গল্প খানা কত কালের পুরানো তাহা আমি বলিতে পারিবো না। তোমরা সকলে মিলিয়া আমাকে র্যাবের হাতেই দাও আর পুলিশের হাতেই দাও আমি উহা কিছুতেই বলিতে পারিবো না। তবে গল্পখানা বলিতে পারিবো বৈকি। ইহা বড়ই মজার কাহিনী কিনা। কি বলিলে? শুনিতে উৎসুক হইয়া আছো? তা বাপু আমি তো আর ইহা জনে জনে শুনাইতে পারিবো না। তাহার চেয়ে লিখিয়া দিতেছি নিজ গুনে পড়িয়া ও বুঝিয়া লও। তবে আগেই বলিয়া দিতেছি গল্পখানা কিন্তু আমারো শোনা কাহিনী। গাঁজাখুরি মনে করিলে যত কটু বাক্য বর্ষন করিতে চাও তাহা রচয়িতার উদ্দেশ্যে করিয়ো। অধিক বাক্যালাপ না করিয়া চলো গল্পে প্রবেশ করি।
তা সে অনেক কাল আগের কথাই হইবে। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, ত্রিপুরা সহ আরো অনেক রাজ্যের মধ্যে নাম না জানা এক রাজ্যে এক মহান অধিপতি ছিলেন। রাজা মশাই কাজে-কর্মে, চিন্তা-চেতনায়, জ্ঞানে-মানে যেইরূপ মহান ছিলেন আকার আয়তনেও সেইরূপ। যেমনি বিশাল উনার রাজদরবার তেমনি বিশাল ছিল উনার বপু। নিজ ওজনের চাপে উনি প্রায় দিশা হারাইয়া ফেলিতেন। রাজ্যসভায় গুণী ব্যক্তির অভাব ছিলো না। মন্ত্রীগণ নিজ যোগ্যতায় একজন অন্যজনকে ছাড়াইয়া যান আর কি। মন্ত্রীগণের কর্মদক্ষতা আর গুণাবলী দ্বারা মুলুকে তখন উন্নয়নের জোয়ার। অভূতপূর্ব এইরূপ সমৃদ্ধির মাঝেও হঠাৎ একদিন ছন্দপতন ঘটিলো।
সেই দিনটির কথা মনে করিলে এখনো রাজ্যের লোকের গা সুদ্ধ কাপিয়া ওঠে। দেহের লোমরাজি খাড়া হইয়া যায়। উহাদের গোড়া হইতে ঘর্ম নিঃসৃত হইতে থাকে। তবে নিন্দুকেরা বলে উহা নাকি লজ্জার কারণে। আমি বাপু অতসত জানি না। যাহাই হোক না কেন, চলো দেখি সেদিন কি ঘটিয়াছিল।
সেইদিন সকাল বেলা দরবারে একজন বিদেশী মেহমান নাজরানা লইয়া আসিলেন। রাজা মহাশয় অতিথিকে উত্তম রূপে সম্ভাষণ করিয়া কুশলাদি জিজ্ঞাসা পূর্বক তাহাকে নিজের অত্যন্ত কাছে বসাইলেন। কিছুক্ষন গত হইতেই অতিথিকে কেন যেন বিচলিত মনে হইতে লাগিলো। নসিকা কুঞ্চন করিয়া, চোখের উপরের ভ্রু দুখানি উর্দ্ধে তুলিয়া উনি বাতাসে কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভবের প্রয়াস পাইলেন। তাহার এই হঠাৎ চাঞ্চল্য সভাসদের দৃষ্টি এড়াইলো না। উহারা উৎসুক হইলেন। কিন্তু পাছে রাজা মশাই নারাজ হন এজন্যই আগ বাড়াইয়া কিছু জিজ্ঞাসা করিলেন না। কিয়ৎকাল পর অতিথি বাতাসে কি যেন শুকিতে লাগিলেন। এইবার উহা রাজার দৃষ্টি গোচর হইলো। জলদ গম্ভীর স্বরে উনি প্রশ্ন করিলেন –
রাজাঃ মান্যবর আপনার কি হইয়াছে? আপনি কিসের সুবাস নেবার চেষ্টা করিতেছেন?
অতিথি অত্যন্ত অবাক হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেনো রাজন, আপনি কিছুর অস্তিত্ব অনুধাবন করিতে পারিতেছেন না?”
রাজা বিরক্ত হইয়া, “কি বুঝিবো??”
অতিথিঃ আপনারা কেহই কি কিছুর অস্তিত্ব অনুধাবন করিতে পারিতেছেন না?? বলি আপনাদের ঘ্রাণ শক্তি যথাযথ আছে তো??
এইবার সভাসদেরা রাগান্বিত হইয়া পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করিতে লাগিলেন। তৎমধ্যে মধ্যম সারির একজন মন্ত্রী গলা খাঁকারি দিয়া বলিলেন-
মন্ত্রীঃ মান্যবর আপনি সম্মানিত অতিথি। তবে আমাদের ঘ্রাণ শক্তি লইয়া কটাক্ষ করিয়া আপনি গর্হিত ও শিষ্ঠাচার বহিঃর্ভূত কর্ম করিয়াছেন।
এ পর্যায়ে রাজা গম্ভীর স্বরে জানিতে চাহিলেন –
রাজাঃ মান্যবর, আপনি কিসের অস্তিত্বের কথা বলিতেছেন?? বিস্তারিত বলিয়া বির্তকের অবসান করুন।
অতিথিঃ রাজন, ক্ষমা করিবেন আমি কিয়ৎকাল হইতে সভাকক্ষে মনুষ্য বিষ্ঠার গন্ধ পাইতেছি।
মন্ত্রী-২ঃ খামোশ বুর্বক! আপনার স্পর্ধা তো কম হয় নাই। আপনি আমাদের অতিথি হইয়া এইরূপ অপবাদ দিতেছেন?
অতিথিঃ রাজন, আমি শুধু বলিয়াছি আমি একটি গন্ধ পাইতেছি যাহা মনুষ্য বিষ্ঠার ন্যায়। বোধ করি সভাসদদিগের মধ্যে কাহারো হজমে গোলমাল হইয়া থাকিবে।
বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক পর্যায়ে চলিয়া যাইতেছে দেখিয়া রাজামশাই নিজেই এবার মীমাংসার ভার লইলেন। কিছুক্ষন গন্ধ শুকিবার চেষ্টা করিয়া বলিয়া বসিলেন, “কিন্তু কই? আমিতো কোন প্রকার গন্ধ পাইতেছি না। সভাসদবৃন্দ আপনারা পাইতেছেন কি???”
রাজামশাই যেখানে না বলিয়াছেন সেখানে হ্যাঁ বলিবার কথা কেহ দুঃস্বপ্নেও ভাবিতে পারেন না। তাই তাঁহারা স্বমস্বরে বলিয়া উঠিলেন, “আলবৎ নহে। আমরা কোনরূপ খারাপ কোন কিছুর অস্তিত্ব পাইতেছি না”।
অতিথি বড়ই আশ্চর্য হইয়া গোল গোল চোখে তাকাইয়া রহিলেন। একটু পর আরেকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলিয়া বসিলেন, “নিশ্চিত ভাবে ইহা আমাদের প্রাণ অপেক্ষা প্রিয় দেশকে অপমান করিবার প্রচেষ্টা”। ইহা শুনিয়া সকলের মধ্যে দেশপ্রেমের জোয়ার বহিয়া গেল, উহাদের গন্ডদেশ হইতে দেশের প্রতি ভালোবাসার অশ্রু ঝর্নার মত বহিতে লাগিলো। ধরা গলায় রাজন বলিলেন, “হইতে পারে”।
এইরূপ উত্তর শুনিয়া আরো অনেকেই উৎসাহিত হইয়া উঠিলেন। অভিপ্রায় রাজনকে খুশি করা। তাঁহারা একে একে জ্বালাময়ী ভাষায় সংগ্রামী বক্তব্য দিতে লাগিলেন।
মন্ত্রী-৩ঃ ইহা নিঃসন্দেহে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র।
মন্ত্রী-৪ঃ আমরা সকলেই পুতঃ পবিত্র।
মন্ত্রী-৫ঃ উক্ত অভিযোগ প্রমাণের দায়ভার অতিথিকেই বহন করিতে হইবে।
সহকারী উজিরঃ দরকার হইলে ২ লক্ষ লোকের ৪ লক্ষ হাত উক্ত বিষ্ঠা অনুসন্ধানে তৎপর হইয়া এই ভ্রান্তি দূরীভূত করিবে।
উজিরঃ প্রয়োজনে আমরা একবেলা বেশী বেশী শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহন করিয়া প্রমান করিবো রাজদরবারে এইরূপ কোন গন্ধের উৎস নাই।
প্রধান উজিরঃ রাজন, আমরা ইতিমধ্যে একদল উন্নত নসিকা বিশিষ্ট কুকুর সহযোগে উপস্থিত সকলের পশ্চাৎদেশের ঘ্রাণ লইয়া প্রমাণ করিয়াছি আমাদের এই রাজদরবার বদ গন্ধ মুক্ত। উহারা আরো ইংগিত করিয়াছে যে অতিথি মহাশয়ের নসিকা উহার সহিত প্রতারণা করিয়াছে।
রাজাঃ সাধু! সাধু!! অতিথিরূপী দূরাচার, সম্ভব হইলে আপনাকে প্রানদন্ডে দন্ডিত করা হইতো। তবে আপনি শক্তিশালী রাজ্যের প্রতিনিধি বলিয়া আপনাকে এই মূহুর্তে চলিয়া যাইতে বলা হইলো।
অতিথিঃ ইহা আর বলিতে হইবে না। এইরূপ সভাসদ আর রাজা সহযোগে এই দেশ ভবিষ্যতে কোথায় যাইবে তাহা মজা করিয়া দেখিবার প্রত্যাশা লইয়া চলিয়া যাইতেছি।
অতিথি প্রস্থান করিলে সকলের উত্তেজনা প্রশমিত হইলো। রাজামশাই দরবার ত্যাগ করিবার নিমিত্তে আপন কেদারা হইতে উঠিবা মাত্রই একদলা হলুদ বিষ্ঠা সদৃশ্য বস্তু রাজপোশাকের ভিতর হইতে তাঁহার পায়ের কাছে আসিয়া পড়িলো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্ববল হইলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলাইয়া লইয়া রাজামশাই সহাস্যে বলিলেন, “যাহাই হোক উক্ত বিদেশী কেবল গন্ধই পাইয়াছে। গন্ধের উৎসতো আর দেখাইতে পারে নাই”।
সভাসদেরা বলিলেন, “সাধু! সাধু!!”।
বাস্তব কোন ঘটনার সহিত মিল খুজিয়া পাইলে উহা একান্তই পাঠকের নিজস্ব ব্যাপার বলিয়া ধরিতে হইবে।
আলোকিত_মন
মন্তব্য
বাস্তব ঘটনার সাথে মিলে গেলেও ক্ষতি নেই শুধু আফসোস যদি ওই পুচ্ছদেশে হাগু নিয়ে তার গন্ধ ঢাকার চেষ্টায় রত তথাকথিত ভবন নামক সিনেমা হলে নিত্য নির্লজ্জের মত নিজেদের বানানো কুরুচিপূর্ণ ডাইলগে ভরপুর হরেক রকমের আকাইম্যা ছবি ঢাকঢোল সহকারে প্রদর্শনে রত নায়ক নায়িকাদেরকে আপনার এই লেখা দেখানো যেত।
অনেক ভালো লিখেছেন । মনের আলো ছড়িয়ে আরও লিখুন।
অনেক ধন্যবাদ। লেখাটা দেশের রাজনীতিবিদদের দেখানো গেলে আরো ভালো হত।
উমম, ঠিক জমেনি। স্যাটায়ারের লক্ষ্যটা বুঝতে পারছি, কিন্তু সুপাঠ্য স্যাটায়ার হয়ে ওঠেনি।
আর সাধু ভাষা ব্যবহার করেছেন সে ঠিক আছে, রসিকতার পরিবেশ বানাতে অনেকেই করে থাকেন, কিন্তু সাধুভাষাটাও ঠিক জমেনি। আর ওইসব কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করতে গেলে বানানটা ঠিক হওয়াও জরুরি।
"রাজাঃ সাধু! সাধু!! অতিথিরূপী দূরাচার, সম্ভব হইলে আপনাকে প্রানদন্ডে দন্ডিত করা হইতো। তবে আপনি শক্তিশালী রাজ্যের প্রতিনিধি বলিয়া আপনাকে এই মূহুর্তে চলিয়া যাইতে বলা হইলো। "
এই ছোট্ট একটা প্যারাতেই দুরাচার, প্রাণদণ্ডে, দণ্ডিত, হইত, মুহূর্তে, হইল, এতগুলো বানান ভুল।
ভাইয়া, এটা সচলে আসা আমার প্রথম লেখা। আমি প্রথম এধরনের লেখা লিখলাম। আপনি ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়েছেন বলে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এখনই বানান ঠিক করে নিচ্ছি। ভবিষ্যতে অবশ্যই বানানের ব্যাপারে অনেক সতর্ক থাকবো।
সত্যি বলতে স্যাটায়ার বুঝতে পেরেছি, কিন্তু লেখনীতে রস বোধ আনার চেষ্টা ছিল, তবে ঠিক সফল হয়নি, তবে ভালো হয়েছে।
রিক, ভালোবাসার গল্প লিখে অভ্যাসরে ভাই। প্রথম এমন কোন কিছু লেখার চেষ্টা করলাম।
বেশ তো, ভালোবাসার গল্পই না হয় পড়লাম আমরা। অপেক্ষায় থাকলাম, অনেকদিন কোন ভালো প্রেমের গল্প পড়া হয় না
আমি ভয়ে সচলে ভালোবাসার গল্প দেই না, মডু ভালোবাসার গল্প পাইলে রাগ করে
আমি প্রথম প্রথম ভালোবাসার গল্প দিয়ে ট্রাই করছিলাম। পরে দেখি একটাও দেয়না। মডুর কি ভালোবাসার প্রতি বিশেষ ধরনের ভালোবাসা? আছে নাকি???
আর গল্পের শিরোনামটাও আসলে যায় না।
রিক, গল্পের একটা সুন্দর শিরোনাম দিয়ে দিও প্লিজ। তুমি তো আবার এটা ভালো পারো।
বাঁশ দিলেন নি মিয়া
ঐ মিয়া এত সুন্দর কইরা প্রশংসা করলাম ভালো লাগলো না তাই না??? আরে মিয়া তোমারে তো আমি আগে থেকেই চিনি। তোমার লেখা পড়েই তো মিয়া বারোটা বাজছে। লেখালেখি শুরু কইরা দিছি। বাঁশ তো তুমি আমারে দিছো।
ভাই হয়তো ভালো হয় নাই। তাতে কী, চালাইয়া যান। সবাই তো আর হিরু হয়না, তাই বইল্যা হিরু হবার জন্য দৌড় না দেয়া বিশাল বোকামি।
এইটা ভালো হয় নাই বলে লেখা থামাবেনা। আমার অধিকাংশ লেখাই সম্পাদনা পার হয়না। অথচ লেখার সময় আমার মনে হয়, এইবার নুবেল না পাইলেও, বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পামুই পামু।
ভাই, আমি হিরু রেসে নামি নাই। নামলে আদা, রসুন, তুলসি, নিম, চিরতা সব পানিতে মিশাইয়া তারপর নামতাম। তই আমি ভাই থামুম না।
ভালই তো লাগল...
অনেক অনেক ধন্যবাদ উৎসাহ দেবার জন্য।
ভাল হচ্ছিল, কিন্তু ঠিক জমল না। সমালোচনা হবেই, তাই বলে লেখা বন্ধ যেন না হয়।
লেখা ইনশাল্লাহ বন্ধ হবেনা। চেষ্টা থাকবে ভালো লেখার।
কি মিথ্যুক রাজারে বাবা!!! গল্প ভালো হয়েছে আলোকিত-মন।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো ভালো লিখতে।
আমারও মনে হয়েছে, শিরোনাম যথাযথ হয়নি, কিন্তু পড়তে মজা লেগেছে।
লিখে যান...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিরোনামটা নিয়ে আসলেই বিপদে আছি। যখন লেখা শেষ করলাম তখন আর কিছু মাথায় আসছিলো না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ উৎসাহ দেবার জন্য। হুমম, লিখে যাবো।
লিখতে থাকুন। প্রথম লেখা হিসাবে মন্দ নয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লেগেছে।
ভবিষ্যতে শিরোনাম নিয়ে আরেকটু ভেবে দেখবেন।
ভালো লেগেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। এটা আমার প্রথম এ জাতীয় লেখা। ভবিষ্যতে সব ব্যাপারেই আরো সতর্ক থাকবো।
ভালো ভাল হয়েছে।ভাষাটাও সুন্দর, লিখতে থাকুন
হবু রাজা গবু মন্ত্রীর কাহিনীটা মনে করিয়ে দিলেন । আমার কাছে ভালো লেগেছে । চালিয়ে যান
ভাল লেগেছে।।
নতুন মন্তব্য করুন