উৎসর্গ--জনৈক স্কুল শিক্ষককে,যিনি একদিন বড় মুখ করিয়া বলিয়াছিলেন_____
বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচাইতে চমৎকার জায়গা যেখানে সংকীর্ণতা নেই,সীমাবদ্ধতা নেই,কুসংস্কার নেই,অসহায়ত্ব নেই-আছে শুধু জ্ঞান,প্রজ্ঞা আর সৃষ্টিশীলতার অনুশীলন ও পরিচর্যা।
প্রথম অংক(আজাইরা)
নয় বৎসর সাত মাস সতের দিন অতিবাহিত করিবার পরে শেষ হইল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।স্কুলজীবনে ফেলু মিত্তির হইবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করিয়াও কিছুদিনেই ফেলুদা নামখানি বাগাইয়া লইয়াছিলাম কেবল বারকয়েক একই ক্লাশে গণিত বিষয়খানিতে নাকানি-চুবানি খাইয়াছিলাম বলিয়া।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি চাইলেও সেই ধারা অব্যাহত রাখিতে পারিতাম না(পারিও নাই)কতিপয় কারনে।প্রথম কারন,বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িবার বিষয়গুলিতে আমার প্রথম পছন্দ গণিত ছিলোনা এবং দ্বিতীয় কারন,বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অদ্ভুত কারনে পরীক্ষাই হইত না।হয় প্রাঙ্গণে মারামারি ধ্বস্তাধস্তি হইয়া পরীক্ষা বানচাল হইয়া যায় নতুবা কারনে অকারনে ছাত্ররাই পরীক্ষা দেবেনা বলিয়া ঠিক করে যদিবা কখনও দেবে ভাবে তখন শিক্ষকরাই বাঁধ সাধিয়া দাড়ায়।
দ্বিতীয় অংক(অধমনামা)
এই নয় বৎসরব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি ছিলাম ঠিক সিদ্ধার্থের মতই শুদ্ধ,তপস্বী(মাঝে মাঝে ভাবি এতটা তপস্যা সিদ্ধার্থও করিয়াছিলেন কিনা!!!)।এত্ত দীর্ঘকাল হলে থাকিয়াও রাজনীতির পথ মাড়াই নাই,কবি-লেখক কিংবা গান-আবৃত্তির দলেও ভিড়ি নাই।সৌন্দর্যে মুগ্ধ হইয়াও ক্লাশের সুন্দরী মেয়েদের সাথে সাহসের অভাবে কথা বলিবার শক্তি পাইনাই,ভাবিয়াছিলাম সেই সাধনাও চালু রাখিব।কিন্তু প্রথম বেঞ্চে বসা সুন্দরী মেয়ে নীলার সহিত হঠাৎ চোখাচোখি এবং ধীরে ধীরে বাক্যালাপ শুরু হইলে শেষোক্ত সাধনার দফা রফা হইয়া যায়।তবে ঈশ্বর আমার সাধনায় সন্তুষ্ট না হইয়া পারেন নাই।যাতে নির্বিঘ্নে সাধনা চালাইতে পারি সেই হেতু কিছুদিনের মধ্যেই সিদ্ধার্থের মত সাধক হইবার জন্য একখানা রেডিমেড ফুটবল(টাকমাথা) উপহার দিলেন।তাই অন্যান্যদের মত (নাচে,গানে,ফুটবলে,কবিতায় কিংবা রাজনীতিতে) বিখ্যাত হইবার সাধ জাগিলেও সাধনা অব্যাহত রাখিলাম।ফলাফলও হাতে নাতে পাইলাম।বন্ধু-বান্ধব বিশেষ জুটিলনা,হলে দাদাগিরি তো দূরে থাকুক কারো আদাব সালাম পর্যন্ত অর্জন করিতে পারিলাম না।তাই বাধ্য হইয়া জীবনের একমাত্র অর্জন নীলাকে লইয়া সুখী হইলাম।
তৃতীয় অংক(ঘটনারম্ভ)
এত্তদিন পর অবশেষে সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করিতে যাইতেছি এই আনন্দে রেজাল্ট প্রকাশের পূর্বের দিন বিকালে নীলাকে লইয়া বিহারে বাহির হইয়াছি।এমতাবস্থায় নীলা আমাকে জানাইল যে তাহার বিবাহ এক বিদেশী(প্রবাসী) বাবুর সহিত প্রায় পাকাপাকি হইবার জোগাড়।সে বহু কষ্টে তাহার পিতার সহিত আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা পাকা করিয়াছে আগামিকল্য বিকালে।তাহার পিতার সহিত অবশ্য সাক্ষাত করিব এবং আগামিকল্য রেজাল্ট দিবার সাথে সাথে আমার এক অতি দূর সম্পর্কের চাচার বদৌলতে চাকরি লইয়া শীঘ্রই তাহাকে আমার ঘরে নিয়া আসিব এরূপ কথা দিয়া তাহাকে নিরস্ত করিয়া অবশেষে হলের পথে রওনা দিলাম।উৎফুল্ল মন,রাস্তায় যাহাই দেখিতেছিলাম তাহাই অকৃত্রিম বিলাসবহুল সুন্দর লাগিতেছিল।পদব্রজে হলের রাস্তার দিকে আসিয়া পৌঁছাইলাম কিন্তু আজকে যে সেইখানে দশ নম্বর বিপদ সংকেত চলিতেছে তাহাই বা কে জানিত!!!দশ মিনিট পূর্বে কিংবা উত্তরে সেইস্থলে পৌছিলে হয়ত আমার কপাল খানা অন্যরকম হইত।
চতুর্থ অংক(ঘটনা)
আমার পৌছাবার কালে হলে দুই পক্ষের মধ্যকার গোলাগুলি চলিতেছিল,কিছু বুঝিবার আগেই তাহারই একটি বুলেট আসিয়া লাগিল আমার ডানহস্তে। ঝাকি অনুভব করিয়া এবং হাতে রক্ত দেখিয়াই হাহাকার করিয়া চিৎকারে মূর্ছা গেলাম।
পঞ্চম অংক(ঘটনার চূড়ান্ত)
চারপাশের ভয়ানক চিৎকারে জ্ঞান ফিরিয়াই দেখিতে পাইলাম চারপাশে গুটিকয়েক ভীত সন্ত্রস্ত ডাক্তার এবং নার্স সকলে নীরব,তাহলে শব্দ আসিতেছে কোথা হইতে???শব্দের উৎস জানিতে কান খাড়া করিলাম এবং যাহা শুনিলাম তাহাতে হৃদকম্প রিকটার স্কেলের মাত্রা ছাড়াইয়া গেল,ডাক্তার আমার অবস্থা দেখিয়া কহিল “বাহিরে আপনাকে লইয়া দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলিতেছে”।
এই সত্য আমিও অনুধাবন করিলাম যখন একদল হুঙ্কার
ছাড়িয়া কহিল আমাকে তাহারা রাস্তা হইতে তুলিয়া আনিয়া হাসপাতালে ভর্তি করাইয়াছে সুতরাং আমি তাহাদের দলের লোক।
আরেকদল প্রত্যুত্তরে কহিল যেহেতু আমি আহত সেহেতু আমি নিঃসন্দেহে তাহাদের দলের লোক(হত রা সর্বদা এক পক্ষের হয় কিনা)।যতদিন পর্যন্ত আমি হত হইব না ততদিন পর্যন্ত আমি তাহাদের দলের।হত হইলেই তাহারা দাবি ছাড়িয়া দিতে রাজি।
বাক্যালাপের এই পর্যায়ে আমি দিশাহারা(অজ্ঞান) হইলাম।
ষষ্ঠ অংক(বিখ্যাতি)
এর পর জ্ঞান ফিরিলে দেখিলাম ওরে বাবা!!!হাজার খানেক মুখ আর ক্যামেরার ফ্ল্যাশ।তাহারা আমার নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল আমি আসলে কোন পক্ষের লোক।তাহারা আরও জানাইল,আমি যে গোপনে এক বিশাল বড় নেতাস্থানীয় লোক সেই নিশ্চিত তথ্যও তাহাদের নিকট রহিয়াছে।কথাবার্তার একপর্যায় আমি যে কত বড় ধুরন্ধর,কত বড় অস্ত্র সন্ত্রাসী তাহা নিজের নিকটই স্পষ্ট হইয়া গেল এবং আমি শেষবারের মত মূর্ছা গেলাম।
(ধ্বংসাব)শেষ অংক
হাসপাতাল হইতে ছাড়া পাইয়াছি গতকাল।বাইর হইয়াই এইখানে সেইখানে দেওয়ালে আমার ছবি দেখিয়া বেশ ভালো লাগিল।সেই অতি দূর সম্পর্কের চাচা গতকাল রাত্তিরেই ফোন দিয়া জানাইয়াছেন যে জায়গায় চাকরির ব্যবস্থা তিনি করিয়াছিলেন তাহাদের আমার মত ভয়ংকর বিখ্যাত মানুষকে(যাহার ছবি এবং নাম প্রত্যহ টিভি আর সংবাদপত্রে আসে) প্রয়োজন নাই।
নীলার বাবা আমার নাম এবং ছবি সংবাদপত্রে এবং টিভিতে দেখিয়া আমার সহিত দ্বিতীয়বার দেখা করিবার সময় দিবার মত দুঃসাহস মনের ভিতর আনেন নাই এবং নীলাকে যে ঈশ্বর কিরূপে বাঁচাইয়া দিয়াছেন তাহা উত্তমরূপে নীলাকে বুঝাইতে পারিয়াছেন বলিয়াই আমার বিশ্বাস।গতকাল রাতে নীলার শুভবিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে।
আজ রেজাল্ট হাতে পাইয়াছি।বৃদ্ধ বাবা মা কে আর কত অবহেলা করিব।চাকুরি একখানা আবশ্যক।এই বিখ্যাতি লইয়া তাহা হইবে বলিয়া বিশ্বাস হয়না।আগামিকাল সকালে পিতৃপ্রদত্ত নামখানা বদল করিতে এফিডেভিট করিতে যাইব।
কাক্কেশ্বর কুচকুচে
মন্তব্য
মজা লেগেছে। তবে আরেকটু হলেই রসটা থাকত না। বোরিং হয়ে যেতো।
ধন্যবাদ ভাই
ভাল লেগেছে। আরও লিখুন।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ কবি দা
আর আমি হলে থাকি,বড়দের কাছ থেকে 'আপনি' শোনবার অভ্যাস নেই।
আপনি করে না বললেই বাঁধিত হব
শুরুটা খানিক ঢিলে ছিল। শেষটা ভালো হয়েছে।
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ কৌস্তুভ দা
মজার হইসে
ধন্যবাদ
ব্যাপক মজা পাইলাম , কুচকুচে ভাই ।
ধন্যবাদ
মজা পেয়েছি খুব, আবার মজার সাথে বাস্তবতাটাও উঠে আসায় এক ধরণের কষ্ট কষ্ট ভাবের ও অনুভূতি হয়েছে, তাই হাসি কষ্ট দু’টোর ইমোই দেলাম
কষ্টটা পেয়েছেন জন্য নিজের লেখার উপর বেশ খুশি খুশি লাগতেছে
অনেক ধন্যবাদ
জোশ হইছে
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
facebook
অধমের লেখা পাঠের সময়ও আপনার হয়!!!
আপনি হয়ত মানুষ না/মানুষগুলা অন্যরকম
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ অণু দা
মজা পাইলাম।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ধন্যবাদ আপু
ভ্রাতঃ কি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের বিদ্যার্থী ছিলেন? আমিও উক্ত বিভাগ হইতে বাহির হইতে হইতে দশটি বৎসর প্রায় ছুঁইয়াই ফেলিয়াছিলাম। ঘরে-বাহিরে-ছাত্রের বাসায় শ্রীমুখ দেখাইতে পারিতাম না। '' বিখ্যাতি '' শব্দের অর্থ বুঝিলাম না।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
না ভ্রাতঃ চবি র সেই বিভাগের ছাত্র আমি নই।তবে আমাদের যা শুরু হইছে হয়ত আপনাকে ছুঁয়ে ফেলতে পারি।
দ্বিতীয় প্রশ্নটা ঠিক বুঝতে পারিনি।'বিখ্যাতি' মানে 'অতিশয় খ্যাতি'
পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
খুবই মজা লাগলো- সুন্দর।
শনিবারের চিঠি
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ
ভাল লেগেছে।।
সচলায়তনের পররথম কমেন্টা আপনার বললগে করলাম লেখা পড়ে মজা লেগেছে
''নিন্দুক''
নতুন মন্তব্য করুন