শিরোনামে একটু সংশোধন আছে, আসলে হবে আমৃত্যু জ্বলবো। আমাদের প্রজম্নের বেশীরভাগই ( তার আগে/ পরের ও হয়ত ) , মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত দুটি জন্মদিন পেয়ে গেল। সত্যিকারের জন্মদিনের পাশাপাশি সার্টিফিকেট জন্মদিন, যা বেশিদিন সরকারি চাকরির বা সেশনজট পেরিয়ে বেশিবার ধরে বি.সি.এস দেবার সহায়িকা। যখন নিজের মত করে ভাবার বয়স হয়নি এসব নিয়ে, তখন মনে মনে খুশিই লাগত। আমার চালাক পিতা-মাতার এহেন পরিণামদর্শিতা (!) দেখে ভাবতাম কী সাংঘাতিক কাজের কাজই না করেছে। আমার বয়স তাদের আপন হাতে দুলতে দুলতে পাক্কা এক বছরের লাভ। বন্ধুদের সাথে গল্পে বলতাম; যদি তার থেকে আমার লাভ বেশি হয় তো খুশির সীমা থাকতো না। এ যেন তেন কথা! আমার অগ্রজের ক্ষেত্রে আবার আরেক কাঠি সরেস। স্খুলের প্রিয় দিদিমনি তার সেই উপকারটুকু করে আজীবন কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে – এক কালির খোঁচাই পাক্কা দেড় বছরের লাভ।
আমরা যারা এ ভুক্তভোগীর দলে, তাদের অধিকাংশই সরকারি চাকরির পথে পা মাড়ায়নি বা হোঁচট খেয়ে অন্যস্থানে থিতু হয়। সেই সম্পাদিত বয়স তার কোন কাজেই লাগে না। তারপর আজীবন তাকে এক মিথ্যা বহন করতে হয়। যেকোনো পরিচিতি প্রদানে, নামের সাথে জন্মতারিখ লাগেই। অতএব, ‘মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া’ – র সাথেই বসবাস অকারণে। এমন না যে সবাইকে সত্যবাদি যুধিস্তির হতে হবে। ফলে পেশাগত জীবনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়। সার্টিফিকেট জন্মদিন এ কেক কাটতে বা উইশ পেতে কারই তেমন ভালো লাগার কথা নয়। কিসের বা কতটুকু লাভের জন্য মা বাবা এমন একটা মিথ্যার আঁটি বুকের উপর চাপিয়ে দেয়। দেশের সীমা পেরিয়ে যারা বিদেশে কাজ করে, পড়ে বা গবেষণা করে, তারা পরে আর সংকোচে- পারে না সয়তে, না পারে কয়তে!
সবচেয়ে দুঃখজনক হল একটি নিষ্পাপ মনে পিতামাতা একটি মিথ্যার বীজ বুনে দেয়। ছোট্ট শিশু দেখে, তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো মিথ্যে বলে। সেই মনে হয় মিথ্যার হাতে খড়ি। কতটা সম্মানহানি হয় সন্তানের কাছে! সারাজীবনের জন্য, একটু অতিরিক্ত পাবার আশায় একটা খুব বেসিক তথ্য পালটে দেয়া হয়। এটা আসলে শিশুর একটা অধিকার লঙ্ঘনের সামিল। অধিকাংশ সন্তানের তা কোন কাজেই লাগে না আবার। ম্যাডামের জন্মদিনের ক্যারিক্যাচার দেখে যে একটু দম খুলে হাসব, তার উপায় কয়; নিজের ও তো দুটা জন্মদিন।
জানি না এখনকার ট্রেন্ড কেমন ! কিন্ত একটু চিন্তা করলেই হয়, ছোট শিশু একটু গাছের চারার মত। তাকে বিশুদ্ধ জল দিনে বড় করে তোলায় মা-বাবার বড় সান্ত্বনা ; প্রতিদিন, প্রতিবার। মিথার বিষবলয় থেকে তাদের আরেকটু বেশীদিন দূরে রাখায় যায় ; যেন সে উদার আলোকমাঝে বাঁচতে শেখে।
সারাজীবন
মন্তব্য
মানুষের সার্টিফিকেটে বয়স কমে আর আমার বেড়েছে রেজিস্ট্রেশনের সময় আমার জন্ম তারিখ হয়ে গেলো উল্টা পাল্টা ২৪ নভেম্বরের জায়গায় হয়ে গেলো ১৭ মে! কী এক মুসিবত নিয়ে যে দিন পার করে যাচ্ছি! লেখাপড়া শেষ করে বিদেশে পড়তে গেছে নির্ঘাত এটা নিয়ে একটা ঝামেলা হবেই
বয়সটা আসলেই ঠিক থাকা দরকার। নাহলে অনেক ঝামেলা হয়। উল্টা পাল্টা তারিখ নিজেরও তো মনে থাকে না!
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
আমার ছোট বোনের ক্ষেত্রেও বয়স বেড়ে গেছে
সৌরভ কবীর
হুম, অনেকের আবার এরকম ও হয়েছে। আমার এক বোনের ও বাড়িয়ে দিয়েছে স্কুল থেকে। কি যে আপদ!
সারাজীবন
( সব বানানগুলা কখনো কি ঠিক হবে না : )
অনেক বাবা মাকেই দেখেছি তারা সন্তানের জন্মতারিখ বা বয়স কমিয়ে দেন যেন সার্টিফিকেটে তাদের বয়স কম দেখানো যায় । এতে করে আপনি ঠিকই বলেছেন শুরু থেকেই শিশুদের মনে মিথ্যার এক বেসাতি তৈরি হয়। বয়স কমানোর এই প্রবনতার পিছনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা , সেশনজট , চাকুরীর বয়স সীমা এই সব বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করে বলে মনে হয়। তবে বিষয়টি অত্যন্ত নেতিবাচক এবং এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিৎ ।
সহমত ! এত কথা বলে আমি আসলে এই নেতিবাচক কালচারের কথায় বলতে চেয়েছি! ধন্যবাদ
সারাজীবন
কথা ঠিক, এ অভ্যাসটা প্রায়ই দেখা যায়।
হুম।
সারাজীবন
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
মনেপড়ে গেল স্কুলের স্যার এর কথা- হুম, তোমারে সবচেয়ে কমাইয়া দিলাম । এমনিতেই সবার ছোট আরও ছোট হয়ে গেলাম । এখন পর্যন্ত এই দের বছর কোন উপকারে আসেনি- তবে ভবিষ্যতে ভোগাবে বোঝা যাচ্ছে ।
জীবনের প্রথম চাকরীতে জয়েন করার সময় কি একটা ফরম ফিলাপ করতে হয়েছিল, ওহ ব্যাংক একাউন্ট খোলার ফরম, আমি সেখানে সুন্দর করে লিখে দিয়েছিলাম DOB: 31.11.....!!! তারপর ব্যাংক থেকে ফোন করে বলে ম্যাডাম নভেম্বর মাস তো ৩০ দিনে!
হা হা, আসলেই মাথায় একটা থ্রেড রাখতে হয় এটার জন্য
সারাজীবন
লেখার মূল বিষয়বস্তুর সাথে ভীষণ রকম সহমত!
সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থাটা হয় তখন, যখন সত্যিকারের বয়স দিয়ে এসএসসি নিবন্ধন করা মেয়ের বিয়ের কথাবার্তার সময় বরপক্ষের ব-কলম মুরুব্বি বিচ্ছিরি মুখভঙ্গি করে পান চিবুতে চিবুতে বলেন, "এইটা তো মাইয়ার ছাট্টিপিকেট এচ, আসলটা কত?"
নিজের খুব কাছের একজনকে পড়তে দেখেছি এমন বিপাকে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
হা, এটাকে টেক ফর গ্রান্তেড হিসেবে ধরেই নেয়। আর দেখবেন ব-কলম মুরুব্বিগুলাই অন্যকে ছোটো করার পাইতারা করে। সহমতের জন্য ধন্যবাদ
সারাজীবন
তাও ভালো চেঞ্জ করে পহেলা জানুয়ারী করে দেয়নি।
হ্যাঁ, এই ঝামেলায় পড়ে আমার এক ভাই তার ছোট বোনের থেকে ছোট হয়ে গেছে। (অবশ্য এটা নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশনের সময় যার যার স্কুল থেকেই করেছিলো।
সারাজীবন
এই বয়স কমানোর কারিকুরিতে পড়ে আমার বউএর বড়ভাই এর বয়স আমার বউএর থেকে কম হয়ে গেছে! আগে কখনো খেয়াল করি নি, সেদিন অস্ট্রেলিয়ান ফর্ম ৮০ পূরণ করতে গিয়ে দেখি কাবাব মে এই হাড্ডি পড়ে আছে! বড্ড ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম।
-অয়ন
হুম, এটাতো আছেই। আবার দেখবেন আমাদের মা-পিসি রা তাদের আসল জন্মদিন ভুলে গেছে – তখন তো আর জন্মদিন পালনের চর্চা কমই ছিল।
এখানে জন্মতারিখ নিয়ে খুবই বিব্রত থাকতে হয়। সব রেকর্ডে ভুয়া জন্মতারিখ, তাই যেখানেই জিজ্ঞেস করুক, সেই ভুয়াটাই বলতে হয়। সব চেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের সময়ও এই মিথ্যা কথাটা বলতে হয়, কারণ ইনস্যুরেন্সেও ভুয়া জন্মতারিখই দেয়া ডিপার্টমেন্ট থেকে।
এ সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হত, বিসিএস পরীক্ষার জন্য বয়সসীমা আরো ৩/৪ বছর বাড়িয়ে দিলে। এ দেশে অনার্স পাশ করতেই বেশির ভাগের ২৫ বছর হয়ে যায়, অনেকের মনে হয় ২৭ও পেরিয়ে যায়।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হুম, ডাক্তারদের ভুল জন্মতারিখ বলা আসলে নিজের-ই সমস্যা। কিন্ত আপনি যেমন বললেন, কিছু করার নেই কাগজের বাইরে যাওয়া। আর, পরীক্ষার আসলে কোন বয়স সীমা থাকতো না হয়ত। আমাদের দেশের বড় সমস্যা তো জনসংখ্যা – তাই লিমিট বসাতেই হয়। কিন্ত আপনি ঠিকই বলেছেন, সেশন জটের কথা মাথায় রেখে লিমিট বসালে অনেকেই হয়ত নিরুতসাহিত হত।
সারাজীবন
ডাক্তারের অফিসে মনে হয় বড় সমস্য মেয়ে মানে মা'দের। বিশেষ করে ৩০-৩৫ উর্ধ গর্ভবতী মায়েদের। এ ক্ষেত্রে বয়স চুরি রুগীর জন্য একটা বিরাট সমস্যা। আমার স্ত্রী নিজের বয়স ৩৫ না বলে ৩৭ বলে ডাক্তারের অফিসে। বাইরের দেশগুলোতে প্রতি রুগীর ইনফো থাকে ফাইলে। সে ক্ষেত্রে এটাও একটা বিড়ম্বনা।
আমার এক সিনিয়র জন্ম তারিখ নিয়া মজার একটা মাসআলা দিছিলেন। উনি বলছিলেন যাদের সার্টিফিকেটের জন্ম তারিখ মাসের ১ অথবা ১৫ তারিখের দিকে - যেমন ১/২/৩ জানু, ১৫/১৬ ফেবু- তাঁদের আসল জন্মতারিখ অন্য কোন একদিন হবার সমূহ সম্ভাবনা।
দেখা যায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছেলেমেয়েদের জন্মতারিখ লেখার সময় এইরকম একটা সহজ গড় তারিখ লিখে দেন।
ইয়ে মানে আমাদের বাসার আব্বা আম্মা আমি আর বড়পুর জন্মদিন হোল এক এক তমুক সন। এরকম এক এক ফ্যামিলি বোধহয় আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা।খুবি মেজাজ গরম হওয়ার মত একটা ব্যাপার। এমনভাবে দিন তারিখসহ পরিবর্তনের জন্য প্রায়সি ঝামেলায় পরতে হয়।
ইয়ে মানে আমার, বাবার, তার বাবার একই দিনে জন্মদিন
সারাজীবন
আমরা ৫ ভাই একই ইস্কুলের ছাত্র ছিলাম। আমি হচ্ছে ৫ম। সবচেয়ে বড় ভাই আমার ২০ বসরের বড়। ২য় ভাই এর জন্ম ১৯৫২ সালের পহেলা জানুয়ারি। ৩য় ভাই এর জন্ম ১লা জানুয়ারি না হয়েও ১/১। ৪র্থ ভাই এরও তাই। আমিও ১/১। মহকুমা সরকারি প্রাথমিক স্কুলের হেড স্যার এর কল্যানে মাশাল্লাহ ৪ ভাই আমরা ১/১। আব্বার কাজ ছিল কুমির ছানার মত আমাদের হেডস্যার এর হাতে তুলে দেওয়া। হেডস্যার শুধু সালটা জেনে নিতেন। বাকি কাজটা উনিই সেরে নিতেন। ১৯৮৮ তে আমার মা'কে আমেরিকান এম্বেসিতে জিজ্ঞাসা করেছিল আপনার ১০ বাচ্চা তার মধ্যে ৪ ছেলেই ১/১। মায়ের উত্তর নাকি ছিল জন্মতো হয়েছে অন্য অন্য মাসে কিন্তু মাষ্টার মশাইএর কল্যানে সবই ১/১। আমেরিকাতে কেঊ যখন শুনে ১/১ বলে wow!! নিউ ইয়ার বেবী। আমি মুচকি হাসি কিছুই বলিনা বাচ্চারা এখানে বড় হচ্ছে ওদের এখনো খুলে বলিনা বলিনা লজ্জায়। ওরা বলে আব্বা you are so lucky। সেই ছোট বেলা থেকে মিথ্যা মাথায় নিয়ে ঘুরছি। ৫ ভাই কোনদিন সরকারি চাকরি করি নাই। আর নকল জন্মদিনও জীবনে কোন আডভান্টেজ দেয় নাই। বিরম্বনা ছাড়া। আমার হাতে একবার সুযোগ আসল নবম শ্রেনীতে পড়ার সময়। রেজিস্ট্রেশন এর সময় স্যার বললেন সব কিছু তোমরা লিখবে আর জন্ম তারিক টা লিখব আমরা। পাইমারী থেকে ট্রান্সফার হয়ে হাইস্কুলে আসার সময় যে ১/১ টা ছিল সেইটাই বসে গেল ফাকা জায়গাটাতে। আমার স্ত্রী ঢাকাতে জন্ম। তার দুইটা জন্ম তারিখ হলেও ১/১ না। অবশ্য আমার শশুর সাহেব আমারই মত ১/১।
খালাতো ভালই সামলেছেন আম্বসিয়ালাদের
সারাজীবন
হায়রে আমার বাপ যদি ডেটটা অন্তত থিক রাখত ঃ(
বালুকনা
আমার টাও রাখে নাই, খালি অন্ত্যমিল বংশ পরম্পরা
সারাজীবন
নতুন মন্তব্য করুন