আমাদের বর্তমান সময়ের মুল ধারার বানিজ্যিক চলচিত্রের সবচেয়ে ব্যবসাসফল নায়কের নাম সাকিব খান!! এই বিষয়টা আমাকে কষ্ট দেয়, একি সাথে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, জহির রায়হান, তারেক মাসুদের মত মেধাবী ফিল্ম পরিচালকের দেশের চলচিত্র আজ কোথায় গিয়ে নেমেছে!! সমস্যাটা আসলে সাকিব খান কে নিয়ে নয়, রবিন্দ্রনাথের কোন একটা উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ফিল্মে আমি সাকিব খানের অভিনয় দেখেছি, ছেলেটা ভালো অভিনয় ও করতে পারে...সমস্যাটা মুলত কেন সেই ভাল অভিনয় করা সাকিব খানের বদলে ‘এক কথায় রাবিশ’ কিছু ফিল্মের সাকিব খান আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক!
প্রশ্নটা এই যায়গাতেই, কেন?
এই দেশের ৪০ ভাগেরও বেশি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে, প্রতিদিন খেটে খাওয়া এইসব মানুষ বিনোদনের জন্য সিনেমা হল এ যায়, আপনি কিংবা আমি কিন্তু এই সিনেমার দর্শক শ্রেনী নই!! এখন এই মানুষগুলো সারাদিন খাটা খাটনি করে, তাদের কে যদি আর্ট ফিল্ম ধরায়ে দেন, তারা তা দেখবে না, তারা পর্দায় ফ্যান্টাসি দেখতে চায়, তারা দেখতে চায় তাদের মত গরিব ঘরের একটা ছেলে পরীক্ষা দিলেই প্রথম হয়, ধনীর রাজকন্যা বাগায়ে আনে। বিষয়টা আসলে অনেকটাই আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার কারনে...
সবসময়ই একটা কথা বলা হয়, “Poverty is photogenic”। প্রতি বছর যেইসব স্টিল পিকচার আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পায়, একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, তার বেশির ভাগেরই বিষয়বস্তু থাকে দারিদ্র্য কিংবা যুদ্ধ। কিন্তু যার প্রতিটা দিনই যায়, জীবন সংগ্রাম আর দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে, পয়সা খরচ করে সে তার নিজের জীবনের ভিডিওগ্রাফি দেখতে যাবে কেন? কারণ বিষয়টা অনেকটা আমাদের পহেলা বৈশাখ এ শখ করে শুকনা মরিচ, পেয়াজ দিয়ে পান্তা খাওয়ার মত। যে দারিদ্র্যের কারনে প্রতিদিনি পান্তা খায়, সে বরং একটা বিশেষ দিনে বিরিয়ানি খেতে চাইবে, পান্তা তার কাছে কোন বিশেষ দিনের বিশেষ তাৎপর্য বহন করে না। তাই আমাদের এই দরিদ্র্ প্রলেটারিয়েট শ্রেনী বিনোদন হিসেবে সেই সব সিনেমাই দেখতে চায় যাতে গরিব ঘরের মেধাবি এবং প্রতিবাদী নায়কের প্রেমে পড়বে সম্ভ্রান্ত ধনীর আদরের দুলালী, আর সেই নায়কের প্রেম যখন টাকা দিয়ে কিনতে চাইবে নায়িকার অহংকারি পিতা, তার অহংবোধে তীব্র কুঠারাঘাত করে নায়ক গর্জে উঠবে, “চৌধুরী সাহেব, আমরা গরিব, আমাদের টাকা না থাকতে পারে কিন্তু ভালোবাসার মন আছে আর সেই মন টাকা দিয়ে কেনা যায় না”। দিনশেষে যখন সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে চৌধুরী সাহেব স্বীকার করে নেবেন, “মিথ্যে প্রতিপত্তি আর সামাজিক মর্যাদার অহংকারে আমি এতদিন অন্ধ হয়ে ছিলাম, তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছো” আর গরিব নায়ক আর ধনী কন্যার সুখে শান্তিতে বসবাস দিয়ে শেষ হবে সিনেমা, পুজিবাদি সমাজের যাতাকলে পিষ্ট, শোষিত নিগৃহীত প্রলেটারিয়েট শ্রেনী তখন সন্তুষ্টির হাসি হাসবে তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলা টাকায় কেনা সিনেমা টিকেটে বুর্জোয়া শ্রেনীর বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেনীর জয়জয়কার দেখে, তার আজীবন লালিত ইউটোপিয়ান সমাজের বাস্তবায়ন দেখে। আর যতই বলি “ Films are the best form of art”, দিনশেষে ফিল্মও অন্য দশটা ব্যবসার মতই, বেলা শেষের হিসাব কেবল, লগ্নি ছিল কত আর উঠে এসেছে কত! লগ্নিকারী প্রযোজকেরাও তাই দিনশেষে একটা হিসাবি করে, “ফিল্ম মার্কেট খাইছে তো?”! ফলাফল আমাদের বাংলা চলচিত্রের বর্তমান দৈন্যদশা!!
এখন আসা যাক অন্য আরেকটা প্রসংগে, কেন আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমার কিংবা আপনার রুচিবোধের কথা মাথায় না রেখে সিনেমা বানাচ্ছে, কেন অধিকাংশ ফিল্ম মেকারদের টারগেটেড মার্কেট আমরা নই?
উত্তরটা পেতে ফিরে যেতে হবে একটু অতীতের দিকে...
৫০ থেকে ৮০ এর দশক পর্যন্ত আমাদের দেশেই অনেক ভাল ফিল্ম হয়েছে। সুভাষ দত্ত, জহির রায়হান এর মত পরিচালকেরা আমাদের উপহার দিয়েছে অনন্য সুন্দর শিল্পমান সমৃদ্ধ অনেক ছবি যা একই সাথে ছিল ব্যবসাসফল। আমাদের চলচিত্রের নিম্নমুখী যাত্রাটা শুরু মূলত আশির দশক থেকে, ঠিক তখন থেকেই যখন আমাদের উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেনী আমাদের দেশীয় চলচিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আর চলচিত্রের এই নিম্নমুখী বিবর্তন প্রকট রুপ ধারন করে ৯০ এর দশকে গিয়ে।
উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেনী কেন সিনেমা হল বিমুখী হওয়া শুরু করলেন, তার একটা কারন মোটামুটি সবারি জানা, স্যাটেলাইট চ্যানেল এর আগমন, ভারতীয় চলচিত্র এর গ্ল্যামার এ মোহাবিষ্ট বাংলাদেশী দর্শকশ্রেনী, আর ফলাফল অবহেলিত দেশীয় চলচিত্রের দৈন্যদশার শুরু। আমাদের শিক্ষিত শ্রেনী যখন থেকে হল বিমুখী হওয়া শুরু করলেন, ঠিক তখন থেকেই সিনেমার সাথে সাথে হলগুলোর পরিবেশও খারাপ হওয়া শুরু করলো, অবস্থা এতটাই খারাপ হল, ভদ্র ঘরের কোন তরুন যদি সিনেমা হল এ যানও, আগে চারপাশটা ১০ বার ভাল করে দেখে নেন, কেউ আবার দেখে ফেল্লো না তো!!
এবার আসা যাক, আরও কিছু কারণ বিশ্লেষনে। আমরা মুখে যতই বলি, দেশটা রসাতলে যাচ্ছে, আগানোর পরিবর্তে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশীয় অর্থনীতির পরিসংখ্যান কিন্তু তা বলে না। ৬০ কিংবা ৭০ দশকের তুলনায় দেশের মাথাপিছু আয়, জিডিপি বেড়েছে কয়েক গুন। তাই ৬০ কিংবা ৭০ এর দশকে যখন একজন শ্রমজীবী মানুষের কেবল নিজের এবং পরিবারের জন্য দুমুঠো ভাত জোগাড় করাটাই ছিল কষ্টসাধ্য, জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, পরিবার পরিকল্পনার ফলে কমে যাওয়া পারিবারিক ব্যয়, সর্বপরি শ্রমের মূল্যবৃদ্ধি ৯০ এর দশকে এসে সেই একই শ্রমিককে পরিবারের খরচ মিটিয়ে আরো কিছু অর্থের সংস্থান দিচ্ছে, আর তখনি তার এই ‘ইকোনোমিক এফোরডেবিলিটি” তাকে পরিণত করেছে চলচিত্রের “কঞ্জিউমিং মার্কেট” হিসেবে। চলচিত্রের মার্কেটে দেশের শ্রমজীবী শ্রেণীর প্রবেশ, যারা এদেশের “মেজরিটি পপুলেশন” এবং এই “মেজরিটি পপুলেশন” এর “মেজরিটি কঞ্জিউমিং মার্কেট” হিসেবে আত্নপ্রকাশ এবং একই সাথে দেশের শিক্ষিত শ্রেনীর হল বিমুখতা দেশীয় ফিল্ম মেকারদের বাধ্য করে আমার কিংবা আপনার চলচিত্র রুচির কথা ভুলে গিয়ে দেশের ৫০ ভাগ মানুষের সমন্বয়ে গড়ে উঠা নব্য “মেজরিটি কঞ্জিউমিং মার্কেট” এর চলচিত্র রুচির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ফিল্ম তৈরি করতে, আর যার ফলাফল হিসেবে আমরা দেখতে পাই একের পর এক “চৌধুরী সাহেব” মার্কা ধনী-গরীব দন্দের ফ্যান্টাসী ফিল্ম, সাথে যুক্ত হয় রগরগে অশ্লীলতা। অবস্থা আরো বেশি খারাপ হওয়া শুরু করে যখন এই অশ্লীলতা ফিল্ম এর গন্ডি ছাড়িয়ে হলগুলোতেও বাস্তবরুপেই আসে, আর আমাদের সিনেমা হলগুলো পরিনত হয় রূপোজীবিনীদের রুপ উপভোগের অবাধ ক্ষেত্রে! আর সেই কারণেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যে অল্প কিছু মানুষ তখনো হল এ গিয়েই ফিল্ম দেখত, তারাও বাধ্য হয় হল ত্যাগ করতে আর ফলাফল “খাইছি তোরে” কিংবা “টারজান কন্যা” এর মত ব্যবসা সফল চলচিত্র!!
এবার আসা যাক, তৃতীয় আরেকটা কারণ বিশ্লেষনে।
আমি যখন ছোট ছিলাম, ৯০ সালের শুরুর দিককার কথা বলছি, তখন বেশির ভাগ মানুষের জন্যই চলচিত্র দেখার একমাত্র মাধ্যম ছিল বিটিভির শুক্রবারে বেলা ৩ টার পূর্ণ দীর্ঘ বাংলা ছায়াছবি। ব্যক্তিগতভাবে, আমার চলচিত্র দেখার শুরুটা ওইখান থেকেই। এর বাইরে ছিল, ভিসিপি কিংবা ভিসিয়ার এ ক্যাসেট ভাড়া করে সিনেমা দেখা। তাই ভাল আন্তজাতিক চলচিত্র সংগ্রহ করে দেখা বেশির ভাগ মানুষের জন্যই ছিল খুব কষ্টসাধ্য আর গ্রাম, মফস্বল কিংবা ছোট জেলা শহরগুলোতে বসবাস করা মানুষের জন্য বিষয়টা এক প্রকার অসম্ভবই ছিল। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে স্যালেলাইটের আগমন বাংলার মানুষকে সুযোগ করে দেয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের অসাধারন সব চলচিত্র সম্পর্কে জানতে। পরবর্তীতে ইন্টারনেট এর কল্যানে যখন পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে ডাউনলোড করেই বিশ্ব সেরা সব চলচিত্র দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয় আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যখন আপনি বার্গম্যান, ফেল্লিনির শিল্প কিংবা ক্যামেরন এর গ্ল্যামার যেটাই দেখুন না কেন, আপনার মুভি রুচির লেভেলটাই এখন পাল্টে গেছে। “সৎ আদর্শবান পিতার আদর্শ রক্ষায় ভিলেন এর হাতে খুন আর সেই সময় ছোট থাকা ছেলের বড় হয়ে সেই ভিলেন কন্যার সাথেই প্রেম আর পরিশেষে খালিহাতে নায়ক একাই যখন ৫০ জন অস্ত্রধারীদের ঘায়েল করে পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে যাবে ঠিক তখনি পুলিশের আগমন, পে পে বাশি আর সেই ডাইলগ, আইন নিজের......”, এই কাহিনী এর ফিল্ম, সাথে ৪০ বছরের কলেজ ছাত্র নায়ক আর ৩৮ বছরের চুলে দুই বিনী করা ড্যাডি বলে দৌড়ে লাফ দিয়ে বাপের বুকে ঝাপিয়ে পড়া ন্যাকা নায়িকার অভিনয় হজম করার অবস্থায় আপনি আর নেই!! তাই আপনার পক্ষেও হল এ গিয়ে অদ্ভুদ সব নামের একঘেয়ে বিরক্তিকর এইসব ফিল্ম দেখা আর সম্ভব হয়ে উঠেনা, ফলাফলে আমাদের দেশীয় চলচিত্র প্রযোজকদের টারগেটেড মার্কেট হিসেবে রয়ে যায় সেই প্রলেটারিয়েট শ্রেণী, আর ডিপজলের কুরুচিপূর্ণ গালিগালাজে ভরপুর ফিল্ম “কাল্লু মামা” এদেশে ব্যবসাসফল চলচিত্রের আখ্যা পায়!!
তবে বাংলাদেশের চলচিত্র সম্পর্কে এত নেতিবাচক সব কথা শুনে মুখ ভার করবেন না, কারন সময়টা পাল্টাচ্ছে। তারেক মাসুক, মোরশেদুল ইসলাম এর মত মেধাবী চলচিত্রকারের হাত ধরে এদেশে আবার ভালো চলচিত্র তৈরি শুরু হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা বিগত কয়েক বছরে পেয়েছি মাটির ময়না, মুক্তির গান, আহা এর মত অনেক শিল্পমান সমৃদ্ধ ভালো ভালো চলচিত্র। আর সুখের সংবাদ এই যে, ভালো চলচিত্র তৈরির এই ধারা অব্যাহত রেখেছে মোস্তফা ফারুকি, গিয়াসউদ্দীন সেলিম এর মত প্রতিভাবান তরুণ চলচিত্রকারেরা। আর তাই গত দুবছর ধরেই প্রায় প্রতি মাসেই মুক্তি পাচ্ছে অন্তত একটি ভালো সিনেমা।
স্বপ্নবাজ আমি তাই স্বপ্ন দেখি, সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নেই, যখন আমাদের চলচিত্র মনোনীত হবে অস্কারের “বেষ্ট ফরেন ফিল্ম” কিংবা কান চলচিত্র উৎসবের “গোল্ডেন পাম” এর জন্য। নুরুল আলম আতিক কিংবা অনিমেষ আইচ এর মত প্রতিভাবান তরুন চলচিত্রকারদের হাত ধরে আমাদের চলচিত্র পৌছে যাবে বিশ্বমানে, জহির রায়হান এর এই দেশেই জন্ম হবে সত্যজিৎ রায় কিংবা আব্বাস খাইরুস্তামি এর মত পরিচালক, সেই দিন আর খুব দূরে নয়।
“ভোর হয়নি, আর হোলোনা... কাল হবে কিনা তাও জানি না
পরশু ভোর ঠিক আসবেই, এই আশাবাদ তুমি ছেড়োনা”
আশাবাদ আমি ছাড়িনি, সকল প্রতিবন্ধকাতার দ্বার পেরিয়ে লাল সূর্য উঠবেই...হয়তোবা কাল নয়, তবে পরশু সূর্য ঠিকি উঠবে।
অপার সম্ভবনাময় এই দেশটির অসীম ঐশ্বর্যময় সেই দিনের প্রতীক্ষায়...............
লেখক পরিচিতিঃ The Shaikat Debnath
মন্তব্য
বিশ্লেষন চমৎকার লাগলো। বাংলা সিনেমা নিয়ে সব সময়ই আশাবাদী। নিজেকে সাধারণ মানুষের কাতারে বসিয়ে বাংলা সিনেমা দেখতে আমি দারুন উপভোগ করি। ধনী-গরীব দ্বন্দের এই এক কাহিনী কত রকম রঙ্গে ঢঙ্গে সাজিয়ে যে পরিবেশন করা হয়। কিছু অশ্লীল নর্তন কুদন উপেক্ষা করতে পারলে বাংলা সিনেমাগুলো এখনো ভালো বিনোদনের উৎস।
ধনী স্ট্যাটাস বুঝাতে " আমার ছেলে সাধারন গরীবের ছেলে না, সে কলের পানি খেয়ে বড় হয় নাই, বোতলের পানি খায়ে বড় হইছে"। এই ডায়লগ আপনি আর কই পাবেন? ( সূত্রঃ সাথী তুমি কার সিনেমার এটিএম শামসুজ্জামান এর ডায়লগ)
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ওরেএএএএ!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সবাইকে ধন্যবাদ সুন্দর সব মন্তব্যের জন্য। বানান ভুলের বিষয়টা সময়ের সাথে ঠিক করে নেবো, আশা রাখি।
Man in the Iron mask এবং হিমু , আমি আপনাদের সাথে সম্পূর্ণ এ্কমত। ভালো ফিল্ম এর জন্য বাজেট জরুরি বিষয় এটা সত্য, তবে কম বাজেট এও ভাল ফিল্ম তৈরি করা সম্ভব। ইরানি ফিল্ম গুলোর বাজেট কিন্তু খুব বেশি থাকে না। আমার মতে, আমাদের শুত্রু করা উচিত রোমান্টিক আর কমেডি দিয়েই। রোমান্টিক ফিল্ম গুলোরক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, কালচার এর পার্থক্য থাকার কারনে হলিউড কিংবা ইউরোপিয়ান ফিল্ম এর তুলনায় আমাদের নিজের দেশের রোমান্টিক ফিল্ম আমাদের বেশি ভাল লাগে, নিজের জীবনের কাহিনী বলে মনে হয়, তাই দর্শক প্রিয়তার জন্য আমাদের ভালো রোমান্টিক ফিল্ম এর দিকে মনোযোগ দেয়া যেতে পারে। কমেডি এর ক্ষে্ত্রেও একি বিষয় বলা যায়। তবে আমাদের একটা প্রধান সমস্যা ভাল সিনেমা হল না থাকা, তবে আশার বিষয়, খুব শীঘ্রই হয়ত আমরা ৪০০ টা ডিজিটাল হল পাচ্ছি। আর গত কিছুদিন যাবত ভাল ফিল্ম তৈরির হার ও অনেক বেড়েছে, তাই আমি আশাবাদি।
The Shaikat Debnath
P.S.: আমি কোন মন্তব্য করতে পারছি না, করলেই Your comment has triggered the Spam Filter দেখাচ্ছে। এই ব্যাপারে কি কেউ সাহায্য করতে পারেন?
হয়নি, হয়নি ফেল।
সাকিব নন, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান!
রবিন্দ্রনাথ >রবীন্দ্রনাথ বানানেও গলদ! ক্যাম্নে কী?
যাই হোক, লেখা চলুক।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনার বিশ্লেষণ ভাল লাগলো। ভাল চলচ্চিত্রের মাপকাঠি যদি শুধুমাত্র রুচিশীলতা হয় তবে আমাদের ৭০-৮০ এর দশকের ফিল্মগুলো বেশ ভালই ছিল। পরিমিতিবোধ ছিল, ভাষার প্রয়োগে মাধুর্য ছিল, পরিচালনা ভাল না খুবই ভাল ছিল। কিন্তু কাহিনীর স্টিরিওটাইপিং থেকে সে সময়টা মুক্ত ছিল বলে মনে করিনা। ধনী বাবা, অসম প্রেম আর প্রলেতারিয়েত সমাজের জয়গানই ছিলো তখনকার উপজীব্য। এখনকার পরিচালকেরা সেটাকে রুচিহীন করেছেন তাই সেটা চোখে লাগছে।
যদি আমরা খালি নকল করতে যাই এটা চলতেই থাকবে। ও পার বাংলা কি ভাবে ঘুরে দারিয়েছে দেখুন। ভুতের ভবিষতের মত অসাধারণ critically acclaimed but cult Classic ফিরে এসেছে। Uttam , Soumitra, satyajit , Mrinal কে মনে করিয়ে দেন আজকের parambrata chatterjee বা Indranil Sengupta রা। কারণ ওরা Root এ ফিরে এসেছেন। আমাদের ও ফিরতে হবে।
আপনার বিশ্লেষনে এক্টূ যোগ করি, নব্বই এর দশকে যখন সালমান শাহ এর সিনেমা এসছিল, তখন বাসা থেকে আমরা সবাই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছি।ওই সময়ে মধ্যবিত্তরা অনেকেই কিন্তু হলমুখী হয়েছিল, ওই সময়ে হলে গিয়ে দেখার মত ভালো কিছু সিনেমা ও আমরা পেয়েছিলাম, তারপর যেই কি সেই।
আপনার বিশ্লেষন ভালো হয়েছে বেশ, তবে আপনি অনন্ত এর সিনেমা বাদ দিলেন কেম্নে সে কিন্তু সিনেমায় নতুন একটা ডাইমেনশন আনার চেষ্টা করছে।
"ভদ্রলোক" দর্শকদের একটা বড় অংশ এখন বাইরের বহু সিনেমার কাছে এক্সপোজড। তারা হলিউডি ছবির চূড়ান্ত খরুচে স্টান্ট বা এফেক্টসের ফসল অ্যাকশন দৃশ্য দেখে, বলিউডি ছবির চূড়ান্ত খরুচে বৃন্দনৃত্য বা আইটেমসং দেখে, তাদের অনেকের কাছেই দেশী ছবি পানসে ঠেকতে পারে। বাংলা সিনেমার পেছনে ঠিক জায়গায় পয়সা ঢালার মতো লোকেরও অভাব আছে। নতুন নির্মাতারা অল্প বাজেটে যদি কমেডিনির্ভির সিনেমা বানাতে পারেন (কাতুকুতু দিয়ে হাসানো নয়, সূক্ষ্ম হাস্যরসে ভরা), তাহলে দর্শককে দ্রুত আবার দেশী সিনেমার দিকে টানা যাবে বলে বিশ্বাস করি। কমেডির আবেদন সবসময়ই ছিলো, আর আমাদের রসবোধ হলিউড-বলিউডের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কমেডির জন্যে স্টান্ট-এফেক্টস-এগজোটিকলোকেশনের হাঙ্গামাও কম। নবীন নির্মাতারা এই জনরাঁর দিকে মনোযোগ দিলে সুফল পাবেন।
এই কথাটাই আমি বলছিলাম। Route এ ফিরতে হবে। Naeem Mohamen দের মত কিছু আতেল সুশিল হলিউডি ছবির কথা বলা কে Status Symbol মনে করে। কিছু বলিউডি ছবির চূড়ান্ত খরুচে বৃন্দনৃত্য বা আইটেমসং দেখে। কলকাতা র Cinema এই দুই চাপে ডুবে গিয়েছিল। ওদের কিছু তরুণ আবার ভাল Cinema শুধু ফিরিয়ে আনেন নি ,super Hit করে দেখিয়ে দিয়েছেন। NoukaDubi কে নিয়ে এসেছেন। Feluda , Bomkyash দের নতুন করে পাই। লালন কে Cinema তে দেখচি।ভুতের ভবিষ্যৎ ত একটা Cult Classic । কিনতু দেখেন আলুর মত পতরিকা is busy with nonsense news of Katrina Kaif, Priynka chopra and Sharukh। ভুতের ভবিষ্যৎ বলে যে কম টাকায় আমাদের ভাষায় এত ভাল Cinema হল তার কোন খবর নেই। I am sure we have also Parambrata, Indranil and Abir who will take our cinema to next level।
হিম্ভাইয়ের সাথে একমত। বলিউডে হালের প্রায় সব ব্যবসা সফল ছবি কমেডি ধাঁচের, যদিও সেগুলা ভাঁড়ামি নির্ভর। আমাদের দেশে বিটিভিতে আগে অনেক কমেডি নাটক হত, যা ছিল সূক্ষ্ম হাস্যরসে ভরা। মানুষ এ্যাকশনে বোরড হয়, লাভ স্টোরিতে বোরড হয়, কমেডিতে কেও বোরড হয়না।
আপনার লেখা পড়ে যা বুঝলাম তা হলো- শাকিব খান অভিনীত বা এফডিসিকেন্দ্রীক সিনেমাগুলো খারাপ, মোরশেদুল ইসলাম তারেক মাসুদদের সিনেমা ভালো। ফারুকী সেলিমের সিনেমাও ভালো। নূরুল আলম আতিক অনিমেষ আইচরা বানালে আরো ভালো হবে। [ডুবসাঁতার দেখছেন?]
খারাপ ছবিগুলো দেখে দেশের গরীব গুর্বারা, আর ভালো ছবিগুলো দেখেন আপনেরা
আপনার ভালো লাগে না বলে দেশের সিনেমা দর্শকের সবচেয়ে বড় অংশটাকে খারাপ বলে দিলেন...
আপত্তি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
'ডুবসাঁতার' সম্পর্কে শুনবার আগ্রহ আমারো রয়েছে।
নজরুল ভাইএর সাথে পূর্ণ রূপে ইত্তেফাক জানাই।
আপত্তি।
'ভালো' সিনেমা হলেই 'ভালো' দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে শুরু করবে বিষয়টা তাই কি?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চমৎকার বিশ্লেষন।
অফটপিক মন্তব্যঃ তারেক মাসুদের শেষ ছবি "রানএওয়ে" এর ট্রেইলার দেখলাম সেইদিন এবং তখন প্রথম জানলাম যে সিনেমার নাম, "RunAway" বা পলাতক। পেতমালু আর অন্যান্য বিনোদন পত্রিকায় সব জায়গায় এদ্দিন দেখে আসছি লেখা " রানওয়ে" সাথে আকাশে প্লেনের উড়ে যাওয়া দেখছে একটা বাচ্চা এই ছবি। ধরেই নিছিলাম বিমানবন্দরের রানওয়ের আশে পাশের বস্তির কাহিনী নিয়ে সিনেমা। খুব একটা দেখার আগ্রহ পাচ্ছিলাম না। কিন্তু ট্রেইলার দেখে মনে হল খুবই জমজমাট থ্রিলার সিনেমা। লিঙ্কুর খোজে আছি দেখার জন্য। এইরকম সিনেমা আরও তৈরি হোক।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমি তো রানওয়ে ই জানতাম!! পরিচিত যারা দেইখা আসছে তারাও তো স্ট্যাটাস আপডেট দিসে এই নামেই!!!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
সুন্দর সব মন্তব্যের জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ, আপনাদের সব মন্তব্যই লেখা চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরনা দেয়। বাংলা সিনেমা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাক, এই আশাবাদ রইলো।
খানে ট্রেইলারে কিন্তু রানওয়ে দেখাচ্ছে
এইটা পাইলাম অফিসিয়াল ট্রেইলার পেজ।
http://www.youtube.com/watch?v=T5pgm5B9j7Q
এইখানে রান-এওয়ে বলছে। কাহিনীটাও তো রান-এওয়ে এর সাথে মিলে যায়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দারুণ লাগলো লেখাটা। ইচ্ছে আছে আর্টফিল্ম নিয়ে কাজ করার, শুধু সময়ের অপেক্ষা। দেশের এই সেক্টরে পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা ধারণা পেলাম
সুন্দর সব মন্তব্যের জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বাংলা চলচ্চিত্রেত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি
নতুন মন্তব্য করুন