রাধারমণের গান আমার খুবই প্রিয়। মাঝে মাঝে আমাকে রাধারমণের ভূতে পায়। আর ভূতে পাওয়া মানুষ কত কি করে, কত কি ভাবে। গানগুলো শুনতে শুনতে মনে কত কথা উঠে।
বৈষ্ণবকূলের পান্ডাগুলো অহরহ বলে বেড়ায় যে, সম্পূর্ণ কামভাব শুন্য না হলে নাকি ভাগবত পড়তে নাই। মনে কামভাব থাকলে নাকি, রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বোঝা যায় না। ওটা নাকি মহাজাগতিক প্রেম, জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার সাথে প্রেম। এমন সব এন্তার কথা। আমি ওদেরকে বলি, বেচারা কৃষ্ণের উপর এমন অবিচার কেন হে বাপু। মেনে নিলুম না হয়, ব্যাটা ঈশ্বর ছিলো (থুক্কু এখনো আছে)। তাই বলে কি ঈশ্বরের প্রেম করতে নেই? গন্ডায় গন্ডায় আন্ডাবাচ্চা পয়দা করার সময় কিংবা গোপিনীদের কাপড় চুরি করার সময় সে ব্যাটার ঈশ্বরত্ব কোথায় ছিলো হে বাপু?আবার ধরেন, কৃষ্ণের জন্মের কথা। আকাশ হতে দিব্যবাণী হল, হে কংস দেবকীর গর্ভের অষ্টম সন্তান তোমার প্রাণহরণ করবে। তো সেই কংস মামা করলেন কি!! বোন দেবকী আর তার স্বামীকে ধরে কারাগারের এক সেলেই পুরে দিল। বলি ওরে হতভাগা, ও দুটিকে দুটি আলাদা সেলে পুরে দেয়ার কথা তোর মাথায় একটি বার ও আসলনা কেন? তাহলেই তো তোর আর দেবকীর গর্ভের অষ্টম সন্তানের জন্ম ও হয় না। তোর প্রাণ ও হরণ হয় না। যে যাকগে, যে কংস মামার মাথায় এমন সহজ ব্যাপারটুকু আসেনা, তার রাজা হয়ে বেঁচে থেকেই বা কি লাভ।
এই যা ছিলাম রাধাকৃষ্ণের প্রেমের কথায়, আর চলে গেলাম কংস মামার কথায়। ভাগবতের কথাও পেলাম না, রাধার জন্য কৃষ্ণের একটি বারের লাইন মারা কথা(লাইন মারা মানে কি সেটা আশা করি কারো বুঝতে বাকি নাই)। এ কেমন তর অবিচার! কৃষ্ণ খালি বাঁশি বাজায়, আর রাধা সহ গোপিনীরা দৌড়ে ছুটে আয়। কি এমন ক্ষতি হত হে, যদি কৃষ্ণ কয়েকটা নির্ঘুম রাত কাটাতো? কিংবা কথা দিয়ে রাধা যমুনার কূলে মাঝে মাঝে না আসতো। একটি বার কল্পনা করুন, দূর্দান্ত বীর কৃষ্ণ,যার লাথি গুতো খেয়ে একের পর এক অসুর ধারাধাম ত্যাগ করেছে, সে বাঁশি হাতে যমুনার কূলে বসে আছে। আর তার জানের দোস্ত সুবলকে মিনমিনিয়ে বলছে,
আজ কেন রে প্রাণের সুবল
রাই এলো না যমুনাতে।
আমি রাই অপেক্ষায় বসে আছি
বসে আছি মোহন বাঁশি নিয়ে হাতে
রাই এলো না যমুনাতে।
আপনারা যারা প্রেম করেছেন, বলুন তো একটিবারে জন্যও কি আপনার প্রেয়সীটির অকারণ মান ভাঙ্গাতে গিয়ে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হয়নি। একটিবারও কি মনে হয় নি, এই আজাইরা প্রেম কেন করছি?? কি ক্ষতি হত, যদি ব্যাটা কৃষ্ণেরও এমন অবস্থা হত। তখন না হয়, ভাগবতে এমন দুটি লাইন এমন পেতাম
ওরে সুবল কাজ নাই আমার এই পীরিতে
রাই এলো না যমুনাতে।।
এমনটা হলে কি কৃষ্ণের ঈশ্বরত্বের খুব একটা ক্ষতি হত? এমনটা যদি হত, কৃষ্ণ বেচারা গরু চরাতে চরাতে বাঁশি বাজাত। আর রাধা তাকে প্রথম প্রথম একেবারেই পাত্তা না দিত। তাহলে হয়তো কৃষ্ণ বলত--
নয়ন তুলে চাইল না গো রাই
আমার ছিলো আশা দিল দাগা
এই পিরীতে কার্য নাই।
কিন্তু এমনটা হবার আদৌ কোন উপায় নেই। কৃষ্ণ ভক্তকূলের মাথায় গেথে আছে, থাকবে এক শ্যামে হাতে তার মোহন বাঁশী। কূল নিবে শ্যামের বাঁশি, আর রাধার প্রাণটি নিবে সে কালায়। বুঝলাম হে ভক্তকূল,
সে চিকন কালা সামান্য নয়, সে তো রাধার মন ভুলায়। জগতের নিয়মটাই তারা এমন বানিয়ে রেখেছেন, রাধাকেই সব সময় একই গাইতে হবে—
শ্যামল বরণ রূপে প্রাণ নিল হেরিয়া।
কি বলব রূপের কথা
কইতে ফাটে হিয়া
বিজলী ছটকের মত
রইয়াছে দাড়াইয়া ।।
সারা দুনিয়ার প্রেমিক কূল, প্রেয়সীর রূপের বর্ণনা আর প্রশংসা করে সারা দিনমান গান বেধে চলেছে। আর তিনি কৃষ্ণ, ওসব কিছু করবেন না। রাধা জল ফেলে জল আনতে যাবে জলের লাগিয়া,আর জল বিনে গৃহে আসবে খালি কলসী লইয়া। রাধাকৃষ্ণের প্রেম এমনিতেই প্রেম হয়ে যাবে। তাও আবার মহাজাগতিক প্রেম।
সচলে তো প্রবাসীদের অভাব নাই। একটিবারে জন্য চিন্তা করুন, আপনি দেশে আপনার রাধাকে ফেলে চলে গেছেন বিদেশে। আর একটিবারে জন্য ও ফিরে এলেন না। রাধাকে চোখের দেখাটাও দেখতে এলেন না। আর আপনার রাধা তার প্রাণের বান্ধবী বিশাখার কাছে গেয়ে যাচ্ছে
ও বিশখে, শ্যাম সুখেতে আমার মরণ
আমার মরণ জ্বালা হয় না নিবারণ।
এমনটা হলে কি, আপানার কানের নিচে কষে দুইটা থাবড় দিতে ইচ্ছে হবেনা নিজেকে? আশা করি আপনার হবে, কিন্তু ওই ঈশ্বর কৃষ্ণ মহোদয়ের হবেনা। মতান্তরে তার ভক্তকূলের ইচ্ছে হবেনা। বলি কি এমন ক্ষতি হত, যদি ঈশ্বরকে আরেকটু মানবীয় করে তোলা হলে। হাত-পা, চোখ-কান দুইটা করে ঠিকই দিয়েছে ভক্তকূল। কিন্তু ঈশ্বরকে মানুষের কাছাকাছি কিংবা মানুষ কররে তোলতে পারল না ভক্তরা, খালি পুরুষ করেই রেখে দিল। আফশোস ............
শ্রী বেকুবেশ্বর
৪ আগস্ট, ২০১২
মন্তব্য
হাহাহাহা ভালো লিখেছেন
আজ কেন রে প্রাণের সুবল
রাই এলো না যমুনাতে।
আমি রাই অপেক্ষায় বসে আছি
বসে আছি মোহন বাঁশি নিয়ে হাতে
রাই এলো না যমুনাতে।
#সুন্দর লিখেছেন, ভালো লেগেছে বেশ। শুভেচ্ছা আপনাকে।
#ভাল থাকুন সবসময়।
আর বোলেন না, এই রাধাকৃষ্ণের প্রেম শুনলেই রাগ হয়। এতই যদি প্রেম ছিল, আবার রাজা হয়ে কেমন আরেকজন কে বিয়ে করে বসে ছিল, রাধা কে বেমালুম ভুলে গিয়ে!
একেবারে মেইল ফ্যান্টাসির চুড়ান্ত!
ভাগ্যিস বাস্তবে মেয়েগুলো রাধার চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে, ঢাকায় কলাবাগান, কাঁঠালবাগান থাকলেও আমবাগান নেই। কৃষ্ণের দুঃখে কেঁদে আকুল হয়ে ঘুরে বেড়াবার জন্য আবার রাজশাহীর ট্রেনের হাতল ধরে ঝুলতে হোতো।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
সে আর বলতে।
শ্রী বেকুবেশ্বর
দেবকী বাসুদেবকে আলাদা সেলে রাখলেও বোধ হয় খুব একটা লাভ হতনা। ঐশী বাণী যখন এসেছে তখন তো হতেই হপে কিশেনজি'র জন্ম। হয়ত রাতের বেলা সূক্ষ্ণ দেহে বাসুদেব এসে দেবকীর সাথে মিলিত হয়ে যেতেন।
ওটি পারলে দুনিয়া জুড়ে ঈশ্বরকে মডেলিংযে নামিয়ে দেয়া চতুর ব্যবসায়ীদের যে লাল বাতি জ্বলে যাবে ব্রাদার।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
শ্রী বেকুবেশ্বর
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
১। আপনার নিকটি অতি চমেতকার।
২। আপনি লিখেন অনেক ভালো। লেগে থাকুন।
৩। এই লিখাটা একটু দ্রুত লয়ের লাগলো আমার কাছে। দম নিন, আস্তে আস্তে যান। তাড়াহুড়া কিসের?
..................................................................
#Banshibir.
আপনি পীর মানুষ। তায় আবার সত্যপীর। আপনার কথা কি ভুল হবার উপায় আছে?
অঃটঃ আমার স্বভাবটাই এমন, লেখাতে বসলে তাড়াহুড়ো করি। তবে আরেকটু শান্তভাবে লেখার চেষ্টা করছি।
ধন্যবাদ
আমার একটা অভিযোগ আছে, যদিও অভিযোগকে রোগ বলে ছিলেন জনৈক রাজা-
যাই হোক ঘটনাটা হইলো- এই যে সখিনা থেকে নীলাঞ্জনা- মৌসুমী- নীলা- সুষ্মিতা কতশত নারীকে নিয়ে গান বান্ধা হইছে । কতভাবে তাদের রূপ-গুণের প্রশংসা করা হইছে । কিন্তু কোন পুরুষকে উল্লেখ করে প্রেমসুলভ গান আজ পর্যন্ত আমি শুনেছি কিনা মনে পড়ছে না । খালি এই এক ব্যাটা কৃষ্ণ । তারপরও তাঁর কত নামের বাহার- কৃষ্ণ, শ্যাম, কালা, কালিয়া- আরও আছে । কেন্ রে বাবা? একা এক কালা মিঞারে সবার চোখে পড়ে- আর পাবলিক কী যমুনার জলে ভাসিয়া ভাসিয়া আসিয়াছে???
চলুক লেখা...
কৃষ্ণ ব্যাটা কামেল আদমী ছিল গো দাদা। থুক্কু কামেল ঈশ্বর ছিল। সব ঈশ্বরেরই তো দয়াময়,মায়াময় হেনতেন কত না উপাধি আছে। কিন্তু এই এক ব্যাটার প্রেমিকাদের দেয়া উপাধির অভাব নাই।
ক) রাধারমণের এই গানটা ভীষণ পছন্দের!
ভ্রমর কইয়ো গিয়া...
খ) পেমভালুবাসা ভালু না। [উদাস ইমো]
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ক) রাধারমণের গানগুলোর মধ্যে আমার অন্যতম পছন্দ রামকানাই দাসের কন্ঠে "বিনোদিনী গো"।
খ)
জায়গামত গুত্তা খাইছেন নাকি
ওহে শ্রী বেকুবেশ্বর, কেষ্টর লীলাখেলা নিয়ে এহেন ছিনিমিনি, কেউ সইবে না রে, কলিকালের আর কিছু বাকি রইলো না।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
শ্রী বেকুবেশ্বর
পড়ে ব্যাপক মজা পাইলাম
শ্রী বেকুবেশ্বর
অসাধারণ ! দেবকীদের আলাদা সেলে রাখার প্রস্তাব কখনও মাথায় আসলো না !!
সারাজীবন
শ্রী বেকুবেশ্বর
রাধারমণের একটি গান সুবীর নন্দীর গলায় অসাধারণ লাগে।
কারে দেখাব মনের দুঃখ গো---
আস্তাগ্ফিরুল্লাহ।
নতুন মন্তব্য করুন