প্রেম তুমি কি ?
প্রেম - এর নিজস্ব কোন রং হয় না মনে হয়।আর এ কারণেই যে কোন বর্ণ বা রঙকে সে একেবারেই সহজে আঁকড়ে ধরতে পারে। তার পরও অপরকে রাঙিয়ে দেয়ার এক অশরীরী ক্ষমতা আছে তার। সেই রং কখনও উজ্জ্বল আবার কোথাও মলিন।
প্রেম একেবারেই অন্ধ বোধহয় সে কারণেই স্থান, কাল, পাত্রের কোন বালাই এর কাছে নেই।অনেক নিচু বংশের হয়েও অনেক উঁচু বংশের কারো সাথে প্রেমের নিদর্শন যেমন আছে ঠিক তার বিপরীতটাও আমাদের গোচরীভূত হয় সবসময়। প্রেমের সমীকরণ একেবারেই এলোমেলো। ঠিক মেলানো বড় কঠিন। অনেক বছর প্রেম করার পর যেমন বিচ্ছেদ হয়েছে ক্ষণিকের প্রেম আজীবন অম্লান হয়েছে এমনটিও অনেক।
প্রেম এক অদ্ভুত জিনিস। একে ধরা যায়না কিন্তু সে আপনাকে ঠিকই ছুঁয়ে যায়, একে খাওয়া যায় না কিন্তু সে আপনার মনের ক্ষুধা মিটিয়ে চলে অবিরাম, এর নিজের কোন গতি নেই কিন্তু আপনাকে সচল রাখার এক মোহনীয় চালিকা শক্তি আছে তার।
প্রেম যেন অচেনা কোন শহরে হারিয়ে যাওয়া এক আগন্তুক। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে পথ হারিয়ে কোন এক অচেনা গলির মোড়ে অলস ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকা পথিক। কাউকে সে খুঁজে ফিরেছে অবিরাম। গলির ভেতরে ঢুকবে, নাকি একটু উঁকি দিয়ে ভেতরটা জানার একটা ধৃষ্টতা সে দেখাবে, নাকি সিনায় বল নিয়ে পাঁজর উঁচু করে কাউকে বলবে – ‘এই যে শুনুন আমি না মানে আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি’।
প্রেমের উপস্থিতি যেন স্বর্গীয় কোন অনুভূতি। সে তার আবেগের বাহু মেলে মানুষকে কল্পনাপ্রবণ করে তোলে। কল্পনার জমিনে হেটে হেটে তার সাথে প্রকৃতির এক নিবিড় বন্ধুত্ব তৈরি হয়। খালি চোখে যা দেখা যায় ঠিক সেটাই একটু ভিন্নভাবে ধরা পড়ে প্রেমের কাছে।দূর্বা ঘাসের উপর শিশির ফোঁটা মনে হয় যেন প্রেয়সীর নাকফুল, কৃষ্ণচূড়ার ফুল মনে হয় যেন তার বুকের জমিন, লম্বা তেলাকচু ফল যেন অলংকার, ভেসে যাওয়া মেঘ যেন তার কালো চুল।
প্রেম অনেকের কাছে এক গোলকধাঁধা যার আবর্তে পড়ে অনেকে মোহবিসটো হয়ে পড়ে। তখন দিকশুন্য হয়ে সে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির বলয়ে। এই বলয় থেকে বের হয় তখনই যখন মোহভঙ্গ হয়।
প্রেম আবার কখনও খুব গোছালো। এলোমেলো ঘরের অগোছালো টেবিলের অলস ভঙ্গিতে পড়ে থাকা নোটবুকের পাতা ভরে চিঠি অথবা অনেক দিন ধরে সেলফে পড়ে থাকা ধুলার চরে পুরু প্রমের কবিতার বইগুলোকে একটু উল্টে পাল্টে আঙ্গুলের ছোঁয়ায় জীবন্ত করে তোলে সে। অনেক দিন ধরে নিজের উপর করে চলা নানা অনিয়মকে হঠাৎ একটি নিয়মের জালে তার নান্দনিক রশি দিয়ে সে বেঁধে ফেলে। নিয়ম ভাঙ্গার ওই নিয়ম থেকে নিয়মিত একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার একটি রুটিনের তালিকায় নিবিষ্ট করে ফেলে এই প্রেম।
প্রেম কখনও খুব আলুথালু। তবে তার এই রূপটি স্বরূপে আবির্ভূত কেবল তখনই যখন অনেক দিন ধরে কারোর উপর সে তার অদৃশ্য উপস্থিতির ভর দিতে চেয়েও ব্যর্থ অথবা কারো মনের ঘরে অদৃশ্য হয়ে স্বেচ্ছায় ঢুকে গিয়ে অন্দরমহলের ওই কামরার উপস্থিত সেই কাঙ্ক্ষিত জনের কাছে হয়ে পড়ে নিতান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত আগমন। তখনই ঝাঁকড়া চুল , চোখের কার্নিশে জমা কালি যেন এক চিমটি সুরমা হয়ে ভেসে ওঠে , লম্বা আলখেল্লা আর কাঁধে থলি ঝুলিয়ে তার আপন মনে অন্য ভুবনে বিচরণ।
প্রেম বড় দুঃসাহসী। অনেক সাহস সঞ্চারী এক নির্ভীক। কি এক ক্ষমতা বলে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে তার এই অভিযান সে চালু রাখে। সকল ভয় শঙ্কাকে একেবারেই পেছনে ফেলে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া , উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু, নিউজিল্যান্ড থেকে আলাস্কা সকল দূরত্বকে জয় করে সে চলে তার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে। তার এই চলার পথ হতে পারে বন্ধুর তবে সেটাকে সাবলীলভাবে গ্রহণ করে এই সঙ্কুলতাই হয় তার সকল প্রেরণার উৎস। প্রেমের এই বাঁধাই তার প্রেরণা যেখান থেকে জমে সাহস আর সাহসকে খরচ করেই তার পথচলা।
প্রেমের উপস্থিতি বড় রহস্যময় । অনেকের কাছেই খুব সহজেই সে ধরা দিয়েছে আবার কারো কাছে যেতে গিয়েও দু পা পিছিয়েছে। কারো কাছে পৌঁছে গিয়েও পরক্ষনেই আবার তাকে ফিরে আসতে হয়েছে। কেউ তাকে কাছে পেয়ে জীবনের পরম পাওয়া বলেছে আবার অনেকে হারিয়ে পরে অনুশোচনা করেছে। অনেকে এখনও তার উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা ভাবছে আবার কেউ কেউ একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বলে জীবনের হার্ড ডিস্কের একটি বন্ধ করা ফোল্ডারে শক্ত ছাড়-শব্দ দিয়ে আজীবনের জন্য আটকিয়ে রেখেছে। আর ছাড় শব্দ ভুলে গেলেও খুব বড় কিছু হারাবে না বলেও একটা হেঁয়ালি তার ভিতরে ভিতরে খেলা করেছে।
প্রেম তাই কারো কারো কাছে নান্দনিক একটি সকাল আবার অনেকের কাছে ফ্যাকাসে ভ্যাপসা কোন ক্লান্তিময় দুপুর। বহুরূপের , নানা রঙয়ের , বহু যুগের , হরেক মানুষের , অনেক আশার, নানা হতাশার এই কালজয়ী প্রেমকে তাই বলতে ইচ্ছে করে- প্রেম তুমি কি?
অমি_বন্যা
মন্তব্য
তুমি কি? তুমি কি? ভাই একটা কিছু কন!! ভাই না বিবাহিত?
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
আসলেই তুমি কি? ভাই না বিবাহিত? নাকি চিরকুমার
চমৎকার বিশ্লেষন।লেখা চালিয়ে যাও।
ধন্যবাদ আপনাকে। লেখা চালু আছে।
সৌরভ কবীর
আহা প্রেম তুমি কী বলতো?
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
আগে প্রেমে পড়েন তার পরে কইতাছি।
মানুষ প্রেমকে মহিমান্বিত করেছে! প্রেমের জয় হোক!
_____________________
Give Her Freedom!
প্রেম হোক চিরঞ্জীব ।
আইতাছি, খাড়ান। প্রেম তুমি কি এই প্রশ্নের উত্তর নিয়া। গত এক মাস ধরে পেরেম নিয়া গবেষণা করতেছি, শেষ প্রায়।
অপেক্ষায় রৈলাম...........
কড়িকাঠুরে
আর তর সইছেনা উদাস ভাই, তাড়াতাড়ি উত্তর নিয়া হাজির হন।
একজন সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে পরিচয় এবং তাকে অসুন্দর হিসেবে আবিস্কার করার মধ্যবর্তী সুন্দর সময়ের নাম 'প্রেম'-জন ব্যারিমোর
_______________
"এসো এসো এসো আজ জয়ের বন্দরে,
হাত দুখানি দেখ মেলেছি ধরে,
প্রেম পুণ্য মায়া আর মমতায়,
একাকার রব ধরণী জুড়ে,
বিপ্লবী সুর অস্পষ্ট বর্ণ,
ভালবাসার আকুলতা,
থেমে থেমে জ্বলে"
__অভয়
প্রেম প্রেমই।
প্রেম প্রেমই।
ভাল বলেছেন প্রদীপ্ত দা। জয় হোক প্রেমের।
নতুন মন্তব্য করুন