এটা অনেক অনেক দিন আগের কথা । লঙ্কার রাজা রাবণের মত রাক্ষস- দৈত্য- দানোও তখনো জন্মায়নি, রাম-লক্ষণ বা ঈসা-মুসারও কোনও খবর ছিল না । হাজার হাজার বছর আগের কথাও না এটা । ডাইনোসররা দাপিয়ে বেড়াতো যখন তার চেয়েও আগের, কোটি কোটি বছর আগের উপাখ্যান ।
মহাবিশ্ব নামক এক জায়গায় ঈশ্বর নামের সর্বশক্তিধর, সর্বজ্ঞানী একজনের আবির্ভাব হল । তিনি তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়ে মহাবিশ্বের সবকিছু জয় করলেন । আসলে জয় করার কথা বলা ঠিক হল না, তাকে আসলে কোন যুদ্ধেই অবতীর্ণ হতে হয় নি । কারণ সমগ্র বিশ্বই ছিল স্থবির, রুক্ষ । প্রাণহীন । তাঁর সামনে দাঁড়ানোর মত কেউ ছিল না । তাই বিনাবাধায় একে একে বিশ্বের আঁনাচে-কানাচে তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হল । জয় রথ ছুটল ।
এভাবে দিগ্বিদিক ছুটতে ছুটতে ঈশ্বর একদিন অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখলেন । তাঁর বিশাল রাজ্যের একপ্রান্তে, অদ্ভুত এক গ্রহের সন্ধান তিনি পেলেন । রুক্ষ নয়, প্রাণহীন নয় । সেখানে প্রাণের প্রকাশ আছে- উদ্দাম- উচ্ছল- দুরন্ত প্রাণ । অদ্ভুত । তিনি যা কখনো দেখেন নি আগে। তিনি কেবল তাঁকে চেনেন আর চেনেন তাঁর দাসী-বান্দিদের । এইসব প্রাণ তাঁর কাছে অচেনা ছিল । তিনি মুগ্ধ হলেন তাঁর রাজ্যের প্রান্তের এ পার্থিব রূপে ।
এবার তিনি এই গ্রহটিকেও তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেন । আগের সকল কিছু যা কিছু তিনি অর্জন করেছেন সব ছিল স্থবির, তাই সর্বক্ষেত্রে তিনি মনে করে গেছেন সবাই তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে । কিন্তু এবার সেটার ব্যত্যয় হল । প্রাণের এই মেলা যার যার নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলো, ঈশ্বরের দিকে কেউ ভ্রুক্ষেপও করলো না । ঈশ্বর এই প্রথমবার তাঁর কাজে বাঁধা পেলেন । তিনি বৈঠকে বসলেন তাঁর দাসী-বান্দিদের নিয়ে ।
কী করা যায়? ধ্বংস করে দেবেন এই গ্রহ? না এটা করলে তো গ্রহটা হারিয়ে যাবে । তাঁর তো গ্রহটাকে চাই, এমন সুন্দর, সুজলা-সুফলা ভাবে । কী করা যায়?
দাসী-বান্দিদের কাছে ঈশ্বর পরম পূজনীয়, মহান, কারও কোন অনিষ্ট যিনি করেন না । তাই ঈশ্বর এ গ্রহটাকে ধ্বংস করতে পারেন না, এ গ্রহের বসবাসকারী প্রাণীদের বন্দিও করতে পারেন না, জোরও করতে পারেন না তাঁর বশ্যতা স্বীকার করার জন্য । ইমেজ বলে একটা কথা আছে ।
দাসী-বান্দিরা বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে এলো । কেউ বলল আক্রমণ, আক্রমণ ছাড়া কোন কথা নাই । কেউ বলল ছলে-বলে-কলে-কৌশলে কাজ করতে । তিনি চিন্তায় মগ্ন হয়ে উপায় খুঁজে বের করলেন কিন্তু ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার না করে ধীর স্থির ভাবেই বললেন পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি পাঠানো হোক । সবকিছু রেডি করো ।
রেডি হল প্রতিনিধি- এক দুপেয়ে জন্তু । ঈশ্বর তাঁর জ্ঞানের বেশ কিছু অংশও দুপেয়ে’কে দিলেন যেন দুপেয়ে গ্রহটিতে এসে রাজত্ব করতে পারে, এ গ্রহের অন্য প্রাণীদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারে এবং পরবর্তীতে ঈশ্বরের অধীনে এই গ্রহটিকে ন্যস্ত করতে পারে । এতে গ্রহটিও তাঁর অধীনে চলে যাবে আবার তাঁর ইমেজও একফোঁটা নষ্ট হবে না । অসাম বুদ্ধি ।
মন-প্রাণ, বুদ্ধি-বিবেক, উন্নত মস্তিষ্ক নামেও নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অত্যাধুনিক ফিচার দুপেয়ে’তে সন্নিবেশিত করা হল যাতে ভাল-খারাপ বিবেচনা করে সে সেই কাজটাই করতে পারে, যে কাজটা এই গ্রহকে ঈশ্বরের অধীনে নিয়ে আসবে কিন্তু ঈশ্বরের ভাবমূর্তি এতটুকুও ক্ষুণ্ণ হবে না । যাতে ঈশ্বরের ইমেজে কোনরূপ কালিও লাগবে না ।
ব্যাপারটা এমনভাবে সাজানো হল- দুপেয়ে গ্রহে যাই করুক না কেন তার দায় কেবল দুপেয়ে’র । ভাল করলেও দুপেয়ে’র, খারাপ করলে তো কথাই নাই । ঈশ্বর নিজে মহাসুখে তাঁর অমরাবতীতে বসবাস করেন সাথে থাকে অনেক অনেক দাসী-বান্দি । এখানে কেবল সুখ আর সুখ । দুপেয়ে এই সুখ ছেড়ে অপরিচিত ঐ ভিনগ্রহে যে যেতে আগ্রহী ছিল না তা বলাই বাহুল্য । কিন্তু দুপেয়ে’র আগ্রহ দিয়ে তো আর ভিনগ্রহ জয় হবে না । ছলে-বলে দুপেয়ে’কে ঈশ্বর তাঁর অমরাবতী থেকে বের করে দিলেন আর তাই অসাধারণ এক নাটক অমরাবতীতে মঞ্চায়ন হল । দুপেয়ে অমরাবতী ছেড়ে ভিনগ্রহে এসে পড়ল ।
যাই হোক দুপেয়ে ইচ্ছাতেই হোক আর অনিচ্ছাতেই হোক ভিনগ্রহে বসবাস শুরু করল- ঈশ্বর প্রদত্ত মহাজ্ঞানের ছিটে-ফোঁটাও ভিনগ্রহে প্রয়োগ করতে শুরু করল । সেই মহাজ্ঞানের আলোকছটায় চারিদিক আলোকিত হতে লাগল । কিন্তু এত আলো এ গ্রহে বসবাসরত আদিম প্রাণীদের মধ্যে অনেকেই সহ্য করতে পারল না- তাঁদের চেনা গ্রহ অচেনা হয়ে গেল তাঁদের কাছে । তাঁরা দুপেয়ে’দের মত এত বুদ্ধিমান ছিল না যে আলোর বিপরীতে আঁধার তৈরি করবে, আলোর উজ্জ্বলতা কমাবে । বরং আস্তে আস্তে কোণঠাসা হয়ে একসময় বিলুপ্তির দিকে যেতে লাগল । এত উজ্জ্বল আলোতে কেবল তাঁদের চোখই ঝলসেই গেল না বরং জীবনও ঝলসে গেল । চেনা গ্রহ থেকে তাঁদের একসময় বিদায় নেয়ার ক্ষণ গণনা সেই থেকে শুরু হল ।
সেই গণনা এখনো চলছে । জ্ঞানের দীক্ষা হজম করতে না পেরে এখনো আদিম চেনা সেই গ্রহের অনেক প্রাণী তাঁদের জন্মভূমি গ্রহটি ছেড়ে অজানায় পাড়ি জমাচ্ছে ।
দুপেয়ে ভালই আছে বলা যায় । খায়-দায়, বগল বাজায় । গ্রহ জোড়া তাঁর রাজত্ব । অমরাবতীতে ঈশ্বরের মাতব্বরি তো ছিলই তার সাথে ছিল ঐ দাসী-বান্দিদের গাঁ জ্বালা করা আচরণ । এখানেই ভাল, এই ভিনগ্রহে সে এখন অনেক পরিচিত, সবচেয়ে ক্ষমতাবান । কেউ আর এখানে তাঁর ওপর মাতব্বরি দেখাতে আসেনা । ভালই চলছে দিনাতিপাত ।
ঈশ্বর এখন কী করেন দুপেয়ে তা জানে না । যোগাযোগ নেই । না থাকুক । তবে ভিন গ্রহ জুড়ে রাজত্ব পাইয়ে দেয়ার জন্য কিন্তু অনেক দুপেয়ে ঈশ্বরকে এখনো পূজা দেয় নিয়মিত । ঈশ্বর মনে হয় পূজাতে সন্তুষ্টই তা নাহলে অনেকদিন যে বার্তা বাহক আসছে না! নাকি এতদিনে সেই ভিনগ্রহটি ঈশ্বরের বশ্যতা স্বীকার করেছে!?
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
*কতটুকু কী লিখলাম জানিনা । তবে যাই হোক লেখাটি উৎসর্গ করছি জর্জ এবং আরও অন্যান্য সকল পশু-পাখি-গাছকে যারা মানুষের নির্বুদ্ধিতায় পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছে ।
৩০.০৬.২০১২
কড়িকাঠুরে
মন্তব্য
দুর্দান্ত গল্প
অনেক ধন্যবাদ লীলেন দা...
কড়িকাঠুরে
দুর্দান্ত হইছে। খুবই ভালো লাগলো।
____
আইলসা
ভালো লেগেছে জেনে তো আমারো অনেক ভালো লাগলো...
শুভেচ্ছা ও ফ্রী-
কড়িকাঠুরে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও কবি ভাই।
কড়িকাঠুরে
কড়িকাঠুরে
বাহ
ভালো থাকুন- উদাস থাকুন-
কড়িকাঠুরে
সুন্দর লেখা। বারবার পড়ার মতো।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
অনেক ভালো থাকুন-
কড়িকাঠুরে
কড়িকাঠুরে
কড়িকাঠুরে
এরকম আরও কিছু আশা করছি আপনার কাছ থেকে।
হিল্লোল
আসলে প্লট'টা মাথায় ঘুরছিল অণু ভাই'র জর্জকে নিয়ে এই লেখা থেকে তারপর দেখলাম মুর্শেদ ভাই'র স্ট্যাটাস- এরপরই লিখতে বসা ।
কীভাবে গোছানো যায় এটাই সমস্যা ছিল- যে কাজটা আমি ভাল পারিনা ।
যাই হোক কতটুকু কী হয়েছে আপনারা বলবেন- আমি চেষ্টা করবো-
কড়িকাঠুরে
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
কড়িকাঠুরে
বাহ্... সুন্দর
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই...
কড়িকাঠুরে
ভাল লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ ।
কড়িকাঠুরে
ভাল লাগল, আরও বড় ক্যানভাসে ছড়িয়ে দিতে পারতেন
facebook
কইছ্ছে কীরে মামুর বুটা- অণু'দা...
এতটুকুই কত কসরত করে দাড়া করালাম সে যদি দেখতেন-
দেখি(এটা আমার কমন উত্তর যেকোন বিষয়ে)...
অনেক ভাল থাকবেন-
কড়িকাঠুরে
অনেক ধন্যবাদ...
কড়িকাঠুরে
দারুণ!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কড়িকাঠুরে
অসাধারণ । আপনি আরও লিখুন।
চেষ্টা করবো...
চমৎকার লাগল। পরেরটার প্রত্যাশায়।
খুব খুব ভালো লাগল।
অনেক ধন্যবাদ ।
নতুন মন্তব্য করুন