অফিসের মেসেঞ্জার ইসলাম ভাইকে যখনি ব্ল্যাক কফি আনতে বলি একবারে আনতে পারেনা। প্রথমবারে দুধ-চিনি মিশিয়ে আনবে, বলবে 'অহ! ভুইলা গেছি', অথবা শুধু চিনি মিশিয়ে বলবে 'খাইয়া ফালান, এরম তিতা জিনিস মাইনষে খায়।' আজ সকালেও তাই হয়েছে। গলার ভেতর থেকে তিতকূটে একটা স্বাদ মুখকে বিস্বাদ করে রেখেছে। অফিসে কাজের চাপও খুব বেশি। তাই বিষে বিষক্ষয় পদ্ধতি। ঘনকালো তেতো কফির মগে চুমুক দিতে দিতে কাজ করেছি। সমস্ত অনুভূতিকে ভোঁতা করার একটা ব্যর্থ চেষ্টায়।
বিকেলে বেরিয়ে অফিস থেকে মনে হচ্ছিলো, নিঃস্বাস নিতে পারছিনা। বাসায় না ফিরে রিকশা নিয়ে পছন্দের বইয়ের দোকানটার দিকে এগুলাম। ঢাকায় ইদানিং ঈদের জ্যাম শুরু হয়ে গেছে। ১৫ মিনিটের পথ যেতে লাগলো এক ঘন্টা। রিকশায় বসে এক একটা মিনিটকে মনে হচ্ছিলো এক একটা ঘন্টা। রাজারবাগের রাস্তায় বাঁ পাশে পড়ে থাকা বিশাল দুটো ট্রাক, পেছনে লেখা 'দুরত্ব বজায় রাখুন'।
দূরত্ব। আমার আবার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আজ কিছু জানতে ভাবতে চাই না। আমার অনুভূতির তীব্রতায় পুড়ে যাচ্ছি। পাশের বস্তি থেকে সান্ধ্যকালীন রান্নার পোড়া পোড়া গন্ধ ভেসে আসছে। পাশের গাড়িগুলি তীব্রস্বরে হর্ন বাজিয়েই চলেছে, যেন এই হর্ন শুনে জ্যাম কেটে যাবে। চোখ খুলেই চোখে পড়লো ওয়্যারলেস টাওয়ার। চার-চার-দুই, দশটা লাল বাতি জ্বলে আছে। গাড়ির হর্ন ছাপিয়ে যাচ্ছে মসজিদ থেকে মাগরিবের আজান।
কেমন লাগছে? কেন এমন লাগছে? মোবাইল বলছে সময় এখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা, আমি বলছি এখন সকাল সাড়ে ছ'টা। আমার ঘড়ি দুটো সময় দেয়। এই ১৪ মাস তাই দিয়েছে। যখনই ভেবেছি এই সময়, মন বলেছে সাথে তার সময়। চৌদ্দ ঘন্টা পেছনে।
যা ভাবছি, তা লিখতে পারছি না। আর যা ভাবছি, কেন যে ভেবে এত ক্লান্ত অস্থির আর অসুস্থ হচ্ছি নিজেও জানি না। আমি বুঝি, আর বুঝেও অবুঝ। হয়তো আচরন করছি আর যে কোন অস্থির অসহিষ্ণু নারী চরিত্রের মতই।
যে দূরত্ব ঘুঁচে যাচ্ছে, যে প্রতীক্ষায় এতটা সময় কেটেছে, তা খুব সন্নিকটে। আমি যতই চেষ্টা করছি নিজেকে সামলাতে, তত আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আনন্দ, অপেক্ষা, বিস্ময়, শংকা, ভালোবাসা, প্রেম, রাগ, দুঃখ, সুখ,-আর আরো অনেক নাম না জানা অনুভূতি- একসাথে মিলিয়ে আমাকে অস্থির করে ফেলছে। বুকের মাঝখানটায় যে ফাঁকা জায়গাটা তা আরো গভীর হয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে, কান্না পাচ্ছে, হাসছি, আবার মনে হচ্ছে আমার অস্থিরতা দিয়ে তাকে ছেয়ে ফেলি।তাকে বলি আমাকে শান্ত করে দাও।
আমি এই দুটো দিন কিভাবে পার করবো!
শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় সে ডুবে আছে।
আমি ডুবে আছি তার ভেতরে।
ও আসছে। আমার কাছে!
-মাকড়শার বউ
মন্তব্য
মডুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি: লেখার প্রথম প্যারায় একটা ব্রেক দিয়ে দেন; পুরা লেখাই প্রথম পাতায় চলে এসেছে।
আমারি ভুল ছিলো। যেমন ভুল করেছি শিরোনামে প্রতীক্ষা'র বানান!
লেখাটা ভালই লেগেছে, কিন্তু আপনার নামটা পছন্দ হয়নি। আমি আরকানোফবিক। মাকড়শা শুনলেই গায় কাঁটা দেয়।
বউ তো মাকড়শার, সে তার আর কি নাম লিখবে!
আপনার বরই তাইলে স্পাইডার ম্যান
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কি ভীষণ আবেগী একটা লেখা।
কি যে লিখেছি একটানে, নিজেই জানি না
ছুঁয়ে গেল; আশা করি লেখা চালু রাখবেন
হিল্লোল
লেখা চালু রাখতে ঘন ঘন এরকম মাথানষ্ট লাগতে হবে। খুব খারাপ সেটা, আমার আর তার জন্যেও।
ব্ল্যাক কফি জীবনে একবারই খেয়েছিলাম অভিনেত্রী শম্পা রেজার বাসায়। অভিনেত্রী একটু ভেতরের ঘরে যেতেই বেসিনে গিয়ে ঢেলে দিয়ে এসেছি পুরোটাই। এরম তিতা জিনিস কেউ খায়!
বাহ! আপনি শম্পা রেজাকে চেনেন!
মনে আছে, একবার ব্ল্যাক কফি খাব বলে অধীর আগ্রহে বসে আছি! কিন্তু কফিতে চুমুক দিয়ে তো ঠেলে বমি আসতে চাইলো! ওদিকে বাইরে থেকে কফি বানানো শিখে আসা আমার এক আত্মীয় তো জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে, কফি কেমন হয়েছে, কফি কেমন হয়েছে? ওনার মান রাখতেই শেষ পর্যন্ত গিলে ফেলতে হল!
খাড়ান, শম্পাদিরে কইতেছি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খুবই সুন্দর লেখা। শুধু পড়তে না পড়তে শেষ, একটুকুই আক্ষেপ !
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
আরে ঘেচু হয়েছে। মনের কথা লেখায় লেখা যায় নাকি! আমার এমনি মনে মনেই লিখে যাওয়া ভালো ঢের!
যাক, কেউ চলে যাচ্ছে না, ফিরে আসছে।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
হু!সত্যি! আর কখনো যেতে দেবো না! (প্রার্থনা)
লেখা চালু রাখবেন । ভালো হয়েছে অনেক।
অমি_বন্যা
(Y)
_________________
[খোমাখাতা]
প্রতিক্ষার প্রাপ্তি মিষ্টি হয়।
দুরত্বকে দুর্বিসহ হওয়ার আগেই আলিঙ্গন করুন।
লেখা অসাধারন।গভীর থেকে লিখছেন বুঝা যায়।
আর যেতে দিয়েন না!!
আহা! ফিরে আসা যদি সবসময়ই এমন আনন্দের হতো।
আপনার অনুভূতির প্রকাশভঙ্গী চমৎকার। মাথা নষ্ট না করেই লিখতে থাকুন।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
নিজের অনুভূতি কিংবা ডায়েরি লিখে থাকেন যদি, তাহলে বলবো ঠিক আছে। আর যদি এটা গল্প হিসেবে ধরে নিতে বলেন তাহলে প্রথমেই যা দৃষ্টিতে আসে তা হচ্ছে আয়তন। আর কাহিনীবিন্যাসের অভাব। এনিওয়ে চালিয়ে যান
যাক আমার মতন আরও একজন মানুষ পেলাম, যার ঘড়িও দুইটা সময় বলে এবং কাকতালীয় ভাবে সময়ের ব্যবধানটাও একই। প্রিয় মানুষের মুখ দেখার জন্য অপেক্ষা করার মত কষ্টকর মনে হয় আর কিছুই নেই।
লেখাটা ভাল লাগছে... (গুড়)
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ভালো লাগছে
লেখা জারি থাকার অনুরোধ থাকলো। ক্যাটাগরী ঢাকা কেন। আরো গভীরতর কোন ক্যাটাগরী হওয়া উচিত।
মডুরা কেউ শিরোনামের বানানটা ঠিক করে দিতে পারেন?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ছোট বেলায়, ক্লাস নাইন টেন এ পড়ার সময় আমি আর আমার বন্ধু এলিফ্যান্ট রোডে ব্লাক কফি খেতাম ফরসা হওয়ার জন্য। কে যেন বলছিল ব্ল্যাক কফিতে ত্বক ফরসা হয়। খুবই কষ্ট করে খেতাম এই তিতা জিনিস। আর টাকা !!!! ৫০ টাকা প্রতি মগ।
মাহিন,
চলুক...
ভালই ত কথার জাল বুনতে পারেন হে মাক্রশার বউ
দারুণ লাগলো লেখাটা
কেউ এতো আনন্দ আর আবেগ নিয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করে আছে
ভাবতেই ভালো লাগে
মনটা ভালো হয়ে যায়
শুভেচ্ছা রইলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমার মন এমনিতেই সবসময় ভালো থাকে, লেখাটা পড়ে আরো ভালো হয়ে গেলো। তাই ৫ তারা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
খুব ভালো লাগলো। লেখা চালিয়ে যান।
নতুন মন্তব্য করুন