পেসিমিস্ট রাশি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২২/০৭/২০১২ - ৯:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জ্যোতিষবিদ্যা কে আপনারা কে কিভাবে মূল্যায়ন করেন জানিনা , তবে এ বিদ্যার উপর আমার আস্থা বা ভক্তি নেই আদৌ । তাই রাশিফল , জীবনে গ্রহ-নক্ষত্র ও চন্দ্র –সূর্যের প্রভাব , রত্ন পাথরের ব্যবহার এসবকে সবসময় বুজরকি মনে হয় । কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে জ্যোতিষীরাও পিছিয়ে নেই। ইদানীং জ্যোতিষ শাস্ত্র ও হয়ে গেছে ডিজিটাল । আজ দিন কেমন যাবে ; যাত্রা, লেন দেন কিংবা প্রণয় শুভ কিনা এই সব হাবিজাবি এক নিমিষেই বলে দেয় অনলাইন জ্যোতিষী । বিশ্বাস করিনা এসব , কিন্তু পড়তেও মন্দ লাগেনা । তবে মাঝে মধ্যে কাকতালীয় ভাবে কিছু মিলে গেলে একটু আধটু কনফিউশানে পড়ে যাই। তখন আনমনে ভাবি , এ নিশ্চয়ই ঝড়ে বক মরা আর ফকিরের কেরামতি দেখানো বৈ অন্য কিছু নয় । আমার মধ্যে প্রচলিত কোন সংস্কার নেই , নেই অন্ধবিশ্বাস ও । তবে ‘ পেসিমিজম’ আমার জীবনের সাথে গেঁথে আছে বিনি সূতার মালার মতন । এ জীবনে আমি যতবার স্বপ্নের জাল বুনেছি আর প্রাণপণে তার আরাধনা করেছি , অধরাই থেকে গেছে স্বপ্ন । আর হতাশ মন নিয়ে সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে দিয়ে যেই না ভেবেছি – “ ধুত্তরিকা , আমার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা ওসব” ; তখন ঘটেছে ঠিক উল্টোটা ! আমাকে নিয়ে কেন পেসিমিজমের এই টম এন্ড জেরির দোলাচল তার মর্মার্থ উদ্বার করতে পারিনি আজও । মাঝে মাঝে তাই মনে হয় , জ্যোতিষ শাস্ত্রে কোন ব্যাখা এর আছে কি ?

শুনেছি জন্মের পর আমার হৃদযন্ত্র নাকি সচল ছিলনা । সবাই মৃত ভেবে যখন আমার সৎকার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন ঠিক তখনই পাড়ার এক দাদী –নানী টাইপের মুরুব্বী বলে উঠলেন , “ আরে বাচ্চাটা তো মরা নয় , হার্ট চালু করতে হবে জলদি” । এরপর ওই মহিলা কি সব কায়দা কানুন করে আমার দেহে অক্সিজেনের যোগান দিয়ে হার্ট সচল করলেন , আর আমার লাইফও রিস্টার্ট হয়ে গেল ।সেই থেকেই তো পেসিমিস্ট রাশির জাতক হিসাবে আমার বেড়ে উঠা ।

ছোট বেলায় দেখতে বেশ লিকলিকে ছিলাম – ঠিক যেন তালপাতার সেপাই । আমায় দেখে নাকি অনেকের সুকান্তের কবিতার কথা মনে হত । তারা সুর করে বলত – “ হে সূর্য শীতের সূর্য , কিংবা পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি “। আমি এসবের এক বর্ণ না বুঝেও অনেক কান্নাকাটি করতাম।

বয়স যখন পাঁচ কি ছয় তখন আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন পিতৃ দেব । পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পর একটু একটু করে আমার প্রতিভা প্রকাশ পেতে শুরু করে । বৃত্তি পেয়ে মেধাবীদের খাতায় নাম ও উঠল । এরপর প্রাইমারীর পাট চুকিয়ে মাধ্যমিক পর্বে উঠলাম । ততদিনে প্রতিভাবান হিসাবে চারিদিকে আমার জয়জয়কার । ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষায় তো রীতিমত বাজিমাত । ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি সহ সমগ্র জেলায় ফার্স্ট হলাম । পিতৃদেব তো আনন্দে আত্মহারা । বাড়িতে এসে আমায় কোলে তুলে নিয়ে তিনি বাঁদর নাচ নাচতে নাচতে বললেন – “ জাদু আমার মুখ উজ্জ্বল করেছে” । লজ্জায় চোখ মুখ লাল করে বাবার কোল থেকে নেমে আমি দিলাম ভোঁ দৌড় । সেবার মিষ্টির বন্যা বয়ে গিয়েছিল বাড়িতে । মূলত এ ঘটনার পর হতেই আমাকে নিয়ে সবার স্বপ্নের জাল বোনা শুরু । আমিও ভাবতে থাকি – একদিন নিশ্চয় বড় জজ , ব্যারিস্টার , ডাক্তার কিংবা পাইলট হবো ! দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষাও দিয়ে ফেললাম । সবার আশা ছিল আমি বোর্ড স্ট্যান্ড করবো ; কিন্তু হায়রে আমার পাসিমিস্ট রাশি ! সবাইকে হতাশ করে অল্পের জন্য কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে ব্যর্থ হলাম । মনে হল সৌরজগৎ এর কক্ষ চ্যুত নক্ষত্র আমি । উল্কাপাতে যেভাবে বিদীর্ণ হয় ধরণী বক্ষ ,একই ভাবে আমার আত্মবিশ্বাস ও হল চূর্ণ বিচূর্ণ ।

ইন্টারে ঢাকার ভাল কোন কলেজে থিতু হতে না পেরে ফিরে এলাম নিজ বাসভূমে । ভর্তি হলাম স্থানীয় সরকারী কলেজে । গায়ে আমার তখনও ভাল ছাত্রের তকমা । সে সুবাদে কলেজের নারী মহলের সুদৃষ্টি পেলাম । হিমি নামে এক জল পরির সাথে আমার ভাবটা ও বেশ জমে গেল ।কিন্তু ভাল লাগাটা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে গড়ায়নি ।কারন হৃদয় ঘটিত ব্যাপারে আমি আবার ভীষণ আনাড়ি আর ভয়ানক ভীতু ছিলাম । অনেকটা কাপুরুষ ও বলতে পারেন । এক পলকে কিভাবে কেটে গেল কলেজের দুই দুইটি বছর , টের পাইনি মোটেও । এইচ এস সি পরীক্ষা যখন দরজায় এসে কড়া নাড়ল , মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । আর চোখে দেখলাম রাশি রাশি সর্ষে ফুল । টি -২০ স্টাইলে পড়াশোনা চালিয়ে কোনক্রমে ক্যারিয়ারের ধ্বসটা ঠেকানো গেল । কিন্তু মিলি সহ কয়েকজন দুর্দান্ত রেজাল্ট করে বুয়েট , মেডিক্যালে চান্স পেয়ে গেল । আমি তখনও অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি । মিলি আমাকে সান্ত্বনা দিল – “ চিন্তা করনা , তোমার ভার্সিটি তে ভাল সাবজেক্টে চান্স হবে” । আমি বললাম - দেখা যাক । সেই ছিল মিলির সাথে আমার শেষ দেখা ।

এরপর আমার আত্মবিশ্বাস গিয়ে ঠেকল শুন্যের কোঠায় । ঢাকা কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দসই বিষয় পেলাম না । অগত্যা খড়কুটো ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসাবে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে । শুনেছি এখানে যে কোন বিষয়ে পড়লেই নাকি সরকারী চাকুরী সুনিশ্চিত । আমি তো তখন ঘর পোড়া গরু , তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াটা আমার কাছে মনে হচ্ছিল রক্তিম সিঁদুরে মেঘ । কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে চোখ ডললাম - ভুল দেখছিনা তো ? নাহ , ভুল নয় , সবচেয়ে ভাল সাবজেক্ট টিতেই চান্স পেয়েছি ! মনের মধ্যে আশার প্রদীপ একটু একটু করে জ্বলে উঠলো আবার । কিন্তু হায়রে আমার বিশ্বাসঘাতক পেসিমিস্ট রাশি ! আশার প্রদীপ দপ করে নিভিয়ে দিতে একটুও দ্বিধা করলনা । মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানালাম অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর । আবার অল্পের জন্য ফসকে গেল কাঙ্ক্ষিত ফল । আমার চোখের জলের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদ তখন নস্যি ।

এরপর থেকে অবচেতন পেসিমিস্ট সত্বা আমাকে সতর্ক করেছে বার বার আশাবাদী না হতে । ফলে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। হতাশার ভেলায় চড়ে একটা দারুন চাকুরীও জোগাড় করে ফেললাম এ আকালের যুগে । তবে দীর্ঘ আপসোস আমার , যেদিন নিয়োগ পত্র হাতে পেলাম সেদিন পিতৃদেব আমার পরপারের ডাকে মুমূর্ষু অবস্থায় শয্যাশায়ী । খবর পেয়ে ছুটে গেলাম বাড়িতে । কিন্তু সুখবরটা তিনি শুনে যেতে পারেন নি । মন কে প্রবোধ দিলাম – পেসিমিস্টের অত শখ পূরণ হতে নেই ।
এখন আমি বেশ আছি । জীবন নিয়ে তেমন টেনশান নেই । কোন কিছু পেতেই হবে এমন অদম্য কোন স্পৃহা নেই । “ পেলে ভালো , না পেলেও ক্ষতি নেই” – এটাই এখন আমার জীবনের মূল মন্ত্র ।
“ সংসার সুখ দুঃখ তরঙ্গের খেলা
হতাশা মোর একমাত্র ভেলা”
তাই আজকাল ভাবি - হতাশা ই যদি হয় সাফল্যের চাবিকাঠি , তবে মন্দ কি ? জানিনা আমার এ ব্যক্তিগত প্যাঁচাল সচলের মানদণ্ড উৎরে যাবে কিনা । উৎরাতে যদি নাও পারে ক্ষতি নেই তাতে । নিজেকে ভালো করে চেনা তো হল আরেকবার । কারন গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল তো আর খামোখাই বলেন নি – “KNOW THYSELF” .

উতপাখির হৃদয়


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা কিন্তু সচলের মানদণ্ড উতরে গেল। কাজেই পেসিমিসট হবার কোন কারন নেই। হাত খুলে লিখতে থাকুন। দারুন লাগলো আপনার স্মৃতিচারণ আর বর্ণনা । এবার অপটিমিসট হতে তো বাধা নেই নাকি?

অমি_বন্যা

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

হ্যাঁ বন্যা ভাই , আমি যে আসলেই পেসিমিস্ট রাশির জাতক তা সচলায়তনে আর একবার প্রমানিত হল । এটা প্রকাশ হবে অতোটা আশা করিনি । এখন খুব রোমাঞ্চ অনুভব করছি সত্যি ই । কারন সচলে এটা আমার প্রথম প্রয়াস ।

ক্রেসিডা এর ছবি

হাত খুলে ও মন খুলে লিখুন; সাথে অমি ভাই খেকে বাদাম চেয়ে নিন। চিবুতে চিবুতে লিখুন।

ভালো লাগলো লেখাটা খুব।

ভালো থাকা হোক।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে

অমি_বন্যা

ক্রেসিডা এর ছবি

অমি ভাই, আপনার কমেন্ট এর প্লেসে "অতিথি লেখক" লেখা থাকে; ওখানে নাম লিখা যায় আমার মনে হয়। আমি তো সেভাবেই কমেন্ট করতাম; সাথে নীচে নামও লিখে দিতাম। সেরকম করেই তো করার কথা।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

অমি_বন্যা এর ছবি

ক্রেসিডা , এতক্ষন আসে নাই নাম । এইবার আসছে অনেক্ষন পর। মাঝে মাঝে এইরকম হয়। আবার ঠিক হয় তার মন মতোই ।

Latif Hossain এর ছবি

চলুক

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

একদম ঠিক বলেছেন , অমি ভাইয়ের নিকট থেকে কিছু কাজু বাদাম চেয়ে নিতে হবে । আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই,

আপনার সাথে অনেক কিছুই মিলে গেলো আমার। তবে আপনিতো তাও বৃত্তি পেয়ে একবারের জন্য হলেও বাবা-মার মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছিলেন। আমি তাও পারিনি। লেখাটা ভালো লাগলো।

“KNOW THYSELF” . এই কথাটা যতদূর জানি সক্রেটিস এর। একটু দেখে নিবেন কি?? নিচে লিংক দিচ্ছি।

http://en.wikipedia.org/wiki/Know_thyself

লেখা চালিয়ে যান। থামাবেন না। দেখেন আমাকে অনেক সমালোচনা হলেও লেখা চালিয়ে যাচ্ছি।

চলুক

আলোকিত-মন

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

ভাই , আলোকিত মন , সরি । আসলে আমারও একটু কনফিউশান ছিল । কিন্তু পরে মনে হল যে লোক হ্যামলক খেয়ে সুইসাইড করতে পারে সে এ কথা বলতে পারেনা । আপনার কাছ থেকে মরাল পেলাম । ভাল থাকবেন ।

অতিথি লেখক এর ছবি

কবির সুমন বলেছেন "হাল ছেড়ো না ।"
আমিও বলি "হাল ছাড়বেন না ।" হাসি

কাক্কেশ্বর কুচকুচে

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

কুচকুচে ভাই , কিছু মনে করবেন না , হাল ছাড়লেই যদি দারুন কিছু হয় তবে হাল ছাড়াই তো ভাল ।

" সংসার সাগরে সুখ দুঃখ তরঙ্গের খেলা
হতাশা মোর একমাত্র ভেলা "

উতপাখির হৃদয়

কাক্কেশ্বর কুচকুচে এর ছবি

সংসার সাগর ভাই বহুত কঠিন জিনিস,
এইভাবে হতাশ হইলে হইবেন ফিনিস চোখ টিপি
ভাল থাকবেন হাসি

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

Latif Hossain এর ছবি

আপনার লেখাটাতো অনেকেরই ভালো লাগলো। আমারও ভালো লাগলো। এইটুকু তো পজিটিভ? তার সাথে একটা নেগেটিভ ব্যাপার কিন্তু জড়িয়ে গেল — অনেকেই আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করবে। তৈরী হবে আরেকটা প্রেসার। জনপ্রিয় হয়ে গেলে তো আরো মুশকিলে পরবেন। হাসি
আরো আছে। নিজেই দেখুন: প্রায় দ্বিতীয় জীবন প্রাপ্তি ঘটেছে আপনার জীবনের শুরুতেই। স্বাস্থ্যহীন হওয়ার সত্যেও স্কুল কলেজের ফলাফল প্রশংসাযোগ্য নয় কি? তারপর, পড়াশোনার ওঠানামার পরেও একটা "মন্দ নয়" চাকুরী পেলেন। এই পজিটিভের সাথে নেগেটিভটাও না এসে হলো না — বাবা বিদায় নিলেন। পজিটিভ-নেগেটিভ এই দুই মিলই সবকিছুর অস্তিত্ব। বস্তু জগতের সবই তো। শুধু একটা পজিটিভ বা নেগেটিভে কিছুই নেই। এত কিছুর পর যেই অভিজ্ঞতাটুকু হলো তা'ই কি ফেলনা? জীবন থেকে যা শিখলেন তা কি একাডেমিক ক্যারিয়ার থেকে আসে? কষ্টতো থাকবেই। বুদ্ধিমান মানুষের কষ্টটা আরো বেশিই হবে, হয়। মানুষের জীবনটা প্রজাপতির নয়।

ধর্ম, জ্যোতির্বিদ্যা, আধিভৌতিক ব্যাপার স্যাপারে আমি অবিশ্বাসী নই শুধু একটা কারনেই যে "যা কিছু আমি দেখিনা বা উপলব্ধি করিনা তার অস্তিত্ব নেই" এটি অযৌক্তিক। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি বিজ্ঞানের বা বিদ্যার নয়, ব্যর্থতা বিজ্ঞানীর — ধার্মিকের, বা প্র্যাক্টিশনারের বা বিদ্যাচর্চাকারীর। পার্থিব প্রাণী আমরা অক্সিজেন নিয়ে বাঁচি এই বিষয়টি ডিস্কভার করার আগেও তো আমরা অক্সিজেন নিয়েই বাঁচতাম, তা'ই না? অপ্টিক্যাল ফিজিক্সের উন্নতি তথা মাইক্রোস্কোপ আবিস্কারের আগে অনুবীক্ষনিক প্রানী, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি কি ছিলনা? সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আল্ট্রভায়োলেট আলো দেখতে পায়না, মৌমাছি সহ আরো অনেক পোকাও তা পারে! আমাদের মনোদৈহিক সীমাবদ্ধতার কারনেই আমরা অনেক কিছুই দেখেত, উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হই। অতএব...

দীপক চোপরার মত একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী তার অনেক বইতেই এই ব্যাপারগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছেন। তার Synchro Destiny বইটা পড়ে ফেলুন। অন্ততঃ চিন্তার খোরাক পাবেন। এই পরিসরে, আর আমার মত নাদানের পক্ষে এ সম্পর্কিত কোন আলোচনার স্পর্ধা রাখা সম্ভবপর নয়। তাছাড়া সচলায়তনে আমার "প্রবেশ" এমনকি মন্তব্য প্রকাশও সব সময় হয়না। তাই আনাগোনা কম। এখানে সংগত কারনেই আমি এখনও "অচল।" কখনো সচল হলে আর সুযোগ পেলে এ নিয়ে লিখবো আরো।
ভালো থাকুন। অপ্টিমিস্ট থাকুন। শুভ কামনা থাকবে আপনার জন্য।

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

Latif Hossain এর ছবি

আপনার লেখাটাতো অনেকেরই ভালো লাগলো। আমারও ভালো লাগলো। এইটুকু তো পজিটিভ? তার সাথে একটা নেগেটিভ ব্যাপার কিন্তু জড়িয়ে গেল — অনেকেই আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করবে। তৈরী হবে আরেকটা প্রেসার। জনপ্রিয় হয়ে গেলে তো আরো মুশকিলে পরবেন। হাসি
আরো আছে। নিজেই দেখুন: প্রায় দ্বিতীয় জীবন প্রাপ্তি ঘটেছে আপনার জীবনের শুরুতেই। স্বাস্থ্যহীন হওয়ার সত্যেও স্কুল কলেজের ফলাফল প্রশংসাযোগ্য নয় কি? তারপর, পড়াশোনার ওঠানামার পরেও একটা "মন্দ নয়" চাকুরী পেলেন। এই পজিটিভের সাথে নেগেটিভটাও না এসে হলো না — বাবা বিদায় নিলেন। পজিটিভ-নেগেটিভ এই দুই মিলই সবকিছুর অস্তিত্ব। বস্তু জগতের সবই তো। শুধু একটা পজিটিভ বা নেগেটিভে কিছুই নেই। এত কিছুর পর যেই অভিজ্ঞতাটুকু হলো তা'ই কি ফেলনা? জীবন থেকে যা শিখলেন তা কি একাডেমিক ক্যারিয়ার থেকে আসে? কষ্টতো থাকবেই। বুদ্ধিমান মানুষের কষ্টটা আরো বেশিই হবে, হয়। মানুষের জীবনটা প্রজাপতির নয়।

ধর্ম, জ্যোতির্বিদ্যা, আধিভৌতিক ব্যাপার স্যাপারে আমি অবিশ্বাসী নই শুধু একটা কারনেই যে "যা কিছু আমি দেখিনা বা উপলব্ধি করিনা তার অস্তিত্ব নেই" এটি অযৌক্তিক। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি বিজ্ঞানের বা বিদ্যার নয়, ব্যর্থতা বিজ্ঞানীর — ধার্মিকের, বা প্র্যাক্টিশনারের বা বিদ্যাচর্চাকারীর। পার্থিব প্রাণী আমরা অক্সিজেন নিয়ে বাঁচি এই বিষয়টি ডিস্কভার করার আগেও তো আমরা অক্সিজেন নিয়েই বাঁচতাম, তা'ই না? অপ্টিক্যাল ফিজিক্সের উন্নতি তথা মাইক্রোস্কোপ আবিস্কারের আগে অনুবীক্ষনিক প্রানী, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি কি ছিলনা? সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আল্ট্রভায়োলেট আলো দেখতে পায়না, মৌমাছি সহ আরো অনেক পোকাও তা পারে! আমাদের মনোদৈহিক সীমাবদ্ধতার কারনেই আমরা অনেক কিছুই দেখেত, উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হই। অতএব...

দীপক চোপরার মত একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী তার অনেক বইতেই এই ব্যাপারগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছেন। তার Synchro Destiny বইটা পড়ে ফেলুন। অন্ততঃ চিন্তার খোরাক পাবেন। এই পরিসরে, আর আমার মত নাদানের পক্ষে এ সম্পর্কিত কোন আলোচনার স্পর্ধা রাখা সম্ভবপর নয়। তাছাড়া সচলায়তনে আমার "প্রবেশ" এমনকি মন্তব্য প্রকাশও সব সময় হয়না। তাই আনাগোনা কম। এখানে সংগত কারনেই আমি এখনও "অচল।" কখনো সচল হলে আর সুযোগ পেলে এ নিয়ে লিখবো আরো।
ভালো থাকুন। অপ্টিমিস্ট থাকুন। শুভ কামনা থাকবে আপনার জন্য।

‍লতিফ হোসাইন

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

লতিফ ভাই , আসলে সুখ দুঃখ , উত্থান পতনের মধ্যেই মনুষ্য জীবনের মহিমা নিহিত । আমার জীবনে পেসিমিজমের প্রভাবটা হয়তো কাকতালীয় । অন্যভাবে বলা যায় এটাই হয়তো আমার অদৃষ্ট । যে বিষয়ের ব্যাখ্যা মানুষের কাছে নেই সেটা নিয়ে বেশী ঘাঁটাঘাঁটি না করে নিয়তির উপর ছেড়ে দেওয়াই বুদ্বিমানের কাজ বলে মনে করি । ধর্ম নিয়ে আমার কোন কনফিউশান নেই । কিন্তু জ্যোতিষ বিদ্যার কোন গ্রহন যোগ্য ব্যাখা আছে বলে আমার জানা নেই । চেষ্টা করব আপনার উল্লেখ করা বইটি পড়তে । আর হ্যাঁ , আপনাদের এতো এতো কমপ্লিমেন্টস পেয়ে প্রেশার একটু বেড়েছে বৈকি ? অনেক অনুপ্রানিত হলাম । আরেকটা কথা , আমি এখন অনেক স্বাস্থ্য বান । ৫ ফিট সাড়ে ৯ ইঞ্চি দেহের ওজন এখন ৮০ কেজি । রীতিমত ডায়েট কন্ট্রোল করতে হচ্ছে । ভাল থাকবেন ।

অতিথি লেখক এর ছবি

কি জন্য যে কি হয় মানুষের! আপনার ভালো থাকাটাও একটা মৃদু কনসার্ন হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্য। ব্যাখ্যা নাই। ৬০ কেজিই হোক আর ৮০ই হোক — ভালো থাকবেন। হাসি

লতিফ হোসাইন

অতিথি লেখক এর ছবি

খারাপ যেমন হয়,তেমনি ভালও তো হয়,না??তাইলে ভালটার কথা ভেবে পেসিমজমরে চুলায় দিয়ে দ্যান!

সুবর্ণনন্দিনী

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

সুবর্ণ নন্দিনী আপু , সর্বনাশ ! পেসিমিজমেরে চুলায় দিলে আমি চলবো কিভাবে ?

" সংসার সাগরে সুখ দুঃখ তরঙ্গের খেলা
হতাশা মোর একমাত্র ভেলা "

উতপাখির হৃদয়

তদানিন্তন পাঁঠা (জুন) এর ছবি

ভাই, জলপরীর নাম আসলে কী ছিল? হিমি না মিলি? হাসি ভালটা সবাই বলছে। তাই আমি একটু খোঁচা দিয়ে গেলাম। লিখতে থাকুন। আরেকটা কথা - আপনি কি উটপাখির হৃদয় নাকি উতপাখির? যদি পরেরটা হয় তবে এই পাখিটির সাথে একটু পরিচয় করায় দেবেন কি?

পরের লেখার জন্য পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

ভাই বর্তমানের খাসি (নাকি ভুল বললাম ? তদানীন্তন পাঁঠা তো বর্তমানের খাসী ই হওয়ার কথা) আপনি কেন খালি খালি আমার উপর জ্যোতিষ বিদ্যা ফলানোর চেষ্টা করতাছেন শুনি । অভ্র টাইপিং এ দুর্বলতার কারনে এবং বেখেয়ালে " উটপাখি " উতপাখি হয়া গেছে । কি আর করা । যে নামে জন্ম নিবন্ধন হয়েছে সেটা না লিখলে তো নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে । অত এব কি আর করা ? আপ্নারে ভাই চেনা চেনা লাগতাছে ।

উতপাখির জীবন

ক্রেসিডা এর ছবি

হৃদয় রে আবার জীবন বানাইয়া দিলেন কেন? হো হো হো

যাকগে.. কোন এক কারনে (জানি না) "উতপাখি" টা শুনতেই ভালো লাগতেছে দেঁতো হাসি

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

ক্রেসিডা ভাই , উটপাখির জীবনের প্যাটেন্ট তো প্রথম আলোর । ঐটা নিলে মামলা খামুনা আবার ! তাই হৃদয়টা নিলাম । তাছাড়া হৃদয় না থাকলে জীবনের কি দাম বলেন ?

উতপাখির হৃদয়

জুন এর ছবি

জ্বী ভাই, বর্তমানে খোঁজা অবস্থাতেই দিনাতিপাত করিতাছি। জ্যোতিষবিদ্যা ফলানো আমার কম্ম নয়, লেখার ভিতরেই একই প্যারায় আপনি প্রথমে হিমি নাম দিয়ে শুরু করলেও শেষে এসে মিলি লিখেছেন দেখেই প্রশ্নটা মনে জেগেছিল। পাঁঠা এবং খাসি দুটাই মোটামুটি দামী হলেও সহজলভ্য। কাজেই চিন্তেই পারেন। হাসি

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

হিল্লোল এর ছবি

হতাশা সবার জীবনেই কম বেশি আসেই। এক্ষেত্রে আমার মূলনীতি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট হতাশ থাকা যাইতে পারে; এর থেকে বেশী সময় হতাশ থাকলে ঐ সময়টাই নষ্ট। কথা একটাই, কি আছে জীবনে হাসি

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

এক খান খাঁটি কথা কইছেন , হিল্লোল ভাইয়া

উতপাখির হৃদয়

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

পাঁচ নাম্বার প্যারায় একবার হিমি এবং একবার মিলি, ব্যাপারটা খটকা লাগলো। ক্লিয়ার করা যায়?

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

রিয়েল ডেমোন ভাই , আসলে নাম দুইটা একজনেরই । একটার আকিকা দেওয়া হয়নি । আমি একটু পরখ করে নিলাম সচলের পাঠক কত মনোযোগী । আপনি আর তদানিন্তন পাঁঠা একশো তে একশো দেঁতো হাসি

বন্দনা এর ছবি

ভালো লেগেছে উটপাখি ভাই। সচলে স্বাগতম।

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনার জন্য শুভ কামনা থাকল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার জীবনের সাথে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে ঘটনাটা। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
--চিত্রাঙ্গদা

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

জনাব চিত্রঙ্গদা , আপ্নার কথা শুনে ভাল লাগল । একটা পেসিমিস্ট সংঘ খোলা যায় তাহলে । কি বলেন ?

উতপাখির হৃদয়

অতিথি লেখক এর ছবি

লইজ্জা লাগে

অতিথি লেখক এর ছবি

কখনো পেসিমিস্টিক, কখনো অপটিমিস্টিক - জীবন বোধহয় এমনই। চালিয়ে যান ভাই - আরো লেখার প্রত‌্যাশায় রইলাম। - অয়ন।

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

ঠিক বলেছেন অয়ন ভাই । চেষ্টা থাকবে প্রত্যাশা পূরণের । ভাল থাকা হয় যেন

উতপাখির হৃদয়

শাব্দিক এর ছবি

আপনি তো জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন, তাও এত হতাশ?
মানুষের জীবন এর চেয়ে কত বেশী কঠিন হয় আপনার হয়ত জানা নাই। তাও মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে।
লেখা ভাল লাগল।

উতপাখির হৃদয় এর ছবি

শাব্দিক , আমি শেষে কিন্তু বলেছিলাম এখন বেশ আছি আমি । একদম ঠিক বলেছেন ।মানুষ আশা নিয়ে ই বাঁচে । আর আমার ওই রাশির কারনে হতাশা থেকেই ছেঁকে নিয়ে আসি আশার ধূলি কনা , ইট ,বালি , পাথর - গড়ে নিই আপন খেলাঘর

উতপাখির হৃদয়

তারেক অণু এর ছবি

চলুক

জ্যোতিষবিদ্যা কে আপনারা কে কিভাবে মূল্যায়ন করেন জানি না--- যে যেভাবেই ইচ্ছা মূল্যায়ন করুক, ভুয়া জিনিস ভুয়াই সবসময়।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমি একেবারে উল্টা।
অনেকটা "জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি" - টাইপ অপটিমিস্টিক আমি। দেঁতো হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।