ম্যারাথন অফ হোপ – টেরি ফক্স

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ৩০/০৭/২০১২ - ৬:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৪ সালে কানাডিয়ানরা টেরি ফক্সকে ‘দ্বিতীয় গ্রেটেস্ট কানাডিয়ান অফ অল টাইম’ হিসেবে নির্বাচিত করে। নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে একটা মানুষ কিভাবে বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে পারে তার মন্ত্র শেখায় টেরি। ছোট টেরির কথা স্মরণ করে টেরির রেলওয়ের সুইসম্যান বাবা বলেন, টেরি যে কাজ ধরত তা শেষ না করা পর্যন্ত ছাড়তো না। তার প্রতিফলন দেখা যায় টেরির পরের জীবণে। জুনিয়র স্কুলে টেরির প্যাশন ছিল বাস্কেটবল। কিন্তু টেরি তখন ভাল খেলতে পারত না। স্কুলের কোচ তাকে বাস্কেটবল ছেড়ে রেসিংর জন্য উৎসাহ দেয়। কোচকে খুশী করার জন্য টেরি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কিন্তু বাস্কেটবলের নেশা যেন তাকে ছাড়ে না। গ্রেড এইটে টেরি মাত্র এক মিনিটের জন্য দলে সুযোগ পায়। সেই সামার টেরি বাস্কেটবল খেলায় উন্নতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। ‘পৃথিবীর বেশীরভাগ সাফল্যের মূলমন্ত্র লেগে থাকা’ –র কল্যাণে টেরি ক্লাস নাইনে একজন নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে থাকে স্কুল বাস্কেটবল দলে। গ্রেড ১২ এ টেরি হাইস্কুল এ সেরা এথলেটের পুরস্কার পায়।

টেরির বয়স যখন ১৮, যখন টেরি এস এফ ইউ তে কাইনেসিওলযি ( শরীরবিদ্যা) -র ছাত্র, তার বোন ক্যান্সার ধরা পরে। সময়টা ১৯৭৭ র দিকে, খুব বেশি আগের কথা নয়। টেরির ডান পায়ের হাঁটুর ৬” র উপর থেকে কেটে ফেলতে হয়। কেমোথেরাপির কষ্টকর অভিজ্ঞতা আর চিকিৎসা চলা কালে ক্যান্সার আকান্ত বাচ্চাদের দেখে টেরির মন কেমন করে উঠে। সে কিছু করতে চাই, যদি কোন কিছুতে অবদান রাখতে পারে।
আপাত দৃষ্টের সুখী মানুষরা অনেকেই হতাশায় ভুগে নারী-বাড়ি-গাড়ী বা ডক্টরেট থাকার পরও অন্যের জন্য কিছু করতে না পারার তাড়নাই। বিপন্ন বিস্ময় তাদের রক্তের মধ্যে খেলা করে। কিন্তু একটা কাঠামোয় থেকে জীবনযাপণে অভ্যস্ত থেকে কিছু করার উপায় খুঁজে পায় না। টেরি ভাল একটা দৃষ্টান্ত দেখায়। সে যা ভাল পারে, যেখানে তার দখল আছে তাকেই বেছে নেই। টেরি কানাডার পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূল (৮০০০+ কিঃমিঃ) ম্যারাথন করার সিধান্ত নেয় একটা কৃত্তিম পা নিয়ে। ১৯৭৯ সালে ১৫ ই অক্টোবর টেরি কানাডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটিকে তার স্বপ্নের ( শেষ মিনিট পর্যন্ত ক্রল করা) কথা জানায় এবং ফান্ড-র জন্য আপিল করে। ডাক্তাররা টেরিকে সতর্ক করে দেয়। কিন্তু টেরি ছাড়ার পাত্র নয়। টেরি তার ম্যারাথন অফ হোপ-র জন্য স্পন্সর সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। ফোর্ড মটর কোম্পানি একটা ক্যাম্পার ভ্যান দেয়, এডিডাস কেডস স্পন্সর করে। যেসব কোম্পানি শর্তযুক্ত বা ব্যবসায়িক এডের র কথা বলে টেরি তাদের ফিরিয়ে দেয়।
এপ্রিল ১২, ১৯৮০। টেরি নিউফাউন্ডল্যান্ডের আটলান্টিক মহাসাগরে তার ডান কৃত্তিম পা দুবায় আর দু’ বোতলে মহাসাগরের পানি নেয়। ইচ্ছে একটা স্যুভেনির হিসেবে নিজের কাছে রাখা আরে অন্যটা ব্রিটিশ কল্মবিয়ায় পোঁছে প্রশান্ত মহাসাগরে বিসর্জন দেয়া। টেরির বন্ধু ডগ এলাওয়ার ভ্যানে করে তার মালামাল ও রান্নার দিকভাল করতে থাকে। টেরির স্বপ্ন ছিল কমপক্ষে প্রত্যেক কানাডিয়ান থেকে এক লুনি সংগ্রহ করা।

সেপ্টেম্বর ১ তারিখ, টেরি যখন অন্তারিও তে পৌছায় তার শারীরিক অবস্থার তীব্রঅ বনতি ঘটে। টেরি তার স্বপ্ন রথের চাকা থামাতে বাধ্য হয়। কিন্তু এর মাঝে সে ১৪৩ দিনে ৫২৭৩ কিঃ মিঃ দৌড়ায় , প্রতিদিন ২৬ মাইল, সপ্তাহে সাত দিন, প্রতিদিন এক ম্যারাথন-র সমপরিমাণ। একটা কৃত্তিম পা নিয়ে এতটা দৌড়ানো কত কষ্টের, তার উপর কানাডার চঞ্চল আবহাওয়ায়।
টেরি এর মাঝে ২ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অর্থ সংগ্রহ করে। ১৯৮১ র জুনে টেরির জীবন অবসান হয়। টেরির মৃত্যুাবধি টেরি ফক্স ফাউনডেশন এ পর্যন্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে। এই টাকা উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসার গবেষণার কাজে লাগানো হয়।

টেরি তার সপ্নে বেঁচে রয়। আর আমাদের মানে ‘ পা থাকিতেও খোঁড়াদের ‘ , অন্তর্গত রক্তে প্রায় খেলা করে।

‍// সারাজীবন


মন্তব্য

CannonCarnegy এর ছবি

ভাল লাগলো।

টেরি তার স্বপ্নে বেঁচে রয়। আর আমাদের মানে 'পা থাকিতে খোঁড়াদের', রক্তে প্রায় খেলা করে।

অস্বাভাবিক  এর ছবি

পা থাকিতে খোড়া হইতে চাই না
লেখা ভাল হয়েছে চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

সেটাই , কিছু কিছু মানুষ যা করে গেছে বা যাবে !! ..ধন্যবাদ
// সারাজীবন

মুস্তাফিজ এর ছবি

টেরি'র জন্ম জুলাইয়ের ২৮।
টেরি'র দৌড়ানোর সময় গাড়ী চালিয়েছিলো ওর ভাই, সাথে আরেক বন্ধু।
গাড়িটি ওরা পরে বিক্রি করে দেয়, কয়েক মাস আগে ফাউন্ডেশন গাড়িটির বর্তমান মালিকের থেকে কিনে নিয়েছে সংরক্ষণের জন্য।
এস এফ ইউ তে টেরি'র একটা মুর্তি আছে, ছবিটা এখানে http://www.facebook.com/mohammad.m.rahman.940/photos#!/photo.php?fbid=10151072803776349&set=a.295866401348.181401.721506348&type=3&theater

...........................
Every Picture Tells a Story

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, নতুন তথ্যর জন্য হাসি
// সারাজীবন

বন্দনা এর ছবি

ভালো একটা লেখা। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, কিন্তু আসলে বেশ কিছু বানান ভুল রয়ে গেছে; আশা করি বাংলা টাইপ এ অভ্যস্ত হলে এসব কাটিয়ে উঠা যাবে।।
// সারাজীবন

পথিক পরাণ এর ছবি

সম্ভবত ১৯৯৪ সালে ঢাকায় টেরি ফক্স রান হইসিল। আমরা তখন কলেজ থেকে জাতীয় সংসদের আশেপাশে দৌড়েছিলাম।

সাফি এর ছবি

কানাডিয়ান হাই কমিশন তো মাঝে মাঝেই টেরি ফক্স রান আয়োজন করে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো তথ্য , ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
সচলায়তনেই আরেকটি লেখা পড়েছিলাম টেরি ফক্সকে নিয়ে।

সৌরভ কবীর

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়লাম লেখাটা , অসাধারণ এককথায় | রেফার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ
//সারাজীবন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।