গ্রীক বিপর্যয়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৯/০৬/২০১২ - ৩:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকতেই দৃষ্টি গেল মাঝের এক টেবিলের দিকে। গ্রীক-ত্রয়ী কোস্তাস, জর্জিস ও স্পিরোস বিরসবদনে নিজেদের মধ্যে কি যেন বিষয়ে গম্ভীর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। স্পিরোস হাতের ইশারায় বসতে বললো। তিনজনই আমার সহকর্মি। ফিরতি বাসে কথায় কথায় একদিন বলেছিলাম তোমাদের দেশের কাজান জাকিস নামের ভদ্রলোক আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিক'এর প্রিয়দের তালিকায় ছিলো।[কোন এক লেখায় বা আলোচনায় শুনেছিলাম ইলিয়াসের প্রিয় চার লেখকের একজন কাজান জাকিস]। বিদেশবিভূইয়ে স্বদেশ বা স্বদেশি'র কীর্তি এক অন্যরকম অনূভুতি।সেই অনূভুতিতে আমরা যেমন আবেগাক্রান্ত হই, অন্যরাও হয় বৈকি।

পরিবেশটাকে হালকা করার অভিপ্রায়ে আমি চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললাম, তোমরা স্পার্টা না পারস্য, কাকে আক্রমনের ফন্দি আটসো।
"আমরা গ্রীসের দূর্দশার কথা, আমাদের দূর্ভাগ্যের কথা আলাপ করছিলাম। দূর্নীতিবাজ রাজনীতিক আর আমলা'দের কারনে গ্রীসে আজ এই বিপর্যয়" স্পিরোস আহত গলার স্বরে অপমানবোধটা প্রচ্ছন্ন।

গ্রীস ও গ্রীকরা এখন ইউরোপের অচ্ছুৎ।জার্মানী, নর্ডিক ও পশ্চিম ইউরোপের ধনী দেশগুলো সাথে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক'র ফড়িয়া'রা মাঝে মাঝে ভিক্ষাদানের প্রতিশ্রতি দেয় বটে।তবে সেই সাথে চাপিয়ে দেয়া হয় অপমানজনক সব শর্ত; গ্রীকদের প্রায়ই বলে দেয়া হয় কি কি করা যাবে ও কি করা যাবেনা। এবং এই গ্রীসের প্রতি এহেন মনোভাব শুধু ধনীদেশগুলো রাষ্ট্রপ্রধান নয়, সেসব দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভাবনাও এমন।

স্বল্পভাষী, সজ্জন ফিনিস মার্কাস মন্তব্য করে বসলো গ্রীসকে ইউ'র মধ্যে নেয়াই উচিত হয় নাই।
আমি বললাম, তোমরা ইউরো'কে ডলারের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাও, ইইউ'কে ইউএস'র কাউন্টার অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে দেখতে চাও, তাইলে তো ইইউ'কে সম্প্রসারণ করতেই হবে।

"আমি কমন ভিসা পর্যন্ত রাজি কিন্তু বারবার আমাদের টাকায় দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোকে উদ্ধার করতে পারবোনা।যারা অলস, কর্মবিমুখ
তাদের এইটা প্রাপ্য"।

নরওয়েজিয়ান আইভিন্দের মতে গ্রীসের লোকজন কোন কাজ-কাম করেনা, রকে বসে আড্ডা দেয় আর সরকারি অর্থে খায়; তারা রিয়াটারমেন্টেও যায় ধনী নরওয়েজিয়ানদের আগে!

গ্রীসে কখনো যাইনি।তবে কোন দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ কি আসলেই বিপর্যয় ঘটানোর মতো করে অলস, কর্মবিমুখ হয়!
আমার সেই তিন গ্রীক সহকর্মি পরিশ্রমী ও কর্মনিষ্ঠায় আর অনেক দেশের প্রফেশনালদের চেয়ে অনেক উপরে।

আমার স্বল্পবুদ্ধিতে যেটা বুঝি, গ্রীসের বিপর্যের মূলে সেই পুরানো সত্য।ধনীদের সাথে তালে মেলাত গিয়ে গরীবের জেরবার।
ইশকুলে পড়া গণিমিয়া'র সেই প্যাসাজটার মতো
"গণি মিয়া নামের একজন কৃষক ছিলেন। ছেলের বিয়ে উপলক্ষে উনি অনেক টাকা কর্জ করিলেন।তিনি কর্জের টাকার পরিশোধ করিতে পারিলেন না, ঋণের বোঝা বাড়িতে থাকিলো।গণিমিয়ার সংসারে বিপর্যয় নামিয়া আসিলো"

ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের আগেই গ্রীস যথেষ্ট ঋনগ্রস্ত ছিলো।সেই ঋণের বড়ো অংশের মালিকানা ছিলো ইউ'র সবচে ধনীদেশ জার্মানির।অ্যাথেন্স অলিম্পিকের আয়োজন গ্রীক বিপর্যয় গোড়াপত্তন না ঘটালেও, বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে নি:সন্দেহে "উত্তম উদাহরণ"।

ইইউ'তে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে গ্রীস হারিয়েছে নিজেদের মুদ্রা ছাপানোর অধিকার।সে ইউরো নোটও ছাপতে পারেনা সে।ইউরোপে প্রবেশ তার আগের দুরবস্থাকে শুধু বাড়িয়েই দিয়েছে।

গ্রীসের এখন উপায় কি? সে কি করতে পারে?

হাতে খুব বেশি অপশন নেই; উপায় মূলত দুটি: কঠোর মিতাচার অবলম্বন:- সরকারি ব্যয়,ভাতা, পেনশন ইত্যাদিকে কঠোভাবে নিয়ন্ত্রণ।যেমনটা এংগেলা মার্কেল পইপই করে বলে দিয়েছেন।

দ্বিতীয় উপায় হলো ইউরো থেকে বেড়িয়ে আসা।

প্রথম অপশন কার্যকর করাটা ইতিমধ্যেও দু:সাধ্য প্রমাণিত হয়েছে। জনরোষ ও গণবিক্ষোভে আর ওদিকে ঋণ দাতাদের চাপে নাজেহাল জর্জ পাপান্ড্রুস নিজে থেকে কেটে পড়েছেন।জনরোষের প্রচন্ডতা বুঝতে গ্রীক দাদীর ঢিঁল ছোঁড়ার দৃশ্যটা দেখুন।
সর্বশেষ নির্বাচনে প্রাথমিক পর্যায়ে জেতা বামরা অস্টারিটি মেজার্স'কে বার্বারিক বলেছিলেন [অবশ্য নির্বাচনের আগে]।

দ্বিতীয় উপায়-ই এখন ভরসা। সমাধান আপাতত এইটাই বলছেন পল ক্রুগম্যান। তবে ভবিষ্যতে ডলারের একক আধিপত্যের জন্য হুমকি ইউরো'কে এই সুযোগে এক হাত দেখে নেওয়ার মানসিকতা মার্কিনীদের মাঝে কাজ করছে না, এইটা খাস-অন্তরে বলা মুশকিল।

তবে গ্রীস ইউরো থেকে বের হয়ে গেলে পুরো ইইউ'তে যে একটা বেসামাল অবস্থা হবে তা নিশ্চিত। আমাদের মতো প্রান্তিকদেশে তালমাতাল অবস্থা না হলেও ইউরো বিপর্যের ধাক্কাটা ভালোই পড়বে।বাংলাদেশের তৈরি পোষাক খাতের সবচে বড় বাজার এখন পর্যন্ত য়্যুরোপ।

ব্লগটা লেখা শুরু করেছিলাম বাংলাদেশের সর্বশেষ বাজেট ঘোষণার আগে। বাজেটের চুম্বক অংশে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দেখে বুঝলাম এরকম "মাল মুহিত" বাংলাদেশে ভবিষ্যতে "গ্রীক বিপর্যয়" ঘটিয়েই ছাড়বে।

'অনিশ্চিত'


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আপনি কি ক্রুগম্যানের এই লেখাটা পড়েছেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

আগে পড়ি নাই, এখন পড়লাম।দেখা যাচ্ছে, পল ক্রুগম্যান নীতিগত ভাবেই দু:সময়ে অস্টারিটির বিপক্ষে।
তবে ইউরো'কে সুযোগে একহাত দেখে নেওয়ার ইচ্ছা যে আমেরিকানদের আছে- আমি কিন্তু সেই ভাবনা থেকে সরছি না চোখ টিপি

হিমু এর ছবি

শুধু কি ইউএসএ? বিবিসি পড়লে মনে হয় ইউরোই যত নষ্টের গোড়া। কৃচ্ছ্রতাসাধনের নামে সামাজিক কল্যাণ খাতে ব্যয় কমানোর কুবুদ্ধি কিন্তু ক্যামেরন সরকারও খাটাচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাঝে মাঝে ইউকে কে ইউএসএ থেকে আলাদা কর্তে ভুল হয়।সাহেবের কথা আসলে কেউ'বা মোসাহেবকে মনে রাখে। চাল্লু

দিগন্ত এর ছবি

কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কি এটা সম্ভব? বুমের সময়ে যদি অস্টারিটি দেখাতে যায় তাহলে ভোটার তো এসে বলবে তুমি গদি ছাড়, যে আমাদের দিকে কিছু মালকড়ি দেবে তাকেই ভোট দেব। উল্টোদিকে রিসেশনে অস্টারিটি দেখালেও ভোটার জানে দেশের হাতে পয়সা নেই, তাই মুখ বুজে মেনে নেবে। অর্থনীতিবিদদের সুবিধা হল তাদের নির্বাচনে দাঁড়াতে হয় না।

উল্টোদিকে, ভারতে বা চিনে কিন্তু এই ব্যাপারটা মোটামুটি মেনে চলার চেষ্টা করা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বুমের সময় সুদের হার বাড়িয়ে দেয় আর রিশেসনে কমিয়ে দেয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

ক্রুগম্যানকে আমি বেশ কয়েকবার কথা শুরুর আগেই বলতে শুনেছি যে অর্থনীতির জগৎ কাউন্টার-ইনটুইটিভ। বিবিসির হার্ডটকেও দেখলাম সে বাসর রাতেই পুষি মেরে রেখেছে।

দিগন্ত এর ছবি

কাউন্টার-ইনটুইটিভ মানে পাবলিকে বোঝে না, মানে ভোটে প্রভাব ফেলে না - বা উলটো প্রভাব ফেলে। সুতরাং রাজনীতিবিদেরা এখনো বেশ কিছু বছর করেকম্মে খাবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

সে কারণেই আমাদের দেশে শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ কম থাকে। "এরা যতো বেশি পড়ে, ততো বেশি জানে, ততো কম মানে!"

নৈষাদ এর ছবি

আমি অবশ্য ইদানিং ইউরো-অর্থনীতি একেবারেই অনুসরণ করি না। তবে ক্রুগম্যানের বিশ্লেষণ ভাল লাগল। শুধু ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিই না, ত্রিশের দশকের আমেরিকার গ্রেট রিসেসন থেকেই উদ্ধারের জন্যও অস্টারিটির মেজার নেয়া হয়নি, বরং এডিপিতে খরচ বাড়ানো হয়েছিল। ক্রুগম্যান যেমনটা বলেছেন, it’s about using deficit panic as an excuse to dismantle social programs...আমার ব্যাক্তিগত মতামত কল্যাণ রাষ্ট্রের আদলে গড়ে উঠা সোশ্যাল প্রোগ্রামগুলি কাটছাট ভাল কিছু বয়ে আনবে না।

মুহিত সাহেব তো তাহলে ঠিক পদক্ষেপই নিয়েছেন – নন এডিপি ১৬ হাজার কোটি এবং এডিপি ১৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে!! (বাংলাদেশের বাজেট নিয়ে একটা নির্মোহ আলোচনা প্রত্যাশিত ছিল)

আরেকটা ইন্টারেস্টিং জিনিস মনে হয় - আমাদের 'উন্নয়নশীল দেশের' অর্থনীতি 'উন্নত' দেশগুলির অর্থনীতির চেয়ে বেশ কিছুটা 'রিজিল্যান্ট' (এবং মানুষগুলোও)।

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

ঋণ করে ঘি খেতে থাকলে এরকম কিছু ব্যক্তিজীবনেও ঘটবে, জাতীয় জীবনেও ঘটবে।
এজন্য ব‌্যাংকারদেরও কিছুটা দায় আছে। তারা ইউরোতে ধার করে এনেছে, আর ঋণ বিলি করেছে। ইজি ক্রেডিট আর ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ -এসব চলতে থাকলে যেকোনো দেশেরই এোকম হবার সম্ভাবনা আছে।

হিমু এর ছবি

ঋণেই শান্তি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে ঘাটতি বাজেট জিডিপি মাত্র ৫ শতাংশ। এবং মাল মুহিত বলেছেন সবাই যদি কালো টাকা সাদা করে, তাইলে এই ঘাটতি মিটে যাবে!

"কালোটাকা সাদা হওয়ার পরিমাণ আশাব্যঞ্জক না হওয়ার কথা স্বীকার করেও অন্যবারের মতো আগামী অর্থবছরেও সেই সুযোগ রাখার যুক্তি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসতে চাই। তবে শাস্তির বিধান চাপিয়ে দিয়েছি"।

শেষের "শাস্তির বিধান চাপিয়ে দিয়েছি" বাক্যটি পড়ে হাহা করে হাসতে ইচ্ছা করছে।

শাস্তিটা কি? আগামী বছর আরো সহজ শর্তে কালো টাকা সাদা করানো ব্যবস্থা রাখা!

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশে কালো টাকা নিয়ে কোনো আইন কি আছে? কালো টাকার মালিককে কেন বাবা বাছা বলে মাথায় খ্রাপজায়গায় হাত বুলিয়ে তার কালোটাকাকে বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে? কানে ধরে কেন নয়?

দিগন্ত এর ছবি

হে হে, যে আনবে তার কালোটাকা সাদা কে করবে?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

সবাই যদি কাজটা করতো, তাহলে কিন্তু সমস্যা ছিলো না। আমাদের স্কুলে ক্যাপ্টেন বদল হতো মাঝে মাঝে। প্রত্যেক ক্যাপ্টেনই আগের ক্যাপ্টেনের কুটিল ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বোর্ডে নাম তুলে মাস্টারের প্যাঁদানি খাওয়া বলে সে ক্ষমতায় গিয়ে প্রথমেই আগেরটাকে বোর্ডে তুলতো। রাজনীতিতে এসব ব্যাপারে একে অন্যের পেছনের ব্যাপারে নির্মম হলে ব্যাপারটায় একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকতো। কিন্তু ...

দিগন্ত এর ছবি

গ্রীস আর যাই হোক গরিব নয়। গ্রীসের মাথাপিছু আয় প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশী।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্রীস গরিবী যদি বাংলাদেশ, ভারত কিংবা আফ্রিকা'র স্কেলে পরিমাপ করেন, তাইলে ঠিক আছে।সে হিসেবে তারা এখনো অনেক ধণী।

কোন এক লেখায় পড়েছিলাম, জাপানীরা অনেক গরিব হয়ে গেছে, তারা গাড়ী কিনতে পারছে না, তাদের অ্যাপার্মেন্টের মালিকানা নেই।তবে যে সব জাপানীর বার্যিক আয় ২২ হাজার(সম্ভবত) ডলারের নীচে , তাদের গরিব বলা হয়।বুঝুন অবস্থা।

গ্রীস অবস্থা এমন ছিলো(এখন উন্নত হয়েছে কিনা জানি!) বাকীরা ইউরো না দিলে, কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারতো না।কারন রিজার্ভে ইউরো নাই।

দিগন্ত এর ছবি

তার কারণ গ্রীসে আমাদের দেশের মতই সরকারী কর্মচারীরা বসে বসে বেতন নেয়। আর ঋণের টাকায় গ্রীসের সরকার তাদের বছর বছর মাইনে বাড়ায়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

তাইলে পুরো ভজঘটের পিছনে তাইলে সরকারী কর্মচারীদের মাইনে!

আপনি বাংলাদেশের ব্যাপারটাই দেখুন।প্রতিবছরই বাজেট ঘাটতি বাড়ছে।এবছর যা, আগামী বছর তারচয়ে বেশি।এইটাকা আসবে কোথা থেকে? সহজ উত্তর "ঋণ করে"।কালোটাকাও সাদা হবে না আর ভবিষ্যতে ১০% হারে কালোটাকা সাদা করা যাবে- এবিধান সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকলে সুযোগ পেলে খুব কমসংখ্যাক লোকই ১৫% কিংবা ততোধিক হারে ট্যাক্সও দিবে"

বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং আপাতত ভালো সুতরাং লোন পেতে সমস্যা হবেনা।ঋণ করে বাজেট ঘাটতি পূরণের সাথে তৌফিক এলাহীর মতো আমলারা যখন-তখন "কুইক রেন্টাল" নামে মচ্ছব খুলে বসবে।তখন ঋণের বোঝা আরো বাড়বে।

এই প্রকৃয়াতে একটা দেশকে দেউলিয়া বানাতে সরকারী কর্মচারীদের দায় কতটুকু? তবে আপনি যদি নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি আর আমলাদের সরকারি কর্মচারী ধরে হিসাব করেন তাইলে অবশ্য আলাদা চাল্লু

চরম উদাস এর ছবি

কয়দিন আগে Bloomberg এ মজার কিছু আর্টিকেল পড়ছিলাম ইউরো ক্রাইসিস নিয়ে।

কৌস্তুভ এর ছবি

হুমম। আমার ব্যাঙ্কার বন্ধু এখানে (মানে লন্ডনে) একটা বড় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কে চাকরি করে, তাকে সেদিন ধরেছিলাম, যে ওহে, এই গ্রীক ক্যাচালখানা আমাকে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দাও। সেও মোটামুটি আপনি যেমন লিখেছেন তাই বলল।

আপনি আছেন কই?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কৌস্তভ।
যাউক,আপাতত রক্ষা হৈলো আমি আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ছিলাম। আপনার ব্যাংকার বন্ধু এ যাত্রা উদ্ধার করলেন। [যেহেতু তিনি মোটামুটি একি কথা বলেছেন]

আমি আপাতত য়্যুরোপে আছি।

তানভীর এর ছবি

গ্রীসে শুনলাম বাংলাদেশীদের পিটায়ে নাকি তক্তা বানাচ্ছে?! এ বিষয়ে জানেন নাকি কিছু?

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধু বাংলাদেশি না, বাদামী চামড়ার(ভারতীয় ও আরব) প্রচুর লোকজনকে গ্রীসে পিটিয়ে তক্তা বানানো হয়েছিলো।এনিয়ে কিছু টিভি রিপোর্ট হয়েছিলো, তাও মাস-কতক আগে।এখন এ বিষয়ে আপাতত মেইনস্ট্রিমে কোন নিউজ নাই।সবাই আপাতত ইউরোর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত; সেখানে গ্রীসবাসীদের খবর ঠাঁয় পায় না আর সেদেশের ইমিগ্র্যান্টরা আর দূরের বিষয়।

তবে গ্রীস থেকে দলেদলে ইমিগ্রান্ট অন্যদেশ বিশেষত স্ক্যান্ডিনেভিয়া, ফিনল্যান্ড গুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে।সেখানে বৈধপথে কাজকরার অনুমতি সময়সাপেক্ষ ‌ব্যাপার, সাথে আছে ভাষায় ‌ব্যবধান। ফলে ইমিগ্রান্টদের এক বড় অংশ এসাইলাম চেয়ে বসে।এসাইলামের নিস্পত্তি হৈতে ২/৩ বছর সময় লাগে, এর মাঝে তারা ব্ল্যাকে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে।

এইভাবে এসাইলাম স্বীকারে দেশ-সম্পর্কিত আমাদের মধ্যবিত্তীয় সম্মানবোধ আহত হয় বটে তবে এই প্রকৃয়াকে গণহারে দোষারোপ করাটা অনুচিত মনে করি।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ কতটুকু ঋণ নেওয়া যাবে তা নির্ণয় করা খুব কঠিন কিছু কি? অথচ মাল মুহিতরা তার তোয়াক্কা না করে ঋণের বোঝা বাড়িয়েই যাচ্ছে........... মন খারাপ


_____________________
Give Her Freedom!

কাজি মামুন এর ছবি

আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লাগল। গ্রীসের সাধারন মানুষের মনোভাব জানা গেল। নানা কারনে গ্রীসের প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে। আপনার গ্রীকত্রয়ী বন্ধুদের দুঃখ আমাকেও ছুয়ে গেল।
কিন্তু গ্রীসের আজকের অবস্থার জন্য দূর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিকবৃন্দের দায় কতটুকু? গ্রীসের সমস্যা কি আজকের যুগের আর্থিক ব্যবস্থার একটি ইনহেরেন্ট দুর্বলতা নয়?
ডলারের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ইউরোকে দুর্বল করতে গ্রীসের উত্তোরন ঠেকিয়ে দিতে পারে ইউএসএ-এমনটা দাবী করা হলেও প্রশ্ন উঠে, ইউএসএ গ্রীস তথা ইউরোপিয়ান ডেট ক্রাইসিস থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারে লং টার্মে?
তাছাড়া, ইউরোতে অন্তর্ভুক্তিই কেবল গ্রীসের সমস্যার জন্য দায়ী, তাই বা নিশ্চিত হওয়া যায় কি করে? জোটবদ্ধতার সুফলগুলো তাহলে শুধুই অলীক কাহিনী, বাস্তবের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই?

অতিথি লেখক এর ছবি

গ্রীসের আজকের দূরাবস্থার জন্য দূর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের যেমন দায় আছে, তেমনি এটা অনেকাংশে ঠিক এইটা আজকের যুগের আর্থিক ব্যবস্থার ইনহেরেন্ট দুর্বলতা-আমার মত।

"ডলারের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ইউরোকে দুর্বল করতে গ্রীসের উত্তোরন ঠেকিয়ে দিতে পারে ইউএসএ-এমনটা দাবী করা হলেও" এমনটা আমি দাবী করেছি কি? আমি বলতে চাইছে ইউএসএ গ্রীস সমস্যার সমস্ত দোষ ইউরোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে একটা নির্দিষ্ট উদ্দ্যেশ্য থেকে।

আপনার মুদ্রা যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একমাত্র মুদ্রা হবে, তখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই আপনার হাতে।ইউরো আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের সেই কতৃত্বকে চ্যালেন্জ করতে চাইছিলো।ইউরো'কে ঠেকিয়ে দিলে ডলার আগামী অনেকদিন আপাতত নিশ্চিন্ত।

ইউরোতে অন্তর্ভুক্তিই কেবল গ্রীসের সমস্যার জন্য দায়ী, তাই বা নিশ্চিত হওয়া যায় কি করে?

না নিশ্চিত হওয়া যায় না, এবং আমি তা বলিই নাই।গ্রীসের আজকের সমস্যায় বহু বছরের জের।ইউরোতে অন্তর্ভুক্তি সেটা সেই দুর্যোগের আগুনে ঘি ঢেলেছে।

"জোটবদ্ধতার সুফলগুলো তাহলে শুধুই অলীক কাহিনী, বাস্তবের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই?"

তা কেন হবে।জোটবদ্ধতার অনেক সুফল আছে।ইউরোপে শেনগেন ভিসা চালুর পর দেশের সীমারেখা উঠে গেছে।পর্যটনে আয় বেড়েছে। মানুষে মানুষে ইন্টার্যাকশন বেরেছে।এক দেশের শ্রমিক অন্যদেশে সহজেই মুভ করতে পারছে।

তবে অর্থনৈতিক জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।বৃহত্তর অর্থনীতির সাথে গরীব অর্থনীতির চলাটা কঠিন।সুতরাং ভবিষ্যতে যা হবার হবে, এই ভেবে জোটে এন্ট্রি দিলে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি।

দিগন্ত এর ছবি

"এক দেশের শ্রমিক অন্যদেশে সহজেই মুভ করতে পারছে।"

সবাই কিন্তু এটা ভালভাবে নেয়নি বা নিচ্ছে না। সমস্যাও কম বাড়ে নি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

বিশ্লেষণের পেছনের কারণ টা পড়ে বুঝলাম, সত্যিই অদ্ভুত গাধার পীঠে চলেছে স্বদেশ।

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

চলুক

অনিশ্চিত এর ছবি

লেখা চমৎকার লাগলো কিন্তু অনিশ্চিত নামে যে আরেকজন আছে! হে হে হে...

গ্রিসের দুই রাজনীতিক সেদিন টকশোতে যে মারামারিটা করলো, তাতে মজাই লাগলো- 'আমরা নই একা, এই বিশ্বে'!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।