সাইফের কাহিনী
কাস্টমার সার্ভিসে চাকরি করা সব'চে খারাপ দিক কোনটা- বলা মুস্কিল। সারাক্ষণ দাত বের করে থাকা আর ক্লায়েন্টদের হাস্যকর আব্দার শুনে না হাসা - এই দুটোই আমার কাছে সমান কষ্টকর মনে হয়। তবে না হাসাটাই বোধহয় বেশি কঠিন। অদ্ভুত বৈপরীত্য কাজ করে মানুষের জীবনে। একই সাথে হাসা এবং না-হাসা দুটোই কঠিন।
"কী চিন্তা করছেন?"- মেয়েটার প্রশ্নে ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে নেমে আসি। আর কিছুক্ষন পরই কক্সবাজারের রওয়ানা দিবে বাংলাদেশ বিমান। প্যাসেন্জার লাউন্জে বসে আছি প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট। তার মধ্যে শেষ পনেরো মিনিট কেটেছে ইউনিভার্সিটিতে রাস্ট্রবিজ্ঞানে পড়া মিথিলার নানাবিথ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। আমার কোম্পানী লোগোয়ালা টি-শার্টই যে মিথিলার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে- তা নিশ্চিত। প্রথম দুই-তিনটা মামুলি প্রশ্নের পরই তার সকল জিজ্ঞাস্য আবর্তিত হচ্ছে কিভাবে সে এই কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারে তা নিয়ে। আমি কাস্টমার কেয়ারে আছি শুনে মিথিলা কিছুটা হত্যোদম হলে, তার আগ্রহে খুব একটা ভাটা পড়েনি।
"আসলে চিন্তা করছিলাম, আর কতক্ষন অপেক্ষা করতে হবে" আমার উদ্দেশ্য ছিলো প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করে মিথিলাকে প্রসঙ্গান্তরে নেয়ার।
কিন্তু আজকালকার তরুন সমাজ এত বোকা নয়।
মিথিলার উত্তরে আমি বেশ কিছুটা চমকৃতই হলাম বলা চলে, "আসলেই কি আমি খুব বিরক্ত করছি না আপনি আপনার অফিস নিয়ে আলাপ করতে চান না। আমি যেমন পড়াশোনা নিয়ে কথা বলা একদম অপছন্দ করি।"
"আসলে কোনটাই না। আমার খুব টাইট সিডিউল, এজন্যই বাস চেড়ে প্লেনে।"
আমার অবশ্য জানতে ইচ্ছা করছিলো, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে মিথিলা কেন প্লেনে যাচ্ছে। মিথিলা মুখ খোলার বিমানে উঠার তাড়া আসায়, সকল চিন্তা বিসর্জন দিয়েই উঠতে হলো।
মিথিলার কাহিনী
বিমানে বসতেই রাসির প্রশ্নের পর প্রশ্ন শুরু করলো কালো টি-শার্ট পড়া লোকটাকে নিয়ে। আমি ঠিক বুঝিনা এতে ও কী মজা পায়। খেলাটার শুরু আমাদের বিয়ের পর থেকেই যখর আমরা হানিমুনে গেলাম নেপাল। আমরা প্রায় দুই ঘন্টা আগে এয়ারপোর্ট এসে শুনি প্লেন আরো তিন ঘন্টা লেট হবে। বাসায় না গিয়ে রাসিন বরং এয়ারপোর্টেই বসে থাকাই স্থির করে। এক ঘন্টা পর সময় কাটানো বেশ মুস্কিল হয়ে উঠলে, রাসিনই মজা করে চ্যালেন্জ ছুড়ে দেয়, এক সাদা কোর্ট পড়া টাকলুর সাথে আমি সাহস করে কথা বলতে পারবো কিনা আর আমি ওকে চ্যালেন্জ করি এক বিশালবপু নিগ্রো মহিলার সাথে পটর পটর করার। তারপর যতবারই আমরা ঘুরতে গিয়েছি, আমরা অন্য লোকদের সাথে পটর পটর করে সময় পার করেছি। তবে শেষদুইবার রাসিনের ব্যবহার বেশ অদ্ভুত ছিলো। আমরা এয়ারপোর্টে এসেছি বাসা থেকে আর ও অফিস থেকে। রাসিন এসে আমার সাথে কথা পর্যন্ত না বলে ফোনে জানিয়েছে আমার চ্যালেন্জ। আমি রাজী না হলেও ওর পীড়াপীড়িতে না করতে পারিনি আর সত্য বলতে পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা অদ্ভুত মজা আছে।
যেমন আজকের লোকটা নিশ্চিত কাস্টমার সার্ভিসে কাজ করে না। আমি ছয় মাস কাজ করেছি কাস্টমার সার্ভিসে আমি নিশ্চিত লোকটা ছদ্মবেশে প্লেজার ট্রীপে যাচ্ছে।
রাসিনের কাহিনী
মিথিলাকে ব্যবহার করা সিদ্ধান্তটা জটিল ছিলো। চার বছর আগে মিথিলাকে যখন প্রথম দেখি, তখনই নিশ্চিত ছিলাম ওর নিষ্পাপ চাহনি, সুন্দর স্বর যেকোন ছেলের মাথা ঘুরাতে সক্ষম। এমন সৌন্দর্য বৃথা পড়ে থাকতে পারে না। তখনই এজেন্সীর সাথে যোগাযোগ করি। যদি আগের ডাটা হিসাব করে জানায় সুন্দরীদের পেছনে আমাদের বিনিয়োগ মোটামুটি বৃথাই গেছে। খুব কম সংখ্যকই আমাদের কাজে এসেছে। তখন আমি পরিকল্পনা করি, মিথিলাকে কিছুই জানানো হবে না। মিথিলা এজেন্সীর নাম ও জানবে না, কিন্তু কাজ করে যাবে। আমার পরিকল্পনা রিজিওনাল লেভেলে ও অনুমোদন পেলে, শুরু হয় বাংলাদেশে সবচে দীর্ঘস্থায়ী প্রজেক্টের। আজ মিথিলা দুর্দান্ত কাজ করেছে। রাসিনের পরিকল্পনা আমাদের কাছে পরিষ্কার। প্লেনে উঠেই সব জেনে নিয়েছি মিথিলার কাছ থেকে। শুধু প্লেনটা ল্যান্ড করুক, সাইফ তোমার হাজার বছরের ধূর্তামির আজ শেষদিন।
সাইফের কাহিনী
আকাশে উড়তে আমার অসম্ভব ভালো লাগে। কিন্তু প্লেনে বসে থাকা একটা অসহ্য ব্যাপার। মানুষে বুদ্ধিমত্তার নিম্নতম পর্যায়ের উদহারন হিসেবে থাকবে এই প্লেন আবিষ্কার। মিথিলার সাথে কথা বলে বেশ ভালোই লেগেছে। পুরো কথোপকথন আরেকবার চিন্তা করে আমি বেশ অবাক হলাম। মেয়েটার প্রতিটি প্রশ্নই বেশ আগ্রহ-উদ্দীপক।মেয়েটার সরলতা ভরা চোখের পিছনে নিশ্চিত একটা ক্ষুরধার মস্তিষ্কও আছে। এজন্য মানুষ জাতটার প্রতি আমার আস্থা আজো অবিচল। একই সাধে সরলতা আর বুদ্ধিমত্তা চর্চায় সক্ষম তারা। হ্যা মেয়েটা বুদ্ধিমান। আমি কি ধরা পড়ে গেলাম।
সাইফ-মিথিলা কথোকথন
মিথিলা: প্লেন এতো লেট। কখন ছাড়বে প্লেন আপনি কিছু জানেন?
সাইফ: না। মনে হচ্ছে না খুব তাড়াতাড়ি কিছু হবে।
মিথিলা: আপনি বুঝি গ্রামীনে আছেন? জানেন আমার খুব শখ ছিলো গ্রামীনে কাজ করা কিন্তু ইন্টারভিউ নাকি বেশ কঠিন হয়!
সাইফ: হ্যা আমি কাস্টমার কেয়ারে আছি।
মিথিলা: আমার বান্ধবী ও আছে গ্রামীনের কাস্টমার কেয়ারে ওর নাম নওরীন। ওই বললো ইন্টারভিউতে ওকে জিজ্ঞেস করেছে, প্যানেজা মানে কি? আপনি জানেন প্যানেজা মানে?
সাইফ: হ্যা, পৃথিবীর সবগুলো ভূ-খন্ড একসময় একসাথে লাগানো ছিলো। তাকে বলে প্যানেজা।
মিথিলা: বাহ আপনি তো অনেক জানেন এজন্যই তো চাকরি হয়েছে।
সাইফ: হাহ কিন্তু এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মানে কি? আমাকে কিন্তু জিজ্ঞেস করেছিলো, কক্সবাজারের পুরোনো নাম। আমি কক্সবাজারের স্থানীয়তো।
মি: কক্সবাজারের পুরোনো নাম কি?
সা: পানোয়া। মানে হলুদ ফুল।
মি: আমার হলুদ জামা দেখে মজা করছেন নাতো?
সা: নাহ একদম না
মি: অবশ্য আপনাকে স্থানীয়ও মনে হয়না।আপনার উচ্চারন আর চেহারা অন্যরকম।
সা: স্থানীয়দের উচ্চারন আর চেহারা কেমন হয়?
মি: উচ্চারন হয় অদ্ভুত আর চেহারা হয় রেড ইন্ডিয়ানদের মতো
সা: তাই নাকি?
মি: হ্যা। আচ্ছা নওরিন বলে, হাসি না পেলেও হাসা আর হাসি পেলে চেপে রাখাই নাকি কাস্টমার সার্ভিসে চাকরি করার সবচে কঠিন কাজ।
মি: কী চিন্তা করছেন?
সা: আসলে চিন্তা করছিলাম, আর কতক্ষন অপেক্ষা করতে হবে
মি: আমি খুব বিরক্ত করছি না আপনি আপনার অফিস নিয়ে আলাপ করতে চান না। আমি যেমন পড়াশোনা নিয়ে কথা বলা একদম অপছন্দ করি
সা: আসলে কোনটাই না। আমার খুব টাইট সিডিউল, এজন্যই বাস চেড়ে প্লেনে। তাই একটু টেনসড
মি: আচ্ছা আসি। যাক প্লেন ছাড়বে এখন। আপনার সাথে কথা বলে সময়টা ভালো কাটলো।
সা: আমার ও। আসি।
মেয়েটা আমাকে দিয়ে বেশ কয়েকটা কী-ওয়ার্ড বের করে নিয়েছে। যদি আমি মেয়েটার নিষ্পাপ মনটা ধরতে ভুল করে থাকি। তাহলে শেষ। আমার এতদিনের পরিশ্রম শেষ। গত তিন বছরে তিনটা মেয়ের চালাকি ফাকি দিয়ে আত্মবিশ্বাস টা বেশি হয়ে গিয়েছে। একটাই প্রার্থনা, মেয়েটা যেন একটা সাধারন মেয়েই হয়।
[ক্রমশ]
_______
আইলসা
মন্তব্য
সাইফ কি এলিয়েন? গল্পের আকর্ষনটা ধরে রাখলেও শেষমেষ এসে ক্যানো এই "অপারেশন" চলছে সেটা বোঝা দুরূহ। অর্থাৎ মোটিভটা কি?
Pangaea - উচ্চারণ হবে প্যানজিয়া।
সুত্র:
http://www.merriam-webster.com/cgi-bin/audio.pl?ggpang01.wav=Pangaea
ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই। লেখার মধ্যে কি ভুলটা ঠিক করা যায় কোনভাবে?
আসলে গল্পটা শুরু করছিলাম গ্রামীনের কথা মাথায় রেখে, পরে ভাবলাব জেমস বন্ডরে নিয়া আসি, তারপরতো কি কি হইয়া গেলো। এখন চিন্তা করতাছি আবুলরে [পদ্মা সেতু খ্যাত] ও নিয়া আসমু কিনা।
যাই হোক মোটিভ হিসেবে কক্সবাজারে ব্রড ব্যান্ড দিয়া তথ্য পাচার কিংবা মহাজাগতিক কোন বিষয় নিয়া আসতে পারি।
ইণ্টেরেস্টিং.........
কাহিনী জমবে মনে হচ্ছে। পরের পর্ব আসুক জলদি।
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপসদা আইলসা কে যদি কমনম্যানের স্পিড দিয়া মাপেন তাইলে তো হইবো না। এক সপ্তাহের মধ্যে দিয়া দিমু যদি বস কাজ কম দেয়।
আর হে হে স্পিড মানি বিষয়টা বুঝেন তো, নাকি!!
যাই হোক বুড়া আঙ্গুলের জন্য ধন্যবাদ...
বেশ রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি । আমার মনে হয় বেশ জমবে শেষমেশ। দেখা যাক । পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। গল্প চলুক আইলসা ভাই ।
বইলাম-
চলুক চলুক
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ।
শুরুটা বেশ মজার লাগল। বসে গেলাম অপেক্ষায়... কথোপকথনের এক যায়গায় (এজন্যই বাস চেড়ে প্লেনে।) 'ছ' 'চ' হয়ে গিয়েছে।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
ধন্যবাদ। "ছ" "চ" বানান বিপর্যয় দেখিয়ে দেয়ার জন্য এক্সটা ধন্যবাদ।
আসলে আরো অনেকগুলো বানান, ব্যকরন এবং বাক্য গঠন ভুল আছে। লেখাটা নিশ্চিন্তে বাংলা সেকেন্ড পার্টের "ভুল সংশোধন" অংশে দেয়া যায়।
ভাবছি দ্বিতীয় অংশ লেখার সময় উপরে সংশোধিত প্রথম অংশ ও দিয়ে দিবো।
আমার খুব ভাল লেগেছে। একটা কথা 'নিগ্রো' এবং 'রেড ইন্ডিয়ান' শব্দ দুটোই কিন্তু অবমাননাকর।
নিগ্রো অবমাননাকর জানতাম যদিও অবাক হইছিলাম। আমারে লোকজন কাল্টু না বইলা নিগ্রো বললে তো আমি একটু খুশিই হই। আমি বোধহয় বেকুব কিসিমের। যাহোক, রেড ইন্ডিয়ানের পরিবর্ততে কি ব্যবহার করা যায়?
আপনার খুব ভালো লাগায় আমার তরফ থিকা খুব খুব ধন্যবাদ।
নেটিভ অ্যামেরিকান।
ধন্যবাদ বস।
এত কম জানি-বড়ই লজ্জা লাগে। কি আর করার পড়াশোনা না করার শাস্তি তো পাইতেই হবে।
শুরু টা বেশ জমে উঠেছে।
ধন্যবাদ শাব্দিক ভাই।
নেক্সট পার্টে গইল্যা না গেলেই হয়!!
যাই করেন, তাড়াতাড়ি পরের পোস্ট দেন, আইলসা হলে চলবেনা।
গপ্প জমে উঠেছে।
পরেরএপিসোডের অপেক্ষায় রইলাম।
ট্যাগে অণুগল্প দেখলাম, অথচ চলছে ধারাবাহিক উপন্যাসের মতো
গল্প ভাল লাগছে। চলুক।
মজাদার
প্রথম অংশের কিছু শব্দ আর বাক্যে ভুল থাকায়, প্রথম অংশটি কিছুটা ঘষা-মাজা করে দ্বিতীয় অংশের মাথায় বসিয়ে গতকাল পোস্ট দিয়েছিলাম। প্রথম অংশের পুনরাবৃত্তির কারনে বোধহয় পোস্টটি নীড় পাতায় আসেনি।
এখানে সম্পূর্ণ গল্পটি
GOLPO
___
আইলসা
নতুন মন্তব্য করুন