হিং-টিং-চট্‌চট্‌

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি
লিখেছেন ঈপ্সিত আর চম্পাকলি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৯/০৫/২০১২ - ১:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘বিতংস’, ‘চ-এ চুরি, ছ-এ ছবি, জ-এ জব্দ’, ও ‘শাহী-তন্দুরের’ লেখকের কলম থেকে...

(১)
-“হ্যালো রনি তোর খুব বাড় বেড়েছে তো!”
-“আরে যাদুকরী তিষ্যা? বাড়? তা ইঞ্চি খানেক বেড়েছি। তুই কলকাতায় না থাকলে চাপমুক্ত ভাবে বাড়তে পারি তো। কিন্তু তুই কবে ফিরলি যাদুসফর শেষ করে?”
-“কাল বিকেল পাঁচটায়, সতের ঘন্টা হয়ে গেল, তুই ফোন করলি না?”
-“আরে তুই তো টোয়েন্টি ফোর আওয়ারের এস-এল-এ দিয়েছিস। দিনে একবার ফোন না করলে রিলেশন খতম। আরো সাত ঘন্টা বাফার আছে তো। তবে আমি ভয়ে ভয়ে ফোন করিনি। হয়ত শুনব হাত পা ভেঙ্গে শুয়ে আছিস।”
-“মানে?”
-“মানে ফার্স্ট টাইম স্টেজে উঠলি, তুই যা ছরু, হয়ত কারো পেট কেটে জোড়া দিতে পারলি না, পাব্লিকের ক্যালানি খেয়ে গেলি।”
-“সেটা ইম্পসিব্ল, বুঝলি। ভালোবাসি আর নাই বাসি ম্যাজিক আমার রক্তে , আমরা চার পুরুষে ম্যাজিসিয়ান। যাক-গে ছাড় না ম্যাজিকের গল্প, বোর হয়ে গেছি ,লাস্ট টু উইক খালি ম্যাজিক আর ম্যাজিক। অন্য সব খবর বল। কলেজে কি চলছে?”
-“কলেজ অ্যাজ উসুয়াল। তবে বাবা লাস্ট উইকের হীরে চুরির কেস দুটো নিয়ে খুব বিজি। বেশ শার্লক হোমস টাইপের কেস, তুই শুনলে ইন্টারেস্টেড হবি।”
-“হীরে চুরি তাও দুটো!! ইসস আমি মিস করে গেলাম। কবে হল? ডিটেলে বল।”
-“আমার মুখের ঝাল খেয়ে তোর পোষাবে না। তার থেকে ডিনারে আয়, তোর অনারে আমিও ভালমন্দ সাঁটাই আর তুই ডিরেক্ট ঘোড়ার থুড়ি বাবার মুখের খবর শুনিস ডিটেলে। ঈনফ্যাক্ট আঙ্কল ফ্রি থাকলে ওঁকেও ইনভাইট করব। সেই আইফেল টাওয়ার ভ্যানিস করার পর থেকে মা ওঁর এতো ফ্যান হয়ে গেছে, বার বার বলছে একবার বাড়িতে ডেকে খাওয়াবে।”
-“বাবার কথা জানি না, এসে থেকে তো স্টাডিতেই পড়ে আছে। বলে দেখব। তবে আমি ডেফিনিটলি যাচ্ছি। আন্টিকে বলিস বিরিয়ানি করতে। ওকে বাই, রাখছি এখন।”

(২)

-“বাবা, রনির মা আমাদের ইভনিং-এ ডিনারে ডেকেছেন, আমি তোমার আজকের শিডিউল চেক করে দেখেছি তুমি ফ্রি আছ, আন্টিকে বলে-দি আমরা যাচ্ছি?”
-“আজ ? আজ তো ভাবছিলাম তোকে হিপনোটিজমের ট্রেনিংটা শুরু করব। নেক্স্ট উইক থেকে কলকাতার শো শুরু হয়ে যাবে। তারপর আবার তোর কলেজ খুলে যাবে।”
-“বাবা প্লীজ, টানা পনেরো দিন দিল্লীতে ম্যাজিক-শো করে এলাম। আর পারছিনা। বোর লাগছে। ম্যাজিকের পুরো ব্যাপারটাই আমার ছেলেখেলা মনে হয়। রিয়েল ওয়ার্ল্ডের সাথে কোনো রিলেশন নেই। তোমাকে তো বলেইছি আমি এমন কোনো কাজ করতে চাই, রিয়েল ওয়ার্ল্ডে যার ইম্পরটান্স আছে।”
-“সে কথা তো হয়েই গেছে। তোর যে প্রোফেশনে ইচ্ছা তুই যাবি। তোকে তো আমি পেশাদার ম্যাজিশিয়ান হতে বলছি না। শুধু চাই তুই বিদ্যাটা শিখে রাখ। আমাদের তিন পুরুষের সঞ্চয়। ম্যাজিক হল গুপ্তবিদ্যা। বই লিখে তো আর জানিয়ে যেতে পারিনা সবাইকে। তুই শিখে রাখ, নিজে না প্রয়োগ করিস, উপযুক্ত শিষ্য পেলে শিখিয়ে তো দিতে পারবি।”
-“আচ্ছা সে শিখে নেব। আজকে প্লীজ রনিদের বাড়ি চল। অরুন আঙ্কল একটা এক্সসাইটিং হীরে চুরির কেসে কাজ করছেন। আমি ওটা ডিটেলে জানতে চাই। প্লীজ বাবা চল না। রনির মা তোমার খুব ফ্যান।বার বার করে যেতে বলেছেন।”
-“ঠিক আছে যাব। চল শুনে আসি তোর রিয়েল ওয়ার্ল্ডের এক্সাইটিং খবর।”

(৩)

সেদিন সন্ধ্যায় রনিদের আলিপুরের পুলিশ কোয়াটার্সে চা পাকোড়ার সাথে বেশ জমাটি একটা আড্ডা জমেছিল। তবে আড্ডার টপিক নিয়ে একটা টাগ অফ ওয়ার চলছিল। রনির মা মিসেস সুতপা বাসু ম্যাজিশিয়ান মেঘনাদ গুপ্তের খুব বড় ফ্যান। একজন বাঙ্গালি ম্যাজিশিয়ান, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার ভ্যানিস করে দিয়েছেন এই নিয়ে মিসেস বাসু খুব গর্বিত। উনি চাইছিলেন ম্যাজিসিয়ান গুপ্তার থেকে দেশবিদেশের ম্যাজিক শো এর গল্প শুনতে। কিন্তু তিষ্যা চাইছিল সি-আইডি অফিসার অরুন বাসুর থেকে হীরে চুরির কেসটা শুনতে। রনি দুদিকেই তাল সামলাচ্ছিল। মিসেস বাসু বিরক্ত হয়ে বললেন “থামাও তো তোমার অফিসের একঘেয়ে চুরি ডাকাতির গল্প। মিস্টার গুপ্তর প্যারিসের এক্সপেরিএন্সটা শোনা যাক এখোন।”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “এরকম পাকোড়া পেলে যতবার ডাকবেন এসে ম্যাজিক শো এর গল্প শুনিয়ে যাব। এখন হীরে চুরির কেস টা শোনা যাক। নয় তো তিষ্যার রাতে ঘুম হবে না।”
অরুন বাবু বললেন “সত্যি কথা বলতে কি হীরে চুরির কেস টা নিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্ট প্রায় অথই জলে। আপনারা তো কলকাতায় ছিলেন না, খবরের কাগজের রিপোর্ট পড়েননি তাই শুরু থেকেই বলি। প্রথম কেসটা হল বউবাজারের একনম্বর জহুরি একে সেনের শো-রুমে। দুপুর বারো-টা নাগাদ ওদের শোরুমের এক্সক্লুসিভ কাউন্টারে দোকানের পুরোনো কর্মচারি পরানবাবু এক জন কাস্টমারকে ওদের বেস্ট ডায়মন্ড গুলো দেখাচ্ছিলেন। ভদ্রমহিলা প্রথমবার ওদের দোকানে এসেছিলেন, এনগেজমেন্ট রিং এর ডায়ামন্ড কিনতে। বছর তিরিশের ভদ্রমহিলার কথাবার্তায় পরানবাবুর মনে হয়েছিল হীরে সম্পর্কে ওঁর বেশ জ্ঞান আছে। উনি থার্ড আই নামের 1.5 carat এর একটি হীরে পছন্দ করেন, ওটাই ওদের শোরুমের বেস্ট হীরে, দাম প্রায় এগারো লাখ টাকা। তারপর ওই মহিলা পরানবাবুর কাছে একটা লুপ চান হীরেটা পরীক্ষা করার জন্য।“
তিষ্যা জিজ্ঞেস করল “লুপ কি জিনিস?”
অরুনবাবু বললেন লুপ হল ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস, জহুরীরা ওই টার্মটা ইউস করে। পরানবাবু কাউন্টারের নিচের ড্রয়ার থেকে লুপটা বার করে ভদ্রমহিলার হাতে দিতে গিয়ে দেখেন থার্ড আই নামের হীরেটা মিসিং। পরানবাবু পুরোনো কর্মচারী। চুরিচামারির কেস আগেও নাকি হ্যান্ডেল করেছেন। মোটামুটি ভদ্রভাবে কিন্তু শক্ত গলায় উনি মহিলাকে জানান ওঁর বডি সার্চ করা হবে, পুলিশে খবরও দিয়ে দেন। আমাদের ডিপার্টমেন্টের সুবীর, দুজন মহিলা কনস্টেবল আর একজন সাব-ইন্সপেক্টর কে নিয়ে পৌছে যায়। তারপর ওঁর ব্যাগ , পার্স, পুরো বডি সার্চ করা হয়। কিন্তু থার্ড আই পুরোপুরি উধাও।“
এইখানে তিষ্যা বলে উঠল “আচ্ছা আঙ্কল ওই মহিলা কি শাড়ি পরেছিল? অনেকে কিন্তু পেটিকোটের মধ্যে পকেট বানিয়ে জিনিস লুকিয়ে রাখে।“
অরুনবাবু হেসে বললেন “সে চান্স নেই। তোমরা আমাদের পুলিস ডিপার্টমেন্টকে অপদার্থ বলে গালি দাও বটে কিন্তু কাজের ব্যাপারে আমরা খুব সিস্টেমেটিক। আমাদের মহিলা কনস্টেবল ওই মহিলাকে প্রথমে সমস্ত জামাকাপড় খুলে আমাদের দেওয়া আপ্রন পরতে বলেন। জামা কাপড় আলাদা করে সার্চ হয় এবং তারপর মহিলার বডি সার্চ করা হয় মাথার চুল থেকে পায়ের নোখ পর্যন্ত।“
রনি বলল “আচ্ছা বাবা ব্যোমকেসের একটা গল্পে পরেছিলাম একজন গলার মধ্যে থলি বানিয়ে একটা নীলা লুকিয়ে রেখেছিল। এই কেসে সেটা হতে পারে তো।”
অরুনবাবু বললেন “শুধু গলায় কেন হীরে তো পেটের মধ্যে করেও লোকে চালান করে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। আমাদের সুবীর ছোকরা যাকে বলে হাই-টেক পুলিশ অফিসার। কম্পিউটার, ইন্টারনেট থেকে শুরু করে সব রকম টেকনোলজি গুলে খেয়েছে। হীরে চুরির কেস শুনে সঙ্গে করে একটা পোর্টেব্‌ল এক্স-রে মেসিন নিয়ে গিয়েছিল। মহিলার ফুলবডি এক্স-রে করে দেখে, কিন্তু হীরেটার কোনো ট্রেস পাওয়া যায় না। সুবীর মহিলার পিছনে স্পাই লাগায়। ইনি যদি হীরেটা সরান তাহলে বিক্রি বা হাতবদলের চেষ্টা করবেন। কিন্তু এখোনো পর্যন্ত সেরকম কোনো চেষ্টা করেননি। “
মিস্টার গুপ্ত বললেন “সেকেন্ড কেস্ টা কবে হল?”
অরুনবাবু বললেন “সেটা জাস্ট তিনদিন আগে। সল্টলেকের নববানী জুয়েলার্সের দোকানে। ওদের শোরুম থেকে 1.2 carat এর হীরে উধাও। মীনটাইম প্রথম কেস-টা আমাদের সি-আই-ডি ডিপার্টমেন্টে এসেছে। সেকেন্ড কেস-টা শুনে সল্টলেক থানা আমাদের কন্‌টাক্ট করে। আমি নিজে গিয়েছিলাম ঘটনাস্থলে। এক্ষেত্রেও বছর চল্লিসের একজন মহিলা ছিলেন কাউন্টারে যখন চুরিটা হয়। মহিলা খুব অফেন্স নিচ্ছিলেন। নাকি কোন মন্ত্রীর চেনাশোনা। আমাকে সুন্দরবনে ট্রান্সফারের ভয় দেখাচ্ছিলেন। বলে দিলাম আমি সুন্দরবনের ছেলে। বাড়ির কাছে ট্রান্সফার পেলে খুশি হব। মন্ত্রীর কাছে রেকমেন্ড করার জন্য ধন্যবাদ।”
অরুনবাবুর রসিকতায় সবাই হেসে উঠল। মিসেস বাসু বললেন “বেশ করেছ, বলেছ।মন্ত্রীর চেনা বলে কি পুলিস ওদের কেনা হয়ে থাকবে নাকি?”
অরুনবাবু আবার বলতে শুরু করলেন “আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক-নম্বর সার্চ স্পেশালিস্ট লাকিলি একজন মহিলা, কাকলি মিত্র। ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম। কাকলি প্রায় ফরটিফাইভ মিনিট মহিলাকে সার্চ করল। কিন্তু নো-রেজাল্ট। কাকলি আক্ষরিক অর্থে খড়ের গাদায় সূঁচ খূঁজতে পারে। ও ফেল করতে বেশ মুষড়ে পড়েছি। এদিকে মিডিয়া ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। দুটো চুরি হয়েছে বলে নাকি কলকাতা বিসনেসের পক্ষে সেফ নয়। উপরমহল খুব চাপ দিচ্ছে চোর ধরা পড়ুক না পড়ুক হীরে দুটো যেন উদ্ধার হয়। কিন্তু আমরা সত্যি বললে কি কোনো ক্লু পাচ্ছি না।”
রনি বলল “সেকেন্ড হীরেটার কোনো নাম নেই?”
অরুনবাবু বললেন “না সেরকম শুনিনি। তবে এর-ও দাম প্রায় লাখ দশেক।“
তিষ্যা বলল “আমি শুনেছি হীরের ওয়েট যত বেশী হয় দাম ও তত বাড়ে। সেকেন্ড হীরেটা তো থার্ড-আই এর থেকে অনেক ছোট, তাহলেও অত দাম কেন?”
অরুনবাবু বললেন “ওয়েটের হিসাবে হীরের দাম বাড়ে সেটা ঠিক, কিন্তু হীরের দাম ডিপেন্ড করে আরো অন্য কয়েকটা ফ্যাক্টরের উপর। মেইন চারটে ফ্যাক্টর হল ওয়েট, শেপ, ক্ল্যারিটি আর কালার। চুরি যাওয়া দুটো হীরেই হল ব্রিলিয়ান্ট রাউন্ড শেপের। এটাই সব থেকে দামী আর পপুলার শেপ। তবে আরো কিছু স্ট্যান্ডার্ড শেপ আছে যেমন হার্ট, ওভাল, এমারেল্ড, ট্রায়াঙ্গল, পিয়ার, প্রিন্সেস, র্যা ডিয়্যান্ট। নেকস্ট ফ্যাক্টর হল ক্ল্যারিটি মানে হীরে কতটা ক্লিয়ার। যে হীরেতে কোনোরকম ইনক্লুসন নেই তাকে বলে ফ্ল-লেস। সেরকম হীরে পাওয়া যায় না। বেস্ট ক্ল্যারিটির হীরে হল ইন্টারনালি ফ্ল-লেস, অর্থাৎ ইফ। লুপ দিয়ে পরীক্ষা করলে কোনো ইনক্লুসন পাওয়া যাবে না। ভিভিএস হল ভেরি ভেরি স্মল ইনক্লুসন। লুপ দিয়ে দেখে টের পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ভিএস হল ভেরি স্মল ইনক্লুসন, লুপ দিয়ে দেখলে একমাত্র পাকা জহুরি খুঁজে বার করতে পারে। এস ওয়ান, টু থ্রি হল স্মল ইনক্লুসন, লুপ দিয়ে দেখলে সহজেই ধরা পড়ে। আই ওয়ান, টু, থ্রি হলে খালি চোখে ইনক্লুসন দেখা যায়। থার্ড আই আর নববানীর চুরি যাওয়া হীরে দুটোই ভিএস গ্রুপের হীরে। কিন্তু হীরে দুটোর তফাত হল কালারে। কালারলেস হীরে হল সব থেকে দামি। ডি থেকে শুরু করে জেড পর্যন্ত কালারের ক্যাটেগরি আছে। যতই বর্ণমালা বাড়তে থাকে হীরের কালারও বাড়তে থাকে। ডি আর ই ক্যাটেগরির কালারকে বলে এক্সসেপ্‌শনাল হোয়াইট। তারপর এফ এবং জি ক্যাটেগরি কে বলে রেয়ারলি হোয়াইট। এইচ ক্যাটেগরিকে বলে হোয়াইট। তারপর আসে যথাক্রমে স্লাইডলি টিন্টেড হোয়াইট, টিন্টেড হোয়াইট এবং টিন্টেড কালার ক্যাটেগরির হীরে। অবশ্যই ডি এবং ই কালার ক্যাটেগরিস হীরের দাম সবথেকে বেশি। থার্ড আই হীরেটার কালার হোয়াইট ক্যাটেগরির কিন্তু নববানীর হীরেটার কালার এক্সসেপ্‌শনাল হোয়াইট ক্যাটেগরির। তাই ওজনে ছোট হলেও দামটা বেড়ে গেছে কালারের কোয়ালিটির জন্য।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বিস্মিত হয়ে বললেন “আপনার তো হীরের বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান আছে দেখছি। ম্যাডামের জন্য অনেক গয়না কেনেন নাকি?“
অরুনবাবু বললেন “আরে না না, পেশার খাতিরে আমাদের এসব খবর রাখতে হয়। আমাদের স্যালারিতে ওই কোয়ালিটির হীরে কেনার কথা ভাবাও যায়না।“
তিষ্যা বলল আচ্ছা “এই হীরে দুটো ইন্সিওরেন্স করা ছিল না? অনেক সময় শুনেছি ইন্সিওরেন্সের টাকার জন্য দোকানের মালিকরা নিজেরাই চুরির গল্প বানায়।”
অরুনবাবু বললেন “সেই থিওরিটা এখানে ফিট করবে না। প্রথমত দুটো সম্পুর্ন আলাদা মালিকানার দোকানে অল্প কদিনের ইন্টারভ্যালে এরকম ঘটনা ঘটা খুব বেশিরকম কাকতালীয়। দ্বিতীয়ত দুই ক্ষেত্রেই কাস্টমার স্বীকার করেছে হীরেটা একটু আগেই কাউন্টারে ছিল। কাস্টমারের চোখের সামনে থেকে মালিক বা কর্মচারী হীরে চুরি করবে সেটা খুব আনউসুয়াল। ইনফ্যাক্ট নববানী জুয়েলার্সের ইন্সিওরেন্স কোম্পানি নাকি একটা প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সিকে দিয়ে ইনভেস্টিগেট করাচ্ছে। কিন্তু তারাও শুনেছি কোনো ক্লু পায়নি।”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত চুপচাপ এদের কথা শুনছিলেন, কিন্তু তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত, মায়াবি চোখদুটোতে কৌতুক খেলা করছিল। রনি সেটা লক্ষ্য করেছিল। ও বলল “কাকু আপনার কি মনে হয়? কে নিল হীরে দুটো?”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত অরুনবাবুকে আচমকা জিজ্ঞেস করলেন “আপনার কি থিওরি অফ রিলেটিভিটি জানা আছে?”
অরুনবাবু অবাক হয়ে বললেন “রিলেটিভিটি ?মানে জানি একটু আধটু।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত তার পেটেন্ট হাসিটি মুখে ফুটিয়ে বললেন “আপনি আসলে ভুলে যাচ্ছেন স্থান, কাল, পাত্র রিলেটেড। আপনি স্থান আর পাত্র নিয়ে চিন্তা করছেন কালের কথা ভুলে গেছেন।”
অরুনবাবু হতভম্ব হয়ে বললেন “মানে? আপনি কি কিছু বুঝতে পেরেছেন নাকি? তাহলে দয়া করে খুলে বলুন না। আমার হেল্প হত।”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “দেখুন সন্দেহের বশে আপনাকে কিছু বলে ফেলতে পারি না। আমরা যাদুকররা হলাম পারফরমার। যদি আরেকটি চুরি হয়-আমার মনে হয় আরো চুরি হবে-তাহলে আমকে ঘটনাস্থলে একবার ডাকবেন হয়ত আপনাকে হেল্প করতে পারব।“
অরুনবাবু খুব একটা সন্তুষ্ট হলেন না। কিন্তু ততক্ষনে ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত ডিনার টেব্‌লের ন্যাপকিন থেকে প্রজাপতি বার করতে শুরু করেছেন। মিসেস বাসু অবাক বিস্ময়ে দেখছেন, এইসময় কেসের কথা তুললে হোম-ফ্রন্ট একেবারে বিগড়ে যাবে এই ভয়ে অরুনবাবু কথা বাড়ালেন না।

(৪)

-“হ্যালো তিষ্যা? আমি অরুন বাসু বলছি। তোমার বাবা আছেন?”
-“বাবার আজ শো আছে রেডি হচ্ছেন। খুব কি আর্জেন্ট? ডেকে দেব?”
-“হ্যাঁ আর্জেন্ট তো বটেই। গরিয়াহাটে এ-সি দত্তের শোরুমে আবার একটা ডায়ামন্ড চুরি গেছে। জাস্ট মিনিট পনেরো আগে। তোমার বাবা বলেছিলেন আবার চুরি হলে ওঁকে জানাতে, তাই কল করলাম।”
“আবার চুরি? আমি বাবাকে ডাকছি এক্ষুনি।”

ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত অরুনবাবুর সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে সেক্রেটারিকে ডেকে বললেন “আজকের শো ক্যান্সেল করে দাও। আমি একটা জরুরি দরকারে বেরচ্ছি।“ তিষ্যাকে বললেন “দু মিনিটে রেডি হয়ে নে। আমরা ডিরেক্ট গরিয়াহাটে এ-সি দত্তের শোরুমে পৌছে যাব।“
তিষ্যা কোনোদিন বাবাকে শো ক্যানসেল করতে দেখেনি। ঠাকুর্দা মারা যাবার পরদিনও বাবা শো করেছে। খুব অবাক হয়ে বলল “শো ক্যানসেল করে দিলে !! তুমি সত্যি মনে কর এই হীরে চুরির কেসটা সল্ভ করতে পারবে? পুলিশ যেখানে কোনো ক্লু পাচ্ছে না।”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “তোর মতে যদিও আমি ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডে বাস করি কিন্তু আমারও কিছু নাগরিক কর্তব্য আছে। চল দেরী করিস না।”

গরিয়াহাটে এ-সি দত্তের শোরুমে পৌঁছে তিষ্যারা দেখল পুলিস একজন কাস্টমারকে যথারীতি সার্চ করে কিছুই পায়নি। আশ্চর্যের ব্যাপার এখানেও কাস্টমার একজন বয়স্ক মহিলা। তিনি অপমানে প্রায় কেঁদে ফেলেছেন। তিষ্যার খুব খারাপ লাগল। অরুন আঙ্কল ভাবলেন কি করে, ভালোমানুষ মাসিমা, মাসিমা চেহারার এই ভদ্রমহিলা চুরি করতে পারেন। অরুনবাবু ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত কে বললেন “আপনি কি সার্চ করতে চান?”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “না না যে কাউন্টার থেকে হীরেটা খোওয়া গেছে সেটা একবার দেখব।”
তিষ্যা দেখল ওর বাবা প্রায় দশ মিনিট ধরে কাউন্টারটা পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর তিষ্যা বাবার মুখে এক চিলতে হাসি দেখতে পেল। ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত দোকানের মালিক অনুপম দত্ত কে ডেকে বললেন “আপনার দোকানে ভিডিও মনিটরিং এর ব্যাবস্থা আছে না?”
অনুপমবাবু বললেন “অবশ্যই আছে। চারটে ক্যামেরা আছে।“
-“এক কাজ করুন এই কাউন্টারে একটা ভিডিও ক্যামেরা সেট করুন। আপনার অফিস ঘরে ব্যাবস্থা করে দিন যাতে আমি ক্লোজ সার্কিট মনিটরে এই কাউন্টারটা অবজার্ভ করতে পারি। আপনার সিকিউরিটি গার্ডদের বলে রাখবেন আমি বলা মাত্র যেন মেইন গেট বন্ধ করে দেয়। সমস্ত ব্যাবস্থা করে দিয়ে আপনি দোকানের গেট খুলে দিন , আবার বিক্রিবাটা শুরু করুন।“
অনুপমবাবু একটু দোনোমনা করে অরুনবাবুর দিকে তাকালেন। অরুনবাবুও বুঝতে পারছিলেন না ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের প্ল্যানটা ঠিক কি। ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি মিস্টার দত্ত আপনি হীরেটা ফেরত পাবেন। মিস্টার বাসু আপনিও তৈরী থাকুন, চোরকে বমাল গ্রেপ্তার করার জন্য।”

প্রায় চার ঘন্টা হয়ে গেল তিষ্যা বাবার সাথে অনুপম দত্তের অফিস ঘরে বন্দী। কাঁহাতক আর মোবাইলে গেম খেলা যায়। ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের অবশ্য কোনো চাঞ্চল্য নেই। একদৃষ্টে মনিটরের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন। মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধ্যান অভ্যাস করেছেন। একাসনে চার ঘন্টা বসে থাকা তাঁর পক্ষে কষ্টকর নয়।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ হঠাৎ ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “অনুপম বাবু মেন গেট বন্ধ করুন, আয় তিষ্যা কাউন্টারে যাব।” এক্সক্লুসিভ জুয়েলার্সের কাউন্টারে একজন মধ্যবয়সী লোক নেকলেস দেখছিলেন। ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত তার পিঠে হাত রেখে বললেন “আপনার প্যান্টের ডান পকেটে যে হীরেটা এইমাত্র রাখলেন সেটা একবার দেখাবেন?” লোকটা প্রচন্ড চমকে উঠল। তারপর দৌড় লাগাল। যদিও বেশি দূর যেতে পারল না। অরুনবাবু ঘাপটি মেরে ছিলেন, ধরে ফেললেন। সকলের অবাক চোখের সামনে দিয়ে ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত লোকটার প্যান্টের ডান পকেট থেকে একটা বড় সাইজের হীরে বার করে আনলেন। হীরেটা অনুপমবাবুর হাতে দিয়ে বললেন “একটু চটচট করছে ধুয়ে নেবেন।” তারপর অরুন বাবুর দিকে ফিরে বললেন “ইনি-ই আপনার প্রধান মক্কেল মিস্টার বাসু। বাকি দুটো হীরের খবর-ও এর কাছে পাবেন। চলি এখন, আয় তিষ্যা।”

হতভম্ব অরুনবাবু ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের হাত ধরে বললেন “থ্যাঙ্কস আ লট। কি করে কি করলেন কিছুই বুঝলাম না। আজ আমাদের বাড়িতে ডিনারে আসুন, পুরোটা ডিটেলে না শুনলে রাতে ঘুম হবে না।“

রনিদের ডিনার টেবলে সবাই জমিয়ে খিচুরি খাচ্ছিল। হাত দিয়ে না খেলে খিচুরি খেয়ে মজা নেই, তাই ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত সব কটা ছুঁরি কাঁটা ভ্যানিস করে ফেলেছেন। অরুনবাবু চোর ধরার এপিসোডটা রনি আর মিসেস বাসুকে শোনাচ্ছিলেন। শেষ করে বললেন “এবার আপনি বলুন মিস্টার গুপ্ত কিভাবে ধরলেন?”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “মিস্টার বাসু আপনাকে প্রথমদিন আমি বলেছিলাম আপনি কাল মানে টাইম-টা কনসিডার করছেন না। স্থানটা ফিক্স, একটা পার্টিকুলার কাউন্টার। পাত্র থুড়ি পাত্রী ও ফিক্সড, একজন মহিলা। কিন্তু হীরে চুরির কাল মানে টাইমটা অনেক পরে। যখন সকলে দেখল হীরেটা মিসিং তখন সেটা মোটেই চুরি হয়নি। পুলিস আসা, সার্চ করা পুরো টাইমটা হীরেটা ওই কাউন্টারেই ছিল।”
বাকি ,চারজনে একবাক্যে বলল “ইম্‌পসিব্‌ল!!”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত তাঁর পেটেন্ট হাসিটা মুখে ফুটিয়ে আবার শুরু করলেন “আমাদের ম্যাজিকের পরিভাষায় যেকোনো ট্রিকের তিনটে ধাপ আছে। প্রথম ধাপকে বলা হয় ‘প্লেজ’। এই ধাপে যাদুকর কোন সাধারণ জিনিস দর্শককে ভালো করে পরীক্ষা করতে বলে, এই যেমন ধরুন কোন টুপি, বা ফুলদানি, বা তাস ইত্যাদি। দর্শককে দেখানোর উদেশ্য হ’ল এটা প্রমাণ করা যে জিনিসটা রীয়াল ওয়ার্ল্ডের, কোন চালাকি নেই। দ্বিতীয় ধাপকে বলে ‘টার্ন’। এই সময়ে যাদুকর জিনিসটাকে ‘ভ্যানিশ’ করে দেয়! দর্শকের মনে এখন ট্রিকটা নিয়ে অজস্র প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কি করে হ’ল, কোথায় গেল ইত্যাদি। কিন্তু এটা শেষ ধাপ নয়। অবাক হ’লেও কিন্তু এই সময় কেউ হাততালি দেয়না। কারণ একটা জিনিসকে জাস্ট ভ্যানিশ করে দেওয়াটা যথেষ্ট নয়, আসল কেরামতি হল সেই জিনিসটার স্থানবদল, মানে অন্য জায়গাতে ফিরিয়ে আনা। তাই ম্যাজিকের তৃতীয় আর শেষ ধাপকে বলে ‘প্রেস্টিজ’, এটাই সবথেকে কঠিন, আর এর পরেই হাততালির শব্দে কান পাতা দায় হয়।“
তিষ্যা অধৈর্য হয়ে বলল “বাবা ম্যাজিকের গল্প পরে হবে এখন চুরিটা কি করে ধরলে বল না প্লীজ।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “তাই তো বলছি। হীরে চুরির কেসেও এই তিনটে ধাপই আমরা দেখতে পাচ্ছি। ‘প্লেজ’এ হীরেটা দর্শক, অর্থাৎ কাউন্টারে বসা কর্মচারী নিজেই দেখায় ম্যাজিসিয়ানের অ্যাসিস্টেন্ট মহিলাটিকে। ‘টার্ন’এ অ্যাসিস্টেন্টের কাজ হল হীরেটাকে ভ্যানিস করে দেওয়া। আর আসল কেরামতি হল ‘প্রেস্টিজ’এ যেখানে নাটের গুরু এসে জাস্ট উধাও হয়ে যাওয়া হীরেটাকে পকেটস্থ করে। ডিফারেন্স একটাই, প্রেস্টিজের শেষে হাততালির বদলে হাতকড়া মেলে যাদুকরের।
রনি জিজ্ঞাসা করে “কিন্তু ওই অ্যাসিস্টেন্ট মহিলাটিকে হীরটা ভ্যানিস করে কি করে?”

ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “এটা খুব-ই সিম্পল একটা ট্রিক, যাদুবিদ্যার বর্ণপরিচয় বলতে পারো। বহুদিন আগে প্রনম্য ম্যাজিসিয়ান হ্যারি হুদিনি তাঁর “The Right Way to Do Wrong.” বইতে ব্যাখ্যা করে গেছেন। প্রতি কেসেই কাস্টমার মহিলা চোরের অ্যাসিস্টেন্ট । লোকটা প্রত্যেক দোকানে আলাদা আলাদা মহিলাকে পাঠিয়েছে যাতে সন্দেহ না হয়। হয়ত এটা একটা বড় গ্যাং এর কাজ। মহিলাদের কাজ ছিল গয়না কেনার নাম করে দোকানে ঢোকা। চিউয়িং-গাম চিবাতে চিবাতে বিভিন্ন হীরে দেখতে থাকা আর তারপর সবথেকে দামী হীরেটা হাতসাফাই করে কাউন্টারের তলায় এক জায়াগায় মুখ থেকে চিউয়িং-গাম বের করে সেটার সাহায্যে লাগিয়ে দেওয়া। “
তিষ্যা অবাক গলায় বলল “চিউয়িং-গাম!!! তাই তুমি অনুপম বাবু কে হীরেটা ফেরত দেবার সময় বললে চটচট করছে !!!”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “হ্যাঁ তুচ্ছ একটাকার চিউয়িং-গাম দিয়ে হাপিস করা যায় দশলাখ টাকার হীরে!! তারপরের কাজটা আরোই সোজা। সমস্ত গন্ডগোল মিটে গেলে আমাদের আসল মক্কেল এক্সক্লুসিভ হীরে দেখার নাম করে ওই পার্টিকুলার কাউন্টারে আসেন। দেখাশোনার ফাঁকে কাউন্টারের তলা থেকে হীরেটা খুলে প্যান্টের পকেটে চালান করে দেন। চুরি যাবার চার পাঁচ ঘন্টা পর কাউকে সার্চ করে দেখার কথা কারোর মাথাতেও আসেনা। আমাদের মক্কেল কিছুই পছন্দ হল না জানিয়ে অনায়াসে হীরেটা দোকান থেকে বার করে আনেন। মহিলাদের পিছনে পুলিস স্পাইং করে কিছুই পায়না। কারন আসল মাল পাচার হয় অন্য লোকের হাত দিয়ে।“
অরুনবাবু বললেন “আপনি সিওর ছিলেন এই ট্রীকটাই ওরা ইউস করেছে?”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “নাইন্টিনাইন পারসেন্ট সিওর ছিলাম। হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর হলাম আজ এ-সি দত্তের শোরুমের কাউন্টারে্র নিচে হীরেটা আবিস্কার করার পর।”
তিষ্যা বলল “তুমি হীরেটা দেখতে পেয়েছিলে? তাহলে তখনি বের দিলে না কেন?”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “তাহলে তো অরুনবাবু বমাল চোর ধরতে পারতেন না। অন্য দুটো হীরের হদিস ও পাওয়া যেত না। তাই ফাঁদ পাততে হয়েছিল।”
রনি উচ্ছসিত হয়ে বলল “ফ্যান্টাস্টিক ডিটেকশন , প্ল্যানিং অ্যান্ড এক্সিকিউশন। যে বলে রিয়েল ওয়ার্ল্ডে ম্যাজিক কাজে লাগে না, সে ম্যাজিক-ও জানে না রিয়েল ওয়ার্ল্ড কেও চেনেনা।”

-ঈপ্সিত ব্যানার্জী/চম্পাকলি ব্যানার্জী

ঋণস্বীকার –
১)হ্যারি হুডিনির ১৯০৬ সালে প্রকাশিত “দ্য রাইট ওয়ে টু ডু রং”-এর শট্‌ ফাইভ (থিভ্‌স্‌ অ্যান্ড দেয়ার ট্রিক্স) অংশে বিশদে এই সত্যি ঘটনার কথা লেখা আছে। পরে অবশ্য অনেক লেখকই এই সত্যি ঘটনাটা নানান গল্পে ব্যাভার করেছেন। যেমন ‘স্টাক অন্‌ ইউ’ গল্পটি।
২)প্রেস্টিজ নামক হলিঊডের একটি চলচ্চিত্র থেকে কিছু উদ্ধৃতি এই গল্পে ব্যাবহার করার লোভ সামলাতে পারিনি।

আমরা একটা গোয়েন্দা গল্পের সিরিজ লিখব ভেবেছি। এটা সেই সিরিজের প্রথম গল্প। উৎসাহ পেলে পরেরটা ৫/২৫-এ আপ্‌লোড করব।


মন্তব্য

ইয়াসির এর ছবি

বেশ চমৎকার লাগলো

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তানিম এহসান এর ছবি

ঠিক কিভাবে উৎসাহ দিলে উৎসাহিত হবেন বলুন তো হাসি

রু_  এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে। মংকের (Mr. Monk and the Big Reward) একটা এপিসোডের সাথে টুইস্টগুলোর খুব বেশি মিল হয়ে গেছে।

রু_  এর ছবি

ফিরে আসলাম একটা কথা বলার জন্য। আমি কিন্তু ভাবিনি, প্লট মেরে দিয়েছেন। এরকম মিল হয়ে যেতেই পারে। আপনাদের সিরিজের জন্য বসে থাকলাম।

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

মংকের এপিসোড পড়িনি। কোন লিঙ্ক দিতে পারেন রু_ ভাই?
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

ru_  এর ছবি

Monk আমেরিকান একটা টিভি সিরিয়াল ছিল। সান ফ্রান্সিসকো নিবাসী এরকুল পোয়রো ধাচের একজন ডিটেকটিভকে নিয়ে গল্প।

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

হাসি
লেখা ভালো লেগেছে শুনলে বা এই সিরিজটা র জন্য অপেক্ষা করছেন শুনলেই উৎসাহ পাব আমরা।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল।

তাহমিদুর রহমান

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ক্রেসিডা এর ছবি

আমারো ভালো লেগেছে।

একটা প্রশ্ন: "‘বিতংস’, ‘চ-এ চুরি, ছ-এ ছবি, জ-এ জব্দ’, ও ‘শাহী-তন্দুরের’ লেখকের কলম থেকে..." এরকম ট‌্যাগ ঝুলানোটা কি খুব দরকার ছিল? শুরুতেই নিজের অ্যাডভারটাইমেন্ট নিজে করার মতো ব্যাডার না? যে পড়ার সে এমনি ই পড়বে। ওই লাইনটা দেখে ফেব্রুয়ারী মাসে পত্রিকায় দেয়া লেখকদের বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেল।

" আসছে..অসিতেছে.. "লেখকের" একমাত্র বই.... এবারের বই মেলা কাঁপানো.. "ওমুক" বই এর কালজয়ী লেখকের নতুন বই ..."

ভালো থাকবেন।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

ক্রেসিডা - আমরা হাচল হওয়ার অপেক্ষায়। হয়ে গেলে জানব যে আগের সব লেখা লিঙ্কড হয়ে যাবে, তখন আর আলাদা করে আগের গল্পের নাম দেব না। সচলায়তনের নিয়মগুলো ভালো জানিনা। হাচল হওয়ার এলিজিবিলিটিও পরিষ্কার নয়।
আর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখতে হবে না তখন । খাইছে
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হাচল হতে গেলে শুধু নিয়মিত লিখে গেলে চলবে না। সাথে সচলের অন্য লেখকদের লেখা পড়ে সেখানে আপনাদের মতামতও প্রকাশ করতে হবে। ব্লগে মিথষ্ক্রিয়াটা একটা আবশ্যকীয় ব্যাপার।

আপনাদের লেখা, মন্তব্য চলতে থাকুক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ru_  এর ছবি

আপনারা নাম নিবন্ধন করেছেন তো? নাহলে কিন্তু হাজারটা লিখেও হাচল হবেন না।

মেঘা এর ছবি

চলুক

দিগন্ত বাহার এর ছবি

চলুক চলুক
ভালো লেগেছে....সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম।

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

অসংখ্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
সেইরকম প্ল্যান আছে।
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এটাও ভালো লেগেছে।
এতো সহজে এতো বড় চুরি করা যেতে পারে, ভাবিইনি। দেঁতো হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

আমিও ভাবিনি এত সহজে চুরি করা যায়। একশো বছর আগের বইটা হঠাৎ হাতে এসে না পড়লে। তাও আবার এটা নাকি সত্যি ঘটনা। ক্ষীই কান্ড!!
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

হিমু এর ছবি

কিন্তু হীরা কি পেটে করে চালান করা যায়? আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম, হীরা ধারালো বলে সেটা অন্ত্রের ভেতরটা চিরে দেয়, রক্তক্ষরণে মারা যায় লোকে। প্রতাপাদিত্য নাকি আংটির হীরা গিলে আত্মহত্যা করেছিলেন?

গল্পটা মজার।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

হীরা ধারলো আপনাকে কে বল্ল? লহকি ধারলো?- তাকে ধারাল করতে হয়। তেমনি কাচ কাটার জন্য যে হীরা ব্যবহার কর হয় সেটাকে সুবিধামতো ধারালো করা হয়। তবে একথা ঠিক ধারালো হীরার ধার যেকনো বস্তুর চেয়ে বেশি... কোলাকুলি

হিমু এর ছবি

জনাব, যে হীরা ধারালো নয়, সে হীরা অলঙ্কারে ব্যবহার করা হয় না। কারণ হীরাকে কেটে ঘষে ফ্যাসেড তৈরি না করলে সেটা ঝকমক করে না।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

সেটতো করেই জানি, হীরা না কাতলে অলংকার বানানো যায় না। কিন্তু সেটা কাটা হয় ধারালো করার জন্য, অনেকগুলো লাইট রিফ্লেক্ট তল সৃষ্টি করার জন্য। কারণ রিফ্লেক্ট তল যত বেশি আলোর ঝালর ততো বেশি পাওয়া যায়। হীরার যতটা ধারালো গয়নায় যদি সেটা ব্যবহার করতে গেলেই আপনার ত্বক কচুকাটা হয়ে যেত! কোলাকুলি

হিমু এর ছবি

জ্বি জনাব, গয়নায় ঐরাম ধারালো করেই হীরা বসানো হয়। হীরার আংটি গালে ধরে একটা টান দিয়ে দেইখেন।

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

হিমু - আমি একটা গল্পে পড়েছি, কয়েকটা হীরে একটা কন্ডোমে ভরে মুখটা আটকে গিলে খেয়ে ফেলেছিল। সেই প্লটটাও ভেবেছিলাম রাখব। তারপর বাতিল করে দিয়েছি।

-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

একটা অংশের বর্ণনা পুরোটাই প্রেস্টিজ সিনেমারসংলাপের মতন দেঁতো হাসি

ভালোই লেগেছে। খালি গোয়েন্দা গল্পই লেখেন বোধহয় আপনারা হাসি

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

হ্যাঁ, সেটা ঋণস্বীকার করার সময়ই বলে দিয়েছি যে প্রেস্টিজ সিনেমার একটা অংশের সংলাপ ব্যাভার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

সত্যপীর এর ছবি

উৎসাহ দিলাম

..................................................................
#Banshibir.

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

তারেক অণু এর ছবি
ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

ধন্যবাদ তো আমরা আপনাকে দেব তারেক অণু ভাই! লেখাটা পড়ার জন্য।

-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

আপনাদের সব গল্পের শুরুই কি ফোনালাপের মাধ্যমেই হবে? হাসি লেখা জারি থাকুক।

ঈপ্সিত ব্যানার্জী এর ছবি

এক্কেবারে ঠিক ধরেছেন। সমস্ত গল্পই 'হ্যালো' দিয়ে শুরু হবে। হাসি

-ঈপ্সিত/চম্পাকলি

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

খুব ভাল লাগছে আপনার লেখাগুলো। ভাল থাকুন আর চালিয়ে যান।।।।

মরুদ্যান এর ছবি

হুমম ভালো হাসি চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।