এক.
কিছুদিন পরপর একটু আধটু ঘুরে ফিরে না ফেলে আমাদের শরীর এবং মনে ক্লান্তির ছাপ পড়ে; বহুদিন ধরেই আমরা এই রোগে আক্রান্ত। অনেকদিন হয়ে গেল আমরা বিরিশিরি ঘুরে এসেছি তাই রোগের তীব্রতা বড্ড বেড়ে গিয়েছিল তাই দাদা প্রেসক্রিপশন দিলেন ট্যুরে যেতে হবে। কি আর করা! রোগ তো সারাতেই হবে! তাই দাদার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এবারের গন্তব্য মেঘের আলয়--- মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। শিলং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে খাসি পাহাড়ে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। মেঘের মাঝে মাথা গুঁজে থাকা এই জনপদে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর পরিমাণে। এখানে রয়েছে জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারার সমারোহ। স্কটল্যান্ডের সাথে মিল থাকার কারণে এটি "প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড" নামে পরিচিত।
সবাই ছুটি ম্যানেজ করে ফেললাম খুব সহজে শুধুমাত্র পলাশ এবং রনি বাদে; আহারে বেচারারা! সিদ্ধান্ত নিলাম রওনা হব ১১জুন, ২০১২ তে, সেই মোতাবেক ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু জমা দিলাম এবং কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়া আমদের গ্রুপের সবাই(৭ জন) ভিসা পেয়ে গেলাম। অবশেষে এলো ১১জুন, ২০১২; অন্য সবসময়ের থেকে এবার উত্তেজনা কিছুটা কম কারণ সাথে বন্ধু আল-আমিন, রুবেল, রনি, পলাশ এবং মনিকা নেই বলে।
দুই.
১০ ই জুন,২০১২, রবিবার রাত পৌনে দশটার দিকে আমরা সবাই কমলাপুর স্টেশন এ হাজির, উদ্দেশ্য উপবন এক্সপ্রেস এ করে সিলেটের দিকে রওনা হওয়া। রাত নয়টা বেজে পঞ্চাশ মিনিটে ট্রেনে ছাড়ল; সবার মনে ব্যাপক আনন্দ; বন্ধু রুহিন তো ঘুমাতেই পারল না সারারাত, গেয়ে চলল বেসুরা গলায় গান। রুহিনের বেসুরা গলার গান সত্ত্বেও ট্রেন এগিয়ে চলল সুর সৃষ্টি করে।
তিন.
১১ ই জুন, সোমবার ভোর ৫ টা বেজে ১৫ মিনিট; আমরা সিলেট স্টেশনে। স্টেশনে নাস্তা-পানি শেষ করে আমরা তামাবিলের দিকে রওনা হলাম আগে থেকেই ঠিক করে রাখা মাইক্রোতে করে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, আমাদের গাড়ি ছুটে চলছে রাস্তার দুপাশের সবুজ মাঠ, পাহাড়, হাওড়কে পিছে ফেলে। প্রকৃতির রূপ দেখে আমদের মধ্যে একজন বলেই ফেলল, “ ক্যামেরা এবং চোখের পাতা বন্ধ করলেই আফসোস করতে হবে” বিশ্বাস না হলে কিছু ছবি রইল সবার জন্য----
সিলেট তামাবিল সড়ক
সিলেট তামাবিল সড়ক
তামাবিল
বিশ্বাস হল তো! যাহোক ঘড়িতে ঠিক নয়টা বাজে আমরা এখন তামাবিলে। অনেক শান্তির মধ্যে একটু ভোগান্তি; ঢাকা থেকে ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে আসি নাই। কি আর করা! রুহিন এবং দাদাকে ছুটতে হল বেশ কিছুটা দূরে জৈন্তা উপজেলা বাজারে সোনালী ব্যাংকে। ওরা ফিরে এল সাড়ে দশটার দিকে। এবার শুরু হল পাসপোর্টে সিল-ছাপ্পর মারার কাজ। খুব অল্প মধ্যেই সব কিছু শেষ হল। এবার মাতৃভূমি ছেড়ে ভিনদেশের মাটিতে পা রাখবার পালা।
চার.
নো ম্যান্স ল্যান্ড পার হয়ে আমরা এখন ডাউকী সীমান্তে। আবারো শুরু হল পাসপোর্ট সিল মারার কাজ। সব কাজ শেষ করে ১৫০০ রুপিতে একটি গাড়ি ভাড়া করে আমরা ৭ জন রওনা হলাম শিলং এর উদ্দেশ্য। পাহাড়ী রাস্তা, এক পাশে খাদ এবং আর এক পাশে পাহাড়, সবার মধ্যে গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণ বুক ভরে নিঃশ্বাস কিংবা আশেপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ক্যামেরা বন্দী করবার ইচ্ছা জাগ্রত হলেও খারুস ড্রাইভারটির কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। নিরুপায় আমরা তাই চোখের পাতা যতটা সম্ভব কম ফেলে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। গাড়িতে বাজছে পুরনো সব হিন্দি গান আর বাইরের সবুজ পাহাড়--- সব মিলিয়ে পরিবেশটি মন্দ না। কিছুক্ষণ পরপর আমরা হারিয়ে যাচ্ছি মেঘের রাজ্যে।
ডাউকী-শিলং সড়ক
ডাউকী-শিলং সড়ক
ডাউকী-শিলং সড়ক
ভারতীয় সময় দুপুর দুইটা ত্রিশ মিনিট; আমরা এখন পুলিশ বাজার, শিলং। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে গ্রীষ্মকাল, তাই প্রচুর টুরিস্ট এখানে আসে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে, এই কারণে আমাদের হোটেল খুঁজে পেতে বেশ সময় লেগে গেল। অবশেষে আমরা ‘Stay in Guest House’ এ উঠলাম । হোটেল এ উঠে আমি এবং রুহিন ছুটলাম স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায়(এস বি আই); উদ্দেশ্য ডলার ভাঙানো। এস বি আইয়ে ডলার ভাঙানোর সময় হচ্ছে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর তিনটা, আর এখন বাজে ৪ টা, তাই ব্যর্থ। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে একটা দোকান থেকে ডলার ভাঙাতে পাড়লাম কিন্তু অনেক কম মূল্যে। আফসোস হল কেন ডাউকির এস বি আই থেকে ডলার থেকে রুপিতে পরিবর্তন করিনি। যাহোক দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে পুলিশ বাজারে অবস্থিত ‘Meghalaya Tourism Development Corporation Ltd.’ এর দিকে রওনা হলাম পরের দিনের চেরাপুঞ্জি ট্যুরের জন্য টিকেট বুকিং দেবো বলে। টুরিস্ট বাসের প্রত্যেকটি সিটের মূল্য ২৩০ রুপি; আমরা ৭ টি টিকেট কিনে হোটেলে ফিরে আসলাম। এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে বাকিটা সময় পার করে দিলাম। পরের দিন সকাল ৮ টায় গাড়ি এবং দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি সবমিলিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।
পাঁচ.
সকাল ৮ টার মধ্যে সকালের নাস্তা করে আমরা ‘MTDCL’ এর অফিসে গিয়ে হাজির হলাম। ঠিক ৮ টার সময় বাস ছাড়ল। ঘণ্টা খানিক জার্নি করবার পরে আমরা চেরাপুঞ্জি গিয়ে পৌঁছলাম। চেরাপুঞ্জিতে পৌঁছাতেই বৃষ্টি আমাদের রেইন কোট এবং ছাতা বের করবার আদেশ দিল এবং মনে করিয়ে দিল এটা পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের এলাকা। ১৯৭৪ সনে এখানে ২৪৫৫.৩ মিমি বৃষ্টিপাত হয় যা কোন এলাকায় এক বছরে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত । ১৯৫৫ সনের ১৬ ই জুন এখানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৬৩ মিমি হয়েছিল।
চেরাপুঞ্জিতে আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছিলাম----
১. Duwan Sing Syem View point:
মেঘের কারণে আমরা এখানে তেমন কিছু দেখতে পাইনি।
২. Eco Park:
Eco Park
Eco Park
Eco Park
Eco Park
৩. Mawsmai cave:
গুহাটি অসাধারণ এবং কিছুটা ভয়ংকর। কিছু জায়গায় গুহাটি এত সরু যে আমাদের প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে পার হতে হয়েছিল।
গুহার মুখ
গুহার ভিতরে
৪. Maw Trop
Maw Trop নামের এই দৈত্যাকার পাথরটি খাসিয়াদের উল্টানো চোঙাকৃতির ঝুড়ির মত। প্রচলিত লোককাহিনী মতে পাথরের ঝুড়িটি একটি অশুভ দৈত্যের, যে নাকি মানুষের ক্ষতি সাধন করে বেড়াত। দৈত্যটির হাত থেকে মুক্তির জন্য মানুষ তাকে ধারালো লোহা এবং পেরেক মিশ্রিত খাবার খেতে দেয়, এতে করে দৈত্যটির মৃত্যু ঘটে। দৈত্যটি যে ঝুড়ি ফেলে গিয়েছিল সেটি ২০০ ফুট উঁচু পাথরে পরিণত হয়।
অশুভ দৈত্য
Maw Trop থেকে তোলা পাহাড়ী রাস্তা
৫. Thangkharang Park:
Thangkharang Park থেকে তোলা
৬. Nohkalikai falls:
Ki Likai নামে একটি একজন যুবতী মহিলা ছিল, তার একটি কন্যা সন্তান ছিল। মহিলাটির ২য় বিয়ে হয়। লোকটি ছোট মেয়েটিকে খুব ঘৃণা করত। মহিলা একদিন মাঠ কাজ করতে গেলে লোকটি ছোট মেয়েটিকে মেরে সুপারি রাখার ঝুরির মধ্যে ঢুকিয়ে ঢাকনা আটকিয়ে দেই। মহিলা কাজ ফিরে এসে দেখে তার স্বামী তার জন্য রাতের খাবার রান্না করে রেখেছে, এতে সে বিস্মিত হয়। তারপরেও সে কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়া খাবার গ্রহণ করে। মহিলাটি পরে ঝুরির মধ্যে থেকে বের হয়ে আসা তার মেয়ের আঙুল দেখতে পায়। সহ্য করতে না পেরে ঝর্নার পানির সাথে লাফিয়ে পরে আত্মহত্যা করে। সেইথেকে ঝর্নাটি ‘Nohkalikai falls’ নামে পরিচিত।
Nohkalikai falls
ছয়.
চেরাপুঞ্জি থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল চারটা বেজে গেল। দুপুরের খাওয়া পথেই খেয়ে নিয়েছিলাম তাই সরাসরি রুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হলাম। একটু আধটু মার্কেটে ঢুঁ মেরে হোটেল এ ফিরে গেলাম। এদিনও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম কারণ আগামীকাল আবার সেই ৬টায় উঠতে হবে শিলং সিটি ট্যুরের জন্য। শুভ রাত্রি!
সাত.
১৩ জুন, ২০১২
আগের দিনের মত আজকে সকাল ৮ টার মধ্যে আমরা মেঘালয় ট্যুরিজমের অফিসের সামনে চলে এলাম বাস ধরার জন্য। আগের দিন আমরা টিকেট কেটে রেখেছিলাম, প্রতিটি টিকিটের মূল্য ছিল ১৭০ রুপি। যাহোক সকাল ৮:৩০ মিনিটে বাস ছাড়ল। এই দিন আমরা যেসব স্পটে ঘুরেছিলাম---
১. Haydari Park
Haydari Park আসামের গভর্নরের স্ত্রী Lady Haydari এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। প্রথমেই আমরা এই পার্কটিতে আসলাম। এখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে। এত কষ্ট করে ভিনদেশে এসে এধরণের পার্ক আমাদের মধ্যে তেমন উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারল না। সবার মুখেই একটু আধটু বিরক্তির ছাপ দেখা গেল।
২. Don Bosco Church
এককথায় অসাধারণ! আমরা বেশ কিছুক্ষণ এখানে কাটিয়ে দিলাম এবং মুগ্ধ হয়ে এর ভেতরে এবং বাইরে দেখতে লাগলাম। ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ তাই শুধুমাত্র বাইরের কিছু ছবি রইল পাঠকদের জন্য---
Don Bosco Church
Don Bosco Church
Don Bosco Church
৩. Ward’s Lake:
চারিপাশ বাগান দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম লেক। লেকটি বেশ সুন্দর। কিছু ছবি রইল সবার জন্য---
৪. Golf course:
শিলং Golf Course টি ৫২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে ২২টি হোল আছে।
৫. Elephant falls:
খাসিয়ারা এই ঝর্নাটিকে ‘তিন ধাপের ঝর্না’ বলত। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা এর নাম দেয় ‘এলিফ্যান্ট ফলস’ কারণ ঝর্নাটির বামা পাশে হাতির মত একটি পাথর ছিল। ১৯৮৭ সালের ভূমিকম্পে পাথরটি ধ্বংস হয়ে যায়।
এলিফ্যান্ট ফলস
এলিফ্যান্ট ফলস
৬. Shillong peak:
শিলং পিক মেঘালয়ের সব থেকে উঁচু স্থান--- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৬৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এখানে এসে আমরা কিছুক্ষণ পুরো মেঘালয়কে দেখার চেষ্টা করলাম। এখানে ৫০ রুপির বিনিময়ে আমরা খাসিয়া রাজা রাণীর পোশাক পরে কিছুক্ষণের জন্য নিজেদেরকে প্রাচীনকালে নিয়ে গিয়েছিলাম।
৭. State Museum
সিটি ট্যুরের শেষ স্পট। জাদুঘরটিতে মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরার অনেক তথ্য রয়েছে।
আঁট.
দুপুরের মধ্যেই আমরা হোটেলে ফিরে আসলাম।লাঞ্চ করে আমরা শপিং এ ব্যস্ত হয়ে পরলাম। দুর্গম এলাকা বলে এখানে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি। তবে চকলেট খুব সস্তা। আর কেউ যদি একটু আধটু ড্রিঙ্ক করেন তবে তো তার জন্য জান্নাত। এখানে দুই হাত পর পর ওয়াইন শপ পাওয়া যায়। যাহোক শপিং করার সময় আমরা পরেরদিনে ট্যুরে যাব কি না তা নিয়ে দ্বিধায় পরে গেলাম কারণ আমাদের মধ্যে দুই একজন এরকম কঠিন ট্যুরের ধকল আর সইতে পারছিল না। যাহোক শেষে সবাই একমত হলাম যে বেড়াতে এসে একদিন বসে থাকার মানে হয় না। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য--- Mawsynram.
নয়.
Mawsynram শিলং এর ৫৫ কিমি. দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। অনেকের মতে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত এখন এখানেই হয়। Mawsynram এ খুব বেশি টুরিস্ট যায় না তাই আমাদেরকে ২৯০০ রুপির বিনিময়ে একটি টাটা সুমো ভাড়া করতে হয়েছিল। যাহোক এদিন সকাল নয়টায় আমরা রওনা হলাম, আমাদের ড্রাইভারের নাম ধিরাজ সিং। ধিরাজ সিং কিছুক্ষণ চালানোর পরে গান ছেড়ে দিল। বাইরে পাহাড়ের গায়ে বৃষ্টি পড়ছে এবং গাড়ির ভেতরে গান বাজছে —আমরা বলেই ফেললাম, ‘ এর থেকে সুন্দর কি আর কিছু হতে পারে!’
এদিন আমরা যা দেখেছিলাম—
১. Mawjungbuin Cave:
২. Rit Mawksir:
কুয়াশার কারণে এখানে আমরা কিছুই দেখতে পারিনি। তারপরেও-
৩. Khreng Khreng:
৪. Jakrem or Hot spring:
এখনে পাহাড় থেকে যে পানি আসে তা খুবি গরম। অনেকের মতে এই পানি ভিন্নরকমের রোগ নিরাময়ে সক্ষম। জায়গাটি খুবি সুন্দর। নিজ চোখেই না হয় দেখে নিন--
ব্রিজ
Hot spring
Hot spring
Hot spring
হট-স্প্রিং থেকে ফেরার পথে আমরা খাসিয়াদের হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম। আশেপাশে বাড়িঘর কিছু নাই, শুধু পাহাড় আর পাহাড় এর মধ্যে ছোট একটি হোটেল। খাবারের মেন্যু হচ্ছে—ভাত, সবজি এবং ডিম ভাজি। সবকিছু মিলিয়ে বলতে গেলে একটি শব্দই মুখ থেকে আসে—অসাধারণ! বিকেল ৫ টায় আমরা শিলং এ ফিরে আসলাম। আগামীকাল রওনা হব তাই শেষ শপিং করে নিচ্ছে সবাই।
দশ.
সকাল নয়টা আমরা Mawalynnong(The cleanest village) উদ্দেশ্যে রওনা হব সেখান থেকে ডাউকীতে। মেঘালয় ট্যুরিজমের মাধ্যমে আমরা ধিরাজ সিং এর টাটা সুমোটি পুনরায় ভাড়া করলাম। সকাল নয়টায় শুরু হল Mawalynnong যাত্রা। Mawalynnong গ্রামটি শিলং থেকে ৯০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। এখান থেকে ডাউকির দূরত্ব ৩৫ কিমি এর মত। Mawalynnong পৃথিবীর সবথেকে পরিষ্কার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এখানে কোন টুরিস্ট যদি ময়লা ফেলে তবে গ্রামের মানুষ সাথে সাথে তা পরিষ্কার করে ফেলে একটি হাসি দেয়। এই গ্রামে শিক্ষার হার শতভাগ।
এদিন আমরা যা দেখালাম—
১. Rangin View Point:
Rangin View Point থেকে তোলা
Rangin View Point থেকে তোলা
২. Riwai Root Bridge or Living Root bridge
Riwai Root Bridge
Riwai Root Bridge
৩. Mawalynnong village:
ক্লিনেস্ট ভিলেজ নামে পরিচিত। এখানে কেউ যদি একটি কাগজের টুকরাও ফেলে তবে গ্রামে বাসী তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলবে।
৪. Balancing Rock:
বিশাল বড় একটি পাথর প্রায় একটি বিন্দুর উপরে তার ভারসাম্য বজায় রাখছে।
এগার.
ব্যালান্সিং রক দেখে আমরা ডাউকির দিকে যাওয়া শুরু করলাম। বেলা বাজে তিনটা, তাড়াতাড়ি ডাউকি যেতে হবে তাই ধিরাজ সিং একটি শর্টকাট পথে গাড়ি চালানো শুরু করল। ফিরছি—সবার মন খারাপ, চুপ করে বসে আছে সবাই। হঠাৎ ঝর্ণার পানির তীব্র শব্দ। বামে তাকিয়ে দেখি মেঘালয় ইন্টারন্যাশনাল ফলস—সবাই বলে উঠলাম--গাড়ি থামাও। গত কয়েকদিনে অনেক ঝর্ণা দেখেছি কিন্তু এর থেকে বড় এবং সুন্দর এবং বড় ঝর্ণার একটিও দেখি নাই। পথে আরও কিছু ঝর্ণা দেখেছিলাম, সময় না থাকার কারণে সেগুলোর ছবি চলন্ত গাড়ি থেকেই নিতে হল। সবশেষে দেখলাম ডাউকী নদীর উপরে ঝুলন্ত ব্রিজ।
মেঘালয় ইন্টারন্যাশনাল ফলস
নাম না জানা ঝর্ণা
বার.
আমরা এখন ডাউকিতে, সেখান থেকে তামাবিল। মাইক্রো অপেক্ষা করছে আমদেরকে আবার ব্যস্ত জীবনে ফিরিয়ে নেবার জন্য। মাইক্রোতে উঠে বসলাম, মাইক্রো ছুটতে লাগল ‘ছুটে চলার জীবন’ এর দিকে।
ধন্যবাদ সবাইকে--
তন্ময়_ আহসান এবং সুব্রত দাশ
* কারো কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে--
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6b%74%6f%6e%6d%6f%79%40%66%61%63%65%62%6f%6f%6b%2e%63%6f%6d%22%3e%6b%74%6f%6e%6d%6f%79%40%66%61%63%65%62%6f%6f%6b%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))
মন্তব্য
ভালো লাগলো লেখাটি। ছবিগুলো আরো ক্লিয়ার হলে সুন্দর লাগতো। নাকি কুয়াশা এর জন্যে এরকম?
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
বেশ তথ্য বহুল।ভালো লাগলো।
তামাবিল সড়কের একই ছবি দুবার এসেছে। আর ছবিগুলোকে এতো শার্প করেছেন কেনো?
খুবই সুন্দর জায়গা,অনেক এনজয় করেছেন বুঝাই যাচ্ছে। আচ্ছা খরচ ক্যামন হয়েছিলো? আর ভিসা পাওয়া কি সহজ? মেইল না করে এখানেই জিজ্ঞেস করলাম,হয়তো অনেকেরই উপকার হবে জেনে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
খুব ভালো একটি অসুখ হয়েছে আপনার। তবে, এই অসুখের ঔষধের দাম অনেক। আপনার অসুখের বদৌলতে চমৎকার সুন্দর একটি পোস্ট উপহার পেলাম। বাবার কাছে শিলং এর অনেক গল্প-কাহিনী শুনেছি। দেশ ভাগের আগে ওখানেই ছিলো তাঁর কর্মস্থল। যাওয়া হয়নি কখনো। ভালো লাগলো আপনার ভ্রমণ বর্ণনা। সাথে চমৎকার সুন্দর ছবিগুলো। ধন্যবাদ আপনাকে---
এনায়েত
১. ইকো পার্ক বানিয়ে জায়গাটার Flora, Fauna আর সাবেক অধিবাসীদের কতোটা ক্ষতি করা হয়েছে জানতে ইচ্ছে করে। আপনার পক্ষে হয়তো সেটা জানা সম্ভব ছিল না। জানলে লিখতেন নিশ্চয়ই। তবে কেউ কেউ হয়তো বলতে পারবেন। কারো জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।
২.
ভারতের কোথাও Chocolate খুব সস্তা হবার কথা না, Candy সস্তা হতে পারে। Chocolate-এর মূল উপাদানগুলোর উৎপাদন বা আমদানী ভারতে ব্যয়সাপেক্ষ হবার কথা। তাছাড়া মেঘালয়ের মতো ল্যান্ডলক্ড, শিল্পবিরল জায়গায় যে কোন ফ্যাক্টরি প্রডাক্টের দাম বেশি হবার কথা।
ভারতের কোথাও দুই হাত পর পর Wine Shop শুনেও একটু অবাক হলাম। তবে ভারতের কোথাও দুই হাত পর পর Liquor Shop হয়তো হতে পারে। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের অল্প কয়েক জায়গায় Wine উৎপাদন হয় বটে তবে সেটা খুব উল্লেখযোগ্য না। ভারতের সুরাপায়ীদের মধ্যে Wine-এর ভক্তও খুব একটা বেশি নয়। ভারতীয়দের মাথা পিছু বার্ষিক Wine গ্রহনের পরিমাণ ৯ মিলিলিটার মাত্র।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ফ্লোরা, ফনার ব্যাপারটা আমারও ঠিকভাবে জানা নেই। তবে আমি শিলং যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে সেখানে টুরিস্ট স্পট বানাতে গিয়ে অকারণে পরিবেশ ধ্বংস করার প্রবণতা অন্যান্য জায়গার(যেমন দার্জিলিং) থেকে কম। প্রকৃতির নিজস্ব শোভা অনেকটাই অটুট।
চকোলেট এর ব্যাপারটা আমারও সংশয় আছে। হয়তো উনি ক্যান্ডি ই বোঝাতে চেয়েছেন।
আর আপনার শেষ কথাটাও একদম ঠিক। ওয়াইন এখানে যথেষ্ট দুর্মূল্য।
দুটো জায়গার নাম বলি। গ্যাংটক এবং গোয়া। এদুটো জায়গাতেও দুহাত পর পর লিকারশপ পাওয়া যায়, আর ট্যাক্স না থাকায় এদুটো জায়গাতে তার দামও অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক অনেক কম। শিলং এর ব্যাপারটা লেখক ভাল বলতে পারবেন।
শিলংএ আমরা যে হোটেল এ ছিলাম সেখানেই একটা বার ছিলো। মনে আছে শ্যাম্পেইন এর ১ পেগ এর দাম ১২০০ রুপি বা এর কাছাকাছি। আমরা একটু কম দামে রেড ওয়াইন নিয়েছিলাম। মনে হয় ৪৫০ রুপি দাম ছিল। আরেকটা ব্যাপার, শিলং এর স্থানীয়দের আচরনে মনে হয়েছে তারা আসলেই স্কটল্যান্ড বাস করে! তাদের পোষাক, ধর্ম, ভাষা (প্রায় সবাই ইংলিশ বলে), ক্ষেত্রবিশেষে চেহারাও (ইউরোপীয়ান-স্থানীয় পাহাড়ি সংকর) এরকম ধারনা দেয়।
অস্পৃশ্যা
নিজে কবে যেতে পারবো তার কনোও ঠিক নেই। আপনার চৌক দিয়ে কিছু দেখলাম, এতেই খুব ভালো লাগলো।
শিলং ভ্রমণ নিয়ে কিছু মনে হয় প্রথম পড়লাম, দার্জিলিং, গ্যাংটকের কথা বেশি পড়া হয়। ছবিগুলো আরও পরিষ্কার হলে বেশি ভালো লাগতো, কিন্তু বুঝতে পারছি জায়গাগুলো দারুণ। যেতে ইচ্ছা করছে। কিছু টুকিটাকি প্রশ্ন ছিলো, যেমন Mawsmai cave-এ আপনাদের সাথে কোন গাইড ছিলো কিনা, ফ্ল্যাশলাইট, সেইফটি হার্নেস এগুলো ওখানেই পাওয়া যায় কিনা ভাড়ায়, ইত্যাদি। কিন্তু আপনারা দেখছি পাঠকদের কোন মন্তব্যেরই জবাব দেননি। ব্লগে, বিশেষ করে সচলায়তনে লেখালেখিতে মিথস্ক্রিয়া, মানে পাঠকের সাথে ইন্ট্যার্যাকশনকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। আশাকরি পরবর্তীতে ব্যাপারটা একটু খেয়াল করবেন। আরও ভ্রমণ পোস্টের আশা রইল।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন