি এই হসপিটালের একজন গাইনি বিভাগের ডাক্তার – ডাঃ ফারিয়া। রোগীর পরিবারের লোকজন এসে বিলাপ করছেন আর সেই ডাক্তারের বিচার দাবী করছেন। দুই বছর ধরে তিনি এই হাসপাতালে রুগী দেখছেন।হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফদের কাছ থেকে জানা গেলো এর আগেও তার ভুল চিকিৎসার কারনে অনেক রোগীর ক্ষতি হয়েছে তবে কেউ মারা গেলো এই প্রথম।
৫
রোডস এন্ড হাইওয়েজের মজনু সাহেবকে সকাল থেকেই বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। অফিসে আসার পর কারো সাথেই তিনি কথা বলছেন না। কেমন যেন নিশচুপ হয়ে গেছেন। তার অফিসের পিয়নের কাছ থেকে জানা গেলো তার এই মুষড়ে পড়ার কারণ। তার একমাত্র ছেলে পরশু দিন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার নামে ওয়ারেন্ট জারী হয়েছে। উত্তরায় যে মার্ডারটা হয়েছে গত সপ্তাহে সেখানে তার ছেলেও ছিল প্রমান পাওয়া গেছে। ছেলেকে তিনি লুকিয়ে রেখেছেন। অনেক টাকা ঢেলেছেন থানায় কিন্তু এ যাত্রায় মনে হয় আর রক্ষা হবে না। গত বছরের এরকম একটি কেস তিনি থানায় ম্যনেজ করে কেসটা গায়েব করে দিয়েছেন। এবার উল্টো থানা থেকে তাকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে। এর মধ্যে ছেলেকে না দিলে নাকি তাকেই লকারে পুরে দেবে। আর সে কারনেই তিনি বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন।
৬
বাবুল সাহেবের পত্রিকার নামে সম্প্রতি বেশ কথা শোনা যাচ্ছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে তিনি অফিসে বেশ চাপেই আছেন। বাসায়ও তার শান্তি কেড়ে নিয়েছে তার ছেলে। সে নাকি এডিকটেড। অনেক চেষ্টা করেছেন তাকে এ পথ থেকে ফেরানোর কিন্তু পারেন নি। অসৎ উপায়ে তিনি যা উপার্জন করেছিলেন সবই ছেলের পিছনে ঢেলেছেন কিন্তু তাকে সুপথে আনতে পারেন নি। ছেলেকে নিয়ে তাই তার সংসারে তার উৎকণ্ঠার শেষ নেই। কেন এমন হল তার উত্তর তিনি প্রায়শই খুজে ফেরেন। মাঝে মাঝে তিনি বুঝতেও পারেন কিন্তু কাউকে বলতে পারেন না। আজ অনেক বছর পর এই পড়ন্ত বিকেলে তিনি এসব ভাবছেন আর অনুশোচনা করছেন যদিও তিনি জানেন অনেক দেরী হয়ে গেছে।
অমি_বন্যা
মন্তব্য
স্ন্যাপশট গুলো আমাদের খুব পরিচিত, ফলাফল এর অন্তঃসারশূন্যতাও অচেনা না। ভালো লাগলো আপনার লেখা।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
আসলেই খুব পরিচিত ঘটনা যা প্রতিনিয়তই ঘটছে আমাদের আশেপাশে। আপনাকে ধন্যবাদ ভাল লাগার জন্য।
ভাল লিখেছেন।আপনার লেখা আরও পাঠাবেন।
ধন্যবাদ আপনাকেও। লেখা চালিয়ে যাচ্ছি । আরও লেখা পাবেন।
আপনার লেখা খুব ভালো লাগলো। আশা করি এই রকম লেখা আবারও পাব।।
আপনাকেও
ভালো লিখেছেন। দুঃখজনক সত্যি হচ্ছে এগুলো আমাদের আশেপাশেই প্রচুর দেখি
ইয়াসির
এগুলো থেকে হয়তো একদিন বের হয়ে আসতে পারবো তবে যারা এসব করছেন তাদের বোধোদয় হোক এই কামনায় করছি।
আমাদের সমাজের বাস্তব কিছু চিত্র এটা। এইরকম হাজারো চিত্রের সাথে আমাদের বসবাস। মুক্তির অপেক্ষায় আছি।
মুক্তি একদিন আসবেই। আপনার মতো আমিও সেদিনের অপেক্ষায়
নৈতিক চরিত্র শব্দটা বড় সেকেলে হয়ে গেছে.....আমরা আমাদের আধুনিক জীবনে একে রাখতে চাই না...বোধহয় আমাদের ধার করা আধুনিকতার সাথে যায় না বলে..................
ধার করা আধুনিকতার এই কলুষ ছোঁয়ায় আর পরাজিত নৈতিকতার ধিককারে আমরা যে কোথায় গিয়ে ঠেকবো সেই আশঙ্কায় করছি। তবে মুক্তির স্বপ্ন দেখি । স্বপ্নরা বাস্তব হোক ।
ইস!!! লেখাগুলি তাঁদের কে পরাতে পারলে যে কি মজা পেতাম।
তাদের কেউ একজন দেখে যান না ! আপনার মন্তব্য ভালো লাগলো
এরকম বাস্তবতাগুলো কিংবা এর চেয়ে কঠোর বাস্তবতা আমাদের সমাজে আছে। আপনার তুলে আনার চেষ্টার মধ্যে একটু তাড়াহুড়ো ছিল বোধহয়। সময় নিয়ে, আর দুয়েকবার রিভিশন বা আরেকটু গোছানো গেলে ভালো হতো। লিখতে থাকুন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বিষয়টি খেয়াল রাখবো । ধন্যবাদ, দুর্বল এই দিকটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
পড়লাম। ভালো লাগল! এ ধরনের কনসেপ্ট নিয়ে লিখুন আরও। তবে একটা ব্যাপার একটু বিস্তারিত হওয়ার চেষ্টা করলে ভালো হয়। আরও অনেক কর্কশ কিংবা ব্যাপ্তির বিষয়াদি আছে। লিখুন সেগুলি নিয়েও......
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনার ভালো লাগলো শুনে ভালো লাগছে। আসলেই অনেক বিষয় আছে সেগুলো নিয়ে আরও লিখবো।
বেশ ভালো লাগলো
_______
বুনোফল
বেশ সুন্দর একটি লেখা।
__________
বুনোফুল
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন