ওল্ড হোম
১
ঢাকা শহরের লোড শেডিং এর কারণে মানুষের জীবন একেবারেই অস্থির। মাগরিবের নামাজের পরে কারেন্ট না থাকাটাই যেন এক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের মতো আজও সন্ধ্যার নামাজের পরে রায়হান সাহেবের রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিদ্যুতের এই ছেলেখেলার সাথে তিনি বেশ মানিয়ে নিয়েছেন। তাই রুটিন মাফিক একটি মোমকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছেন তার শোবার ঘরে। এখন গরমে একটি পাখার সন্ধানে তিনি বের হয়েছেন। এই বাসায় তিনি ছাড়াও তার ছেলে আবির, ছেলের বউ নিকিতা আর তার একমাত্র নাতি শোভন থাকে।
ছেলে একটি প্রাইভেট ফার্মের অনেক বড় একজিকিউটিভ। আবিরের কর্পোরেট লাইফ একেবারেই গৎবাঁধা। সকাল ৮ টায় অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাড়ি ফেরে সেই রাত দশটায়। ঢাকার এই ব্যাস্ত জীবনের সাথে প্রতিনিয়তই সে সংগ্রাম করে চলেছে।
নিকিতাও একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি নিয়েছে বছর খানেক হবে। সেও সকালে যায় আর ফিরতে রাত হয়ে যায়।
তাদের একমাত্র ছেলে শোভন স্ট্যান্ডার্ড টু তে উঠেছে। প্রতিদিন তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া , বাসার টুকটাক বাজার করার এক মহান দায়িত্বে নিয়োজিত আছে রায়হান সাহেব।
রায়হান সাহেবকে তার মহল্লার সবায় মাস্টার সাহেব বলেই ডাকে। ঢাকার একটি সরকারী হাই স্কুলে দীর্ঘ ২৭ বছর চাকরি করার পর প্রায় পাঁচ বছর হল তিনি রিটায়ারমেনট্ এ গিয়েছেন। রিটায়ারমেনট্ এর পর থেকে তার সময় কোথায় যেন থেমে গেছে। বাসায় সারাদিন তিনি একায় থাকেন । তার স্ত্রী দুই বছর হল মারা গেছেন। স্ত্রী বিয়োগের পর তিনি আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। শরীরও তার এখন আর আগের মতো চলে না। কেমন যেন একটা অবসন্নতা কাজ করে সারা শরীর জুড়ে। সারাটি জীবন ধরে তিনি শুধু ছাত্র পড়িয়েছেন । স্কুল আর বাসা ছাড়া আর কোন কিছুই তিনি বুঝতেন না। অবসরে যাবার পর হঠাৎ এই ভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ায় নিজেকে ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছেন না। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে বের হয়ে যান একটু হাঁটাহাঁটি করতে। তারপর যখন আসেন নাস্তার টেবিলে তিনি একা কারণ সবায় তাড়াহুড়ো করে নাস্তা সেরে নিয়েছে। গোঁজগাঁজ করে আবির আর নিকিতা বের হয়ে গেছে অফিসের উদ্দেশ্যে। তার নাতিকে গুছিয়ে স্কুলে নিয়ে যাবার দায়িত্ব তার। নাতিকে স্কুলে দিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এর পর থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি একটু ফ্রি। দুপুরেও একা লাঞ্চ করে একটু ন্যাপ ।তারপর নাতিকে নিয়ে ঠিক পড়ন্ত বিকেলে বাড়ি ফেরা। এভাবেই কাটছে তার দৈনন্দিন জীবন।
একঘেয়ে এই রুটিনের ফাঁকে তার একমাত্র সঙ্গী হল তার নাতি শোভন। তার সাথেই তিনি একটু কথা বলার সুযোগ পান। স্কুল থেকে আসার পর শোভন তার সাথে জুড়ে দেয় দুনিয়ার গল্প। আজ ক্লাসে কি কি হোল , কি খেলা করলো সারাদিন , রাস্তায় নতুন কিছু দেখে আসলে সেটা কি, তার কাজ কি এসব প্রশ্নে তার দাদাকে সে জর্জরিত করে রাখে। এই সময়টা তার বেশ ভালোই কেটে যায়।তিনিও অনেক কিছু শেয়ার করেন নাতির সাথে, মেতে ওঠেন অনেক মজার মজার গল্পে।
আজ সন্ধ্যায় মোমের আলো জালাতে পারলেও হাতপাখাটা কেন জানি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনন্দিন এসব ছোট কাজ তাকেই করতে হয় কারণ এগুলোর জন্য কারো সাহায্যই তিনি পান না।ঝুটা কাজের বুয়া যিনি আসে সে রান্না করেই হাওয়া। দুই বছর আগেও তার এই কাজগুলো করে দেয়ার জন্য তার স্ত্রী ছিলেন। সেই তাকে সব কাজে সাহায্য করতো। হার্ট এ্যাটাকে হঠাৎ মারা যাওয়ায় তিনি অথৈ সাগরে পড়েছেন। তার এই কাজগুলোর জন্য তিনি তার ছেলের বউকেও পাশে পান না। চাকরীর জন্য সে থাকে বাইরে । আর যখন বাড়ি ফেরে তখন নিজেকে নিয়েই সবাই ব্যাস্ত।
রায়হান সাহেবের নিজের বলতে তেমন কিছুই নেই আছে এই একমাত্র বাড়ি যা তিনি তার পেনশনের টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছেন। বাড়ির প্রতিটি ইটের সাথে আছে তার নিবিড় সম্পর্ক। একতলা বাড়ির ছাদে কিছু ফুলের টব। গাছগুলোর প্রতি তার বড্ড মায়া। প্রতিদিন সকাল বিকালে এদের পানি দেয়া, যত্ন আত্তি করাও তার দৈনন্দিন রুটিনের সামিল। এই বাড়িটাকে তিনি অনেক ভালবাসেন। বাড়ির অন্য কেউ তার পাশে না থাকলেও এই বাড়িটি তার সাথে দিন রাত আছে এবং থাকে। জীবনের শেষ সম্বল এই বাড়িটাকে তাই তিনি এত বেশী ভালোবাসেন।
আজ বৃহস্পতিবার তাই বাড়িতে বেশ ভিড় কারণ তার ছেলে ও বৌমার কিছু গেস্ট এসেছে বাড়িতে। তারা এখানে আজ পার্টি করবে তাই বেশ জোরেশোরেই গান বাজছে ঘরে। রায়হান সাহেব আজ সিড়িঘরে ঠাই নিয়েছেন কারণ তাদের এই পরিবেশে তিনি আজ বেমানান। সেকেলে এই মানুষটাকে নিয়ে তার ছেলের বউ পড়েছে ভারি বিপদে। তিনি বাসায় থাকলে ঠিক জমানো যায়না। একটা সংকোচ বলেতো কথা আছে। তাছাড়া তার বাড়ি থেকে অনেকেই ঢাকা আসলে তাদের থাকার জায়গা দিতেও অনেক হিমসিম খেতে হয়। সে কারণেই পার্টির পর নিকিতা আবিরকে এই সমস্যার কথা বলেই ফেললো।
-আচ্ছা আবির , বাবাকে নিয়ে কিছু কি ভাবলে।
-কি বিষয় বলতো?- উত্তর দেয় আবির।
-না মানে তোমাকে সেদিন বললাম আমাদের একটু প্রবলেম হচ্ছে বাবা এখানে থাকাতে।
-তার মানে তুমি কি বলতে চাইছ- একটু উচ্চস্বরে বলে আবির।
-তুমিত জানোই আমাদের এখানে প্রায়ই মেহমান আসছে । তখন তুমিই বল বাবাকে রুম শিফট করতে হয়। আবার উইক এন্ডে বাসায় একটু বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিব সেখানেও একটা সংকোচ কাজ করে। তাছাড়া বাবার যে বয়স এই বয়সে উনি মনে হয় নিজের মত করে থাকতেই পছন্দ করবেন। এই সময় উনি একা একা হেটে বেড়াবেন , তার বয়সী কেউ হলে তার সাথে গল্প করবেন, নির্জনে নামাজ পড়বেন খাওয়া দাওয়া করবেন। এইতো , এটাই ঠিক না তার জন্যে বলো?
-তাহলে কি করা যায় বলে তুমি ভাবছো?- বলে আবির
-আমি কিছু এখনও ঠিক করিনি তবে আমার এক কলিগের শ্বশুরকে তারা এমন একটি জায়গায় রেখেছে যেখানে সে তার বয়সী অনেককে খুঁজে পায়, সেখানে হাটা চলা করার মতো অনেক জায়গা আছে, অবসর সময়ে পেপার পড়া, টিভি দেখা সব কিছুই করতে পারে। বিনিময়ে তারা প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেয় আবার যখন বাবাকে দেখতে ইচ্ছে হয় তখন তারা গাড়ি চড়ে তাকে দেখে আসে।
-জায়গাটা কোথায় আর নাম কি?- বলে আবির
-লোকেশনটা আমাদের এখান থেকে খুব দূরে নয়। আশুলিয়ার আশেপাশেই মনে হয় আর ওই জায়গাটাকে একটা সুন্দর নামও দেয়া হয়েছে- ওল্ড হোম।
-কি বলছ এসব? কিছুতেই না। আমি বাবাকে ওল্ড হোমে রাখবো আমি বেঁচে থাকতে।
-কাম অন আবির। এর চাইতে ভালো কোন অপশন তুমি পাবে না। তাছাড়া ভেবে দেখো আমরা চাইলেই বাবাকে দেখে আসতে পারবো। আমাদের এখানকার চাইতে ওখানে সে ভালো থাকবে। মন চাইলেই ঘুরে বেড়াতে পারবে। আমাদের সাথে তো যোগাযোগ থাকছেই।
-সাট আপ । বাবা এই বাড়ি নিজে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। তার জীবনের সবকিছু এই বাড়ি। তার অস্তিত্ব মিশে আছে এখানে। না না এটা হয়না।
-তুমি এটা সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন? দিস ইজ নরমাল। আজকাল এগুলো হরহামেশায় হচ্ছে। একটু মডার্ন হতে শেখো। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে দেখো সেখানে বৃদ্ধদের থাকার জন্য এরকম একটা ব্যবস্থা খুবই প্রচলিত। আমাদের দেশেও এটা চালু হয়েছে। আমার পরিচিত দুই একজনের পরিবারেও এরকম ঘটনা অহরহ। আর সেখানে তুমি কিনা একেবারেই সেকেলে রয়ে গেলে। আধুনিক হতে শেখো। তাছাড়া দিন দিন আমরা ওদের কোন জিনিষটা গ্রহণ করছি না বল? আমরা ওদের গান, ওদের সংস্কৃতি সবকিছুই তো ধিরে ধিরে ধারণ করে চলেছি আর এটা পারছি না। তুমি ভেবে দেখো। তাছাড়া আমার উপর তোমার আস্থা থাকা উচিৎ।
-আচ্ছা ঠিক আছে বাবা- আমাকে ভাবতে দাও। আমি এ ব্যাপারে তোমার সাথে পরে কথা বলবো।
রাতে আবিরের ঠিকমতো ঘুম হয়নি। বিছানায় শুধু এপাশ ওপাশ করেছে কিন্তু ঘুম কেন জানি আসছিলো না তার। নিজের মধ্যে কেমন যেন একটা দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে । বাবাকে এভাবে দূরে রাখতে হবে তা সে কখনও ভাবে নি। অনেক চিন্তা ভাবনা করেছে সারারাত । শেষ পর্যন্ত একটা সিদ্ধান্ত সে নিতে যাচ্ছে বোধ হয়।
২
আজকের সকালটা কেমন জানি একটু ফ্যাকাসে। হেটে খুব একটা মজা পাচ্ছে না রায়হান সাহেব। গরমের মাঝে এক পশলা বৃষ্টি যেন মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা বাষ্পকে একটু নাড়া দিয়ে গেলো। শুক্রবার হবার কারণে আজ বাসার সবায় একটু দেরী করেই ঘুম থেকে উঠবে। রায়হান সাহেব বৃষ্টির কারণে বাসায় ফিরে এসেছেন। নিজে একটু চা বানিয়ে দুইটা বিস্কিট দিয়ে নাস্তাটা সেরে ফেললেন। তারপর যথারীতি বাসার মধ্যে থাকা ফুলের টব, ছোট ঝাউ গাছ, আর নতুন লাগানো চারা গাছে পানি দেয়া শুরু করলেন। গাছগুলোকে তিনি কোনদিন ছেড়ে যাবেন না। একটা আত্মিক টান অনুভব করেন এই বোবা জীব গুলোর জন্য। অন্যথায় তার অবসর সময়ের একমাত্র বন্ধুইতো এরা।
আজ সকালে তার এক কলিগ তাকে ফোন দিয়েছিলেন। ফোনটা পাওয়ার পর থেকে তিনি একটু বিচলিত। লোকাটার রিটায়ারমেন্ট এর পর তিনি বাসাতেই থাকতেন এখন তার সেই বাসা ছেড়ে তাকে চলে আসতে হয়েছে একটি বৃদ্ধাশ্রমে। ফোন করে সেখানকার নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া দুঃখ গাঁথাকে তিনি তার সাথে ভাগাভাগি করছিলেন ফোনে। লোকটা অনেক খেটেছেন ছেলেদের মানুষ করার জন্য অথচ আজ তিনি নাকি বোঝা হয়ে গিয়েছেন সবার কাছে। এই বুড়োতো কোন কাজে লাগেনা এখন অযথা নাকি বাসার একটি রুম দখল করে আছে তাই সবায় মিলে তাকে ওই আশ্রমে দিয়ে এসেছে। এখানে কেউ তাকে এখন দেখতে আসেনা। প্রথম দিকে এসেছে তার পর থেকে আর কেউ তার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে নি। যেই সময়ে পরিবারের সবার সাথে হেসে খেলে তার কাটিয়ে দেয়ার কথা সেখানে তিনি আজ এক নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। এইসব দুঃখ কষ্টগুলো তারা আলোচনা করছিলেন। সেই দিক দিয়ে নাকি রায়হান সাহেবের অবস্থা ভালো। বেশ সুখেই নাকি আছেন তিনি।
বাসার সবাই ঘুম থেকে উঠে গেছে। নাস্তা সেরে তাই আবির তার বাবার ঘরের দিকে যাচ্ছে। তার বিবেক তাকে অনেকবার পিছু টেনেছে কিন্তু পরিবারের সুখের কথা ভেবে সে আজ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবিরও তাই তার স্ত্রীর সাথে একমত। বাবার বয়স আজ অনেক হয়েছে এখন তার নিরিবিলি একটি পরিবেশ চাই যেখানে সে তার বয়সী অনেকের সাথে সময় কাটাতে পারবে। আর এরকম একটি উদ্যোগ যারা নিয়েছে তাদেরকে সে স্যালুট দিতে চাই । বড়ই ভালো একটি ব্যবস্থা ।
আজ আবির ভুলে গেছে পরিবারের মধ্যে একটা বন্ধনের কথা। বাবা, মা ,স্ত্রী, সন্তান , এদের সমন্বয়েই যে আমাদের বাঙ্গালি পরিবার সেটা আজ তার কাছে গৌণ। যে বাবা তাকে এতোটা বছর আগলে রেখে মানুষ করেছেন সেই আজ তার কাছে একটি বোঝা। এ এক নতুন ধারণা, এক নতুন মূল্যবোধকে সে তার সামনে দাঁড় করিয়েছে। পরিবার তন্ত্রের এই মুল ধারা থেকে বের হয়ে এসে একক তন্ত্রের এক ভুল আবর্তনের জালে যে সেও একসময় জড়িয়ে পড়বে তা কিন্তু আজ তার মনে নেই। তাই সবদিক বিবেচনা করে সে তার বাবার সামনে একটি প্রস্তাব নিয়ে আবির্ভূত হল।
-বাবা অনেক দিন ধরে একটা কথা বলবো ভাবছি।
-হ্যাঁ ঠিক আছে বল্ এত ভণিতা করছিস কেন?
-আচ্ছা বাবা এই যে তুমি একা একা আছো সারাদিন তোমার খারাপ লাগে না?
-কই নাতো? তোদের নিয়ে তো বেশ আছি আমি। আমার দাদুভাই, বউমা সবাইকে নিয়ে তো আমার সুখী পরিবার। আমার কোন কষ্ট নেইরে। কেন কে বলেছে আমার খারাপ লাগে?
-না তোমার বউমা বলছিল যে বাসায় প্রায়ই এত মেহমান আসে , এখানকার এত হইচই এগুলোতে তুমি নিশ্চয় বিরক্ত হও। তাছাড়া আমরা কেউই তোমার খেয়াল করতে পারিনা। সবায় বাইরে থাকি তোমার কখন কি হয়ে যায় তখন আমরা তো কেউ তোমাকে সাহায্যও করতে পারবনা
।
-এখন কিভাবে হেল্প করতে চাস শুনি?
-না মানে বলছিলাম যে আমরা একটা বাসা ঠিক করেছি তোমার জন্য। একটা ওল্ড হোম । ওখানে তোমার মতো আরও অনেকে পাশাপাশি থাকে। সেখানে সবরকমের সুবিধা আছে। তোমাকে দেখভাল করা জন্য , দৈনিক তোমার খাওয়া দাওয়া করানোর লোক আছে। নির্দিষ্ট সময়ে খবরের কাগজ পড়া এ সব কিছুই করতে পারবে। এর জন্য আমাদের একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে হবে যদিও কিন্তু তারপরও বাবা তোমার ভালো হয় সে জন্য আমি আর অমত করিনি। এখন তুমি রাজি থাকলেই হয়।
ছেলের এই অযাচিত প্রস্তাবে সে একেবারে মুহূর্তের মধ্যেই যেন মুষড়ে গেলেন। ছেলেকে নিয়ে এতদিনের এত গৌরব একেবারে মাটির সাথে মিশে যাওয়াতে সে কেমন যেন হোঁচট খেলেন। যেই ছেলেকে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আজ সেই ছেলের কাছে সে একটি বোঝা। বড় লজ্জা আর অপমানে মনে হল কে যেন তাকে ঘর থেকে ছুড়ে নর্দমায় ফেলে দিল। আর তাকে আদেশ করলেন এই নর্দমার চৌহদ্দির বাইরে তোমার যাওয়া নিষেধ।
আবিরকে তিনি এ ব্যাপারে পরে জানাবেন বলে এই যাত্রায় ঘর থেকে বিদায় করলেন।
সারাটি দিন তিনি তার ছেলের বলে যাওয়া কথাগুলো নিয়েই ভাবছিলেন। সন্ধ্যার অন্ধকারে আজ তার ঘরের আলো তিনি জালেন নি। অন্ধকারে বসেই অন্ধ কুপের কথা চিন্তা করতে হয় , তাহলে সেখানকার বাস্তবতা অনেক ভালো ভাবে উপলব্ধি করা যায়। তার এই জীবনটা এভাবে এমন অন্ধকারে ঢেকে যাবে তা তিনি ভাবেননি। তাকে আজ ছেলের প্রস্তাবিত জায়গায় যেতে হবে তাতে কোন আপত্তি নেই শুধু একটাই আফসোস ভেঙ্গে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। ক্রমেই সুচের মত ঢুকছে আত্মকেন্দ্রিকতার এক ভয়াল থাবা। আজ তার মনে হচ্ছে এভাবে যদি সবায় এই বয়সী লোকদের কেবল অকর্মণ্য বোঝা মনে করেন তাহলে একসময় সবায়তো একা হয়ে যেতে থাকবে। আজ সে একা ,কিছুদিন পর তার ছেলে ,তারপর এভাবে একদিন হারিয়ে যাবে সবায় চোখের সামনে থকেও। তারপরও পরিবারের কথা চিন্তা করে একটি পরিবারকে রক্ষা করার জন্য তিনি ওল্ড হোমে যেতে সম্মত হলেন।
রাতে তিনি আবিরকে তার রুমে ডেকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন।
আবিরকে তাই অনেক খুশী মনে হচ্ছে। রায়হান সাহেবের দেয়া সিদ্ধান্ত নিকিতাকে জানাতেই তিনি একেবারে যারপরনাই খুশি হয়ে গেল। অনেক দিনের একটি পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেয়ায় নিজে বেশ গর্ব অনুভব করলো। শুভকাজে দেরি কিসের তাই সিদ্ধান্ত হল কালই তার শ্বশুরকে ওল্ড হোমে পাঠিয়ে দেবে।
৩
খবরটা ইতিমধ্যেই রায়হান সাহেবের কাছে পৌঁছে গেছে। রাত পার হলেই সকালে তাকে দিয়ে আসা হবে ওল্ড হোমে যেখানে তাকে তারমত আরও অনেক বৃদ্ধ বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। সেখানে যেতে হবে তাতে তার কোন আপত্তি নেই তার স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটিকে চিরদিনের জন্য ছেড়ে যেতে হবে তাতেই তার আপত্তি। তার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেবে তার একমাত্র নাতি। প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাওয়া , তার সাথে মজার গল্প করা এগুলো খুব মনে পড়বে তার । আবার পরক্ষনেই একটা অভিমানেও তিনি অভিমানী হয়ে উঠছেন এই ভেবে যে একদিন হয়তো তার নাতিও তার ছেলেকে এমনই এক প্রস্তাব দেবে। তাই পারিবারিক এই বন্ধন তার কাছে কিছুটা ফিকে মনে হচ্ছে। আর কারো জন্য কোন মায়া নয় বরং সবই তার কাছে মনে হচ্ছে মিছে এক অভিনয়। তাই নিজেকে তিনি সামলে নিয়েছেন। রাত গড়িয়ে সকাল হল। আজ তার যাবার পালা। সবাইকে ছেড়ে , পরিবারকে ছেড়ে, এই চির চেনা ঘরকে ছেড়ে।
না না কেন তিনি এত মায়া দেখাচ্ছেন আর কাদের জন্যই বা তার এই অনুরাগ। ব্যাক্তি সুখের জন্য যাদের কাছে পরিবারের কোন দাম নেই , যাদের কাছে সে আজ এক বোঝা কেন আজ শুধু শুধু মায়া বাড়ানো। মেইন গেটের ফটকে থাকা ঝাউগাছের দিকে তাকিয়ে তিনি এসব ভাবছিলেন। ট্যাক্সি ক্যাবের হর্নে তিনি এই ভাবনা থেকে ছিটকে পড়লেন।
-বাবা চলো গাড়ি দাড়িয়ে আছে- বললেন আবির।
তারা দুজনে গাড়িতে চড়ে রওনা দিলেন ওল্ড হোমের দিকে। রায়হান সাহেব ফেলে গেলেন এতদিনের স্বপ্নের ঠিকানা , আর সঙ্গে নিয়ে গেলেন এক অজানা ভবিষ্যৎ।
ভাড়া করা এই ক্যাব এসে থামল ওল্ড হোমে । রায়হান সাহেব গাড়ি থেকে নামলেন আর আবিরকে অনুরোধ করলেন আর কখনও যেন সে তাকে দেখতে না আসে। যদি কখনও মনে পড়ে তাহলে এই ওল্ড হোমের সামনে দিয়ে ঘুরে যেতে।
ছলছল চোখে তিনি বললেন, ‘আমার সাথে ভেতরে দেখা করলে এখানে অন্য বৃদ্ধরা তোকে বিষোদ্গার করতে পারে। বাবা হিসেবে তা আমার জন্য হবে আরও লজ্জার। আজ থেকে আমি ভাববো আমার কোন ছেলে নেই, ছিল না কোন পরিবার । তোদের এই আধুনিক সমাজে আমি ছিলাম এক অনাকাঙ্ক্ষিত বোঝা তাই স্বেচ্ছায় আমি আজ থেকে আত্ম গোপন করলাম।
এই বলে তিনি ওল্ড হোমের গেটের সামনে এসে দাড়াতেই এক বৃদ্ধ ছুটে এলো তার কাছে। তাকে স্বাগত জানানো হল। এগিয়ে এসে এই অভ্যর্থনা জানানো লোকটিকে তার খুব চেনা চেনা লাগলো। আরে হ্যাঁ এত গফুর সাহেব যিনি পরশুদিন তাকে ফোন করেছিলেন। এতো তার সেই পুরনো বন্ধু, সেই চেনা কলিগ । তাকে দেখে খুব অবাক হলেন রায়হান সাহেব কারণ এভাবে তার সাথে দেখা হবে তা তিনি ভাবেন নি।
কিছুক্ষণ থাকার পরেই তিনি এখানকার মানুষদের সম্পর্কে জেনে গেলেন। তার মতো এখানে অনেকেই ছেড়ে এসেছেন তাদের পরিবার। শুরুতে সবায় এদের সাথে দেখা করে যায় তারপর একদিন তারা হয়ে যায় স্মৃতি। অনেকে এখানে মারা গেলেও তাদের খোঁজ কেউ নিতে আসেনা। তখন তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় আঞ্জুমান মফিদুলের হেফাজতে এবং এরপর পূর্ণ বিস্মৃতি।
এভাবেই একসময় অজানা থেকে যাবে তার পরিচয় । এভাবেই হারিয়ে যেতে থাকবে সে , এরপর তার ছেলে – পরিবারতন্ত্রের এই ক্রম বিস্মৃতি হয়তো এখান থেকেই শুরু।
অমি_বন্যা
মন্তব্য
এটাই নির্মম খারাপ লাগা চরম সত্যি। ভালো লিখেছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে
রায়হান সাহেবদের সমস্যাটা পরিচিত। কিন্তু আমি মনে করি স্বচ্ছল মানুষদের জন্য এখনো সেরকম দুরাবস্থা আসেনি। পরিবারের সদস্যগুলো একটু সদয় হলে, কিছু টাকা খরচ করে ঘরের মধ্যেই বৃদ্ধ বাবামার সেবা করা যায়। কিন্তু সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষদের জন্য ওই সময়টা খুব দুঃসহ। ওদের জন্য বরং বৃদ্ধাশ্রমটাই একটা বিশাল প্রাপ্তি। কিন্তু সামর্থ্যের কারণে একজন বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা কোনদিন বৃদ্ধাশ্রমের আশ্রয় পায় না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সচ্ছল থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা দেখেছি তাই কষ্ট পায়। অথচ নিজেরা চাইলেই কিন্তু তাদের দেখভাল করা যায়। পরিবার ছেড়ে একজন রিকশাচালক ও বোধহয় ওই আশ্রমে থাকতে চাইবে না । যিনি থাকছেন নেহাতই দায় পড়ে যাদের প্রত্যকেরি আছে এক একটি করুণ কাহিনী।
আমাদের দেশে সচ্ছল ও উচ্চবিত্ত পরিবারে এই সংখ্যা কেন জানি বাড়ছে।
বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা আমাদের মতো দেশে অত্যাবশকীয় একটা ব্যাপার। এখানে উপার্জনবিহীন বা কর্মক্ষমতাবিহীন মানুষের জীবন অসম্মানের, অমানবিক। যেসব বৃদ্ধ মানুষ তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের সাথে থাকেন তাঁদের খুব কমজনই সম্মানজনক ও মানবিক জীবনযাপন করার সুযোগ পান। বাইরের মানুষ তাঁদের সেই অসম্মানের খুব কমটাই দেখতে পান, জানতে পারেন। একটু পৃথক থাকলে পরে হয়তো উভয় পক্ষ উভয়ের জন্য একটু টান অনুভব করতে পারেন। বাংলাদেশে পরিবারের আকার, কাঠামো, সদস্যদের ভূমিকা সবই অনেক পালটে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে না নিয়ে একশ' বছর আগে পরিবারব্যবস্থা কেমন ছিল সেটা নিয়ে হা-হুতাশ করি তাহলে অযথা কষ্ট পেতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সম্মানজনক ও মানবিক জীবনযাপন করা সম্ভব না হলেও বেশিরভাগ বাবা মা বৃদ্ধাশ্রমে যাবার ব্যাপারটাকে মেনে নিতে পারেন না। নিজের ছেলে মেয়ে নাতি পুঁতির সাথে হাজার কষ্ট স্বীকার করে হলেও থাকতে চান। শেষ বয়সে নতুন পরিবেশে নতুন বন্ধু বান্ধব তৈরি করে খুশি মনে থাকাটা মনে হয় আমাদের বাবা মাদের পক্ষে তেমন সহজ না। আর আমি ব্যক্তিগত ভাবে বাবা মা কে কোনভাবেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো সমর্থন করতে পারিনা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
মরুদ্যান
আপনার সাথে সহমত পোষণ করলাম।
বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা আমাদের মতো দেশে অত্যাবশকীয় একটা ব্যাপার।
কেন এটা অত্যাবশ্যকীয় হতে হবে তা বুঝলাম না। আর উপারজনবিহিন কর্মহীন মানুষেরা আমাদেরই বাবা অথবা মা। সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা না দিতে পারার ব্যর্থতা আমাদের তাই বলে বৃদ্ধাশ্রম কোন অলটারনেটিভ অপশন হতে পারে না বোধ হয়। আমাদের দেশের বাবা মায়েরা এই জায়গাটিকে কখনই তাদের শান্তির নীড় ভাবতে পারে না বরং পরিবারের সবায় মিলে থাকতে পারাটাই তাদের কাছে স্বর্গীয় একটা অনুভূতি।
পৃথক থাকা আর বৃদ্ধাশ্রমে থাকাটা বোধ হয় এক নয়।
আপনার শেষের লাইনটির সাথে একমত হতে পারলাম না অন্তত এই প্রসঙ্গে কারণ পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারনে আমার বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর পক্ষপাতি আমি না। অন্তত এই একটি কাজ আমি পারবো না।
জবাব ভুল জায়গায় করে ফেলেছি। উপরে ষষ্ঠ পাণ্ডবের মন্তব্যে করতে চেয়েছিলাম।
@ষষ্ঠ পান্ডব, আপনি ধরেই নিয়েছেন
, অবসর নেয়া একজন বাবা অথবা মা কে এত সহজেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়াকে আর যাই হোক সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ বলে ধরে নিতে পারি না, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা রীতিমত ক্রাইম। আপনার ব্যক্তিগত বা পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা কেমন জানি না, আমি নিজের বাবা মাকে দেখেছি নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে আমাদের তিন ভাই বোনকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন, পথ দেখিয়েছেন উন্নতির। এখন আমি নিজের ঝামেলা কমানোর জন্য বৃদ্ধ বাবা মাকে যদি আশ্রমে দিয়ে আসি, আমাকে স্রেফ অকৃতজ্ঞই বলতে হবে। তারা চাইলেই একটা সময়ে আমার পড়াশোনার খরচ না জুগিয়ে নিজের একাউন্টে জমা করে রাখতে পারতেন কিংবা কিনে ফেলতে পারতেন এক টুকরো জমি, তাতে বৃদ্ধ বয়সে তাদেরকে আমার দয়ার উপরে নির্ভর করতে হতো না, কি বলেন?
ঠিক কোন সামাজিক অবস্থান থেকে আপনি
বলতে পারছেন, সেটা জানার একটা ক্ষীণ কৌতুহল হচ্ছিল, কিন্তু এই তথ্য আমার কোনই কাজে আসবে না।
আপনার যুক্তিবাদী মন শান্তিতে থাকুক, শুভকামনা।
ইয়াসির
অবসর নেয়া একজন বাবা অথবা মা কে এত সহজেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়াকে আর যাই হোক সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ বলে ধরে নিতে পারি না, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা রীতিমত ক্রাইম।
অসাধারণ লাগলো আপনার এই উপলব্ধি।
এখন আমি নিজের ঝামেলা কমানোর জন্য বৃদ্ধ বাবা মাকে যদি আশ্রমে দিয়ে আসি, আমাকে স্রেফ অকৃতজ্ঞই বলতে হবে।
আপনার এই কথাগুলো খুব ভালো লাগলো।
এই গল্পটাও ক্লিশে। এই ধরনের গল্প নিয়ে টিভিতে অনেক নাটক ও হয়েছে। এই সচলায়তনেও গল্প পড়েছি। প্রতিটা গল্পেই কমন হচ্ছে, ছেলের বউকে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়। ছেলের তার বাবা-মার জন্যে মায়া আছে কিন্তু বউই তাকে অমানবিক করে তোলে। নাতিকে আনা-নেওয়াটা 'কাজ' চাপিয়ে দেওয়া হিসেবে দেখানো হল। স্ত্রী থাকলে বৃদ্ধ ব্যাক্তিটির কাজে সাহায্য হত, ছেলের বউর কাছ থেকে তিনি কাজে সাহায্য পান না। যেন তাকে সাহায্য করা ছেলের বউয়েরই দায়িত্ব, ছেলের না, যদিও ছেলে আর ছেলের বউ দু'জনেই চাকরি করে। তবু শ্বশুরের খেয়াল রাখা বউয়ের দায়িত্ব, নিজের ছেলের না। ছেলের বউয়ের আত্মীয় আসাটা নেগেটিভলি দেখানো হল। বউটিরও নিশ্চয়ই বাবা-মা আছে, তারা মেয়ের বাসায় জায়গা পাবেন না এটাই এই সমাজে স্বাভাবিক। তাদের পরিস্থিতি নিয়ে কোন গল্প লেখা হয় না। সব গল্পই ছেলের বাবা-মা নিয়ে। কেউ হয়ত বলবেন যে, 'এই গল্পে' বাসাটা রায়হান সাহেবের নিজের, তাই তাকে বিদায় করা অমানবিক, বউয়ের বাবা-মা এখানে আসবে কেন? আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ছেলেটি যদি অসুবিধার কারণে বাবাকে না পাঠিয়ে নিজে বউ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা বাসা নিতো তাহলে কী বলতেন? সেটাও অমানবিক? কারণ বৃদ্ধটি নিঃসঙ্গ হয়ে যাবেন? তাহলে বউয়ের বাবা-মার কী হবে? তারা কি অবধারিতভাবেই নিঃসঙ্গ? এই যদি আধুনিকদেরও মনোভাব হয়, তাহলে কেউ নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছেলেসন্তান কামনা করলে তাকে দোষ দেওয়া যায় কি?
আসলেই ভালো লাগলো আপনার কমেন্ট পড়ে।বাবা-মার সাথে থাকতে গেলে আসলে কী সমস্যা হয়, সেইটা না জেনে গৎবাঁধা নিয়মে লেখা গল্পটা, মেজাজই খারাপ করে দিয়েছিল।
সচ্চল পরিবারে বাসায় রুম সমস্যা না।সমস্যা হলো- মানিয়ে নেয়া আর একজন সচ্চল প্রাইভেট কর্মকর্তা বাবাকে ওল্ড হোমে না দিয়ে আলাদা বাসা খুঁজবে।
পচা গল্প।
রাজিব, সামাজিক একটা বিষয়কে তুলে ধরেছি কাজেই ভালো মন্দত থাকবেই। আর রুমের সমস্যা হলেই বাবাকে ওল্ড হোমে পাঠিয়ে দিতে হবে? ঠিক একমত হতে পারলাম না। অবশ্য মত দ্বৈততা থাকতেই পারে।
তবে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সরি, আমি আমার বক্তব্য বুঝাতে পারিনি।আমি বলতে চেয়েছিলাম, সচ্ছল পরিবারে রুমের সমস্যা হয়না, আপনার গল্পের অংশটুকু দুর্বল। আর আপনি সামাজিক সমস্যাটা কে গতানুগতিক চিন্তা থেকে তুলে ধরেছেন- যা আপনার পছন্দ হয়নি।ধন্যবাদ।
সমস্যা তৈরি করতে চাইলে তা যে কোন জায়গাতেই হতে পারে । গল্পের কোন অংশ যদি দুর্বল হয় তার দায়ভার নিয়ে নিলাম তবে নতুন চিন্তা থাকলে দিতে পারেন । আর পছন্দ বিষয়টি তো আপেক্ষিক। ধন্যবাদ আপনাকে
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
যুক্তি দিয়ে বিচার করলে বৃদ্ধদের জন্য ওল্ডহোম উপযুক্ত জায়গা। শহরের পরিবারগুলোতে যেখানে দিনের বেশিরভাগ সময় পরিবারের সব সদস্য বাইরে থাকে সেখানে একজন বৃদ্ধ মানুষ একা ঘরে থাকাটাই বিপদজনক। তাছাড়া বেশিরভাগ বৃদ্ধই নতুন প্রজন্মকে মেনে নিতে পারেন না, ছেলেবউএর পার্টি, নাতির হেভিমেটাল ইত্যাদি। এই গল্পে নাতি দাদাকে সময় দিচ্ছে। কিন্তু একটা বয়স পর নাতিনাতনিরা বৃদ্ধ মানুষের সঙ্গ পছন্দ করেনা। এপার্টমেন্ট হাউজগুলোতে থাকা পরিবারগুলোতে বৃদ্ধরা প্রায় বন্দি জীবন যাপন করেন। এরকম নিঃসঙ্গ ও বন্দি অবস্থায় থাকার চেয়ে সমবয়সী, সমমানসিকতার অনেকের সাথে মিলে থাকলে বৃদ্ধের জন্য সেটা উপকারীই হওয়ার কথা। তাছাড়া একা ঘরে থেকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী রিস্কটাও থাকে না।
তবে যুক্তি দিয়ে তো জীবন চলে না, তাই বৃদ্ধদের জন্য ওল্ডহোমে যাওয়াটা মেনে নেয়া কষ্টকর। গ্রামে এই সমস্যাগুলো নাই, কিন্তু শহরে একক পরিবারগুলোতে বৃদ্ধসমস্যা একটা বেশ জটিল সমস্যা।
ওল্ড হোমে যাওয়াটা সত্যি কষ্টের আর এই কষ্টের কাজটি ক্রমেই বাড়ছে।
দারুণ বর্ণনা!
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমরা সবাই ব্যাপারটা বুঝি
তবুও ক্যানও আমরা সবাই ই এই ভুলটি ভুলটি বারবার করি?????
আল্লাহ্ আমাকে তুমি শক্তি দিও যাতে এমন কাজের বিরুধে থাকতে পারি সব সময়
লেখাটা পরে মনের অজান্তেই চোখের কনে ২ ফোঁটা জল যে কখন চলে এসেছে টের পাই নি
আশা করি লেখাটা ক্যামন লেগেছে এ থেকেই বোঝা যায়
অসম্ভব ভালো লিখেছেন স্যার
আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটি ভালো লেগেছে এই কারনে।
অগাধ শক্তি আপনি সঞ্চয় করুন সেই কামনায় করছি। ভাল থাকবেন।
৩০ বছর যে সন্তান মাকে চিনলনা বউ আশার কদিন পরই মা-কি জিনিষ চিনে ফেললো। সত্যি বড় বেদনার ।আমাদের মা-বাবারা এভাবেই শুন্য হয়ে জান।ফলাফল বৃদ্ধা আশ্রম।
ভালো লাগল বন্যা।
লিখা বেশ ভালো লেগেছে অমি। তবে এক্টূ ভিন্নভাবে দেখছি ব্যাপারটা। স্বামীস্ত্রী দুজনেই জব করে এই ধরনের পরিবারে শ্বশুরশাশুরীকে পাওয়া মানে বিশাল ব্যাপার আজকাল, এতে বাচ্চাকাচ্চা উনাদের কাছে রেখে আসা যায়, সংসারের অনেক কাজে উনাদের সাহায্য পাওয়া যায়। আমার আশেপাশের মানুষদেরকে তো দেখি বাবামাকে পেলে খুশীই হয় ভীষণ।এই ধরনের গল্পগুলা কি আপারক্লাসে খুব কমন আমাদের দেশে আমার ঠিক জানা নেই। আশেপাশে কোথাও এই ধরনের কিছু এখন ও দেখেনি।
আমার ভালো লাগছে এই জেনে যে অমি_বন্যা লিখছেন হৃদয় দিয়ে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রোমেল ভাই ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটা পড়ার জন্য।
বাবা-মা এর জন্যে ছেলে-বউদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে আবার ছেলে-বউদের জন্যে শ্বসুর-শাশুড়িরও বিভিন্ন অসুবিধে হতে পারে। তার সমাধান আলাদা হয়ে যাওয়ার মধ্যে নয়। মানিয়ে নিয়ে একসাথে চলার মধ্যে দিয়েই জীবনে এগোতে হয়। অন্যায়কে মানা কিন্তু বলছিনা। বলছি ছোটখাটো বিভিন্ন ব্যাপার মানিয়ে নেবার কথা। শিশুটি চোখের সামনে যে তার বাবার যে, দৃষ্টিভঙ্গি দেখে বড় হচ্ছে, সেখানে সহনশীলতা ও একসাথে মিলে মিশে চলার গুণগুলো কিন্তু সে পাচ্ছে না। বৃহত্তর সামাজিক জীবনেও এই গুণগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। সেই শিশুটি বড় হয়ে তার বাবা-মাকে কী উপহার দেবে? আরেকটি বৃদ্ধাশ্রম আশা করি।
গল্পটির আবেদন এবং লেখকের আন্তরিকতা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
কিন্তু গল্পের প্লটটি খুবই চেনা গতে বাঁধা।
আরেকটু অন্য কোন ভাবে প্রকাশ করলে হয়তো আরেকটু আকর্ষনীয় হত।
নতুন মন্তব্য করুন