'কিরে দাদা, ব্যাপার কি রে? বউদির নাকি...'
কথাটা শেষ করতে দিল না দাদা। ওর বরাবরের স্বভাবটাই তাই। কোনোকথা ভালো করে শোনার আগেই মন্তব্য। পুজোর ছুটিতে বাড়ী এসচি। অন্যত্র চাকরি। আগে মাসে মাসে আসতাম। তখন একা, স্বাধীন, নতুন চাকরি, জোশি আলাদা। এখন সংসারের জাতাকলে পিষ্ট হতে হতে অনেক ইচ্ছে-ভালোলাগাকে গলা টিপে মারতে হ্য়, তাইনা? তবুও পুজোর ক'টা দিন শহুরে ঝিনচ্যাকও ম্যাদামারা লাগে। মনে হয় ধুৎ, এরচে আমার পাড়াগাঁয়ের ওই ছিমছাম বাড়ী, প্রবল ভালোমানুষ দাদা-বৌদি, বাড়ীর সামনের বারোয়ারী পুজো, দুপুরে গিন্নির চোখরাঙানীকে উপেক্ষা করে সাঁটানো গলদা চিংড়ী, কষা খাসী - এই আমার কাছে স্বর্গ।
অষ্টমীর সকালে চা-ফা খেয়ে বারান্দায় বসে আয়েশ করে সিগারেট টানছি। ওরা মন্ডপে। অঞ্জলি দিচ্ছে। আমাদের দু-ভাইয়ের অবশ্যি ও পাট নেই।দেখি বারবার আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছে, কাউন্টারে ভাগ বসাবে। একিরকম রয়ে গেলো, কিছুতেই গোটা সিগারেট খাবে না। হঠাৎ মনে হল বউয়ের কাছে পাওয়া ব্রেকিং নিউজটার কথা। দাদা ঠিক চেপে গেছে। ভাবলাম এবার আমি চেপে ধরবো।
কোথায় কি, কথাটাই শেষ করতে দিল না। ফস্ করে বলে বসলো, 'বউদির কি? পষ্ট করে বল তো কি বলতে চাস। ওসব ভ্যানতারামো আমার ভাল্লাগে না।'
মটকা গরম হয়ে গেলো। দেখলে ভালোমানুষ হলে কি হবে, ও ব্যাটা মহা ধুরন্দর। সব জানে কিন্তু এমন ভাবটি করবে য্যানো কিচ্ছুটি জানে না।
'ভ্যানতারামো, তাইনা? লাথ খাবি। বউদির নাকি ইয়ে হবে, আর এমন ভাব করছিস য্যানো প্রথম শুনলি কথাটা', বেশ ধমকের সুরেই বল্লাম।
'ও এই ব্যাপার! আমি ভাবছিলাম অন্য কথা`, সিগারেটের মোথাটা ঢিল দিয়ে বাইরে ফেলে ফুঁকফুঁক করে ধোয়া ছেড়ে আয়েশ করে বোল্লো দাদা, 'হ্যা, হবে তো, এইতো চারমাস চলছে। আমি ভেবেছিলাম তোকে সারপ্রাইস দেবো।'
মনে মনে বেশ করে বাছাবাছা ক'খানা গালাগাল দিলাম। আচ্ছা বলুন, অলরেডি দুটো মেয়ে আছে দাদার, কোনো মানে হয়? আমার ধারণা ছিল, আজকাল আর আগের মতো ওই ছেলে না হ’লে শাশুড়ির খোঁটা-গঞ্জনা- এসব বোধ হ্য় ফসিলস্ হয়ে গেছে। কোথায় কি? ওপরে ওপরে যতই ব্লগ-ফগ ক'রে উত্তর আধুনিক নাচন কোদন করি না কেন, দাদার কীর্তিকলাপ দেখে মনে হচ্ছে সব ফালতু, বোগাস।
দাদা দেখি মুচকি মুচকি হাসছে। বোধ হ্য় বুঝতে পেরেছে, রাগ ক'রেছি।
'কিরে কি ভাসছিস? এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে দু-দুটো মেয়ে; যদি না পালায়, বিয়ে দিতে হবে, তার ওপর… ছেলে হবে সেই গ্যরান্টি স্ব্য়ং ঈশ্বরও দিতে পারবে, বল? দেখলি তো, কি ভাবছিস ব'লে দিলাম। হেঁহেঁ…', একটা ক্যালানে মার্কা দেঁতো হাসি দিয়ে ডায়ালগ শেষ হলো। আমি চুপ। কি বলবো?
আমাকে কিছু বলতে হ'লো না। দাদাই শুরু করলো, 'আরে কি আর বলি, এটা যাষ্ট জেদাজেদির ফল, বুঝলি?`
'জেদাজেদি!’, আমি অবাক।
'আরে হ্যারে', দাদার গলা আরো নরম হ্য়ে এসচে, 'ইসে… আরে আমার ঐ ইয়ে অপারেশন হলো না, বুঝলি তো? আরে ঐ ইসে… তো সবাই বলছে আমি নাকি ভোগে। সব গ্যাছে। শালিরা তো জ্বালিয়ে মারলো। গ্যালো জামাইশষ্ঠীরদিন তো সবাই মিলে মানে… তোর বউদি তো মুখে কুলুপ এঁটে ভালোমানুষ হয়ে থাকবে, আরে তোর বরকে লোকে হ্যাজাচ্ছে, কিছু বল, তুই সার্টিফিকেট দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। কোথায় কি? খালি মিটমিট করে হাসবে। শালা জেদের বশেই ডিসিশন নিলাম, দেই একখানা ঠুকে। দি শালাগুলোর থোতামুখ ভোঁতা করে । কি, ঠিক করিনি বল?'
আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না।
*****************************************
# দীপালোক
মন্তব্য
শেষ করে একটাই কথা মাথায় এলো - যা শালা!!
চমৎকার গল্প।
ডাকঘর | ছবিঘর
জেদাজেদি করে দ্যাশটার জনসংখ্যা বেড়ে গ্যালো!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
হ
-------------
পথিক পরাণ
ঠিক কথা।
দারুণ লাগল গল্পটা।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
দারুন। ভালো লাগলো।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
জেদাজেদি ভালো না
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
চমৎকার দীপালোক ভাই।
অসাধারন লেগেছে। চালিয়ে যান।
[পলাতক]
নতুন মন্তব্য করুন