দেবদাসের আত্মা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৭/২০১২ - ৯:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেবদাসের আত্মা

হে শরৎ,তোমায় জানায় কোটি কোটি প্রণাম। প্রণাম করি তোমার রচিত ঐ হস্তের বর্ণিত রেখাকে। তুমি ব্যাপ্ত, আমি তোমার ব্যাপ্ত হ্রদয়ের সামান্য নগণ্য শিষ্য। তোমার চোখে পড়া দৃশ্যর তুলনায় আমি যে অদৃশ্য। তোমার ঐ অমৃত চোখ যে আজও দেখে আছে এই পৃথিবীকে, দেখে আছে এই পৃথিবীর মানুষকে যারা আজ শুধু তোমাকে স্মরণ করে যাচ্ছে। আমি সবে একটি ফুলের কলি। এখনও বাইরের জগতে ভাল করে বেরিয়ে আসিনি। এখনও পাইনি কোনও সুখ কিংবা দুঃখের ছোঁয়া। আমি আজ শুধু বেরিয়ে এসেছি তোমার ঐ অমৃত চোখের দৃষ্টি পাওয়াতে, যা আমাকে বাধ্য করেছে আনন্দ আর দুঃখকে অনুভব করতে, বাধ্য করেছে আমাকে দেবদাস হতে। শুধু তোমার জন্যই আমি আজ নিজেকে খুঁজে পেতে শিখেছি, চিনতে শিখেছি, ত্যাগ করতে শিখেছি। শুধুমাত্র তোমার জন্যই আমি আজ ভুলতে পারিনি সমাজের গ্লানিকে। শুধুমাত্র তোমার জন্যই আমি আজ হাসি দিয়ে দুঃখকে ঢাকতে শিখেছি। তোমার হস্তরেখা আজ শুধু আমাকে নয়, সমাজের সমস্ত জীবের প্রাণে এক নতুন জীবনের প্রভাব ফেলেছে – যা প্রত্যেকটি জীবের গতরে শুধুমাত্র দেবদাসের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আজ সমগ্র জীব তোমার রচিত দেবদাসের অনুকরণে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তুমি শুধু দেবদাসের অমৃত আত্মা ছড়িয়ে দিয়ে গেছ। কিন্তু আজ সেই অমৃত আত্মার থেকে লক্ষ লক্ষ দেবদাস বেরিয়ে আসছে। এখন প্রতিটি মিনিটে একজন যুবক দেবদাস হয়ে উঠছে।

কত দেবদাস আজ পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোথায় তাদের অস্কার? তাদের দিন কাটছে এখন অমাবস্যার
রাত হয়ে। যেখানে শুভ্র মেঘের আঁচল প্রবেশ করেও বেরিয়ে আসতে পারছে না। দরিদ্র আর ধনীদের মধ্যে দেবদাসের চরিত্র তুলনা করা যায় না। দেবদাসের চরিত্র এই দুটি ক্ষেত্রেই একইভাবে জন্ম নেয়। কত দেবদাস আজ সিগারেট আর মদ্যর বোতল হাতে নিয়ে পড়ে আছে রাস্তার ধারে। নিজেকে বিসর্জন করে দিয়েছে ঐ সিগারেটের ধোঁয়ায় আর মদ্যর বোতলে। ত্যাজ্য পুত্র হয়ে রাত কাটাচ্ছে ঐ রাস্তার ধারের লাইট পোষ্টের নিচে। কেন তাদের এই রকম অবস্থা? কি ক্ষতি করেছে তারা? – যাদের এই রকম অবস্থায় পড়ে নিজের জীবনকে অন্ধকারে ঢাকতে হয়েছে। এই সবই হচ্ছে শুধু তার প্রিয়জনের জন্য যে আজ তার হাত ছেড়ে অন্য কারোর হাত ধরে আনদের সহিত ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধুমাত্র রাস্তার লাইট পোস্ট, আকাশের চাঁদ আর তারারা তার কথা মনে রেখেছে।

আবার অনেক দেবদাসের দিন কাটছে খাতা-কলমের সঙ্গে। কাগজের মধ্যেই নিজের প্রিয়জনের মূর্তি ধরে লিখে যাচ্ছে কবিতা,গান আরও কতকি। কিন্তু এইসব করেও তো ব্যর্থ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যটাই হারিয়ে ফেলেছে তার জীবন থেকে। কেউ আবার শর্তের পিছনে দাঁড়িয়ে দেবদাসের ভুমিকায় পড়ে থাকে। যদি শর্ত পালন করতে পারে তাহলে সে ভাগ্যবান আর যদি শর্ত পালন করতে অসফল হয় তখন সে দুর্ভাগ্যের দলে। কিন্তু এটাও দেখা যায় যে অনেকে শর্তের পিছনে প্রাণ দিয়ে ছুটাছুটি করেও সে তার মনের পাওনাটা পেতে সফল হয়না। অনেক সময় শুধুমাত্র চোখের মিলনেই কেউ দেবদাস হয়ে উঠছে। কিন্তু এখনও হয়ত দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে কোনও মনের ভাষা প্রকাশ পায়নি। যারা নেচে, গান করে ঘুরে বেড়ায় তাদের মধ্যে শুধু দেবদাস নেই। দেবদাস ওদের মনের মধ্যেও আছে যারা চুপচাপ হয়ে সমাজের অপমান সহ্য করে যাচ্ছে। সমাজের সকল অপমান সহ্য করেও সে নিজের প্রিয়জনের কাছে শুধুমাত্র প্রাণভরা মুখের হাসিটুকু পাবে বলে আশা করে থাকে। কিন্তু যখনই সে সেই মুখের হাসিটুকু থেকে বঞ্চিত হয় তখনই সে নিজের চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়। যাবার সময় শুধু আশার সহিত ছোট্ট একটুখানি প্রার্থনা থাকে যে সে যেন তার কবরটুকু একবার স্পর্শ করে সামান্য ফুলটুকু যেন ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই ধরনের দেবদাসকে দেখা যায় তার থেকেও বঞ্চিত হতে। অনেক প্রতিবন্ধী আছে যারা সবকিছু পেয়েও মনের কথা জানাতে ব্যর্থ হয়। যেমন একজন বোবা ও কালার মধ্যে যা হয়ে থাকে। বোবা বলতে চায় কিন্তু পেরে ওঠে না, তবে সে সকলের কথা শুনতে পারে। আবার অন্যদিকে কালা সবকিছু দেখতে পারে, মনের কথাও বলতে পারে কিন্তু কারও মনের কথা শুনতে পারে না। তাদের জীবনে সুখ এসেও থাকে না।

হে শরৎ, তোমার রচিত দেবদাস পড়ে, তোমার কথা স্মরণ করে সবার চোখের জল ঝরবে। কিন্তু আজকের এই দেবদাস যদি হারিয়েও যায় তার জন্য কোনও ক্ষুদ্র প্রাণীও নেই যে তার জন্য এক ফোঁটা চোখের জল ঝরাবে। এ এমনই তাদের পোড়া কপাল।

জানি সবাই তার নিজের জীবনকে সুন্দর ফুলের বাগান দিয়ে সাজাতে চায়। সবাই তার জীবনের আকাশে চন্দ্র, তারা, সূর্য দেখতে চায়। কিন্তু সবাই তা করে উঠতে পারে না কারণ তাদের মধ্যে অমাবস্যা রাতের ছোঁয়া লেগে গেছে। এইসব দেবদাসের নেই কোনও স্মৃতি, নেই কোনও ইতিহাসের বইয়ে তাদের নাম। এদের অস্থিত্ব এমনইভাবে লুপ্ত হয়ে পড়ে সমাজের সুন্দর পরিবেশ থেকে।

তাই আপনারাই বলুন – কিভাবে এইসব দেবদাসের অস্থিত্ব রাখা যায়?

সুপম রায়
১২/০৭/২০১২


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ট্যাগগুলো কনফিউজিং। সচলায়তনে সাধারণত ট্যাগ রাখা হয় যেন পাঠক ওই বিষয়ক অন্যান্য লেখা সহজে খুঁজে পেতে পারে। আপনার ট্যাগ হতে পারত- 'দেবদাস', 'শরৎ' এরকম কিছু। কিন্তু যে ট্যাগ দিয়েছেন তাতে ওই ট্যাগে আর কোন লেখা আসার সম্ভাবনা নেই। আশা করি বোঝাতে পেরেছি হাসি

লেখা খুব একটা ভাল লাগেনি। আরও লিখুন হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

প্রবন্ধ, মানপত্র, গল্প, মুক্তগদ্য, নাকি শরতি তেল্মাখা পুস্ট কিছুই বুঝলাম না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।