আসছে ঈদ। বাড়ি যাবো। চিন্তা করলেই মন ভাল হয়ে যায়। অকারনে পা মাড়িয়ে দেয়া সহকর্মীটিকেও ক্ষমা দেয়া যায় অনায়াসে। কিংবা বসের কঠোর চেহারার দিকে তাকিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় মেঘের কোলে এক চিলতে রোদের মত উঁকি দিয়েই মিলিয়ে যাওয়া হাসির ঝলক (উনিও বাড়ি যাবেন কিনা!)।
কিন্তু বাড়ি ফেরার টিকেট পাওয়া যাবে তো?
সকল আনন্দের সামনে উদ্যত ফণা তুলে আছে এই প্রশ্নরূপী কালকূট!
ঠিক এই সময়ে জানা গেল - এবার ট্রেনের টিকেট কাটা যাবে ইন্টারনেটে!! খুশি হলাম। কারণ ষ্টেশন থেকে টিকেট কাটা আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয় করা একই কথা (আমার মত আলসের কাছে)। আজকে বিকেল থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে নাকি আগামী কাল দুপুর নাগাদ কাউন্টারের সামনে পৌঁছানো যাবে। অন্যপক্ষে মোবিক্যাশেও ঈদের টিকেট কাটার চেষ্টা করে দেখেছি - প্রতিটি স্টেজে রিপ্লাই আসতে এতো সময় লাগায় যে প্রতিবার সেশন টাইম আউট হয়ে যায়। অন্যান্য সময় মোবিক্যাশ খুব ভালো সার্ভিস দেয় আর আমার বাসার কাছেই একটা গ্রামীণফোন সেন্টার থাকায় টিকেট প্রিন্ট করতেও কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু যত ঝামেলা এই ঈদের সময়টায়। তাই ভাবলাম এবার নেটেই কপাল ঠুকে দেখি (আক্ষরিক অর্থে না কিন্তু!)।
আশায় আশায় বুক বেঁধে ঠিক সকাল নয়টায় লগ-ইন করলাম। এখানে ৭টা ঘরে তথ্য দিতে হয়। মানে যাত্রার তারিখ, যাত্রা ষ্টেশন, গন্তব্য ষ্টেশন, ট্রেনের নাম, আসন টাইপ ইত্যাদি আরকি। (মোবিক্যাশেও এই তথ্যগুলো চায়। তবে একবারে না। ধাপে ধাপে USSD মেনুর মাধ্যমে। ঈদের সময়ে মোবিক্যাশে এই USSD মেনুগুলো আসতে এত দেরী করে যে নির্ধারিত এক মিনিটের মধ্যে টিকেট কাটা সম্পন্ন করা যায় না, সেশন টাইম আউট যায়।) । ভাবলাম যাক, ব্যপারটা সহজ হলো। দেরি না করে ইনপুট দিতে শুরু করলাম।
ওমা, কিসের কি! যাত্রার তারিখ, যাত্রা ষ্টেশন, গন্তব্য ষ্টেশন ইনপুট দিতে সমস্যা হলো না, গোল বাধলো এর পরে। যাত্রা ষ্টেশন এবং গন্তব্য ষ্টেশন ইনপুটের উপরে ভিত্তি করে ট্রেনের নাম আসার কথা - এটা আসতে সময় লাগালো মিনিট পাঁচেক। এর পর আসন টাইপ এর পালা। ট্রেনের নাম ঘরখানিতে তো তাও দেরী করে হলেও এসেছিল, ইনি তো আর আসার নামটি করেন না! প্রায় আধা ঘন্টা প্রতীক্ষা (হ্যাঁ, প্রতীক্ষা, অপেক্ষা নয়) করার পরও তিনি দেখা দিলেন না! বাধ্য হয়ে পরিচিত একজনকে ফোন করাতে তিনি টিপস দিলেন ঐ অবসথাতেই (অর্থাৎ আসন টাইপ ফাঁকা রেখে) সার্চ বাটনে ক্লিক করতে।
মনে মনে সন্দেহের দোলাচলে দুলতে দুলতে দিলাম সার্চ বাটনটা টিপে। একটা মেসেজ দেখাল- "তুমি সব তথ্য দাওনি। প্লিজ এন্টার ভ্যালিড ডেটা"। তবে কাজের কাজ হয়ে গেলো। মানে লজ্জাবতী লতার মত অবগুন্ঠনে লুকিয়ে থাকা "আসন টাইপ" ড্রপ ডাউন বক্স পপুলেট হলো। আমি আসন টাইপ সিলেক্ট করতে পারলাম। তারপর যেই না সার্চ বাটনে ক্লিক করলাম -
-
-
মেসেজ ফুটে উঠলো - রিকোয়েস্টেড সীট নট অ্যাভেইলেবল!
তার মানে ইন্টারনেটে বরাদ্দ সব টিকেট শেষ হয়ে গেছে!! হা হতোস্মি!! আমি যে আধা ঘন্টা প্রতীক্ষা করছিলাম, সেই সময়ে মোবিক্যাশ ও ইন্টারনেটে মিলিতভাবে বরাদ্দকৃত ৫ কিংবা ১০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।
যাই হোক। এবার গল্পের শেষটা দ্রুতই শেষ করে দিই - আগের দিনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষালাভ করে পরদিন আমি আগে থেকেই "আসন টাইপ" ড্রপ ডাউন বক্স পপুলেট করে নিলাম এবং যথারীতি আসন পেলাম। এবার পেমেন্টের পালা। আমার ভিসা ক্রেডিট কার্ড থেকে পেমেন্ট ইনফরমেশন দেয়ার পর মেসেজ এলো ব্যাংক থেকে নাকি ট্রানজাকশনটি ক্যানসেল করা হয়েছে। ব্যাংকে ফোন করলাম - ওরা বললো আমাদের এখানে কোন ট্রানজাকশন রিকোয়েস্টই আসেনি! আবার টিকেট কাটার চেষ্টা করলাম - এবার দেখি বলছে ইউজার হ্যাজ পেন্ডিং রিকোয়েস্ট!
দুত্তোর বলে লগ আউট করে উঠে পড়লাম। দেখি বাসের টিকেট ম্যানেজ করা যায় কিনা!!
ফুটনোট: এই সব ঝামেলাগুলো সত্যই হয়েছিল। তবে তারপর তৃতীয় দিনে টিকেট কেটেছিলাম নেট থেকেই। ধন্যবাদ বাংলাদেশ রেলওয়েকে - তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার কর শুরু করার জন্য।
-অয়ন
মন্তব্য
আমারো প্রায় একই ধরণের কিছু সমস্যা হয়ছিলো।। তারপরে আবার টিকেট কাটার পরে যে মেইল আসার কথা সেটা আসেনি, তবে ওয়েব পেইজের কনফার্মেশনটা প্রিন্ট করে দেখাতেই টিকেট দিয়ে দিয়েছে।।
অটঃ লিঙ্ক দেখে মনে হয় (esheba.cnsbd.com), এটা একটা তৃতীয় পক্ষ সেবা, যদিও বাংলাদেশ রেলওয়ের সাইটে এই ধরণের কিছু লেখা নেই।।
ঠিক বলেছেন। এটা সিএনএস নামের প্রতিষ্ঠানের দেয়া সেবা।
-অয়ন
নতুন মন্তব্য করুন