বসন্ত বাতাসে পুরো মিশর এখন উত্তাল। গণতন্ত্রের মাতাল সমীরণ বহমান দেশটির সর্বত্র। মিশরবাসীর চোখ চিকচিক করছে নতুন স্বপ্নে। নতুন আশার ঝলক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সবাইকে! এসবের মাঝে হঠাৎ করেই একটি অন্যরকম বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশটিতে, যা অনেককেই কৌতূহলী করে তুলেছে! মিশরের নতুন ফার্স্ট লেডি পঞ্চাশোর্ধ নাগলা মাহমুদ আলি এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন!
৫০ বছরে পা রাখা আর ৫ সন্তানের জননী নাগলার পরিধেয় বোরখাই (যা আঙ্গুল ও মুখমণ্ডল ব্যতীত তার সম্পূর্ণ দেহ মুড়ে দেয়) দেশটির পশ্চিমঘেষা তরুণদের মাঝে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। তাদের কাছে নাগলার সাদামাটা বোরখা দেশের ইমেজের জন্য বড় ধরনের আঘাত বলেই বিবেচিত হচ্ছে! একজন ফেইসবুক ব্যবহারকারী তরুণ এমনও প্রশ্ন তুলেছেন যে, তাদের ফার্স্ট লেডি কি করে এঞ্জেলা মার্কেলের সাথে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হবে! সম্প্রতি নরওয়ের একটি অনুষ্ঠানে বোলেরো পোশাক (এক প্রকার ছোট্র জ্যাকেট) পরে হাজির হওয়া আধুনিকা এঞ্জেলার সাথে আপাদমস্তক বোরকা পরিহিতা নাগলা দেখা করতে গেলে মিশরের ভাবমূর্তির আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না! বলাই বাহুল্য, এঞ্জেলা মার্কেল ইউরোপিয়ান ডেট ক্রাইসিসের মুখে বিশ্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন! ওবামা, ওলান্দ, ক্যামেরুন সবাই ছুটছেন তার কাছে! সুতরাং, এই গুরুত্বপূর্ণ নারীটির সাথে নাগলাকে স্বস্বামীক সাক্ষাতে যেতেই হবে, আজ হোক আর কাল হোক! খুশী রাখতে হবে মার্কেলকে, তাল মিলিয়ে চলতে হবে তার তালে! কিন্তু নাগলার পোশাকের জন্য মিশরকে কি লজ্জায় পড়তে হবে না? বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে বৈশ্বিক রাজনীতির যোগসাজশের কথা আজকের যুগে কে অস্বীকার করতে পারে?
[img=566x318]5d232a5a‑35f6‑4411‑9462‑3fcaf33049ca.i[/img] [img=640x480]210691‑angela‑merkel‑2008.jpg[/img]
কিন্তু ব্যাপারটি এখানেই শেষ নয়। অনেক সরস যুক্তি অবতারণা হয় নাগলার পক্ষেও। যুক্তির দোহাই দিয়ে অনেকের মনে একটি সম্পূরক প্রশ্ন অবধারিতভাবেই উথিত হয়, তা হল, স্বল্পবসনা এঞ্জেলা কি করে নাগলার মত কুলীন পোশাক পরিহিতার সাথে সাক্ষাতে মিলিত হবে? এঞ্জেলা বা পুরো জার্মানকে কি সেক্ষেত্রে লজ্জায় পড়তে হবে না? এই প্রশ্নটি করার সময় আমাদের বর্তমান পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ভুলে যেতে হবে! নীতিবিদ্যার মাঠেই শুধু এ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হতে পারে!
কিন্তু এই প্রশ্নের সঙ্গে আবার চলে আসে পোশাকের স্বাধীনতার প্রশ্ন! এখানেও গোলমাল! ব্যাপারটি বিদঘুটে হয়ে দাড়ায়, যখন একদল বলে, নাগার পোশাকের স্বাধীনতা থাকা উচিত। কিন্তু ফ্রান্সের রাষ্ট্রনীতি যে বলে, পোশাকের স্বাধীনতা থাকা উচিত বলেই বোরকা নিষিদ্ধ করা উচিত! সত্যি গোলমেলে!
অনেকেই পোশাকের স্বাধীনতা হরণের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন ফ্রান্সকে! আবার ইরান ও সৌদিও সমান সমালোচিত বাধ্যতামূলক হিজাবের কারণে। মজার ব্যাপার হল, দুপক্ষেরই যুক্তি একটাই, পোশাকের স্বাধীনতা! বিরাট গোলমেলে ব্যাপার নয়কি?
প্রশ্ন হল, আসলেই কি নাগলার বোরখা পরার স্বাধীনতা আছে? চিরায়ত মানবিক অধিকারগুলোকে মেনে নিলে পোশাকের স্বাধীনতা না মেনে উপায় নেই। কিন্তু পোশাকের স্বাধীনতা বলতে ঠিক কি বোঝায়? ধরা যাক, কোন সুস্থ-সজ্ঞান ব্যক্তি রাজধানীর বুকে বীর-দর্পে জংলিদের মত পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতে চায়। এখন সভ্য দুনিয়া কি এই ব্যক্তির মানবাধিকারের প্রতি সন্মান দেখাবে? স্বীকৃতি দেবে তার আলো ঝলমলে ঝকঝকে রাস্তায় জংলি পোশাক পরিধানের অবাধ স্বাধীনতাকে? কেউ কেউ হয়ত বলবেন, পাশ্চাত্যে প্রায় নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা থাকলে, জংলি পোশাক পরিধানের স্বাধীনতা থাকবে না কেন?
কিন্তু এখানে একটি হিসেবের ভুল আছে বোধহয়! পাশ্চাত্যে প্রায় বা পুরো নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানোটা সার্বজনীন নয়। ক্ষণিকের পাগলামি হিসাবেই আখ্যায়িত করা যেতে পারে তাকে! এঞ্জেলা মার্কেলের বোলেরো পরিধান তেমনই এক সাময়িক শখ মেটানোর উপলক্ষ হয়ত!
কিন্তু যুক্তির খাতিরে ধরে নেয়া যাক যে, এঞ্জেলা সর্বদাই বোলেরো পরিধান করেন বা অন্তত নাগলার পোশাকের তুলনায় সন্দেহাতীতভাবেই অনেক খোলামেলা পোশাক পরিধান করেন! তারপরও এঞ্জেলার পোশাকের স্বাধীনতা কিন্তু নাগলার স্বাধীনতা থেকে অনেকটাই পৃথক! দুজনেই স্বেচ্ছায় পোশাক পরে, কিন্তু নাগলা বোরখা পড়ে একটি আবশ্যিকতা থেকে, আর এঞ্জেলা বোলেরো পরে তার পছন্দ থেকে – এখানেই পার্থক্য!
নাগলা কেন বোরখা পরে? যারা বোরখার স্বাধীনতার কথা বলেন, তাদের মতে বোরখা শুধুই একটি পোশাক নয়, একটা ঐতিহ্যের ধারক, নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়! কিন্তু নাগলা কি শুধু ঐতিহ্য রক্ষায় বোরখা পরিধান করেন? প্রকৃতপক্ষে, নাগলার বোরখা নেহাতই ঐতিহ্য প্রদর্শন নয়, এর পেছনে রয়েছে পুরুষদের সেইসব অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, যার উৎস-মূলে থাকে একজন অনাবৃত নারী, যাকে দেখে তার ভিতর অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা, দস্যুতা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মারাত্মক অপরাধের জন্ম হতে পারে! এঞ্জেলার বোলেরো কিন্তু এমন কোন দায় মেটানোর অভিপ্রায় থেকে পরা হয় না, তাই সেখানে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দায় ভালভাবেই মেটানোর সুযোগ লাভ করা যায়! নাগলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ভিতর হুট করে ঢুকে পরে পাপমোচনের দায়!
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নাগলার বেবোধ পোশাককে কি আমরা নির্যাতনমূলক বলতে পারি (ফ্রান্সের সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী), যতক্ষণ না এটা নাগলার গায়ে চাপাতে বাধ্য করা হচ্ছে? উত্তর হচ্ছে না। কিন্তু নাগলা কি স্বেচ্ছায় বোরখা পরছে? নাকি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন কাউন্সেলর হিসাবে এক ধরণের বাধ্যবাধকতাও তার ভিতর বাস করছে পোশাকটি পরিধানের সময়? সঠিক উত্তর জানা না থাকলেও বাধ্যবাধকতার সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না! শেখ তাজ আলদিন আল-হিলালি নামে একজন লেবানিজ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান ইমাম (দেশটির সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মুসলিম ধর্মবেত্তা) ২০০৬ সালে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় হিজাবের বাধ্যবাধকতা তুলে ধরেছিলেন:
If you take out uncovered meat and place it outside on the street, or in the garden, or in the park, or in the backyard without cover, and the cats come to eat it . . . whose fault is it—the cats’ or the uncovered meat? The uncovered meat is the problem. If she was in her room, in her home, in her hijab, no problem would have occurred.
বস্তুত নাগলার বোরখা-বাধ্যতার স্বরূপ বুঝতে হলে ২০০২ সালের দিকে ফিরে তাকাতে হবে! সে বছর ১১ ই মার্চ মক্কায় ঘটে যায় ইতিহাসের নির্মম একটা ঘটনা! ১৫ জন ছাত্রীকে একটি অগ্নিদগ্ধ স্কুলে আটকে রাখা হয় শুধুমাত্র সঠিক ইসলামি ড্রেস না পড়ার কারণে! এমনকি উদ্ধার-কর্মীদের তাদের কাছে যেতে দেয়া হয়নি বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের কারণে। জীবন্ত-দগ্ধ মেয়েগুলোর কেউই বাচেনি শেষ পর্যন্ত!
আরেকটি ঘটনার কথা এখানে বলা যেতে পারে! ২০০৬ সালে সুহায়ের খতিব নামে ক্যালিফোর্নিয়ার এক মুসলিম মহিলাকে প্রতারণার অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল! কারাগারে থাকাকালীন খতিবের হিজাব সচেতনতা সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়! আশ্চর্যের বিষয় হল, খতিব প্রতারণার কাজটি দিয়ে এমন সচেতনতা দেখাতে সক্ষম হয়নি!
তাহলে কি নাগলার বোরখা পরিধানকে একটা ‘ম্যাটার অব চয়েজ’ হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে না? ‘চয়েজে’র যুক্তি-দৌর্বল্য প্রবলভাবে ধরা পড়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক এন্ড্রু গিলিগানের সাথে কিছু ব্রিটিশ মুসলিম তরুনির নিম্নবর্ণিত কথোপকথনে:
Ms Jama's friend, who did not want to be named, said: "We do it because there's a higher reward. There's a lot of things [Islamic obligations] we're not capable of doing but we can do this."
সুতরাং, পছন্দের স্বাধীনতার চেয়ে পুরুষ্কার প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষাই তীব্রভাবে কাজ করে বোরখা পরিহিতাদের মাঝে, একই কথা প্রযোজ্য নাগলার জন্যও।
পোশাকের সাথে শুধু রুচি আর বিশ্বাসই জড়িত নেই; জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি এর অন্যতম অনুষঙ্গ। আরবের মেয়েরা উত্তপ্ত সূর্য আর ধূলিঝড় থেকে বাঁচার জন্য খিমার নামে এক প্রকার ওড়না পরিধান করত, যা তাদের মুখমণ্ডল আর মাথাকে রক্ষা করত! কিন্তু এই মেয়েরা আবার দারুণ উদাসীন ছিল বক্ষ আবৃতকরণের ব্যাপারে, কথিত আছে, যুদ্ধাবস্থায় তারা নগ্ন-বক্ষ হয়ে সৈনিকদের উৎসাহদান করত! তো এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ইসলামে খিমার দিয়ে বক্ষ ঢাকার কথা বলা হয়, যা আদতেই ছিল একটা আরবি মেয়েদের পোশাক-পরিচ্ছদে একটা মার্জিত ছাপ আনার পদক্ষেপ। অথচ বোরখা মূল ইসলামে প্রবেশ করে তারও অনেক পরে, ৭ম শতকে বাইজান্টিয়াম আর পারস্য অভিযানের পর প্যাগান প্রভাবে! আসলে বোরখা কোনকালেই কর্মজীবী শ্রেণীর উপযুক্ত পোশাক ছিল না! তো সেকালে মুসলিম সমাজে বোরখা আভিজাত্যের ধারক ও বাহক হয়ে দাড়ায়, যেহেতু এটা পরিষ্কারভাবে কর্মজীবী নারীদের থেকে স্বামীর অর্থে পটবিবি সেজে থাকা অলস নারীদের আলাদাভাবে চিন্থিত করতে সক্ষম হয়!
সুতরাং, নাগলার বোরখা কোন ভূ-অবস্থানগত প্রয়োজন থেকেও উদ্ভূত নয়! এও এক অর্থে তথাকথিত আভিজাত্যের ধারক যার কাছে আপাদমস্তক বন্দী করে রেখেছে নাগলারা নিজেদেরকে। কথা হচ্ছে, এঞ্জেলার পোশাক কি আভিজাত্যের ধারক নয়? অবশ্যই একজন চ্যান্সেলর হিসাবে উনি অভিজাত পোশাকই পরিধান করে থাকেন, তবে সে আভিজাত্যের মধ্যে ঐতিহ্যগত বাধ্যবাধকতা লুকিয়ে থাকে না!
প্রকৃতপক্ষে, নাগলার স্বাধীনতা আছে শরীরকে ইচ্ছেমত পোশাকে সাজাবার, কিন্তু সে স্বাধীনতাকে সে স্বেচ্ছা নির্বাসন দিয়েছে! তাই যতই পোশাকের স্বাধীনতার দোহাই দেয়া হোক, নাগলা তা থেকে সম্পূর্ণই বঞ্চিত!
নাগলার বোরখা স্বাধীনতার ভিতর ঘাপটি মেরে আছে দাসত্বের মনোভাব, আর এঞ্জেলার বোলেরো স্বাধীনতা তা থেকে মুক্ত। তবে এ মুক্তি এমনি এমনি আসেনি, চার্চের সাথে তাদের দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে, একসময় চার্চকে মানুষের মুক্ত চিন্তা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার আন্দোলনের কাছে হার মানতে হয়েছে! কিন্তু নাগলাদের সে মুক্তি আজও ঘটেনি! কায়েমি স্বার্থবাদিরা সে পথকে রুদ্ধ করে রেখেছে!
কাজি মামুন
১১।০৭।২০১২
তথ্যসূত্রঃ
1. Chasing a Mirage, The Tragic Illusion of an Islamic State – Tarek Fatah
2. Why banning the veil would only cover up the real problems for British Muslims
3.http://www.telegraph.co.uk/journalists/andrew-gilligan
4.Wiki
5. Egypt’s first lady presents new image, Heba Saleh, www.ft.com
6.Other Internet Sources
মন্তব্য
একটা মানুষকে মাংসের সাথে যে তুলনা করে তাকেই তো আমার বেড়াল বলে মনে হয়। বাঘ, সিংহ, চিতা এই প্রাণিগুলো বেড়াল গোত্রেরই। মিশরীয় প্রেসিডেন্ট তো মনে হয়না ঐতিহ্যবাহী মিশরীয় বা আরবীয় জোব্বা পরে, মাথায় পাগড়ি চাপিয়ে মরকেলের সাথে হাত মেলাতে(কতটুকু আইন-অন্তর্গত কে জানে?) যাবেন, তাকে তো কোট-স্যুটে ভালই কেতাদুরস্থ দেখায়।
ভাল একটা লেখা, মামুন ভাই।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
মুসলিম মেয়েরা 'আনুগত্যের' পাঠ নিয়েই ছোট থেকে বড় হয়। যদিও তাদেরকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের কথা বলা হয়, এ আসলে হল পুরুষের প্রতি আনুগত্য, আর তাই বোরকাকে (যার সাথে প্যাগান ঐতিহ্যের মিল বেশী) সযত্নে বাঁচিয়ে রাখা হয় যুগ যুগান্ত ধরে! ঐতিহ্যের পথ বেয়ে এটি পরিণত হয় বাধ্যতামূলক একটি পোশাকে! তারপরও হাস্যকরভাবে লিবার্টির ধোয়া তুলে একে আবার বৈধতা দানেরও চেষ্টা হয়!
অসাধারণ বলেছেন, ভাইয়া! এই লোকগুলো মানুষরূপী বাঘই, হিংস্রতায় এরা আসলে বাঘকেও হার মানায়! নইলে ১৫ জন স্কুল ছাত্রীকে মক্কায় জীবন্ত পুড়ে মরতে হয়? মেয়েগুলোকে আত্মরক্ষার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি সঠিক ধর্মীয় পোশাক না পরার কারণে! আর সেজন্যেই বলছিলাম, পোশাকের স্বাধীনতার নামে আজ যারা নাগলার বোরখাকে জায়েয করতে চায়, তারা স্বাধীনতার ভিতর লুকিয়ে থাকা দাসত্বের বিষয়টি মনে হয় সচেতনভাবে এড়িয়ে যায়!
সুন্দর মন্তব্যের অনেক ধন্যবাদ, সুমাদ্রী ভাই!
ছবি আসেনাই, মনে হয় হার্ডডিস্ক থেকে সরাসরি পোস্টাতে চেয়েছিলেন?
শিরোনাম ভালো হয়েছে। লেখাও ভালো। এই মহিলা তো ওদেশের ইসলামবাজ প্রেসিডেন্টের বউ? তাহলে আর এত কথার দরকার কি, তার স্বামী তাকে কখনই বোরখা ছাড়া বাইরে বেরোতে দেবে না এটাই "নাগলা কেন বোরখা পরে?" এই প্রশ্নের যথেষ্ট উত্তর। পোশাকের স্বাধীনতা-টাধিনতা ওসব ফালতু পশ্চিমা বকওয়াস।
না, কৌস্তভদা, নেট থেকে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝলাম না কেন এল না। ছবিদুটোর একটি ছিল বোরখা পরিহিতা নাগলা মাহমুদ আলির ছবি, আরেকটি নরওয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া বোলেরো পরিহিতা এঞ্জেলা মার্কেলের ছবি(যা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে)। সন্মানিত মডারেটরবৃন্দ যদি ছবি দুটোকে সংযুক্ত করে দেন, অথবা সংযুক্তির উপায়(মানে সঠিক সাইজ ও লিংক) জানিয়ে দেন, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব!
একদম সত্য কথা! আসলে নাগলার বোরখাকে কেন্দ্র করে যে প্রশ্নগুলোর উদয় হয়েছিল, তারই উত্তর তালাস করার চেষ্টা করেছি! লেখাটির লক্ষ্য কিন্তু নাগলা নয়, নাগলাকে উপলক্ষ করে মুসলিম মেয়েদের বোরখার ঐতিহ্য অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্ত যা বেরিয়ে আসল, তাতে দেখলাম, ঐতিহ্য বিষয়টা অন্তঃসারশূন্য! বোরখা ইসলাম আসার অনেক পরে এসেছে আরব সমাজে, মূলত প্যাগান প্রভাবে! আরব সমাজে ছিল খিমার, ইসলাম যাকে আর একটু ভদ্র আদল দেয়! কিন্তু ঐ খিমার কিছুতেই বোরখার সাথে তুলনীয় নয়! এককালীন আভিজাত্যের প্রতীক বোরখা এখন চাপিয়ে দেয়া হয় সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র আর অবহেলিতদের উপর, উদ্দেশ্য কঠিন শৃংখলে আবদ্ধ করা! অথচ একেই আবার পোশাকের স্বাধীণতার নামে জায়েয করার চেষ্টাও চলে! বোরখায় কি সত্যি স্বাধীণতা আছে? যদি থেকেও থাকে, সে 'নেগেটিভ লিবার্টি' ছাড়া আর কিছু নয়!
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, কৌস্তভদা!
অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া!
বোরখার চেয়ে এই ফার্স্টলেডির যে বিষয়টি আমার কাছে সবচে বেশি বিস্ময়কর তা হলো তিনি নাকি নিজের নামেও পরিচিত হতে চান না। তিনি নাকি চান তাকে আহমদের মা হিসেবেই ডাকা হোক...
এই দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু মনে করিয়ে দেয় নারীদের নিজস্ব নামে পরিচিত হবারও কোনো অধিকার নেই। একসময় তিনি অমুকের মেয়ে তো আরেকসময় ওমুকের বৌ আবার অন্য সময় অমুকের মা...
নাগলার কিছু সমর্থক তার পর্দানশীন ভাবমূর্তিকে এই বলে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন যে, নাগলা তার স্বামীকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে পর্দার অন্তরালে থেকে, রাজনৈতিক মঞ্চে আধিপত্য সৃষ্টি না করে সে বরং অতি উত্তম কাজ করছে! ইমেলদা মার্কোস টাইপের আধিপত্যবাদ যদিও কখনই কাম্য নয়, তবে আজকের এই খোলা দুনিয়ায় ফার্স্ট লেডিকেও কিন্তু কিছু গণ-দায়িত্ব পালন করতে হয়, দেশের নারীদের প্রতিনিধি হিসাবে উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে রাখতে হয় ভূমিকা! এই বিবেচনায়, নাগলার বোরখা বেশ, আহমদের মা হিসাবে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা আর 'আউট অব সিন' চরিত্রকে নিরহংকার, নমনীয়তা, নির্বিবাদী মনোভাবের ফুলেল চাদরে ঢেকে রাখার কোন সুযোগ নেই, কারণ একজন ফার্স্ট লেডি হিসাবে নাগলা এভাবে তার দেশ ও সমাজকেই পেছন পানে ঠেলবেন কেবল!
বিশ্লেষণী মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, লীলেনদা!
নাগলার কিছু সমর্থক তার পর্দানশীন ভাবমূর্তিকে এই বলে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন যে, নাগলা তার স্বামীকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে পর্দার অন্তরালে থেকে, রাজনৈতিক মঞ্চে আধিপত্য সৃষ্টি না করে সে বরং অতি উত্তম কাজ করছে! ইমেলদা মার্কোস টাইপের আধিপত্যবাদ যদিও কখনই কাম্য নয়, তবে আজকের এই খোলা দুনিয়ায় ফার্স্ট লেডিকেও কিন্তু কিছু গণ-দায়িত্ব পালন করতে হয়, দেশের নারীদের প্রতিনিধি হিসাবে উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে রাখতে হয় ভূমিকা! এই বিবেচনায়, নাগলার বোরখা বেশ, আহমদের মা হিসাবে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা আর 'আউট অব সিন' চরিত্রকে নিরহংকার, নমনীয়তা, নির্বিবাদী মনোভাবের ফুলেল চাদরে ঢেকে রাখার কোন সুযোগ নেই, কারণ একজন ফার্স্ট লেডি হিসাবে নাগলা এভাবে তার দেশ ও সমাজকেই পেছন পানে ঠেলবেন কেবল!
বিশ্লেষণী মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, লীলেনদা!
ভালো লাগল লেখাটা মামুন ভাই, বেশ ভাল ---
বোরখা মূল ইসলামে প্রবেশ করে তারও অনেক পরে, ৭ম শতকে বাইজান্টিয়াম আর পারস্য অভিযানের পর প্যাগান প্রভাবে!
বোরখা নেহাতই ঐতিহ্য প্রদর্শন নয়, এর পেছনে রয়েছে পুরুষদের সেইসব অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, যার উৎস-মূলে থাকে একজন অনাবৃত নারী, যাকে দেখে তার ভিতর অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা....
১১ ই মার্চ মক্কায় ঘটে যায় ইতিহাসের নির্মম একটা ঘটনা! ১৫ জন ছাত্রীকে একটি অগ্নিদগ্ধ স্কুলে আটকে রাখা হয় শুধুমাত্র সঠিক ইসলামি ড্রেস না পড়ার কারণে! এমনকি উদ্ধার-কর্মীদের তাদের কাছে যেতে দেয়া হয়নি বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের কারণে। জীবন্ত-দগ্ধ মেয়েগুলোর কেউই বাচেনি শেষ পর্যন্ত! এরা মানুষ না, পশু?
মূল কথাঃ নাগলা বোরখা পড়ে একটি আবশ্যিকতা থেকে, আর এঞ্জেলা বোলেরো পরে তার পছন্দ থেকে – এখানেই পার্থক্য!
লেখা থেকে অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে যেভাবে উৎসাহদান করলেন, তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা! লেখাটা কিছুক্ষন আগে আমি নিজেই আরেকবার পড়লাম, আর আবিষ্কার করলাম, ভাষাটা মোটেও ঝরঝরে হয়নি, আর তাই আমার প্রশ্নগুলো সবলভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি! তাড়াহুড়া করে পোস্ট করতে গিয়ে লেখাটার অনেক জায়গায় ভুলভ্রান্তি রয়ে গেছে। কিন্ত এসব সত্বেও আপনার এমন উৎসাহ আমার পাথেয় হয়ে থাকবে, তানিম ভাই!
দারুন লিখেছেন মামুন ভাই।
পড়া, মন্তব্য আর উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, বন্দনা আপু! ভাল থাকবেন!
একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেনা যতক্ষণ না সে নিজে মুক্ত হতে চায়। আর মিশরের ফার্স্ট লেডি সেই দাসত্ব বরণ করে শুধু নিজের নয় গোটা দেশের নারীদের একটি অন্ধকার পথের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আর বোরখা-হিজাবপন্থীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন এই ব্যাপারে আবার একটি প্রোপাগান্ডা তৈরী করার। এই ঘটনাটি ব্যক্তি অবস্থান থেকেই শুধু নয় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থান থেকেও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। একজন ফার্স্ট লেডি নিজের ব্যক্তিগত ভাবধারার পাশাপাশি একটি রাষ্ট্রের মনোভাবও বহন করে চলেন। সেই দিক থেকে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
আর বোরখা একটি আচ্ছাদন, তাই এই অমানবিক ও অযৌক্তিক আচ্ছাদন পরিধান করার পেছনে পোশাক সম্পর্কীয় ব্যক্তি স্বাধীনতার যুক্তি প্রযোজ্য নয়।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আসলেই বোরখা একটা আচ্ছাদন। আর এই আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা হয় পৃথিবীর সব পুরুষের হাত থেকে বাঁচতে! কিন্তু আচ্ছাদন কি আসলে বাঁচায় মেয়েদের? নাকি উল্টো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পুরুষ-তন্ত্র ও মোল্লা-তন্ত্রের হাতে আপাদমস্তক বন্দী হয় তারা? সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, এই আচ্ছাদন একটি মেয়ের মস্তিষ্কে পুরুষদের সম্পর্কে একটা স্থায়ী ও বদ্ধমূল ঘৃণা ঢুকিয়ে দেয়, কোন পুরুষই তাদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়! মুক্তমনার ব্লগার 'ঈশ্বরহীন' তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এ ব্যাপারটি নিয়ে তার 'বোরখা সংক্রান্ত কিছু বেয়াড়া প্রশ্ন' শিরোনামের লেখাটিতে:
বিশ্লেষণী আর ক্ষুরধার আলোচনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, অরফিয়াস ভাই!
সৌরভ কবীর
মিশর হিজাবী দেশে পরিণত হতে শুরু করবে/করছে। ভুতের মতো পেছন দিকেই হাঁটতে হবে তাদেরকে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ব্রাদারহুডের প্রভাব মিশরকে গণতান্ত্রিক দেশের পরিবর্তে মোল্লাতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে পারে! মিশরবাসিকে এ নিয়ে না আবার আফসোস করতে হয়, অনেকটা 'নাকের বদলে নরুন পেলামে'র মত!
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, নীড় সন্ধানী!
ধন্যবাদ, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন।
অনেক ধন্যবাদ, প্রৌঢ়দা! আপনার উৎসাহের ঝুলি বুঝি কখনই ফুরোবার নয়! ভাল থাকবেন!
ভালো লেখা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
facebook
অনেক ধন্যবাদ, অণু ভাই!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অনেক ধন্যবাদ, সজল ভাই!
নতুন মন্তব্য করুন