প্রত্যেক বৎসরের ন্যায় এই বৎসরও যথাসময়ে আদুমিয়ার ইশকুলে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হইয়াছে। সে যথারীতি দুরু দুরু বুকে ইশকুলের বারান্দায় টাঙ্গানো নোটিশবোর্ডটার সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইল। সহপাঠিরা তাহাকে দেখিয়া বলিয়া উঠিল, “এইবারে নিশ্চয়ই তুমি উপরের কেলাশে উঠিয়াছ!” শুনিয়া আদুমিয়া আরও কিছুটা আশায় বুক বাঁধিয়া নোটিশবোর্ডে নিজের নামখানি খুঁজিতে লাগিলো।
তাহার কেলাশের এমন অনেকের নাম সে খুঁজিয়া পাইল যাহারা তাহার তুলনায় ঈষৎ দুর্বল ছাত্র। সে আরও আশান্বিত হইয়া তাহার নামখানি খুঁজিতে লাগিলো।প্রায় শতখানেক নাম। আধা ঘন্টাটাক চেষ্টা করিয়া সে হাল ছাড়িল। নাহ, এইবারও তাহার নামখানি এই ফলাফলের তালিকায় পাওয়া গেলনা।
পাশ দিয়া তাহার শ্রেণীশিক্ষক যাইতেছিলেন। তাহাকে দেখিয়া আদুমিয়া হাউমাউ করিয়া ক্রন্দন জুড়িয়া দিল। শিক্ষক মহাশয় যাহারপরনাই বিব্রত। তিনি বলিলেন, “বাবা আদু, বিশ্বাস কর, আমি এইবারো তোকে উপরের কেলাশে উঠাইবার বিষয়ে প্রধানশিক্ষক মহাশয়ের নিকট সুপারিশ করিয়াছিলাম।”
“তাহা হইলে আমার নাম নাই কেন, মাস্টার মশাই?” আদু ক্রন্দন সামলাইয়া বলে।
শিক্ষক মহাশয় আমতা আমতা করিয়া জবাব দিলেন, “প্রধানশিক্ষক মহাশয় বলিয়াছেন, উপরের কেলাশে আসনসংখ্যা সীমিত। সেই কারণে তোর পরীক্ষায় সকল বিষয়ে পাশ করা সত্ত্বেও সামনের বৎসর আগের কেলাশেই পড়িতে হইবে।”
আদু মিয়া কথা হারা্ইয়া ফেলিল। সে বিগত দুই বৎসর বার্ষিক পরীক্ষায কোন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়নাই। তথাপি একই কেলাশে তাহাকে পড়িতে হইতেছে! আর তাহার কারণ হিসেবে দেখানো হইতেছে উপরকার কেলাশে আসন সংখ্যার অপ্রতুলতার কথা। সে ফিবৎসর আদা-জল খাইয়া পরীক্ষার প্রস্তুতি লইয়া থাকে, পরীক্ষায় কম-বেশী সকল প্রশ্নের সঠিক জবাব লিখিয়া আসে, তথাপি ফলাফল তথৈবচ!
আদু মিয়া ক্রন্দন থামাইয়া শিক্ষক মহাশয়কে প্রশ্ন করিল, “মাস্টার মশাই, আমি যদি বাটী হইতে একখানা আসন লইয়া ইশকুলে আসি, তাহা হইলে কি প্রধানশিক্ষক আমাকে উপরের কেলাশে বসিতে দিবেন? আমি যে আগের কেলাশে আর যাইতে চাহিনা.. সকলে বিস্তর তামাশা করে…।” আদু শার্টের আস্তিনে চক্ষু মুছিল।
শিক্ষক মহাশয় এইরূপ প্রস্তাবের জন্যে কোনরূপেই প্রস্তুত ছিলেননা। তিনি জবাব না দিয়া হন হন করিয়া হাঁটিয়া শিক্ষকবৃন্দের বিশ্রামকক্ষে অন্তর্হিত হইলেন। আদু কতকক্ষণ নির্বোধের মতো সেই দিকে তাকাইয়া থাকিয়া বাজারের উদ্দেশ্যে পা বাড়াইলো। অদ্য একখানি আসন কিনিয়া সে প্রধানশিক্ষকের সহিত সাক্ষাৎ করিবে মনস্থির করিল। হঠাৎ তাহার মনে হইলো, উপরকার কেলাশের জন্যে কীরূপ আসন ক্রয় করা উচিৎ?
আদুমিয়া এই প্রশ্ন করিবার জন্যে কাহাকেও তাহার সন্নিকটে পাইলনা। পাঠকবৃন্দের কাহারো যদি জানা থাকে, অনুগ্রহপূর্বক আদুমিয়াকে জানাইবেন। আপনার আশেপাশে নিশ্চয়ই এইরূপ দুই-একজন আদুমিয়াকে পাইবেন।
- কাজী মিতুল (বুয়েট '৯৮ ব্যাচ)
মন্তব্য
সুন্দর হইছে।
মনের রাজা টারজান
খুব ছোট লেখা দিয়েছিস! সচলে এটাই কি তোর প্রথম পোস্ট?
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/44731
ভাইয়া কি ইইই'র নাকি??
না, ছিভিল (হা হা)
পড়ে বেশ আরাম পাইলাম।
ছোট্ট কিন্তু সুন্দর
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
আদু মিঞা'র জন্য বুদ্ধি দিছিলাম... বুদ্ধি (গুড়) হইছিল বইলা কেউ খাইয়া ফালাইছে(প্রকাশের পর)...
এহন আর পারুম না... আদু মিঞা আদি বুদ্ধিতে খুঁইজা বাইর করুক ।
কড়িকাঠুরে
এইডা কিন্তু ঠিক হইল না, কইলাম।
অরে পাশ করাইতেই লাগব।
সেকেণ্ড লিস্টি ছাড়েন।
পছন্দ হইছে
নতুন মন্তব্য করুন