দিল্লী কা লাড্ডু

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৭/২০১২ - ৮:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“দিল্লী কা লাড্ডু” না খেয়ে পস্তাতে ষোলোর উপর বত্রিশ আনা রাজী ছিলাম আমি। এখনো ঐ সময়ের ঐ সঠিক উপলব্ধির জন্য নিজেকে “বিশিষ্ট জ্ঞানী” মনে করি। চঞ্চল যৌবনেও আমি দিব্য চোখে আমার বিবাহিত ভবিষ্যৎ কিভাবে যে দেখতে পেতাম তা মহান বিধাতাই জানেন। জ্ঞানী-ই ছিলাম বটে (এখন রেজিসটারড বেকুব)। পড়াশোনার ঘেরাটোপ শেষ করে করে একটা বড় নামকরা কোম্পানিতে মোটামুটি বেতনের চাকরী আমাকে আরও অনেক যুবার মত “এবার শুভ কাজ টা করার সময় হোলো” টাইপ বোধের উদয় করতে পারেনি। তখন ভাবতাম জীবন তো সবে শুরু! পারিবারিক, সামাজিক গণ্ডীতে এলিজিবল ব্যাচেলর ভাব নিয়ে চলাটা বেশ উপভোগ করতাম। কেউ যদি এই কথাটা অস্বীকার করে সে একটা বড় হিপোক্রেট বৈ কিছু নয়। যাই হোক আমি বেশ ভালই ছিলাম।

পুরো বংশে - চাচাতো, ফুফাতো, খালাত, মামাত সব ভাই বোনের মধধে আমার অবস্থান সবার আগে হওয়াতে চাপটা একটু বেশী-ই ছিল আমার উপর। তাদের অনেকেই রীতিমত ইউনিভার্সিটির সেশন জট এর মতই আটকে হাঁসফাঁশ করছিলো, তার প্রমান আমার শুভ প্রনয় এর দেড় বছরের মধধে পাঁচ জনের ঝটপট কর্ম সম্পাদন। ইশ! একটু অপরাধ বোধ হয় বৈকি, কত বদদোয়া জমেছে আল্লাহ জানেন আর আমার কাজিনরা-ই জানে। ওদের মতো মেয়ে/ছেলে পটানো জ্ঞান তো আর আমি অকালে শিখতে পারিনি (কালেও পারিনি)। বহু বুজুরকি করে তবেই শুভ কাজে ঠেক টা দিয়ে রাখতে হয়েছে। মা বাবার সব প্রচেষ্টা কে পাশ কাটাই তো আরেক দিক থেকে আক্রমণ। আত্মীয় স্বজন এর বাইরে সহকর্মী দেরও এই ব্যাপারে উৎসাহের কোনও কমতি নাই। কখনও সখনো যৌবনের শিহরনে একটু যে টলে যাইনি বলা যাবে না। তবে লখখে স্থির ছিলাম ঠিক-ই।

চাকরী ভাগ্য গুণে দিব্যি একটার পর একটা চাকরীও পালটাচ্ছিলাম। ধরা যেন সরা। জীবন টা কত সহজ আর সুন্দর, কত উপভোগ্য মনে হতো! মাস শেষে বেতনটা যখন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ জমা পড়ত, সেটা তোলার ও খুব একটা তাড়া থাকতো না। বাসায় বাবা মাকে টাকা পয়সা দেয়ারও তেমন কোনও ব্যাপার ছিল না। সারা দিন অফিস আর সন্ধ্যায় আড্ডাবাজি, ভাল কোনও রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে বন্ধু বান্ধব সহযোগে নতুন নতুন মেন্যু চেখে দেখা, সপ্তাহান্তে গাড়িতে চড়ে লং ড্রাইভ, অথবা দূর কোনও দর্শনীয় স্থান ভ্রমন, জীবন টা খাসা….। আত্মীয় স্বজন এর বাড়ি যাওয়ার মতো সামাজিক দায়িত্ব জ্ঞান বরাবরই কম ছিল। খুব সহজ এবং গ্রহণযোগ্য অজুহাত ছিল অফিস এর মহা ব্যাসতোতা আর অফিস শেষে ইভনিং এমবিএ যা বিবাহ নামক জুজু থেকে দূরে থাকতেও আমাকে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করেছে দীর্ঘ তিন বছর (অবশ্য কষ্টের-ই ছিল দিন গুলি)। মাস শেষে টাকা পয়সায় টান না পড়লেও খুব বেশী একটা আর বেঁচে থাকতো না। আমার উড়নচণ্ডী জীবন তার আর সুযোগ রাখতো না। ছ- সাত বছর বেশ মাস্ত মাস্ত কাটল। বিবাহিত বন্ধুরা করুণ ঈর্ষার চোখে আমার দিকে তাকায় কিন্তু বুঝতে দেয় না ওদের লুকানো কষ্টের কথা। ওদের শুধাই, ‘কেমন চলে বন্ধু?’। উত্তর, ‘হেভেনলি’। আমি মনে মনে ‘বিশিষ্ট জ্ঞানী’ হাসি দেই।

সুখের সময়কেও এক সময় কেন জানি দুঃখের মনে হয়। সঙ্গী সাথীরা জীবনের স্বাভাবিক নিয়মে সঙ্গিনী বাছাই করে কেমন যেন দূরে সরে যেতে লাগলো। অফিস শেষে ফোন দেই তো ওপাশ থেকে লাজুক হাসি ভরা উত্তর, “দোস্ত, শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াতে আইছি, পরে ফোন দিমুনে”। আরেকজন চাপা মারে, না কোনও অনাগত সুখবর লুকিয়ে বলে, “বউ এর শইল ডা একটু খারাপ, ডাক্তার এর চেম্বার এ আছি হেঃ হেঃ!” হাসিটাই সন্দেহজনক। আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সুযোগ না দিয়েই লাইন কাট। অগত্যা যা এতদিন করিনি, অফিস থেকে সিধা বাসায় যাওয়াটা আস্তে আস্তে নিয়মে পরিনত হওয়া শুরু হোলো। বাসায় ফিরে ইন্টারনেট, মুভি দেখা কত আর ভাল্লাগে। হঠাৎ হঠাৎ কোনও বন্ধু কে পাওয়া গেলে মনে হতো – “আহ! বড় ভাল একটা দিন গেল”। আমার মনের পালে ‘যৌক্তিকতা’ বাসা বাধা শুরু করলো। আমি শুরু করি রেশনাল থিঙ্কিঙ, ‘বাছা তুমি-ই যদি ঠিক হতে তবে সবাই-ই চির কুমারত্ব বরন করে নিত’।

আমার চাল চলনে দৃশ্যমান পরিবর্তন পিতৃদেব, মাতৃদেবী-র মনে আশা সঞ্চার করে। বরফ গলতে শুরু করেছে। ওদিকে পেছন থেকে পিঠাপিঠি ছোট ভাই বোন গুলোর হেড লাইট ‘হাই বীম লো বীম’ মারা শুরু হয়েছে দ্রুত সাইড দেয়ার জন্য। ততদিনে এই বান্দা কিন্তু পুরো পুরি কনফিউজড, কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? আরও কিছুদিন পার করলেই কি হতো না? কিন্ত শত্রু পক্ষ যদি হয় সংখ্যায় অনেক, একা আর কত ঠ্যাকাই। এই সেই করেও হোলো আরও একটা বছর পার। চিত্ত কিন্তু আমার অশান্ত হয়ে উঠেছে তখন, ঘরে মুরুব্বীদের সামনে আমি এলেই কেমন জানি কথার সুর কেটে যায়, গলার আওয়াজ চেপে যায়। আমার অবস্থা তখন, ‘আরেকবার সাধিলেই খাইব’ টাইপ।
লাড্ডু শেষ মেশ আমি খেলাম। আহ! বহত সোয়াদিস্ত চিজ হ্যাঁয়। ইয়ে লাড্ডু তো বহত পেহলে সে হি খানা চাহিয়ে থে! এই লাড্ডু না খেয়ে জীবনের (যৌবনের) স্বর্ণালি দিন গুলো অপচয়ের দোষ ও অতি মহানুভবতার সাথে মার্জনা করে দিলাম। তারপর চলছে তো চলছেই গরুর গাড়ি। বেকুব ভাই সমাজ ভালই বলতে পারবেন এই যাত্রা পথ কত আনন্দময়। জ্ঞানী সমাজ জানেন না এ যে কি রহস্যময়!

প্রতিক


মন্তব্য

জয়শ্রীয়ান এর ছবি

চলুক
আগামী জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।
ভাল লিখার হাত আপনার। থামবেন না যেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার জন্যও শুভকামনা। উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ।

জুন এর ছবি

লাড্ডু যখন খেয়েই ফেলেছেন তখন স্বাদটা উপভোগ করতে থাকুন। যারা বিয়া করে নাই আমি তাদের বলি যত দেরিতে পার কর। আর যারা করেছে তাদের বলি সুখে-দুঃখে অন্তত একসাথে থেক বাছারা। হাসি আপনিও পরের দলে, কাজেই ভাল থাকুন, একসঙ্গে থাকুন আমৃত্যু।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

অতিথি লেখক এর ছবি

জীবনের প্রতিটি সময়কেই সুন্দর করার চেষ্টায় আছি প্রতিনিয়ত। এর কোনও বিকল্প নেই তো ভাই। সুখ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। সেটা সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য, লাডডু খাওয়ার আগে হোক আর পরে হোক হাসি । পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভাল লেগেছে। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

সাবেকা এর ছবি

সুখের চেষ্টা করে যাওয়া জীবনভর, এইতো হাসি ভাল থাকুন ।

অতিথি লেখক এর ছবি

চেষ্টা করলেই কিন্তু পাওয়া যায়। বিনিময়ে কিছু ছাড়তে হয় এই আরকি। আপনিও ভাল থাকুন।

অমি_বন্যা এর ছবি

আপনার লেখার হাত অনেক ভালো । চালিয়ে যান । চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের উৎসাহ পেলে তো লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু শুধু অফিসে বসে লিখতে ইচ্ছে করে খাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মনে হচ্ছে মূল লেখার ভূমিকা এটি। আসল লেখা কি আসতেছে?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার তো অনেক এক্সপেকটেশন! আনাড়ি লিখা, যদি পারি আরও চেষ্টা করব। আপনি পড়লেন তাই অনেক ধন্যবাদ।

কৌস্তুভ এর ছবি

হুমম, মজারই তো হয়েছে। লিখতে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখবো আশা করি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

অরণ‌্য এর ছবি

খুব ভাল লাগল। চালিয়ে যান।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অরণ্য।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মজা লাগলো পড়তে। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

সেটাই আমার সার্থকতা। ধন্যবাদ।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

হুম- তো কেমন চলছে লিখুন... পড়ি- চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলছে বেশ হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইজান,
আমিও লাড্ডু খাওয়ার লাইনে আছি। খাওয়ার পর কেমন লাগে তার একখান সিরিজ বাইর করন যায়না?

নির্ঝরা শ্রাবণ

অতিথি লেখক এর ছবি

খায়া ফালান। না খাইলে তো পস্তাইবেন। ভয়ের কিসু নাইক্কা।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রু  এর ছবি

যত যাই বলেন না কেন এই হাত পা ঝাড়া অবস্থা থেকে নড়ছি না। তবে লেখা ভালো লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

না নড়লে কিন্তু পরে পস্তাবেন ভাই সাহেব। বুইঝেন!

অচেনা আগন্তুক এর ছবি

লিখা ভাল হইসে ভাইজান। চালায়া যান। লাড্ডু খাওয়া পরবর্তী কাহিনীর বর্ণনা শুনতে মন চায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। পরের কথা তো চিরাচরিত। যা হয় তাই।

শাব্দিক এর ছবি

লাড্ডু সে যেমনই হোক আপনার লেখা দারুন মজারু।
লিখতে থাকুন পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

মরুদ্যান এর ছবি

হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল হয়েছে লেখা।
শুভ কামনা রইলো।
চলুক

সুবোধ অবোধ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।