- 'মিঠুনের বাবা, ও মিঠুনের বাবা … কি হল, কথা কানে যাচ্ছে না?'
দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের কর্তারা কাছেপিঠে থাকলে নির্ঘাত ওদের শব্দ মাপার যন্ত্রপাতি নিয়ে হাজির হতেন। শব্দটা রান্নাঘর থেকে এলেও দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে বেশ একটা মাইকের ইকো ইকো ফ্লেবার এনে দিয়েছে। এতে রান্নাঘরের পাশের প্রাচীরে বসে থাকা একখানা কাক উড়ে পালিয়ে গেলেও আমাদের মিঠুনের বাবা কিন্তু স্থিরচিত্তে বসারঘরের সোফায় পা এলিয়ে দিয়ে দিব্বিসে খবরের কাগজ পড়ছে; মাধ্যমিকের অংক পরীক্ষার দিন সকালে পেছনের সারির ছাত্ররা যেভাবে উপপাদ্য মুখস্ত করে, বুকটা দুদ্দুর করতে থাকে, এই বুঝি ভুলে গেলাম, এ রাম, বাইশ নাম্বারটার শেষটা য্যানো কি, তেমনি লাগছে মিঠুনের বাবাকে।
-'ব্যাপারটা কি, হ্যা? এই বয়সেই কানের ব্যামো ধরলো নাকি তোমার?', মিঠুনের মা লুজ বলে ছক্কা হাঁকানোর ভঙ্গীতে স্টেপ আউট করেছে, 'কতক্ষন থেকে চিল্লিয়ে যাচ্ছি, আমার গলার রগ ছিড়ে গ্যালো, তবুও ওনার হুস নেই। পেপার মনে হচ্ছে আর কেউ পড়ে না। কি ছাতার পড় জানা আছে আমার। আজকাল পেপার মানেই তো ওইসব রসের ছবি। বয়েস তো কম হলো না … '
- ‘আঃ, আস্তে, মিঠুন শুনতে পাবে না? সত্যি, কোনো হুসজ্ঞান হোলো না,' এতোক্ষনে ধ্যানভঙ্গ করে পিঠ টানটান করে ঋজুভাবে বসলো মিঠুনের বাবা, 'সত্যি, কোনো আক্কেলজ্ঞান নেই, আর কবে শিখবে? ছেলেটা বড় হচ্ছে। চিল্লাচ্ছো কেন হ্যা? শুনছি তো, ঘরেই আছি। বলো কি বলছিলে।'
-'দ্যাখো, অত লেকচার ঝেড়ো না, সব জানা আছে আমার। অ্যাঁ! আক্কেলজ্ঞান শেখাতে এসচে আমাকে', গলার ঝাঁজের রেগুলেটরটা দু-ঘাট বাড়িয়ে দিয়ে আরো তেতে উঠেছে মিঠুনের মা, 'পুচাইদের বাড়ী গ্যাছো? তা যাবে ক্যানো? যত ধক তো আমার সঙ্গেই। তোরা বাড়ী করছিস, তা কর, আমাদের কী, কিন্তু ঐ ইট-বালি-বজরী এসব আমাদের গেটের সামনে ফেলবে ক্যানো, হ্যা? আমি পুচাইয়ের মাকে অনেকবার বলেছি, একটু সাইড করে রাখতে, কে শোনে কার কথা। কতদিন ধরে বলছি, একটু ঘোষদাকে গিয়ে বলো। রোব্বার ওদের দোকান-টোকান বন্ধ। কি যাবে না?'
'হ্যা, যাবো তো, না যাওয়ার কি আছে? আমি ভাবলাম কি না কি। সত্যি, পারো বটে! দাড়াও, একটু পেপারটা দেখে নি, কি য্যানো একটা দেখলাম, দাড়াও', আবার খবরের কাগজের পাতায় চোখ, বিড়বিড়করে পড়ে পড়তে শুরু করলো মিঠুনের বাবা, ' অপ্রিয় সত্য কথায় পড়শিদের সঙ্গে মনোমালিন্য '।
-'কি বিড়বিড় করছো? পষ্ট করে বলো তো। যাবে না, তাই না? জানতাম। সত্যি, সারাজীবন এক টাইপের রয়ে গেলে', মিঠুনের মার গলার স্বর খাদে।
-'না, যাবো না বলিনি। ঘোষদার বাড়ীতে আজ লোকজন এসেছে। ওদের ঐ ইসেতে থাকে না, বুঝলে, বাড়ী ভর্তি গেষ্ট। এত লোকের সামনে এসব কথা বলা যায়, বলো? তাছাড়া ঐ ইসেতে দেখলাম, বাদ দাও। তা তোমার মাংস সাঁতলানো হয়ে গেছে? দাও, দু-পিস দাও, চেখে দেখি, তোমার তো আবার লবন বেশী দেওয়ার বাতিক।'
- 'পেসার-সুগার কোনোটাই তো বাদ রাখোনি; খালি ছোক ছোক। কাজের কাজ কিছু নেই, খালি … বললাম, রোববার ঘোষদার ওখানে একটু যাও, একটু বলো গিয়ে, কোথায় কি? উনি এখন মাংস টেষ্ট করবেন …', গজগজ করতে করতে রান্নাঘরমুখো মিঠুনের মা।
- 'রক্তচাপের হেফেরে সপ্তাহের আদ্যভাগে শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক অবসাদ', আবার খবর-কাগজের রোববারের পাতা, আবার বিড়বিড়; ঈষৎ গলা চড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে সুর চড়িয়ে হাঁক পাড়লো মিঠুনরে বাবা, 'শোনো আজকে বিকেলে একটু বাজারে বেরোনোর কথা না,একটু মনে করে দিও তো, প্রেসারটা একটু মাপবো। অনেকদিন মাপা হয় না, ঠিক আছে, ভুলো না, হ্যা ..’
- 'ক্যানো আবার মাথা ঘুরছে নাকি? সত্যি এই লোকটাকে নিয়ে আর পারি না। কতোবার বলেছি একটা ভালো ডাক্তার দেখাও, কে শোনে কার কথা। পেসার থেকে মনে নেই আমাদের নান্টু দা … ,' রান্নাঘর থেকে গজগজানি ভেসে আসলো, ‘ভেতরে ভেতরে পেসার ছিলো, টের পায়নি, পরে কিডনিটা …’
- 'ভয় নেই, ভয় নেই। এখনি কিসের! বুড়ো বয়সে তোমাকে জ্বালাবো না,' চোখটা রোববারের পাতায় জুম করলো; বিড়বিড় করে পড়তে থাকলো মিঠুনের বাবা, ' ''শ্বশুর কুলের সম্পত্তি পেতে পারেন'', এই শোনো তোমার বাবার জমি বিক্রি করার কথা ছিলো না, কিছু এগোলো? খদ্দের দেখবো নাকি? আমার এক বন্ধুর শালা ওদিকে নাকি বাড়ী করবে। কি কথা বলবো?'
-'কিছু বোল্লে? কি যে মিনমিন করে বলো না। জোরে বলো,' রান্নাঘর থেকে পয়ষট্টি ডেসিবেলের ছক্কা ধেয়ে এলো।
-'না না, কিছু না, পরে হবেখন,' মিঠুনের বাবা আবার একাগ্রচিত্তে রাশিফলের পাতাটায় মনোনিবেশ করলো।
********************************
# দীপালোক
মন্তব্য
হা হা!
ভালো হয়েছে
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
মজা লাগলো।
ভালো লাগলো।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
ধন্যবাদ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
থ্যাঙ্কু, থ্যাঙ্কু …
বাহ! সুন্দর ঘরোয়া বর্ণনা!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
হুহু--- মজারু তো!!
পথিক পরাণ
ভাল লখেছেন দাদা।
চালিয়ে যান।
নতুন মন্তব্য করুন