1… লেখক সুইজারল্যান্ড এ থাকেন। দেশে বিদেশে তার ভক্তের অভাব নেই। ফেসবুকে বন্ধুসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজার। তিনি যাই লিখেন তাই হিট। সমাজের চোখে উনি উঁচু মানের একজন সমাজসেবক।দারুণ লেখক। আর অসাধারণ একজন মানুষ। ভক্তদের জন্য কিনা করেন তিনি।এইতো গত সপ্তাহেই তার ৪ জন ভক্তকে একটি করে নাইকন ডি- ৬০ কিনে দিয়েছেন লেখক। কিনে আবার পাঠিয়েও দিয়েছেন। নিজ দায়িত্বে। কি উদার আমাদের লেখক! ভক্তের প্রতি কি মায়া তার!
ভক্তরা তার এই মহানুভবতা ছড়িয়ে দিল চারপাশে। ফেসবুকে আরও পেইজ খোলা হল। লেখককে ধন্যবাদ দিয়ে লিখা হল এক একটি অমূল্য স্ট্যাটাস। লেখক সত্যিই মহান।
রাত প্রায় বারোটা। লেখকের সেলফোন বেজে উঠলো। ফোন তুলতেই ভেসে এল এক বৃদ্ধের গলার করুণ আওয়াজ ।-বাবা। কেমন আছিস। –ভালো।ভনিতা না করে। ফোন কেন দিস সেটা বল? -তুই তো সবই জানিস। আমার ছেলেটা পড়াশুনায় অনেক ভালো। তুই না আমার লক্ষ্মী মামা। আমার ছেলেটাকে একটু হেল্প কর। তুই একটু হেল্প করলেই ও পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারবে। তর পায়ে পড়ি। একটু দয়া কর। –ঘেন ঘেন করেন কেন! আমার এরকম অনেককেই হেল্প করতে হয়। আমার ভক্তদের সংখ্যা তো জানেনই। তাদের আবদার রাখতে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়। আফটার অল আই এম দেয়ার রাইটার।আই লিভ ফর দেম। ওয়াট এভার, আপনি এসব বুঝবেন না। স্কাভেঙ্গারস ইঊ অল। আপনার ছেলেকে পড়ানোর কি দরকার। দেশেই কিছু একটা কাজ লাগায় দেন। আর না হয়, জমি বিক্রি করে পাঁঠিয়ে দেন দুবাই। খাটুক। লেবারগিরি করুক, জীবন নিয়ে কিছু শিখবে সে। এইটাই তো দরকার। হাউ এভার,আই এম সরি। প্লিজ ডোন্ট কল মি এগেইন। -ওপার থেকে আর কোন কথা আসলো না। ফোনটা কেটে গেলো। আর বৃদ্ধ মামার চশমাটা একটু ঘোলা হয়ে গেলো। উৎসুক ফোন অপারেটর জানতে চাইল, কি বলল ভাগ্নে!! নিয়ে যাবে ভাইকে।! করবে সাহায্য! -এর ঠিক কি উত্তর দিবে মামা। জানা নেই তার। লেখকের কোটি ভক্তের কাছ থেকেই উত্তরটা খুঁজে নিতে হবে অপারেটরকে।
2…
-হ্যালো জেসিকা, কই তুমি?
–বাসায়। তুমি কই?
-আমি, ক্যাম্পাসে । আচ্ছা,শোন।, আমাদের দুজনের জন্য অভিজিৎ নাইটের দুইটা টিকিট পাইলাম , বহুত কষ্টে! জানোই তো অভিজিৎ নাইট বলে কথা।। টিকিট পাওয়া যে কি কষ্টের ছিল। তাও,মানেজ করলাম । শুধু তোমার জন্য ।
–সত্তত্তত্তত্ততিইই বলছ??
-সত্যি না তো কি? প্রায়, ২০ হাজার টাকার মতন লাগসে। যাই হোক বাদ দাও ওইটা ,টাকা কোন ঘটনা না । তুমি খুশি তো সব ওকে।
–লাভ ইঊ, অভি। উম্ম। তুমি এতো ভালো কেন!
-হইসে হইসে। আর তেল মারা লাগবেনা। টাইম মতো চইলা আইসোঁ। –ঠিক আছে। বাইবাই।
3…
লাশটা কাল রাতে এসেছে। খুব সম্ভবত লাশটা কোন অভাগা দিনমজুরের। বয়স আনুমানিক ৩৫ ।কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে কারও তেমন মাথা ব্যথা নেই।
অটপসি করার ইচ্ছেও নেই কারও। বেঁচে থাকতে মানুষটার মূল্য হয়তো ছিল কিছুটা। অগাধ খাটুনি যার নিয়তি ছিল, পরিবারের মানুষগুলির তার প্রতি নির্ভরতা যাকে বাধ্য করতো সারাদিন অন্যের হয়ে মজুরি করতে। দিন শেষে মহাজনের রক্ত চক্ষু দেখে যার মনে হত, কত বড় এহেসানই না তার উপর করছে মহাজন। কথায় আছে, মরা হাতির দাম লাখ টাকা।কিন্তু, কি দুর্ভাগ্য লাশটার , যে সে মানুষ ছিল । তাও সমাজের অনেক নিচু স্তরের। তাই, তার দাম লাখ টাকা কেন, এক টাকাও নয়। দেবীদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় লাশটা রাতভর পড়েই রইলো। রাতের যৌবন শেষে একিউট বার্ধক্য নামলো। নাম জানা, না জানা অনেক পোকামাকড় এসে লাশটার কান, নাক, চোখ খাওয়া শুরু করলো। সকাল ১০টা অব্দি হয়তো লাশটার চেহারা পুরোপুরি বিকৃত হয়ে যাবে। কবরে ঢুকার আগেই, চিরতরে বিকৃত হয়ে যাবে, অনাকাঙ্খিত এই লাশটার চেহারা। কিন্তু ,ঘড়ি ধরে সেই সময়ের অপেক্ষা করার মতন কেউ নেই। এখানেও দুর্ভাগ্য লাশটার। সকালের ওই সময়টার অপেক্ষা কেউ করেনা। রাত ১২।০১ হলে হয়তো, অন্যরকম কিছু হতে পারত।কোথায় না কোথায় ঘড়ি ধরে কেউ না কেউ অবশ্যই প্রহরটার অপেক্ষা করতো। কিন্তু… আফসোস। তার সঙ্গী শুধু, সময়ের এক একটি একাকী দীর্ঘশ্বাস।
4…
কাল রিভার প্রথম জন্মদিন।। এ নিয়ে, ওর মা বাবার ব্যস্ততার শেষ নেই। মেয়ের প্রথম জন্মদিন বলে কথা। কেকটা ৩/৪ তলা না হলে কি হবে? কেকের ফ্লেভার নিয়েও মা-বাবার মধুর সমস্যা। নিতার পছন্দ ভেনিলা, ফারিমের চকো। তাই,কি আর করার, দুটো কেক আসবে বলেই ঠিক করা হল। এর পর আসলো ভেনু। অলিম্পিয়া, চিয়ার্স আর ওয়েস্টিনের মধ্যে কোনটা বেছে নিবে। উফ, এখানেও সমস্যা। নিতা, ফারিম দুজনই দ্বিধায় পড়ে গেলো। মা-বাবাও দ্বিধায়। রিভাকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়। কিন্তু ও তো আর বলতে পারেনা। শেষ মেষ, নানুর পছন্দের চিয়ার্সেই হবে জন্মদিনের পার্টি। প্রায়, ৫০ হাজারের মত খরচ হবে। রিভার মা-বাবার কাছে যা কিনা বা হাতের ময়লা।
5..
মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ।আজিমপুরের রোড ডিভাইডারের দু পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে অসংখ্য যানবাহন। বাসগুলির জানালা বন্ধ। প্রাইভেট কারের তো কথাই নেই। কোথাও বাজছে, তেরি মেরি প্রেম কাহানি। তো কোথাও। মেয় কারু তো শালা ক্যারেক্টার ঢিলা হেয়। মাঝের জায়গাটায় কারো চোখ পড়ছে না সহজে। জানালায় প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসছে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ। কারো চোখের রক্তসম ফোঁটাগুলি মিশে যাচ্ছে, বৃষ্টির রংহীন ফোঁটার সাথে। মেয়েটার বয়স ১২।এখানেই পাশের বস্তিতে মা-বাবার সাথে থাকতো। বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় আর মা কি জানি একটা অসুখে মারা গেছে বছর খানেক আগে। কাগজ কুড়িয়ে, খেয়ে না খেয়ে কোন মতে বেঁচে ছিল সে। আজ পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে মেয়েটার। বারবার সাহায্য প্রার্থী হতে চাওয়া চোখ নিয়ে এদিক অদিক তাকাচ্ছে সে, আর নিজের মাথার চুল ধরে টানছে। একি কষ্ট ।!! অসহনীয়। ঠিক কতটা সহ্য শক্তি থাকলে এটা সহ্য করা যেতো জানা নেই তার। মেয়েটার সুতীব্র আর্তনাদ কারো কানে পৌছায় না। শহরের বৃষ্টি বিলাস চলল প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে । বৃষ্টি চলে গিয়ে আকাশের ফাঁক দিয়ে উকি দিল সূর্য।আজিমপুরের সেই জায়গাটায় এখন বেশ ভিড় জমেছে।একটা ১২ বছরের মেয়ের লাশ। লাশটা হয়তো দাফনের জন্য সরাসরি আজিমপুর কবরস্থানে যাবে কিংবা মর্গে। –আকাশে একটু পর আবার মেঘ জমবে। আবারো হয়তো অঝোরে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি বিলাসের সাথে ঝরে যাবে আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণ।
6..
সময় রাত ৯।।৫৬.. পীর বাবা ধ্যান করছেন। তার আরেক নাম ডেগ বাবা। যিনি নাকি সব জানেন, অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ। ইচ্ছে করলে পারেন না এমন কোন কাজ নেই তার। অবুঝ ভক্ত বৃন্দ ডেগ বাবার পায়ের ধুলো নিয়ে যায়। কেউ নিয়ে যায় পানি পড়া, কেউ আবার তাবিজ। বিনিময়ে ফি দিতে হয়। সরি হাদিয়া।তাও মাত্র ৬৫২৩ টাকা। বাবা নাকি বাটি চালান দিয়ে কাজ করান। তাই, এখন পর্যন্ত ১০০ ভাগ সাফল্যের হার তার। বাবার গাড়ি আছে একটা। আছে ৪ টা ৬ তলা বাড়ি। মাঝে মাঝে সাক্ষাতকারও দেন টি ভি তে।সমাজের কল্যাণে মানুষকে আহ্বান করেন সত্যের পথে।
7..
সামনেই রনির শুভ বিবাহ । কনে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে।অনেক সুন্দরি। রনির মা-বাবা আজ বিয়ের বাজেট করতে বসেছে। বিয়ের কেনাকাটার আগেই আসলো ভেনু আর ফটো তুলার দায়িত্ব কাদের দেওয়া হবে সেটার কথা। অনেক ভেবে চিন্তে রনির মা-বাবা ওয়েডিং টুডে কে দায়িত্ব দিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। এর অনেকটাই যাবে ফটোগ্রাফিতে।প্রধান ফটোগ্রাফার আসবেন বলে ওই প্যাকেজটার দাম প্রায় ৬ লাখ টাকা। পুরো ইভেন্টটাকে মেনেজ করবে তারা। শাড়ি, গহনা আর অন্যান্য সকল সামগ্রী আনা হবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা আর ভারত থেকে। প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হবে এসবে। রনির মা-বাবা বাজেট করার সময় একটুও ঘামছেন না। কি করে ঘামবেন! এসির তাপমাত্রা এমনিতেই ১৮।তার উপর যারা রনির গত জন্মদিনেই ওকে ১ কোটি টাকা দামের গাড়ি কিনে দিলেন তাদের জন্য এ আর কিই বা খরচ!
8..
একটি পাবলিক ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে নিপু। তার বাবার আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো নয়। মা গৃহিণী। এর মধ্যেও নিজে টিউশন করিয়ে করিয়ে বহু কষ্টে এতদূর এসেছে সে। এতদিন কোন মতে চলে গেছে, কিন্তু এখন বেশ সমস্যায় পড়ছে সে। বাবার হার্টের অসুখ, মার শরীরটাও ভালো নয়। পরিবারের একমাত্র ভরসা এখন। সে। এর উপর নতুন সমস্যা যুক্ত হুয়েছে। নিপুর পড়াশুনার জন্য একটি কম্পিউটারের খুব দরকার। অনেক দিন ধরেই টাকা জমাচ্ছে সে। কিন্তু জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়া আর বাবার ওষুধ কিনতে গিয়ে সেগুলা খরচ করতে হচ্ছে তাকে।কম্পিউটার আর কিছুতেই আর কেনা হয়না নিপুর। কষ্ট হয়। তবুও কষ্টগুলি চেপে রেখে নিপু এগিয়ে চলে। রুফিয়ান সোসাইটি ওকে আরও আঘাত করে। বন্ধুরা যখন বাবার প্রিমিও থেকে বৃষ্টির দিন সকালে আরাম করে নেমে আসে, কিংবা কেউ যখন নোকিয়া এন-৯৫ বের করে ফটাফট ছবি তুলতে থাকে নিজেকে বড় বেমানান লাগে নিপুর। গাড়িতে চড়া তো দুরের কথা, মাঝে মাঝে বাস ভাড়াই থাকেনা তার। কখনও বাস ভাড়া বাঁচিয়ে হেঁটে আসে। নিতান্তই না পারলে, তখন বাস। রিক্সাটাও আজকাল ওদের মত মধ্যবিত্তদের জন্য দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার, নোকিয়া-১১০০ ফোনটার একমাত্র থেকে যাওয়া সেটটা যে ৭ বছর ধরে ব্যাবহার করছে নোকিয়া -এন ৯৫ তার জন্য দুঃস্বপ্নই বটে। তবুও মানিয়ে নেয় সে। মাঝে মাঝে সুখের দিন গুলির জন্য অপেক্ষা বড় ক্লান্তিকর লাগে তার কাছে। কবে পড়া শেষ হবে তার। কবে চাকরি করবে সে। কবে মা-বাবার মুখে হাঁসি ফোঁটাতে পারবে সে। জানা নেই তার! মাঝে মাঝে বৃষ্টির সাথে বারান্দায় একাকী বসে কাঁদতে থাকা নিপুর কান্না হারিয়ে যায় আকাশের পানে। কেউ মনে রাখেনা সেই মুহূর্তগুলি। সময় দেখতে পেয়েও দেখতে না চাওয়ার ভান করে সামনে এগিয়ে যায়। নিপুর চোখের স্বপ্নগুলি আরও গাড় হতে থাকে। কারো আইপড, আইফোনে বাজতে থাকে, রেখেছে কে খবর, কারো আজ মন খারাপ হয়েছে।
-ধূমায়িত রোদ্দুর
মন্তব্য
পড়লাম।
অনুগল্পের এ ই-বুকটা পড়তে পারেন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অনেকগুলো গল্প। যদিও দই ঠিক জমেনি অনুগল্প হিসেবে। কিন্তু লিখে যান, দুধ খাঁটি হলে দই একসময় ঠিকই জমবে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ডুপ্লি ঘ্যাচাং_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমার কাছে সবগুলোই দারুন লেগেছে। তবে আর একটা বড় হলে ভালো লাগতো আরো বেশী।
আপনার গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
আমার লিখার হাত এখনো গল্প লিখার মত পরিপক্ব হয়ে উঠেনি। তবে আপনার ভাল লাগলো শুনে আমারও ভাল লাগলো। ধন্যবাদ জানবেন।
শেষটা বেশি ভালো লেগেছে।
খারাপ না একটানে পড়সি!
প্রায় সবগুলার থিমই হচ্ছে ধনী-গরীব। বেশি ভালো লাগলো না। তবে লিখতে থাকুন।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
নতুন মন্তব্য করুন