অফিসের কাজে দিনাজপুর গিয়েছিলাম গত মাসের ১৩ তারিখ। প্রথমদিন গিয়েই খোঁজ নিলাম লিচুবাগানের। অফিসের পিয়ন বলল কাছেই দীঘণ নামক জায়গায় বাগান আছে। পরদিন সে ঐ বাগান থেকে প্রতিশত ২০০ টাকা দরে লিচুও কিনে নিয়ে আসল আমাদের খাওয়ানোর জন্য। এবারতো আর তর সয়না। যেতেই হবে বাগানে। অফিস শেষে বিকালে গেলাম। বাগানে ঢুকেই কিছু বলার আগেই গপাগপ লিচু মুখে পুরেই চোখ বন্ধ। সৈয়দ মুজতবা আলীর "রসগোল্লা" গল্পের কথা মনে পড়ে গেল-"ঠিক ঝাড়া আড়াই মিনিট"।
এবার শুরু হল দরদাম। লিচুবাগানে আমাদের হালিচু (হাভাতের লিচু সংস্করণ ) অবস্থা দেখেই হয়তো মালিক দাম চেয়ে বসল প্রতিশত ৩০০টাকা। আমরা বললাম এখান থেকেই যদি এত দামে কিনতে হয় তাহলে ঢাকা - চট্টগ্রামে তো ৬০০-৭০০টাকায় বিক্রি করতে হবে। তখন উনি বললেন ঢাকা - চট্টগ্রামে তো ১০০ লিচু কিনলে বড়জোর ৭৫-৮০টা পাবেন। আর তাছাড়া এখন লিচুর সিজন শেষের পথে, আর হয়তো এক সপ্তাহ বাগানে লিচু থাকবে, তাই এই অবস্থা। কি আর করা। ২৫০টাকা দরে বললেও রাজি না হওয়ায় "পেটে তোমার পিলে হবে, কড়িকুষ্ঠ মুখে" এভাবে শাপ-শাপান্ত করতে করতেই খালি হাতে ফিরে আসতে হল। পরদিন খোঁজ নিলাম দিনাজপুরের বিখ্যাত মাসিমপুরের লিচুর। গিয়ে দেখলাম লিচু শেষ। হায় খোদা! দিনাজপুরে আসার সময় বাসা থেকে বলে দিয়েছে লিচুর কথা। বাসার পিচ্চি ভাগ্নে প্রতিদিন মোবাইলে একবার করে মনে করিয়ে দেয় লিচু পাঠানোর কথা। এখনতো দেখি ইজ্জতই থাকবেনা।
এক বাগান-মালিক সমাধান দিলেন। ওখান থেকে ১২-১৩ কিমি দূরে আমতলি নামক জায়গায় উনার ছেলের বন্ধুর লিচু বাগান আছে। সাথে সাথেই দে ছুট! গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড। বাগান ভাঙ্গা হচ্ছে।
প্রথম কাজ বিভিন্ন গাছের লিচু চেখে দেখা। এবার লিচু পছন্দ হলেই নিজ হাতে সে গাছ থেকে লিচু পেড়ে হপাহপ পেটের ভিতর চালান করে দেয়া।
এবার শত ২৫০ টাকা দরদাম করে চট্টগ্রামে পাঠানোর জন্য আর নিজে খাওয়ার জন্য ৫০০ লিচু কিনলাম। অবশ্য আরও বেশি পাঠানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ছোট টুকরি কেনার অপরাধে তা সম্ভব হয়নি।
বকরবকর অনেক হল। আসেন এবার লিচু খাই। বাগান থেকে নিজ হাতে লিচু পেড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।
মন্তব্য
বাহ! দারুন তো। আমি এমন বাস্তবে গাছে এমন ফলন্ত লিচু তো দূরের কথা ছবিও দেখি নাই।
খুব ভালো লেগেছে ছবিগুলো দেখে। আপনার লেখার ধরনটাও ভালো লেগেছে। সাবলীল। কিন্তু ভাই, আপনার নামতো লিখলেন না, ধন্যবাদ জানাচ্ছি কাকে সেটা জানতে পারছি না। তারপরেও ধন্যবাদ, লেখার জন্য, ছবির জন্য।
নির্ঝরা শ্রাবণ
নির্ঝরা শ্রাবণ
ছবি তো সেরম হইছে, লিচুর ছবি দেখেই মন ভরল।
ডুপ্লিনির্ঝরা শ্রাবণ
নির্ঝরা শ্রাবণ
ইশ ! ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছিল হাত দিয়ে ছিড়ে নিয়ে টুপ করে মুখে দিয়ে দেই
মুখে পুরেই কিন্তু ঠিক আড়াই মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে।
নির্ঝরা শ্রাবণ
ছবি ই খাই
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
কবি ক্রেসিডা,
ছবি খাইলে কি পেট ভরব? তারপরও খান। কারণ এই ছবি লিচুর মত-ই ফরমালিন মুক্ত
নির্ঝরা শ্রাবণ
দিনাজপুরে ছিলাম আমি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আব্বুর চাকরীর সুবাদে। আমাদের বাসার পাশের বাসায় ছিল তিনটা বিশাল লিচু গাছ। যেদিন লিচু পাড়া হত, প্রায় হাজারের মত লিচু কেনা হত। আর আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লিচু পাড়া দেখতাম। আপনার ছবিগুলো দেখে তখনকার কথা মনে পড়ে গেল।
নিকটা জানা হল না!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ কবি পড়ার জন্য।
আমি নির্ঝরা শ্রাবণ
আসলে তাড়াহুড়ায় নিক দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
লিচু এমন লাল হওয়ার কার্য-কারণ কী?
আগে জানতাম, লিচুতে ফরমালিন দেয়া যায় না। এবার খবরে পড়লাম, বিষাক্ত লিচু খেয়ে কোন স্কুলের একদল বাচ্চা মারা গেল।
১ম ছবিটা খুব মজার
শিমুল ভাই,
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। প্রথম ছবিটা আমার এক কলিগের তোলা। আমিতো তখন খাওয়াতেই ব্যস্ত। লিচুর ফরমালিনের বিষয়টা আমিও দেখলাম দিনাজপুর গিয়ে। বাগান থেকে যা কিনলাম তা ছিল বোম্বে জাতের লিচু। বেদানা ও চায়না-৩ জাত খাওয়ার জন্য গেলাম শহরের কোতয়ালি থানার মোড়ে । সেখান থেকে ৫০টা চায়না-৩ জাতের লিচু বাসায় এনে দেখলাম আমার বোম্বে লিচু ২-৩ দিনেই নষ্ট হতে শুরু করলেও বাজারের চায়না-৩ এক সপ্তাহেও কিচু হয়না। তখনি সন্দেহ হল। কারণ, চায়না মাল তো এতদিন টিকেনা।
আর দিনাজপুরে ১৩ জন বাচ্চা মারা গিয়েছে বাগান থেকে কীটনাশক দেয়া লিচু পেড়ে খেয়ে।
নির্ঝরা শ্রাবণ
জরিমানা করা হল, কমপক্ষে এক ঝুড়ি লিচু!
আহা, কত স্মৃতি মনে দোলা দিয়ে গেল।
facebook
অণু ভাই,
ধন্যবাদের সহিত জরিমানা গৃহীত হইল।
নির্ঝরা শ্রাবণ
লিচুর রং দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘাপলা আছে, অতটা লাল তো হ্ওযার কথা নয়। আমার বাড়ি বগুড়া; দিনাজপুরের বিখ্যত বেদানা লিচু আমার গাছে রং বিহীন ফলেছে (দিনাজপুরে্ও লিচু সে রকমটাই দেখেছি।), স্বাদ কিন্তু ঠিকই আছে।
রং এর ব্যাপারটা নিয়ে জানিনা। আমি যখন লিচু কিনতে যায় তখন দিনাজপুরের স্থানীয় লোকই সাথে ছিল।
নির্ঝরা শ্রাবণ
আহ লিচু!
আর কতো স্মৃতি!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
স্মৃতির ডালিটা এবার খুলুন শিমুল'পা
নির্ঝরা শ্রাবণ
(গুড়)
নির্ঝরা শ্রাবণ
আর লিচু। ঢাকায় যে পিচ্চি পিচ্চি লিচু একেক্টা ৩/৪ টাকায় বিক্রি করে তাতে আর খাওয়া হয় না। আর ওই কীটনাশক / ফরমালিনের ভয়তো আছেই। ছবি দেখেই মন্টা খারাপ হয়ে গেল।
ধন্যবাদ ভাই আমাদের সাথে চমৎকার ছবি এবং লেখা শেয়ার করার জন্য।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
ধন্যবাদ জুন,
একই ভয়ে আমিও গত কয়েক বছর আম-লিচু ঘরে আনিনি। এবার যা দিনাজপুর থেকে এনেছি ওটুকুই। বাইরে থেকে আর কিনিনাই।
নির্ঝরা শ্রাবণ
লিচুর উপ্রে কিছু নাই, তবে ল্যাংড়া-হিমসাগর খাইয়াও এমুনি মনে হয়
_____________________
Give Her Freedom!
ঠিক কইছেন ঈষৎ ভাই,
তবে আম একের পর এক কইরা কেজি দশেকও চাইলে এক বসাতেই সাবাড় করে ফেলা যায়, লিচু আমি অতটা টানতে পারিনা
নির্ঝরা শ্রাবণ
আগামী বছরে বেঁচে থাকলে দিনাজপুর যাবই যাব।
ধন্যবাদ মুরব্বী,
যাওয়ার সময় আমাকেও সাথে নিয়েন, একসাথে মাসিম্পুরের লিচুবাগানে যাব।
নির্ঝরা শ্রাবণ
ফলের দুইন্যায় আমের পরে এই জিনিসটাই আমার ব্যাপক পছন্দ। ছবি দেখেই আধামরা হয়ে গেলাম।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূগোদা,
ছবি দেইখাই যদি আধামরা হইয়া যান খবরদার আর লিচু মুখে নিয়েন না। ঘ্রাণ নেন। ঘ্রাণেই অর্ধভোজন । তাইলে দুইবার নিলে পূর্ণভোজন হইয়া যাইব
নির্ঝরা শ্রাবণ
লিচুর এত চমৎকার ছবি আর কখনো দেখিনি। ছবিগুলো দেখে লিচুবাগান না দেখার অতৃপ্তিটা একটু কমলো। লিচুর এই জাতটা বোধহয় লাল। এটা চোখা টাইপ সাইজ। আরেকটা আছে লাল সবুজ মিশেল গোলাকার। ওটা বোধহয় রাজশাহীর। আমার জ্ঞানের উৎস অবশ্য ফুটপাতের লিচুওয়ালা
তবে বিষাক্ত লিচুর কথা শুনে ভয় পেলাম। কারণ দুনিয়াতে আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল আম আর লিচু। এই দুইটার মধ্যেই এত ভেজাল এখন
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নীড়সন্ধানী,
এবারই আমার প্রথম দিনাজপুর যাওয়া ও লিচুবাগান দেখা। লিচুর জাত চায়না-৩, বোম্বে আর বেদানা এই ৩ টা ওইখানে গিয়েই চিনলাম। আপনার মত আমার এখন একই ভয়। এমনকি দিনাজপুর থেকে কিনলেও বিষ বা ফরমালিনের গ্যারান্টি দেয়া যাচ্ছেনা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন
নির্ঝরা শ্রাবণ
প্রথম ছবিটা দেখেই মনটা এত উদাস হয়ে গেল যে কী বলব!
কৌস্তুভদা,
লন একটু (গুড়) খান। এইটা খাঁটি আমাগো দেশী ফল । নজর লাগায়েন্নে কইলাম।
নির্ঝরা শ্রাবণ
বেঁচে আছেন দেখি!!!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
স্বপ্নহারা ভাই,
কারে কইলেন?
নির্ঝরা শ্রাবণ
না, লিচু খাইয়া বাঁইচা আছেন দেখে অবাক হইলাম!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ও আইচ্ছা,
ভাই এইটা আপনাগো দোয়া
নির্ঝরা শ্রাবণ
আমাদের উঠোনে রকম একটা লিচু গাছ আছে। গাছ ভর্তী টুকটুকে লাল লিচু ধরে প্রতি বছর। আর গাছে লিচু ধরলে পাখিদের ঈদ লেগে যায়। ওদের দিনভর কিচির মিচিরে পুরাই মাথা নষ্ট !
আপনার পোস্ট আর ছবি - দুটোই সুন্দর
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
উচ্ছলাদি,
নির্ঝরা শ্রাবণ
আপনার এই ষড়যন্ত্রের জন্য এখন আমাকে দোকান থেকে ক্যানের লিচু কিনে এনে খেতে হচ্ছে। দিক্কার...
কৌস্তুভদা,
খান খান, মন ভইরা খান। মা-বাবায় কয় মধু মাসে মধু ফল অল্প হইলেও খাওয়া লাগে। যাক দুধের স্বাধ অন্তত ঘোলে তো মিটল
নির্ঝরা শ্রাবণ
কৌস্তুভদা,
খান খান, মন ভইরা খান। মা-বাবায় কয় মধু মাসে মধু ফল অল্প হইলেও খাওয়া লাগে। যাক দুধের স্বাধ অন্তত ঘোলে তো মিটল
নির্ঝরা শ্রাবণ
ছবি দেখেই তো খেতে ইচ্ছা করছে এখন! লিচু ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে খেতে খুব মজা লাগে।
প্রহরী দা,
লিচুর এই তরিকা তো জানা ছিলনা।
নির্ঝরা শ্রাবণ
ছোট থাকতে একবার লিচু বাগানে গিয়েছিলাম। রূপকথার গল্পে যেরকম বর্ণনা থাকে ওরকম। চারদিকে লাল লাল ডোপা ডোপা ফলে গাছ নুয়ে ছিল। আহা!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নতুন মন্তব্য করুন