সাদা চামড়ার ভিনদেশী মানেই সুপিরিওর বা প্রভু না

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৫/০৬/২০১২ - ৫:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাদা চামড়ার ভিনদেশী মানেই সুপিরিওর বা প্রভু না

অপরকে তৈল মর্দন আর জি হুজুর আমাদের ভিতরে একেবারেই যেন ইনবিলট। দেশের ভিতরে এই চিত্র সবখানেই চোখে পড়ে। আমার থেকে যে একটু সুপিরিওর তার করে চলা অনেক আবদার নিয়মের বাইরে হলেও আমরা পূরণ করে থাকি। আবার আমার থেকে অনেক ইনফিরিওর( এখানে আমার থেকে নিচু পোস্টের কাউকে বোঝাতে ) কারো কাছ থেকে যদি কোন উদ্দেশ্য হাসিলের কোন সম্ভাবনা থাকে তবে তার জুতা পালিস করে দিতেও আমরা কুণ্ঠিত নই। দেশের ভেতর এটাই চলছে হরহামেশাই । ঠিক জানিনা এগুলো কবে থামবে । হয়ত একদিন থামবে ।

কিন্তু আমার কষ্ট একটু অন্য জায়গায়। কাল সচলে রেসিজম নিয়ে সুমাদ্রির একটি লেখা পড়লাম। সেখানে কালোদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি তিনি দেখিয়েছেন । কালো মানেই খারাপ , কালোরা একটা ছোট জাতি এইরকম একটা ধারণা আমাদের মাঝে আসলেই বদ্ধমূল। তবে সাদা চামড়ার প্রতি আমাদের যেরকম অতি ভক্তি তা একটু অতিরঞ্জন বলেই মনে হয়। কালকে তার ওই লেখা থেকেই আমার আজকের এই লেখার উপলক্ষ।

ছোট বেলায় দেখতাম পাড়ায় সাদা চামড়ার কোন হোয়াইট ছেলে বা মেয়ে আসলে তাকে নিয়ে কৌতূহলের কোন শেষ থাকতো না। শুরুতেই তাদেরকে বলা হত বিদেশী । কেউ তার সাথে কথা বলেছেন বা ওই বিদেশী তার স্বভাব বশত কারো সাথে করমর্দন করেছেন তাতেই যেন এদেশীয় ওই লোকটির কাছে অনেক বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াত। দেশের বাইরের এসব মানুষেরা আমাদের কাছে বিদেশি হিসেবে সবসময়ই বেশ সমাদর পেয়ে আসছে। আর আমরা সমাদরের মাত্রা এতোটাই বাড়িয়ে দেই যে তখন আমরা আমাদের নিজের অবস্থান ভুলে যেতে শুরু করি। আমরা এদেরকে একেবারে প্রভু ভাবা শুরু করি। আবার বাইরের দেশের অনেক কালো টুরিস্টকেও এদেশে দেখেছি কিন্তু তাকে নিয়ে খুব মাতামাতি হয়েছে এমনটা দেখিনি। এই বিষয়টা খুব বেশি চোখে লাগে যখন দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে আসা হয়।

গত বছর আগস্টে নেদারল্যান্ডে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকজনের একটি দল ছিল আমাদের। সবাই বাংলাদেশী। আমাদের ট্রেনিং স্পটে নেয়ার জন্য একটা ক্যাব আসতো প্রতিদিন। আমরাই ভাড়া করেছিলাম। ড্রাইভার ছিল সেদেশেরই । বেশ কয়েকদিনের যাতায়াতে আমাদের সাথে ওই চালকের ভালোই সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। অনেক বিষয়ে আলোচনার ফাঁকে আমাদের ভিতর থেকেই কাউকে বলতে শুনলাম কিভাবে এদেশে নাগরিক হওয়া যায়। তারপর তার বাসার ঠিকানা । এরপর এদেশে আসলে সে তার সাথে দেখা করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তার এই প্রশ্নে সে একটু অস্বস্তি বোধ করছিলো আর এই বিষয় গুলো এড়িয়ে যাবার চেষ্টাও তার মধ্যে লক্ষ্য করলাম। শুধু তাই না এ ব্যাপারে ওই চালক ভাই তাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারবে সেরকম কিছু বাৎচিতও ছিল। বেশ খারাপ লাগলো সেদিন। আমার কথা হোল কেন একজন ড্রাইভারকে এ ব্যাপারে এত জিজ্ঞাসা করতে হবে। আর নিজের অবস্থানকে কেন এত হেয় প্রতিপন্ন করতে হবে তার কাছে। কারন একটাই আর তা হোল তিনি বিদেশী সেই সাথে সাদা । প্রশ্নকর্তার ধারণা এরা চাইলেই যে কাউকে এখানে আনতে পারে আবার যে কোন সহায়তাও করতে পারে। এই ধারনা আমাদের অনেকেরই ।আমরা একটু সুযোগ পেলেই এই কাজগুলি সহসায় করতে চাই তখন ভুলে যাই আমাদের নিজের অবস্থান।

বেশ কিছুদিন ধরে আফ্রিকাতে আছি। অফিসিয়াল কারণে আফ্রিকানদের পাশাপাশি সংখ্যায় কম হলেও কিছু সাদা চামড়ার মানুষদের সাথে কাজ করতে হয়। এখানে বাঙালীও ( বাংলাদেশি)আছেন বেশ কজন অফিসিয়াল। যে কোন ব্যাপারে দেখলাম একজন সাদা চামড়ার ফ্রান্স অথবা স্পেনের যে কেউ আসলেই আমরা একেবারে গলে পড়ি। সাধারণত আপনি যে চেয়ারে বসে অফিস করবেন সেখানে কিন্তু আর কারো বসার কথা না । আমরা পারলে একজন আফ্রিকান বাদে অন্য যে কোন সাদা চামড়ার মানুষদেরকে আমাদের অফিসের চেয়ারটাও ছেড়ে দেই। সবচেয়ে লজ্জা পায় যখন দেখি এইসব স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান টকটকে চেহারার মানুষগুলো প্রটোকলের দিক থেকে তৈল মর্দন রত ওই বাঙালীর চেয়ে অনেক নিচের শ্রেণীর কর্মকর্তা । অথচ আমাদের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের এমন ভাবে তেল মারেন যে আমার লজ্জায় মাথা কাটা যায়। অথচ প্রফেশন বা প্রোটোকল যাই বলি না কেন ওই হোয়াইট (বারবার বলছি কারণ দেশের নাম অনেকগুলো ) দের চেয়ে অনেক এগিয়ে থেকেও একজন আফ্রিকান কালো মানুষ আমাদের কাছ থেকে এই ধরনের ব্যাবহার পাই না। তার দোষ সে কালো ।

অফিসে একজন কালো আফ্রিকান আসলে আমরা খুব কমই আগ্রহ নেই তার ব্যাপারে অথচ একজন সাদা চামড়ার কাউকে পেলেই হয় -তাকে পাশে দাড় করিয়ে একটা ছবি না নিলেই নয়। এরপর শুরু করে দেই বিভিন্ন রকম কথাবার্তা আর তোষামোদ । তারপর সুকৌশলে তার হোম এড্রেস নিয়ে নিতে পারলেই হয় ,ওই দিনের জন্য নিজেকে খুব সার্থক মনে হয়। অথচ এসব দেশের মানুষেরা তাদের নিজেদের বাসার ঠিকানা , তিনি বিবাহিত কিনা, কোথায় থাকেন, বয়স কত এসব প্রশ্ন শুনলে বেশ বিব্রত হন। কিন্তু আমরা এইসব বিষয়গুলো একেবারেই ভুলে যায় । আমাদের হিতাহিত জ্ঞান তখন একেবারেই লোপ পায়। হোয়াইট যে কোন মানুষের চেয়ে যে আমি আমার মেধা, জ্ঞান অবস্থানের দিক দিয়ে উপরে থাকতে পারি সে বিষয়টি কেন জানি আমরা মেনে নিতে পারিনা। সেও মানুষ আমাদের মতোই রক্তে মাংসে গড়া ।গায়ের রঙ শুধু আলাদা। তাকে একেবারেই সুপিরিওর ভাবার কিছু নেই। শুধু স্বাভাবিক আচরণটা ধরে রাখলেই হয়। বাংলাদেশী হিসেবে আমি যেমন একজন মানুষ সেও আমার মতোই । নিজেকে এত খেলো করে ফেলার কিছু নেই। আমি বাঙ্গালী আমার সত্ত্বায় , আমার কৃষ্টিতে, আমার আদর্শে, আমার যোগ্যতায় – এটা আমার অহংকার । তাই বিদেশী বা সাদা চামড়ার মানুষদের একেবারে প্রভু ভাবার কিছু নেই – এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসা খুবই জরুরী।

অমি_বন্যা


মন্তব্য

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

নিজের স্বকীয়তা এবং আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। সেটা যেকোন বর্ণের, যেকোন ধর্মের এবং যেকোন শ্রেণীর মানুষের বিপরীতে দাঁড়িয়েই প্রযোজ্য। আর যাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রেখে বেঁচে থাকার সুযোগ রয়েছে অথচ তারা সেটাকে স্বেচ্ছায় ছোট করছে, তাদের মত হতভাগা আর হয় না।

পুনশ্চঃ আমার মনে হয় গতদিনের লেখাটার সাথে আপনার লেখার বক্তব্যের মিল রয়েছে। এই আলোচনাটা মন্তব্য আকারেই আসতে পারতো।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

আমি বাঙ্গালী আমার সত্ত্বায় , আমার কৃষ্টিতে, আমার আদর্শে, আমার যোগ্যতায় – এটা আমার অহংকার ।

হাততালি

একদম আমার মনের কথাটাই বলেছেন।

এরকম একটা লাইনের জন্যেই শুরু থেকে অপেক্ষা করছিলাম।

অমি_বন্যা এর ছবি

ধন্যবাদ প্রদীপ্ত দা। ভালো থাকবেন।

তোফায়েল এর ছবি

মনে পড়ে আজ থেকে প্রায় বছর দুই আগে আমার বাবার চাচার সাথে লন্ডনে তার বাসায় বর্ণবাদ প্রসঙ্গে আমি বলছিলাম দাদা ব্রিটিশরা বাইরে থেকে বর্ণবাদের বিরুধী হলেও মনে প্রাণে এখনো বেশিরভাগ বর্ণবাদী।তিনি বলেছেন তুমি কি কোনো প্রমান পেয়েছ? আমি বলেছিলাম টিউবে ওদের পাশে বসলে ওরা কেমন যেনো নাক সিটকায়, মনে হয় আমরা যেনো কুষ্ঠ রুগী। তিনি বললেন দেখো নাতি তোমার কথা শুনে আজকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কথা খুব মনে পড়ে যাচেছ।রবিবাবু যখন খুব অল্প বয়সী তিনি মেঘনাদবধ কাব্য নিযে সমালোচনা লিখতে গিয়ে বলেছেন মেঘনাদবধ কোনোভাবেই মহাকাব্য হতে পারে না।কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তিনি যখন কবিগুরু তখন বলেছেন কিশোর বয়সে মেঘনাদবধ সম্পর্কে যা বলছিলাম তা হলো অল্পবয়সের ধরাকে সরা জ্ঞান করার দৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নহে।মনে মনে তখন খুব রুষ্ট হলেও নিরবে সে অপমান হজম করেছি।দাদা আরো বলেছিলেন ব্রিটিশ যতটা বর্ণবাদী বাঙালিরা তার চেয়ে বেশি। কথাটা শুনে মেজাজ অত্যন্ত খারাপ হলেও সেদিন কোনো প্রতিবাদ করিনি।তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন অনেক সাদা ব্রিটিশ অনেক কালোকে বিয়ে করছে, আজকে যদি তোমাকে বলা হয় কোনো কালোকে বিয়ে করো তুমি করবে?আমি মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বলেছিলাম কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি!
আজকে এতদিন পরে মনে হচ্ছে দাদা পুরাপুরিভাবে ঠিক না বললে আংশিক ঠিক বলেছেন....হয়তো কনো একদিন মনে হবে তিনি পুরাই সত্যি বলেছেন!আমার এতদিনের প্রবাস অভিজ্ঞতা থেকে আমি এটা বলতে পারি ব্রিটিশরা এখনো অনেকেই বর্ণবাদী আচরণ করে কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নয়।বরং সাদা ব্রিটিশদের চেয়ে কালোরা এক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে দুই ছোট ভাইকে নিয়ে বাসে করে ফিরছি যেটাতে ঘরমুখো মানুষের প্রচন্ড ভীর, তার মধ্যে এক কালো দুই সিট নিয়ে বসেছে, এক ছোট ভাই কাছে গিয়ে বললো এক্সকিউজ মি! আমি কি এখানে বসতে পারি? এটা শুনে ঐ কালো এমন প্রতিক্রিয়া দেখালো যেনো ঐ ছোট ভাই কোনো মহাঅন্যায় করে ফেলেছে।এরপর সে প্রতিবাদ করাতে একচোট হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে গেলো।ঐ আফ্রিকান ভদ্রলোকের এক কথা দিস ইজ লন্ডন অনলি ফর ব্লেক পিপল।কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমার ছোট ভাই দুরে থাক বাসের কেউই কিন্তু বর্ণ নিয়ে কোনো কথাই বলে নি।অনেকে এটাকে বলতে পারেন বিছিন্ন কোনো ঘটনা।কিন্তু সত্যি হলো এটা কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয়।অন্যদিকে সাদাদের ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই।এই দেশে প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ ব্রিটিশ সাদা তারপর ইউরোপিয়ান সাদা এরপর প্রয়জনে আফ্রিকানরা কিন্তু তবু বাদামিরা নয়, এরা সর্বগুণ সম্পন্ন হলেও এরা অচ্ছুত।চাকুরিদাতাদের এক কথা এশিয়ানরা অলস, ভালো ইংরেজি পারেনা...আরও অনেক কিছু...আমার এক পরিচিত ভাই যে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্স থেকে পাস করার পরও এদেশে কোনো ভালো জব পাচ্ছে না, যে স্কলারশিপ নিয়ে এদেশে এসেছে।এটাকে আমরা কি বলবো তার অযোগ্যতা নাকি বর্ণবাদ?
এবার আসি আমাদের বাঙালি অরিজিন ব্রিটিশদের কথায়, যারা এই দেশে এখন অনেক সম্পদশালী কিংবা রাজনীতিক ভাবে প্রভাবশালী।তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তৃতাতে বলেন তারা বাঙালি কমিউনিটির জন্য জীবন-প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।আসলে ভিতরের কথা হলো বাঙালি কমিউনিটি না তারা বরাবর বাংলাদেশের একটা বিশেষ অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন।পাঠকদের অনেকে নিচ্চয়ই বুজতে পারছেন আমি কাদের কথা বলছি!তাদের ধারণা ঐ বিশেষ অঞ্চলের জনগণ ছাড়া বাকি সবাই নিচু প্রকৃতির।এমনকি এইদেশে শুদ্ধ বাংলা জানা অপরাধ...যেখানে ঐ বিশেষ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা জানলে অনেক সুবিধা পাবেন।এটাকে কিভাবে সংঙ্গায়িত করা যায় আঞ্চলিক বৈষম্য?
খুব কষ্ট হয় যখন দেখি ব্রিটিশ অরিজিন বাঙালিদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেক সুযোগ থাকা সত্বেও ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচচতর ডিগ্রী থাকার পরও বাঙালি ছেলেরা ফুড শপ্ কিংবা সুপার স্টোরে সারারাত জেগে ঘন্টার পর ঘন্টা খেটে যাচ্ছে বিনিময়ে পাচ্ছে ব্রিটেনের সর্বনিম্ন মজুরি!আবার তখনো কষ্ট হয় যখন দেখি বাঙালি ছেলে পরিবার পরিজন ছেড়ে সারা জীবন সাদা স্লাটের সাথে বসবাস করতে রাজি কিন্তু আফ্রিকান অরিজিন বৃটিশদেরকে পাসপোর্টের প্রলোভন থাকার পরেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে।
সন্মানিত পাঠকদের কাছে আমার প্রশ্ন বর্ণবাদী আসলে কারা?

ফয়সাল  এর ছবি

"কর্তায় কইছে হালার ভাই,
আনন্দের আর সীমা নাই।"
- এই জাতীয় পাবলিকদেরকে সাধারননত বাংলাদেশের বিভিন্ন অ্যাম্বাসীতে দেখা যায়।স্বগোত্রীয়দের সাথে সীমাহীন দুর্ব্যহার আর বিদেশীদের দেখলেই নমোঃ নমোঃ তাদের কমন স্বভাব। যারা নিজের দেশের লোকদেরকে ঢালাওভাবে রেসিস্ট ভাবে, দেখা যায় তারা নিজেরাই রেসিস্ট। নিজের দেশের লোকদেরকে এড়িয়ে চলে, আর অন্যদের কাছে বদনাম করে নিজেকে জাতে তুলতে চায়।

ক্রেসিডা এর ছবি

সুন্দর লিখেছেন বন্যা ভাই।

ভাষা একটা ফ্যাক্ট এখানে, আাই মিন মনমানসিকতা। আমি বেশ কিছু মানুষ দেখেছি, যারা নিজের মাতৃভাষাটা খুব ভালো করেই জানে, কিন্তু হয়তো ইংরেজিতে একটু দুর্বল। এবং এরকম অনেক মানুষের কাছে ইংরেজিটাই নিজের ভাষা থেকে প্রাধান্য পায়। তাই তারা জেনে বা অজান্তে সাদা চামড়ার ভিনদেশিকে আলাদা চোখে দেখে, আলাদা একটা খাতির মন থেকে উঠে আসে। আবার কিছু মা্নুষের মাঝে হলিউড বা ইংরেজি সিনেমা দেখে সেই ফ্যান্টাসি টাকে গুলিয়ে ফেলে নিজের লাইফের সাথে। তখন সাদা চামড়া মানই তাদের কাছে রুপোলি জগতের কেউ..

ভালো লাগলো পড়ে।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

মরুদ্যান এর ছবি

মেটা ব্লগিং? সুমাদ্রীর আগের পোস্টের মন্তব্য হিসাবে আসা উচিৎ ছিল।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

কে কাকে তৈলমর্দন করবে এটা একান্তই বাক্তিগত পছন্দ। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এটা অযোগ্যতার ঘাটতিটুকু মেটাতে ব্যবহার করা হয়। আর অনেকের স্বভাব আছে তেল মারা, প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে। তবে নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে জেনারেলি এশিয়ার আরও দেশ আছে যাদের মানুষেরা আমাদের অপেক্ষা অনেক দক্ষ তেলবাজ। ব্যাক্তিগতভাবে আমার কাছে তেল মারামারি নোংড়া এবং অপ্রয়োজনীয় একটা কাজ বলে মনে হয় এবং আমি এর ধারকাছ দিয়েও হাটিনা।

অপরকে তৈল মর্দন আর জি হুজুর আমাদের ভিতরে একেবারেই যেন ইনবিলট। দেশের ভিতরে এই চিত্র সবখানেই চোখে পড়ে। আমার থেকে যে একটু সুপিরিওর তার করে চলা অনেক আবদার নিয়মের বাইরে হলেও আমরা পূরণ করে থাকি। আবার আমার থেকে অনেক ইনফিরিওর( এখানে আমার থেকে নিচু পোস্টের কাউকে বোঝাতে ) কারো কাছ থেকে যদি কোন উদ্দেশ্য হাসিলের কোন সম্ভাবনা থাকে তবে তার জুতা পালিস করে দিতেও আমরা কুণ্ঠিত নই। দেশের ভেতর এটাই চলছে হরহামেশাই ।

এটা একেবারেই জেনারেল মন্তব্য হয়ে গেলো। ঢালাওভাবে এটা বললে দেশে যারা সৎ, নীতিবান বা যোগ্য মানুষ আছে তাদেরকে অবজ্ঞা এবং অপমান করা হয়ে যায়।

অফিসে একজন কালো আফ্রিকান আসলে আমরা খুব কমই আগ্রহ নেই তার ব্যাপারে অথচ একজন সাদা চামড়ার কাউকে পেলেই হয় -তাকে পাশে দাড় করিয়ে একটা ছবি না নিলেই নয়। এরপর শুরু করে দেই বিভিন্ন রকম কথাবার্তা আর তোষামোদ । তারপর সুকৌশলে তার হোম এড্রেস নিয়ে নিতে পারলেই হয় ,ওই দিনের জন্য নিজেকে খুব সার্থক মনে হয়।

এটা আপনার নিজের বা আপনার সার্কেলের এ্যাটিচ্যুড হতে পারে, সমস্যা নেই। কিন্তু এটাও যদি ঢালাওভাবে সবার উপর চাপিয়ে দেন, সেখানেও আমার আপত্তি থাকবে।

রেসিজম একটা খারাপ বিষয় এটা নিয়ে কোনও কথা নেই। তাই রেসিজমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরী। একইভাবে সাদা-কালো নির্বিশেষে তেল মারাটাও মন্দাভ্যাস। ঢালাওভাবে নিজেদেরকে একটা বর্ণবাদী জাতি হিসেবে দাঁড় করানোটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। হাঁ, আমাদের মধ্যে কমন কিছু আচরণ আছে বা থাকতে পারে যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বর্ণবাদকে প্রতিষ্ঠিত করে, সেগুলো থেকে কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে আলোচনা বরং বেশি ফলপ্রসু হবে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অমি_বন্যা এর ছবি

রাতঃ ভাই , আমি আসলে এটাকে একেবারেই জেনারেলাইজ করতে চাইনি হয়তো বলাটা ওইরকম হয়ে গেছে। অবশ্যই আশেপাশে যারা এগুল করছে তাদেরকেই বুঝিয়েছি।
আর এ্যাটিচ্যুড এর কথা বললেন - এটা আমার দেখা আমার পেরিফেরির মধ্যের মানুষগুলো , যাদেরকে সর্বদাই এগুল করতে দেখছি । আর তখনই খুব কষ্ট পায়। এখানেও জেনারেলাইজ করার কোন উদ্দেশ্য আমার নেই তবে এটুকুই বলতে চাই আমরা জারা এগুল করছি তারা প্রকারান্তরে দেশের ইমেজকেই ক্ষতিগ্রস্থ করছি। এগুলো থেকে বের হওয়া জরুরী।
আর আপনার শেষের প্রস্তাবনার সাথে একমত- এগুলর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা বা এগুলো থেকে বের হওয়ার মোটিভেশন অনেক জরুরী।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শিরোনামে সহমত।

Monjur Elahi এর ছবি

আমি বন্যা , ছোট বেলায় বিলাতি মেম কিংবা সাহেবদের পেছনে কৌতূহলী বাঙ্গালির লাইন দেখে হেমিলনের বাঁশি ওয়ালার কথা মনে পড়ে যেত । নতুন কোন বেক্তি বা বস্তুর প্রতি দুর্নিবার আগ্রহ বা আকর্ষণ বাঙ্গালির স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য । আপনি মতিঝিল কিংবা ফার্মগেটে এক পলক কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকুন , একটু পরে দেখবেন আপনার আশেপাশে অনেক বাঙালি জড়ও হয়ে আপনি কি দেখছেন তা বোঝার চেষ্টা করছে। এটাই বাঙ্গালির ধর্ম। আমাদের দেশে বর্ণবাদ কোন ইস্যু নয় । তবে কালো মানুষের প্রতি বাঙ্গালির আগ্রহ তুলনা মুলক ভাবে কম , কারন বাঙ্গালির গায়ের রঙ কালোদের কাছাকাছি , তাই ওদেরকে ভিনদেশী ভাবা হয়না যতটা ভাবা হয় সাদা চামড়ার মানুষদের । আপনার দুর্ভাগ্য , আশে পাশে দুই একজন বলদ টাইপের মানুষ পেয়েছেন যাদের আটিচুড বর্ণবাদ দুষ্ট । তাদের দায় দায়িত্ব সকল বাঙালি কেন নেবে ?

অমি_বন্যা এর ছবি

আমি সকল বাঙালির উপর সেই দায় চাপাছছিনা। তবে এই দোষে দুষ্ট লোকের সংখ্যা দুই একজন বললেন কেন জানিনা, আমার দেখা অনেকেই এর মধ্যে পড়েছে। আর আমার আশেপাশের যে লোকগুলোকে আপনি বলদ বলছেন তাদের শিক্ষা, যোগ্যতা কিন্তু বলেনা যে তারা এই জাতীয় কোন শ্রেণীতে তারা পড়ে। আর বলদরাই কি শুধু বর্ণবাদ দুষ্ট হয় নাকি?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি যা বলছেন আমি সবজায়গাতেই "বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই" শব্দগুলো জুড়ে নিয়েছি। আর তা প্রযোজ্য হলে কথাগুলো সত্যিই — "বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই।" হাসি
সাদাদের তোয়াজ করা'র ব্যাপারটার সাথে প্রমোশন ইত্যাদি জড়িত থাকে। বিদেশী সংস্থার "বস"রা সাধারণত এদেশী হন না। আরো একটা কারন হলো আমাদের বেশীর ভাগেরই ধারনা পশ্চিমাদের সবাই আমাদের চাইতে যোগ্যতর। বেশীর ভাগ না হলেও বহুবার দেখেছি উল্টোটাই সত্যি। যোগ্য দেশীদের ব্যবহার করে অনেক অযোগ্য সাদারা তাদের নিজেদের নামে অনেক সাফল্যের রেকর্ড করে আর সুবিধা নিয়ে নেয়। একটা কথা অনেকেরই খেয়াল থাকেনা বা জানেনও না যে যে লোকটার আমেরিকা, ইউরোপ তথা অন্য কোন "উন্নত" দেশে প্রয়োজন নেই অথবা সেই প্রতিযোগীতাপূর্ন পরিবেশে অপেক্ষাকৃত অযোগ্য, তাদেরকেই এখানে পাঠানো হয়ে থাকে (বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই)। এটা কিছুটা বাংলাদেশে কাউকে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান বা এরকম কোন দুর্গম এলাকায় পোস্টিং দিয়ে দেয়ার মত। ট্রাফিকজ্যাম, নিরাপত্তাহীনতা আর নানা প্রতিকুলতাপূর্ন দেশে সবাই সখ করে আসেনা।
তবে এর ব্যাতিক্রমও হয়: যেমন ট্রপিক্যাল মেডিসিন নিয়ে কাজ করতে চাইলে সাইবেরিয়ায় কাজ করা অর্থহীন। গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে গবেষনা করতে চাইলে বাংলাদেশেই একজন যোগ্য "সাদা" মানুষ আসবেন — এরকম আরকি। অযোগ‌্য সাদাদের প্রাদুর্ভাব প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রগুলোতেই বেশী। অনেকেই আসেন নানান বিচিত্র কারনেই, নানা রকম ভালোবাসায়।

লতিফ হোসাইন

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।