ধুম করে বিয়ে করে ফেললাম আমরা - একদম ধুম করে! পরিবারের গুরুজনেরা বেঁকে বসার সুযোগ পেলেননা তেমন একটা ! বাবা-মা রাজি হতেই বিয়ের কাজ সারা ! 'না'- বলবার সুযোগ কোথায় ! তারপর দুজনই বাইরে চলে আসি- অজানা একটা নতুন জীবনে - উচ্চ শিক্ষার তীব্র ইচ্ছা আর নতুন একটা অজানা শহরের ডাক | ফুল-অন এডভেনচার যেন একটা ! সেই থেকে লণ্ডনে বসবাস শুরু - অর্ধ যুগ পার করছি এবছর ! এই অর্ধ যুগে জীবনটা এতটা অন্যরকম হয়ে যাবে ভাবিনি | শুধু জীবন কেন- অন্যরকম হয়েছি আমরাও- সময় আসলে কঠিন 'জিনিস' !
জানালার বাইরে এখন ঝপঝপ বৃষ্টি- লণ্ডনে এরকম বৃষ্টি খুব একটা হয়না- (যা হয় তা হলো প্যাঁচ-প্যাঁচে মিন-মিনা বৃষ্টি....সময় নাই- রাত দিন -দিন- রাত...মেজাজ খিচড়ে দেয়া কাজ-কারবার )| কিন্তু আজকের বৃষ্টিটা অন্যরকম - মনে করিয়ে দিচ্ছে ছোটবেলার একটা হারিয়ে যাওয়া বিকেল -পাঁচ তলার ছাদে ছাতা মাথায় বৃষ্টিতে ভেজা ! মা কিছুতেই ছাতা ছাড়া বৃষ্টিতে ছাদে যেতে দিবেননা- তাই মাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ছাতা নিয়ে বের তো হতাম বাসা থেকে - কিন্তু ভিজতাম মনের খুশিতে- একদম কাক-ভেজা ! আমাদের কাজের মেয়েটিও সাথে থাকত- আর চিল্লাতো- 'ভিজেন আফা , মনের খুশিতে ভিজেন...সব ঘামাচি আইজকাই কিলিআর !' (ইংরেজির প্রতি ওর আগ্রহ ছিল মারাত্মক - আমিই শিখাতাম দুই-একটা মাঝে মাঝে!) | এখন ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বৃষ্টিতে ভিজি মাঝে মাঝে - তীব্র বিরক্তিকর ব্যাপার -ছাতা ফেলে আসার বিড়ম্বনা !
লণ্ডনে এসে প্রথম প্রথম জীবনটাকে চড়াই-ভাতি মনে হত ! ইচ্ছে মত কোক আর আইসক্রিমে ফ্রিজ ভরানো , ইচ্ছে মত রাত জেগে টিভি দেখা - খুব স্বাধীন স্বাধীন লাগত প্রথম কিছু দিন ! তারপর বুঝলাম আসলে এই স্বাধীনতাও একধরনের শেকল-জড়ানো | নিজের ভালো-মন্দের পুরো দায়ভার মাথায় বয়ে বেড়ানো, নিজেকে নিজেই শাসন করে ভালো-মন্দ শেখানো, মা-বাবার বকুনি গুলা মিসিং শুধু - কিন্তু নিজের কাছেই নিজের বকা খাওয়া এখন ! তারচে সেই স্কুলের দিন গুলো .....আহ্হ- ইচ্ছে মত কোক না হয় নাই-ই বা পেতাম !
দেশ ছাড়ার সময় আমার লাগেজ-এ খুব একটা কিছু আনা হয়নি ! ব্রিটিশ এয়ারওযেজের ২০ কেজি লিমিট - তার ভেতর অতি উত্সাহী বাবার কিনে দেয়া লেদার জেকেটের ওজনই ১৫ কেজি প্রায় ! তারসাথে বন্ধুদের দেয়া একগাদা ছবি ! সেই সব এলবাম এখনো খুলে দেখতে ভয় পাই আমি .....কেন জানি ফেলে আসা হাসি মাখা মুখগুলো ভীষণ কাঁদায় এখনো...তাই ওই পথে পা বাড়াতেও নারাজ আমার মন | এলবাম গুলোর ধুলো ঝাড়ি মাঝে মাঝে - ভেতর টা ডুকরে ওঠে - পাত্তা দেইনা .... সেই লাগেজ-এ আরো এসেছিল মা'র নিজের হাতে সেলাই করা কাঁথা- আর হাত-মোজা ! ঠিক একই কারণেই ওদের ভাঁজ ভাঙতেও আমার ভয় হয় - ভীষণ যত্নে ঘুমায় ওরা আমার দেয়াল-আলমিরায় | মা জিগেস করলে দিব্বি বলে দেই- "হাঁ মা , তোমার কাঁথা না থাকলে জানিনা এই প্যানপ্যানে বৃষ্টির দিনগুলো তে কিভাবে ঘুমাতাম " ! মা শুনেই কী খুশি- "আরেকটা বানাচ্ছি , এর পরের বার আসলে নিবি কিন্তু "..লাইন এর ওপাশে আমার গোপন দীর্ঘশাস !
মন্তব্য
ভালো লাগলো। অতিথির নাম কি?
অনেক ধন্যবাদ !
আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি
ভাল লাগলো। আমার কাছে প্রবাস জীবনটাই অনেক পরাধীন মনে হয়, সেই তুলনায় দেশে অনেক স্বাধীন ছিলাম।
বৃষ্টি আমারও খুব প্রিয় জিনিস, অনেক প্রিয় জিনিসের মতো এই কাউবয় রাজ্যে বৃষ্টির দেখাও বেশি মিলে না।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অনেক ধন্যবাদ ! আসলেই - ছোটবেলাটাই ভালো ছিল !
মাকে মিথ্যা বলতে পারি না। তাই গেল বছর আমার বাসায় বেড়াতে এসে আম্মার প্রথম কাজ ছিল, ফ্রিজ থেকে ২ বছরের পুরনো নারকেলের সন্দেশের বাটি বের করে ময়লার ঝুড়িতে ফেলা। খেলেই শেষ হয়ে যাবে বলে ২ বছর আগলে বসে ছিলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
মাঝে মাঝে সহজ মিথ্যে গুলো না থাকলে মা'কে নিয়ে হিমশিম খেতাম তাঁকে খুশি রাখতেই .....
..................................................................
#Banshibir.
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ভালো লাগলো - ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কিছু স্মৃতির মাঝে বিচরণ করে বাইরে হওয়া ঝমঝম বৃষ্টিটা দিয়ে ভেতরের বৃষ্টিটাকে বের করে আনা।
-অয়ন
বাইরে রংধনু - ভেতরে এখনো ঝমঝম ....
থ্যাঙ্ক ইউ
খুব ভাল লাগল পড়ে
থ্যাঙ্ক ইউ
স্বাধীন শব্দটাই বড় বেশী পরাধীন। ব-নামের এক বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়েই হয়তবা অধীনতার শেকড় পায়ে দিয়েছে। কি-ই-বা এমন ক্ষতি হত সাধীন কিংবা সাধিন হলে (!)।
এমন স্বাধীনতার স্বাদ আমিও গ্রহণ করেছি। তবে প্রবাসে নয়, দেশের মাটিতেই। অবাধ স্বাধীনতা। আপনার মত আমারও প্রায়ই মনে হয়, নিজেই নিজেকে শাসন করছি এখন! কিন্তু নিজের শাসন নিজের কাছে বড় বেশী আহ্লাদীপণা বলেই মনে হয়।
এতকিছুর পরেও স্বাধীনতার স্বাদ অন্যরকম। মুক্তপ্রাণের ঝঙ্কার তখনই উপলব্ধি করা যায়, যখন পরাধীনতার মৌন শিকল জড়িয়ে থাকে নিঃশ্বাসের অক্সিজেনের মত।
আপনার অনুভূতিটুকু আপনারই একান্ত। তবুও অদ্ভুত মিল খুঁজে পাই।
নিজের শাসন ভাল্লাগেনা - লবণ-হীন তরকারির মত মনে হয় !
ফ্রিডম একটা বানোয়াট ধারণা। তবে আর একমাস পরে লন্ডনের হাত থেকে 'ফ্রি' হব। দেখতে দেখতে ১১ মাস! শীতল, যান্ত্রিক, কেজো, নিয়মতান্ত্রিক, নজরবন্দী মানুষের প্রায় দমআটকানো, ইমিগ্র্যান্ট-দাসভিত্তিক এই শহরে। এখানকার মানুষ [পাকিদের গ্যারান্টি নাই] খারাপ না যদিও। মানুষ কোথায়ই বা খারাপ।
সাবলীল গদ্যে ৫ তারা।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
এখানের মানুষরা কি জানি একটা 'ভাব'-এর উপর চলে - ভেতরটা কিন্তু ফাঁপা !
অভিনন্দন আপনার নতুন 'স্বাধীনতায়' !
জীবনটাই এমন - এক সুতো থেকে আরেক সুতো - নাটাই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে !
বিদেশে লাইফ ইজ নট বিউটিফুল [এইটা আমার বর্তমানকালীন বাণী। দুইদিন পরেই বাণীর লাইন ঘুরে যেতে পারে]।
আমার [হেহেহে, খালি আমার না এইটা মনেহয় শতকরা নিরানব্বইজন বাঙালীরই] প্রিয় জিনিস হলো ধুমায়া ঘুমানো আর বৃষ্টি। কিন্তু এই মরার বৈদেশে দুইটার একটায়ও শান্তি নাই। খাট ভরে ঘুমাইতে গেলে পেট ভরে ভুখ লাগে আর বৃষ্টিতে বাইর হলে বৃষ্টির ফোঁটা সোজা মগজে গিয়ে আঘাত হানে।
আপনের নামটা শুনে তিতির পাখি তিতির পাখির মতো লাগে। আসল [রাশান] উচ্চারণটা অন্যরকম না!
লেইখ্যা ফাডায়ালান।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ফ্যানের ঘুরুত ঘুরুত আওয়াজ আর বারান্দার রেলিঙে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি- - আহ , ঘুম একেই বলে !
এখন এরা সবাই আমার 'মিসিং লিস্টে' হাজিরা দেয় !
এলার্ম ক্লকের সাথে পাল্লা দিয়ে নাক ডাকি আজকাল - 'ঘুম' নামের কলঙ্ক !
লিখে 'ফাডায়' ফেলার সামর্থ নাইরে ভাই ...এগুলা আমার দৈনন্দিন দীর্ঘ-শ্বাস শুধু :::::::::::
আরেকজন লন্ডনার পেলুম
নতুন মন্তব্য করুন