গোয়েন্দা মাহদিনের পরিচিতি এবং রহস্য গল্প-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২১/০৫/২০১২ - ৮:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ঝকঝকে বিকাল।মাহদিন তাদের নতুন বাড়ি বানানো হচ্ছে তাই দেখছে।পুরান একটা বাগান সমেত বাড়ি কিনেছে মাহদিনের বাবা আলামগীর হোসেন।বাড়িটা বেশ পুরানো তাই ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী করা হচ্ছে।বাবা মা দুজনের ইচ্ছা একমাত্র ছেলেকে ডাক্টার বানাবে কিন্তু মাহদিন চায় বড় গোয়েন্দা হতে।
ছেলের অনেক আবদারের পর আলমগীর সাহেব রাজি হয়েছে,ছেলের ঘরের ভেতর একটা গোপন পাতাল ঘর করা হবে যেটা কিনা শুধুই মাহাদিনের।এক সপ্তাহের ভেতর বাড়ি ঠিকঠাক হয়ে গেল।সবাই মিলে তাদের নতুন বাড়িতে উঠল।আলমগীর সাহেব ছেলেকে তার রুমে নিয়ে গেল।ওয়ালের সাথে একটা আলমারির মত দেখতে পেল মাহদিন।আলমারির পাল্লা খুলতেই হ্যাঙ্গারে কাপড় রাখার জায়গা তার একদম পেছনে ষ্টীলের একটা দরজা পাশে বোতাম এবং কিছু সংখ্যা সহ বোর্ড।আলমগীর সাহেব ১,২,৩ চাপতেই দরজা খুলে গেল।ভেতরটা দেখতেই মাহদিনের মুখ থেকে ওয়াও বের হয়ে গেল।বাবাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাল।এত সুন্দর করে সাজানো থাকবে মাহদিন চিন্তাও করেনি।টেবিল,চেয়ার,কম্পিউটার,এসি,শোফা,বক্স খাট একদম পরিপূর্ণ রুম।মনে মনে ভাবল নিরিবিলি চিন্তা ভাবনা করার একটা উপযুক্ত জায়গা।কাল সকালে কলেজে যেতে হবে।সবে এস,এস,সি, শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।প্রথম ক্লাস কাল তাই কিছুতেই মিস করা যাবে না।আর দেরি না করে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরল ।

সকালে মায়ের হাতের সুস্বাদু নাস্তা খেয়ে কলজে গেল।যথারীতি ১০ টার সময় সবাই ক্লাসে গেল।আজ কেবল পরিচিতি পর্ব।মাহদিনের পাশে বসা ছেলেটির সাথে বেশ ভাব জমে উঠল।ওর নাম নাজমুল।নাজমুলদের বাসা মাহদিনদের বাসা থেকে অল্প দূরে।এটা জেনে দুজনেই খুশি হল।একসাথে কলেজে আসা যাবে।সবার সাথে টুকটাক কথা বলে মাহদিন ও নাজমুল বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।মাহদিন বাড়ি এসে আগে গোসল করল এরপর কিছু খেয়ে সোজা গুপ্ত ঘরে ঢুকল।কম্পিউটারে তার কলেজের ১ম দিনের অনুভুতি লিখে সেভ করে রাখল ।
পরের দিন থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হল । মাহদিন সায়েন্স নিল সাথে নাজমুল,সোহেল,সাঈফ,মুনিম,টুটুল সহ ৩০জনের মত সাইন্স নিল ।৩/৪ দিন পরে সাঈফ অনেক সুন্দর একটা ঘড়ি পরে কলেজে আসল । বন্ধুদের বলল ওর বাবা প্যারিস থেকে এনে দিয়াছে । উপরের প্লেটটা স্বর্ণের এবং ভিতরে ছোট ছোট দুইটা হীরা । সবাইকে দেখাল।সাঈফ প্রতিদিনই ঘড়িটা পরে আসে ।

সেদিন ছিল রবিবার জীববিজ্ঞানের প্রাকটিক্যাল ক্লাসে ওদের ৬ জনের একটা গ্রুপ করে দিল টিচার । গ্রুপে মাহদিন সহ ছিল নাজমুল,সোহেল,সাঈফ,মুনিম,টুটুল । আজ ওদের গ্রুপে ব্যাঙ কাটা পরেছে তাই সাঈফ ওর ঘড়িটা খুলে ব্যাগে রেখে প্রাকটিক্যাল শুরু করল । সবকিছু ঠিকঠাক মত শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে সবাই রওনা দিল । রাস্তায় হাটতে হাটতে সাঈফ ব্যাগ খুলল ঘড়িটা পরার জন্য । ব্যাগে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠল, ঘড়ি কই??? সবাই হতবম্ব হয়ে গেল । কে নিল ঘড়ি ?? সাথে সাথে সবার ব্যাগ,শার্ট,প্যান্টের পকেট খুজে দেখা হল । কারও কাছে পাওয়া গেল না । মাহদিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল এর একটা সমাধান ও করবেই । সাঈফকে বলল চিন্তা করিস না আমি চেষ্টা করে দেখি । মাহদিনের গোয়েন্দার প্রতি দুর্বলতার কথা এরই মধ্যে বন্ধুরা জেনে গেছে । সাঈফ কিছু না বলে রাগে দুঃখে বাড়ি চলে গেল ।

মাহদিন চিন্তিত হয়ে বাসায় ফিরল । কিভাবে কোথা থেকে শুরু করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না । বিছানায় শুয়ে ভাবল কাল আগে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে গিয়ে সবার সাথে কথা বলবে । কারো কথায় কিছু বোঝা যায় কিনা । এসব চিন্তা করতে ঘুমিয়ে পরল । সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে আজ সবার আগে কলেজে গেল ।প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে গিয়ে কোন সূত্র পাওয়া যায় কি না খুঁজল কিছুই না পেয়ে হতাশ হল । বন্ধুরা সবাই কলেজে আসার পর কথা বলল সবার সাথে কিন্তু কিছু বোঝা গেল না । নাজমুল,সোহেল ওরা দুজনে একটু গরীব কিন্তু দুজনেই ভাল ছেলে । মুনিম,টুটুল ওরা দুজনে মধ্যবিত্ত পরিবারের কিন্তু বিশ্বাস হয় না যে ওরা চুরি করতে পারে । কে হতে পারে এটা ভাবতে ভাবতে বাড়ি গেল । গুপ্ত ঘরে যেয়ে আজ অনেকক্ষন থাকল অনেক চিন্তা ভাবনা করে শুয়ে পরল। পরদিন কলেজ বন্ধ তাই সকালে সাঈফদের বাসায় গেল।ওর বাবার সাথে কথা বলল তাকে অনুরোধ করল সাঈফের ঘড়ির মত একটা নকল ঘড়ি যোগাড় করে দেওয়ার জন্য।ইন্টারনেটে অনেক খুজে ঠিক ঐ মডেলের একটা নকল ঘড়ি পাওয়া গেল।মাহদিন ঘড়িটা নিয়ে এল আর বলে এল এই ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলতে।এই দিন বিকেলে মাহদিন একজন একজন করে সবার বাসায় গেল একটু গল্প গুজব করে প্রত্যেকের বাসায় একটা করে চিরকুট রেখে আসলো।লেখা ছিল একই,আজ বুঝলাম তুই কেমন ভাল‌?রাতে সবারই কল আসল ফোনে জানতে চাইল চিরকুটের কথা।সবাইকে একই উত্তর দিল -এই ব্যাপারে কাল কলেজে কথা বলবে এবং এই কথা কাউকে বলতে নিষেধ করল।

পরদিন কলেজে যেঁয়ে ৬জন মিলে মাঠে বসলো।সবার সামনে মাহদিন সাঈফের ঘড়িটা বের করে বলল এই নে তোর ঘড়ি।যে তোর ঘড়ি চুরি করেছিল তার বাসায় নকলটা রেখে আসলটা নিয়ে এসেছি।সাঈফতো মহা খুশি।মাহদিনকে ধন্যবাদ জানালো।বাকি ৪জন একে অন্যের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল, কার বাসায় ছিল?
একে একে সবাই মাহদিনের সাথে একা কথা বলে জানতে চাইল - ঘড়ি কোথায় পেলো এবং ওই চিরকুটের কথা? ঘড়ির কোথায় পেয়েছে বলা যাবে না জানালো আর চিরকুটের ব্যাপারে বলল তোদের নোট দেখে বুঝেছি তোরা ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তোদের কাছ থেকে নোট নিতে হবে এসব কথা বলে এড়িয়ে গেলো। সবার শেষে এলো সোহেল মুখটা একটু ভার। অন্য সবার মতো কোন প্রশ্ন করছে না দেখে মাহদিন সব বুঝে ফেলল। মাহদিন বলল কেন এমন করলি? সোহেল হাত জোর করে কেঁদে দিল আর বলল আমাকে ক্ষমা করে দে আমি ভুল করেছি। আর কোন দিন এমন করবে না বলে ওয়াদা করল। অবশেষে জানতে চাইল কিভাবে খুঁজে পেলো। মাহদিন হেসে দিল বলল ঘড়িতো আমি খুঁজে পাইনি সন্ধানতো তুইই দিলি ওঁটা আসলে নকল ঘড়ি। সোহেল অবাক হয়ে গেলো মাহদিনের বুদ্ধি দেখে। মানতে বাধ্য হল একদিন মাহদিন অনেক বড় গোয়েন্দা হবে। এরপর সোহেলের কাছ থেকে আসল ঘড়িটা নিয়ে সাঈফদের বাসায় গেল।সাঈফের বাবা অনেক খুশি হল।জানতে চাইল কে নিয়েছিল?মাহদিন নাম বলল না শুধু বলল সে ওয়াদা করেছে আর এমন কাজ জীবনে করবে না।এরপর সাঈফের বাবাকে সালাম দিয়ে বাসা থেকে চলে এলো।
অবশেষে মাহদিনের ১ম গোয়েন্দাগিরি সফল হল।আজ সে খুব খুশি।বাসায় এসে গুপ্ত ঘরে ঢুকল আর কম্পিউটারে লিখে রাখল তার জীবনের ১ম রহস্য উৎঘাটনের গল্প।আরও লিখল আজ থেকে শুরু করলাম গোয়েন্দাগিরি জীবনের শেষ অবধি পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাব।

কানিজ ফাতেমা


মন্তব্য

রাকিবুল হাসান এর ছবি

গল্পটা অসাধারণ।আর একটু বড় হলে আরও ভাল লাগত।।

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

এই প্রথম সচলে আমার লেখা প্রকাশ হল।ভাল লাগছে অনেক।ধন্যবাদ আপনাকে এরপর থেকে বড় লেখার চেষ্টা করব।

অমি_বন্যা এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। চোর কে এটা বোঝার জন্য শেষ পর্যন্ত পড়ে যেতে হয়েছে। গোয়েন্দা কাহিনীর ক্ষেত্রে এটাই লেখকের সারথকথা । একটু ছোট হলেও গল্পের প্লটটা বেশ ভালো লেগেছে। অনেক ভালো লাগলো , চালিয়ে যান। হাসি

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।দোয়া করবেন।চেষ্টা করছি লিখতে। হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

নিজের মতামত দেই পাঠক হিসাবে,

গল্পটা খারাপ লাগেনি, কিন্তু মনে হয়েছে একটু অল্প বয়সীদের জন্য লেখা। ছোট বেলায় কিশোর তারকালোকে এমন গল্প পড়তাম অনেক। যাহোক চালিয়ে যান, নিশ্চয় এক সময় আরো ভাল হবে।

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

এটা আসলে কিশোরদের জন্যই লিখা।১৮ বা তার ঊর্ধ্বে এটা সিলেক্ট করা মিস্টেক ছিল।লেখা খারাপ লাগেনি এর জন্য ধন্যবাদ।

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

হাসি ১৮ এর কথা আমিও জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম। সময়ে ঠিক হয়ে যাবে যেটুকু দুর্বলতা আছে লেখায়। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবেন, সংরক্ষণের আগে সময় নিয়ে আরেকবার পড়বেন। আমরা অতিথিরা লেখায় পরিবর্তন করতে পারিনা। কাজেই পোস্টদেয়ার আগে নিজে আরেকবার পড়লে, অনেক অসংগতি নিজেই বুঝতে পারবেন।

এখন একটা জোরে হাত তালি হবে। হাততালি

সচলায়তন-এ প্রথম লেখা প্রকাশ হওয়ায় অভিনন্দন।

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

#অনেক সুন্দর লিখেছেন, অভিনন্দন আপনাকে।। বাঘের বাচ্চা

আশরাফুল কবীর

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

চরম উদাস এর ছবি

হাততালি
কিশোরদের জন্য লেখা এখানে খুবই কম আসে। লিখতে থাকুন এ ধরনের লেখা।

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

চেষ্টা করছি লিখতে।দোয়া করবেন।

বন্দনা এর ছবি

প্রথম লেখা হিসেবে কিন্তু বেশ ভালো হয়েছে, আর কেমন যেন একটা সেই ছোটবেলার তিন গোয়েন্দার ফ্লেবার পেলাম আপনার লেখায়।

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অভিনন্দন আপনাকে সচলে প্রথম লেখার জন‌্য

কানিজ ফাতেমা এর ছবি

ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।