'রূপান্তর' এর গল্প এবং অভিভূত আমি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৩/০৭/২০১২ - ৯:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্লাসরুমে একবার হঠাৎ স্যার দাড় করালেন পেছনের বেঞ্চের সবাইকে।ক্লাশ নিশ্চুপ।স্যারের হুঙ্কার “কি ব্যাপার???সারাক্ষন পিছে বসে বসে কথা বল।আমি কি করলে তোমরা তোমাদের কথা রেখে আমার কথা শুনবা???”।
সাথে সাথেই মুখ ফসকে বের হয়ে গেল “স্যার,গল্প বলেন।” সবাই হেসেছিল,স্যারও হেসেছিলেন শব্দ করে।ব্যাপারটা মনে পড়তেই এখন অনেক হাসি পায়।আবার ভাবি বয়েস বেড়েছে তো কি হয়েছে!!!গল্প শুনতে এখনো কি কম ভালোবাসি!!!আমার এই গল্প শুনবার আগ্রহের কথা আমার বন্ধুদেরও খুব একটা অজানা নয়।এক বন্ধু অনেকদিন থেকেই আমাকে হই হই রই রই করে বলছিল একটা বাংলা সিনেমা দেখবার জন্য,বলেছিল ‘‘একেবারে খাসা গল্প,সিনেমার নাম ‘রূপান্তর’ আর পরিচালক আবু সাইয়ীদ’’।
আর্টফিলম শুনে আর তেমন গা করিনি(মাঝে কিছু আর্টফিলম দেখে আর্ট ফিলম নিয়ে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে ভেতরে ভেতরে আমার)।
কিছুদিন থেকে একেবারেই বেকার বসে আছি।আজ আর বিরক্ত হয়ে বসে থাকতে পারলাম না।সিনেমাটা নিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে সিনেমা চালু করে দিলাম।এরপর সিনেমা শুরু হল,শেষ হয়ে গেল।আমি জায়গায় হা হয়ে বসে থাকলাম।নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল “বাহ!এত্ত সুন্দর গল্প!!!”

সিনেমার গল্পটার শুরু আমাদের পরিচিত মহাভারতের একটা টুকরো গল্প থেকে।একলব্যের গল্প।

রাজবংশের কৌরব এবং পাণ্ডবদের অস্ত্র শিক্ষার গুরু দ্রোণাচার্য।গুরু দ্রোণাচার্যের প্রিয় শিষ্য পাণ্ডব অর্জুন।দ্রোণাচার্য বারবার রাজশক্তির পৃষ্ঠপোষক হয়ে ঘোষণা করেছেন 'অর্জুনই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর(ব্লা ব্লা...)।
একদিন একলব্য নামে নিচুজাতের (অক্ষত্রিয়) এক যুবক দ্রোণাচার্যের কাছে এসে ভক্তিভরে তার শিষ্যত্ব চাইল কিন্তু রাজকূলের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য নিচু জাতের কাউকে অস্ত্রশিক্ষা দেবেন না বলে একলব্যকে সেই মুহূর্তেই প্রত্যাখ্যান করলেন।সেই আচার্যকে কল্পনায় গুরু সাজিয়ে এরপর একলব্য নিজে নিজে অস্ত্র চালনা শিখেন।এরপর কিছুদিনের মধ্যেই একলব্যের অসামান্য অস্ত্রবিদ্যার কথা দ্রোণাচার্যের কানে আসে।তার প্রিয় শিষ্য অর্জুনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দ্রোণাচার্য নিজে এলেন একলব্যের কাছে।জিজ্ঞেস করলেন তার গুরু কে???একলব্যের মুখে যখন দ্রোণাচার্য জানতে পারলেন তিনিই একলব্যর গুরু তখন নির্লজ্জের মত প্রিয় অর্জুনকে বাঁচাতে একলব্যের কাছে দাবি করলেন গুরুদক্ষিণা-একলব্যের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল।একলব্যও যথারীতি গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিয়ে হারালেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব আর অর্জুন গুরুর সৌজন্যে হয়ে গেলেন প্রতিদ্বন্দ্বী হীন।

যদি ভাবেন গল্পটাতো বলেই দিলাম,ভুল করলেন।বলতে গেলে এই একলব্যের গল্পের হাত ধরেই সিনেমার গল্পটা শুরু।এই পরিচিত গল্প নিয়ে শুরু করে পরিচালক এবং কাহিনীকার আবু সাইয়ীদ গল্পের মোড় যেভাবে ঘুরিয়েছেন,যেখানে নিয়ে থেমেছেন।আমি অভিভূত,মুগ্ধ,পাগলপ্রায়।

আমি বোদ্ধা নই।সিনেমার বিশ্লেষণ নিয়ে মাথা ঘামাবার দুঃসাহস করবার চিন্তাও করছি না।আমি একজন দর্শক এর মতই আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি মাত্র।
সিনেমার সংলাপ আমার কাছে যথোপযুক্ত মনে হয়েছে।জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়,শতাব্দী ওয়াদুদ এর মত গুণী অভিনেতাদের পাশে অন্যদের ফিকে মনে হয়নি একেবারেই।ফিলম এর টেকনিকাল দিক নিয়ে খুব একটা জানিনা,তবে মনে হয়েছে চারপাশের সাজ সজ্জার যতটুকু আড়ম্বর থাকা উচিত ছিল ঠিক তেমনটা বোধহয় দেখতে পাইনি,এইখানেই আমার একটু অতৃপ্তি।

পরিচালক আবু সাইয়ীদ,আপনাকে বলি,যদি হাজার অসামঞ্জস্যতা আমার মূর্খ চোখে ধরা পরত তবুও আমি ঠিক এইভাবেই মুগ্ধ হতাম আপনার লেখা ‘রূপান্তর’ এর গল্পের চমৎকারিত্বের গুণে।আপনার অসাধারণ এই গল্প খোঁজার মানসিকতা আমাকে নাড়া দিয়েছে,আমি রীতিমত আপনার মত হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।আরও চমৎকার সব গল্প এবং সিনেমা আপনার কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।শুভেচ্ছা রইল।

কাক্কেশ্বর কুচকুচে


মন্তব্য

শাব্দিক এর ছবি

মুভ্যিটা আগেই দেখেছি।
আপনার লেখা ভাল লাগল। আপনার নিকটা মজার হাসি

কাক্কেশ্বর কুচকুচে এর ছবি

নিক এর সাথে লেখাটাও যে ভালো লেগেছে তা জেনে ভালো লাগল হাসি
অনেক ধন্যবাদ হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার অনুভূতির সাথে একমত। মুভিটা আমারও খুব পছন্দের।

-চিত্রাঙ্গদা

কাক্কেশ্বর কুচকুচে এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও গল্প শোনার সুযোগ পেলে মনের পপ্পনের প্যাকেটটা খুলে বসে যাই! মুভিটা দেখা হয়নি।দেখার ইচ্ছা জাগায় দিলেন!!

সুবর্ণনন্দিনী

কাক্কেশ্বর কুচকুচে এর ছবি

আহা!!অনেক দিন পর পপ্পন নামটা শুনলাম।
আজকাল কেও পপ্পন ডাকেনা নাকি!!!
আপনি গল্পলোভী মানুষ যখন,তাড়াতাড়ি দেখে ফেলুন হাসি
'এত্ত সুন্দর গল্প মানুষ খুঁজে পায় কিভাবে!!!' দেখা শেষে এই ভেবে কষ্ট পাবেন বলে রাখলাম শয়তানী হাসি
ধন্যবাদ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।